তুমি_নামক_প্রাপ্তি পর্ব ৮+৯

#তুমি_নামক_প্রাপ্তি
#part:8
#Suraiya_Aayat

সকাল সকাল আর্শিয়ানের স্কুলের বাস এসে আর্শিয়ানকে স্কুলে নিয়ে গেছে, আরু অফিসে যাবে বলে রেডি হচ্ছে ৷ আজ আরশিয়ানের স্কুলের 2য় দিন তাই তার আর একা যেতে সমস্যা হয়নি, প্রথম দিন আরু নিয়ে গিয়েছিল ৷ অফিসে আরুর প্রমোশন হয়েছে,মাইনে 6 হাজার টাকা বেড়েছে, এবার আর সবকিছু সামলাতে খুব বেশি একটা অসুবিধা হবে না, ভালো ভাবেই মাস চলে যাবে ৷
প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল আরূ আরিশকে অনেকবার খোঁজার চেষ্টা করেছে কিন্তু সেই দিন পার্ক থেকে যে আরিসের থেকে দূরে চলে এলো তারপর আর আরিশকে খুঁজে পাইনি আরু ৷ যদিও বা আর্শিয়ান অনেকবার ওকে জিজ্ঞাসা করেছে যে তার পাপা কোথায় কিন্তু আরু কোনো উত্তর দিতে পারেনি কারণ সে নিজেকে খুঁজে পাইনি আরিশকে ৷ এই নিয়ে আর্শিয়ান মাঝে মাঝে মন খারাপ করে থাকে, এতো বছর পর ও যখন নিজের বাবাকে পেয়েছে তখন তার ভালোবাসা টাও পাবে ভেবেছিলো কিন্তু তা আর হল কোথায় ! ছেলের এই কষ্টটা মেনে নিতে আরুর নিজেরও কষ্ট যাচ্ছে , যতই চেষ্টা করছে ওর জীবনের কুলসিতা ও আর্শিয়ানের জীবনে পড়তে দেবে না তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না , সেই কোনো-না-কোনোভাবে আর্শিয়ানের ছোট্ট মনটা কষ্ট পাচ্ছে বারবার ৷

টিফিনের বাক্স টা ব্যাগে গুছিয়ে নিয়ে আরু রুম থেকে বেরিয়ে যাবে তখনই দরজায় বেল পড়তেই আরু খানিকটা অবাক হল
“এখন আবার কে?”

তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খুলতেই দেখতে পেল ওর বাবাকে, ওর বাবাকে দেখেই সকাল-সকাল মাথাটা গরম হয়ে গেল ৷ আগের দিন ওর সাথে উনি যা ব্যবহার করেছেন তার পরে উনার সাথে কথা বলার কোন প্রশ্নই ওঠে না ৷
উনাকে দেখে আরূ কঠিন হয়ে বলে উঠলো
” কি ব্যাপার তুমি এখানে এত সকালে !”

হঠাৎ উনি সামান্য মুচকি হাসি দিয়ে বললেন
” শুধু আমি একা না রে, আরেকজন ও আছে আমার সাথে ৷”
উনার কথাটা শুনে আরূর ভ্রু কুচকে এলো তারপরে কৌতুহলী সাথে বলল
” কে?”

আরূর বলা কে শব্দ টা শুনে পাশ থেকে বেরিয়ে এল ইলমাজ ৷পরনে লাল রঙের একটা পাঞ্জাবি , হাতে একটা ঘড়ি, মুখটা শুকনো লাগছে , দেখে মনে হয় অনেক দিন যেন আপনজনের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত খেয়াল রাখার মতো কেউ নেই ৷ইলমাজকে দেখে আরু খানিকটা হতভম্ব হয়ে গেল, তাড়াতাড়ি করে ইলমাজের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ওর বাবাকে বললো
” তোমরা এখানে ! আর তোমার সাথে এই লোকটা কেন এসেছে?”

আরূর বাবা বললেন
” দেখ মা তুই তো জানিস ইলমাজের ওয়াইফ মারা গেছে, একা থাকে আর তুই ও একা একা থাকিস,তাই বাকিটা জীবন ভালোভাবে থাকতে সকল মনোমালিন্য দূর করে বিয়েটা করে ফেল ৷”

ইলমাজ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে বুঝতে পারছে যে এখুনি আরূ একটা বড় দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধাবে ৷.

ইলমাজ যা ভাবলো তাই হলো , ক্ষণিকের মধ্যে আরু গর্জে উঠে বলল
” বেরিয়ে যাও এখান থেকে , আর কখনো যেন আমার আর আমার ছেলে ত্রিসীমানায় তোমাদেরকে না দেখি ৷ আর এই যে আমি কি আপনাকে বলেছি যে আমি আপনাকে বিয়ে করবো ! কেন নিজেরা জেছে জেছে অপমানিত হতে আসেন বারবার , আর আপনারা কি আত্মসম্মান বোধ বলে কিছু নেই ৷”
ইলমাজের দিকে তাকিয়ে ৷

“একটু সুযোগ পেয়েছেন আর তৎক্ষনাত সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চলে এসেছেন….”

ইলমাজ আর চুপ করে না থেকে মুখ ফুটে বললো
“দেখো তুমি ভুল বুঝছো আমাকে ৷”

” আমি বুঝেছি, আর আমার যা বোঝার তা বোঝা হয়ে গেছে , এখন আপনারা এখান থেকে বেরিয়ে যান নাহলে আমি সিকিউরিটি এনে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেবো ৷”

আরুর বাবা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন
” একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলছিস, বারবার বলি মেয়ে মানুষের অত তেজ ভালো না ৷”

” আমার তেজ কতোটা তুমি হয়তো তা এখনো জানো না ৷”
কথটা বলে আরু রুমে তালা দিয়ে বেরিয়ে গেল ও , ও বেরিয়ে যেতেই ইমরান সাহেব ইলমাজকে বলল
” মেয়েটার তেজ দেখলে ! একবার বাগে পাই শুধু ৷”

ইলমাজ ওনার কাঁধে হাত রেখে বলল
” আপনি কষ্ট পাবেন না আংকেল, রাগের মাথায় বলছে, ও শান্ত হয়ে গেলে ওর রাগ ও চলে যাবে ৷হয়তো আরিশের এই চলে যাওয়াটাকে মেনে নিতে পারছে না ৷”

” যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই ভালো ৷”

ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ নিয়ে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে ,দেখে মনে হচ্ছে বড়ো কোন রহস্য উৎঘাটন করতে চলেছে ৷ ল্যাপটপের screen এ থাকা আরিশের ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে, একটা মডেলের সাথে খুবই অন্তরঙ্গ অবস্থায় ৷ ছবিটা দেখে আরুর হাতের লোম গুলো শিউরে উঠলো, আর যাই হোক আরিশকে অন্যকারোর সাথে সহ্য করতে পারবে না ৷
রিতীমতো ছবিটা দেখে রাগে ফুসছে আরু, সামনে আরিশ থাকলে হয়তো ওকে ক্ষতবিক্ষত করে দিতো ৷

হঠাৎই কোন পুরষালী কন্ঠস্বর পেয়ে আরু পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখল আবির দাড়িয়ে আছে ৷ আবির দেখে আরু অবাক হলো , তবুও স্বাভাবিকভাবেই বলল
“কি ব্যাপার আপনি এখানে !”

” দরকারে এসেছি ৷”

” কি দরকার?”(ভ্রু কুঁচকে )

আরুর কথার উত্তরে আবির আরুকে ওর দরকারটা জানালো , আরু আবিরকে বলল
” আপনি বাইরে দাঁড়ান আমি আসছি ৷”

” ওকে ৷”

আরু সেখান থেকে অফিসের কিচেনে গিয়ে শেফকে বলল
” মীনা , কোন এক্সটা ছুরি আছে ?”

” হমম আছে আপা, আপনার কি দরকার কোন?”

” হমম দরকার ৷”

আরুর কথাটা শুনে মীনা একটা বেশ ধারালো আর নতুন ছুরি আরুকে দিয়ে বলল
” আপা সাবধানে কাটিয়েন, অনেক ধার ৷”

আরু মুচকি হেসে বলল
” চিন্তা করোনা, সঠিকভাবে ব্যাবহার ই করবো ৷”

কথাটা বলে আরু অফিসের বাইরে এসে দাঁড়ালো , আবির গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আরু ও গাড়িতে উঠে বলল
” চলুন যাওয়া যাক ৷”

” হমম ৷”

গাড়ি এসে থামলো একটা ছোট্ট বাংলোর সামনে,পুরো বাংলো টা গাছগাছালি দিয়ে ভরা, ফুলের বাগান, খুব সুন্দর একটা পরিবেশ ৷
আরু গাড়ি থেকে নেমে চারিদিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিয়ে আবিরকে বলল
” আপনি এখানেই থাকুন , আমি আসছি ৷”

আবির আরুর কথা শুনে অবাক হয়ে বলল
” আমি যাই, যদি আপনার কোন কাজে আসি ৷”

” এতোদিনেও তাহলে আপনার ভুল ধারনাটা আমি ভাঙাতে পারানি দেখছি ৷”

আবির থতমত থেকে বলল
” মানে !”

আরু একটা তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বলল
” এই যে এতদিনেও আপনি আমার সাহসিকতার দৌড় কতটা সেটা আপনাকে বোঝাতে পারিনি ৷ আমাকে দূর্বল ভেবে ভুল করছেন আপনি ৷”

আবির আর কিছু বললো না,
আরু আবিরের দিকে একবার তাকিয়ে বলল
” আমি আসছি ৷”

আরু বাড়ির সামনে গিয়ে বেল বাজাতেই একটা সারভেন্ট এসে দরজাটা খুলে দিয়ে বলল
” কে আপনি ?”

” আরুশি খান, আপনাদের sir বাসায় আছে ?”

” হমম আছে, আপনার কি কোন দরকার আছে sir এর সাথে ?”

” হমম,,,, আচ্ছা আসুন ৷”

আরুকে নিয়ে উনি ড্রয়ংরূমে নিয়ে বলল
” আপনি এখানে বসুন আমি sir কে ডাকছি, sir সুটিং এ যাবেন ৷”

কথাটা বলে উনা বিশাল অকৃতির কিচেনে ঢুকে গেলেন ৷
আরিশের সাথে দেখা করার জন্য ওকে অপেক্ষা করতে এই জিনিসটা যে আরু কিছুতেই মানতে পারছে না ৷
আর কোনরকম দেরি না সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেল, উপরে উঠতেই অবাক হলো কারন উপরে কেবলমাত্র একটাই রুম আর পুরোটা ব্যালকনি ৷
সে দিক থেকে চোখ সরিয়ে আরু হাট করে দরজাটা খুলে রুমের ভিতর ঢুকে গেল ৷
রুমের ভিতর ঢুকতেই আরুর হার্টবিট বেড়ে গেল, সামনে লোকটা উন্মুক্ত শরীর নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে ৷আয়নাতে আরুকে দেখছে যে আরু তারদিকে এগিয়ে আসছে ৷
আরু এগিয়ে গিয়ে মানুষটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,,মানুষটাও আরুর দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক ভাবে ৷
আরু কাপা কাপা হাতটা মানুষটার দিকে এগিয়ে যেতেই লোকটা আরুর হাতটা ধরে আরুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো, আরুর পিঠ মানুষটার বুকে, আয়নাতে দুজনকে দেখা যাচ্ছে ৷লোকটা এবার আরুর কাঁধ থেকে চুল সরিয়ে আরুর কাঁধের ওপর ঠোঁট বসিয়ে গভীর ভাবে স্পর্শ করতেই আরু খানিকটা কেঁপে উঠলো,,,,,ওনার এমন ছোয়া আরুর নেশা ধরিয়ে দিতেই যথেষ্ট ৷
আরুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আরুর থুতনিতে থাকা তিলটাতে ঠোঁট বোলাতেই আরুর যেন হুস ফিরে এলো, কোনরকম কোন কথা ছাড়াই কেবলমাত্র ওনার ছোঁয়াতেই আরু আবেগে ভেসে যাচ্ছে ৷
হুঠ করে কোমরে গুজে রাখা ছুরিটা আরিশের গলায় চেপে ধরলো ৷ ধারালো ছুরিটার একটা কোনা গলায় লেখে খানিকটা কেটে রক্ত বেরোচ্ছে ৷

আরু দাঁতে দাঁত চেপে বলল
” কে আপনি ?”
#তুমি_নামক_প্রাপ্তি
#part:9
#Suraiya_Aayat

নিহানের গলায় ছুরি ধরে আরু বললো
” কে আপনি ?”

উনি আরুর দিকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল “নিহান ৷”

আরুর এবার রাগ উঠে যাচ্ছে, এতো ছলনা আর সহ্য করা যায় না ৷ আরিশের এই খামখেয়ালিপনা ওর আর সহ্য হচ্ছে না,ছুরিটা গলা থেকে খানিকটা আলতো করে সরিয়ে এনে আবার প্রশ্ন করে উঠল
” বলুন আপনি কে ! আমি জানি আপনি নিহান নন, আপনি আরিশ খান,আর কিসের এই গোপনীয়তা আপনার ! আপনার এই খামখেয়ালিপনা আর বিরহ আমার আর সহ্য হচ্ছে না ৷”

লোকটা আবার হেসে বলল
” বললাম তো আমি নিহান, আপনার আরিশ খান নই ৷”
আরু এবার রেগে গিয়ে ছুরিটা এবার জোরে নিহান এর গলায় চেপে ধরল ৷ ধারালো ছুরি হওয়ার দরুন ছুরিটা নরম মাংসের সাথে ঘষা লেগে গলার পাতলা চামড়া কেটে গিয়ে সেখান থেকে রক্ত বেরোচ্ছে , রক্ত দেখে আরুর হাত খানিকটা কাপছে , গলাটাও শুকিয়ে আসছে তবুও আজ যেন ওর কোনো ভয় লাগছে না , এক্ষুনি যদি মানুষটা মরে যায় তাহলে তার সব দায়ভার ওর হবে সেটা জেনেও কেন জানিনা ওর ভয় লাগছে না তার কারণ মানুষটা যে ওর….নিজের মানুষটাকে ক্ষতবিক্ষত করলেও হয়তো সে মুখ দিয়ে একটু আওয়াজ টুকুও করবে না সেই ভেবে ৷মানুষটাকে নিজের কাছে ফেরানোর আপ্রান চেষ্টা করছে ও তবুও যে কেন বারবার চেষ্টার পরও ও ফেরাতে পারছেনা এটা নিয়ে আরুর মনে অভিযোগের কালো মেঘ ৷

নিহানের গলা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে তবুও নিহানের এর মধ্যে কোন হেলদোল নেই দেখে আরু একটু জোর গলায় বলে উঠলো
” আপনার কি সত্যিই ভয় লাগছে না ! এক্ষুনি যদি এই ছুরিটা দিয়ে আমি আপনাকে ঘায়েল করে দিই তাহলে কি হবে আপনার ? তখন না থাকবেন আপনি নিহান আর না হবেন আমার আরিশ খান ৷

নিহান আরুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল
” বারবার তো এভাবেই ঘায়েল হতে চেয়েছি তোমাতে, কেন করো না ঘায়েল ৷”

কথাটা শোনা মাত্রই আরূ আরিসের গলা থেকে চুরি টা নামিয়ে নিয়ে বলল
“আমি জানতাম আপনি আমার আরিশ ,আমি আপনাকে চিনতে এতটা ভুল করতে পারিনা ৷ কিসের এত অভিমান আমার প্রতি আপনার যে এতোটা দুরে সরে সরে থাকেন ৷”

নিহান নামের লোকটা আরুর কথা শুনে খানিকটা ভ্রু কুঁচকে আরূর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
“আরে আমি তো আমার সিনেমার ডায়লগ বললাম, আপনি কি ভাবলেন আমি আপনাকে বলছি ! নোহ !সো স্যাড যে আপনি নিজেকে ভেবেছেন ৷”

কথাটা শুনে আরু খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো, কেন এতটা কষ্ট দিচ্ছে মানুষটা ওকে এভাবে ,আর সহ্য করা যায় না ৷ হয় আজ আরিশ বলবে যে ও আরিশ খান না হলে আরু নিজেকে শেষ করে দেবে ৷

কথাটা শোনামাত্রই তৎক্ষনাত ছুরিটা এবার নিজের গলার সাথে চেপে ধরে নিহানকে বলল
” আপনি বলবেন কি না যে আপনি আমার আরিশ , যদি তা না ই হয় তাহলে এখানে আজকে আমার শেষ নিশ্বাস পড়বে ৷”

নিহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
“ওকে ডান ৷”

কথাটা শুনে আরুর চোখ থেকে এক ফোটা জল বেরিয়ে এলো ,আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করবে না ,রাখবে না আর এ জীবন ৷ ছুরিটা দিয়ে গলায় পোচ দিতে গেলেই সাথে সাথে নিহান জোরে আরুর গালে একটা থাপ্পর মারতেই আরু মেঝেতে পড়ে গেল ,আরুর হাত থেকে ছুরিটা মাটিতে খানিকটা দূরে পড়ে গেছে ৷

কিছুক্ষণের জন্য আরু যেন থ হয়ে গেছে ৷

” ডোন্ট ট্রাই টু ডু দিস , ইদার আই উইল কিল ইউ ৷”(নিহান দাঁতে দাঁত চেপে)
কথটা বলে আরুর কপালে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ একে বলল
“নাও গেট লস্ট , আমার বাড়ি ত্রিসীমানাতে যেন আপনাকে আর না দেখি ৷”

আরুর চোখ ছল ছল করছে, মানুষটার চোখের দিকে আর তাকিয়ে থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয় ৷ আস্তে আস্তে মেঝে থেকে উঠে দাড়িয়ে নিহানের দিকে একবার ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
” ভালো থাকবেন , আপনাকে বিরক্ত করার মতো দুঃসাহসিকতা আর কখনো দেখাবো না ৷”
বলে গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে চোখের জলটা মুছে সোফার উপর থাকা ব্যাগটা নিয়ে চলে গেল ৷

আরু রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই নিহান ব্যালকনিতে গেল, সেখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আরু আর আবিরকে ৷ আরু আবিরের গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আর ক্রমাগত চোখের জল মুছে চলেছে হাত দিয়ে ,আর আবির বারবার আরুকে থামাতে চাইছে ৷

দৃশ্যটা দেখে নিহান পকেট থেকে ফোনটা বার করে বললো
” সিসিটিভি ফুটেজ টা আমাকে পাঠাও তো, আমি যা ভাবছি সেটা কি সত্যি আমিও দেখি ! ইমিডিয়েট দিয়ো ৷”

কথাটা বলে নিহান ফোনটা কেটে দিলো ৷

আরু আর আবির গাড়ি নিয়ে চলে গেল ৷
হঠাৎ ফোনে মেসেজ এর নোটিফিকেশনের আওয়াজ আসতেই নিহান ফোনের দিকে তাকালো ৷ সিসিটিভি ফুটেজের ভিড়িওটা দেখে হো হো করে হেসে উঠলো, যা ভেবেছি ঠিক তাই হয়েছে ৷

নিহান ভিডিওটা অফ করে একটা ডেভিল smile দিয়ে বললো,,,,
” নাও গেম ইজ অন ৷”

_______

গাড়ি আপন গতিতে চলছে আর আরু একটু আগের ঘটে যাওয়া কথাগুলো ভাবছে ৷ ওর মন কিছুতেই মানছে না যে ওটা আরিশ না, কারন যখন নিহান নামের লোকটা ওকে জড়িয়ে ধরেছিল তখন আরু আয়নাতে নিহানের চোখে সেই ভালোবাসা দেখেছে যেমনটা আরিশের চোখে দেখতো ৷ আরিশ যেমন করে আরুর ওপর অধিকার খাটাতো নিহানও তেমনই আজ আরুর ওপর সেই অধিকারটাই খাটিয়েছে, আরু বাধা দিতে পারেনি ৷

হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভাঙ্গিয়ে আবির বলে উঠলো
” আমি এতদিন ভুল ছিলাম ৷”

কথাটা আরুর কানে গেল, বাইরের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
” কোন ব্যাপারে !”

আবির একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
” এই যে আমি এতদিন ভাবতাম আপনি আমাকে নিজের একটা ভালো বন্ধু মনে করেন কিন্তু আজকে সেই ধারনাটা ভুল প্রমাণিত হলো , যদি আপনি আমাকে নিজের ভালো ফ্রেন্ড বলে মনে করতেন তাহলে আমাকে সবটা বলতেন এভাবে লুকিয়ে রাখতেন না সবটা আমার থেকে ৷”

আরু একেই মানসিক দিক থেকে বিধ্বস্ত তার ওপরে আবিরের এই কথাগুলো আরুকে আরো তাঁতিয়ে দিচ্ছে, বুঝতে পারছে যতক্ষণ না আবির সবটা শুনবে ততক্ষণই এভাবে ওর কান মাথা খেয়ে যাবে ,তাই না পেরে আরু বিরক্তির স্বরে বলল
“আপনার ধারণাটাই ঠিক ৷”

কথাটা শুনে আবির চোখ বড় বড় করে আরুর দিকে তাকালো , খানিকটা থতমত খেয়ে বললো
” মানে !”

আরু আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখল আবির কেমন একটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে ৷আবিরকে দেখে বলল
” অবাক হচ্ছেন যে ! আপনিই তো বলেছিলেন যে উনি আরিশ খান নয় , আর সেটা আজকে আমিও বুঝতে পারলাম ৷”

আবির আরুর কথা শুনে কৌতূহলের সাথে বলে উঠলো
” কিভাবে বুঝলেন যে ওটা আপনার হাজব্যান্ড নয় !”

আরু ওর সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত কথা আবির কে বলল তবে খানিকটা ছন্নছড়ার মতো ৷ নিহান যে ওর কপালে ভালোবাসার পরশ একেছে তারপর নিহান আরুর এতটা কাছে ছিল সে সমস্ত কথা আবিরকে বলেনি যতই হোক এমন এক ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কথা কাউকে না বলাটাই ভালো ৷

আরুর কথা শুনে আবির খানিকটা মেজাজ নিয়ে বলল
” বলেছিলাম আপনাকে ওনার থেকে দূরে দূরে থাকুন, উনাকে আমার কোনভাবেই সুবিধার মনে হচ্ছে না আর মনে হয়নি কখনো , আপনি আর খবরদার ওনার সাথে কোন যোগাযোগ করবেন না ৷”

আরু বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল
” হমম ৷”

_________

আর্শিয়ান হোম ওয়ার্ক করছে আরু আরু আর্শিয়ানকে গাইড করছে ৷

paragraph : My family❤

” My family consists of 4 members – me ( Aarshian) ,mother and grandparents .
My mother is a worker and my grandfather is a businessman and my grandmother is a housewife…….

ক্লাস 1 এর My Family paragraph লিখছে আর্শিয়ান ,লিখতে লিখতে মাঝে মাঝেই খুব অবাক হচ্ছে ৷ আর্শিয়ানের ছোট্ট মনে বারবার একটা প্রশ্ন জাগছে যা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে আর যার দরুন. মাঝে মাঝে লিখতে লিখতে থেমে যাচ্ছে ৷6 টা লাইন লিখেই আর্শিয়ান আবার থেমে গেল, ওকে দেখে আরু খানিকটা রেগে গিয়ে বলল
” কি হচ্ছে আর্শিয়ান এগুলো,লিখতে লিখতে এভাবে থেমে যাচ্ছো কেনো? তোমার summer vacation এর এতো এতো homework তুমি কবে শেষ করবে বলো তো ! আর টিচাররাই যে কেনো বাচ্চাদের ওপর প্রেশার ক্রিয়েট করে কে জানে !”

আর্শিয়ান মুখটা ছোট করে বলল
” মাম্মাম এখানে সবার কথাই বলা আছে, আমার পাপার কথা কেনো বলা নেই ! কই তুমি তো একবারো পাপার কতা বললেনা ৷ পাপা কি আবার দুষ্তামি কলেতে যে তুমি পাপার কথা বলতোনা ৷”

আরু ছেলের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো , কি বলবে এখন ও ! ছোট্ট আর্শিয়ান যে তার মাম্মামের জীবনের এতো জটিলতা বোঝে না ৷

আরু আর্শিয়ানের দিকে একটু মুচকি হাসি ফুটিয়ে বলল
” আমার চকলেট বয়টা কি জানে না যে তার মাম্মাম তার পাপার ওপর রাগ করেছে তাই তার পাপার কথা বলছেনা !”

আর্শিয়ান এবার মুখে হাত দিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো, ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আরু ৷ একটা বাচ্চাকে কতটা মিথ্যা বলে শান্তনা দিয়ে তার মুখে হাসি ফোটানো যায় তার জ্বলন্ত সাক্ষী হল আর্শিয়ান ৷ ছেলেটা তার বাবাকে কখনো চোখে দেখেনি , কখনো তার ভালোবাসা পায়নি কিন্তু তাকে না দেখে কতটা ভালোবাসে তাকে, রক্তের সম্পর্ক গুলো হয়তো এমনই হয় ৷

আরু আর্শিয়ান কে কোলে নিয়ে বলল.
” থাক আজকে আমার চকলেট বয়টাকে আর পড়াশোনা করতে হয় না , আজকে আমার একটু হাটতে যাই কেমন !”

আরুর কথা শুনে আর্শিয়ান আরুর গালে একটা আলতো করে চুমু দিয়ে বলল
” থ্যাঙ্ক ইউ মাম্মাম, কিন্তু আমাল রাতে যে অনেক অনেক ভয় লাগে , রাতে নাকি ভূত আসে, আমি যাবো না মাম্মাম ৷”

ছেলের এমন কথা শুনে আরু খিলখিল করে হেসে দিল, তারপর বলল
” আমার আর্শিয়ান না বলে তার মাম্মাম সুপারওম্যান ,তা তোমার মাম্মাম কি কখনো তোমার কোন ক্ষতি হতে দেবে ? কখনো দেবে না, কারন তার মাম্মাম যে তার আর্শিয়ানকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসে ৷”
কথাটা শুনে আর্শিয়ান একগাল হেসে আরুকে জড়িয়ে ধরলো ৷

“আপনারা বেড়াতে যাচ্ছেন !মনে শুধু আপনি আর আর্শিয়ান ?”

“হমম ৷”( ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে)

” কোথায় যাচ্ছেন?”(আবির উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো )

“ইনানী বিচ ৷”

“সেটা আবার কোথায় ?”( আবির ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল)

“কক্সবাজারের কাছেই কিন্ত কক্সবাজারের মতো তেমন কোলাহল পূর্ণ না, আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসীম না থাকলেও আমার ছোট্ট আর্শিয়ানের মন ভরলেই হলো ৷”

” কক্সবাজারের মতো এতো ভালো একটা জায়গা থাকতে হঠাৎ ওখানে , আর থাকার ব্যবস্থা যদি ভালো না হয় ! আর সেখানকার পরিবেশ ই বা কেমন হবে !”(কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে)

” এ সমাজের এই কুলসিত পরিবেশের থেকে তো ভালো হবে , সেখানে গিয়ে অন্তত প্রান ভরে নির্জনতায় নিশ্বাস তো নিতে পারবো তাইনা ! আমাদেরকে নিয়ে আপনি হয়তো এটু বেশিই ভাবেন তাই কপালের চামড়ার ভাঁজগুলো তীব্র, অযথা বেশি হেডেক নিতে যাবেন না আমাদেরকে নিয়ে, আমরা ভালো আছি ৷”

কথাটা বলে সিএনজি করে আরু অফিসে চলে গেল ৷ আরুর কথায় আবিরের একটু খারাপ লাগলো ,আরু ওকে ইনডাইরেকটলি মাঝে মাঝেই কথ শোনায় যা আবিরের বড্ড গায়ে লাগে ৷

#চলবে,,,,, Suraiya Aayat

শান্ত হন সবাই, গল্পে ঝুড়িঝুড়ি রহস্য যখন রৈখেছি তখন রহস্যর উন্মোচন ও হবে ৷ আপনারাও আবিরের মতো বেশি বেশি ভাবেন ৷🤷🏻
#চলবে,,,,,

কালকে থেকে জ্বর, বহু কষ্টে ছোট করে একটু লিখলাম, কিছুই ভালো লাগছে না, জ্বর এসেছে তো যাচ্ছেই না, সবাই দোঁয়া করবেন যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই ৷
কেমন লাগলো জানাবেন ৷
আর যারা বলছেন যে গল্প ভালো লাগছে না,তাদেরকে একটাকথাই বলবো, প্লিজ একটু ধৈর্য ধরে পড়ুন, আমি একটা থিম ধরে এগোচ্ছি ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here