তুমি_নামক_প্রাপ্তি পর্ব ৬+৭

#তুমি_নামক প্রাপ্তি
#পর্ব:6
#Suraiya_Aayat

আরশিয়ান আরুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ঘুমাচ্ছে , আর ওর বিছানার পাশে থাকা চেয়ারটাতে বসে আছে আবির ৷
বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা কাটিয়ে আবির বলে উঠলো

“আপনার কি এখনো মনে হয় যে আরিশ আবার ফিরে আসবে ! আমার কিন্তু তা মনে হয় না ৷ আর ওনার জন্যই আপনি সমাজের মানুষের কাছে এতটা অপদস্ত হচ্ছেন তাই পুরোনো সবকিছু ভুলে নতুনভাবে কি শুরু করা যায় না জীবনটাকে ? এইভাবে আর কতদিন একটা মানুষের জন্য অপেক্ষা করবেন?”

কথাটা শোনা মাত্রই আরু আবিরের দিকে এমন একপ্রকার দৃষ্টি নিয়ে তাকালো যে আবিরের চোখের দিকে তাকালো যে আবিরের পক্ষে আর আরুর দিকে তাকিয়ে থাকা সম্ভব হলো না ৷ মাথাটা নিচু করে নিয়ে বলল
” না আমি আসলে তেমনটা বলতে চাইনি, আসলে দেখতেই তো পাচ্ছেন সমাজের মানুষ আপনাকে কত নোংরা কথা শোনাচ্ছে , তাই বললাম আর কি ৷”

” সমাজের মানুষকে আমি পরোয়া করিনা, আমি নিজের মতো চলতে পছন্দ করি, আর আশা করি আপনি আমার ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে আসবেন না ৷”

কথাটা শুনে আবিরের একটু খারাপ লাগছে তবুও আরুর মনের অবস্থা বুঝে বলল
” আপনি যা ভাল বোঝেন তাই করেন ৷ আচ্ছা এখন আমি আসছি ৷”
বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

আবির চলে যেতেই আরু আরশিয়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করলো , অনেকক্ষণ ধরে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে, মুখটা একেবারে শুকনো লাগছে ৷ কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলে গেছে, আর সেখানে আরূর চোখ থেকে এক ফোটাও জল গড়ায়নি হয়তো আজ নিজেকে পাথরের মতো শক্ত করে নিয়েছে তাই ৷ দাঁতে দাঁত চেপে গিয়ে মুখের ভিতরের খানিকটা নরম মাংস কেটে রক্ত বেরিয়েছে , যদিও সেটা কেউ দেখেনি ৷ জেলে ঢোকানোর পর পরই মহিলা কনস্টেবলটা ওর গাল চেপে ধরেছিল তখনই দাঁতের সাথে দাঁত লেগে নরম মাংস কেটে রক্ত বেরিয়েছে৷
আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আরশিয়ানকে নরম গলায় বলল
” আমার চকলেট বয়টার খুব খিদে পেয়েছে তাই না !”

হঠাৎ করে আরশিয়ান মাথা নাড়িয়ে না জানালো, যে তার খিদে পায়নি ৷
আরু আরশিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বলল
” তুমি একটু দাঁড়াও , আমি এক্ষুনি খাবার বানিয়ে আনছি ৷”

বলে আরু নামতে গেলেই আরশিয়ান শক্ত করে আরুর কোমরটা জাপ্টে ধরে বলল
” তুমি কোথাও যাবে না মাম্মাম , আমাকে একা রেখে তুমি যেখানে যাবে না ৷যেখানে যাবে আমাকে নিয়ে যাবে ৷ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না৷”

আরু আরশিয়ানের কপালে চুমু দিয়ে আরশিয়ানকে কোলে তুলে নিল ৷

রান্নাঘরে আরশিয়ানের জন্য খাবার বানাচ্ছে আর আরশিয়ান ওর শাড়ির আঁচল ধরে আরূর সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ৷ আরু সবসময় চায় ওর নিজের জীবনের কুলুষিতা যেন কখনো ওর ছেলে ওবধি না পৌঁছাতে না পারে , কিন্তু এই মুহূর্তের পরিস্থিতিতে যা যা হচ্ছে তাতে আরশিয়ানের ছোট্ট মনে এফেক্ট পড়ছে অনেকটাই ৷এমনভাবে চলতে থাকলে ওর ছেলের শৈশবটা নষ্ট হয়ে যাবে , তাই আর কিছু ভুল করতে চাই না ও ৷

_______

সকাল সকাল আরু অফিস যাবে,কিন্তু আরশিয়ানকে একা তো রেখেও যেতে পারবে না,
তাই আরশিয়ানকে রেডি করে নীচে নামলেই আবির ওদেরকে দেখে বলে উঠলো
” কোথাও যাচ্ছেন?”

“হমম ৷”

” কোথায়?”

আরু সোজাসাপটা উত্তর দিলো
” অফিসে ৷”

” আরশিয়ানকে নিয়ে যাচ্ছেন যে !”

” আরশিয়ান না গিয়ে আর কি করবে, আরশিয়ানকে আগের school থেকে ছাড়িয়ে এনেছি তাই এখনো নতুন school এ ভর্তি না করানো অবধি আরশিয়ানকে আমি নিয়ে যাবো ৷”

” আরশিয়ানকে আপনি ওই school থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে এসেছেন! আপনি কি জানেন না যে ওটা কতোবড়ো নামকরা school!”

আরু অযথা কারোর কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই তাই আবিরকেও কিছু বলতে চাইছে না, কিন্তু আবিরের এমন কথায় ওর রাগের মাত্রাটা বেড়ে যাচ্ছে, তবুও নিজেকে সংযত করে নিয়ে বলল
” আমার ছেলেকে আমি কোথায় পড়াবো আর কোথায় না পড়াবো সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাক্তিগত একটা ব্যাপার তাই অজথা যেচে যেচে কিছু জানতে না আসাই শ্রেয় ৷”

আরুর কথায় আবিরের খারাপ লাগলো, মনে ভিতর গেঁথে থাকা কথাটা বলে উঠলো
” কালকে থেকে আপনি আমার সাথে অদ্ভুত একরকম ব্যাবহার করছেন, আপনি কি কোন কারনে আমার ওপর রেগে আছেন? আপনিই তো বললেন যে আমি আপনার ভাইয়ের মতো তাই তো আপনাকে সাহায্য করতে চাইছি , আর কিছু না ৷ যদি ভাবেন যে আপনার এই সাহায্যের পিছনে আমার কোন উদ্দেশ্যে আছে তাহলে আমি আর আপনাকে কখনো সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবো না ৷”

আবিরের বলা কথায় একপ্রকার অভিমানের আঁচ পেয়ে আরুর একটু খারাপ লাগলো তাই নিজেই হঠাৎ করে বলে উঠলো
” আপনি একটু আরশিয়ানকে দেখে রাখবেন যতখন না আমি অফিস থেকে ফিরি ৷শুধু ততক্ষনের জন্য ৷”

আরুর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আবিরের মুখটা যেন চমকিত হলো, একরাশ উৎফুল্লতার সাথে বলল
” অবশ্যই , আরশিয়ান তো আমার নিজের লোকের মতোই ৷ বলে আরিশয়ানকে কোলে তুলে নিলো ৷”

আবির ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বলল
” আপনি তাড়াতাড়ি যান ,নাহলে আবার দেরি হয়ে যাবে ৷”

আরু আরিশিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
” আমার চকলেট বয়টা যেন একটুও দুষ্টামি না করে কেমন !”

” ওকে মাম্মাম ৷”

আরু আবির আর আরশিয়ানের থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে রওনা দিলো ৷

______

অফিসে বসে আছে আরু নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে, অফিসে বসের জায়গায় আপাতত কেউ নেই, ম্যানেজার সমস্ত কিছুর দায়িত্ব নিয়েছেন ৷
পাশের ডেক্সে লারা তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বসে গল্প করছে , মাঝে মাঝেই মুচকি মুচকি হেসে উঠেছে তার শব্দ আরুর কানে পৌঁছেছে ৷ লারার কথার মাঝে মাঝে টিভি থেকে ভেসে আসা শব্দটা বড্ড কানে বাজছে, আর তাতে এরকম বলা হচ্ছে
” দিন দিন বেড়েই চলেছে নারী পাচারকারীদের সংখ্যা, ধর্ষন হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে নারী ৷ সমাজে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলন বাড়ছে ৷
গত তিনদিন আগে বগুড়ার এক পরিবারের 3 টে মেয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাওয়ায় চলছে পুলিশী তদন্ত ৷ অনুমান করা হচ্ছে সেগুলো নারী পাচারকারীর কাজ ৷ তবে কে এই নারীপাচারের মূল কান্ডারী তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷”

কথাটা শোনা মাত্রই আরূ ওর দুই কান দুই হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো , এগুলো আর সহ্য করা যায় না ৷ কেন সমাজে নারীদের প্রতি এত ব্যভিচার এত অত্যাচার হয়ে আসছে, তার কোন প্রতিবাদ হয়না কেন? কেন ? আরুর মুখশ্রী রাগে পরিবর্তন হয়ে রক্তিম আভা গ্রহন করেছে ৷ যদি সেই পাচারকারীদের সামনে পেত তাহলে হয়তো এক ঘায়েলেই শেষ করে দিত তাদেরকে ৷ হঠাৎ করে পিছন থেকে শেফালী বলে মেয়েটা আরুর কাঁধে হাত রেখে বলল
” কি হয়েছে তোমার ! শরীর খারাপ লাগছে ?

আরু থতমত খেয়ে চমকে গিয়ে বললো
” কই নাতো ৷”

” তাহলে এইভাবে কানে হাত দিয়ে রয়েছে তাই ভাবলাম ৷”

“না না , আমার কিছু হয়নি ৷ কিন্ত তুমি কিছু বলবে?’

” হ্যাঁ একটা কথা বলার ছিলো তুমি বোধহয় জানো না ৷”

” কি কথা!”(আরু অবাক হয়ে)

“আরে আমাদের অফিসের বস ওনার কথা কিছু জানো না?”

” কই না তো ! কেনো কি হয়েছে ওনার ? ওনি তো জেলে ৷”(আরূ ভ্রু কুচকে বলল)

” আরে তাহলে তো দেখছি তুমি কিছুই জানো না এই ব্যাপারে ৷আসলে কালকে রাত্রে উনি নাকি জেল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তারপর আজকে সকালে ওনার ডেড বডি পাওয়া যায় বনানী এক নম্বর রোডের কাছে ৷ খুব খারাপ ভাবে নাকি ওনাকে মারা হয়েছে ৷”

কথাটা শুনতে আরুর সারা শরীর শিউরে উঠলো , কিভাবে এসব হলো! আর উনি নিজে থেকেই বা পালালো কিভাবে ! রীতিমত অবাক লাগছে আরুর ৷ আরু থতমত খেয়ে বললো
” কিভাবে এতকিছু হলো ? ”

” সে তো আমিও জানিনা, উনার ডেড বডি পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে ,যতক্ষণ না রিপোর্ট আসে ততখন কিছু বলা যায় না ৷”

আরুর মুখে গভীর ভাবনার ছাপ দেখে শেফালী বলল “আরে কোন চিন্তা করো না, তোমার ভয়ের কোন কারণ নেই ৷ তাছাড়া আরেকটা খবর পাওয়া গেছে ৷”
আরু ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি ?”

“উনি ওই নারী পাচারের সাথে যুক্ত ছিলেন,উনি মেন একজন না হলেও উনি নাকি সেই দলের মধ্যে একজন ছিলেন ৷ ”
এরকম আরো কিছু কথা বলে শেফালী সেখান থেকে চলে গেল , আরুর মনে এখন শান্তি লাগছে , কথাটা শুনে প্রথমে একটু খারাপ লাগলো ওর কিন্ত এখন অদ্ভুত এক প্রশান্তি ছেয়ে যাচ্ছে ওর মনে ৷
” সমাজের এমন ব্যভিচারীদের বাঁচার কোন অধিকার নেই , যারা নারীদের সম্মানই করতে জানেনা ৷আজ এক ব্যাভিচারীর দমন হলো !”

_______

আজকে আরুর মনটা বেশ ভালো , কয়েকদিনের টানা ঝড়ঝাপ্টার পর আজকে যেন প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, অফিস থেকে ফিরে আরশিয়ানের তুমূল দাবি যে সে আজ তার মাম্মামের সাথে পার্কে যাবে ৷ ওর সব ফ্রেন্ডসদেরকে দেখে যে তারা সবাই তাদের বাবা মায়ের সাথে পার্কে যায়, তাই আজ আরশিয়ান ও যাবে ৷ ছেলের এই দাবী আরু কখনোই ফেরাতে পারবে না , তাছাড়া পরের সপ্তাহ থেকে আরশিয়ান নতুন স্কুল জয়েন করছে, তখন আরশিয়ান খেলাধুলা করার সময়টা কম পাবে তাই এখন যখন ফ্রি আছে তাই আরশিয়ানের এটুকু দাবি আরু রাখতেই পারে ৷ আরু অফিসে যাওয়ার পর আবির আরশিয়ান কে সাথে করে নিয়ে নতুন স্কুলে ভর্তি করিয়ে এসেছে, কথাটা শুনে খুব খুশি হয়েছে আরু , তাতে করে ওর আবিরের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তিটা অনেকটাই বেড়ে গেছে ৷

আরু বেঞ্চের উপর বসে আছে আর আরশিয়ান দোলনায় দোলা চড়ছে , আরশিয়ান এর উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আরু একটু চোখটা বন্ধ করে মাথা নিচু করে বসে রইল ৷ কিছুখন চোখ বন্ধ করে থাকলেই হঠাৎ করে কানে ছেলের কান্নার আওয়াজ পেতেই আরুর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো ৷ তাড়াতাড়ি করে আরশিয়ানের দিকে ফিরে দেখল আরশিয়ান কাঁদছে , আর তাকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখে তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে আরিসের মত দেখতে হুবহু একটা মানুষ ৷
মানুষটাকে দেখে আরুরর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো, তাহলে সত্যিই কি ওর চোখ এতবার ভুল করে ? সব জায়গাতেই কি ও আরিশকে দেখে !

এবারের মানুষটাকে আর আরিশ ভেবে ভুল করবে না ও, বারবার হামলে পড়বে না ও তার বুকে ৷ আরুর ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে, তবুও ছেলেকে কাঁদতে দেখে দৌড়ে ছুটে গেল আরু ৷

আরু দৌড়ে দৌড়ে ছুটে যাচ্ছে আর লোকটার গলার কণ্ঠস্বর ওর কানে ভেসে আসছে ৷ উনি আরশিয়ানকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে আরশিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছেন
” কাদেনা চ্যাম্প, তুমি না স্ট্রং , চ্য৷ম্পরা কখনো কাঁদে না , সব সময় ঘুরে দাঁড়ায়, এটুকুতেই কাঁদলে হবে !”

আরশিয়ান যেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, আরশিয়ান দোলনা থেকে আছড়ে পড়ে গেছে তাই প্রচন্ড জোরে আঘাত পেয়েছে , পায়ের কিছু অংশ কেটে গেছে,
লোকটার কাছে গিয়ে সামনে দাঁড়াতেই লোকটাকে দেখে আরু দেখলো মানুষটা আর কেউ না তর আরিশ,তবুও বারবার মানুষটার ছলনার শিকার হতে হতে ও দমে গেছে ৷ এতক্ষণ ধরে অনেক চেষ্টা করেছে নিজেকে আটকে রাখার কিন্তু সত্যি যখন মানুষটাকে আরো কাছ থেকে দেখল তখন হুবহু আরিশের মতো লাগছে লোকটাকে ৷
এত ছলনা আর সহ্য করা যাই না ৷
লোকটার কাছ থেকে আরশিয়ানকে ছিনিয়ে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল
” আরশিয়ান শুধু আমার , আর কারো নয়, আমি জানি আপনি আবার আমার কল্পনায় এসেছেন, আপনি শুধু আমার কল্পনাতে আসেন আর আমাকে এভাবে আবেগে ভাসিয়ে দিয়ে চলে যান, কিন্তু আর আমি আবার আপনার আবেগে ভাসবো না, আপনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আপনার কাছে সকল অভিযোগ জানাবো না , কারণ আমি জানি আমি আপনাকে স্পর্শ করলেই আপনি হাওয়ার মতো মিলিয়ে যাবেন, যেখান থেকে আমি আর আপনাকে ফিরে পাবো না ৷ আর উপরন্ত সমাজের মানুষের কাছে আমি একজন খারাপ আর ব্যভিচারী নারী হিসেবে পরিচিত হবো ৷ বারবার একই জিনিস যে আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না ৷”
আরশিয়ানকে বুকে জড়িয়ে রেখে চোখ বন্ধ করে কথাগুলো একনাগাড়ে বলে চলেছে আরু ৷

আরুর সামনে থাকা লোকটা যেন আররু এই অনর্গল কথা বার্তায় অবাক ৷
উনি অবাক হয়ে বললেন
“এই যে মিস , আপনি তো দারুন ডাইলগ বলেন দেখছি , আমার কিন্তু খুব পছন্দ হয়েছে ৷ এখন তো মনে হচ্ছে অভিনয়টা আপনার থেকেই আমাকে শিখতে হবে ৷ তো আপনি যদি চান তো আপনাকে আমার হিরোইন বানাতেই পারি ৷’
আরুর দিকে চোখ টিপ মেরে ৷

হঠাৎ এমন একটা মুহূর্তে এরকম কথা শোনার জন্য হয়তো আরু সত্যিই প্রস্তুত ছিল না, তাড়াতাড়ি ঝটপট করে চোখটা খুলে সামনে থাকা মানুষটার এমন কথাবার্তা শুনে তার দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে রইল আরু ৷ মানুষটাকে বোঝার চেষ্টা করছে , সত্যিই কি এটা ওর কল্পনা নাকি ওর আরিশ ৷

না মানুষ ওর কল্পনা বলে মনে হচ্ছেনা , কল্পনা হলে আরিশ ওর কথার পরিবর্তে উত্তর জানাতে পারতো না , তার মানে নিজের কাঙ্ক্ষিত মানুষটা ওর সামনেই আছে ৷
আরু আরশিয়ানকে ওর কোল থেকে নামিয়ে আরিশের উদ্দেশ্যে বলল
” আপনি কি আবার আমার সাথে ছলনা করছেন ! কেন এরকম করছেন বলুন ? আমার কি অপরাধ যে আপনি এমন টা করছেন ! কেন আমাকে ভালোবাসছেন না ! কাছে টেনে নিচ্ছেন না !”

“আমি আবার কি করলাম!”(লোকটা অবাক হয়ে বলল)

কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই আরু লোকটাকে জড়িয়ে ধরলো, তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো লোকটার বুকে ৷ কতদিন পর নিজের প্রিয় মানুষটাকে পেয়ে আর সামলাতে পারছেনা নিজেকে , এতদিন আরিশকে শুধু মাত্র ওর কল্পনাতেই পেয়েছে, আর যেখান থেকে বারবার আরিশ হারিয়ে গেছে, কিন্তু আজকে আরিশ আর হারিয়ে যাচ্ছে না, ওর বাহুঢোরেই আবদ্ধ সে ৷

লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো , আশেপাশের অনেক লোক ওদের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ হঠাৎ করে পাশ থেকে একটা মহিলা বলে উঠলো
” এই এটা সেই লোকটা না যিনি দ্য সিটি অফ মেক্সিকো ম্যাগাজিনে মডেল হিসেবে কাজ করে, যার খবরা-খবর ম্যাগাজিনে ছাপানো হয় ৷”

কথাটা আরুর কানে গেল, ওনার কথা শুনে আরু লোকটাকে ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এবার তার কলার ধরে বলল
” আপনি একজন ব্যভিচারী, আপনি আমার সাথে অন্যায় করেছেন ,কেন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন? আমি কি একবারো তা বলেছিলাম ! নিজের ছেলেটার কথা একবারও মনে হয়নি আপনার যে আপনি চলে গেলে আপনার ছেলেটা কি হবে! আপনার স্ত্রীর কি হবে !আর ওনারই বা কেন আপনার নামে এসব বলছেন! কেন? কেন ?কেন?”

লোকটা আরুর কথায় অবক হচ্ছে তা ওনার মুখের ভাব ভঙ্গিতে স্পষ্ট ৷

আরুর কথার মাঝখানে হঠাৎ আবির আসলো , আবির লোকটাকে দেখে অবাক হয়ে আরুকে থামিয়ে দিয়ে বলল
” কি হয়েছে ? আপনি ওনার কলার ধরেছেন কেন ? উনি কি আপনার সাথে কোন বাজে ব্যবহার করেছেন?”

আরুর সামনে থাকা লোকটা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল
” ও ভাই , আপনার কি আমাকে দেখে ডাকাত মনে হয় যে আমি ভরবিকালে ওনার সাথে বাজে ব্যবহার করবো, আমার কি দোষ ! ওই মহিলাটিই তো আমাকে নিজের স্বামী বলে দাবি করছেন , আমি তো কিছুই বঝতে পারছি না , হয়তো ওনার মাথায় কোন সমস্যা আছে, ভাই আপনি ওনাকে এখান থেকে নিয়ে যান তো ৷”

আরু এবার লোকটার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
“আপনি একদম মিথ্যা বলবেন না , মিথ্যা জিনিসটা আপনার নামের সাথে যায় না, আপনি আরিস খান , আর আরিশ খান কখনো মিথ্যা বলে না ৷”

লোকটা অবাক হয়ে বলল
” আমিতো নিহান আবরার, আরিশ খান হলাম কবে ?জানি আমি অভিনয়টা বেশ ভালোই করি তবে এভাবে নিজের ভোল পালটে দেব ও মাই গড !🙀”

” আপনি নিহান হতে পারেন না ৷ আপনি শুধু আমার আরিশ , শুধু আমার আরিশ ৷”( আরিশকে জাপটে ধরে)

আবির এবার আরুর হাতটা ধরে বলল
” এই সমস্ত ফালতু লোক আপনার স্বামী হতে পারে না,হতে পারে তার মুখের সাথে মিল আছে তবে এটা উনি নই ৷”
আরু খানিকটা অবাক হল, আবির ওর হাত ধরাতে, আর আবির ই বা কি করে জানলো যে আরিশ কেমন দেখতে ?
কথাটা শেষ করেই আবির আরুর হাত ধরে আর আরশিয়ানকে কোলে নিয়ে চলে যেতে নিলেই নিহান নামের লোকটা বলল
“এই যে ম্যাডাম শুনছেন ! অভিনয়টা কিন্তু আমি বেশ ভালোই পারি , আপনি চাইলে আপনাকেও আমার সঙ্গে নেব পার্টনার হিসাবে ৷ ”
বলে আরুর দিকে চোখ মেরে গান ধরল
” সুন মেরি শেহজাদি , মে হু তেরা শেহজাদা ৷”

আরুকে আবির টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর আরু ঘাড় ঘুরিয়ে প্রিয় মানুষটাকে দেখছে ৷
নিহানের মুখে আছে সেই চিরচেনা মুচকি হাসি যেটা আরিশের মুখেও সবসময় থাকতো আর যেটার প্রেমে আরু বারবার পড়েছে ৷
#তুমি_নামক_প্রাপ্তি
#part:7
#Suraiya_Aayat

আরুর হাত ধরে টানতে টানতে আবির আরুকে রুমে এনে আরুর হাতটা ছেড়ে দিতেই আরু অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল
” আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে এখানে এভাবে টেনে আনার ! আর আপনি আমার হাত ধরলেন কোন সাহসে !”

আবিরের মাথাটা এমনিতেই গরম ছিলো আর তার ওপর আরুর এমন চিল্লাপাল্লা শুনে ওর মাথা আরো গরম হয়ে গেল ৷ আরুর কথাটা শুনে রেগে গিয়ে বলল “আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? আপনি ওইভাবে পার্কের অত লোকজনের মধ্যে অন্য একজন লোককে নিজের স্বামী বলে দাবি করেছেন , সবাই তো আপনাকে পাগল বলবে ৷ এমনিতেই আপনি যা করেছেন সেটা পুরো বিল্ডিং রটে গেছে অলরেডি তার ওপর এগুলোকে বাইরের লোককে না জানালেই কি নয় ! আপনি যা যা করছেন সেগুলো শুনে সমাজের লোকেরা কি বলবে !”

আরু এবার আঙ্গুল উঁচিয়ে বললো
” একবার বলেছিনা আমি সমাজের লোকের পরোয়া করিনা, বারবার আমাকে সমাজের মাঝখানে টেনে আনবেন না ৷ আপনি যে সমাজের কথা বলছেন সে সমাজের মায়া আমি বহুদিন আগেই ত্যাগ করে চলে এসেছি ৷ আমার সমাজটা ভিন্ন, আমার সমাজে প্রতিবাদী মায়েরা লড়াই করে বিলাসিতা পূর্ণ জীবনযাপনকারী রা নয় , আর সেটা আপনি যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন সেটা ততই আপনার জন্যই ভালো ৷সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি আমার আরশিয়ান এর কোন ব্যাপারই না আসেন ৷ এতদিন অনেক প্রকার উপকার করেছেন যার ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না আমি তাই দয়া করে সেই ঋণের পরিমাণটা আর বাড়াতে আসবেন না, পারলে আমার আর আমার ছেলের থেকে দূরে থাকুন , এটাই আমাদের জন্য ভালো হবে আর আপনার জন্যও ৷”

আরুর এমন কথা শুনে আবির রেগে গেলে, রেগে গিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
আবির বেরিয়ে যাওয়াতে আরু একেবারে অনুতপ্ত নয় কারন ওর মনে যা এসেছে সমস্ত সত্যি কথাটাই ও বলেছে ৷ আরু লক্ষ্য করেছে যে আবির এই কদিন যেচে আরুর জীবনে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে যে জিনিসটা ওর একদমই ভালো লাগছেনা, তাই কথাগুলো এই মুহূর্তে আবিরকে বলার দরকার ছিল ৷

আবির চলে যেতেই আরশিয়ান আরুর হাত ধরে ডাকতে ডাকতে বলল
” মাম্মাম ওই লোকটা কে ছিলো?”

আরু এবার আরশিয়ান কে বিছানায় বসিয়ে আরশিয়ান কে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল
” ওটা তোমার পাপা আরশিয়ান , ওটা তোমার পাপা ৷ তোমার পাপা ফিরে এসেছে ৷ উনি যতই বলুক যে উনি আরিশ খান নন কিন্তু আমি জানি উনিই আরিশ খান , উনাকে চিনতে আমার এতোটুকুও ভুল হবেনা কখ্নো ৷”
আর্শিয়ান সমস্তটা না বুঝলেও এটুকু বুঝতে পারলো যে লোকটা তার পাপা ৷ কথাটা ভেবেই মুখের হাসিটা চওড়া করে আরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ৷ তার পাপা আবার ফিরে এসেছে ,আর আরশিয়ান তার পাপাকে সামনাসামনি দেখলো, এখন থেকে স্কুলে গিয়ে সে ও বলতে পারবে আমার পাপা সুপারম্য৷ন ৷আরশিয়ান আবার তার পাপাকে ফিরে পেতে চায়, তার মাম্মামের মুখে হাসি দেখতে চাই ৷

_________

” দেখুন আন্টি আমি আর কি বলব সবইতো আপনারা জানেন, আমার স্ত্রী বিয়ের পাঁচ মাস পরে মারা যান কঠিন অসুখে , অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমি বাঁচাতে পারিনি ৷ ”

কথাটা বলতেই ইলমাজের চোখের জল চিকচিক করে উঠলো ৷ পলক ঝপকালেই জল টপটপ করে গড়িয়ে পড়বে ৷ বাড়ি ভর্তি লোকজন এর সামনে তার মনের কথাগুলো ব্যক্ত করছে ইলমাজ , মনে একরাশ অভিমান জমা রয়েছে সমস্ত কিছুর প্রতি ৷ তাছাড়া আরুর প্রতি যা হয়েছে তার জন্য নিজেকে দোষী মনে করে ও ৷

আহান মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে আর সব মনোযোগ সহকারে শুনছে কারণ যা হচ্ছে সেগুলো সব শোনার খুব দরকার ৷ হঠাৎ ওর দেড় বছর বয়সী বাচ্চা মেয়েটা উঠতেই আহান সানাকে ডেকে বলল
” সানা মুগ্ধতা কাঁদছে, ওকে নিয়ে যাও , ওর হয়তো খিদে পেয়েছে ৷”

সানা হাত মুছতে মুছতে এসে মুগ্ধতাকে কোলে নিয়ে চলে যেতে নিলেই ইলমাজের কথাটা শুনে খানিকটা থেমে গেল , হঠাৎ ইলমাজ আবার বলতে শুরু করল
” মৃন্ময়ী চার মাসের অন্তঃসত্তা ছিলো , কত আশা ছিল ওর আমাদেরও একটা এমন ফুটফুটে মেয়ে হবে , তার ও একটা সুন্দর নাম দেবে , কিন্তু তার আগেই তো সবকিছু শেষ হয়ে গেল ৷”

ইলমাজের কথা শুনে আহানের ভ্রু জোড়া কুঁচকে এল ৷ইলমাজের কথা শুনে তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে বললো
” তা কি এমন রোগ হয়েছিল আপনার স্ত্রীর, যে আপনার স্ত্রী মারা গেলেন ৷”

” এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস , এই রোগটা হয়েছিল তার ৷”

” হ্যাঁ মানলাম আপনার স্ত্রীর এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস হয়েছিল কিন্তু এটা তো দ্বিতীয় বার প্রেগনেন্সির সময় বেশিরভাগ সময় হয়, কিন্ত আপনার ওয়াইফ তো প্রথমবার প্রেগনেন্ট তাহলে ! ”

আহানের কথাশুনে ইলমাজ খানিকটা থতমত খেয়ে গেল তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
“হমমম প্রথমবার ই তো ৷”

” মায়ের আরএইচ ফ্যাক্টর পজেটিভ আর বাচ্চার আরএইচ ফ্যাক্টর নেগেটিভ হওয়ার দরুন অনেক কম্পলিকেশন দেখা যাই তাই বেবিটাকে মিসক্যারেজ করে দিতে বলা হয় ৷ ডাক্তার নিশ্চই বেবিটাকে মিসক্যারেজ করার কথা বলেছে কিন্তু আপনার স্ত্রী কেন বেবি মিসক্যারেজ করাননি ? কেন এত বড় একটা রিস্ক নিতে গেলেন ?”

কথাশুনে ইলমাজ থমকে গেল ৷

হঠাৎ করে আহানকে থামিয়ে দিয়ে আরমান সাহেব বলে উঠলেন
” আহান তোর কি সব জায়গায় এমন করতে হবে ডক্টর বলে ৷ আরে ইলমাজ কি তোর মতো ডক্টর যে ওইসব ব্যাপারে ও এতটা ডিটেইলসে জানবে ! এসব ছাড় আর ও কি বলতে চাইছে সেটা শোন ৷”

এবার ইলমাজ বলে উঠলো
” আরু যদি আমাকে বিয়ে না করতে চাই তাহলে আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই, কারণ ওর ও তো একটা নিজস্ব জীবনের স্বাধীনতা বলে কিছু আছে, নিজের মতামত প্রকাশের সম্পূর্ণ অধিকার আছে তাই ওকে জোর করলে ওর মতবিরোধে কিছু করলে সেটা ঠিক হবে না,বরং অন্যায় হবে ওর প্রতি তাই আমি জোর করে কোন কিছু চাইনা ৷”

আহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরমান সাহেব বলে উঠলেন
” আরশিয়ান আছে বলেই হয়তো আরুর এগুলোকে মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু আমরা যদি মাথা ঠান্ডা রেখে ওকে সবটা বোঝাই তাহলে আমি নিশ্চিত আরু বুঝবে ৷আর ও এতটাও অবুঝ নয় ৷ আগের দিন রাগের মাথায় আমিও অনেক উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছি , আমার মাথারো কোন ঠিক ছিল না, ৷”

উনার এমন কথা শুনে আহান আর না বলে পারল না, ” ও যদি বিয়ে না করতে চায় তাহলে ওকে জোর করছ কেন! অযথা জোর করে কারোর মতবিরোধে কিছু করে সেটা কখনো শান্তি পূর্ণ হয়না , ও যদি আরশিয়ানকে নিয়ে একা ভালো থাকতে চাই তো থাক না ৷ কেন ওর জীবনে হস্তক্ষেপ করছো !”

আরমান সাহেব মুচকি হেসে বললেন
” মুগ্ধতা বড় হচ্ছে আহান ৷ যখন মুগ্ধতার বিয়ে হবে তখন তুই বুঝবি এটা ৷ এটাও বুঝবি যে একটা বাবার তার মেয়েকে নিয়ে কতটা চিন্তা থাকে ৷”
বলে উনি চোখের চশমাটা খুলে চোখের জলটা মুছে নিয়ে ঘরের দিকে চলে গেলেন ৷ বাবার এমন কথা শুনে আহান আর কিছু বলতে পারলো না ৷

_________

আরশিয়ান বসে বসে কার্টুন দেখছে আর আরু আইসক্রিমটা ফ্রিজে রাখছে , আরশিয়ানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ফ্রিজের দরজাটা বন্ধ করলো ৷ আরশিয়ান রোজ রোজ ই বাহানা করে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য কিন্তু আরু খেতে দেইনা, কিন্তু আজকে হঠাৎ কি মনে হলো নিজেই আইসক্রিম অর্ডার দিয়েছে , তবে এখনো আরশিয়ানকে দেখাইনি,আরশিয়ানকে দেখালেই এখন খাওয়ার জন্য বাহানা করবে আর আরু দিতে না পরলে ছেলেটা মনে মনে কষ্ট পাবে তাই আরশিয়ানের থেকে লুকিয়ে রেখেছে ৷

ফ্রিজের দরজাটা বন্ধ করে আরু রোজকারের দিনের মতো আজকেও ব্যালকনিতে গেল, হয়তো নিহান নামক ছদ্মবেশি মানুষটাকে একটাবার দেখবে সেই আশায় ৷ যদিও ও জানে না যে আরিশ সেখানে থাকে কি থাকে না, কিন্তু রোজ ই মনুষটাকে এই জায়গাটাই ও দেখতে পাই, সেটা ওর কল্পনা হোক বা ওর বাস্তবে ৷

বাইরে ফুরফুরে হাওয়া বইছে আর আরু বাসাতে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টাই আছে ৷ সমাজের এই কুলষিতার মাঝে আরুর মাঝে মাঝে বড্ড ইচ্ছা করে সবকিছুর মিছে মায়া ত্যাগ করে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে ,শুধুমাত্র আরশিয়ানের জন্য যেতে পারেনা, আরিশয়ান সাবলম্বী হলে আরু আরশিয়ানের বিয়ে দিয়ে সবকিছুর মায়া কাটিয়ে চলে যাবে ,কারোর বোঝা হয়ে ও থাকতে চাই না ৷
বেশ অনেকখন হয়ে গেল কিন্তু আজকে আর অন্য দিনের মতো আরিশ নেই দেখে আরুর মনটা খারাপ হয়ে গেল ৷ আরিশকে ও নিজের কাছে ফিরিয়ে নেবেই,নিজের জন্য না হলেও আরশিয়ান এর জন্য ৷

#চলবে,,,,
#চলবে,,,,,

2222 word….উইইইমা টুইটুই🙀

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here