তুমি_নামক_ব্যাধি পর্ব ১৫

#তুমি_নামক_ব্যাধি
#মুন্নী_আরা_সাফিয়া
#পর্ব_১৫

ঠাস করে থাপ্পড়ের শব্দ কানে আসতেই গালে হাত দিলাম।তিহাম ভাইয়া আমার গালে থাপ্পড় মেরেছে? অবাক হয়ে তাকাতেই উনি আমায় বিছানার সাথে চেপে ধরে আগুন ঝরানো কন্ঠে বললো,

—‘আমার কথা ভাববি না?এখন তোর এমন হাল করবো যে আজকের পর থেকে শুধু আমার কথাই ভাববি!আমি না থাকলেও তোর সব জুড়ে শুধু আমার রাজত্ব থাকবে।’

বলেই আমার সারা মুখে, গলায় এলোপাথাড়ি চুমু দিতে লাগলো। রাগে,দুঃখে বুক ফেটে কান্না আসছে।কিন্তু কেনো জানি দুচোখ দিয়ে অশ্রু বের হচ্ছে না।যেটা বের হচ্ছে সেটা গলো আগুন।নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

—‘জানোয়ার,বজ্জাত, তুই ছাড়বি আমায়?তুই যে যে এতটা নিচে নামতে পারিস আমার জানা ছিল না।ছি!এই তোর ভালোবাসা?থুথু ফেলি তোর ভালোবাসায়।ছাড় আমায়!! ‘

বলতেই কানের কাছে তিহাম ভাইয়ার কান্নার শব্দ এলো।চমকে উঠলাম। হাতের বাঁধন শিথিল হয়ে গেছে। উঠতে নিয়েও পারলাম না।কারণ এই ক্রেজি ব্রাট তার সমস্ত শরীরের ভর আমার উপর ছেড়ে দিয়েছে।

তার কান্নার বেগ আনুপাতিক হারে বেড়েই চলেছে। আমার গলা, জামা একদম ভিজে গেছে। এখন মেয়েদের মতো হেঁচকি তুলছে। আর কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছে।সেই সাথে আমিও। আমার নিজের আগুন ঝরানো চোখ দুটোও নরম হয়ে জলে ভরে গেছে।

জলের দেবী বারুণী হয়তো আমার প্রতি কৃতজ্ঞ।তাই জল দিতে কোনো কার্পণ্য করছে না।হঠাৎ তিহাম ভাইয়া আমার উপর থেকে উঠে বিছানার এক কর্নারে গিয়ে বসলো।আমিও দ্রুত উঠে মাথা নিচু করে বসলাম।

চোখের অশ্রু আর বাঁধ মানছে না।অশ্রুর সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে হেরে গেলাম শেষ পর্যন্ত।অশ্রু চোখ বেয়ে গালে গড়িয়ে পড়লো।এই প্রথম তিহাম ভাইয়া আমার চোখের জল দেখলো।কিন্তু কোনো শব্দ হচ্ছে না।নিরবে ঝরে যাচ্ছে শুধু। তিহাম ভাইয়া এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।

তার কান্নার বেগ আবার দ্বিগুণ বেড়েছে। কেন জানি তাকে বাঁধা দিলাম না।চুপচাপ বসে আছি।এত কষ্ট হচ্ছে কেন আমার?কই,আমার জীবনে তো কোনো প্রকার দুঃখ, কষ্ট,বেদনা ছিল না।তবে কেন আজ হচ্ছে? কেন বুক ফেটে যাবে মনে হচ্ছে? কেন নিঃশ্বাস আটকে আসছে বার বার?কেন?

কিছুক্ষণ পর তিহাম ভাইয়া দুহাত দিয়ে আমার চোখের জল মুছে দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

—‘স্যরি!তুমি আমার জন্য যে চোখের জল ফেললে,বিনিময়ে আমি তোমার জন্য সারাজীবন তো দূরে থাক, জনমের পর জনম কাঁদবো।আমি তুমি নামক ব্যাধিতে মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত।আমাকে বাঁচতে হলে তোমাকেই লাগবে।অন্য কেউ নয়।ভালোবাসি তোমায়। ভালোবাসি।ভালোবাসি।ভালোিাসি!!’

বলেই আমার কপালে একটু ঠোঁট ছুইয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি তৎক্ষনাৎ চোখ তুলে তাকালাম।তিহাম ভাইয়া আর আমার দিকে তাকালো না।বাম হাত দিয়ে চোখের জল মুছে দ্রুত পায়ে ছিটকিনি খুলে বাইরে বের হয়ে গেল।

একটু পর দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম।শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম। আমি কান্না করছি।হাউমাউ করে কান্না করছি।সারাজীবনেও এত কান্না করিনি যতটা আজ কান্না করছি।কিন্তু কেন করছি?

নিজেকে কেমন খালি খালি লাগছে।ভেতরের পুরোটা জুড়ে কেমন শূন্যতা বিরাজ করছে। কেন মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে সব হারিয়ে গেল আমার।আর কোনো কিছু হারানোর ভয় নেই। নিজেকে কেমন নিঃস্ব, অসহায় মনে হচ্ছে।

কেন বার বার মনে হচ্ছে, তিহাম ভাইয়া তিথির লাইফে আসার আগে আমার লাইফে কেন আসলো না?তবে আমি কি তিহাম ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি??

ভাবতেই কান্নার পরিমাণ বেড়ে গেল। নিজের মাথার চুল নিজে টানছি।কেন এমন হলো?জীবন কেন এত কষ্টের?আল্লাহ কেন মানুষকে এত কষ্ট দিয়ে পৃথিবীতে পাঠালো?একটু কষ্ট কম দিলে কি আহামরি ক্ষতি হয়ে যেত?

তিনটা জীবন যে আজ উলোটপালোট হয়ে গেছে। তিনটা জীবন যে আজ অপূর্ণতা আর হাহাকারে ভরা?অন্ধকারে ঘেরা এ তিনটি জীবনের কে দায়ভার নেবে?কেন তিহাম ভাইয়া শেষ মুহূর্তে আমার জীবনে আসলো?কেন?হোয়াই??চোখের জল শাওয়ারের পানির সাথে সারা গায়ে পরশ ভুলিয়ে যাচ্ছে। এত জল কোথায় লুকানো ছিল এতদিন?

______________

দুপুর বেলা নিচে নামলাম। ডাইনিং এ বসে খাওয়া শুরু করলাম।ভাবী পাশে বসে কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলো,

—‘দিয়ানা,তোমার চোখ মুখ ফোলা ফোলা কেন?দেখে মনে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা কান্না করেছো!কি হয়েছে? ‘

মুচকি হেসে বললাম,

—‘তেমন কিছু না ভাবী।রাতে মাথা ব্যথা করতেছিল।তাই একটু কান্না করেছিলাম।আর বেশি বেলা করে ঘুমিয়েছি তো,সেজন্য চোখ মুখ ফোলা ফোলা। ‘এখন একদম ঠিক আছি।তুমি কেন যে বুড়ো মানুষের মতো এত টেনশন করো! ‘

—‘বুঝলাম।কিন্তু তুমি এত চাপা স্বভাবের কেন?মাথা নিশ্চয়ই বেশি ব্যথা করেছে বলে কান্না করেছ।কারণ তুমি তো অল্পতে কান্না করার মতো মেয়ে না।তুমি কাউকে ডাকলে না কেন?’

উত্তর না দিয়ে একটা হাসি দিলাম।গলায় খাবার আটকে আসছে বার বার।পানি খেয়ে ভাবীকে জিজ্ঞেস করলাম,

—‘তোমরা খেয়েছ?’

ভাবী বলল,

—‘হুম।ভালো কথা! তিহামের জবের ওখান থেকে হঠাৎ করে ইমার্জেন্সি যেতে বলেছে।তাই ও আজ রাতের ফ্লাইটে ইতালি যাচ্ছে। বিয়েটা আপাতত স্থগিত করে রাখা হয়েছে।’

—‘ওহ।হয়তো সময় ম্যানেজ করে আবার খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।’

খাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম। কেমন শীত শীত লাগছে।কপালে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর এসেছে। আসারই কথা!কারণ সকাল পর্যন্ত ভেজা কাপড়ে ছিলাম।ড্রয়ার থেকে মেডিসিন বের করে খেয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়লাম।

______________

জ্বর ক্রমশ বেড়ে চলেছে।আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে মাথার মধ্যে এলোমেলো চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। দূর্গম গতিতে কখনো ছুটে চলেছি ছোট্ট বেলায়, কখনো স্কুলে, কখনো কলেজে, কখনো বা ভার্সিটি জীবনে।কপালে কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূতি হচ্ছে। হয়তো কেউ জলপট্টি দিচ্ছে। কে?দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু চোখ খুলতে পারছি না।আমি আবার কল্পনার রাজ্যে ডুব দিলাম।

নিস্তব্ধপুরীতে শিউলি গাছের নিচে ঘাসের উপর শুয়ে আছি আমি।মাথার ডানপাশে একটু দূরে টুনটুনি পাখি দুটো কিচিরমিচির শব্দ করছে।ঝিরিঝিরি বাতাসে শান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।

অবচেতন মন: ইচ্ছে করে জ্বর বাধালে কেন?নিজেকে কষ্ট দেয়ার জন্য?

সচেতন মন: ক-কে?কে বলছেন?

অবচেতন মন: ভয় পেয়ো না।আমি তোমার অবচেতন মন।নিজেকে কার জন্য কষ্ট দিচ্ছো?

সচেতন মন: কি যা তা বলছ! কে কাকে কষ্ট দিচ্ছে। তুমি সরে যাও আমার সামনে থেকে।

অবচেতন মন : কোথায় যাবো?তুমি যেখানে থাকো আমিও সেখানে থাকি।তুমি আর আমি এক।আচ্ছা, তুমি নিজের দিকে কবে যত্নশীল হবে?

সচেতন মন: আজব।আমি তো নিজের যত্ন নেয়ই।আমি নিজের অনেক খেয়াল রাখি।

অবচেতন মন : নিজেই নিজেকে কেন মিথ্যে বলছো?আগেই বলেছি তুমি আমিই।তুমি যা জানো আমিও তা জানি।

সচেতন মন: ঘোড়ার ডিম জানো তুমি!

অবচেতন মন: নাহ।ঘোড়ার ডিম সম্পর্কে জানি না।কারন এর অস্তিত্ব নেই।থাকলে অবশ্যই জানতাম।অাপাতত এটা জানি যে তুমি একজনকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাস।

সচেতন মন : কি?তুমি মিথ্যে বলছো?

অবচেতন মন : তুমি ভালো করেই জানো যে অবচেতন মন কখনো মিথ্যে বলে না।সকল মিথ্যের জন্ম সচেতন মনে।

সচেতন মন : বাহ্!এসব ফিলোসফিক্যাল কথাবার্তা কোথায় শিখলে?তোমার ওখানেও লাইব্রেরি আছে নাকি?তাহলে বলো তো,প্রথম বিশ্বম্যাপ এঁকেছিলেন কে?

অবচেতন মন : রসিকতা করছো?

সচেতন মন: হা হা।পারলে নাতো।আমিই বলে দেই।গ্রীক পন্ডিত টলেমি।

অবচেতন মন :তোমার জ্বর বেড়ে গেছে।মস্তিষ্ক অনেক উত্তপ্ত। ঘুমাও এখন।একটা কথা বলি।নিজের সাথে প্রতারণা বাদ দাও।তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে কেন মানতে চাইছো না?কারণ তোমার সচেতন মন মানতে চাইছে না যে তুমি তাকে ভালোবাসো।কিন্তু তোমার অবচেতন মন যে এক মাইক্রো সেকেন্ডের জন্যও তাকে ভোলেনি!খুঁটিনাটি সব মনে রেখেছে।সেই যে ক্লাস ফোরে থাকতে লাল টুকটুকে বারো হাত শাড়ি ওইটুকু শরীরে পেঁচিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলে,”ভাইয়া দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে?” সে যে তার ভুবনভুলানো হাসি দিয়ে বলেছিল, ‘একদম মায়াপরীর মতো লাগছে!’ সেই থেকেই তো অবচেতন মনের সবটা জুড়ে শুধু তার বসবাস।

সচেতন মন : কিসব ঘাস লতা পাতা বলছো! যাও ঘুমাও।

অবচেতন মন : তুমি স্বীকার না করলেও এটাই সত্যি। তবে কোনো একদিন তুমি স্বীকার করবে।আজ তুমি বড্ড ক্লান্ত। ঘুমাও।

সচেতন মন : তুমি ঘুমাবে না?

অবচেতন মন : অবচেতন মন কখনো ঘুমায় না।ওটা তোমার জন্য। বিদায়।

আমায় কে যেন আলতো হাতে মাথায় পরশ ভুলিয়ে দিচ্ছে। আহ্! কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। অতি কষ্টে চোখ খুলে দেখি মা। পাশেই ভাবী অনেক উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছে। দরজার পাশে চোখ পড়তেই দেখি আমান,বড় ভাইয়া,বাবা সবাই গোমড়া মুখে সোফায় বসে আছে। সবাই রুমে!ভাবী ঝটপট বললো,

—‘দিয়ানা এখন কেমন লাগছে?’

মুচকি হেসে বললাম,

—‘তোমরা সবাই এরকম মুখ করে রেখেছ কেন?সামান্যই তো জ্বর।মরে যাচ্ছি নাতো।’

ভাইয়া এসে কপালে হাত রেখে বলল,

—‘দিব এক চড়।উল্টা পাল্টা কথা বলা। মা জ্বর কমেনি।কিছু খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দাও।’

ভাবী সিঁড়ির কাছে গিয়ে মাজেদা খালাকে ডাক দিলো। উনি আমাদের বাসায় কাজ করে।শুধু দিনে থাকে।রাতে ওনার বাড়ি যায়। ওনার বাড়িতে নাকি ছোট ছোট বাচ্চা আছে। আজ হয়তো আমি অসুস্থ বলে রয়েছে। আমানকে জিজ্ঞেস করলাম কয়টা বাজে।ও বলল, সাড়ে বারোটা। সর্বনাশ! এত রাত হয়েছে! বাবাকে বললাম,

—‘বাবা,এত রাত হয়েছে অথচ তোমরা ঘুমাওনি? সবাই যাও। ঘুমিয়ে পড়ো।রুম খালি করো।নইলে আমি কিন্তু খাবো না কিছু। ভাবী তুমিও যাও।তোমার শরীর খারাপ করবে।মা থাকুক শুধু। ‘

সবাই আমাকে খুব ভালো করে চিনে।তাই দ্বিরুক্তি না করে মাথায় হাত ভুলিয়ে চলে গেল।বালিশে হেলান দিয়ে খাচ্ছি। মা খাইয়ে দিচ্ছে। তিহাম ভাইয়ার কথা ভাবছি।কোনো প্রকার কল বা মেসেজ দেয়নি।কি চলছে তার মনে? হয়তো এয়ারপোর্টে শূন্য দৃষ্টিতে বসে আছে। তিথি কি করছে? ও কি ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি নিশাচরের মতো কেঁদে বালিশ ভেজাচ্ছে??

মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। কেন জানি এই বুকটা আমার পরম শান্তির জায়গা। মা অঘোর ঘুমে।আমার চোখ খোলা। চোখের সামনে মোবাইল। সেখানে ২ টা বেজে ৫৮ মিনিট।আর মাত্র দুই মিনিট পর তিহাম ভাইয়ার ফ্লাইট।

কয়েক হাজার মাইল দূরে চলে যাবে সে।নক্ষত্রের মতো বিলীন হয়ে যাবে হয়তো আস্তে আস্তে। মোবাইলে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তিনটা বেজে গেল।নিজের অজান্তেই দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। কেন কাঁদছি আমি? কোন অধিকারে? তা অজানা! মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।

___________

এক সপ্তাহ হলো তিহাম ভাইয়া চলে গেছে। আমার জ্বর সেরে উঠেছে । কিন্তু ঠান্ডা ও গলা ব্যথা এখনো আছে। বিকেল প্রায়।নিচে বসে টিভি দেখছি আমি আর আমান।সনি আট চ্যানেলে ‘পঞ্চতন্ত্রের মন্ত্র’ হচ্ছে। মাঝে মাঝে দেখি।ভালোই লাগে।আমার ডান হাতে কফির মগ।নতুন কিছু নয়।আমি যখন তখন কফি খাই।

দরজায় কলিং বেলের শব্দ হতেই মাজেদা খালা গিয়ে দরজা খুলে দিল।তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মেরুন রঙের শাড়ি পরিহিত তিথি আমার মুখ বরাবর সামনের সোফায় এসে বসলো।সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো ওর সাথে……………….

(চলবে)

সবাই কি না কি ভেবে রাখছিল!তিহাম কিন্তু এতটাও খারাপ নাহ!🙈

545/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here