তোমাকে চাই পর্ব -১০

#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১০
সকালের মিষ্টি রোদ ঘরের জানালা ভেদ করে প্রবেশ করেছে শীতের সকালটা যে কতোটা সুন্দর হয় তা যে দেখেছে সেই জানে।পাখির কিচিরমিচির শব্দ আশেপাশের পরিবেশকে আরো মুগ্ধ করেছে হালকা ঠান্ডা বাতাস দেহকে বিমোহিত করছে।সেই হাওয়া রক্তিমের শরীরে লাগতেই সে কেঁপে উঠলো গায়ের চাদরটা ভালোমতো জড়িয়ে নিতেই কারো মুখের শব্দ শুনতেই চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলো অধরা দাড়িয়ে আছে তার চোখে-মুখে বিরক্তি মাখা রক্তিম সেটাকে স্বপ্ন ভেবে অধরার হাত টেনে ধরে বললো,
~তুমি কিন্তু আমাকে অনেক জ্বালাতন করছো এর পরিণাম ভালো হবে না শ্রেয়সী।
অধরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রক্তিমের জোর সে একটা চিমটি কাটতেই রক্তিম অধরার হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে পরলো তারপর গালে হাত দিয়ে বললো,
~কে করেছে এইটা?একদম গাল লাল করে দিবো থাপ্পড়িয়ে।
অধরা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~আমি কী জানি মশাও তো হতে পারে তাই না?
রক্তিম অধরার বোকা বোকা কথার কোনো মানে বুঝলোনা অধরা সেই বিষয় থেকে দূরে সরে এসে বললো,
~ব্রাশ কোথায়? সকাল বেলা সব জায়গা খুজে ফেলেছি কোথায় রেখেছেন?
রক্তিম অধরার কথা শুনে আড়মোড়া ভেঙ্গে বললো,
~কার্বাডের যেকোনো একটা শপিং ব্যাগে আছে।
অধরা রক্তিমের উপর প্রচুর বিরক্ত সে ধীর পায়ে কার্বাড খুলে সকল শপিং ব্যাগ খুলে ব্রাশ খুজে পেলো। অধরা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের পানি বসালো পুরো রান্নাঘর খুজে সে শুধু চা বানানোর জিনিস গুলো পেলো।অধরা চা তৈরি করে আবার রুমে চলে আসলো রক্তিম এখনো উপুর হয়ে ঘুমিয়ে আছে।অধরা বিছানা গুছাতে গুছাতে জোরে জোরে বললো,
~সকাল ১০টা বাজে নাস্তা কী পাবো নাকি একদম দুপুরের খাবার নসীবে জুটবে।
রক্তিম অধরার কথা শুনতে পেয়ে ধরফরিয়ে সোফা থেকে উঠে দাড়ালো তারপর কার্বাড থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।অধরা বিছানা ঠিক করে সোফা গুছিয়ে রাখলো তখনই কলিংবেলের শব্দ পেলো অধরা।সে রুম থেকে বের হয়ে দরজার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,
~কে?বাহিরে।
বাহির থেকে শওকত বললো,
~ভাবি,আমি শওকত।
অধরা দরজা খুলে দিতেই শওকতের হাসি-হাসি মুখ দেখতে পেলো।অধরা বললো,
~ভাইয়া ভিতরে আসুন।
শওকত ভিতরে ডুকে হাতে থাকা টিফিন অধরার হাতে দিয়ে বললো,
~মা,আপনাদের জন্য নাস্তা পাঠিয়েছে।
অধরা টিফিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
~ধন্যবাদ ভাইয়া।
শওকত অধরার দিকে তাকিয়ে বললো,
~সাহেব কোথায়?
অধরা কিছু বলবে তার আগেই রক্তিম চলে আসে শওকত রক্তিমকে দেখে বললো,
~সকাল কয়টা বাজে ভাবিকে এখন পর্যন্ত না খাইয়ে রেখেছিস।
রক্তিম বললো,
~তুই খাবার নিয়ে আসবি সেই আবাস আমি আগেই পেয়েছি তাই এতো কষ্ট করলাম না।
অধরা নাস্তা সাজিয়ে দুজনকে ডেকে একসাথে বসে নাস্তা করে নিলো।শওকত রক্তিমকে বললো,
~আন্টি অনেক চিন্তিত তুই একটা ফোন দিয়ে কথা বলে নে।
রক্তিম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
~একটুপর বাসায় চলে যাবো আমরা।
শওকত রক্তিমের হাতে হাত রেখে বললো,
~তুই মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করবি সবাই আগুন হলে পানি কোথা থেকে পাবি?
রক্তিম চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে বললো,
~পানি রান্নাঘরে কাজ করছে সবাইকে ঠান্ডা করার দায়িত্ব সে পেয়েছে।

______________♥_______________

রোকেয়া হোসেন সোফায় বসে আছে তার চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে কেউ এটা বুঝতে পারছেনা অধরা আর রক্তিমের বিয়ের কারণে সে এতোটা রেগে আছে কেন?
শুধু রক্তিমের বাবা-মা জানে আসল কারণ কী?তাহিদা ইসলাম ননাশের এতো রাগ দেখে বললেন,
~আপা,আমি জানি বাচ্চারা ভুল করেছে এর মানে এ নয় যে আমরাও ভুল করবো।
রোকেয়া হোসেন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
~তোমার তো খুশিতে নাচতে মন চাইছে এটাই তো চেয়েছিলে রক্তিমকে হাত করে সব কিছু ছিনিয়ে নিবে।যেমন মা তেমন মেয়ে
তাহিদা ইসলাম মাথা নিচু করে ফুপিয়ে উঠলেন এবার আর তৈয়ব হোসেন চুপ থাকলেন না সে হুংকার ছেড়ে বললেন,
~আপা,অনেক হয়েছে আপনি অনেক বলেছেন এতোগুলো বছর শুধু আপনাদের শুনেছি আর না।যদি আপনারা লিমিট ক্রস করেন আমিও চুপ থাকবোনা।
রোকেয়া হোসেন হা হয়ে গেলেন ছোট ভাইয়ের এহেন আচরণ দেখে সে কোনোদিনও ভাবেননি তার হাতের পুতুল এভাবে কথা বলবে।আইয়ুব হোসেন পরিবেশকে সামলাতে বললেন,
~রোকেয়া,তুমি কিন্তু বেশি বলছো রক্তিম অধরাকে ভালোবাসে তাই বিয়ে করেছে এটাতে ভুল কী?
রোকেয়া হোসেনের যেনো সবার কথায় রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে সে সোফা থেকে দাড়িয়ে বললো,
~বড় ভাইজান আমার মুখ খুলতে আপনি আমায় বাধ্য করছেন।
জোহোরা খাতুন এবার ভয় পেয়ে গেলেন সে আইয়ুব হোসেনের কাছে গিয়ে দাড়ালেন আইয়ুব হোসেন বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বললেন,
~আমি জানি তো তুমি কী বলবে? এই তো যে তোমার সম্পত্তি আমি নিয়েছি আর তোমাকে ওয়াদা করেছি যে রক্তিমের বিয়ে পৃথুলার সাথে হবে তাই তো?
আইয়ুব হোসেনের কথা শুনে সবাই আকাশ থেকে পরলো তৌহিদ হোসেন বললেন,
~এসব কী হচ্ছে?
ইলিনা চৌধুরী বললেন,
~তলে তলে এতো কিছু হয়ে আছে বাহ জানতাম না তো।
শাওন আর ইরা চুপ করে দাড়িয়ে আছে পৃথুলা নিজ রুমে বসে সবই শুনছে রোকেয়া হোসেন চুপ হয়ে আছে কী বলবে?বুঝতে পারছেনা।আইয়ুব হোসেন বললেন,
~রোকেয়া, আমি কিন্তু তোমার কাছে যাইনি বরং তুমিই আমার কাছে এসেছিলে তোমার মেয়ের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে এখন যদি তুমি চাও তাহলে তোমার সব কিছু ফিরিয়ে দিবো।তবে আমার যে কোটি কোটি টাকার মাল তুমি চুরি করেছে তার ভরপাই কে করবে?
রোকেয়া হোসেন বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে সাথে সবাই অবাক হয়ে আছে।আইয়ুব হোসেন দাত কিড়মিড় করে বললেন,
~তুমি কী মনে করেছো আমি জানি না?সব জানি আমি কিন্তু চুপ ছিলাম কারণ তোমাকে অপমান করতে চাই না।আর আমি হাওয়ায় কথা বলিনা যাকে দিয়ে তুমি কাজটা করিয়েছো সে সব স্বীকার করছে এখন বল আমি কী করবো?
রোকেয়া হোসেন ভয়ে কুঁকড়ে গেলো সে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে আইয়ুব হোসেন বললেন,
~আমার সাথে চালাকি করতে আসবেনা তোমরা যদি ডালে ডালে চলো তাহলে আমি পাতায় পাতায় থাকি।
এতটুকু বলে সে নিজ রুমে চলে গেলো জোহোরা খাতুন তার পিছে পিছে রুমে চলে আসলো।

______________♥_______________

রক্তিম অধরাকে নিয়ে রওনা দিয়েছে বাসার উদ্দেশ্যে অধরার বুকটা ধুকপুক করছে কী হবে এই ভেবে?অধরার চিন্তিত চেহারা দেখে রক্তিম তার এক হাত আকড়ে ধরে বললো,
~এতো চিন্তা করছো কেন?সব ঠিক হবে
অধরা বললো,
~বাবা আমাদের মেহে নিবে আমার কেন মন বলছে সে অনেক রেগে আছে।
রক্তিম বললো,
~এতো ভাবতে পারো তুমি বুঝিনা কীভাবে এতো শক্তি পাও।দেখবে সব ঠিকঠাক হবে
অধরা বললো,
~আপনার তো সবসময়ই মনে হয় আমি বেশি চিন্তা করি।আর এইসব চিন্তা আপনার জন্যই আসে একেকটা কাজ বাড়িয়ে আমার মাথা নষ্ট করে ফেলেন।
রক্তিম অধরার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো অধরা মুখ ফুলিয়ে বললো,
~কী বিশ্রী হাসি ছি।
অধরার কথায় রক্তিম আরো জোরে জোরে হাসতে থাকে।কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা দুজন বাসায় পৌছে গেলো রক্তিম গাড়ি ঠিক জায়গায় রেখে অধরাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই তৈয়ব হোসেনের সাথে প্রথমে দেখা হলো অধরা বাবাকে দেখে দৌড়ে তার কাছে চলে গেলো তৈয়ব হোসেনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।তৈয়ব হোসেন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~কতটা টেনশনে ছিলাম আমি একবারও আমার কথা মনে পরেনি।
অধরা বললো,
~আমাকে মাফ করে দেও আমি ভুল করেছি।
তৈয়ব হোসেন অধরার দুবাহুডর ধরে বললেন,
~আমি তোর উপর কোনোদিন অভিমান করতে পারিনা এইটা তুই জানিস।
সবাই হলরুমে একত্রিত হলো রোকেয়া হোসেন অধরা আর রক্তিমকে একসাথে দেখে ফুসছে।আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তোমরা যা করার করেছো এখন বড় হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে আমি চাই একটা অনুষ্ঠান করা হোক সবাইকে সবটা জানানো দরকার।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~আপনার সাথে আমি একমত।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~আমি প্রিয়াকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি সে চলে আসবে।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~রক্তিন,আমি চাই তুমি অধরাকে নিয়ে অনুষ্ঠানের জন্য সব কিছু নতুন কিনে দিবে।আমার একমাত্র ছেলের বউ অধরা কোনো কমতি রাখতে চাইনা।
পৃথুলা রুম থেকে বের হয়ে সবার সামনে এসে বললো,
~আপনি চিন্তা করবেন না বড় মামা আমি নিজে সব দেখে করবো।
সবাই পৃথুলার কথা শুনে অবাক হলো রক্তিমের মনে সন্দেহের বীজ বুনতে লাগলো।তাও সে চুপ করে রইলো সে চায় না এখন পরিবেশ খারাপ হোক।

______________♥______________

রোকেয়া হোসেন বিড়বিড় করে বললেন,
~মেয়ের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
আইয়ুন হোসেন বললেন,
~তাহলে ২দিন পর অনুষ্ঠান করা হবে।জোহোরা,তাহিদা,ইলিনা সব কিছু তোমরা সামলাবে।
তিনজনই মাথা দুলালো রোকেয়া হোসেন বললেন,
~আমি এইসবে নেই আজই আমি চলে যাবো এই পরিবার আমার নয়।
পৃথুলা বললো,
~তুমি চলে যাও মা।আমি অনুষ্ঠানের পর চলে আসবো
রোকেয়া হোসেন কিছু না বলে গটগট করে সেখান থেকে চলে আসলো।অধরা নিজ রুমে চলে আসলো শাওয়ার নিলে হালকা বেগুনে রঙ্গের ড্রেশ পরে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে লাগলো।তখনই ঘরের দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো জোহোরা খাতুন তাকে দেখে অধরা একটু ভয় পেলো জোহোরা খাতুন হাতে থাকা শাড়িটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
~এই শাড়িটা পরে বাহিরে আসো প্রতিবেশিরা আসবে আমি জানি তারা তোমাকে আগে থেকেই চিনে কিন্তু আজ তোমাকে বউ রুপে দেখতে চায়।
তারপর হাতে থাকা একটা বক্স অধরাকে দিয়ে বললো,
~এতে চেইন,বালি,চুরি,নাকফুল আছে রেডি হয়ে এসে পরো আর শোন রক্তিমের ঘরে চলে যাও তার রুম থেকে বের হবে নাহলে আবার কথা বানাতে সময় লাগবেনা এগুলোর।
বলেই সে গটগট করে চলে গেলো অধরা তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে রইলো।
একটুপর ইরা এসে অধরাকে রক্তিমের ঘরে নিয়ে যায় ইরা রক্তিমকে বললো,
~ভাইয়া বাহিরে যাও আপুকে রেডি করাবো।
রক্তিম বললো,
~আমার সামনে করা কী সমস্যা?
অধরা মনে মনে বললো,
~অসভ্য একটা।
ইরা বললো,
~যাও তো ভাইয়া।বড়চাচী আমার বকবে দেরি করলে
রক্তিম ল্যাপটপ বিছানায় রেখে উঠে দাড়ালো দরজার সামনে এসে ইরার অগোচরে অধরার গালে ঠোঁট ছুইয়ে দৌড়ে পালালো।অধরা হা হয়ে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে রইলো

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here