তোমাকে শুধু তোমাকে চাই পর্ব -০২

তোমাকে শুধু তোমাকে চাই

দ্বিতীয় পর্ব

দুটো রিক্সাই তীরের বেগে এগিয়ে চলেছে I মুনিরের খুব ভয় করছে I ও জানে এত বড় ধাক্কাটা অনিমা নিতে পারবে না I অনিমাকে ও খুব ভালো করে চেনে I ও প্রচণ্ড অভিমানী একটা মেয়ে I সেইসঙ্গে ওর আত্মসম্মানবোধ প্রখর I এরপর হয়তো আর কোনদিন মুনিরের সঙ্গে কথাই বলবে না I মুনির এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারবেনা I এই বন্ধুত্বটাও কিছুতেই নষ্ট করতে পারবে না I কিছুতেই না I

এটা সত্যি যে প্রথম দিনই নীলার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য দেখে ওর ভালো লেগেছিল I সেই ভাললাগা দিনকে দিন ডালপালা গজিয়েছে I নিজের মনেই নীলার একটা চরিত্র তৈরি করে নিয়েছিল মুনির I কিন্তু যতবারই ওর সঙ্গে কথা হয়েছে দেখা গেছে সেই কল্পনার চরিত্রের সঙ্গে ওর কোন মিল নেই I বাস্তবে নীলা অহংকারী রূঢ় I বরং ওর মনের মধ্যে নীলার যে কাল্পনিক চরিত্র ছিল তার সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছিল অনিমার I অনিমার কি সুন্দর ঝকঝকে আন্তরিক ব্যবহার I কোন ভান নেই I ভেতরে-বাইরে একদম এক I আর তাই ওদের বন্ধুত্ব হয়েছে নিমিষেই I সেই প্রথম থেকেই I অনিমা একদম সাধারণ পরিবারের মেয়ে I অনেকটা স্ট্রাগল করে এই পর্যন্ত এসেছে I ঢাকায় ওর আপনার বলতে কেউ নেই I অন্যদিকে নীলার বাবা চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি I দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই থাকে I যদি ও ওদের মধ্যে কখনো বন্ধুত্ব হয়ে ওঠেনি I নীলা সাধারণত স্ট্যাটাসের বাইরে গিয়ে বন্ধুত্ব করে না I ওর এহেন আচরণ দেখে মুনির কখনো ওকে সরাসরি কিছু বলার সাহস করেনি I যদিও মুনিরের পরিবার আর্থিকভাবে নীলার সমতুল্য না I তবে ওদের একটা সামাজিক অবস্থান আছে I মুনিরের বাবা ডাক্তার আর ওর মা কলেজে অধ্যাপনা করেন I

মাঝে মাঝে শুক্রবার দিন বা কোন ছুটিছাটা হলে যখন হলের সবাই বাড়ি চলে যায় , অনিমা হলেই থেকে যায় I এরকম নিঃসঙ্গ বিকেলগুলোতে মুনির মাঝে মাঝে অনিমাকে ফোন করতো I কথা হতো বেশিরভাগই পড়াশোনা সংক্রান্ত I কিংবা কোন গল্প উপন্যাস ,গান নিয়ে আলোচনা I একবার মুনির ওকে বাসায় নিয়ে দিয়েছিল I মুনিরের বাবা মা আর ছোট বোন ওকে খুব পছন্দ করে I মুনির কখনো কোন সমস্যায় পড়লে সবার আগে অনিমার সঙ্গে কথা বলে I অনিমার ক্ষেত্রে ও তাই I

রিক্সা শাহবাগের দিকে যাচ্ছে Iমুনির রিক্সাওয়ালাকে বলল একটু এগিয়ে গিয়ে সামনে রিকশাটাকে আটকাতে I ক্যাম্পাসে এটা কোনো নতুন ঘটনা নয় I এখানে এসব মান অভিমান নিত্যদিনকার ব্যাপার I কেউ অবাক হয় না I ঠিক চারুকলার গেটে এসে মুনিরের রিক্সাটা অনিমার রিক্সার সামনে এসে পথ রোধ করে দাঁড়ালো I অগত্যা বাধ্য হয়েই অনিমা নেমে ভাড়া মিটিয়ে দৌড়ে চারুকলার গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল I সামনে একটা খোলা চত্বরে ওদিকে যাওয়ার কোনো মানে হয় না I ডান পাশে একটা সিঁড়ি উঠে গেছে I অনিমা সেটা দিয়ে উঠে গেল দৌড়ে I মুনিরও গেল ওর পেছন পেছন I বারান্দাটা একদম ফাঁকা I মুনির অনিমার একটা হাত ধরে নিজের দিকে ফেরাল এবং তারপরেই চমকে উঠলো I অনিমার মুখ লাল হয়ে আছে চোখ ফুলে উঠেছে I কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে I মুনির সস্নেহে ওকে কাছে টেনে নিল তারপর দুই হাতের করতলে ওর মুখটা ধরে বলল
– আমার কথাটা একবার শোনো I প্লিজ I
অনিমা ছিটকে সরে গেল I কোনমতে বলল
– আমার ভুল হয়ে গেছে মুনির I তুমি এটা ভুলে যাও I
– কোনো ভুল হয়নি
– মানে ?
-আমি তোমাকেই ভালোবাসি
অনিমা ম্লান একটু হাসলো I তারপর বলল
– আচ্ছা ? তাই নাকি ?
– অনিমা একটু শুনো I লেট মি এক্সপ্লেইন
– এখানে এক্সপ্লেইন করার কিছু নেই I একটা সাধারন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে I এটা নিয়ে এত চিন্তা করার কিছু নেই I তুমি কোন কিছু মনে রেখোনা I আমি ও …
অনিমা কথা শেষ করতে পারল না I ওর কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে এল I ও একহাতে মুনিরকে সরিয়ে দিয়ে বলল
– সরো I আমাকে যেতে হবে
-দাঁড়াও অনিমা
মুনির আবার ওর হাত ধরলো I
– আমি নীলাকে ভালোবাসি না
– তাই নাকি ? তাহলে ওকে এটা কেন পাঠিয়েছিলে ?
– আমি তোমাকে বলছি I তুমি সবটা একটু শোনো
– মুনির তোমার, তোমার হয়তো এখন খারাপ লাগছে আমার জন্য I এটা করোনা I আমি তোমার দয়া চাই না I একটা ভুল করেছো ,আর একটা ভুল করোনা I
অনিমা আবারও হাত ছাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করল I মুনির চিৎকার করে বলল
– আমাকে এক বার বলতে তো দাও
– আর বলার কিছু নেই I যা বলার নীলা বলেছে
– তুমি আমার কথাটা শুনবে না ?
– না I হাত ছাড়ো আমি যাব I
মুনির হাত ছাড়লো না I বরং ভয়ঙ্কর কর একটা কান্ড করলো I দুই হাতে ওকে কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো I অনিমা প্রথম কিছুক্ষণ বন্দি পাখির মত ছটফট করল তারপর একসময় শান্ত হয়ে গেল I এভাবে কতটা সময় পার হলো দুজনের কেউ জানে না I একটা সময় মুনির ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল
– আর কিভাবে বলব ?
অনিমা শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ I তারপর বলল
– আর কিছু বলতে হবেনা I ভালো থেকো মুনির I
তারপর আস্তে আস্তে হেঁটে নিচে নেমে গেল I মুনিরের যখন ঘোর কাটল ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে I সিঁড়ি দিয়ে নেমে ও অনিমাকে আর কোথাও খুঁজে পেল না I

চলবে ……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here