#তোমাতেই_আমি_মগ্ন 🌸
#পর্ব_০৯(ধামাকা)
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
অন্না নিশানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অন্না নিশানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
জ্বি কি বলবেন বলুন।(অন্না)
আমি একটু আলাদাভাবে কথা বলতে চাই আপনার সাথে।আমি যা বলতে চাই আমার মনে হয় তা আপনার জানা উচিত।(নিশান)
হঠাৎ করে অন্নাদের রুমের দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো।দিশা দরজা খুলে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে।নিশান মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
শিট!(নিশান)
অন্না নিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
আপনি জেনো কি বলবেন বলছিলেন।(অন্না)
আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম আবির না আপনাকে অনেক ভালোবাসে।বেচারাকে আর কষ্ট দিয়েন না।(নিশান)
নিশানের কথায় সবাই হেসে দেয়।আবির লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।তবে অন্নার চোখ নিশানের মুখের দিকে।কারণ তার মনে হচ্ছে নিশান অন্য কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু আবির আসার কারণে কথা ঘুরিয়ে ফেললো।
–
–
–
সবাই হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।দুইটা গাড়ি রেডি করা হয়েছে তাদের জন্য।একটা গাড়ি আবির ড্রাইভ করবে আরেকটা নিশান।অন্না চালাকি করে নিশানের গাড়িতে উঠে পড়লো।কারণ তার জানতে হবে নিশান কি বলতে চেয়েছিলো!
নিশান আর দিশা সামনের সিটে।তিথি আর অন্না পিছনে।বাকি সবাই আবিরের গাড়িতে।আবির খুব করে চেয়েছিলো অন্না জানি তার গাড়িতে উঠে।তবে অন্না বাহানা দেখিয়ে নিশানের গাড়িতে উঠেছে।
আবিরের গাড়ি আগে আর নিশানেরটা পিছনে।দিশা আর তিথি ঘুমিয়ে কাঁদা তবে অন্না জেগে বসে আছে।অন্না আস্তে করে বললো,
নিশান ভাইয়া আপনি তখন কি বলতে চেয়েছিলেন?(অন্না)
নিশান লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখলো অন্না ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।নিশানের মুখে হাসি ফুটলো।
যাক আপনি তাহলে ঘুমান নাই।খুব ভালো করেছেন।(নিশান)
আমার কেনো জানি মনে হলো তখন আপনি আমাকে অন্যকিছু বলতে চেয়েছিলেন তবে আবির বাবু আসায় কথা ঘুরিয়ে ফেলেছেন।(অন্না)
ইউ আর রাইট।ওই কথা বলার আমার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না।আমি অন্য কথাই বলতে চেয়েছিলাম।(নিশান)
হুম এখন বলুন।(অন্না)
দিশা আর তিথি?(নিশান)
ওরা ঘুমিয়ে আছে।এতো সহজে ওদের ঘুম ভাঙ্গবে নাহ্।(অন্না)
নিশান গাড়ির গতি কমিয়ে দিলো।তারপরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
আমি আপনাকে সবটা বলবো নাহ্।সবটা আপনার আবিরের মুখ থেকেই শুনতে হবে।আমি জাস্ট আপনাকে সাবধান করতে পারবো।(নিশান)
কি বলতে চাইছেন?(অন্না)
আবির আপনাকে ঠকাচ্ছে।মেইবি ও আপনাকে ভালোবাসে তবে ওর সাথে আরো দুইটা জীবন জড়িয়ে আছে।কানাডায় ওর বিয়ে করা বউ মারিয়া আর তার মেয়ে আছে।(নিশান)
অন্না জেনো আকাশ থেকে পড়লো।সে কি করবে বুঝতে পারছে নাহ্।অন্নার চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো।যেই না আবিরকে একটু বিশ্বাস করতে শুরু করলো সেই এমন একটা সত্যি তার সামনে আসলো!অন্না চোখের পানি মুছে নিজেকে শক্ত করে বললো,
আমি সম্পূর্ণ বিষয়টা জানতে চাই।(অন্না)
আমি এইটুকুই জানি।কারণ আবির আমাকে মারিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে বলেছিলো ‘তোর ভাবি’।দ্যান আমিও ভাবি ডাকতে শুরু করি।আর আবির আপনাকে ভালোবাসতো তা আগে থেকেই জানি।তবে হঠাৎ একদিন এসে আমাকে বললো সে নাকি বিয়ে করে ফেলেছে।আমিও খুশি হয়েছিলাম।সে বললো আপনাকে নাকি ভুলে গেছে।তবে হঠাৎ করে যখন পড়াশোনা শেষ হলো তখন দেশে আসার ভূত চাপলো।তখন মারিয়া প্রেগন্যান্ট ছিলো।আবির মারিয়াকে এক প্রকার শাসিয়ে দেশে চলে এসেছিলো।আর আমাকেও বলে এসেছিলো আমি জানি মারিয়ার সাথে সব সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলি।ও-কে আর ভাবি বলে সম্মোধন না করি।তাই আমি মারিয়ার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দি।আর আবিরের দেশে আসার কারণ হলো আপনি।ওর হঠাৎ করেই আপনার প্রতি আবার ভালোবাসা জেগে উঠেছে।আবির একজন সাইকোলজিক্যাল পেসেন্ট।হয়তো আপনি এগুলো জানেন না আপনাকে জানানো উচিত।আপনার একটা ভুল ডিসিশান দুইটা জীবন নষ্ট করে দিবে।আর আপনার জীবনটাও নষ্ট হয়ে যাবে।তাই আমি আপনাকে এগুলো বলতে বাধ্য হলাম।(নিশান)
অন্নার চোখে পানি।রাগে তার মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে।
আবিরকে তো আমি জাস্ট মেরে ফেলবো।লজ্জা করে না উনার!উনি একসাথে তিনটা জীবন নিয়ে খেলা করছেন।আমার আর মারিয়ার কথা বাদ দিলাম কিন্তু বাচ্চাটার কথা সে একবার ভাবলো না!আর আমি যদি আবিরের প্রতি দূর্বল হয়ে যেতাম তাহলে তো আরো বড় ক্ষতি হয়ে যেতো!(অন্না)
অন্না এখানে আপনার কোনো দোষ নেই।আর আবিরকে কিছু বলার দরকার নেই।আমার মনে হয় আবির নিজেই সবটা আপনাকে জানাবে।(নিশান)
ঢাকায় গিয়ে উনার সাথে সব যোগাযোগ আমি বন্ধ করে দিবো।(অন্না)
এটা ভুলেও করবেন না আপনি।কারণ তাহলে ও আরো সাইকো হয়ে যাবে।হয়তো আপনার কোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারে!(নিশান)
অন্না তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
আমার জীবনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।আর কোনো কিছুতেই আমি ভয় পাই না।(অন্না)
/🍂/
বাবা আমরা কালকে ঢাকায় যাচ্ছি।মনে আছে তো তোমার?(ফারাবী)
তুই তো জানিস আমার ঢাকায় যেতে মন চায় না।(ফারাজ খান)
বাবা জাস্ট কাম ডাউন!এতো ভাবার কিছু নেই।আর যেতে তো হবেই তাই-না।(ফারাবী)
তোকে নিয়ে আমার অনেক গর্ব হয়।তোর মতো একটা ছেলে আমার হবে আমি কখনো ভাবিনি।(ফারাজ খান)
ফারাবী মুচকি হেসে তার বাবার পাশে থেকে উঠে তার রুমে চলে গেলো।সব প্যাকিং শেষ করে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।এক দৃষ্টিতে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।তার মনের মাঝে বারবার অন্নার মুখটা ভেসে উঠছে।
কি হচ্ছে আমার সাথে?আমি কেনো বারবার অনুমার কথা ভাবছি?আমি কি তার প্রেমে পড়ে গেলাম?মনে হয় প্রেমে পড়ে কাজ হবে না।সে তো আমাকে পাত্তায়ই দিবে নাহ্।(ফারাবী)
/🦋\
অন্নার ঘুম ভাঙলো তিথির ডাকে।কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গেছে কে জানে!অন্না চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে তারা একটা রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।হাতে থাকা হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দেড়টা বাজে।অন্না গাড়ি থেকে নেমে রেস্তোরাঁর ভিতরে গেলো।সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে আর হালকা কিছু খেয়ে নিচ্ছে।তবে অন্নার রাগ হচ্ছে আবিরকে দেখে।যাকে সে ভাবতো কতো ভদ্র!তার এই ভদ্র চেহারার পিছনে যে মুখোশ আছে তা অন্না ঘুণাক্ষরে-ও টের পায়নি।
অন্না এক কাপ কফি আর একটা বার্গার নিয়ে গাড়িতে চলে আসলো।কারণ আবিরের মুখোমুখি হতেই তার বিরক্ত লাগছে এখন!আগে আবিরের প্রতি যেই বিরক্তিটা ছিলো তা আবার নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে।
অন্না গাড়িতে বসে বসে খাচ্ছে আর নিশানের কথাগুলো ভাবছে।সবাই এসে গাড়িতে বসলো।আবির এসে অন্নার বসে থাকা সিটের জানালার গ্লাসে হালকা শব্দ করলো।অন্না তাকিয়ে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে।অন্নার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও গ্লাসটা খুললো।আবির একটা ক্যাটবেরী তার দিকে এগিয়ে দিলো।
সবাইকে দিয়েছি।তোমারটা দেওয়া হয়নি।(আবির)
অন্না ক্যাটবেরীটা নিলো।তারপরে গ্লাস লাগাতে লাগাতে বললো,
অন্য কারো কাছে দিয়ে দিলেই তো পারতেন।(অন্না)
আবির কিছু না বলে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।অন্না ক্যাটবেরীর প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে একটা চিরকুট লাগানো।অন্না বিরক্তির সাথে চিরকুটটা খুললো।
কিছু জিনিস স্পর্শ করা যায় না
তবে দূরে থেকে দেখতে মন্দ লাগে না!|-🌻
অন্না চিরকুটটা পড়ে মুড়ে রেখে দিলো।
কি রে আবির বাবু চিরকুটে করে কি লিখে দিলো?(তিথি)
এই যে তোকে নাকি তার খুব ভালো লেগেছে সেটাই লিখে দিয়েছে।(অন্না)
তিথি বুঝতে পারলো অন্নার মুড অফ তাই কথা না বাড়িয়ে চুপ হয়ে বসে রইলো।
!📗🖊️!
বাড়ি ফিরে অন্না সোজা তার রুমে চলে গেলো।নিশান দিশা আর তিথিকে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে গিয়েছে।আর নিতুকে আবির পৌঁছে দিবে কারণ আবিরের বাড়ির পাশেই নিতুর বাড়ি।
অন্না এসে তার রুমের দরজা লাগিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বিছানায় বসলো।
আমার আগেই মনে হতো আবির বাবু সবার সামনে যেই রুপটা দেখায় সেটা আসল না।আজ তার প্রমাণ পেয়ে গেলাম।ছিঃবউ বাচ্চা থাকতে আবার এসেছে আমাকে বিয়ে করতে!ওর মতো ছেলেকে তো পিটিয়ে মারা উচিত।(অন্না)
অন্না পরক্ষনে ভাবলো,
আচ্ছা আমার মনটা হঠাৎ করেই ভালো লাগছে।কেন জানি আমি যে ধর্ষিত এটা ভেবে এখন আর মন খারাপ হচ্ছে না।ধন্যবাদ আল্লাহ আমার মন ভালো করে দেওয়ার জন্য আর মাথা থেকে যা ঘটেছে তা দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য।আমি এখন নতুন করে বাঁচবো।ফাহাদ আর আবির দুটোকেই শাস্তি দিবো।(অন্না)
অন্না বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।বিছানায় শুতেই তার চোখে ঘুম চলে আসলো।কারণ সারারাত একটুও ভালোভাবে তার ঘুম হয়নি।
“✨”
ফারাবী তার মা-বাবাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছে।ঢাকায় এসেছে তাদের বাড়িতে উঠেছে।এক সময় তারা এই বাড়িতে থাকতো।এক বিশ্রী কারণের জন্য তারা এই বাড়ি ছেড়ে সিলেটে চলে গেছিলো।
আচ্ছা লোকেরা যদি আমাদের এখনো আগের মতো অপমান করে?(ফারাজ খান)
আগের লোকেরা এখন এখানে কেউ থাকে না বাবা।আর ফারাবী খানের বাবা-মাকে অপমান করার সাহস কারো নেই।(ফারাবী)
ফারাবী ওর কোনো খবর তোর কাছে আছে?(রুমানা হোসেন!ফারাবীর মা!)
না আম্মু।অনেকদিন পরে ঢাকায় এসেছি তো।তাই কিছু জানি না এখনো।(ফারাবী)
রুমানা হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার রুমের দিকে চলে গেলেন।ফারাবী তার মায়ের যাওয়ার দিকে নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
–
–
–
ফাহাদ রাফসানের কলার টেনে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।ফাহাদ রাগে গজগজ করছে।সে ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছে না।কারণ নেশা করে একদম বেতাল হয়ে গেছে।
মিমি কালকে দিয়ে একবারো আসলো না কেনো্?(ফাহাদ)
বস আমি কিভাবে জানবো।আপনার সাথেই তো ম্যাডামের কথা হয়েছিলো।(রাফসান)
ও আমার ফোন-ও রিসিভ করছে না।আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো আমি মিমি না দেখে থাকতে পারি না।(ফাহাদ)
বস আমি জানি তো।তবে আপনিই তো মিমি ম্যাডামকে বারবার অবহেলা করে ফিরিয়ে দেন।হয়তো তাই অভিমান করে ম্যাডাম আসছে নাহ্।(রাফসান)
ও যেটা চায় আমি সেটা চাই না।তবে আমি এটাও চাই না যে মিমি আমার থেকে দূরে সরে থাকুক।আমি চাই ও আমার কাছাকাছি থাকবে।(ফাহাদ)
কথাগুলো বলে ফাহাদ ধাক্কা দিয়ে রাফসানকে সোফায় ফেলে দেয়।
#চলবে…………………
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।নেক্সট না লিখে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন তাহলে আমাদের লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়!]