তোমাতেই পরিপূর্ণ পর্ব -৩৩+৩৪+৩৫

#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
৩৪.
~
নৈরিথ এগিয়ে গেল মিথির দিকে। নেহা নৈরিথ কে দেখে ঘাবড়ে গেল। মনে এক ভয় ঝেঁকে বসল তার। নৈরিথ নিশ্চয় রেগে মেগে আগুন হয়ে যাবে। না জানি এখন সে কি সিনক্রিয়েট করে বসে। ভয়ে নেহা তার চেয়ারে থ মেরে বসে থাকে। নৈরিথ মিথির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর ঠান্ডা গলায় বলে,

‘কে ও মিথি?’

নৈরিথের কন্ঠস্বর শুনে মিথির হুশ এল। চমকে উপরের দিকে তাকাল। নৈরিথ কে হঠাৎ দেখে সে কথা হারিয়ে ফেলেছে। সিফাতও নিরবে তাকিয়ে আছে নৈরিথের দিকে। মিথি সিফাতের হাত ছেড়ে দিল। ঠোঁট জোড়া কাঁপছে তার। কথাগুলো গলায় আটকে যাচ্ছে। তাও সে বললো,

‘ও সিফাত, নৈরিথ। আপনাকে বলেছিলাম না ওর কথা?’

নৈরিথের মনে পড়ল। হ্যাঁ, মিথি তাকে আগেই সব কিছু বলেছে। নৈরিথ সিফাতের দিকে তাকাল। কেমন যেন তার চোখ মুখ হয়ে আছে। অতঃপর নৈরিথ বললো,

‘হ্যাঁ, বলেছিলে। কিন্তু এতদিন পর ও কোথা থেকে এসেছে? এতদিন কোথায় ছিল ও?’

মিথি জবাব না দিয়ে সিফাতের দিকে তাকাল। সে চাইছে সিফাত’ই নৈরিথের প্রশ্নের জবাব দিক। মিথি চুপ হয়ে রইল। সিফাতও কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তবে একসময় আর পারল না। সে উঠে দাঁড়াল। নৈরিথের মুখোমুখি হয়ে বললো,

‘আপনি কে? মিথির সাথে আপনার কি সম্পর্ক?’

নৈরিথ গম্ভীর সুরে বলে,

‘আমি ওর হাজবেন্ড।’

সিফাত অবাক হওয়ার ভান করলো। মিথির দিকে তাকিয়ে উদ্বেগ নিয়ে বললো,

‘বাহ মিঠু, তুই বিয়েও করে নিলি। কনগ্রেচুলেশন!’

মিথি খুশি হলো। সিফাতের মুখে আবার ‘মিঠু’ ডাকটা শুনতে পেয়ে ভীষণ খুশি হলো সে। বললো,

‘হ্যাঁ, কিছুদিন আগেই আমাদের বিয়ে হয়েছে। সেদিনও তোকে খুব মিস করেছিলাম। তুই বলেছিলি না আমার বিয়ের সমস্ত আয়োজন তুই একা করবি, কিন্তু সেদিন তুই ছিলি না। খুব মনে পড়ছিল তোকে। জানিস তো, শুধু সেদিন না এর আগেও এমন অনেক দিন গিয়েছে যখন আমার মনে হচ্ছিল তুই আমার কাছেই আছিস। আমি এক দুবার তোকে দেখেছিও হয়তো। তুই কোথায় ছিলি এতদিন? সত্যি করে বলতো, তুই কি আমাদের পাশের বিল্ডিং টা তে থাকতি?’

সিফাত জবাব দিল না। জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না সে। সে নৈরিথের দিকে তাকাল। হেসে বললো,

‘নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা। আমার মিঠু কে ভালো রাখবেন কিন্তু। আসছি তাহলে।’

সিফাত কথাটা বলে পা এগুতে নিলেই মিথি তার হাতটা খামছে ধরে। সিফাত, নৈরিথ দুজনেই তার হাতের দিকে তাকায়। মিথির চোখগুলো আবারও ভিজে উঠে। কান্না ভেজা কন্ঠে সে বলে,

‘প্লীজ, যাস না।’

মিথির এই সুর সিফাতের বুকে গিয়ে বিঁধল। কিন্তু পারছে না সে, নিজের ইগোর কাছে বারবার হেরে যাচ্ছে। নৈরিথ অবাক হয়ে মিথির দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু সম্পর্কের গভীরতা শুধু মুখে বলে বোঝানো যায় না। মাঝে মাঝে সেটাকে মন দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। এই মুহুর্তে মিথির চোখের এই পানি’ই বলে দিচ্ছে সে সিফাত কে কতটা ভালোবাসে। নৈরিথ সম্মান করে এই ভালোবাসাটা কে। কিছুটা খারাপ লাগলেও অনেক বেশি ভালো লাগে এটা ভেবে যে সত্যিই এই স্বার্থপর পৃথিবীতে এখনও বন্ধুত্ব নামক একটা সুন্দর সম্পর্ক টিকে আছে। নৈরিথ এবার তপ্ত শ্বাস ফেলল। বললো,

‘চলে যাচ্ছো কেন সিফাত? মিথি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না। আর কত রাগ নিয়ে বসে থাকবে? এবার তো ওকে ক্ষমা করতে পারো। মেয়েটা যে খুব ভালোবাসে তোমায়। আমি জানিনা তোমাদের মাঝে কি হয়েছিল। তবে এতদিনে এইটুকু জেনে গিয়েছে তোমাদের সম্পর্ক টা খুব স্পেশাল। আর আমি এটাও জানি যে তুমিও মিথিকে ছাড়া ভালো নেই। কষ্ট তোমারও হচ্ছে। তবে, কেন? কেন এই কষ্টের সুতোটাকে আরো লম্বা করছো? এবার তো থামো। নিজেকে একবার বুঝাও, এই মেয়েটার জন্য হলেও নিজের রাগটা দমিয়ে নাও। বন্ধুত্বের হাতটা আবার বাড়িয়ে দাও। প্লীজ সিফাত!’

নৈরিথের কথা শুনে সিফাত যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি অবাক হয়েছে মিথি। মিথি ভেবে নিয়েছিল তার এহেন কর্মকান্ডে হয়তো নৈরিথ রেগে যাবে। ব্যাপার টা তো অস্বাভাবিক কিছু না। নিজের বউকে অন্য একটা পুরুষের হাত ধরে বসে থাকতে দেখলে সব স্বামীই রেগে যাবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নৈরিথ, সে একজন বিচক্ষণ মানুষ। সে বুঝে সম্পর্কের গভীরতা। নিজের জীবনে খুব মূল্যবান ভালোবাসাগুলো হারিয়েছে তো তাই সে হয়তো অন্যসব ভালোবাসাগুলোকে সম্মান করতে জানে। মিথি তাকিয়ে থাকে তার মানুষটার দিকে। তারপর আবার তাকায় সিফাতের দিকে। সিফাত নিচের দিকে চেয়ে রইল। যেন কিছু একটা নিয়ে খুব গভীরভাবে ভাবছে সে।
.
.
নীরবতায় কেটে গেল অনেকটা সময়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। মিথি নৈরিথ সিফাত আর নেহা সবাই’ই এক টেবিলে বসা। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। যেন নীরবতার ব্রতে নেমেছে সবাই। অনেকটা সময় পার হবার পর নৈরিথ এবার নীরবতার ব্রত ভাঙল। থমথমে কন্ঠে বললো,

‘কি এমন হয়েছিল তোমাদের মাঝে যে তোমরা একে অন্যকে ছেড়ে চলে গেলে?’

সিফাত আর মিথি একে অন্যের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো। তারপর মিথি মাথা নিচু করে ফেলল। সিফাত বললো,

‘কি রে মিঠু, তুই বলবি নাকি আমিই বলবো?’

মিথি ক্ষীণ সুরে বললো,

‘তুই’ই বল।’

সিফাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে আরম্ভ করলো,

‘ওর সাথে আমার পরিচয় ক্লাস নাইনের লাস্টের দিকে। তখনও আমরা এত ক্লোস ফ্রেন্ড ছিলাম না। কেবল ক্লাসমেটই ছিলাম। ও আর আমার বাসাও এক জায়গায় ছিল, সেই সুবাধে যাওয়া আসাও এক সাথে হতো। আর ঐভাবেই আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্কটা আরো গভীর হতে থাকে। তবে আমরা নিজেরাও বুঝতে পারি নি যে কবে আমরা একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠি। তখন এমন হয়েছিল যে মিথিও আমাকে ছাড়া কিছু বুঝতো না অর আমিও মিথিকে ছাড়া কিছু বুঝতাম না। অনেক অনেক আনন্দ করি সেসময় দুজন। অনেক পাগলামী করেছি। স্যারদের বকা খেয়েছি। বাসায়ও মার খেয়েছি খুব। কিন্তু তাও আমাদের মধ্যে কোনো হেলদোল আসেনি। আমরা আমাদের মতোই ছিলাম। আসলে সেই সুন্দর মুহুর্তগুলো এখন আমি মুখে বলে এক্সপ্লেন করতে পারবো না। সব ভালো চলছিল। দেখতে দেখতে টেনের টেস্ট পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেছিল। ততদিনে আমাদের বন্ধুত্বের এই জুটি পুরো স্কুলে খুব প্রিয় হয়ে গেছিল। সবাই পছন্দ করতো আমাদের। কিন্তু…কিন্তু এই পছন্দের মাঝেই কারো একজনের নজর পড়ল। মিথিকে কেউ আমার নামে খুব বাজে কিছু বলে। অনেক কিছু দেখায়ও ওকে। আসলে সেই ব্যক্তিটা মিথির ব্রেইনটা কে এমন ভাবে ওয়াশ করলো যে মিথি নিমিষেই আমাদের বন্ধুত্বের কথা ভুলে গেল। ক্লাসের সবার সামনে ও আমাকে চড় মেরেছিল, শুধু এইটুকুই না সেই ব্যক্তিটা নাকি ওকে বলেছিল যে আমি ওকে ইউজ করছি। আমার ইনটেনশন ভালো না। আমি ওকে নিয়ে খুব খারাপ কিছু ভেবে রেখেছি, ব্লা ব্লা আরো কত কি। আর সেই সব কিছু মিথি বিলিভ করে। অবশ্য বিলিভ করারও কারণ আছে কারণ যেই মানুষটা ওকে এসব বলেছে সেই মানুষটার কাছে অনেক ফেইক প্রমাণ ছিল। আর এইজন্যই সে মিথিকে খুব সহজেই বুঝিয়ে ফেলতে পারে। আর আমার মিঠু তো খুব বোকা, বিশ্বাস করে ফেলে সব কিছু। ক্লাসের সবার সামনে সেদিন সে আমাকে অপমান করে। আমি কখনো বন্ধু ছাড়া ওর দিকে অন্য কোনো নজরে তাকাই নি। সেই সাহস আবার ছিল না। কিন্তু সেইদিন ও আমার সেই ব্যক্তিত্বের উপরও আঙ্গুল তুলে। মেনে নিতে পারে নি আমি। আমার আবার খুব ইগো। সেদিনই সেই স্কুল থেকে বেরিয়ে যাই। ডিরেক্ট টি সি নিয়ে ফেলি। আর বাবাকে বলে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেই। কিন্ত মজার ব্যাপার কি জানেন? আমার যেদিন ফ্লাইট সেদিনই মিথি সব সত্যি জানতে পারে। ফ্লাইটের ঠিক দু ঘন্টা আগে ও আমার কাছে এসেছিল। সে কি কান্না মেয়ের। নাকের পানি চোখের পানি সব এক করে ফেলেছিল। তাও আমার ইগো কে তার জায়গা থেকে নড়াতে পারলো না। আমি ইগনোর করে চলে এলাম। আর তারপর ও অনেক ভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু আমি করেনি। সেইদিনের সেই কষ্ট টা ভুলতে পারেনি। এখনও না। তাই ওকেও কষ্ট দিয়েছিলাম খুব। তবে একপর্যায়ে আমি আর না পেরে দেশে ফিরে আসি। আর মিথিদের বিল্ডিং এর সামনের বিল্ডিং এ উঠি। যেখানে প্রথম থেকেই মিথির সন্দেহ হয়, তবে আমিও খুব কৌশলে সেটা হ্যান্ডেল করি। আর..আর আমি আগে থেকেই সব কিছু জানি। আপনাদের বিয়ে থেকে শুরু করে মিথির আর মাহির অপারেশন কোনাটাই আমার অজানা নয়। ইচ্ছে করেই এতদিন মিথির কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলাম। কিন্তু আজ ধরা পড়ে গেলাম। মেয়েটা এক দেখায় চিনে ফেলল আমাকে। আবারও সেদিনের মতো কেঁদে উঠল। আর আমি..’

সিফাত থেমে গেল। নৈরিথ আর নেহার চোখের পলক পড়ছে না। হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে তারা। মিথি আবারও কাঁদছে। মেয়েটা এত কাঁদে কেন? একটু কষ্টও সহ্য করতে পারে না। সে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

‘সরি। আমি জানি আমি অনেক বড়ো ভুল করেছি। আমি আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে অপমান করেছি, তোকে অপমান করেছি; কিন্তু কষ্টও পেয়েছি খুব। প্লীজ, প্লীজ ক্ষমা কর আমায়। আমি আর এই কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।’

মিথি এবার শব্দ করে কেঁদে উঠল। নৈরিথের আর ভালো লাগছে না। মিথির এই কান্না সহ্য হচ্ছে না তার। তবে কিছু তো করারও নেই। সিফাত ছাড়া তো কেউই মিথির এই কান্না থামাতে পারবে না। কিন্তু এই ছেলে তো এখনও চুপ করে বসে আছে। নৈরিথ এই সবকিছুতে হাঁপিয়ে উঠল। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজে ফেলে সে। তখনই সিফাত বলে উঠে,

‘হয়েছে এবার কান্না অফ কর। আর ভালো লাগছে না তোর এই ফ্যাচফ্যাচ দেখতে। যাহ ক্ষমা করে দিলাম। তবে কান খুলে শুনে রাখ, এটাই ফার্স্ট আর এটাই লাস্ট ক্ষমা। এরপর যদি আর কোনোদিন এমন হয় তবে আমি কিন্তু আর কোনো কথা শুনবে না, এই বলে রাখলাম।’

মিথি খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠে। সিফাতকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও থেমে যায়। নৈরিথের দিকে তাকায়, মুচকি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে। নৈরিথ প্রথমে অবাক হলেও পরে সেও হেসে মিথির মাথায় হাত রাখে। নেহা আর সিফাতের মুখেও হাসি ফুটে উঠে। সত্যিই, ভালোবাসা সুন্দর!#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
৩৫.
~
বাড়ি ফিরতে অনেকটা লেইট হয়ে গেল মিথির। আমিরা বেগম টেনশনে অনেকবার কল দিয়ে ফেলেছেন। তবে মিথি তখন কল রিসিভ করেনি। তার উদ্দেশ্য ছিল সিফাতের সাথে দেখা করিয়ে সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে। তাই সবাই মিথিদের বাসার দিকে গেল। কলিং বেল বাজতেই আমিরা বেগম দ্রুত এসে দরজা খুললেন। প্রথমেই রেগে চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি, কিন্ত পরক্ষণেই থেমে গেলেন। মিথির পেছনের ছেলেটাকে দেখে চমকে গেলেন। মাহিও দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। বড়ো বড়ো চোখ করে তাকায় সে। যদিও সে সময় মাহি খুব ছোট ছিল। তাও তার দৃশ্যপটে এই পরিচিত মুখটা ভেসে উঠল। আমিরা বেগম অনেকক্ষণ চেয়ে রইলেন। তারপর অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললেন,

‘সিফাত!’

সিফাত হাসল। তার কাছে এসে পা ধরে সালাম করলো। আমিরা বেগম যেন এখনও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি সিফাতের মাথায় গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে থমথমে গলায় বললেন,

‘কেমন আছিস বাবা?’

সিফাত কোমল সুরে বললো,

‘ভালো আছি, আন্টি। আপনি কেমন আছেন?’

আমিরা বেগম জোরে শ্বাস টানলেন। বিষাদ কন্ঠে বললেন,

‘কি করে ভালো থাকব বল? তুই যাওয়ার পর থেকেই সব কিছু কেমন যেন হয়ে যায়। এই আমার মেয়েটা একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। তারপর আবার মাহির এক অসুখ ধরা পড়ে। এই নিয়ে আরো অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে এখন ভালো থাকার চেষ্টা করছি। তোকে দেখে আমার বুকটা হালকা হয়েছে রে। তুই জানিস না মিথি তোর জন্য কত পাগলামী করেছে। অবশেষে তুই ফিরে এলি। তা তোর মা বাবা কোথাও? ওনাদের সাথেও তো আমাদের যোগাযোগ নেই।’

‘আছেন আন্টি, উনারা ভালো আছেন। এই মুহুর্তে দুজনই গ্রামে আছেন। আমিই এখানে এতদিন ছিলাম শুধুমাত্র মিথির জন্য। আর আমি সবকিছু জানি আন্টি। মিথির অপারেশনের কথাও জানি। ইচ্ছে করেই এতদিন আপনাদের সামনে আসেনি। মিথির প্রতি রাগটা কমছিল না। কিন্তু আজ, আজ আর পারলাম না। মেয়েটা কেঁদে কেটে আমাকে ভুলিয়ে ফেলল। আমার জন্য আপনারাও হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছেন। তার জন্য আমি ক্ষমা যাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আন্টি।’

সিফাত হাত জোড় করে দাঁড়াল। আমিরা বেগম তার হাত জোড়া চেপে বললেন,

‘এইভাবে কেন বলছিস?।মায়ের কাছে ছেলের কোনো অপরাধ থাকে না। আগে যা হয়েছে হয়েছে সব ভুলে যা। আমার মেয়েটাকেও ক্ষমা করে দে। দুজন আমার আগের মতো হয়ে যা। তোদের পাগলামী দুষ্টুমিগুলোকে তো আমরাও খুব মিস করি বাবা।’

সিফাত হেসে বললো,

‘হ্যাঁ, তখন তো খুব কান মলা খেয়েছিলাম। এখন আর কান মলা দিবেন না তো?’

আমিরা বেগমও হাসলেন। বললেন,

‘না দেব না।’

সিফাত হাসল। হারানো ভালোবাসা গুলো আবারও নতুন করে ফিরে পেয়েছে সে।

‘এই মিথি, নৈরিথ আর নেহা কে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয়।’

মায়ের কথার পিঠে মিথি ঠোঁট উল্টে বললো,

‘কিভাবে আসবো? তুমি তো তোমার সিফাত কে পেয়ে আমাদের ভুলে গিয়েছো।’

মিথির কথা শুনে আমিরা বেগম হেসে বললেন,

‘তোর কথা ভুলে গেলেও আমার আরেকটা ছেলে আর মেয়ের কথা কিন্তু ভুলিনি। নৈরিথ, বাবা ভেতরে এসো। নেহা তুইও আয়।’

মিথি নাক ফুলিয়ে বললো,

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, এখন তো তোমার অনেক ছেলে মেয়ে। আমাকে তো তোমার আর প্রয়োজন নেই। আজকে বাবা আসুক। তোমার নামে বিচার দিব। তারপর দেখো বাবা তোমাকে কি শাস্তি দেয়।’

মিথির কথা শুনে বাকি সবাই হাসল। নৈরিথ বাসার ভেতর ঢোকার সময় মিথির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘আহারে আমার বাচ্চা বউটা! কথায় কথায় খালি গাল ফুলায়।’

মিথি বড়ো বড়ো চোখ করে তার তাকায় দিকে। কিন্তু নৈরিথ তাকে পাত্তা না দিয়ে বাসার ভেতর প্রবেশ করে। মিথি ঠোঁট গুঁজ করে তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষণ নৈরিথের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের রুমে চলে যায়।
.
.
মিথির মা চা নাস্তা নিয়ে এলেন সকলের জন্য। সিফাত মাহির সাথে গল্পে মশগুল। মাহি ইতিমধ্যে তাকে চিনেও ফেলেছে। সেও এখন ভীষণ খুশি। এতদিন মিথির মুখে সিফাতের কথা অনেক শুনেছে। অবশেষে সিফাত ফিরে এসেছে। তার বোন খুশি হয়েছে, আর সেই জন্য সেও খুব খুশি।

আমিরা বেগম চা’র কাপগুলো নৈরিথ আর সিফাত কে দিল। সিফাত চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো,

‘আংকেল কখন আসবেন আন্টি?’

‘চলে আসবে এক্ষুণি। আর এসে তোমাকে দেখে কি খুশিটাই না হবেন আমি তো শুধু সেটাই ভাবছি।’

সিফাত মৃদু হাসল। নৈরিথ বললো,

‘জানেন তো মা, আপনাদের এই ভালোবাসাগুলো দেখে ভালো লাগছে। সত্যি রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও ভালোবাসা যায়, সেটা আপনারা প্রমাণ করে দিলেন।’

নৈরিথের কথার সাথে সম্মতি জানিয়ে সিফাত বললো,

‘হ্যাঁ, আত্মিক সম্পর্কটাও না অনেক মূল্যবান। সেখানে রক্ত না থাকলেও আত্মার একটা টান থাকে।’

প্রতিত্তরে প্রসন্ন হাসল নৈরিথ। তারপর আবার চা খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
.
সিফাতের সাথে আমিরা বেগম কথা বলছেন। এতদিনের অনেক কথা তিনি আজ মন খুলে সিফাতকে বলছেন। নেহাও ড্রয়িং রুমের এক কোণে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে তাদের কথাগুলো শুনছে। ফাঁকে ফাঁকে একটু আধটু চ্যাটিং ও করছে সাদের সাথে।
.
নৈরিথ এখন মিথির রুমে। মিথির সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদ দেখছে। তবে কথা হলো চাঁদের চেয়ে সে মিথিকেই বেশি দেখছে। আজকাল কেন জানি মিথিকে তার কাছে একটু বেশিই এট্রাক্টিভ লাগে। আগে তো এমন লাগতো না। তবে এখন কেন এমন মনে হয়? এখন বউ বলে? বিয়ের পর কি মেয়েদের সৌন্দর্য বেড়ে যায়? হয়তো যায়, নয়তো মিথিকে এতটাও চমৎকার লাগতো না যে একবার তাকালে আর চোখ ফেরাতে মনে চাইবে না। মিথি টের পায় নৈরিথ বারবার তাকে দেখছে। সে হঠাৎ করেই ঘুরে তার দিকে তাকায়। চোখে চোখ পড়তেই নৈরিথ চোখ সরিয়ে নেয়। মিথি সরু চোখে তাকিয়ে বলে,

‘কি দেখছিলেন?’

নৈরিথ ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

‘কি দেখবো?’

‘তাহলে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন কেন?’

নৈরিথ স্মিত সুরে বলে,

‘কোথায় তাকিয়ে ছিলাম?’

মিথি তীক্ষ্ণ সুরে বলে উঠে,

‘এই একদম মিথ্যে বলবেন না। আমি দেখেছি আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।’

নৈরিথ বাঁকা হাসে। বলে,

‘তাহলে তো তুমিও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে। ব্যাপার কি বলোতো? আজকাল একটু বেশিই আমার দিকে তাকাচ্ছো তুমি, আবার কোনো খারাপ ফন্দি আঁটছো না তো?’

মিথি রাগে নাক মুখ ফুলিয়ে বলে,

‘আপনি তো ভীষণ খারাপ লোক। নিজে অন্যায় করে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছেন। আমি আপনার দিকে যতবার তাকাই তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি আপনি আমার দিকে তাকান। একদম এখন মিথ্যে বলতে আসবেন না। আপনার তাকানোর উদ্দেশ্য কি সেটা বলুন। আমার কিন্তু খুব সন্দেহ হচ্ছে। আপনি কিন্তু সুবিধার লোক না, মনের ভেতর কি চলছে বলুন তো?’

নৈরিথ নাক মুখ কুঁচকে বলে,

‘আমার মনে কি চলছে সেটা তোমার না জানলেও চলবে। কিন্তু তোমার মনে যে আমাকে নিয়ে খুব খারাপ কিছু চলছে সেটা কিন্তু আমি তোমার চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারছি।’

মিথি তেতিয়ে উঠে বলে,

‘এই একদম বাজে কথা বলবেন না। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো আপনি আমার জামাই হোন আপনাকে নিয়ে আমি খারাপ কিছু ভাবলেই বা কি?’

নৈরিথ তখন ব্রু নাচিয়ে বললো,

‘উহহো, তার মানে খারাপ কিছুই ভাবছো? তা কি ভাবছো বলতো? খুব খারাপ? নাকি একটু খারাপ?’

মিথি এবার খুব রেগে যায়। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বজ্র কন্ঠে বলে,

‘যান তো আপনার সাথে কথাই বলবো না। সবসময় খালি উল্টা পাল্টা কথা।’

মিথির নাক মুখ ফুলানো দেখে নৈরিথ হাসে। মেয়েটা কে দেখতে এখন ভীষণ আদুরে লাগছে। একটু আদর করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। তবে পারছে না। অস্বস্তি লাগছে খুব। নৈরিথ তার দাঁত দিয়ে নিজের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে মিথির দিকে তাকিয়ে থাকে। খুব করে ছুঁতে ইচ্ছে করছে তাকে। একটু ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। আবার একটু লজ্জা লাগছে। অদ্ভুত তো, ছেলেরাও লজ্জা পায়! নৈরিথ নিজের উপর খুব বিরক্ত হলো। চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকাল। মনের অস্থিরতা তো কমছে না। তার মস্তিষ্ক নিউরনগুলো কেবল একটাই কথাই বলে চলছে, ‘আরে বোকা ও তো তোর বউ। তুই যদি ওকে আদর না করিস তবে কে করবে? হাঁদারাম, কিচ্ছু বুঝিস না।’ সেটাই তো। মস্তিষ্কের আন্দোলন তো একদম ঠিক। নৈরিথ আবারও মিথির দিকে তাকাল। মেয়েটা যদি আগে তার স্টুডেন্ট না হতো তবে এক্ষুণি টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিত। কিন্তু এখন কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে। জোরে শ্বাস টানল নৈরিথ। যত অস্বস্তি হচ্ছে হোক, তার বউ সে চাইলে একবার কেন একশো বার চুমু খাবে। হ্যাঁ খাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। নৈরিথ টুপ করে চুমু দিয়ে বসলো মিথির ফুলিয়ে রাখা গালে। যেন কারেন্ট বয়ে গেল পুরো শরীরে। হৃৎস্পন্দন হঠাৎই খুব বেড়ে গেল মিথির। মৃদু কেঁপে উঠল পুরো শরীর। নৈরিথ অবাক হলো খুব। এই সামান্য ছোঁয়াতে মিথি যেভাবে হ্যাং মেরেছে না জানি ভবিষ্যতে নৈরিথ আরো কাছে আসতে চাইলে সে কি কি করে বসে…!
#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
৩৬.
~
কিছুটা সময় যাওয়ার পরই আতাউর সাহেব এলেন। সিফাত কে দেখে তিনিও চমকে গেলেন। তারপর এক বুক ভালোবাসায় আগলে নিলেন তাকে। অনেক গল্প করলেন সবাই। খুশিও হলেন খুব। মিথির চোখে মুখে আজ যে উৎফুল্লতা উনি দেখেছেন সেটা বিগত দু বছরও দেখতে পান নি তিনি। সকলে এক সাথে রাতের খাবার খেলেন। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরো কিছুক্ষণ সকলে বসে কথাবার্তা বললেন। ঘড়ির কাটায় এগারো’টা বাজতেই নৈরিথ বললো,

‘এবার তাহলে আমরা যাই বাবা?’

আতাউর সাহেব ঘড়ির দিকে তাকালেন। বললেন,

‘সে কি, এই সময় চলে যাবে। আজ রাত টা থেকে যাও।’

নৈরিথ বললো,

‘না না বাবা। থাকা যাবে না। কাল অফিস আছে। এখান থেকে অফিসে যেতে লেইট হয়ে যাবে। আমাকে যে করেই হোক যেতে হবে।’

নৈরিথের সমস্যার কথা শুনে আতাউর সাহেব আর বাঁধা দিলেন না। আমিরা বেগমের কাছে বিদায় নিয়ে নেহা আর নৈরিথ গাড়ির কাছে গেল। মিথিও তাদের পেছন পেছন এসেছে। নেহা গাড়িতে উঠে বসল। নৈরিথ গাড়িতে বসার আগে একবার মিথির কাছে গিয়ে মিহি কন্ঠে বললো,

‘যাই ম্যাডাম। এখন আবার সিফাত কে পেয়ে আমাকে ভুলে যেয়েন না যেন।’

মিথি ভেংচি কাটে। নৈরিথ মুচকি হেসে হাত দিয়ে মিথির নাক টেনে দিয়ে বলে,

‘পাগলী!’

মিথি বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল। নৈরিথ হেসে গাড়িতে গিয়ে বসল। তারপর গাড়ি ছুটল নিজের গন্তব্যে।
.
বাসায় আসতেই সিফাত বললো সেও এবার উঠবে। যেহেতু পাশের বিল্ডিং এই থাকে সেহেতু মিথি এখনই তাকে উঠতে দিল না। গল্প করলো অনেকক্ষণ তারা। এই কটা বছরে জমানো হাজারো কথা আজ মন খুলে বলেছে মিথি। আবার খানিকটা কেঁদেছেও। সিফাত কিছু বলেনি। সে কেবল একজন নিরব দর্শক হয়ে কেবল সবকিছু শুনে গিয়েছে।

বারো টার কাছাকাছি সময়ে সিফাত তার বাসার দিকে রওনা দেয়। সবাই তারপর যার যার ঘুমের প্রস্তুতি নেয়। বিছানায় গা এলাতে না এলাতে রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিল মিথির অক্ষিকোটরে। ঘুমিয়েও পড়ল সে। তার ঘুমের মাঝেই একবার তার ফোন বেজেছিল, কিন্তু এমন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এই মেয়ের কর্ণকুহুরে সেই সুর পৌঁছায়নি।
.
.
আরেকটা সুন্দর সকালের দেখা মেলল। চোখ খুললো মিথি। তাকিয়ে দেখল ঘড়ির কাটায় দশটা বাজতে চলল। আস্তে আস্তে উঠে বসল সে। মোবাইল টা হাতে নিল। স্ক্রিনের উপর নৈরিথের একটা মিসড কল দেখতে পেল ঠিক বারোটা ত্রিশ এর দিকে। হয়তো রাতে পৌঁছানোর পর তাকে কল দিয়েছিল সেটা জানানোর জন্য। অথচ সে গাঁধার মতো পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে। নূন্যতম রেসপন্সিবিলিটি যদি থাকত তার মাঝে। নিজেকে নিজে কিছুক্ষণ ধিক্কার জানিয়ে মিথি ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। তারপর বেরিয়ে এসে নৈরিথকে কল করলো। নৈরিথ কল রিসিভ করতেই মিথি তাকে সালাম দিল। নৈরিথ সালামের জবাব দিয়ে বললো,

‘ঘুম শেষ হয়েছে?’

‘জ্বি। রাতে কল দিয়েছিলেন? আসলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তো তাই আর শুনেনি।’

‘হুম দিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল তুমি ঘুমিয়ে পড়বে তাও একবার কল দিয়ে এনসিউর করলাম। কল রিসিভ না করাতেই বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার ধারনায় ঠিক।’

মিথি মৃদু হাসল। বললো,

‘খেয়েছেন?’

‘হ্যাঁ, তুমি খেয়েছো?’

‘না খাবো এখন।’

‘আচ্ছা তাহলে এখন গিয়ে আগে খাও, তারপর ঔষধও মনে করে খেয়ে নিও। পরে কথা হবে, রাখছি।’

‘ঠিক আছে, আল্লাহ হাফেজ।’

‘আল্লাহ হাফেজ।’

কল কেটে দিয়ে মিথি গিয়ে টেবিলে বসলো খেতে। নিত্যদিনের সেই খাবার। বাধ্য মিথি সেটা নিজের অভ্যাসে পরিণত করে নিল। খাবার খেয়ে ঔষধটাও খেয়ে নিল সে। অপারেশন হয়েছে সেই কবে অথচ এখনও ঔষধ চলছে, না জানি আরো কতদিন চলে?
.
.
আমিরা বেগম রুমে বসে মোবাইলে কিছু একটা করছিলেন। মিথি গিয়ে তার পাশে বসলো। বললো,

‘মা, বাবা আর মাহি কোথায়, ওদের দেখছি না যে?’

আমিরা বেগম মোবাইল টা পাশে রেখে মিথির দিকে তাকালেন। বললেন,

‘ওরা একটু বাইরে গিয়েছে।’

মিথি অবাক হলো কিছুটা। বললো,

‘মা, কোনো কি সমস্যা হয়েছে? আজকাল বাবা আর মাহি একটু বেশিই বাইরে যাচ্ছে?’

আমিরা বেগম স্বাভাবিক গলায় বললেন,

‘আমি কি করে জানবো বলতো? ওদের বাপ ছেলের ব্যাপার ওরা জানে।’

মিথির মন খচখচ করছে। কিছু একটা তো তার অগোচরে হচ্ছে। কিন্তু কি সেটা? বাবা আর মাহি রোজ কোথায় যায়? মাও যে তাকে ইচ্ছে করে কিছু বলছে না সেটা সে বেশ বুঝতে পারছে। মিথি ভাবতে লাগল। মস্তিষ্ক তাকে সঠিক কোনো তথ্যের জানান দিতে পারছে না। ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে পড়ল সে, তাও কোনো আশানুরূপ উত্তর আওড়াতে পারলো না। এদিকে মার কাছ থেকেও কোনো উত্তর পাচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে মিথি নাক মুখ কুঁচকে বসে আছে। তা দেখেও আমিরা বেগম না দেখার ভান করে নিজের মোবাইলে মনোযোগ দিয়ে রেখেছেন।

অনেকটা সময় এইভাবে বসে বসে পাড় করলো মিথি। একসময় দরজায় বেল বাজল। মিথি দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলল। দরজার বাইরে বাবা আর ভাইকে দেখা মাত্রই হাজার টা প্রশ্ন জুড়ে দিল সে। আতাউর সাহেব ঘরে প্রবেশ করতে করতে বললেন,

‘আস্তে মা আস্তে। আগে একটু জিরুতে দে, তারপর তোর সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি।’

মিথির কি আর এত ধৈর্য আছে নাকি? সে বাবার সাথে না পেরে মাহি কে লাগাতার প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। কিন্তু মাহিও কিছু বলছে না। আজব তো! সবাই কি আজকে কথা না বলে চুপ থাকার কোনো ব্রত করছে নাকি? কেউই তাকে কিছু বলছে না কেন? মিথি এবার প্রচন্ড রেগে যায়। আমিরা বেগম তখন প্রশ্ন করেন,

‘কি গো, যেই কাজে গিয়েছিলে সেই কাজ টা হয়েছে তো?’

মিথি তাতে আরো বেশি বিচলিত হয়ে পড়ল। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,

‘আমাকে কেউ কিছু বলছো না কেন? কি কাজ? কিসের কথা বলছো তোমরা?’

আতাউর সাহেব হাসলেন মিথির অস্থিরতা দেখে। বললেন,

‘মা আবার এত অস্থির হয়ো না। এখনই তুমি বুঝবে আমরা কোন কাজের কথা বলছি।’

এইটুকু বলে তিনি মাহির দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘মাহি, বাবা এবার সময় এসেছে তো। যাও তোমার বোনকে নিয়ে দেখাও আমরা কি কাজ করে এসেছি।’

মিথি কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। মাহি ঝলমলিয়ে হেসে উঠে দাঁড়াল। তারপর মিথির হাত ধরে বললো,

‘চল চল আপু, তোমার জন্য দারুণ একটা সারপ্রাইজ আছে।’

মিথি অত্যন্ত অবাক হয়ে বললো,

‘সারপ্রাইজ? কি সারপ্রাইজ?’

চলবে..

(ব্যস্ত থাকার কারণে কাল গল্প দিতে পারি নি। অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত😔)
চলবে..

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here