তোমাতেই পরিপূর্ণ পর্ব -৩১+৩২+৩৩

#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফরিয়া প্রত্যাশা
৩১.
~
সকালের নাস্তা সবেই শেষ হলো। তারপর থেকেই মিথি নেহার মাথা খেয়ে ফেলছে। তাকে এক্ষুণি সেই মানুষটার সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার জন্য। অপেক্ষার প্রহর যেন আর কাটছে না। বেস্ট ফ্রেন্ডের বয়ফ্রেন্ড বলে কথা, একটু বেশি এক্সাইটেড তো হওয়ারই কথা। নেহার এবার মাথা ধরে গেছে। মিথিকে ধমক দিয়ে সে বললো,

‘উফফ, আমি ম্যাসেজ দিয়েছি তো। ও বললো এখন নাকি ও একটু বিজি আছে। বিকেলে দেখা করবে।’

মিথি নাক মুখ কুঁচকে ফেলল। ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো,

‘কি এমন ব্যস্ততা উনার? কি কাজ করেন উনি? উনাকে দেখতে গেলে তো মনে হচ্ছে আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট দিয়ে রাখতে হবে। আর বাই দ্যা ওয়ে উনার নাম কি? নাম টা তো অন্তত বলতে পারিস?’

নেহা মিথির দিকে ঘুরে বসলো। বললো,

‘হ্যাঁ পারি। ওর নাম সাদ। এখন এই নাম নিয়েই তুই আপাতত খুশি থাক। বিকেলে না হয় এই নামের মানুষটার সাথেও পরিচয় হয়ে নিস।’

মিথি ভাবলেশহীন ভাবে বললো,

‘ঠিক আছে, ঠিক আছে।’

ঘড়ির কাটা এগারোটা ছুঁয়েছে হয়তো। মাহি তার বাবার সাথে কোথাও একটা গিয়েছে। আমিরা বেগম দুপুরের রান্না করাতে ব্যস্ত। মিথি আর নেহা টিভি দেখছে। তখনই নেহার ফোনে নৈরিথ কল দেয়।

‘হ্যালো, ভাই!’

‘হ্যাঁ নেহা, তুই আসবি কখন? নিতে আসবো তোকে?’

‘না ভাই। এখন আসিস না। আমি সন্ধ্যার দিকে আসবো। আর আসার আগে তোকে কল দিব, চিন্তা করিস না।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। আর ম্যাডাম কোথায়? উনার তো একটু পর কোচিং মনে আছে তো?’

নেহা কোনো জবাব না দিয়ে ফোনটা মিথির হাতে ধরিয়ে দিল। টিভি দেখায় ব্যাঘাত ঘটল তাতে। মিথি বিরক্ত হলো। ব্রু কুঁচকে নেহাকে বললো,

‘কে?’

‘আরে ভাই। কথা বল।’

মিথি ফোনটা কানে ধরলো। সালাম দিল। নৈরিথ সালামের জবাব দিয়ে বললো,

‘কি করছো?’

‘টিভি দেখছিলাম।’

নৈরিথ তপ্ত গলায় বললো,

‘ভালো তো, তুমি টিভি দেখো। আর তোমার কোচিং টা না হয় আমি করে আসি। কি বলো, ভালো হবে না?’

মিথি চট করেই মনে পড়ল তার কোচিং এর কথা। কিছুক্ষণের জন্য তো ভুলেই গিয়েছিল সে। মিথি শুকনো মুখে বললো,

‘আসলে মনে ছিল না। রেডি হচ্ছি। রাখি তাহলে?’

নৈরিথ বাঁধা দিয়ে প্রশ্ন করলো,

‘একাই যাবে?’

‘হ্যাঁ, এইটুকু পথ একাই যেতে পারবো।’

মিথির কথা শুনে নৈরিথ খানিক চুপ থেকে বললো,

‘আচ্ছা শোনো, আজ আমি দিয়ে আসবো। পরদিন থেকে না হয় তুমি একাই যেও।’

মিথির মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠে। উচ্ছল কন্ঠে বললো,

‘আপনি এখন আসবেন?’

‘হুম আসছি। তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

কলটা কেটে দিয়ে মিথি খুশিতে নেহাকে জড়িয়ে ধরে। উৎফুল্ল কন্ঠে বলে,

‘উফফ নেহু, তোর ভাই আমাকে নিয়ে কত ভাবে। আহা, কত কেয়ার তার!’

নেহা মুচকি হাসে। তারপর বলে,

‘তুই কোচিং কবে ভর্তি হলি? বলিস নি তো আমাকে কিছু?’

‘আরে আগেই বাবা ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু অসুস্থ থাকার কারণে ক্লাস করতে পারেনি। কাল নৈরিথও সেখানে গিয়ে কথা বলে এসেছে। আজ থেকে যাবো। তোর ভাই বলেছে তৈরি হতে উনি নাকি আমাকে দিয়ে আসবেন।’

শেষের কথাটা বলার সময় মিথি লাজুক লাজুক হাসি দিল। নেহা হেসে তার গাল টেনে বললো,

‘আহা রে লজ্জাবতী লতিকা আমার।’
.
.
মিথি বাইরে বেরিয়ে দেখল নৈরিথ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। মিথি ধীর পায়ে তার কাছে এসে দাঁড়াল। নৈরিথ টের পায় কারো উপস্থিতি। চোখ বুজে একটা নিশ্বাস ফেলে মিথির দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই কপাল কুঁচকে ফেলে সে। গম্ভীর সুরে বলে,

‘ঠোঁটের লিপস্টিক টা মুছো।’

মিথি অবাক হয়। তাই ইতস্তত কন্ঠে বলে,

‘কেন?’

নৈরিথ থমথমে গলায় বললো,

‘লিপস্টিক দেয়ার কি আছে? তুমি তো কোচিং এ পড়তে যাচ্ছো তাই না। তো সেখানে এইসব লাগিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি। তুমি লিপস্টিক টা মুছে গাড়িতে এসো।’

এই বলে নৈরিথ গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসলো। মিথি দাঁড়িয়ে রইল। নৈরিথের এমন ব্যবহার তার মোটেও পছন্দ হয়নি। লিপস্টিকও না সামান্য লিপজেল লাগিয়েছিল যেন ঠোঁটগুলো হালকা পিংকিস পিংকিস লাগে। কিন্তু তাতেও এই ভদ্র লোকের এত সমস্যা। উফফ, অসহ্য!’

মিথি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঘষে ঘষে সমস্ত লিপজেল ঠোঁট থেকে মুছে ফেলল। তারপর পেছনে নৈরিথর সাথে গিয়ে বসলো। অফিস থেকে আজ ড্রাইভার নিয়ে এসেছিল নৈরিথ, তাই আজ আর তাকে ড্রাইভ করতে হবে না।

মিথি গাল দুটো ফুলিয়ে বসে আছে। নৈরিথ জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার পাশে যে একটা জল জ্যান্ত মানুষ এইভাবে মুখ কালো করে বসে আছে সেটা নিয়ে বিন্দু মাত্র ভাবনা নেই তার। মিথির তো এবার আরও রাগ হচ্ছে। বেটা রোবটের মতো এইভাবে বসে আছে কেন?

গাড়ি স্টার্ট দেয়। অনেকক্ষণ মিথি চুপ ছিল। কিন্তু এবার আর পারছে না। সে নৈরিথের দিকে ফিরল। দেখল সে ফোন ঘাটছে। মিথি ব্রু কুঁচকালো। তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। ফোনে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে সে। দুই ব্রু’র মাঝখানের জায়াগাটায় পড়ে থাকা ভাজটা বলে দিচ্ছে কাজটা কতটা জরুরি তার। মিথি এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বললো,

‘কি সমস্যা আপনার?’

নৈরিথ তাকাল মিথির দিকে। কিছু না বুঝে বললো,

‘মানে?’

মিথি শাসিয়ে উঠে বলে,

‘ফোনে এত কি হ্যাঁ? বউ তো সামনে বসা। তাহলে বউ রেখে ফোনে কি?’

নৈরিথ চকিত হলো মিথির কথা শোনে। লজ্জাও পেল খানিক, সামনে ড্রাইভার আছে বলে। অপ্রস্তুত কন্ঠে বললো,

‘মানে?’

মিথি কিছুটা এগিয়ে এলো নৈরিথের দিকে। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘মানে বুঝেন না, বউয়ের সাথে মানুষ কি করে?’

নৈরিথ তির্যক গলায় বললো,

‘এই মেয়ে কি হয়েছে তোমার? কি বলছো এসব? মাথায় কি গন্ডগোল হয়েছে নাকি?’

‘না, গোন্ডগোল কেন হতে যাবে। আপনি জানেন না তাই আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম। ব্যস এইটুকুই তো।’

‘হয়েছে চুপ করো। তোমাকে আর আগ বাড়িয়ে কিছু জানাতে হবে না। আর শোনো কোচিং এ গিয়েও একদম কম কথা বলবে। আজগুবি প্রশ্ন করে স্যারদের বিরক্ত করবে না। বুঝেছো?’

মিথি কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

‘আমি আজগুবি প্রশ্ন করি?’

‘জ্বি করেন। বই এর টপিক বাদে পৃথিবীর বাকি সবকিছু নিয়ে আপনি প্রশ্ন করতে। যেটা এখন আর ভুলেও করবেন না। আমার কাছে যেন কোনো কমপ্লেইন না আসে। মনে থাকে যেন।’

মিথি বিরক্ত হয়ে মাথা নাড়াল। গাড়ি গিয়ে থামল কোচিং সেন্টারের সামনে। গাড়ি থেকে নেমেই পার্কিং লটে আজ আবারও কালকের সেই বাইকটাকে দেখতে পেল মিথি। মিথি তখনই মনে মনে ঠিক করে ফেলল, এই লোকটাকে আজ সে ছাড়ছে না। আর এর মুখটাও তাকে দেখতে হবে। কেন যেন তার সন্দেহ হচ্ছে। যদিও সেটা একেবারেই কিঞ্চিত। তবে এই কিঞ্চিত সন্দেহটাকেই এখন তাকে দূর করতে হবে। নয়তো এই সন্দেহ তাকে সবসময় তাড়া করে বেড়াবে।
#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
৩২.
~
ক্লাস শেষে বের হতেই মিথির সেই ছেলেটির কথা মনে পড়ল। ছেলেটি তার ক্লাসের না। অন্য ক্লাসের হবে হয়তো। আবার নাও হতে পারে। তবে সে যে এই মুহুর্তে এই কোচিং সেন্টারেই আছে সেটা মিথি জানে। কারণ, বারান্দা দিয়ে সে ঐ ছেলের বাইকটা পুরোটা সময় খেয়াল করেছে। কিন্ত এখন সে তাকে খুঁজবে কি করে? নামটাও তো জানে না। মিথি ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। অফিস রুমের বাইরেই নৈরিথ কে দেখতে পায় সে, কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। মিথির অধর প্রসারিত হয়। মনে আনন্দ জাগে। নৈরিথ তো তার জন্যই অপেক্ষা করছিল। ভালোবাসাময় অপেক্ষা’টা ভীষণ সুন্দর। এই অপেক্ষার মাঝে কোনো ক্লান্তি থাকে না। যতই সময় যাক না কেন মনে হয় ক্ষণে ক্ষণে যেন অনুভূতিগুলো বেড়েই চলছে। এই অনুভূতি, এই প্রেম, এই অপেক্ষা কখনো পুরোনো হয় না।

মিথি এগিয়ে গেল নৈরিথের দিকে। পাশে এসে দাঁড়াল। নৈরিথ তখনও ফোনে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর কল কেটে নৈরিথ পাশে তাকিয়ে মিথিকে দেখে বললো,

‘ক্লাস শেষ?’

মিথি হেসে জবাবে বললো,

‘জ্বি।’

‘আচ্ছা, চল তবে তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসছি।’

মিথি বললো,

‘ঠিক আছে, চলুন।’

নৈরিথ বের হয়ে গাড়ির কাছে গেল। মিথিও তার পেছন পেছন গেল। যাওয়ার সময় একবার এদিক ওদিক সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে গেল সেই ছেলেটির দেখা পায় কিনা।
গাড়িতে উঠল মিথি আর নৈরিথ। নৈরিথ মিথির পাশের সিটটাতে আরাম করে বসে মিথিকে বললো,

‘কেমন গিয়েছে প্রথম ক্লাস?’

মিথি নৈরিথের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। বললো,

‘ভালো। এখানকার স্যারগুলো খুব ভালো, খুব ফ্রেন্ডলি।’

নৈরিথ হালকা মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,

‘হুম, ভালো টা যেন শুধু ভালো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে এর উপরে যেন না যায়।’

মিথি দাঁত কেলিয়ে হাসল নৈরিথের কথা শুনে। বললো,

‘কেন? শুধু ভালো না থেকে যদি আরেকটু উপরে যায় তাহলে কি হবে?’

নৈরিথ বাঁকা চোখে তাকাল। নাকের পাটা ফুলিয়ে বললো,

‘তখন শুধু কি না, কি কি হবে শুধুই সেটাই দেখবে। আমি যা বলেছি সেটা যেন মাথায় থাকে। উল্টা পাল্টা কোনো কাজ করলে গাল ফাটাব।’

মিথি নাক মুখ ফুলিয়ে নিল। যেন এক গাদা হাইড্রোজেন গ্যাস কেউ তার মুখে পুরে দিয়েছে। সে কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

‘মারা ছাড়া আপনি আর কিছু পারেন না, না? আগে স্টুডেন্ট ছিলাম বলে মারলেও কিছু বলতাম না। এখন কিন্তু আমি আপনার বউ, মারামারি করতে আসলে একদম নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়ে দিব। তখন দেখবেন কেমন লাগে।’

মিথির কথায় সশব্দে হেসে উঠে নৈরিথ। মিথি তাকাল তার দিকে। চোখ বুজে নিশ্বাস নিয়ে বললো,

‘হাসবেন না একদম।’

নৈরিথ তাও হাসতে হাসতে বললো,

‘হাসির কথা বললে কি আর না হেসে থাকা যায়?’

কথাটা বলে নৈরিথ তার হাসি জারি রাখল। মিথি রাগ করবে কি সে তো নৈরিথের হাসিতেই ফিদা। মুখ ঘুরিয়ে নিল অন্য দিকে। একটা মানুষ ঠিক কতবার কতভাবে আরেকটা মানুষের প্রেমে পড়তে পারে? তার মনে হয় সেই একজন মানুষ যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সংখ্যক বার অন্য একজন মানুষের প্রেমে পড়েছে। এবং প্রতিনিয়ত পড়েই যাচ্ছে। কি অদ্ভুত!

গাড়ি থামল গিয়ে মিথির বাসার সামনে। মিথি গাড়ি থেকে নামতে নিলেই নৈরিথ তার বাম হাতটা চেপে ধরে। অতঃপর তার কিছুটা কাছে এগিয়ে এসে বলে,

‘শুনো, তোমার লাল বর্ণ অরুন রাগে আমি বরাবরই মত্ত। এত রাগলে হয় নাকি? তোমার অনুরাগে যে করুণ ভাবে সিক্ত হয়ে যাচ্ছি।’

মিথি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। নৈরিথ মুচকি হেসে তার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে,

‘কি হলো? কি দেখছো?’

মিথি সরু চোখে কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু তার এই মাথামোটা মাথাতে এসব ঢুকে না। বিরক্ত হয়ে মিথি গাড়ি থেকে নেমে গেল। নৈরিথ তাকিয়ে রইল সেই দিকে। বেশ কিছুক্ষণ পর সে ড্রাইভার কে বললো গাড়ি স্টার্ট দিতে। যখন তার দৃষ্টির পিপাসা মিটল।

দরজায় কলিং বেল বাজতেই নেহা এসে দরজা খুললো। মিথি ভেতরে ঢুকে কাঁধ থেকে ব্যাগটা সরিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। নেহাও তার সাথে বসলো। বললো,

‘কি রে কেমন লাগল ক্লাস করে?’

‘ভালো।’

‘যাক ভালো হলেই ভালো। তোর বাবার মুখে শুনেছি কোচিং সেন্টারটা নাকি খুব ভালো। এখন তুই শুধু একটু মনোযোগ দিয়ে পড়, যেন একটা ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেতে পারি।’

আমিরা বেগমের উদ্রেক মাখা কন্ঠস্বর শুনতে পেল মিথি। মায়ের দিকে তাকিয়ে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসলো। বললো,

‘মা, এখনও রেজাল্টই দেয়নি। আগে রেজাল্ট দিক তারপর ভাববো এসব। এখন ভালো লাগছে না, আমি ফ্রেশ হতে যাই।’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে। তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়, আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। নেহাও না খেয়ে বসে আছে তুই এলে একসাথে খাবে বলে।’

মিথি রাগি চোখে নেহার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘তুই এখনও খাস নি কেন গরু? যা টেবিলে গিয়ে বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’
.
.
দুপুর শেষে বিকলের দেখা মিলল। রোদ এখন কিছুটা কম। বাইরে হালকা ঠান্ডা বাতাস। মিথি আর নেহা রেডি হচ্ছে, নেহার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার জন্য। মিথি তো দারুণ এক্সাইটেড। নেহাও তাই। এটা তাদেরও প্রথম দেখা। ঐ ফেসবুক প্রেম আরকি। দেখাদেখি ছাড়াই দুই যুবক যুবতী তাদের প্রেমে মত্ত। মিথি নেহাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিল। শেষে কানের লতিতে একটা কালো টিকা লাগিয়ে দিয়ে বললো,

‘আমার সুন্দরীটার যেন কারোর নজর না লাগে।’

নেহা লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসে। মনে মনে সেই কাঙ্খিত মানূষটাকে নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা করে ফেলে। ছোট্ট একটা গিফটও কিনে নেয় তার জন্য।

মাকে এটা ওটা বুঝিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়ল। সোজা গেল সেই নির্দিষ্ট রেস্ট্ররেন্টে, যেখানে সেই মানুষটিও আছে। রেস্ট্ররেন্ট ঢুকার আগে মিথি বললো,

‘এই নেহু ভাইয়ার কি পছন্দ বলতো? আমি তো ভাইয়ার জন্য কিছুই নেই নি। কিছু একটা বলতো কি নেয়া যায়?’

নেহা না করলেও মিথি শুনলো না সে কিছু না কিছু নিবেই। মিথির জোরাজুরিতে নেহা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো,

‘আচ্ছা বাবা বলছি, এতই যখন নিতে ইচ্ছে করছে তবে ঐ ফুলের দোকান থেকে দুইটা রজনীগন্ধার স্টিক নিয়ে আয়। ওর রজনীগন্ধা খুব প্রিয়।’

মিথি শুকনো মুখে হাসল। বললো,

‘জানিস তো সিফাতেরও না রজনীগন্ধা খুব প্রিয় ছিল।’
.
.
মিথি ফুলগুলো কিনে আনল। তারপর দুজন রেস্ট্ররেন্টের ভেতর প্রবেশ করলো। নেহা ভীষণ নার্ভাস। মিথি তাকে এটা ওটা বলে আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্ত প্রেমের ভয় সহজে দূর হয় না। সেক্ষেতে নেহারটাও তাই।

ওয়েল ডেকোরেট একটা রেস্ট্ররেন্ট। বেশি দিন হয়নি হয়তো এটা যে তৈরি হয়েছে। মিথি এদিক ওদিক দেখতে দেখতে রেস্ট্ররেন্টের ভেতর প্রবেশ করলো। নেহা আশে পাশে তাকিয়ে তার মানুষটিকে খুঁজতে থাকে। কিছুক্ষণের মাঝেই হাত তুলে সে মুচকি হেসে ডেকে উঠে,

‘হাই সাদ!’

মিথি তার কন্ঠস্বরের অনুসরণ করে সেদিকে তাকাল। তাকিয়ে দেখল,#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
৩৩.
~
মিথি তাকিয়ে দেখল সামনের ডানপাশের একটা টেবিলে একজন সুদর্শন যুবক বসা। গায়ের রংটা তার একটু চাপা হলেও মুখ ভর্তি তার মায়া আছে। মিথি মুচকি হাসল। নেহার চোখে মুখে ফুটে উঠল কিঞ্চিত লজ্জা। এগিয়ে গেল তারা। ছেলেটা উঠে দাঁড়াল। চোখ মুখে একটা খুশি খুশি ভাব। ঠোঁট জোড়া প্রশস্ত করে হেসে বললো,

‘বসো।’

নেহা অপর পাশের চেয়ারটায় বসতে নিলেই মিথি তাকে বাধা দিয়ে বললো,

‘এই পাশে কেন বসছিস? ভাইয়ার পাশে গিয়ে বস।’

নেহা লজ্জা পেল। ইশারায় না করলো। কিন্তু মিথি তো শোনার পাত্রী না। সে জোর করেই নেহাকে সেই ছেলেটির পাশে বসালো। তারপর সেও অপর পাশের চেয়ারটায় বসলো। প্রসন্ন হেসে হাতের রজনীগন্ধা ফুলের স্টিকগুলো ছেলেটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ভাইয়া, এটা আপনার জন্য।’

ছেলেটা তখন মুচকি হাসল। বললো,

‘ধন্যবাদ।’

তারপর বললো,

‘কি খাবেন বলুন?’

মিথি হেসে হেসে বললো,

‘আমাকে না আপনার পাশের উনাকে জিগ্যেস করুন সে কি খাবে? আজকের স্পেশাল গেস্ট তো উনি।’

সাদ হাসল মিথির কথা শুনে। নেহার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘কি খাবে?’

নেহা লজ্জা পাচ্ছে, ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। মাথা নিচু করে হাত কচলাতে কচলাতে বললো,

‘আপনি যা খাবেন অর্ডার দিন। আমার কোনো পছন্দ নেই।’

মিথি তখন ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,

‘কি তোর কোনো পছন্দ নেই? তোর না শর্মা খুব পছন্দ, হু? সারাদিন তো আমাকে বলিস একটা শর্মা খাওয়া একটা শর্মা খাওয়া, এখন তাহলে এত ঢং করছিস কেন?’

নেহা রেগে গেল। চোখ গরম করে মিথির দিকে তাকাল। মিথি ঠোঁট চেপে মিটি মিটি হাসছে। নেহা ইশারায় অনেক হুমকি দিয়ে দিল। কিন্তু মিথি সেসবে পাত্তা না দিয়ে বললো,

‘ভাইয়া, ও আসলে খুব লাজুক তো তাই বলতে পারছে না। আপনি ওর জন্য একটা শর্মা অর্ডার দিন। ওর শর্মা খুব পছন্দ।’

সাদ সরস কন্ঠে বললো,

‘ঠিক আছে। তা আপনি কি খাবেন?’

মিথি মলিন কন্ঠে বললো,

‘আমি, আসলে আমার বাইরের খাবার খাওয়া বারণ।’

মিথির কথা শুনে সাদ সপ্রতিভ হলো। বললো,

‘ও সরি আমার মনে ছিল না। নেহা আমাকে সব বলেছে।’

মিথি অবাক হয়ে বললো,

‘কিছুদিনের কথায় আপনাকে সব বলে ফেলেছে?’

সাদ জবাবে হাসল, বললো,

‘জ্বি, আপনার ফ্রেন্ডের মুখে সারাদিন কেবল আপনিই ছিলেন।’

মিথি মাথা নাড়িয়ে মেকি হতাশের সুরে বললো,

‘আহারে, মেয়েটা প্রেম করতেও জানে না। আপনি নিশ্চয়ই খুব বোরিং হয়েছেন, তাই না ভাইয়া?’

‘আরে না না। বোরিং হবো কেন? বরং আমার তো ভালো লেগেছে আপনাদের বন্ডিং দেখে।’

মিথির মুখের প্রশান্তির হাসি ফুটল। সাদ আর কথা না বাড়িয়ে একজন ওয়েটারকে ডেকে কিছু খাবার অর্ডার দিল। মিথির বারণ থাকায় সে তেমন কিছু খেল না। যদিও এতে তার মন খারাপ হয়নি। এখন এসবে মানিয়ে নিয়েছে। এইভাবেই তো বাকিটা জীবন পার করতে হবে তাকে।

মিথি অনেক আগেই রেস্ট্ররেন্ট থেকে বেরিয়ে গেছে। নেহা আর সাদ কে আলাদা করে সময় কাটানোর উপায় করে দিয়ে এসেছে। নেহা লজ্জা পাচ্ছিল একা থাকতে, মিথি কে বারণ করছিল খুব। কিন্তু মিথি শুনলো না, নেহাকে রেখে সে বেরিয়ে এসেছে। হাঁটতে হাঁটতে সামনের ফুলের দোকান গুলোর কাছে গেল মিথি। গোলাপ পছন্দ তার। গোলাপ ফুলগুলো হাত দিয়ে দেখছিল। সেই দোকানের ছোট্ট একটা ছেলে বললো,

‘আপা, গোলাপ নেবেন? এক পিছ পাঁচ টাকা।’

মিথি তাকাল ছেলেটার দিকে। মাহির সমান হবে হয়তো। কিন্তু মাহির সাথে তফাৎ টা অনেক। মিথি চেয়ে রইল অনেকক্ষণ। তারপর কি ভেবে বিশ টা গোলাপ কিনে ছেলেটার হাতে একশো টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিল। ছেলেটা খুশি হলো খুব। মিথিও খুশি হলো। ফুলগুলো হাতে নিয়ে আরও কিছুটা সামনে এগিয়ে গেল। রাস্তার এক ধারে একটা স্টিলের বেঞ্চ করা ছিল। সেখানে গিয়ে বসলো সে। বিকেল টাইম এইদিকটা একদম ফাঁকা। চারদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। গোলাপ গুলো থেকে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ মিথির নাকে এসে ঠেকছে। মিথি নিরবে চেয়ে রইল লাল ফুলগুলোর দিকে। অনেকক্ষণ চেয়ে রইল। তারপর আশে পাশে তাকাল। বোর হচ্ছিল বসে বসে। কি করবে, কি করবে ভাবতে ভাবতেই নৈরিথ কে কল দিয়ে বসলো। নাম্বার টা ব্যস্ত দেখাচ্ছে। মিথির কিছুটা রাগ হলো। ফোনটা পাশে রেখে আবারও এদিক ওদিক তাকাল সে। মিনিট পাঁচ এক পড়েই নৈরিথ তাকে আবার কল ব্যাক করলো। কল রিসিভ করে মিথি বললো,

‘আপনি কি ব্যস্ত?’

‘না, বলো।’

মিথি সময় নিয়ে ভাবল, কি বলবে? কিছু বলার জন্য তো কল দেয়নি। মন চেয়েছে তাই দিয়ে ফেলেছে। এখন কি বলা যায়? মিথি কথা খুঁজতে থাকে। নৈরিথ আবারও বলে,

‘কি হলো, কিছু বলছো না যে?’

মিথি ফট করেই বলে ফেলল,

‘আপনাকে মিস করছিলাম!’

‘সকালেই তো দেখা হলো, বিকেল হতে না হতেই মিস করছো? বাহ, তোমার মনে তো দেখছি খুব প্রেম!’

সরব হলো মিথির ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক। আবেগের ঠেলা সামলাতে পারে নি সে। কেন এই কথাটা বলতে গেল? কেন? এখন এই লোকটা তাকে নিয়ে যে মজা করবে, সেটা কি ভাল লাগবে?

মিথি মুখ কালো করে বসে রইল। নৈরিথ প্রশ্ন করলো,

‘কোথায় আছো?’

থমথমে গলায় মিথি জবাব দিল,

‘বাইরে।’

‘কেন, এই সময় বাইরে কেন?’

নৈরিথ কঠোর কন্ঠ শুনে মিথি সপ্রতিভ হলো। বললো,

‘না মানে, এই একটু সামনে হাঁটতে বেরিয়েছি।’

নৈরিথ পুনরায় প্রশ্ন করলো,

‘নেহা কোথায়?’

‘আছে তো। আমার পাশেই আছে।’

মিথ্যে বলে দিল। এছাড়া উপায়ও নেই। নৈরিথ বললো,

‘কই দাও তো। ওকে জিগ্যেস করি, কখন বাসায় আসবে। আমাকে তো আবার নিতে আসতে হবে।’

এবার মিথি ফেঁসে গেল। এখন, এখন কি বলবে সে? সত্যি বললে নৈরিথ তাদের দুজনকে একসাথে আছাড় দিবে। মিথ্যে বলেও লাভ হলো না, সেই তো ধরা তো পড়ে গেল। মিথি মাথা চুলকাচ্ছে। কোনা কথা সাজিয়ে উঠতে পারছে না।

নৈরিথ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও মিথির কোনো জবাব না পেয়ে এবার সে ধমক দিয়ে উঠল,

‘এই মেয়ে কথা বলছো না কেন? নেহা কোথায়?’

মিথি ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে মৃদু সুরে বললো,

‘ধমক দিচ্ছেন কেন? একটু ভালোবেসেও তো কথা বলা যায়। আর আপনি কি হ্যাঁ, আমি একটু কল দিয়েছি আপনার সাথে কথা বলার জন্য। আর আপনি তো আমার সাথে কথা বলছেনই না উল্টো নেহাকে খুঁজছেন।’

কথাগুলো বলে মিথি আহ্লাদী করে নাক টানল। নৈরিথ বললো,

‘আমি বরাবরই এইভাবেই কথা বলি। সেটা তুমিও জানো। কিন্ত কথা এটা না, কথা হলো গিয়ে তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছো। তাই এখন কথা ঘুরানোর জন্য এসব বলছো। (একটু থেমে) এখন আর কথা না ঘুরিয়ে বলো কোথায় আছো?’

মিথি ঠোঁট উল্টে হতাশ হয়ে বসল। এই লোককে মিথ্যে বলেও শান্তি নেই। ধরা তো পড়তেই হবে। ব্যাধিগ্রস্থ কন্ঠে বললো,

‘একটু দূরেই এসেছি। তবে বেশি দূরে না, একটু খানি দূরে। চিন্তা করবেন না এক্ষুনি বাসায় চলে যাচ্ছি। টাটা।’

‘এই ফোন রাখবে না একদম। কোথায় আছো বলো, আমি আসছি।’

মিথি এবার বাক শক্তি হারাল। এবার সত্যিই সে বোবা বনে গেল। বিষন্ন সুরে বললো,

‘ফুলবাড়ির এইদিকে যে নতুন একটা রেস্ট্ররেন্ট হয়েছে সেখানেই আছি।’

নৈরিথ এবার উত্তেজিত হয়ে পড়ল। বললো,

‘তুমি রেস্ট্ররেন্টে গিয়েছ কেন? তোমার না বাইরের খাবার খাওয়া বারণ।’

‘আরে এত উত্তেজিত হবেন না। আমি কিছু খাইনি। নেহা শর্মা খাবে বলছিল, তাই ওকে নিয়ে এসেছি।’

নৈরিথ শান্ত হতে পারলো না। মিথি কে আরও কিছুক্ষণ তার ধমক খেতে হলো। তারপর ফোনটা কাটল নৈরিথ। গাড়ি নিয়ে ইতিমধ্যেই বেরিয়ে পড়েছে সে। যেকোনো সময় চলে আসবে। তাই আর রিস্ক নেয়া যাবে না। মিথি দ্রুত নেহাকে কল লাগায়,

‘হ্যালো নেহু!’

‘হ্যাঁ, মিথি বল। কই তুই?’

‘আমি আছি সামনে। শোন, তোর ভাই আসছে। জলদি সাদ ভাইয়া কে এখান থেকে যেতে বল। এমনিতেই উনি রেগে আছেন। এখন যদি এসে এসব দেখে তাহলে কিন্তু কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’

নেহাও ভয় পেয়ে গেল। যতই ভাইয়ের সাথে হাসি মজা করুক না কেন, ভাইকে সে ভয় পায় প্রচুর। নেহা সাদকে সঙ্গে সঙ্গেই বুঝিয়ে বললো সব। ততক্ষণে মিথিও তাদের কাছে আসে। সাদ প্রথমে চাইছিল আজই নৈরিথের সাথে কথা বলবে কিন্তু মিথির দোহায় শুনে আর পারে না। বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয় তাকে। নেহা তখন রাগি চোখে মিথির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ভাই জানল কি করে আমরা যে এখানে আছি?’

মিথি ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকাল। মিথির চাহনি দেখেই নেহা বুঝে গেল এইসব কিছু এই ভদ্র শয়তানটায় করেছে। রাগি গলায় নেহা বলে উঠে,

‘মানে কোনো কথা তোর পেটে হজম হয় না, তাই না?’

মিথি কাঁদো কাঁদো চোখ মুখে বললো,

‘সরি।’

নেহা বুকের উপর দুই হাত ভাজ করে বিরক্ত হয়ে চেয়ারে বসলো। মিথি উঠে গিয়ে তার পাশে বসে তাকে মানানোর জন্য কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ যায় তাদের ঠিক বরাবর টেবিলটার দিকে। মিথি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই ছুটে যায় সেই টেবিলটার কাছে। থম মেরে মাটিতে বসে পড়ে। ক্লান্ত কন্ঠে বলে উঠে,

‘সিফাত!’

ছেলেটাও স্তব্ধ। হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল মেয়েটার দিকে। মিথি কেঁদে ফেলল। কিছু না ভেবেই উঠে জড়িয়ে ধরলো তাকে। রেস্ট্ররেন্টে বাকি সবার সাথে নেহাও চকিত হলো। হা করে তাকিয়ে রইল সেদিকে। মিথি খুব কাঁদছে। ছেলেটার মধ্যে কোনো ভাবাবেগ হচ্ছে না। সে স্ট্যাচু হয়ে বসে আছে। মিথি এবার তাকে ছেড়ে সোজা হয়ে তার হাঁটুর সামনে বসলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,

‘তুই এতদিন কোথায় ছিলি? জানিস আমি তোকে কত খুঁজেছি। আমার মনে হচ্ছিল তুই আমার আশে পাশেই আছিস। কিন্তু কোনোভাবেই তোকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তুই কি এখনও আমার উপর রেগে আছিস? এই সিফাত, কথা কেন বলছিস না? কিছু তো বল? দেখ আমি আর পারছি না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রে, প্লীজ কিছু বল।’

ছেলেটা চোখ বুজে একটা নিশ্বাস ফেলল। তারপর মিথির দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো,

‘এতদিন পরেও দেখেও তুই আমাকে চিনতে পারলি? যাক অন্তত আমার চেহারা টা ভুলিস নি। তা এখানে কেন এসছিস? বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেট করতে?’

মিথি ঢোক গিলে। এতদিন পর দেখা অথচ ছেলেটা তার সাথে এইভাবে কথা বলছে? মিথি বুঝতে পারে, সিফাতের রাগ এখনও কমে নি। মিথি তার দুইহাত জড়িয়ে ধরে। কান্না ভেজা কন্ঠে বলে,

‘এখনও রেগে আছিস? আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না? আমি তো আমার ভুলের জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছি। তোকে ছাড়া এতগুলো দিন কাটিয়েছি। কতটা কষ্ট হয়েছে আমি জানি। তাও তোর রাগ কমলো না?’

সিফাত জবাবে কিছু বললো না। মিথি তাকে অনেক কিছু বুঝাল, অনেক ভাবে বুঝাল, অনেক বার ক্ষমাও চাইল। তবে সিফাতের কোনো জবাব পেল না। সেও তার হাত ছাড়ল না। বসে রইল ওভাবেই। সে সময় সেখানে নৈরিথ এলো। রেস্ট্ররেন্টে ঢুকে সে এদিক ওদিক তাকিয়ে মিথি আর নেহাকে খুঁজতেই সে নেহাকে দেখতে পেল। দেখতে পেল মিথিকেও। থমকে গেল নৈরিথ। মিথিকে ঐভাবে একটা ছেলের হাত ধরে বসে থাকতে দেখে সে যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ল। বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সেই এক জায়গাতেই।

চলবে..

( ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here