তোমাতে রহিব বিলীন পর্ব ৫+৬

#তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

“ইউ উগ্র আহনাফ, আমি আপনাকে মোটে ও ভয় পাই না। মানবিকতার খাতিরে কফিটা বানাতে রাজি হলাম।”

পেছন ফিরে একবার ও তাকালাম না। আহনাফ হয়তো রাগে কটমট করছেন। এই মুহূর্তে আমাকে সামনে পেলেই নির্ঘাত গলা টিপে মেরে দিতেন। উনার সাথে একদম বিশ্বাস নেই। ভয়ঙ্কর জল্লাদ টাইপ এই চাশমিশ আহনাফ। শুধু মাএ আমাকে খাঁটাবেন বলে গড়গড় করে পুরো মগ কফিটা ঢেলে দিলেন? মানে মনে কি উনার এক রত্তি দয়া মায়া ও নেই? কফিটা যে আপু এতো কষ্ট করে বানালেন, এতো সব ইনগ্রিডিয়েন্স ব্যবহার করলেন তার কোনো মূল্য নেই? ভাবা যায় এসব?

হাঁটার গতি বাড়িয়ে আমি সিঁড়ি টপকে কোনো মতে রান্না ঘরে প্রবেশ করলাম। কফি বানাতে বানাতে ভাবছিলাম চিনির বদলে যদি লবন মিক্স করা যায় তাহলে কেমন হয়? কফির পরিমান বাড়িয়ে যদি কফিটাকে তেতো করা যায় তাহলে কেমন হয়? চাশমিশটাকে ছোট খাটো একটা শাস্তি তো অবশ্যই দেওয়া যায়! পরক্ষনে ভাবলাম, এই লোক যা ভয়ঙ্কর জালিয়াত! কোনো রকমে আমার কুবুদ্ধি আঁচ করতে পারলেই মুহূর্তের মধ্যে আমাকে খালাস করে দিতে দু মিনিট সময় ও ব্যয় করবেন না! মনের জ্বালা মনে নিভিয়েই আমি মিনিট পনেরোর মধ্যে কফিটা বানিয়ে সিঁড়ি বেয়ে আহনাফের রুমের দিকে পা বাড়ালাম। অমনি পেছন থেকে আম্মুর কন্ঠস্বর ভেসে এলো। ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে আম্মু আমাকে ডেকে বললেন,,

“আমরা রেডি প্রভা। আহনাফকে কফিটা দিয়ে তাড়াতাড়ি আয়।”

আমি হাসি মুখে পিছু ফিরে উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বললাম,,

“তোমরা গাড়িতে বসো আম্মু। আমি আসছি।”

আম্মু মিষ্টি হেসে সদর দরজার দিকে পা বাড়ালেন। পেছনে অবশ্য আব্বু ও আছেন। তাড়াহুড়ো করে আমি আহনাফের রুমের দিকে অগ্রসর হলাম। ভেজানো রুমের দরজাটা হালকা হাতে ধাক্কা দিয়ে আমি রুমে প্রবেশ করতেই আহনাফকে দেখলাম ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাতে ওয়াচ পড়ছেন। চোখে, মুখে উনার তীক্ষ্ণ, তিক্ত ভাব। ভ্রু যুগল খড়তড় ভাবে কুঁচকে আছে চরম রাগ এবং প্রখর বিরক্তিতে। মন্থর গতিতে হেঁটে আমি ক্রমাগত শুকনো ঢোল গিলে উনার ঠিক পেছনের দিকটায় দাঁড়ালাম। রুমে দ্বিতীয় কারো উপস্থিতি টের পাওয়া মাএই উনি পিছু ঘুড়ে আমার দিকে ক্ষীণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। শুকনো মুখে আমি কম্পিত হাতে কফির মগটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,,

“নিনিন আপনার ককফি।”

প্যান্টের পকেটে দু হাত গুজে উনি ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে সন্দেহভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“কিছু মেশাও নি তো কফিতে?”

ঠিক জানতাম, এই লোক আমাকে সন্দেহ করবেন তো করবেন। সন্দেহ করা থেকে উনাকে কোন ভাবেই বিরত রাখা যাবে না। গলা খাঁকিয়ে আমি অবুঝ ভঙ্গিতে বললাম,,

“কি মেশাবো?”

প্যান্টের পকেট থেকে হাত জোড়া বের করে উনি চশমাটা উপরের দিকে টেনে ভীষণ ভাব নিয়ে বললেন,,

“চিনির বদলে লবণ। বা এক্সট্রা কফি? বলা যায় না, বিষ ও মেশাতে পারো৷ আমি তো তোমার জন্য যম তাই না?”

দাঁত চেঁপে আমি আপন মনে বিড়বিড় করে বললাম,,

“ইসসস যদি মেশাতে পারতাম! বেশি না জাস্ট একটু খানি বিষ যদি মেশাতে পারতাম! এই লোকটার থেকে আজীবনের জন্য মুক্তি পেয়ে যেতাম।”

আহনাফ এক পা দু পা করে আমার দিকে অগ্রসর হয়ে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে একদম আমার মুখোমুখি দাঁড়ালেন। মাঝখানে হাওয়া চলাচলের জায়গাটা ও পর্যন্ত রাখলেন না লোকটা। রুদ্ধ শ্বাস ছেড়ে আমি কম্পিত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাতেই উনি হঠাৎ আমার হাত থেকে কফির মগটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে কফিতে ছোট্ট একটা চুমুক দিয়ে বললেন,,

“কি ভাবছ? ইসস, যদি বিষ মিশাতে পারতাম! তাই তো?”

আমি থতমত খেয়ে উনার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। না বলতে ও লোকটা আমার সমস্ত মনের কথা বুঝে যান। ম্যাজিশিয়ান নাকি অন্তর্যামি এই লোক? “আহনাফ শেখ” মানুষটা আমার কাছে হাজারো রহস্যে ভরা। উনার প্রতিটা কথা বার্তায় আমি রহস্যের আঁচ খুঁজে পাই। মিস্ট্রিয়াস গন্ধ খুঁজে পাই। কেনো জানি না মনে হয়, উনি আমাকে অতি পূর্ব থেকে চিনেন। আমার সাথে উনার খুব ভালো বন্ডিং, আমার মনের সমস্ত কথা উনি বুঝেন, আমার সাথে উনার একটা সম্পর্ক ছিলো বা আছে। সম্পর্কটা হয়তো তিক্ততার নয়তো ভালোবাসার! হয়তোবা উনি প্রকাশ করতে চাইছেন না কোনে কারনে।

আমার মৌণতা দেখে আহনাফ হঠাৎ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ভ্রু যুগল তীক্ষ্ণ ভাবে উঁচিয়ে বললেন,,

“কি মিসেস প্রভা? ভাবনায় তলিয়ে গেলে? “আহনাফ শেখ” খুব রহস্যময় চরিএ মনে হচ্ছে? যদি তাই ভেবে থাকো। তাহলে বলব, রহস্যাত্নক চরিএটা আরো একটু জমজমাট হোক। আমাকে আরেকটু গভীর ভাবে জানো। একটু একটু করে জানতে জানতে যখন অনেকটাই জানতে পারবে, তখন আমার রহস্যাত্নক চরিএটা তুমি স্বয়ং ভেদ করতে পারবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করার ধৈর্য্য রাখো। আই হোপ সো, তুমি পারবে। পারতে তো তোমাকে হবেই। অন্যায় করেছ, রিপেন্ড করবে না? আহনাফ শেখ কিন্তু সহজেই কাউকে ক্ষমা করতে জানে না।”

আমি অস্থির, উদগ্রীব দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকালাম। মস্তিষ্কে অজানা অগনিত প্রশ্নের বিস্তর লাইন পড়ে আছে। কৌতুহল প্রবণতা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে মুখ খুলে আমাকে সন্দিহান কন্ঠে উনাকে প্রশ্ন করতেই হলো,,

“আমি কি অন্যায় করেছিলাম আহনাফ? কেনো আমাকে রিপেন্ড করতে হবে? আমি কি আপনাকে আগে থেকে চিনতাম? কথা হতো আপনার সাথে আমার?”

আহনাফ আমার কোনো প্রশ্নের প্রতিত্তুর না করে উল্টে কঠিন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। উনার এই কঠোর রূপ আমার মনে অত্যধিক ভয় ভীতির সৃষ্টি করছিলো ভীষন জোরালো ভাবে। মুহূর্তের মধ্যে আমার সম্মুখ থেকে সরে উনি আমার বিপরীত পাশে দাঁড়ালেন। দীর্ঘ কয়েক চুমুকে সম্পূর্ন মগ কফিটা শেষ করে উনি গুরু গম্ভীর কন্ঠে আমাকে পেছন থেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“হাতের রিংটা কোথায়?”

আমি কাঠ কাঠ গলায় বললাম,,

“খুখুখুলে রেখেছি।”

“কেনো?”

“ক্যারি করতে প্রবলেম হচ্ছিলো তাই।”

আহনাফ আচমকা অট্ট হেসে বললেন,,

“মেইন রিজনটা বলব আমি?”

“মানে?”

“এই যে রিংটা খুলে রাখার রিজন!”

“কিকিকি রিজন?”

“এই তো, তোমার আশিকরা যেনো বুঝতে না পারে তুমি এনগেজড!”

রাগে গজগজ করে আমি আহনাফকে শাসিয়ে বললাম,,

“আপনি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছেন আহনাফ। আমার আশিকরা বলতে আপনি কি বুঝালেন? আর যদি ও আমার আশিক থেকেই থাকে। তারা আমার হাতে আংটি দেখে কি বুঝল না বুঝল এসবে আমার কি আসে যায়?”

“অনেক কিছুই আসে যায়। যদি ওরা বুঝতে পারে তুমি এনগেজড, তাহলে তাদের সাথে তুমি ডেইটে যাবে কিভাবে বলো? তাদের সাথে এন্জ্ঞয় করাটাই তো ভেস্তে যাবে।”

প্রখর রাগে রাগান্বিত হয়ে আমি তেড়ে গিয়ে আহনাফের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোয়াল শক্ত করে বললাম,,

“আমি কখনো কারো সাথে ডেইটে যাই নি। মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছেন তাই না? কি পেয়েছেন কি আপনি আমাকে? ছেলেদের সাথে ফোনে সামান্য একটু দুষ্টুমি করি বলেই আমি এতোটা খারাপ হয়ে গেলাম? তাদের সাথে ডেইটে যেতে ও রাজি হয়ে যাবো? প্রেম না করেই তারা আমার আশিক হয়ে যাবে?”

উনার কি হলো জানি না। কফির মগটা হাত থেকে ছুড়ে ফেলে উনি দাঁতে দাঁত চেঁপে খুব হিংস্র ভাব নিয়ে অপ্রত্যাশিত ভাবে আমার থুতনী চেঁপে ধরে বললেন,,

“তুমি ছেলেদের সাথে কখনো ডেইটে যাও নি তাই না? মিথ্যে বলছ আমার সাথে? আমার মাইন্ড ঘুড়ানোর চেষ্টা করছ? নিজেকে খুব ভালো মেয়ে প্রমাণ করতে চাইছ?”

মনে হচ্ছিলো উনার হাতের প্রতিটা আঙ্গুল আমার থুতনীতে ধারালো ছুরির মতোন গেঁথে যাচ্ছে। ব্যাথায় আর্তনাদ প্রকাশ করার শক্তিটা ও পর্যন্ত কুলোতে পারছি না আমি। কিছু মুহূর্ত পর চোখ জোড়া বুজে আমি চিবুকে কিছুটা শক্তি সঞ্চার করে আধো কন্ঠে বললাম,,

“প্রমাণ দেখান তাহলে। যদি আমি মিথ্যে হই, তবে আপনি আমাকে যা বলবেন আমি ঠিক তাই করব। আপনার সমস্ত শাস্তি আমি মাথা পেতে নিবো। “আমি খুব খারাপ এবং দুঃশ্চরিএ মেয়ে” এই তকমাটা ও গাঁয়ে মেখে নিবো।”

আহনাফ অর্নগল কন্ঠে বলতে আরম্ভ করলেন,,

“ফারাজ, জাহিম, মুশফিক, সৈকত তারা কে ছিলো তাহলে? প্রত্যেকটা ছেলের সাথে তুমি ফ্লাড করেছ, ডেইট করেছ, তাদের সাথে পুরো রাজশাহী শহর ঘুড়েছ। আর কোনো প্রমান চাই তোমার?”

ফট করে চোখ জোড়া খুলে আমি সন্দিহান দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে চেয়ে বললাম,,

“এরা কারা আহনাফ? এদের কাউকে আমি চিনি না, সত্যি বলছি!”

আমার থুতনীটা ছেড়ে আহনাফ আগুনের ফুলকির মতোন চোখ দুটো লাল করে হিংস্র দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। তেজর্শি ভাব নিয়ে উনি বেডের কার্ণিশে জোরে এক লাথ মেরে মৃদ্যু আওয়াজে চোয়াল শক্ত করে বললেন,,

“ইউ লায়ার গার্ল। জাস্ট গো টু দ্যা হ্যাল৷ গেট আউট অফ মাই রুম ইউ চিটার, ডিসেভটিভ গার্ল।”

ভয়ে থরথরিয়ে কেঁপে আমি চোখে অজস্র জলরাশি নিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলাম। ঝড়ের বেগে সিঁড়ি টপকে নেমে আমি ড্রইং রুমে পা বাড়াতেই ডাইনিং টেবিলের কাছটায় এসে থমকে গেলাম। আপু এবং জিজু ডাইনিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছেন। আমার চোখে জল দেখা মাএই আপু উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন,,

“কিরে প্রভা? তোর চোখে জল কেনো? কিছু হয়েছে?”

বড় বড় পলক ফেলে আমি চোখের জল গুলো নিমিষের মধ্যে লুকিয়ে জোর পূর্বক হেসে আপুর দিকে চেয়ে বললাম,,

“কোথায় জল আপু? তুমি একটু বেশিই দেখছ!”

জিজু পাউরুটির পিস মুখে দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে আমাকে জিগ্যাসু কন্ঠে বললেন,,

“আহনাফ কোথায় প্রভা? আসছে তো ব্রেকফাস্ট খেতে?”

“আসছে।”

দম নিয়ে আমি পুনরায় বললাম,

“আমাকে এখন যেতে হবে জিজু। আম্মু, আব্বু গাড়িতে ওয়েট করছেন! ভার্সিটির টাইম ও হয়ে গেছে।”

“ওকে যাও। তবে কাল, পরশু আবার হয়তো একবার আসতে হবে।”

আমি জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“কেনো জিজু? আবার কেনো?”

জিজু কফির মগে চুমুক দিয়ে ম্লান হেসে বললেন,,

“নেহাল আসবে কানাডা থেকে! আমার বড় আন্টির ছেলে। বিয়েতে নিশ্চয়ই দেখেছিলে নেহালকে?”

কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তার পর নেহাল ভাইয়ের চেহারার আদলটা মনে পড়তেই আমি উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বললাম,,

“হুম দেখেছিলাম। তবে জাস্ট একবার ই দেখেছিলাম। তা ও আবার আহনাফের সাথে।”

জিজু মৃদ্যু হেসে বললেন,,

“মনে আছে তাহলে। আসলে নেহাল আসার খুশিতেই কিছুদিন পর তোমাদের এই বাড়িতে ইনভিটিশান করা হবে। চলে এসো কিন্তু!”

আমি ক্ষীণ হেসে বললাম,,

“চেষ্টা করব জিজু৷”

কথা এখানেই সমাপ্ত করে আমি রুম থেকে সাইড ব্যাগটা নিয়ে জিজু এবং আপুর থেকে বিদায় নিয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাড়ির পার্কিং লনে চলে এলাম। গাড়িতে আম্মুর পাশে উঠে বসতেই আব্বু গাড়িটা স্টার্ট করে দিলেন। ব্যাক সিটে মাথা এলিয়ে আমি প্রবল উদ্বিগ্নতায় চোখ জোড়া বুজে নিলাম। গাড়ির ঝাঁকুনীতে মন মেজাজ ভীষণ বিগড়ে যাচ্ছে। তার উপর আহনাফের বলা প্রতিটা কথা আমার মস্তিষ্কে খুব বাজেভাবে ঘুড়ছে। উনি যে কয়েকটা ছেলের নাম বলেছিলেন, তাদের একজনকে ও আমি চিনি না। না কখনো তাদের সাথে দেখা করেছি, না কথা বলেছি৷ তারা সম্পূর্ণ অপরিচিত আমার কাছে। বুঝতে পারছি না উনি ঠিক কার সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন। কিছু খোলসা করে ও বলতে চাইছেন না উনি। জানি না উনার মধ্যে কি চলছে, মাইন্ডে ঠিক কি ঘুড়ছে। তবে এই বিষয়গুলো আমার তিস্তার সাথে অতি শীঘ্রই শেয়ার করা উচিত। বাকি ফ্রেন্ডদের সাথে ও এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে হবে৷ এ পর্যন্ত যে কটা ছেলের সাথে আমি মজা করেছি তাদের সমস্ত ডিটেলস জানতে হবে। হতে পারে তারা ও আমার সাথে মজা করেছিলেন। আসল নামটা আমার থেকে গোপন করেছিলেন। ফেইক একটা নাম আমাকে বলেছিলেন। যার কারণে আহনাফের বলা ছেলে গুলোর নামের সাথে আমি তাদের নাম মিলাতে পারছি না। তবে যাই হোক, কারো সাথে আমি কখনো দেখা করি নি, না কখনো ঘুড়তে বের হয়েছি। আহনাফ শুধু শুধু আমাকে সন্দেহ করছেন। মানুষটা সত্যিই খুব রহস্যময়। আমার সম্পর্কে উনি এভরিথিং জানেন। কোনো না কোনো ভাবে উনি আমাকে পূর্ব থেকেই চিনতেন। এই বিষয়টা অন্তত ক্লিয়ার হলো এখন।

আমার উদাসী মনোভাব দেখে আম্মু আমার কাঁধে হাত রেখে উদ্বিগ্ন ভরা কন্ঠে বললেন,,

“কি হয়েছে প্রভা? তোকে আপসেট দেখাচ্ছে কেনো?”

চোখে বিষাদের ছাপ ফুটিয়ে আমি আম্মুর দিকে চেয়ে ম্লান কন্ঠে বললাম,,

“আমার কি হয়েছে, এতো কিছু জেনে তোমাদের কি হবে আম্মু? তোমরা তো জেনে বুঝেই আমাকে নরকে ঠেলে দিলে। আহনাফ শেখের সাথে পৃথিবীর সব’চে কঠিনতম সম্পর্কটায় জড়িয়ে দিলে।”

“একটা মানুষকে ভালো করে না চিনে তার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা আমার মনে হয় না, তোর ঠিক হচ্ছে। একটা মানুষকে চিনতে অন্তত কয়েকটা দিন সময় দিতে হয়। সময় নে কিছুটা। ঠিক হয়ে যাবে।”

আম্মু আর কথা বাড়ালেন না। আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। জানালার কাঁচে মাথা ঠেকিয়ে আমি চোখ জোড়া বুজে নিলাম। কখন বাড়ি থেকে ভার্সিটি যাবো সেই টেনশানে আমার মাথা যন্ত্রণা করছে। প্রায় আধ ঘন্টার মধ্যে গাড়ি এসে আমাদের বাড়ির পার্কিং লনে থামল। তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে আমি এক তলায় আমার পূর্ব পাশের রুমটায় চলে এলাম। রুমের দরজাটা আটকে আমি কাবার্ড থেকে মেরুন কালার একটা গাউন বের করে সোজা ওয়াশরুমে প্রবেশ করলাম। ড্রেস চেইঞ্জ করে রুমে প্রবেশ করতেই সাইড ব্যাগ থেকে আমার ফোনটা উর্ধ্ব আওয়াজে বেজে উঠল। তাড়াহুড়ো করে আমি ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রীনের দিকে নজর দিতেই তিস্তার নাম এবং নাম্বারটা ভেসে উঠল। মৃদ্যু হেসে আমি ফোনটা রিসিভ করতেই ঐ পাশ থেকে তিস্তা ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলল,,

“এই প্রভা। কই তুই?”

“আগে বল, তুই কই?”

“ভার্সিটির পাশের ক্যাফেটেরিয়ায়। জলদি চলে আয়। ইট’স ইমার্জেন্সি।”

“ক্যাফেটেরিয়ায় কি? ক্লাস করবি না আজ?”

“এতো কথা ফোনে বলতে পারব না। তুই আসবি কিনা বল?”

“ওয়েট আসছি।”

কলটা কেটে আমি সাইড ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এই মুখ্যম সুযোগ তিস্তাকে নিরিবিলি সব বুঝিয়ে বলতে হবে। আহনাফ অযথা আমার উপর যে অভিযোগ গুলো তুলছেন সেই অভিযোগ গুলো যত দ্রুত সম্ভব আমার অপসারন করতে হবে। উনার মনে আমার প্রতি গড়ে উঠা ভুল ধারনা গুলো উনাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। বুঝিয়ে দিতে হবে, উনি আমাকে যতোটা খারাপ ভাবছেন, আমি অতোটা ও খারাপ নই।

প্রায় ১ ঘন্টা পর।
ক্যাফেটেরিয়ায় প্রায় পঞ্চাশ খানিক লোকের সামনে আহনাফ শেখ আমাকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন৷ আমার পাশেই তিস্তা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তিস্তার সদ্য রিলেশান হওয়া বয়ফ্রেন্ড “নির্ঝর” ভাই ও ব্যাপক ভয়ে তিস্তার পাশে গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। লজ্জায় আমি চোখ তুলে আশেপাশে তাকাতে পারছি না পর্যন্ত। এমনকি চাশমিশ আহনাফের দিকে ও না। তবে উনার মুখ থেকে নিঃসৃত প্রখর রাগে গোঙ্গানোর আওয়াজ আমার কর্ণকুহরে খুব ভয়ালভাবে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। শতভাগ সিউর আমি, লোকটা এক্ষনি আমার গালে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিবেন। আর এক মিনিট সময় ও ব্যয় করবেন না হয়তো। তাই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আমি নাক, মুখ খিঁচে চোখ জোড়া বুজে আছি। ব্যাপক ভয় কাজ করছে আমার মনে। প্রতিবাদ করার শক্তিটা পর্যন্ত কুলোতে পারছি না আমি। মানুষটাকে হঠাৎ দেখেই তো আমি তব্দিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কোনো প্রশ্ন বা আমাকে হঠাৎ কান ধরে দাঁড় করানোর কারণ জিগ্যেসা করব কিভাবে? আচ্ছা? এই লোকটা হঠাৎ ক্যাফেটেরিয়ায় এলো কেনো? কিভাবেই বা জানল, আমি এই ক্যাফেটেরিয়াতেই আছি? উনি কি আমাকে ফলো করছেন?

আমার সমস্ত ভাবনা চিন্তায় ছেদ ঘটল আহনাফের তেজী কন্ঠস্বরে। দাঁতে দাঁত চেঁপে উনি চোয়াল শক্ত করে আমায় বললেন,,

“লুক এট মি। লুক এট মি ইউ ইস্টুপিট গার্ল।”

কম্পিত শরীরে আমি ভয়ার্ত চোখ যুগলে উনার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। কান থেকে হাত সরিয়ে আমি গলা জড়ানো কন্ঠে আহনাফকে বললাম,,

“সবার সামনে আমাকে এভাবে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ কি আহনাফ? কি করেছি আমি?”

প্যান্টের পকেট থেকে হাত দুটো বের করে আহনাফ আমার দিকে তেঁড়ে এসে আমাকে শাসিয়ে বললেন,,

“কান থেকে হাতটা ছাড়লে কেনো? কানে ধরো বলছি! কানে ধরো।”

আশেপাশে দৃষ্টি দিতেই দেখলাম লোকজন আমার দিকে চেয়ে হাসাহাসি করছেন। লজ্জায় আমি পুনরায় মাথাটা নিচু করে গলা জড়ানো স্বরে আহনাফকে বললাম,,

“আহনাফ প্লিজ। পাবলিক প্লেসে এভাবে সিনক্রিয়েট করবেন না৷ আমাকে আর ইনসাল্ট করবেন না। হাত জোর করে রিকুয়েস্ট করছি আমি।”

“সিনক্রিয়েট করার স্কোপটা তোমার থেকেই পেয়েছি। তোমাকে ইনসাল্ট করতে আমি বাধ্য হচ্ছি। কারণ, তুমিই আমাকে এসব করার সুযোগ করে দিয়েছে। বুঝতে পেরেছ?”

ফুসফুসে শ্বাস সঞ্চার করে উনি পুনরায় আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“এই তোমার না ক্লাস ছিলো আজ? ক্লাস রেখে তুমি এই ক্যাফেটেরিয়ায় কি করছ? নতুন আশিক পটাতে এসেছ? আমাকে দিয়ে হচ্ছে না? আরো কয়েকজন লাগবে তোমার?”

চোখের জল ছেড়ে আমি পাশ ফিরে তিস্তার দিকে তাকালাম। তিস্তা শুকনো ঢোক গিলে কম্পিত কন্ঠে আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“ভাইয়া আপনি ভুল বুঝছেন। আসলে আমিই প্রভাকে ফোর্স করেছিলাম ক্যাফেটেরিয়ায় আসতে। আসলে আমি আর নির্ঝড়….

তড়িৎ বেগে তিস্তাকে চলতি কথায় থামিয়ে দিয়ে আহনাফ খড়তড় কন্ঠে বললেন,,

” ইউ জাস্ট শাট আপ৷ তোমার ফ্রেন্ডকে আমি ভালো করেই চিনি। ফ্রেন্ডের হয়ে সাফাই দিতে এসো না ফর দ্যা গড সেইক।”

তিস্তা নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। নির্ঝড় ভাই এবার কিছুটা অপমানিত বোধ করলেন। মাথা তুলে উনি রাগান্বিত চোখে আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“আজব তো! আপনি সম্পূর্ণ কথা না শুনেই কেনো তিস্তা এবং প্রভাকে ব্লেইম করছেন? আমি অভেয়সলি তিস্তার সাথে দেখা করতে এসেছি। প্রভার সাথে নয়। আমি প্রভার ভাই হই, কোনো আশিক নই।”

নির্ঝড় ভাইয়ের একটা কথা ও আহনাফ কানে না তুলেন না। বাতাসের বেগে উনি আমার বাঁ হাতটা উনার হাতে নিয়ে হাতের প্রতিটা আঙ্গুল চেইক করে চোয়াল শক্ত করে বললেন,,

“হাতের রিংটা কোথায়? এই? তুমি কি ভেবে নিয়েছ এনগেজমেন্টের রিংটা তুমি পড়বে না? গোপনে আরো কয়েকজনের সাথে ডেইট প্লাস রিলেশান করে বেড়াবে? এতোটাই ক্যারেক্টারলেস তুমি?”
#তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

“হাতের রিংটা কোথায়? এই? তুমি কি ভেবে নিয়েছ এনগেজমেন্টের রিংটা তুমি পড়বে না? গোপনে আরো কয়েকজনের সাথে ডেইট প্লাস রিলেশান করে বেড়াবে? এতোটাই ক্যারেক্টারলেস তুমি?”

অপমানে, লজ্জায়, ঘৃনায় মাথা নিচু করে ফুঁফিয়ে কাঁদছি আমি। মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে বিষাক্ত কথা গুলোর প্রতিত্তুরে কোনো রূপ প্রতিবাদ করার ক্ষমতাটা ও পর্যন্ত কুলোতে পারছি না আমি। কি এমন অন্যায় করেছিলাম আমি? যার প্রতিশোধ উনি এতোটা নির্দয়ভাবে নিচ্ছেন? এতগুলো মানুষের সামনে আমাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন? আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি, আসলে আমাকে সবার সামনে হেনস্তা করার একটা ছুঁতো খুঁজছিলেন মাএ উনি। আর সেই ছুঁতোটা হলো সামান্য রিং পড়া নিয়ে! যদি ও এই ক্ষেএে দোষটা আমারই ছিলো। আমিই উনাকে সুযোগ করে দিয়েছি আমাকে হেনস্তা করার জন্য। এই ভয়ঙ্কর লোকটা যদি কোনো রকমে জানতে পারেন, রিংটা আমি ইচ্ছে করে হাত থেকে ফেলে দিয়েছি। জানি না উনি ঠিক কি কি করবেন আমার সাথে। সবার সামনে হয়তো আমার গাঁয়ে হাত তুলতে ও দ্বিধাবোধ করবেন না!

আমার মৌনতা দেখে আহনাফ খড়তড় কন্ঠে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“রিংটা কোথায়? লেট মি আনসার ডেম ইট।”

প্রবল আতঙ্ক নিয়ে আমি অশ্রুসিক্ত চোখে আহনাফের দিকে তাকালাম। কম্পিত চোখে আমি গলা জড়ানো কন্ঠে আহনাফকে বললাম,,

“রিরিরিং বাসায়। সসকালে বলেছিলাম, রিরিংটা ক্যারি করতে আমার প্রবলেম হয়।”

“সামান্য একটা রিং তোমার ক্যারি করতে প্রবলেম হয়? লাইক সিরিয়াসলি প্রভা? এই? তুমি কি বোকা পেয়েছ? মানে আমাকে যা বুঝানো হবে, আমি ঠিক তাই বুঝব?”

কথার পিঠে কথা আওড়াতে পারছিলাম না আমি। চুপ করে অপমান সহ্য করা ছাড়া আপাতত দ্বিতীয় কোনো অপশন আমি খুঁজে পাচ্ছি না। না জানি এই রিংয়ের জন্য আর কি কি সহ্য করতে হয় আমায়। কোনো রকমে এই হিংস্র আহনাফের খপ্পড় থেকে বেঁচে ফিরতে পারলেই আমাকে যতো দ্রুত সম্ভব আবারো ঐ বাড়িতে যেতে হবে একবার। যে করেই হোক রিংটা খুঁজে বের করতে হবে। সত্যিই জানি না, রিংটা এখনো একই জায়গায় আছে কিনা! আদৌ চোর, ডাকাতের হাতে রিংটা পড়েছে কিনা!

আমার সমস্ত জল্পনা কল্পনায় ছেদ ঘটিয়ে আহনাফ ভয়ঙ্কর কন্ঠে পুনরায় বললেন,,

“ইউ নো হোয়াট? একটা মেয়ের যখন এনগেজমেন্ট হয়ে যায়, তখন তাকে মাস্ট বি হাতে রিং পড়ে থাকতে হয়। এটা একটা রিচুয়েল। তোমার কি মনে হচ্ছে না? তুমি প্রতিটা রিচুয়েল ভঙ্গ করে আমার ধৈর্য্যের সমস্ত লিমিট ক্রস করছ?”

হেচকি তুলে কেঁদে আমি আহনাফের তেজী দুচোখে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললাম,,

“আর এই ভুলটা হবে না আহনাফ। সত্যি বলছি, আমি এবার থেকে রোজ হাতে রিং পড়ে থাকব৷ দয়া করে আপনি শান্ত হউন। রাগটাকে একটু কন্ট্রোল করুন। দেখুন, লোকজন আমাদের দেখছেন। আমাকে, আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করছেন। প্লিজ নিজেকে আর হাসির পাত্র করে তুলবেন না। আমাকে ও আর ইনসাল্ট করবেন না, প্লিজ।”

আমার হাতটা এক ঝটকায় ছেড়ে আহনাফ রাগে ফুসফুস করে আশেপাশের লোকজনদের দিকে তাকালেন। সবাই আমাদের দিকে আড়চোখে চেয়ে হাসছেন। আহনাফের অগ্নিঝড়া দৃষ্টিতে ব্যাপক ভয় পেয়ে লোকজন তড়িৎ গতিতে আমাদের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। মিনিট পাঁচেক পর আহনাফ একবার আমার দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আচমকাই উনার পাশে থাকা চেয়ারটা টেনে ধপ করে চেয়ারটায় বসে পড়লেন। সামনের, পেছনের চুল গুলো টেনে উনি প্রখর রাগ এবং বিরক্তি প্রকাশ করছেন। প্যান্টের পকেট থেকে টিস্যু বের করে কপালে উদয়স্ত বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো উনি মুছে নিলেন। চশমাটা চোখ থেকে খুলে উনি উচ্চ শব্দে টেবিলের এক পাশে চশমাটা রাখলেন। আমি, তিস্তা এবং নির্ঝড় ভাই উনার কার্যকলাপ দেখে ভয়ের পাশাপাশি অবাক ও হচ্ছি। ভাবতে পারি নি আসলে, লোকটা এতো শীঘ্রই আমার কথা মেনে নিবেন। রৌদ্রমূর্তি পরিত্যাগ থেকে বেগতিক শিথিলতার রূপ নিবেন। কপালটা আলতো হাতে মাসাজ করে উনি আচমকা আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উনার পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে বললেন,,

“সিট ডাউন।”

আশ্চর্যিত চোখে আমি আহনাফের দিকে চেয়ে আছি। বিশ্বাস ই হচ্ছে না, উনি আচমকা আমার সাথে এতোটা স্বাভাবিক আচরন করছেন! কিছু সময়ের জন্য মনে হচ্ছিলো, আমি হয়তো কল্পনার জগতে দিব্যি ঘুড়ে বেড়াচ্ছি! আমার অবাক করা ভাবভঙ্গি দেখে আহনাফ রূঢ় কন্ঠে পুনরায় বললেন,,

“কথা কানে যাচ্ছে না? বসতে বলেছি।”

তড়িৎ বেগে ছুটে এসে আমি আহনাফের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লাম। চোখ থেকে বাহিত হওয়া জলরাশি কতক্ষনে শুকিয়ে ত্বকের সাথে মিশে গেছে তা ঠিক মনে করতে পারছি না আমি। তিস্তা এবং নির্ঝড় ভাই গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছেন। নির্ঝড় ভাই তো পারছেন না, চোখ দিয়ে আহনাফ শেখকে গুলি করে একদম খুলি উড়িয়ে দিতে। আমার পারমিশান পেলেই হয়তো উনি এই অতি অত্যাবশকীয় কাজটা দ্রুততার সহিত পালন করতেন! যাই হোক, আমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আহনাফ এবার তিস্তা এবং নির্ঝড় ভাইয়ের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন? প্লিজ সিট।”

নির্ঝড় ভাই কিঞ্চিৎ রাগান্বিত কন্ঠে বললেন,,

“স্যরি ভাইয়া। বসার ইচ্ছেটা আর নেই। উই আর গো নাও।”

তিস্তার হাত ধরে নির্ঝড় ভাই আমাদের সম্মুখ থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বেই আহনাফ পেছন থেকে নির্ঝড় ভাইয়ের ডান হাতটা চেঁপে ধরে ম্লান কন্ঠে বললেন,,

“আই থিংক, তুমি আমার বয়সে ছোট হবে। বড় ভাই হিসেবে বলছি, প্লিজ হ্যাভ ইউর সিট।”

নির্ঝড় ভাই হীন কন্ঠে বললেন,,

“বড় ভাই হলে নিশ্চয়ই এতোটা রুড বিহেভ করতে পারতেন না? অযথা সিনক্রিয়েট করতেন না। ছোট হলে ও আমার কথার যথেষ্ট ইম্পর্ট্যান্টেস দিতেন।”

“যা হয়েছে ভুলে যাও। আমি মনে করি, হাত ধরার পর আর কোনো কথাই থাকতে পারে না।”

দম নিয়ে আহনাফ পুনরায় বললেন,,

“আমি কফি অর্ডার করছি। ট্রিট আজ আমার তরফ থেকে। না খেয়ে তোমাদের কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। এডভাইজ করলাম।”

ভ্রু উঁচিয়ে নির্ঝড় ভাই আমাকে ইশারা করে বললেন,,

“উনি কি পাগল? সাইকো টাইপ? এই ভালো তো এই খারাপ?”

মুখটা অমবস্যার মতোন কালো করে আমি মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালাম। পরমুহূর্তে আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে ঐ পাশ থেকে নির্ঝড় ভাইকে ইশারা করে বললাম যা হচ্ছে মেনে নিতে, আর তিস্তাকে নিয়ে দ্রুত বসে পড়তে। তিস্তা ও ইশারা করে নির্ঝড় ভাইকে বলছে শান্ত হতে, রাগটা কন্ট্রোল করতে, যা হয়েছে ভুলে যেতে। শেষ পর্যন্ত আমাদের দুজনের চাপে নিরুপায় হয়ে নির্ঝড় ভাই আহনাফের প্রস্তাবে রাজি হলেন। তিস্তাকে নিয়ে আমাদের মুখোমুখি চেয়ার দুটোতে বসে পড়লেন। আহনাফ জোর পূর্বক হাসি টেনে নির্ঝড়ের দিকে চেয়ে বললেন,,

“বলো? কি কফি অর্ডার করব? ক্যাপাচিনো অর ল্যাটে কফি?”

নির্ঝড় ভাই তিস্তার দিকে চেয়ে পুনরায় আহনাফের দিকে চেয়ে বললেন,,

“ক্যাপাচিনো।”

আহনাফ এবার তিস্তার দিকে চেয়ে সম্ভাবনা নিয়ে বললেন,,

“আই গেইস তুমি ও ক্যাপাচিনো?”

তিস্তা ম্লান হেসে মাথা নাঁড়ালো। চোখ ঘুড়িয়ে আহনাফ আমার দিকে তাকাতেই আমি তাড়াহুড়ো করে মাথাটা নিচু করে নিলাম। ভেবেছিলাম আহনাফ হয়তো আমাকে ও জিগ্যেস করবেন, আমি কোন কফিটা খাবো বা আমার কোন কফিটা পছন্দ। কিন্তু না! উনি যে আমার ভাবনা চিন্তায় এক বালতি জল ঢেলে দিবেন তা আমি পূর্ব থেকে জানলে হয়তো অহেতুক সময় নষ্ট করে ভাবনা চিন্তায় ডুব দিতাম না। আমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আহনাফ উচ্চ আওয়াজে ওয়েটারকে ডাকতেই ওয়েটার এসে হাজির হলেন। আহনাফ অণর্গল কন্ঠে অর্ডার করে দিলেন,,

“তিনটে ক্যাপাচিনো আর একটা… ল্যাটে কফি।”

ওয়েটার প্রস্থান নিলেন। আমি আশ্চর্যিত চোখে আহনাফের দিকে চেয়ে উনাকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললাম,,

“ল্যাটে কফি কার জন্য?”

আহনাফ অন্য পাশ ফিরে ভাবশূণ্য ভঙ্গিতে বললেন,,

“তোমার জন্য!”

“কিভাবে জানলেন? ল্যাটে কফি আমার ফেভারিট?”

আহনাফ আমার দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেশ সাবলীল কন্ঠেই বললেন,,

“আই গেইস তোমার পড়ালেখা ছেড়ে ড্রামা, থিয়েটার, সিনেমা বা সিরিয়াল টাইপ কিছু করা উচিত। এই বিষয় গুলোতে তুমি খুব এক্সপার্ট। একটা ইউটিউব চ্যানেল তো খুলে বসছ না কেনো? চাইলেই কিন্তু তুমি এবং তোমরা ফ্রেন্ডরা মিলে ড্রামা এবং সিরিয়ালের বিভিন্ন স্ক্রিপ্ট তৈরী করে ইউটিউবে শেয়ার করতে পারো। বিজনেসটা কিন্তু ভালোই জমবে!”

দাঁতে দাঁত চেঁপে আমি উনাকে কিছু বলার পূর্বেই উনি টেবিলের তলায় আমার বাঁ হাতটা চেঁপে ধরে চোয়াল শক্ত করে আমার কানে ফিসফিসিয়ে বললেন,,

“শাট ইউর মাউথ। একটা টু শব্দ ও যেনো বের না হয়। তোমার জন্য আমি এগেইন ভায়োলেন্ট হতে পারব না। পাবলিক প্লেইসে উইদাউট এ্যানি রিজন সিনক্রিয়েট করতে পারব না। লাইফে ফার্স্ট টাইম তোমার কারণে আমি পাবলিশ প্লেইসে ঠাট্টার পাত্র হয়েছি। সো প্লিজ, শাট ইউর মাউথ।”

ব্যাথায় খানিক কুঁকিয়ে উঠে আমি তেজী কন্ঠে বললাম,,

“হাতটা ছাড়ুন প্লিজ। পেইন হচ্ছে। আপনি এতো হিংস্র কেনো বলুন তো? দয়া, মায়া নেই আপনার মধ্যে?”

আহনাফ আমার হাতটা ছেড়ে তেজী দৃষ্টি পাল্টে শান্ত এবং স্বাভাবিক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। খুব অমায়িক উনার এই দৃষ্টি। চশমা ছাড়া লোকটাকে দেখতে অতোটা ও খারাপ লাগে না। তবে চোখে চশমা পড়লে দেখতে অত্যধিক আকর্ষনীয় লাগে। খুব ড্যাশিং একটা লুক আসে। তখন কোনো মতেই উনার থেকে দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব হয়ে উঠে না। যদি ও এই চশমা পড়ার কারণেই আমি উনাকে চাশমিশ ডাকি। তবুও এই চশমাটার জন্যই লোকটাকে এতো ড্যাশিং এন্ড হ্যান্ডসাম লাগে!

আচমকা কি হলো জানি না। আহনাফ উনার প্যান্টের পকেট থেকে টিস্যুর প্যাকেটটা বের করে ওখান থেকে একটা টিস্যু নিয়ে খুব যত্নে এবং প্রেম মাখানো দৃষ্টিতে আমার কপালে উদয় হওয়া বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুছে দিতে গিয়ে ও হঠাৎ থেমে গেলেন। সংকোচ বোধ করে উনি আমার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে অন্য পাশ ফিরে টিস্যুটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে খানিক গলা ঝাঁকিয়ে গুরু গম্ভীর কন্ঠে বললেন,,

“টেইক ইট। ঘামটা মুছে নাও। এন্ড অলসো টেয়ারস।”

উনার উপকারী মনোভাবকে গাঁয়ে না মেখে আমি ক্ষীণ কন্ঠে বললাম,,

“ইট’স ওকে। আপনার উপকার আমার লাগবে না। উড়না আছে না? আমার উড়নাই যথেষ্ট!”

“হোয়াট দ্যা হ্যাল!”

ক্ষিপ্র দৃষ্টিতে উনি আমার দিকে তাকাতেই ওয়েটার কফি নিয়ে এলেন। আমি শুকনো ঢোক গিলে উনাকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললাম ওয়েটার এসেছে। আমার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে উনি ওয়েটারের দিকে তাকালেন। ঐদিকে তিস্তা এবং নির্ঝড় ভাই চনমনে ভঙ্গিতে নিজেদের মধ্যে প্রেমালাপে মগ্ন ছিলেন অনেকক্ষণ যাবত। ওয়েটার আসতেই তাদের প্রেমে মনে হলো বিঘ্ন ঘটল। বিরূপ মুখ ভঙ্গি দেখে ঠিক তাই মনে হলো!

কফি খেয়ে প্রায় আধ ঘন্টার মধ্যে আমরা ক্যাফেটেরিয়া থেকে বের হয়ে এলাম। আহনাফ মুডি ভাব নিয়ে তিস্তা এবং নির্ঝড় ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন। যাওয়ার পূর্বে আমাকে পই পই করে হুমকি দিয়ে গেলেন ১০ মিনিটের মধ্যে গাড়িতে এসে বসতে। আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েই উনি অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। উনার মুখের উপর কিছু বলার সাহস পাচ্ছিলা না। তাই আরো কিছুক্ষন থাকার জন্য কোনো রকম আবদার করি নি।

আহনাফের হয়ে আমি তিস্তা এবং নির্ঝড় ভাইয়ের থেকে স্যরি চেয়ে নিলাম। নির্ঝড় ভাই যদি ও এখনো মন থেকে আহনাফকে ক্ষমা করতে পারেন নি, তবে তিস্তা এবং আমার চাপে পড়ে উনি লোক দেখানো ক্ষমাটা ঠিক করে দিয়েছেন। আহনাফের কথা মতো প্রায় ১০ মিনিটের মধ্যেই আমি তিস্তা এবং নির্ঝড় ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার বিপরীত পাশে পার্ক করা আহনাফের গাড়িটায় উঠে বসলাম। ড্রাইভিং সিটে উনার পাশে বসতেই উনি ইশারা করে বললেন সিট বেল্ট পড়তে। উনার কথা মতো সিট বেল্টটা লাগাতেই উনি মুহূর্তের মধ্যে ফুল স্পীডে গাড়িটা স্টার্ট করে দিলেন। আড় চোখে উনার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই বুঝতে পারলাম উনার রাগ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ভয়ঙ্কর রাগী ভাবটা এখন আর মুখ মন্ডলে নেই। আই হোপ, এখন উনাকে যাই প্রশ্ন করি না কেনো, উনি ঠান্ডা মাথায় সবক’টা প্রশ্নের উত্তর দিবেন। সুযোগ বুঝে ইতস্তত বোধ করে আমি উনার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“আচ্ছা? আপনি কি আমাকে ফলো করছিলেন?”

উনি গম্ভীর ভাব নিয়ে বললেন,,

“তোমাকে ফলো করার এক রত্তি ইচ্ছে ও নেই আমার!”

“তাহলে ক্যাফেটেরিয়ায় এলেন কেনো? আমার সন্ধানে? নাকি অন্য কোনো কাজে?”

এক হাতে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে কন্ট্রোল রেখে উনি অন্য হাত দিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে অবিশ্বাস্যভাবে উনার পড়িয়ে দেওয়া এনগেজমেন্ট রিংটা আমার মুখের সামনে ধরে ভ্রু যুগল উঁচিয়ে বললেন,,

“চিনতে পারছ? এই মূল্যবান জিনিসটা দিতেই তোমার সন্ধানে বের হয়েছিলাম! ফার্স্টে কলেজ যেতে হয়েছে দেন কলেজ থেকে কারো মাধ্যমে ক্যাফেটেরিয়ায় যেতে হয়েছে।”

শুকনো কন্ঠে আমি রিংটার দিকে চেয়ে বললাম,,

“কোথায় পেলেন এটা?”

আহনাফ দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন,,

“যেখানে তুমি ছুড়ে ফেলেছিলে, ঠিক সেখানেই!”

ছোঁ মেরে আমি উনার হাত থেকে রিংটা আমার হাতে নিয়ে সাইড ব্যাগে রিংটা ঢুকাতেই আহনাফ তেজর্শী কন্ঠে বললেন,,

“রিংটা হাতে পড়ো বলছি, ইস্টুপিট গার্ল।”

থমতম খেয়ে আমি তাড়াহুড়ো করে হাতে রিংটা পড়ে নিলাম। কিছু সময় পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই আমি শান্ত দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে চেয়ে পুনরায় উনাকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“ক্যাফেটেরিয়ায় এভাবে সিনক্রিয়েট করেছিলেন কেনো? আমাদের সম্পূর্ণ কথা না শুনেই এতোটা ভায়োলেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন কেনো?”

“অযথাই আমি সিনক্রিয়েট করি নি। তোমার দু দুটো ফল্ট আমার চোখে ধরা পড়েছে। প্রথমত তুমি কলেজে যাবে বলে ও কলেজে যাও নি। ফ্রেন্ডের বয়ফ্রেন্ডের সাথে হ্যাংলার মতো দেখা করতে চলে গেলে! দ্বিতীয়ত, প্রধান এবং সব’চে বড় ফল্টটা হলো, “রিং।” আমি সকালেই আঁচ করতে পেরেছিলাম, তুমি রিংটা নিশ্চয়ই লুকিয়ে রেখেছ নয়তো কোথাও ছুঁড়ে ফেলেছ। আমার আন্দাজ কিন্তু সঠিক নিশানাতেই লেগছিলো। তুমি সত্যিই সত্যিই রিংটা ছুড়ে ফেলছিলে। বিয়েটা ভাঙ্গার জন্যই তুমি একের পর এক ড্রামা ক্রিয়েট করছ। তোমার উদ্দেশ্য হয়তো এই জন্মে কখনো সফল হবে না মিসেস প্রভা। আহনাফ শেখ এই উদ্দেশ্য কখনো তোমাকে সফল হতে দিবে না। আই হোপ, তুমি বুঝতে পেরেছ!”

থমকে গেলাম আমি। হাতের রিংটা বার বার নাড়াচাড়া করে আমি কন্ঠে বিষাদের ছাপ ভর করে বললাম,,

“হাতে ধরে আপনি আমার জীবনটা নষ্ট করছেন আহনাফ। কেনো করছেন এমন বলুন তো? আমি আপনার কোন ক্ষতিটা করেছিলাম?”

“ক্ষতি? শুধু ক্ষতি বলছ? তুমি আমার লাইফটাকে জাস্ট নরক করে দিয়েছিলে। বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছিলে। বাঁচার আশা দুরাশা হয়ে উঠেছিলো। ভাগ্যিস নেহাল ছিলো!”

“সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আহনাফ। বার বার মনে হচ্ছে আপনি ভুল করছেন। অন্য কারো সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন। লাস্ট আমি আপনাকে এক বছর পূর্বে দেখেছিলাম। আপুর বিয়েতে। এরপর থেকে না আপনার সাথে না আমার কখনো যোগাযোগ হয়েছে না দেখা হয়েছে। যেখানে আমাদের মধ্যে কোনো কমিউনিকেশন ই ছিলো না, সেখানে আমি আপনার ক্ষতি করব কিভাবে বলুন?”

ইতোমধ্যেই গাড়ি এসে আমাদের বাড়ির সামনে থেমে গেলো। আহনাফ অন্য পাশ ফিরে রাগী কন্ঠে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“গেট আউট অফ মাই কার। আগামী এক সপ্তাহ ও তোমার মুখ দেখতে চাই না আমি। মাইন্ড ইট!”

কথা বাড়ালাম না আমি। অপমানিত হয়ে আমি চোখের কোণে জল নিয়ে তড়িঘড়ি করে উনার গাড়ি থেকে নেমে এক দৌঁড়ে বাড়ির মেইন গেইটে ঢুকে পড়লাম। পিছু ফিরে একবারের জন্যে ও উনার দিকে তাকালাম না। তাকাতে ও চাই না ঐ লোকটার দিকে। এক সপ্তাহ কেনো? আগামী ১ বছর ও আমি উনার মুখোমুখি হতে চাই না।

,
,

কেটে গেলো মাঝখানে ১ সপ্তাহ৷ এই এক সপ্তাহে অন্তত একবারের জন্যে ও আহনাফের কথা আমার মনে পড়ে নি। না উনার সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। এমনটা না যে, উনি ও আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। আমাকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন। উনি ও আমার মতোন দারুন শক্ত মনের পরিচয় দিয়েছিলেন। কোনো ভাবে এক বারের জন্যে ও আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন নি!

শনিবার আজ। বিকেল ৫ টা বাজতেই ঐ বাড়ি থেকে ফোন কল আসতে আরম্ভ করল। নেহাল ভাই আজ দেশে ফিরছেন! সেই খুশিতে ঐ বাড়ির প্রত্যেকেটা সদস্য আত্নহারা। আহনাফ তো বিকেল হতেই এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেছেন, নেহাল ভাইকে পিক করতে। আম্মু সহ আমি রেডি হয়ে বিকেল ঠিক ৫ঃ৩০ বাজতেই ঐ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যদি ও আমার ইচ্ছে নেই ঐ বাড়িতে যাওয়ার, আহনাফকে ফেইস করার। তবু ও আপু, জিজু এবং আঙ্কেলের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে আমাকে রাজি হতে হলো!

#চলবে….?

(রি-চেইক করা হয় নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here