তোমাতে রহিব বিলীন পর্ব ১৭+১৮

#তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_১৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

“এতো ব্যাথা চেঁপে রেখেছিলেন বুকে? অথচ কখনো মুখ ফুটে কিছু বলেন নি! ভালো ছিলেন তো আমায় ছাড়া? দীর্ঘ দেড়টা বছর?”

আহনাফ বিদ্রুপ সূচক হেসে বললেন,,

“ভালো থাকা? কিভাবে ভালো থাকতে হয়, কিভাবে ভালো থাকা যায় তাই ভুলতে বসেছিলাম প্রায়! দিন, রাত এক মনে হতো। প্রকৃতির কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ে নি। নিজের মাঝেই ডুবে থাকতাম অষ্টপ্রহর। নাওয়া, খাওয়া ভুলে গিয়েছিলাম প্রায়। অপরাধবোধ কাজ করত ভীষন। কোনো কাজেই পর্যাপ্ত ধ্যান দিতে পারছিলাম না। নিজেকে সামলানোর মনোভাবটা ও বিলুপ্ত ছিলো প্রায়। একে তো তোমাকে ছেড়ে আসা। দ্বিতীয়ত, ভাবীর সাথে অন্যায় হচ্ছে জেনে ও মুখ বুজে সব মেনে নেওয়া। ভেতরে ভেতরে শুকনো লাকড়ীর ন্যায় দ্বগ্ধ হচ্ছিলাম। ফাইনালি বুঝতে পারলাম, আমি যা করছি অন্যায় করছি। রক্তের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের টানে অনায়াসে একজন অন্যায়কারীকে আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি। অনেক গুলো জীবন একসাথে নষ্ট করছি। আমার একটু ঘুড়ে দাঁড়ানো মানেই হলো, অনেক গুলো প্রিয় প্রাণ বেঁচে যাওয়া। আমার ভালোবাসার মানুষটাকে ও নিজের করে পাওয়া!”

“এতো বিলম্ব করলেন কেনো সবটা বুঝতে? আপনি জানেন? আপনার এই সামান্যতম ভুলের জন্য আমার আপুকে আরো দেড়টা বছর নষ্ট করতে হলো? একটা নরপশুর সাথে সংসার করতে হলো? তৃতীয় বার বেবি কন্সিভ করতে হলো! না জানি ঐ নরপশুটা আবার তৃতীয় বারের মতো আমার আপুকে ভুলভাল মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছেন। আপুর চূড়ান্ত কোনো ক্ষতি করে দিয়েছেন!”

“আমি অনুতপ্ত প্রভা। ভীষন অনুতপ্ত। প্লিজ এসব বলে আমাকে আর নিজের বিবেকের কাছে ছোট করে দিও না। বিশ্বাস করো, আমি জেনে শুনে চাই নি ভাবীর কোনো ক্ষতি হউক। তবে কিভাবে যেনো এই বিরাট ভুলটা আমার দ্বারা হয়ে গেলো বুঝতেই পারি নি!”

“কাল সকালেই আমরা পুরো পরিবারের সামনে ঐ নরপশুটার মুখোশ খুলব আহনাফ। এবার অন্তত নিজের ভাইয়ের হয়ে অন্যায়ের সাথে আপোষ করবেন না প্লিজ। সদা সত্যের সাথে থাকবেন।”

“হৃদির বিয়ে দুদিন পর। এর মধ্যেই এসব?”

খড়তড় দৃষ্টিতে আমি আহনাফের দিকে চেয়ে বললাম,,

“কি চাইছেন কি আপনি? আমার আপু আরো দুদিন ঐ নরপশুটার সাথে এক ঘরে, এক বিছানায় রাত কাটাক? ঐ নরপশুটার সেবা, যত্ন করুক? তার মঙ্গলের কথা ভাবুক? নিজেকে তার স্ত্রী হিসেবে দাবী করুক? আরো দুদিন তার সাথে সংসার করুক? সময়ের অপচয় করুক? তাকে নিয়ে মিথ্যে স্বপ্ন দেখুক? আরো দুদিন ঠকে যাক?”

“কি চাইছ কি তুমি? কি করতে চাইছ?”

“কালই আমরা আপুকে নিয়ে এই বাড়ি ছাড়ব। আর আপনার নরপশু ভাইকে জেলের ভাত খাওয়াবো। আমার আপু এই মিথ্যা সস্পর্কে আর একটা দিন ও ব্যয় করবে না।”

বসা থেকে উঠে আমি তেজী কন্ঠে আহনাফকে বললাম,,

“আমার চোখে এখন আপনি ও অপরাধী। আপনার জন্যই আমার আপুকে আরো দেড়টা বছর নষ্ট করতে হলো। নিজের ভাইকে বাঁচানোর জন্য আমার আপুর সাথে অন্যায় করলেন? বিবেকে বাঁধে নি আপনার?”

আহনাফ ভ্রু যুগল সংকুচিত করে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বললেন,,

“তুমি আমাকে ভুল বুঝছ প্রভা। পরিস্থিতির চাঁপে পড়ে আমি তখন সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারছিলাম না ঠিকই তবে অনেকটা দেরি হয়ে গেলে ও আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি। আমি ও চাই আমার ভাইয়া শাস্তি পাক। জাস্ট দুদিন সময় চেয়েছি আমি। হৃদির বিয়েটা হওয়ার পর পরই আমরা একটা সিদ্ধান্তে যাবো। তখন তোমাদের যা ঠিক মনে হবে তোমরা ঠিক তাই করবে। আমি বা আমার পরিবারের কেউ তোমাদের বাঁধা দিতে আসবে না।”

রগচটা ভাব নিয়ে আমি আহনাফের শার্টের কলার চেঁপে ধরে বললাম,,

“এক মুহূর্ত ও নষ্ট করতে চাই না আমি। কালই আমরা আপুকে নিয়ে এই বাড়ি ছাড়ব। সবসময় নিজেদের স্বার্থটাকে বড় করে দেখবেন না। অন্যদের দিকটা ও ভাবার চেষ্টা করবেন। সব সত্যি জানার পর কোনো মানেই হয় না আপুকে আরো দুদিন এই মিথ্যে সংসার নামক নরকে রেখে যাওয়া।”

আহনাফের শার্টের কলারটা ছেড়ে আমি ফুঁফিয়ে কেঁদে বললাম,,

“আমার রুম থেকে বের হোন আপনি। এই মুহূর্তে আপনাকে ও আমার সহ্য হচ্ছে না। প্লিজ লিভ মি এলোন প্লিজ।”

আহনাফ উদ্বিগ্নতা নিয়ে আমাকে ঝাঁকিয়ে আহত কন্ঠে বললেন,,

“প্লিজ প্রভা। অন্তত তুমি আমাকে ভুল বুঝো না। আমার অবস্থাটা বুঝার চেষ্টা করো। আমি কখনো চাই নি, ভাবীর কোনো ক্ষতি হোক। তবে ভাইয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতাটা ও জোগাতে পারছিলাম না। কিন্তু এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমি আমার ভুল ত্রুটি গুলো বুঝতে পারছি প্রভা।”

অগ্নিশর্মা হয়ে আমি ধমকের স্বরে আহনাফকে বললাম,,

“কথা কানে যাচ্ছে না আপনার? রুম থেকে বের হতে বলেছি আমি আপনাকে। আমার মাইন্ড সেট হলে আমি নিজ থেকে আপনার সাথে কথা বলব। এখন আপনি যেতে পারেন।”

ধৈর্য্যে বোধ হয় চিড় ধরেছে আহনাফের। বিষন্ন মুখ ভঙ্গি পাল্টে আহনাফ ক্ষনিকের মধ্যে তেজর্শী ভাব নিয়ে হুট করেই আমার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরে ছোট ছোট লাভ বাইটে আমার ঠোঁট জোড়াকে বিষাক্ত করে তুলছিলেন। প্রচন্ড ক্ষীপ্ত হয়ে আহনাফ অস্পষ্ট স্বরে বললেন,,

“রাগ, জেদ আমারো হয়। যখন তুমি আমার সাথে এভাবে রাগ দেখিয়ে কথা বলো। কেউ আমার সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বললেই তাকে আমার খুন করে দিতে ইচ্ছে হয়। সে জায়গায় তুমি আমার কলার চেঁপে ধরে আমাকেই রুম থেকে বের হতে বলছ?”

আহনাফের জেদের সাথে পেরে উঠছিলাম না আমি। ক্রমাগত উনার জেদ বৃদ্ধি পেয়ে আমার ঠোঁটের যন্ত্রণা অত্যধিকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছিলো। এর মধ্যেই আহনাফ চোখ থেকে চশমাটা খুলে চশমাটা যেনো কোথায় একটা ছুড়ে ফেললেন আন্দাজই করতে পারলাম না আমি। লোকটা বোধ হয় নিজের বোধ বুদ্ধি হারিয়েছেন। প্রখর জেদের বশবর্তী হয়ে ঐদিনের বলা কথা গুলো ভুলতে বসেছেন। এসব তো আমাদের বিয়ের পরে হওয়ার কথা ছিলো তাই না? ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আহনাফ নিজেই আমার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে রাগান্বিত চোখে আমার টলমল চোখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“তোমার যা ইচ্ছা তুমি তাই করো। পারলে আজই, এই মুহূর্তে ভাবীকে নিয়ে নিজেদের বাড়ি ফিরে যাও। বাঁধা দিবো না তোমাদের। তবে আমার সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করবে তো, আমি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবো না কিন্তু প্রভা। ভাইয়ার সাথে সাথে তোমাকে ও জেল বন্ধি করব। আমার মন ভাঙ্গার অভিযোগে!”

আহনাফ আর এক মুহূর্ত ও সময় ব্যয় করলেন না। ব্যালকনীর দরজার কাছে পড়ে থাকা আধ ভাঙ্গা চশমাটা দুপা দিয়ে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে রাগে গজগজ করে রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। আহনাফের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে আমি চোখের জল ছেড়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লাম। ঠোঁট দুটো অসম্ভব রকম জ্বালা করছে আমার। রক্ত গড়িয়ে না পড়লে ও জখম হয়েছে নিশ্চয়ই। আহনাফের এই হিংস্র আচরনে কষ্ট পাই নি আমি মোটে ও৷ তবে আপুর সম্ভাব্য কষ্টে আমার কলিজাটা ফেঁটে রক্তক্ষরণ হচ্ছে!

______________________________________

সকাল ৭ঃ৩০ মিনিট বাজতেই আমার কাঁচা ঘুমটা ভাঙ্গল। আহনাফ যাওয়ার পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে চারদিকে ফজরের আযান পড়েছিলো সেই হুশ ছিলো না আমার। ঠিক আযানের পরর পরই আমার চোখে ঘুম লেগেছিলো। সেই ঘুম ভাঙ্গল মাএ। অস্ফুটে চোখে আমি ব্যালকনি থেকে উঠে প্রথমে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলাম। কিছু সময়ের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আমি ওয়াশরুম থেকে প্রস্থান নিয়ে সোজা দু তলার ডান পাশের রুমটায় চলে এলাম। ঐ রুমটাই আপু এবং জিজুর। ভেজানো দরজাটা শক্ত হাতে ধাক্কা মেরে আমি রুমে প্রবেশ করতেই দেখলাম আপু খুব যত্ন সহকারে জিজুর টি শার্ট গুছাচ্ছেন। কান্না চেঁপে আমি আপুর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আধো কন্ঠে বললাম,,

“আপু শুনছ?”

আপু মৃদ্যু হেসে পাশ ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“হুম বল। কিছু বলবি?”

স্থির চোখে আমি আপুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“খুব ভালোবাসো তুমি জিজুকে তাই না?”

আপু লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বললেন,,

“সে আর বলতে? ভালোবাসি বলেই তো দীর্ঘ আড়াই বছর যাবত আরিফের সাথে সুখে, শান্তিতে সংসার করছি! তোর জিজু মানুষটাই এমন, যাকে ভালো না বেসে থাকা যায় না!”

তব্ধ শ্বাস ছেড়ে আমি পরমুহূর্তে বললাম,,

“যদি কখনো জানতে পারো জিজু তোমাকে ছাড়া ও অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে আছে বা ছিলো। তখন তুমি পারবে জিজুকে ছেড়ে দিতে?”

আপু অট্ট হেসে বললেন,,

“সকাল সকাল আমাকে রাগাবি বলে এসেছিস তাই না? ছোট বেলার অভ্যেসটা তোর আজ ও গেলো না!”

প্রসঙ্গ পাল্টে আমি পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে অস্থির কন্ঠে আপুকে বললাম,,

“জিজু কোথায়?”

“সকাল থেকেই দেখছি না। হয়তো কোনো কাজে বের হয়েছেন!”

পরক্ষনে আপু আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“কেনো? কোনো দরকার আছে?”

ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে আমি আপুকে বললাম,,

“জানো আপু? কাল মধ্যরাতে জিজু আমার রুমে প্রবেশ করে আমার কাঁথা ধরে টানছিলেন?”

মুহূর্তের মধ্যেই আপু চোখ,মুখ লাল করে বললেন,,

“কি যা তা বকছিস তুই? মাথা গেছে তোর?”

“আমি কোনো যা তা বকছি না আপু। জিজু তোমার সাথে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত ফ্লড করে যাচ্ছেন। আড়ালে উনার অসংখ্য পরকীয়া চলছে। তোমার বোনকে ও ছাড়ে নি ঐ দুশ্চরিএ, লম্পট লোকটা। আমার সর্বনাশ করতে ও উঠে পড়ে লেগেছিলেন!”

দম নেওয়ার সময়টা পেলাম না পর্যন্ত। ইতোমধ্যেই আপু ঠাস করে আমার গালে এক চড় বসিয়ে বললেন,,

“শাট আপ প্রভা। লজ্জা করছে না তোর? ভাই সম জিজু সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ কথা বার্তা বলতে? এতোটাই নিচে নেমে গেছিস তুই? তোর চোখে কি পৃথিবীর সমস্ত পুরুষ মানুষই খারাপ? এতো গুলো বছর তুই আমার দেবরের পেছনে লেগেছিলি কিছু বলি নি। কিন্তু আশকারা পেয়ে এখন তুই আমার হাজবেন্ডের পেছনে ও লাগলি? কথা গুলো বলতে একটু ও বিবেকে বাঁধল না তোর?”

ব্যাথাযুক্ত গালে হাত রেখে আমি কান্নাজড়িত কন্ঠে আপুকে বললাম,,

“বিশ্বাস করো আপু। আমি ইচ্ছে করে জিজুর পেছনে লাগি নি। জিজু সত্যিই আড়ালে তোমার সাথে প্রতারনা করছেন। তোমাকে ঠকাচ্ছেন। তুমি জানো আপু? বার বার কেনো তোমার বেবি মিসকারেজ হচ্ছিলো? জিজুর জন্য প্রতিবার তোমার বেবি মিসকারেজ হচ্ছে। জিজু তোমাকে ভুলভাল ঔষধ খাইয়ে বেবি নষ্ট করে দিচ্ছেন। অথচ তুমি আজও পর্যন্ত জিজুর এই চালাকিটা ধরতে পারো নি!”

দুটো চড় আরো বাড়তি পড়ল আমার গালে। রাগে গজগজ করে আপু উচ্চ আওয়াজে বললেন,,

“লিমিট ক্রস করছিস তুই প্রভা। আমার ভুলের জন্য বেবি মিসকারেজ হচ্ছে। আরিফের কোনো দোষ নেই এতে। আরিফকে আমি বিশ্বাস করি৷ কিন্তু এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমার বোনকে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না!”

চোখের জল ছেড়ে আমি আপুকে ঝাঁকিয়ে বললাম,,

“অন্ধ হয়ে গেছো তুমি আপু? ঠিক, ভুলের পার্থক্য ধরতে পারছ না? এতো বছর সংসার করে ও জিজুর আসল রূপটা তুমি ধরতে পারলে না? এতোটাই নির্বোধ, বোকা তুমি? আপন বড় বোন হও তুমি আমার। ছোট বোন হয়ে আমি কখনো তোমার ক্ষতি চাইতে পারি? আমার কথা যদি তোমার বিশ্বাস না হয়, তবে তুমি আহনাফ, নেহাল ভাই এবং তনিমা আপুর সাথে কথা বলতে পারো। তারা তোমাকে ফার্স্ট টু লাস্ট সমস্ত সত্যিটা খুলে বলবেন।”

ইতোমধ্যেই রুমে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি টের পেলাম। আপুর থেকে চোখ ফিরিয়ে আমি দরজার দিকে নজর দিতেই কান্নারত অবস্থায় আম্মুকে দেখতে পেলাম। আঁচল চেঁপে কেঁদে আম্মু আপুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“পল্লবী! ব্যাগপএ গুছিয়ে নে। আজই আমরা বাড়ি ফিরব। তুই ও আমাদের সাথে আমাদের বাড়ি ফিরবি!”
#তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_১৮
#নিশাত_জাহান_নিশি

“পল্লবী! ব্যাগপএ গুছিয়ে নে। আজই আমরা বাড়ি ফিরব। তুই ও আমাদের সাথে আমাদের বাড়ি ফিরবি।”

হাতে থাকা জিজুর টি শার্টটা ছুড়ে মেরে আপু তড়িৎ বেগে ছুটে আম্মুর মুখোমুখি দাঁড়ালেন। অসহিষ্ণু ভঙ্গিতে আপু আম্মুকে ঝাঁকিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বললেন,,

“কি হয়েছে আম্মু? আমাকে হঠাৎ তোমাদের বাড়ি ফিরে যেতে বলছ কেনো?”

আম্মু কাতর দৃষ্টিতে আপুর দিকে চেয়ে রূঢ় কন্ঠে বললেন,,

“তোকে আর এই মিথ্যে সম্পর্কে রাখার কোনো ইচ্ছে নেই আমাদের। যতো দ্রুত সম্ভব তোকে এই মিথ্যে সংসার থেকে আমরা বের করতে চাই। অনেক হয়েছে সময়ের অপচয়, ক্ষতি ও বেশ হয়েছে। শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে অনেক টানা পোঁড়নে ভুগেছিস তুই! আর না। আমরা তোকে আর কোনো কষ্ট দিবো না পল্লবী।”

“কোন কষ্টের কথা বলছ তুমি আম্মু? কি কখন থেকে মিথ্যে সম্পর্ক, মিথ্যে সংসরা বলে যাচ্ছ? একটু বুঝিয়ে বলবে আমায় প্লিজ?”

আম্মু কান্নাজড়িত কন্ঠে উচ্চ আওয়াজে চেঁচিয়ে বললেন,,

“এতক্ষন যাবত প্রভা যা বলছিলো সব সত্যি ছিলো পল্লবী। সত্যিই আরিফ তোকে তোর অগোচড়ে ঠকাচ্ছিলো। তোর বোনের দিকে পর্যন্ত হাত বাড়িয়েছিলো। তনিমা মেয়েটার সাথে ও সম্পর্কে ছিলো। তোর বেবি মিসকারেজ আরিফের দেওয়া ভুলভাল ঔষুধেই হচ্ছিলো। এতো বছর ধরে আরিফ তোর সাথে শুধু মিথ্যা প্রেমের, মিথ্যা সম্পর্কের অভিনয় করছিলো। যার প্রমান আমরা তনিমা, আহনাফ এবং নেহালের মুখ থেকে শুনেছি। তুই জানিস? আরিফ এখন কোথায় আছে?”

শ্বাস নিতে বিপুল কষ্ট হওয়া সত্ত্বে ও আপু আধো কন্ঠে বললেন,,

“কো কো কোথায়?”

“পুলিশ কাস্ট্রাডিতে!”

মুহূর্তের মধ্যেই আপু মাথা ঘুড়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লেন। আম্মু এবং আমি সমস্বরে চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে ধপ করে আপুর পাশে বসতেই রুমে চতুর্থ কারো উপস্থিতি টের পেলাম। মাথা তুলে তাকাতেই বিমূর্ষ অবস্থায় আহনাফকে দেখতে পেলাম। কান্নারত অবস্থায় আমি আহনাফকে বললাম,,

“আমার আপু সেন্সলেস হয়ে গেছে আহনাফ। প্লিজ কিছু একটা করুন।”

হন্ন হয়ে আহনাফ ডেস্কের উপর থেকে পানির জগটা হাতে নিয়ে আমার পাশ ঘেঁষে বসে ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে আমায় বললেন,,

“দেখি পাশ থেকে উঠো। ভাবীকে এভাবে ঘিরে রাখা যাবে না। পর্যাপ্ত হাওয়া বাতাসের প্রয়োজন এখন।”

পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি। আম্মু এখনো আপুর পাশে বসে কাঁদছেন। প্রায় ৩ থেকে ৪ বার আপুর চোখে, মুখে পানি ছিঁটাতেই আপু পিটপিটে চোখে আহনাফের দিকে তাকালেন৷ আহনাফ উত্তেজিত কন্ঠে আপুর গালে আলতো হাতে চাঁপড় মেরে বললেন,,

“নাও ইউ আর ফাইন ভাবী? বেটার ফিল করছ?”

মুহূর্তের মধ্যেই আপু ফুঁফিয়ে কেঁদে বললেন,,

“সবাই এসব কি বলছে আহনাফ? আরিফ আমাকে….

কান্নার জন্য আপু সম্পূর্ণ কথাটা সমাপ্ত করতে পারলেন না। আহনাফ তব্ধ শ্বাস নির্গত করে নিচু কন্ঠে আপুকে বললেন,,

“সবাই ঠিক বলছে ভাবী। ভাইয়া সত্যিই তোমার সাথে অন্যায় করছিলেন। দিনের পর দিন তোমাকে ঠকাচ্ছিলেন। মা হওয়ার সুখটা ও প্রতিবার কেড়ে নিয়েছিলেন। তনিমা এবং প্রভার উপর ও ভাইয়ার কু-নজর ছিলো। আর ভাইয়া এখন পুলিশ কাস্ট্রাডিতে আছেন৷ গতকাল রাতে বাবাকে আমি ভাইয়ার সমস্ত কু-কর্ম খুলে বলি। বাবা এবং আঙ্কেল গতকাল মধ্যরাতেই ভাইয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন থানায়। সকাল হতেই ভাইয়াকে গ্রেফতার করা হয় বাড়ির বাইরে থেকে।”

হতবাক না হয়ে পারলাম না আমি। আহনাফ আমার পূর্বেই জিজুর মুখোশ সবার সামনে খুলে দিলেন? আর আঙ্কেল? আঙ্কেল এতোটা ভালো মানুষের পরিচয় দিবেন আদৌ বুঝতে পারিনি আমি। ভেবেছিলাম ছেলের হয়ে আমাদের কাজে বেগড়া দিবেন। কোনো না কোনো ভাবে ছেলেকে ঠিক বাঁচিয়ে নিবেন। আপু বুকফাঁটা আর্তনাদে বিমূর্ষ হয়ে বললেন,,

“আমি আরিফের মুখোমুখি হতে চাই আহনাফ। জাস্ট একবার আরিফের সাথে দেখা করার সুযোগ করে দাও আমায়!”

আহনাফ প্রতিত্তুর করার পূর্বেই আম্মু শক্ত গলায় আপুকে বললেন,,

“চুপ কর পল্লবী। আর একটা কথা ও বলবি না তুই৷ ঐ লম্পট, দুশ্চরিএ ছেলেটার সাথে তোর আর কোনো কথা থাকতে পারে না। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা ডিভোর্স ফাইল করব। আর তোকে ও আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে!”

“আমি প্রেগনেন্ট আম্মু। দু মাসের সন্তান আমার পেটে বেড়ে উঠছে। এই অবস্থায় আমি কিভাবে আরিফকে ডিভোর্স দিবো মা? আমার সন্তান কার পরিচয়ে বড় হবে মা? তার ভবিষ্যত কি হবে?”

“যেখানে আরিফের সাথেই তোর কোনে সম্পর্ক থাকবে না সেখানে তুই কেনো আরিফের সন্তান বহন করবি?”

“মানে? তুমি কি বলতে চাইছ মা?”

“গর্ভপাত! আমরা কালই তোকে হসপিটালে নিয়ে যাবো। বাচ্চাটা এবর্শনের ব্যবস্থা করব!”

“দোহাই লাগে মা। একজন মা হয়ে তুমি আরেকজন মাকে এই পাপ কাজটা করার কথা বলো না। আরিফ যেমন দোষ করেছে, অন্যায় করেছে তেমনি তার শাস্তি ও পাবে। তবে সেই শাস্তি পাওয়ার পর আরিফ যদি আমার কাছে ফিরে আসতে চায় আমি নির্দ্বিধায় মেনে নিবো আরিফকে। অন্তত আমার সন্তানের কথা ভেবে হলে ও আরিফকে আমি মেনে নিবো। আরিফকে আমি ডিভোর্স দিতে পারব না মা। প্লিজ আমার অবস্থাটা বুঝার চেষ্টা করো!”

রাগটা যেনো দ্রুত বেগে চড়ে উঠল আমার মাথায়। কিছুতেই নিজের অবাধ্যচিত্তকে আটকে রাখতে পারছিলাম না আমি। অগ্নিশর্মা হয়ে আমি আপুর মুখোমুখি বসে ক্ষীপ্র কন্ঠে বললাম,,

“তুমি কি পাগল হয়ে গেছো আপু? বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছো তুমি? বিবেক, বুদ্ধি, চেতনাবোধ কাজ করছে না তোমার? তোমার সাথে এতো এতো অন্যায় হওয়ার পরে ও তুমি ঐ দুশ্চরিএ, লম্পট ব্যক্তিটাকেই ফিরিয়ে নিতে চাইছ? তাকে ডিভোর্স দিতে নাকোচ করছ? কেমন মেয়ে মানুষ তুমি? আত্নসম্মানবোধ নেই তোমার?”

“আমি যে খুব সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি রে প্রভা৷ মানতে ভীষন কষ্ট হচ্ছে আমি যাকে এতো গুলো বছর ধরে অন্ধের মতো ভালোবেসে আসছিলাম সে আমার অগোচড়ে আমাকেই খুব নিঁখুতভাবে ঠকাচ্ছিলো? শুধু তাই নয়, তার এবং আমার দু দুটোকে বাচ্চাকে নষ্ট করে দিয়েছিলো? পৃথিবীতে আসার পূর্বেই তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলো? কেমন জালিয়াত বাবা সে? এতোটা পাষন্ড মনের মানুষ ও পৃথিবীতে হয়?”

কান্না চেঁপে আমি শান্ত কন্ঠে বললাম,,

“তুমি শান্ত হও আপু। আগে আমাদের সাথে বাড়ি ফিরে চলো৷ দু, একদিন নিরিবিলি থেকে একটু মাইন্ডটাকে সেট করো৷ এরপর একটা সিদ্ধান্তে আসো।”

“যাই হয়ে যাক প্রভা৷ আমি আমার গর্ভের সন্তানটাকে খুন করতে পারব না। অন্তত এই সন্তানটাকে আমি বাঁচিয়ে রাখতে চাই। তোরা আমার এই সন্তানটার সাথে অন্যায় করিস না প্লিজ। তাকে বাঁচতে দে৷ পৃথিবীতে আসতে দে।”

“তোমার গর্ভের সন্তানটার কিছু হবে না আপু। সে বাঁচবে। নিশ্চয়ই পৃথিবীতে আসবে। শুধু তোমাকে ঐ নিষ্ঠুর, বর্বর লোকটাকে ছেড়ে দিতে হবে। তাকে ডিভোর্স দিয়ে এই মিথ্যে সংসার থেকে তোমাকে বের হতে হবে। তার যেনো সর্বোচ্চ শাস্তি হয় তার জন্য আমাদের পাশে থাকতে হবে!”

“আমি সব করব প্রভা। তোরা যা বলবি তাই হবে। তবে আমার সন্তানটাকে আমি হারাতে চাই না৷”

আপু আমাকে ঝাপটে ধরে হু হু শব্দে কেঁদে উঠলেন। ভেতরে, বাহিরে একই বেদনার ছন্দ নির্গত হচ্ছিলো। আপুর সঙ্গ ধরে আমি ও কাঁদছিলাম খুব। কান্নায় বিরাম টেনে আম্মু শক্ত কন্ঠে আমাদের বললেন,,

“ব্যাগপএ গুছিয়ে নে তোরা। আমরা এক্ষনি রওনা হবো!”

আহনাফ আমাদের পাশ থেকে সরে মাথা নিচু করে দরজার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালেন। আপুকে নিয়ে আম্মু সমস্ত ব্যাগপএ গুছিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। পরিশেষে আমি রুম থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বেই আহনাফ পেছন থেকে আমার ডান হাতটা টেনে ধরে আহত কন্ঠে বললেন,,

“ছেড়ে যেও না আমায় প্লিজ। ভাইয়ার পাপের সাজা আমায় দিও না। মরে যাবো আমি তোমায় ছাড়া। এই আহত হৃদয়টাকে পুরোপুরি ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না প্লিজ। তোমায় না পাওয়ার তীব্র অসুখ আমি কাটিয়ে উঠতে পারব না!”

ক্ষোভ ভরা দৃষ্টিতে আমি পিছু ফিরে আহনাফের দিকে চেয়ে বললাম,,

“এতো কিছুর পরে ও কিভাবে আশা করেন? আমার পরিবার আপনাকে উনাদের ছোট মেয়ের বর হিসেবে মেনে নিবেন? তাদের মনে তো আপনাদের পরিবার সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জন্মাতেই পারে তাই না? উনারা নিশ্চয়ই ভাবতে পারেন আপনি ও বোধ হয় আপনার কুলাঙ্গার ভাইটার মতোই হবেন!’

আহনাফ রাগে ফুসফুস করে তীক্ষ্ণ চাহনীতে বললেন,,

“এই চিনেছ আমায় তুমি? এতগুলো বছরে এই চিনেছ আমায়? এই দিনটা দেখার জন্যই কি আমি সব সত্যিটা সবার সামনে এনেছিলাম? সারা রাত আব্বুকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিজের ভাইয়ার বিরুদ্ধে এ্যাকশান নিতে বলেছিলাম? আমার সম্পর্কে তুমি এই কু-ধারনা পোষন করো প্রভা? আমার ভালোবাসার গভীরতা তোমার কাছে এতোটাই ঠুনকো?”

আমি ধৈর্য্য সহ্য নিয়ে বললাম,,

“দেখুন আহনাফ। এতোকিছুর পরে ও আমার মনে হয় না আমার পরিবার আপনার কাছে আমাকে বিয়ে দিতে রাজি হবেন বলে। বলা বাহুল্য, পরিবারের বিরুদ্ধে আমি এক পা ও আপনার দিকে বাড়াতে পারব না! দেখতে পারছেন না? আমার পরিবার কতোটা ক্ষেপে আছেন আপনার ভাইয়ার উপর? এই একটা খারাপ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আপনি কিভাবে পারছেন আমাকে দোষরোপ করতে? সময় দিতে পারছেন না আমায় একটু? পরিস্থিতি ঠিকঠাক হলে আমি চেষ্টা করব আপনার সাথে যোগাযোগ করার। দয়া করে আমার ভালোবাসাকে ঠুনকো প্রমান করার জন্য যা তা বলে আমায় অপমান করবেন না। আমি চেষ্টা করব পরিবারকে বুঝানোর। বাকিটা সময় হলে আপনি জানতে পারবেন।”

আহনাফ মুহূর্তের মধ্যে আমার শক্ত হাতের বাঁধনটা ছেড়ে দিলেন৷ নিচু কন্ঠে আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“অপেক্ষায় থাকব আমি। কথায় এবং কাজে মিল চাই কিন্তু। তুমি সময় চেয়েছ, আমি ও সময় দিলাম। তবে যেনো নির্দিষ্ট সময় পর পরই ফিরে পাই তোমায়। যদি এর অন্যথায় হয় না? সত্যি বলছি আমি যে তোমার ঠিক কি হাল করব তুমি জাস্ট ভাবতে ও পারছ না!”

আর এক মুহূর্ত ও সময় ব্যয় করলাম না আমি। আম্মু এবং আপুকে নিয়ে বাড়ি ভর্তি লোকজনদের উপেক্ষা করে ঘন্টা খানিকের মধ্যে সোজা আমাদের বাড়ি ফিরে এলাম। আব্বু বাড়ি ফিরে আসতেই জানতে পারলাম, জিজুর বিরুদ্ধে শিশু হত্যার মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার রায় দুদিন পর ঘোষনা করা হবে। ধারনা করা যাচ্ছে ৬/৭ বছরের পূর্বে জিজু গারোদের পেছন থেকে বের হতে পারবেন না! ঐদিকে আপুকে সামলানো ও দায় হয়ে পড়েছে। অচেতন হয়ে পড়ছেন কিছুক্ষন পর পর৷ জিজু এবং বাচ্চাদের শোকে আপু এখন পাগলপ্রায়!

দুদিন পর,,

কোর্টে জিজু উনার সমস্ত দোষ স্বীকার করছেন। দীর্ঘ ৬ বছর সাজা পেতে ও প্রস্তুত ছিলেন। এতো বড় বড় অন্যায় করার পর অবশেষে জিজুর অপরাধবোধ এবং অনুশোচনাবোধ কাজ করেছিলো। আপুর চোখে চোখ রেখে ঐদিন কথা বলতে পারেন নি জিজু। আপু ও জিজুর মুখাপেক্ষী হতে চান নি। তবে শেষবারের মতো জিজুর সাথে দু মিনিটের জন্য দেখা করতে যেয়ে আপু গুনে গুনে জিজুর গালে দু দুটো চড় মেরেছিলেন। কোনো রকম প্রতিবাদ জানান নি জিজু। উল্টে ছলছল চোখে আপুর দিকে নির্মম কাকুতি নিয়ে বলছিলেন,,

“আমি আমার কু-কর্মের জন্য অনুতপ্ত পল্লবী। আর যাই করো না কেনো কাইন্ডলি আমার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার কথা ভেবো ও না।দেরিতে হলে ও আমি বুঝতে শিখেছি তুমিই হলে আমার লাইফের সব’চে বড় পাওয়া। যাকে আমি পেয়ে ও তার কদর করতে শিখি নি। প্রতিদিন, প্রতিটা ক্ষন, প্রতিটা মুহূর্তে তাকে ঠকিয়েছি। সাথে আমার বাচ্চাদের ও…!”

আপু নিরুত্তর থেকে প্রস্থান নিয়েছিলেন জিজুর সম্মুখ থেকে। আপুর থেক কোনো রকম ছাড় না পেয়ে জিজু আঙ্কেল এবং আব্বুকে হাত জোর করে অনুরোধ করে বলেছিলেন,,

“আর যাই হয়ে যাক আপুর সাথে যেনো জিজুর ডিভোর্সটা না হয়। আপুর গর্ভের সন্তানটা ও যেনো নিরাপদে থাকে। জিজু নিজেকে শোধরে আবারো ফিরে আসবেন আপু এবং উনার সন্তানের কাছে।”

আব্বু প্রথম অবস্থায় জিজুর প্রস্তাব মানতে না চাইলে ও পরমুহূর্তে আঙ্কেল এবং আহনাফের কাকুতি, মিনতিতে বাধ্য হয়েছিলেন জিজুর প্রস্তাবে সম্মতি জানাতে! হয়তো জিজুকে আরো একটা সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন আব্বু। একটা সংসার ভাঙ্গা চাট্টিখানি কথা নয়। এতে আল্লাহ্ র ও হাত থাকতে হয়। হয়তো ৫ বছরের সাজায় জিজু এবার পরিপূর্ণ মানুষ রূপে ফিরে আসবেন! আল্লাহ্ চাইলে হয়তো এতো বছরের ব্যবধানে সম্পর্কটা টিকে থাকতে ও পারে আবার না ও থাকতে পারে!

পরের দিন, হৃদি আপুর বিয়েটা সুস্থভাবে হলে ও আমরা হৃদি আপুর বিয়েতে এটেন্ড করতে পারি নি। আপুর অবস্থা খুব সূচনীয় ছিলো। হুট করেই আপুর হার্টের প্রবলেম ধরা পড়ে। শ্বাস প্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটে। শ্বাস ছেড়ে পুনরায় শ্বাস নিতে পারছিলেন না। আপুর খারাপ অবস্থার কথা জানতে পেরে হৃদি আপুর বিয়ে ছেড়ে ঐদিন আহনাফ, নেহাল ভাই এবং তনিমা আপু হসপিটালে ছুটে আসেন। প্রায় দুদিন আপুকে হসপিটালাইজড করে রাখা হয়।

#চলবে…

(রি-চেইক করার সময় পাই নি। কাল থেকে আমাদের কুমিল্লায় নেট কানেকশান টোটালী অফ। কিছু সময়ের জন্য ওয়াইফাই কানেক্টেড হয়েছে। সেই সুযোগে কোনো রকমে গল্পটা লিখে পোস্ট করলাম। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here