তোমাতে রহিব বিলীন পর্ব ১৯+২০

##তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_১৯
#নিশাত_জাহান_নিশি

পরের দিন, হৃদি আপুর বিয়েটা সুস্থভাবে হলে ও আমরা হৃদি আপুর বিয়েতে এটেন্ড করতে পারি নি। আপুর অবস্থা খুব সূচনীয় ছিলো। হুট করেই আপুর হার্টের প্রবলেম ধরা পড়ে। শ্বাস প্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটে। শ্বাস ছেড়ে পুনরায় শ্বাস নিতে পারছিলেন না। আপুর খারাপ অবস্থার কথা জানতে পেরে হৃদি আপুর বিয়ে ছেড়ে ঐদিন আহনাফ, নেহাল ভাই এবং তনিমা আপু হসপিটালে ছুটে আসেন। প্রায় দুদিন আপুকে হসপিটালাইজড করে রাখা হয়।

হসপিটাল থেকে আপুকে নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রায় ২ দিন পর আহনাফ, নেহাল ভাই, তনিমা আপু এবং ইয়ানাত আঙ্কেল আমাদের বাড়িতে আসেন। লজ্জায় ইয়ানাত আঙ্কেল মাথা নুইয়ে রাখতে বাধ্য ছিলেন। নিজের বড় ছেলের কু-কর্মে উনি নিজেই লজ্জিত, অনুতপ্ত, অনুশোচিত। আংশিক অপরাধবোধ আঙ্কেলের মধ্যে ও কাজ করছে। হয়তো ভাবছেন, ছেলেকে সু-শিক্ষা দিতে পারেন নি। ভালো শিক্ষার অভাবেই ছেলে উনার সম্পূর্ণভাবে বিগড়ে গেছে। সন্তান হত্যার মতো জঘন্য পাপ কাজটা করতে ও উনার ছেলের বিবেকে বাঁধে নি! আব্বুর দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে কথা বলার সাহসটা ও জোগাতে পারেন নি আঙ্কেল। সারাটা সময় মাথা নিচু করে নিচ গলায় কথা বলেছেন। মূলত আপুকে এক নজর দেখার জন্যই আঙ্কেল আমাদের বাড়ি এসেছেন। সঙ্গী হিসেবে আহনাফ, নেহাল ভাই এবং তনিমা আপু ও এসেছেন। যদি ও আমি জানি আহনাফ শুধু আপুকে নয় আমার সাথে দেখা করতে, কথা বলতে ও এসেছেন! বাকিটা আহনাফ ভালো জানেন।

বিষন্ন মনে চা, নাশতা সবার সামনে পরিবেশন করে আমি উপস্থিত কারো সাথে কোনো রকম কথা না বলে বসার ঘর থেকে প্রস্থান নিয়ে সোজা আপুর রুমে চলে এলাম। যদি ও আহনাফ অনেক চেষ্টা করেছিলেন আকার ইঙ্গিতে আমার চোখে চোখ মেলাতে, তবে উনার সমস্ত চেষ্টাকে নিরাশ করে আমি একরাশ মন খারাপকে সঙ্গী করে আপুর রুমে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। আপু কাঁথা মুড়ি দিয়ে নির্বিকার নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উল্টো পাশ ফিরে শুয়ে আছেন। কেবল আঁখিপল্লব থেকে টুপটাপ ছন্দে বৃষ্টির ফোঁটার ন্যায় অবাধ্য জলেরা হুটোপুটি খেলছিলো। আপুর মুখোমুখি বসে আমি আপুর ক্রন্দনরত মুখটার দিকে কিছু সময় চেয়ে থেকে দুহাত দিয়ে আপুর চোখ থেকে গাল অব্দি গড়িয়ে পড়া প্রতিটা অশ্রুকনাকে আলতো হাতে মুছে দিলাম। ক্ষনিকের মধ্যেই আপু হু হু শব্দে কেঁদে আমাকে ঝাপটে ধরে বললেন,,

“আমি এখনো মানতে পারছি না নে প্রভা। আরিফ আমার সাথে এতো বড় প্রতারনা করেছে, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কি পাপ করেছিলাম আমি বল না? বিয়ের পর থেকে এই পর্যন্ত যতোগুলো বছর আমি আরিফের সাথে সংসার করেছি ঠিক ততো গুলো বছরই আমি আরিফের প্রতি যথেষ্ট সৎ ছিলাম, লয়াল ছিলাম। আরিফের অগোচড়ে আমি কখনো চেষ্টা ও করি নি কলেজ ফ্রেন্ড, ভার্সিটি ফ্রেন্ডদের সাথে যোগাযোগ করার। এমনকি “শুভ” ভাইয়ার সাথে পর্যন্ত আমি সব প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলাম শুধুমাএ আরিফের জন্য। তুই তো জানতিস বল? শুভ ভাই আমার জন্য কতোটা পাগল ছিলেন? এখনো মনে পড়ে আমার, আরিফের সাথে আমার বিয়ের ঠিক দুদিন আগে শুভ ভাই আব্বুর দুহাত ধরে কতোটা কাতর ভঙ্গিতে ঢুকড়ে কেঁদেছিলেন। শুধু মাএ একটা বছর আব্বুর থেকে সময় চেয়েছিলেন। এক বছর পর ভাইয়া বিদেশ থেকে ফিরেই আমাকে বিয়ে করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে আত্নীয়-স্বজনদের মধ্যে আব্বু নতুন করে কোনো সম্পর্ক বাড়াতে চান নি বলে ঐদিন শুভ ভাইয়ার কথা রাখতে পারেন নি। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শুভ ভাইয়াকে। জানিস এখন আমার কি মনে হচ্ছে? আব্বু হাত ধরে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছেন! জেনে, শুনে আমাকে এই নরক যন্ত্রনায় নিক্ষেপ করেছেন। ঐদিন যদি আব্বু শুভ ভাইয়ার করুন আবদারটা রাখার আদৌ কোনো চেষ্টা করতেন তবে আজ আমাকে এই দিনটা দেখতে হতো না। মানুষরূপী একটা জালিম, জালিয়াতের সাথে আমার সংসার করতে হতো না। যে পুরুষ নিজের দু দুটো সন্তানকে ভুলভাল মেডিসিন খাইয়ে মেরে দিতে পারে সে আর যাই হোক, ভালো স্বামী, ভালো বাবা বা উৎকর্ষ কোনো মানুষের কাতারেই পড়ে না।”

আপুর মাথায় নিরলসভাবে হাত বুলিয়ে আমি মিহি কন্ঠে আপুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“শুভ ভাইয়াকে তুমি ভালোবাসতে?”

প্রতিত্তুরে আপু কিঞ্চিৎ সময় মৌন রইলেন। মিনিট কয়েক পর হেচকি তুলে আপু ক্রন্দনরত অবস্থায় বললেন,,

“হয়তো বাসতাম! তবে প্রশ্রয় দিতে চাই নি কখনো। আব্বুর কথার উপর কথা বলার সাহস ছিলো না আমার। তাই নিজেকে অনেকাংশে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। যার ফলস্বরূপ আমাকে আজ এই দিনটা দেখতে হলো।”

আপুকে ছেড়ে আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। ডেস্কের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে প্রস্থান নিয়ে সোজা ছাঁদে চলে এলাম। কিছু একটা করতে চাইছি আমি। শুভ ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করতে চাইছি। জানতে চাইছি, শুভ ভাইয়ার মনে আপুর জন্য আজ ও কোনো ফিলিংস বাকি আছে কিনা! শুভ ভাইয়া সম্পর্কে আমাদের দুঃসম্পর্কের খালাতো ভাই। আমার জানা মতে, ভাইয়া এখনো বিয়ে করেন নি। ইতালীতেই এখনো নিজের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত আছেন। অন্তত আপুর বর্তমান অবস্থার কথাটা আমি শুভ ভাইয়াকে অবগত করতে চাই। এরপর ভাইয়া যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে। হতে পারে এতো গুলো বছরে ভাইয়া ও নতুন করে কারো প্রেমে পড়েছেন, কাউকে ভালোবেসেছেন, নতুন কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছে ও পোষন করছেন। বাকিটা ভাইয়ার সাথে কথা বলেই না হয় জানা যাবে!

ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকাতেই দেখলাম সন্ধ্যা ৭ টা ছুঁই ছুঁই করছে। এই ভর সন্ধ্যারাতে আমি একলা একাই বাড়ির নির্জন ছাঁদে অবস্থান করছি। ডর-ভয় কিছুই কাজ করছে না মনে। বিশেষ এক কাজে মনযোগ আমার। তাই আশপাশের ভালো-খারাপ পরিস্থিতি বুঝার কোনো হেল দুল নেই আপাতত। প্রকৃতি আজ থমকে আছে বোধ হয়৷ বাতাস চলাচলে প্রকৃতি আজ ভীষন বেগড়া দিচ্ছে। ভ্যাপসা গরমে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের আবির্ভাব ঘটছে। কপালের ভাঁজে বিরক্তি ভর করতেই মনে হলো পেছন থেকে কেউ আমাকে ঝাপটে ধরেছেন। ভয়ে এবার সত্যিই জমে গেছি আমি। চোখ এবং মুখ দুটোই গোলাকৃতি ধারন করেছে। হাত ফসকে ফোনটা নিচে পড়তেই কেউ কেয়ারিং তার হাত দিয়ে ফোনটা ক্যাচ করে নিলো। আমি এবার বুঝতে পারছি লোকটা কে! চাশমিশ আহনাফটা ছাড়া এই লোকটা আর কেউ না। রাগটা যেনো আমার তড়তড় করে মাথা থেকে পায়ে নেমে এলো। লোকটাকে শুধু কয়েকটা কটু কথা শুনালেই হবে না। হাত-পা চালিয়ে মারধর ও করতে হবে। মুহূর্তের মধ্যেই উড়নচণ্ডী ভাব নিয়ে আমি বিরক্তিকর লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,

“ইউ চাশমিশ আহনাফ। আপনার সাহস হলো কি করে পেছন থেকে আমাকে এভাবে ঝাপটে ধরার? কোনো অধিকারে আপনি আমার গাঁয়ে টাচ করলেন?”

আমার তীক্ষ্ণ কথাবার্তায় কোনো রূপ ভ্রুপেক্ষ না করে আহনাফ আমার ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে স্লো ভয়েজে বললেন,,

“উডবি ওয়াইফকে টাচ করেছি আমি। অধিকার এবং সাহস দুটোই আছে আমার!”

হাতের কনুই দিয়ে আহনাফকে সজোরে এক ধাক্কা মেরে আমি আহনাফের সম্মুস্থ হয়ে ক্ষিপ্র কন্ঠে উনার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“কে আপনার উডবি ওয়াইফ হুম? কে? কোন অধিকার, কোন সাহসের কথা বলছেন আপনি? এই যে, আপনার ভাই আমার আপুর সাথে অন্যায়টা করলেন, এরপরে ও আপনি আমার হাজবেন্ড হওয়ার সাহস রাখেন কিভাবে তাই তো বুঝতে পারছি না আমি!”

আহনাফ প্রচন্ড ক্ষেপে আমার থুতনী চেঁপে ধরে দাঁতে দাঁত চেঁপে আমার ছলছল চোখে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“আর একবার তোর মুখ থেকে আমার সম্পর্কে আর কোনো বেড কমেন্টস শুনলেই তোকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে আমার দু সেকেন্ড সময় ও ব্যয় হবে না। আমার ভাইয়া অন্যায় করেছেন আমি মানছি। যেমন অন্যায় করেছেন তেমন তার সাজা ও ভাইয়া পাচ্ছেন। এর মাঝে তুই বার বার আমাকে গুলিয়ে ফেলিস কেনো? ভাইয়া খারাপ বলে কি আমি ও খারাপ? তোর প্রতিটা কথায় আমার সম্পর্কে খারাপ ইঙ্গিত, খারাপ মনোভাব দুটোই থাকে। কেনো বল তো? হাতের পাঁচটা আঙ্গুলই কি সমান হয়?”

থুতনী চেঁপে ধরার দরুন কথা বলতে যদি ও আমার কষ্ট হচ্ছে তবু ও আমি আধো কন্ঠে আহনাফকে বললাম,,

“ছাড়ুন বলছি। আপনার উটকো কথা শোনার সময় নেই আমার। বিশেষ কাজে আমি ছাঁদে এসেছি। কাইন্ডলি এই মুহূর্তে আমাকে একটু একা ছেড়ে দিলে খুশি হবো।”

আহনাফ উগ্র কন্ঠে বললেন,,

“আমার এখন সব কথাই তোর কাছে উটকো মনে হয় তাই না? যাবো না আমি ছাঁদ থেকে। আমি ও দেখব তুই কি করতে পারিস!”

“এই আপনি কাকে তুই তুকারি করছেন হুম? কাকে তুই তুকারি করছেন? কার সাথে আপনি চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলছেন হুম?”

“তুমিই বাধ্য করছ তোমার সাথে রুড বিহেভ করতে। তুমি না? এসবেরই যোগ্য!”

কঠোর দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ হঠাৎ ক্রুর হেসে মুহূর্তের মধ্যে আমার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি প্রকান্ড আশ্চর্যিত চোখে আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ হঠাৎ বাঁ চোখটা টিপে দিলেন। বেকুব হয়ে আমি চোখ জোড়া বুজে নিতেই আহনাফ ছোট ছোট বাইটে আমার ঠোঁটের উপর অত্যাচার চালাতে আরম্ভ করলেন। দুহাত দিয়ে আমি জোরালোভাবে আহনাফকে ধাক্কানোর চেষ্টা করলে ও লোকটার শক্তির সাথে ঠিক পেরে উঠছিলাম না। এক পর্যায়ে আমি ক্লান্ত হয়ে আহনাফের শরীরে সমস্ত শক্তি ছেড়ে দিতেই আহনাফ আমার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে হাঁফিয়ে উঠা কন্ঠে বললেন,,

“স্যরি।”

আমি রাগমিশ্রিত কন্ঠে বললাম,,

“কোনো ক্ষমা নেই আপনার। আপনি চূড়ান্ত লেবেলের খারাপ একটা লোক।”

“খারাপ বলো আর যাই বলো। আমাকে ছাড়ার কথা ভুলে ও মাথায় আনবে না।”

“খারাপ লোকের সাথে আমি সংসার করতে পারব না।”

“খারাপ লোকটার সাথেই তোমার সংসার করতে হবে। তুমি বাধ্য। ওকে?”

“বললেই হলো? না?”

“হুম হলো। বললেই হলো!”

“কাইন্ডলি এখন একটু ছাঁদ থেকে যান। আমার একটা জরুরী কাজ আছে!”

“কি কাজ আগে বলো?”

“কাজটা তো আগে হয়ে নিক। এরপর না হয় আপনাকে বলব!”

“কাজ হওয়ার আগে বলা যাবে না?”

“না। ইট’স টপ সিক্রেট!”

“ভাবীকে দেখেই একটু পর বাড়ি ফিরব। কাজটা সেরে তাড়াতাড়ি নিচে চলে এসো। তোমাকে দেখেই কিন্তু আমি বাড়ি ফিরব।’

“ঠিক আছে। আপনি যান।”

শেষ বারের মতো আমার কপালে দীর্ঘ একটা চুমো একেঁ আহনাফ ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিলেন। ছাঁদ থেকে উনি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হতেই আমি তাড়াহুড়ো করে শুভ ভাইয়ার নাম্বারটা কন্ট্রাক্ট লিস্ট থেকে ফাইন্ড আউট করে ঐ নাম্বাটায় ডায়াল করলাম। প্রথম রিং বেজে যাওয়ার পর দ্বিতীয় রিংটা শুভ ভাই রিসিভ করলেন। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে আমি হ্যালো বলার পূর্বেই শুভ ভাইয়া জিগ্যাসু কন্ঠে বললেন,

“ইয়েস। কে বলছেন?”

হতাশ কন্ঠে আমি বললাম,,

“নাম্বারটা ও সেইভ নেই তোমার কাছে?”

পরক্ষনে আমি তব্ধ শ্বাস ছেড়ে বললাম,,

“আমি প্রভা,শুভ ভাই।”

অকস্মাৎ শুভ ভাই খুশিতে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলেন,

“প্রভা তুই? তুই কল করেছিস আমাকে?”

“কেনো ভাইয়া? বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার? আমি তোমাকে কল করতে পারি না?”

“পারিস। অবশ্যই পারিস। তবে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে তোদের কারো সাথে কোনো যোগাযোগ নেই তো তাই একটু অবাক হলাম!”

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শুভ ভাই কেমন যেনো আহত কন্ঠে আমায় প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“হ্যাঁ রে প্রভা? পল্লবী কেমন আছে? ভালো আছে তো?”

#চলবে…?তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_২০
#নিশাত_জাহান_নিশি

“হ্যাঁ রে প্রভা? পল্লবী কেমন আছে? ভালো আছে তো?”

নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে আমি নির্লিপ্ত কন্ঠে বললাম,,

“ভালো নেই আপু!”

শুভ ভাই কেমন যেনো অস্বস্তিবোধ করে বেদনাহত কন্ঠে বললেন,,

“ভালো নেই মানে?”

“আপুর সংসারটা ভেঙ্গে যাচ্ছে শুভ ভাই। বিবাহিত জীবনে আপু সুখি নন। জিজু আমার আপুর সাথে চিট করেছেন। আমার আপুকে ঠকিয়েছেন!”

শুভ ভাই ভীষন উদ্বেগ প্রকাশ করে উত্তেজিত কন্ঠে বললেন,,

“শুন? যা বলার ডিটেলসে বল। আংশিক কথা আমার বোধগম্য নয়!”

শুভ ভাইয়ার অভয় পেয়ে আমি গড়গড় করে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত ঘটনাসমূহ ক্রমান্বয়ে শুভ ভাইকে জ্ঞাত করলাম। বিশদ ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই শুভ ভাই কিঞ্চিৎ সময় গভীর নিরবতায় লিপ্ত রইলেন। অতঃপর ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললেন,,

“এতো এতো ঘটনা ঘটে গেলো, অথচ আমি কিছুই জানতে পারলাম না? পল্লবীর হাত চেয়েছিলাম শুধু, তাই বলে আমাকে পুরোপুরিভাবে কেটে দিতে হবে? এতোটাই দূরে ঠেলে দিতে হবে? তুই জানিস? আঙ্কেলের সাথে কতোবার কন্ট্রাক্ট করতে চেয়েছিলাম আমি? মা-বাবার মৃত্যুর খবরটা ও পর্যন্ত আঙ্কেলকে জানাতে পারি নি। কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করতেই চায় নি! না আমাকে সুযোগ দিয়েছিলো কারো সাথে যোগাযোগ রাখার!”

কান্নাজড়িত কন্ঠে আমি শুভ ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“খালু, খালাম্মা আর নেই?”

গলা জড়ানো কন্ঠে শুভ ভাই বললেন,,

“না নেই। আম্মুর মৃত্যুর ৬ মাস পরই আব্বু হার্ট এ্যাটাকে মারা যান। পর পর দুবার আমার দেশে ফেরা হয়। একবার ও তোদের সাথে দেখা করার ইচ্ছে জাগে নি! বলতে পারিস, মনে জমানো ক্ষোভ থেকে।”

“ক্ষোভ এতোটাই প্রশ্রয় পেয়েছিলো যে, আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে দিতে ও পিছপা হলো না? অন্তত একবার আমাদের সাথে দেখা করতে এলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো শুভ ভাই? আব্বু নিশ্চয়ই তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতেন না?”

“আত্নীয়তার সম্পর্ক তোরাই ছিন্ন করেছিলি প্রভা। আমি নিজ থেকে তোদের ছিন্ন করতে চাই নি! আঙ্কেল খুব ক্ষুব্ধ ছিলেন আমার প্রতি, তা জেনেই তোদের বাড়ির রাস্তায় পা বাড়াই নি!”

“তুমি এখন কোথায়?”

“ইতালি।”

“কবে ফিরবে?”

“জানি না। হয়তো কখনো ফিরব না!”

“আপুকে একটা নজর দেখার সাধ জাগে না তোমার?”

শুভ ভাই কিঞ্চিৎ সময় নিজেকে ধাতস্থ করে বেদনার স্বরে বললেন,,

“জাগে! তবে আঙ্কেল আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে চান না। হয়তো এবার গেলে ও ফিরিয়ে দিবেন।”

“তুমি একবার এসেই দেখো না শুভ ভাই। এবার কেউ তোমাকে ফিরাবে না আমার মন বলছে। স্বয়ং আমার আপু তোমাকে অন্তপর্ণে বরণ করে নিবে। প্রয়োজনে আমি আব্বুকে বুঝাবো। অন্তত এইবার আমি তোমাদের সাথে অনর্থ হতে দিবো না!”

“পল্লবী আমাকে সত্যিই মেনে নিবে?”

“আপু মেনে নিলে ও এবার হয়তো তুমি মানতে নাকোচ করবে! হয়তো ভাববে, নিজেদের স্বার্থে তোমাকে ব্যবহার করা হচ্ছে! কি শুভ ভাই? ঠিক বলছি তো আমি?”

শুভ ভাইকে বাজিয়ে দেখছিলাম। উনার মনের অভিব্যক্তিটা জানতে চাইছিলাম। বুঝতে চাইছিলাম আমাদের সম্পর্কে এই পরিস্থিতিতে শুভ ভাইয়ার মনের ধারনাটা কি? ক্ষনিকের মধ্যে মনে হলো যেনো শুভ ভাই অত্যধিক রাগে ফুসফুস করছেন। ক্ষুদ্ধ গলায় শুভ ভাই বললেন,,

“এতো বেশি বুঝিস কেনো তুই? ছোট, ছোটদের মতো থাকতে পারিস না? আমি এবার আমার স্বার্থেই ফিরব। কারো স্বার্থের ধার ধারী না আমি। পল্লবী এবার আমার হবেই হবে। পরিস্থিতি যতোই প্রতিকূলে থাকুক!”

“কিন্তু…

” কিন্তু কি?”

“আপু দুমাসের অন্তর্সত্তা!”

শুভ ভাই বিষয়টা দু মিনিট ও ভাবনায় ঠায় দিলেন না। বিরতিহীনভাবে বললেন,,

“বাচ্চাটা আমার পরিচয়েই বড় হবে। আমি সেই বাচ্চাটার বাবা হবো!”

“সমাজ, পরিবারকে ট্যাকাল দিতে পারবে?”

“পরিবারে আর কেউ বাকি নেই। মা-বাবা তো অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। বড় আপু পরিবার সহ আমেরিকায় স্যাটেল্ড। বরং এই খবরটা শুনলে আপু ভীষন খুশি হবেন। আজীবন কুমার থাকার পণ করেছিলাম! অন্তত এবার তো একটা সংসার হবে!”

ফিক করে হেসে দিলাম আমি। হাসির মাঝেই শুভ ভাই আমায় প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“ডিভোর্স! ডিভোর্স হয়েছে ঐ লম্পটার সাথে?”

“না। প্রেগনেন্ট থাকা অবস্থায় তো ডিভোর্স হয় না! তোমাকে হয়তো আরো ৭/৮ মাস অপেক্ষা করতে হবে!”

“তাহলে আমি ডিভোর্সের পরেই দেশে ফিরব। হুট করে এসে পল্লবীকে চমকে দিবো। আমার আসার ব্যাপারে পল্লবীকে এখনই কিছু অবগত করিস না। এমনিতেই মাঝে মাঝে আমি পল্লবীকে কল করে দু, চার মিনিট কথা বলে নিবো। পল্লবীর নাম্বারটা আমার হোয়াট’স এ্যাপে সেন্ড করে দিস। আর আমি ও তোর নাম্বারটা সেইভ করে নিচ্ছি!”

“৭/৮ মাসের আগে তুমি দেশে ফিরবে না?”

“নাহ্। একেবাবে সবকিছু গুছিয়ে এরপর দেশে ফিরব। পল্লবীকে পাওয়া হয়ে গেলে ভাবছি আর ইতালী ফিরব না। দেশেই স্যাটেল্ড হয়ে যাবো!”

“দেট’স গুড। আমি ও তাই ভাবছিলাম।”

শুভ ভাই কেমন যেনো সংকোচবোধ করে বললেন,,

“পল্লবীর সাথে একটু কথা বলিয়ে দিবি?”

“এখনি না। কয়েকটা দিন যাক এরপর। আসলে আপু এখন একটা শোকের মধ্যে আছে তো! তোমার কন্ঠস্বর শুনলেই আরো গভীর শোকে তলিয়ে যাবেন। অতীতের ঘাঁ তাজা হবে। তাই আমি আপুকে কয়েকটা দিন সময় দিতে চাইছি। একটু শক্ত পোক্ত হোক!”

“বুদ্ধি খুলেছে দেখছি তোর। আগে তো সামান্য চিঠিটা ও পল্লবীর হাতে ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছে দিতে পারতি না। হয়তো আঙ্কেল দেখে নিতেন, নয়তো আন্টি। প্রতিবার আমাকেই ফ্যাসাদে পড়তে হতো!”

শুভ ভাইয়ার সাথে আমি ও সমস্বরে হেসে উঠলাম। কিছু সময়ের মধ্যে শুভ ভাইয়ার সাথে কথা শেষ করে আমি প্রফুল্ল মনে ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিতেই আহনাফ রুদ্রমুর্তি ভাব নিয়ে ছাঁদের দরজায় আমার পথ আটকে দাঁড়ালেন। আকস্মিকতায় রীতিমতো আমি ভড়কে উঠলাম। গাঁ জ্বলা ভাব নিয়ে আহনাফ তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললেন,,

“কার সাথে কথা বলছিলে তুমি?”

দারুন হিমশিমে ভুগছিলাম আমি। শুভ ভাইয়ার কথা কি এক্ষনি আহনাফকে জানানো টা ঠিক হবে? যদি ও বলি বিষয়টা শুনে আহনাফ আবার মাইন্ড করবেন না তো? নিজের ভাইয়ার হয়ে আওয়াজ তুলবেন না তো? যাই হোক, আওয়াজ তুললেই বা আমার কি? এই মুহূর্তে আমার কাছে আমার আপুর সুখ খুব বেশি অত্যাবশকীয়! শক্ত কন্ঠে আমি আহনাফকে বললাম,,

“শুভ ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম!”

“শুভটা কে?”

“আমার দুঃসম্পর্কের খালাতো ভাই।”

“খালাতো ভাইয়ার সাথে রাতের আঁধারে এভাবে নির্জনে ছাঁদে এসে কথা বলার কি দরকার? আমার সামনে, বাড়ির সবার সামনে দাঁড়িয়ে ও তো কথা বলা যায়!”

“সবার সামনে সব কথা বলা যায় না। তাই আমি ও বলতে পারি নি। মাফ করবেন আমায়!”

আহনাফ এক রোঁখা ভাব নিয়ে বললেন,,

“আমি শুনতে চাই তুমি তোমার খালাতো ভাইয়ার সাথে কি কথা বলেছ! এক্ষনি, এই মুহূর্তে শুনতে চাই। আর তুমি বাধ্য, আমার কাছে জবাবদিহি করতে!”

আমি ও রগচটা ভাব নিয়ে জিদ্দি কন্ঠে বললাম,,

“তাহলে শুনুন। শুভ ভাই সেই ১৮ বছর বয়স থেকে আমার আপুকে ভালোবাসতেন। পাগলের মতো ভালোবাসতেন। আপুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত রেখেছিলেন। তবে আত্নীয়দের মধ্যে আব্বু সম্পর্ক বাড়াতে চান নি বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ঐদিন শুভ ভাইকে। আর আজ যখন শুভ ভাই আপুর বর্তমান সূচনীয় অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারলেন তখনই রাজি হয়ে গেলেন আমার আপুকে অন্তত এইবার নিজের করে নিতে। তাদের অপূর্ণ ভালোবাসাকে পূর্ণ করতে!”

আমার বলা কথা গুলো আহনাফ হয়তো হজম করতে পারলেন না ঠিক। কুঁচকানো মুখমন্ডল দেখে ভালোই আঁচ করতে পারছি আমি। কপালের ভাঁজে প্রখর রাগ ফুটিয়ে আহনাফ আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“তাহলে আমার ভাইয়ার কি হবে?”

“আপনার ভাইয়ার কি হবে এই বিষয়টা আমি বা আমার পরিবারের ভাববার বিষয় না। আপনার ভাইয়ার কি হবে সে বিষয়ে আপনি এবং আপনার পরিবার ভাববেন!”

“প্রেগনেন্ট অবস্থায় ডিভোর্স দেওয়া যায় না। আর ইউ নো দেট?”

“ইয়েস আই নো। বেবি ডেলিভারির পর আপনার আসামী ভাইয়ার কাছে ডিভোর্স পেপার পৌঁছে যাবে। শুভ ভাই এখনি আপুকে বিয়ে করতে চাইছেন না!”

আহনাফ কেমন যেনো বেদনাহত কন্ঠে আমায় প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“আমার ভাইয়া এই শোকটা নিতে পারবেন তো?”

“সেটা ও আমাদের দেখার বিষয় না। পাপ করেছেন আপনার ভাই। চরম পাপ করেছেন। পাপমোচন তো আপনার ভাইকে করতেই হবে!”

আহনাফের আঁখিপল্লবে উদয়স্ত জল চিকচিক করছে। হাজার হলে ও তো ভাই। কষ্ট তো হবেই। কেনো জানি না আমার মনটা ও ব্যথীত হয়ে উঠল। মলিন মুখে আমি আহনাফের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চশমার ফ্রেমটা হাত দিয়ে খুলে উনার আঁখিপল্লবে ভাসমান জল গুলো আদুরে হাত দিয়ে মুছে পা উঁচিয়ে আহনাফের কপালের মাঝ বরাবর একটা চুমো এঁকে দিলাম। অতঃপর আহনাফের বুকে মাথা ঠেঁকিয়ে আহনাফকে আষ্টেপৃষ্টে ঝাপটে ধরে মন্থর কন্ঠে বললাম,,

“চিন্তা করবেন না আপনি। আর যাই হয়ে যাক, প্রভা কখনো আহনাফকে ছাড়বে না। এতোই সহজ নাকি? ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে দেওয়া? আপনার ভাইয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবে ঠিকি। তবে আপনার বা আঙ্কেলের সাথে কখনো আমাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবে না!”

আহনাফ ও আমাকে শক্ত ঝাপটে ধরলেন। কিঞ্চিৎ সময় মৌণ থেকে আচমকা আহনাফ কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন,,

“কেনো জানি না, ভাইয়ার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে প্রভা। আমি জানি আমার ভাইয়া পাপ করেছেন। শুধু পাপ না, ঘোর পাপ করেছেন। তবু ও ভাইয়ার জন্য আমার হৃদয় কাঁদছে। রক্তের সম্পর্ক হয়তো এজন্যই এতোটা শক্তিশালী। এই সম্পর্কের কাছে পাপীকে ও নিষ্পাপ মনে হয়। ভাইয়াকে এই মুহূর্তে আমার নিষ্পাপ ই মনে হচ্ছে!”

“এবার দেখুন না, পাপী ভাইটার জন্য ও আপনার এতোটা হৃদয় কাঁদছে, এতোটা কষ্ট হচ্ছে। আর আমার আপু? আমার আপু তো সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলেন, নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ। আপুর জন্য আমার হৃদয় কাঁদবে না বলুন? কষ্ট পাবো না আমি? সেই কষ্ট থেকেই তো আমি আপনাকে ছোট বড় অনেক কথা বলে ফেলি। আপনাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ও বলে ফেলি মাঝে মাঝে। এর জন্য আপনি মনে কষ্ট পাবেন না প্লিজ। দিন শেষে কিন্তু আপনি আমারই। আমি ও আপনার। তাই নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি, দ্বন্ধ রেখে কোনো লাভ নেই। আমরা দুজনই দুজনের জায়গায় ঠিক আছি!”

“ভালোবাসি প্রভা। ভীষষষণ ভালোবাসি। খুব শীঘ্রই আমি তোমাকে পুরোপুরি নিজের করে পেতে চাই!”

“পাবেন। অবশ্যই পাবেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিটা একটু স্বাভাবিক হয়ে নিক। ধৈর্য্য ধরুন। ভালো সময় নিশ্চয়ই আসবে।”

“ভাইয়ার ডিভোর্সের কথা শুনলে আব্বু ভীষন কষ্ট পাবেন!”

“সাময়িক কষ্ট ঠিকই পাবেন। তবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই আহনাফ। শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে হয় এই যা!”

আহনাফ আর কথা বাড়ালেন না। ছোট বাচ্চাদের মতো একাত্ন হয়ে আমাতে মিশে আছেন। আমি ও মুদ্যু হেসে আহনাফকে যতোটা সম্ভব আঁকড়ে ধরে আছি। মাথা গরম হয়ে গেলে অনেক রুড বিহেভ করি মানুষটার সাথে। অনুতাপ বোধ তো আমারো কাজ করে। সেই অনুতাপ বোধ থেকেই তো মানুষটাকে এইভাবে ঝাপটে ধরা!

__________________________________________

ঘড়িতে রাত ১০ টা বেজে ৩০ মিনিটের কাছাকাছি। খাবার টেবিলে আমি, আম্মু এবং আব্বু প্লেইটে খাবার নিয়ে খাবার নাড়াচাড়া করছি। আপুকে আম্মু একটু আগে খাইয়ে, দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে এরপর নিজে খেতে এসেছেন। এক লোকমা ভাত মুখে তুলে আমি বিষন্ন মনে বসে থাকা আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,

“আব্বু। তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।”

আব্বু গুরুগম্ভীর কন্ঠে বললেন,,

“কি কথা?”

কোনো রকম সংকোচবোধ ছাড়াই আমি অনর্গল কন্ঠে বললাম,,

“শুভ ভাইয়ার কথা!”

আব্বু থমকালেন। ফট করে চোখ জোড়া তুলে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে আমার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। আমি স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম,,

“শুভ ভাইয়ার সাথে আজ আমার কথা হয়েছিলো!”

“কি কথা?”

“শুভ ভাই ৭/৮ মাস পর দেশে ফিরবেন!”

“হ্যাঁ, তো? আমি বা আমরা কি করতে পারি?”

“তুমি নিশ্চয়ই ভুলে যাও নি আব্বু। শুভ ভাই আপুকে ভালোবাসতেন!”

“হ্যাঁ অতীতে। এখন বর্তমান চলছে। ৭/৮ মাস পর ফিরবে মানে ভবিষ্যত!”

“অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত এই তিন কালচক্র ধরেই শুভ ভাই আপুকে পূর্বের ন্যায় উন্মাদের মতো ভালোবেসে আসছে, আসছেন এবং ভবিষ্যতে ও আসবেন! এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই!”

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here