তোমাতে ❤ পর্ব ৭+৮

#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ৭/

ইদানিং ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটে। স্মৃতি ধারালো। মূখস্তের বই তাই কম পরিশ্রমে শেষ হয়। গত মাসগুলোর সময় নষ্ট করিনি। প্রতিদিন দুই ঘন্টা আর প্রয়োজনীয় সময়টুকু বাদে বইয়ে মুখ গুজে থেকেছি। জিসান ভাইয়ের মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার ইচ্ছে। প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। যখন আলসেমি লাগে তখন সেদিনের জিনিয়া মেয়েটার কথাগুলো মনে করি। হিংসা, জেদ, হারানোর ভয়ে আলসেমি চলে যায়। নতুন উদ্যমে পড়তে থাকি। এত বদলানোয় মাঝে মাঝে আপু মশকরা করে। বলে, “আমিও রাত ১২টায় ছাদে গিয়ে ভুতগ্রস্ত হব। পড়ার ইচ্ছে চাঙ্গা হয়ে যাবে!” মাঝে মাঝে পড়াকু বলে ক্ষেপায়। ভাইয়া অনুপ্রেরণা দেয়। দিনের ৫টা থেকে ৭টা সময়টা কাটে গড়িমসি করে। বাধা দুঘন্টা জিসান ভাইকে ত্যক্ত করি। তিনি এখন বিরক্ত হন না। বরং নিজে গল্প জুড়েন। জড়তা কেটে যাওয়ায় তিনি কখনো বিস্মিত কণ্ঠে বলেন, “তোকে আমি খুব লাজুক ভাবতাম!” আমি খিলখিলিয়ে হাসি। সেদিনের ঘটনা, নির্দিষ্ট সময়ে বই খাতা নিয়ে উনার রুমে এসেছি। উনি মনোযোগ দিয়ে মোটা বই পড়ছেন। আমি এসেছি খেয়াল করেননি। নয়ত খেয়াল করেও তাকাননি। উনার মুখোমুখী বসে বার কয়েক কাঁশলাম। তিনি বই থেকে মুখ তুলে তাকান, বলেন, “কালকে আমার পরিক্ষা। পড়তে দে।”

বিস্মিত কণ্ঠে বলি, “আপনি তো আমাকে ছুটি দেননি।”

“আমি পড়ব তুই চুপচাপ সামনে বসে থাকবি। আজকাল সারাক্ষণই তো পড়িস। দুই ঘন্টা বসে থাক।”

কথা শেষে আবার বইয়ে মুখ গুজেন। সানন্দে কথাগুলো মেনে নেই। নিজ চেয়ারে বসে উনাকে দেখতে থাকি। টেবিলে ভর দিয়ে দুগালে হাত রাখা। তিনি কিছু সময় পর পর পড়তে পড়তে মুখ তুলে তাকান। চোখাচোখিতে প্রত্যেকবার হেসে মাথা নুয়িয়ে বইতে মনোযোগী হন। খুটিয়ে দেখতে দেখতে পুরনো অভ্যাসটা পেয়ে বসল। মনের তোতাপাখি জোর গলায় বলতে লাগল, “কি হে জিসান, রূপচর্চা ইদানিং বেশি করছিস তাই না? রূপ এমন খুলে খুলে পরছে কেন? দিব্যি আমাকে বসিয়ে পড়ে যাচ্ছিস। একটু এদিকে তো তাকা!”

জিসান ভাই চমকে তাকান। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকেন। আমি ভড়কে যাই। বলি, “কি হয়েছে এভাবে কি দেখছেন?”

“এইমাত্র কি বললি তুই?”

আমতা আমতা করতে থাকি। বলি, “কি বলেছি? কিছুই তো বলিনি!”

“ঠাটিয়ে চড় লাগাব। তুই এইমাত্র আমাকে তুই তোকারি করলি!”

আমি থ বনে তাকিয়ে থাকি। খাপছাড়া পাগল পাগল বোধ করি। উনার তীর্যক চোখে এদিক ওদিক তাকাই। বলি, “কথাগুলো কি সত্যিই আমার মুখ দিয়ে বেরিয়েছে নাকি আপনি কল্পনা করলেন?”

তিনি শীতল দৃষ্টিতে তাকান। ধমকে বলেব, “যা রুম থেকে বেরো। থাকতে হবে না তোর!”

করূণকণ্ঠে বলি, “মুখ থেকে ভুলে ভুলে জোরে বেরিয়েছে। এমন করেন কেন?”

উনার দৃষ্টি কঠিন হয়, “তাহলে তুই মনে মনে আমাকে তুই তোকারি করিস?”

এমন একটা অবস্থা! অস্বীকারও করতে পারি না। স্বীকারও করতে পারি না। দুটোর মাঝখানে থেকে শুধু গাল ফোলাই। তিনি বাজখাই ধমকে উঠেন, “এক্ষুনি রুম থেকে বেরিয়ে যা!”

এই কয়েকদিন ধমক, চোখ রাঙানো না দেখায় গায়ে লাগল ব্যাপারটা। ছোট্ট একটা বিষয়ে এত সিনক্রিয়েট করার কি আছে! রেগে আমিও উঠে দাঁড়াই। উনার দিকে আর তাকাই না। রেগে জোর পায়ের শব্দ তুলে রুম থেকে বেরিয়ে পরি। উনার রুম অতিক্রম করে ড্রয়িং রুমে যেতে গিয়েও দ্রুতপদে ফিরে আসি। উনি তখনও দরজার দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে। আমাকে ঢুকতে দেখে রেগে গেলেন আরও। কিছু বলছিলেন। সেসব না শুনে কাছে গিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে ধরি। দুহাতে মুখটা তুলে এলোমেলোভাবে সারামুখে ঠোঁট ছোয়াঁতে শুরু করি। গালে ছোট্ট কামড় দিয়ে দূরে সরে দাঁড়াই। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি পাথর হয়ে বসে। কোমড়ে এক হাত রেখে, আরেকহাতে শাসিয়ে বলি, “এটা আপনার আজকের আর সেদিনের শাস্তি! বিনা অনুমতিতে ঐদিন কপালে চুমু খেয়েছিলেন! আর আজকে বাজে ব্যবহারের জন্য কামড়! বহুত অসভ্য আপনি।”

উনার হতভম্ব ভাব কাটার আগেই আবার দ্রুতপদে ফিরে আসি। তিনি হতভম্ব হয়ে আধা ঘন্টা পর কল করেছিলেন। কয়েকবার রিং হয়ে কেটে গেছে। ধরিনি। লাগাতার ফোন করে না পেয়ে মেসেজ করেন, ‘ঝুম, তুই কি ফিরে এসেছিলি আবার?’ দুঃখে, কষ্টে, রাগে ফোনটাই সুইচ অফ করে রাখি। পরেরদিন তিনি চেয়ার কাছে টেনে নিয়ে আদুরেভাবে রাগ ভাঙিয়ে ছিলেন। আমাদের এরকম হাজারো এলোমেলো স্মৃতিদের প্রতিদিন বাধা ঐ দুঘন্টায় একটু একটু করে কুড়াই। স্মৃতির ঝুলি ভারী করি।

এইচএসসি এসে গেল। বই সব শেষ তবু মাঝে মাঝে দুস্বপ্ন দেখি আমি পরিক্ষায় কিছু লিখতে পারি না। লিখতে গেলে দেখি কিছু পারি না। নয় হাতে কলম থাকে না। একদিন দেখলাম আমি মেডিক্যালে চান্স পাইনি। ফিজিক্সেও নাকি ফেল করেছি। এসব স্বপ্নে মাঝরাতে ঘুম থেকে জেগে জিসান ভাইকে ফোন করে কান্নাকাটি করি। তিনি ঘুম জড়ানো কণ্ঠে স্বান্তনা দেন। বোঝান এগুলো অত্যধিক চিন্তার ফলাফল। একসময় ঘুমিয়েও পরি আবার। প্রথম পরিক্ষা এল। বাংলা। প্রথমদিন ভাইয়া, আপু নিয়ে যাবে। রেনু খালাও যেতে চান। আমি নার্ভাসনেসেও হেসে ফেলি, বলি, “ভাইয়া কম পরল না? শাহানা আন্টিকেও সাথে নেই?”

ভাইয়া আমার জন্য কেন যেন চিন্তিত। কথা শুনে, “হু” বলে একবার তাকাল। বুঝলাম কথাটা কানে যায়নি। বুঝে পর জোরেজোরে মাথা নাড়ে, “তুই চাইলে অবশ্যই সাথে নিবি। বলে এসেছিস ও বাসায়?”

আমি সম্মতি দিলাম। ফাইল নিয়ে জুতো পরে বেরলাম। জিসান ভাই সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলেন। চোখাচোখিতে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন। ভেতরটা হঠাৎ কেঁপে উঠে। উনি কি ভাল নেই? তিনি ম্লান হেসে বলেন, “ভাল করে পরিক্ষা দিস।”

উজ্জ্বল হাসলাম। প্রতিউত্তরে বললাম, “আপনি অসুস্থ?”

ভাইয়াও সপ্রশ্ন চোখে তাকিয়ে উনার এককাধ জড়িয়ে ঝাকান। উনার পেটে হালকা ঘুষি মারেন, “তোদের গোষ্ঠীটাই এমন রোগাটে নাকি?”

জিসান ভাই অসম্মতিতে মাথা নেড়ে অপলক তাকিয়ে থাকেন। এই স্থির দৃষ্টিতে মনে হলো অভিমানের চাদর হয়ত টেনে দেয়া। গতকালও তো ঠিক ছিল। ভাবতে বসলাম গতকাল কি বলেছেন। কই ঠিকই তো ছিলেন। হ্যা সপ্তাহখানেক যাবত দেখা হয় না। কিন্তু কথা তো দৈনন্দিন চলছে। হঠাৎ ইচ্ছে জাগল উনার বাইকের পেছনে চড়ে হল পর্যন্ত যাওয়ার। ইচ্ছে ইচ্ছেই রইল। পূরণ আর হলো না। তিনি চলে গেলেন হসপিটালে। আমরা গাড়িতে করে হলের সামনে এলাম। একের পর এক পরিক্ষা হতে থাকে। দেখার সাথে সাথে কথাও কমে আসে। অংক পরিক্ষা পরশু মাঝে দুদিন ছুটি পেয়েছি। অংক করছিলাম ফোন বেজে উঠে তখন। ফোন ধরি। ওপাশের কণ্ঠ আসে, “কি করছিস?”

“পড়ছি।”

“বন্ধ করে ছাদে আয়।”

“পরশু আমার ম্যাথ পরিক্ষা!”

“ঢং করিস না। আজকে সারাদিন পড়েছিস। কাল সারাদিন আছে। পরশু সকালও পাবি। আমি জানি তোর বইগুলো অনেক আগেই শেষ। তাই ঝটপট ছাদে আয়।”

ঘড়ি দেখি। সাড়ে বারোটা। ওড়না নিয়ে বের হই। অন্ধকারে ফোনস্ক্রিনের আলো ফেলে সিড়ি বেয়ে উঠে আসি। উনি বর্ডারের কাছে। এদিক ফিরে দু কনুইয়ে ভর রাখা। হালকা এলিয়ে দাঁড়ানো। আমি ঠোঁটে হাসি নিয়ে এগিয়ে যাই। তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ান। কাছাকাছি হতে দুহাত প্রসারিত করেন। ঝাপ্টে ধরি উনাকে। আমার মুখটা ওপরে তুলে এলোমেলোভাবে মুখের সর্বত্র ঠোঁট ছোয়াতে লাগলেন। এতদিন পর উষ্ণ ছোয়াদের পেয়ে কান্না পেল। সপ্তাহ খানেক ছিলেন না। পরিক্ষার চিন্তা, পড়ার চাপে কথাও ঠিকঠাক হয়নি। হয়ত ঘুমোনোর আগে একবার ক্লান্তকণ্ঠে হ্যালো বলা হয়েছে। ওপাশ থেকে উনার পুরুষালী কণ্ঠটা আসত। প্রচন্ড ক্লান্তিতে মনে হত সুখ ছোয়া পেলাম। চোখ খুলে রাখতে পারতাম না। পরেরদিনও একই কান্ড! তিনি বকতেন না। বরং ওপাশ থেকে চাপা অভিমানের কণ্ঠ আসত। ঠোঁট ছোঁয়ানো শেষে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিলেন। বললেন, “বেশি পড়াকু হয়ে গেছিস। আমাকে পাত্তাই দিস না আর। এমন চলতে থাকলে বিয়ে করে অশিক্ষিত করে রাখব।”

উনার বুকে গাল ঘষে হাসি। বলি, “আপনাকে লোকে ছি ছি করবে। বলবে শাফির বউ শুধু ইন্টার পাস!”

“একদম এই নামে ডাকবি না। জিসান ডাকিস জিসানই ডাকবি।”

উনার বুকে আলতো কামড় বসাই। উনি একহাতে জড়িয়েই আরেকহাতে মাথায় জোরে গাট্টা মারলেন। বললাম, “আপনাকে লোকে শাফি ডাকে তাই ঐ নাম বলেছি। মাথার যুক্তি তারগুলো সব ছিড়ে বসে আছেন।”

“বেশি কথা বলিস।”

“আর কতক্ষণ জড়িয়ে থাকবেন? এবার ছাড়ুন!”

“সারাক্ষণ রাখব। তোর কি? পারিস শুধু বই মূখস্ত করতে, আর ফোন দিয়ে হ্যালো বলার পর বেহুশ হতে। গ্রামে গেছি কখন পৌছলাম, খেয়েছি কিনা, কবে আসব কোন প্রশ্ন নেই। চোখের আড়ালে গিয়েছি তাতেও আক্ষেপ নেই। সত্যি করে বল টাইমপাস করছিস কিনা। যদি সত্যি হয় তোকে জ্যান্ত কবর দিব!”

আমি মাথা নেড়ে না করি। তিনি নিশ্চুপ। চোখ জোড়া আমাতে নিবদ্ধ। মায়াভরা কণ্ঠে একসময় বলেন, “এ কদিন প্রচুর মিস করেছি তোকে। তুই খবরই নিসনি আমার।”

পায়ের পাতায় উঁচু হয়ে উনার নরম চুলগুলোকে এলোমেলো করে দেই। এক কান ধরে বলি, “পড়ার চাপ ছিল খুব। সরি।”

তিনি মুগ্ধকরা হাসিটা দিলেন। হাতটা মুঠোয় নিয়ে কথা বলতে বলতে ছাদের কর্ণারে রাখা বেঞ্চিতে নিয়ে এলেন।

“এটা এখানে কোত্থেকে?”

“আনিয়েছি।”

বিস্ময়ে তাকাই। বলেন, “চটপট বসে যা। এতদিন খোজ নিসনি এখন সেবা কর আমার।”

না বুঝে বসে গেলাম। বেঞ্চটা এমনি বেঞ্চ থেকে একটু মোটাসোটা আর লম্বা। প্রথমে মাঝখানে বসে ছিলাম। সেখান থেকে সরিয়ে একবারে কর্ণারে বসালেন। পা গুটিয়ে বসেছি। কোলে মাথা রেখে তিনি সটান সুয়ে পরেন বেঞ্চটায়। বড় বেঞ্চ। তবু উনার পা বেরিয়ে। কোমড় জড়িয়ে ধরলেন দুহাতে। কেঁপে উঠলাম। বলেন, “মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দে।”

কথা পালন করতে থাকি। নরম চুলগুলো হাতের ভাজে নিয়ে হালকা টেনেও দিচ্ছি। তিনি একসময় সোজা হন। ওপরে মুখ তুলে বলেন, “গ্রামের চাঁদনী রাত দেখেছিস কখনো?”

মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে অসম্মতি দেই। তিনি আমার একহাত বুকে জড়িয়ে ধরেন। বলতে থাকেন, “গ্রামের চাঁদনী রাত অপূর্ব! গ্রামে বাসার ছাদ থেকে যখন আশপাশে তাকাই সাদাটে আলো আধারির খেলাটা দারূণ লাগে। মনটা একটুতে ভাবুক হয়। আফসোস হয়, ‘ইস, মনের মানুষটা থাকলে!’ মন চায় মুগ্ধতামাখা এই সৌন্দর্য বাধাই করে রাখি। ক্যামেরায় তখন আশপাশ ভাসে না। যদি ভাসত যদি ক্যামেরায় সম্পূর্ণ এলাকা বন্দি করা যেত আমি বন্দি করে নিয়ে আসতাম তোর জন্য। আমার অনেকদিনের ইচ্ছে তোকে সাথে নিয়ে চাঁদনী রাতে ছাদে বসে থাকার।”

“আমার না আঠারো হয়ে গেছে চলুন বিয়ে করে ফেলি।”

সশব্দে হাসেন, “লোভ দেখাস না রে। এমনিই কবে পড়া শেষ হবে সে আশায় মুখিয়ে আছি!”

“আপনার আর কি চিন্তা। পড়া শেষ করবেন আর কলেজ টুকে নিবে আপনাকে!”

“বললেই হলো। নাও নিতে পারে।”

“এমন যুক্তিহীন কথা বলবেন না তো। আমি খালার থেকে শুনেছি। আপনাকে ওখানেই জয়েন করতে দেয়ার সম্ভবনা আছে।”

“আমি চাকরি পেলেই তোকে বিয়ে করব। দিবে তোর ভাইয়া?”

কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম, “না মনে হয়। মামার এতে ঘোর নিষেধাজ্ঞা। পড়া শেষ নাহলে বিয়ে করা যাবে না।”

“গাধা পরিবার তোদের!”

ছোট্ট এক শ্বাস ফেলি। তিনি হাতের উল্টোপিঠে আর পাতায় একবার ঠোঁট ছোঁয়ান, বলেন, “তোর অংকে কোন সমস্যা নেই? থাকলে কালকে চলে আয় আমাদের বাসায় আমি বুঝিয়ে দিব।”

ঠোঁট টিপে হাসি। বলি, “আপনি সামনে থাকলে আমার পড়ায় মন বসবেনা না। তাছাড়া অংকে কোন সমস্যাই নেই আমার। সবশেষ শুধু আরেকবার চোখ বোলানো।”

তিনি মুখ বেকান, “আরে আছে। তুই বাসায় গিয়ে দেখিস। আর আমার সামনে মনোযোগ না বসলে কার সামনে বসবে ইফাজের সামনে? মেরে ভুত করে দিব।”

আমি সশব্দে হাসতে থাকি। তিনি মুখ তুলে তাকিয়ে থাকেন। বাচ্চাদের মতো জেদধরা কণ্ঠে বায়না করার মতো বলেন, “সাদ ভাইয়ের পরশু মিটিং নেই? তোর ভাইকে জোর করে মিটিং গছিয়ে দিবি তো। পরশু আমার বাইকে যাবি।”
#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ৮/

ভোর নাগাদ ছাড়লেন জিসান ভাই। তখন সদর দরজা খুলে ঢুকেছি সবে। মুখোমুখী হলাম মিশেল আপুর। আপু ডাইনিং টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে পানি খাচ্ছিল। আমাকে দেখে দৃষ্টি প্রথমে বিস্মিত হলো। এরপর সুচালো। ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম।

“কই গেছিলি?”

মস্তিষ্ক যুক্তি হাতড়ায়। বিশ্বাসযোগ্য কিছু পায় না। যেগুলো আসছে সেগুলো নেহাত অযৌক্তিক। আমার কাছেই সেগুলো উটকো, অবাস্তব। বোকা বোকা চেহেরায় বলি, “ছাদ থেকে।”

আপুর মুখে নিত্যদিনকার বিরক্তি, “তোর না পরিক্ষা! এত রাতে প্রেম করতে যেতে হয়! সপ্তাহ খানেকও সবুর হয় না! যা, রুমে যা।”

থ হয়ে তাকিয়ে থাকি। জিজ্ঞেস করি, “তুমি জানো?”

আপু নিজের রুমে যেতে যেতে একবার পেছনে তাকায়। নিতান্ত অবহেলায় বলে, “তোর এইসব রেনু খালা পর্যন্ত জানে। ভাইয়াও হয়ত আঁচ করে কিছু।”

চোখ খিচে হাসি। মাথা নিচু করে দ্রুত রুমে এসে পরি। আপুর জায়গায় খালা বা ভাইয়া থাকলে কি হত? শিরশিরানো অনুভূতি হলো। নিসন্দেহে ভয়ানক অস্বস্তির হত। আপুটা জাদরেল হলেও সুইট আছে।

উঠতে বেশ বেলা হলো। রেনু খালা টেনেটুনে উঠালেন। ঠোঁট উল্টে আরেকবার সুয়ে পরি। তিনি শক্ত হাতে আবার টেনে বসান। উনার চোখে-মুখে অসন্তোষ। সকাল থেকে ঘ্যানঘ্যানিয়ে যাচ্ছেন। অতিষ্ঠ হয়ে উঠে পরি। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছি। দেখি তিনি তেলের বোতল, চিরুনি নিয়ে বসে আছেন। মুখ বেকালাম। তিনি হাসেন, “চুলের কি ছিড়ি কইরা রাখছ? ঘুমানোর সময় চুল বেণি করবা না?”

এলোচুলেই উনার কাছে এসে বসি। বলি, “আজকে না দেই। কালকে দিয়ে দিও।”

খালা মাথা দুপাশে নাড়েন, “না বেশি সময় লাগব না। কতমাস তেল দেও না? চুল লাল হইয়া গেছে!”

করূণমুখে বলি, “কিন্তু খালা আমি গতকাল মাত্র শ্যাম্পু করেছি।”

“তাতে কি হয়ছে? পরিক্ষা দেও এখন প্রতিদিন তেল দিবা। মাথা ঠান্ডা থাকব।”

উনার যুক্তিগুলোর কাছে এবারও হার মানি। ফ্লোরে বসে যাই। তিনি মাথা সরাসরি খাটে বসেন। যত্ন করে তেল দিতে থাকেন। গাল ফুলিয়ে ভাবি তেল চিটচিটে মুখে জিসান ভাইয়ের সামনে যাব কিভাবে? ছোট্ট এক শ্বাস ফেলি। পরিক্ষার জন্য নিত্যদিন দেখা হয় না এটাই ভরসা। খালা তেল দেয়া শেষে মাথা মাসাজ করে দিলেন। চুল টেনে বেণি করতে করতে বলেন, “আম্মা শাফিরে অনেক ভালবাসে না?”

চমকে স্থির হয়ে যাই। খালা মুখ ঘুরিয়ে নিজের দিকে নিলেন। থুতনি দুহাতে নেড়ে দিয়ে বলেন, “লজ্জা পাইতেছ আম্মা? আমারে আর লজ্জা কিসের! তোমারে আর মিশেলরে লেংটা কাল থেকে বড় করছি।”

লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে অপ্রস্তুত হাসি। তিনি আপন মনে বলেন, “পোলাডা কিন্তু আসলেও ভালা। ঐরাম সুন্দর পোলাই তোমার লগে যায়। দুজনরে ভালা মানাব।”

অপ্রস্তুত বিভ্রান্তিতে চোখ খিচে বসে থাকি। তিনি যত্ন করে বেণি করলেন চুলে। জিসান ভাইয়ের একগাদা সুনাম করলেন। কোন এক বিশেষ কারনে তিনি জিসান ভাইকে শুরু থেকে পছন্দ করেন। সুনামের শেষে প্রত্যেকবার বলেন, ‘আমি খোজ খবর নিয়েছি।’ তিনি শব্দ করে হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে যান। আমি তবু বসে থাকি। ভাবতে বসি আজ মা বেঁচে থাকলে কি একই কথা বলতেন? হয়ত না। অথচ এই মানুষটা! আমাদের জন্য নিজের জীবনটাই যেন উৎসর্গ করেছেন। বিয়ে করেননি। গ্রামে বেশি একটা যান না। আমাদের সুবিধার্থে প্রতিটা ক্ষণ নিয়োজিত। রক্তের সম্পর্ক নেই। তবু আমরা উনার কত আপনার।

একটানা পড়ছি। আপু ভার্সিটি থেকে এসে একবার ঢু মেরে ছিল। খাওয়ার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ডাকতে এল। পড়া থেকে উঠিনি। আপুর পর রেনু খালা আসেন। পরে আসব বলেও উনাকে কাটাতে পারি না। উনি যেমন নাছোড়বান্দা আমিও তেমন। অবশেষে প্লেট হাতে রুমে এলেন। বললাম, “রেখে যাও” তিনি গেলেন না। আপু দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে।

“তোর না বই শেষ? বড়মুখে কয়েকদিন বই শেষ গান গেয়ে বেরালি। এখন নাওয়া খাওয়া বাদ দিচ্ছিস কেন? ঢং!”

তীর্যক চোখে তাকাই। আপু মুখ ভেংচে চলে যায়। রেনু খালা প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। এক সময় বলি, “এই অংকগুলো এখন না করলে রাত জেগে করতে হবে। খায়িয়ে দিবা খালা?”

খালা হাত ধুয়ে আসেন। পাশে চেয়ার টেনে বসে যান। তিনি খায়িয়ে দিচ্ছেন। আমি অংক করছি। আপু মাঝে আরেকবার এসে ছবি তুলে যায়।

রাত তখন পড়া শেষ করে চেয়ারে হেলান দিয়েছি সবে। ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠল। হাত বাড়িয়ে বইয়ের তাক থেকে ফোনটা তুলে নেই। জিসান ভাইয়ের নাম নোটিফিকেশন বারে ভাসছে। সাথে মেসেজের কিছু অংশ।

“ঘুমিয়ে গেছিস?”

হাসি ফুটল ঠোঁটে, লিখলাম, “না। ঘুমাব এখন। আপনি?”

“তোর জন্য উড়ে গেছে। হসপিটাল থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছি তবু ঘুম আসছে না।”

“কি করলাম আবার?”

তার উত্তর দিলেন না, উলটো লিখলেন, “বারান্দার দরজা খুলে রাখিস।”

“না।”

“আশ্চর্য না জেনেই বলে দিলি না!?”

কিছুক্ষণ অসহায়মুখে ফোনস্ক্রিনে তাকিয়ে থাকি। আরেকবার বইয়ের দিকে তাকাই। টাইপ করি, “আমি ভীষণ ক্লান্ত জিসান ভাই। রুমে এসে কি করবেন?”

“আমার কাজ আমি বুঝব। এমন আজব ব্যবহার করছিস কেন?”

“কাল দেখা করবেন। আজকে আমি তেল দিয়েছি।”

“তো? পৃথিবীর আর কেউ তেল দেয় না?”

“দেয়। কিন্তু আমার চেহেরাটা বেশি তেলচিটে লাগে।”

বেশখানিক পর উত্তর দিলেন, “আচ্ছা, আমিও মাথায় তেল দিয়ে আসছি হবে? সারামুখেও মাখব। তবু বারান্দার দরজা খুলে রাখ!”

হতভম্ব হয়ে যাই। সশব্দে হাসতে থাকি। বারোটা। বারোটার ওপরে ঘড়ির কাটা। সময় বারোটা হলেই কি উনার মাথায় ভুত চাপে? ধীরে বসা থেকে উঠে বিছানায় গড়িয়ে পরলাম।

“পারব না। কালকে দেখবেন।”

“না আজকেই! বারান্দার দরজা খুলে রাখ।”

“পারব না। আমি এখন ঘুমাব। আপনিও ঘুমান।”

“দিনদিন পাষাণ হয়ে যাচ্ছিস। আধা ঘন্টায় আসছি। দরজা খুলে রাখবি।”

মুখ ভেংচে কাথা মুখ পর্যন্ত টেনে সুয়ে রইলাম। অপেক্ষা করতে করতে এক সময় ঘুম আসছিল চোখে। মৃদু খুটখুট শব্দে চলে গেল। চোখ মেলে দেখি থাই গ্লাসের ওপাশে জিসান ভাইয়ের অবয়ব দেখা যাচ্ছে। মৃদু হেসে চোখ হালকা খুলে তাকিয়ে থাকি। দরজা খোলা না পেয়ে তিনি বারান্দা লাগোয়া জানলার থাই গ্লাস সরালেন। গ্রিলের ফাঁক গলে হাত বাড়িয়ে কিছুক্ষণ ছিটকিনি ধরার প্রচেষ্টা করলেন। বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হলেন। বিরতি দিয়ে কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থাকেন। মৃদু কণ্ঠে আমায় ডাকেন। আমার দম ফাটানো হাসি পায়। চেপে রাখি। গাল ফুলে উঠে। কাছ থেকে দেখলে নির্ঘাত ধমকে উঠতেন। আবারো চেষ্টা শুরু করেন। একসময় খুট করে খুলে যায় দরজা। বেশ জোরে স্বস্থির শ্বাস ফেললেন। দরজাটা আবার আটকে এগিয়ে আসেন।

“সত্যিই ঘুমিয়ে গেছিস?”

তেমন ভাবেই পরে থাকি। চোখ বন্ধ। মনে হলো তিনি পাশে এসে বসলেন। চুপচাপ বসে থাকেন। ফিসফিসানো কণ্ঠ আসে, “তেল দিলেও তোকে কি মারাত্মক লাগে!”

ইচ্ছে হলো দেখি তিনি সত্যিই তেল দিয়ে এসেছেন কিনা। তিনি কিছুক্ষণ হাত বোলান মাথায়। কপালে গাঢ় করে ঠোঁট ছোয়ান। একসময় তীব্র ফ্ল্যাশ লাইটের আলো মুখে পরে। আকস্মিকতায় চোখ কুচকে পাশ ফিরি। বুকটা ধুকপুক করতে থাকে। চোখ কুচকানো কি ঠিক হয়েছিল? উনি বুঝে যাননি তো? আচ্ছা ঘুমানো মানুষগুলো কিভাবে চোখ কুচকায়? ভাবনার মাঝে মৃদু শব্দে জিসান ভাইয়ের হাসির শব্দ আসে। ইচ্ছে হয় চোখ খুলে হাসির কারন দেখি। তিনি আবার পাশে বসেন। আলতো করে হাত বোলাতে থাকেন মাথায়। একসময় সত্যিই ঘুমিয়ে পরি।

সকাল থেকে উঠে প্রত্যেক অধ্যায়ে চোখ বোলাচ্ছি। দরজায় কড়া পরল। চোখ তুলে তাকাই। ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।

“ঝুম আজকে মিটিং পরে গেছে জরুরি।”

“তুমি না অনেকদিন যাবৎ মিটিং সামলে আমাকে নিয়ে যাচ্ছ।”

ভাইয়ার মুখে কিছু অস্বস্তি ফুটে। বলে, “এই মিটিং সামলাতে পারছি না। আজকের মিটংয়ের বস তেড়া খুব।”

কথাগুলোর সুরে অন্য গন্ধ পাই। দাঁতালো হেসে বলি, “এটা কি অফিসিয়াল মিটিং নাকি নন অফিসিয়াল?”

ভাইয়া উত্তর দেয় না। আমি মাথা নেড়ে ‘ঠিকাছে’ বলি। ভাই কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। বলে, “তুই খুব দ্রুত বড় হয়ে যাচ্ছিস ঝুম।”

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকি। কোন প্রসঙ্গে বলা বুঝলাম না। ভাইয়া প্রসঙ্গ পালটে ফেলে, “রাগ করবি না তো?”

“না। তুমি যাও।”

ভাইয়া চলে যায়। খুশিতে মনটা নেচে উঠে। আহা, বাইকে যাব! জিসান ভাইয়ের সেদিনের কথায় লোভ পেয়ে বসেছে। আমারও ইচ্ছে করছিল বাইকে যেতে। খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছি দেখি রেনু খালা, আপু ঠোঁট টিপে হাসছে। মাথা নিচু করে খেতে থাকি। আপু এক সময় টিপ্পনি কাটে, “খালা আমার সময় কেন এমন হয়নি? আমিও বয়ফ্রেন্ডের সাথে হলে যেতাম!”

খাওয়া থামিয়ে লজ্জা, রাগ দুটোর মিশ্রিত অভিব্যক্তিতে আপুর দিকে তাকাই। আপু সশব্দে হাসতে থাকে। মৃদু মুখ ভেঙাই। খাওয়া তাড়াতাড়ি শেষ করলাম। ফাইল নিয়ে দ্রুত বের হচ্ছি দেখে আপু বলে, “আস্তে, জিসান তোকে ফেলে চলে যাচ্ছে না।”

কথাগুলো গায়ে মাখি না। ফাইল হাতে দ্রুত বেরিয়ে পরি। পেছনে আপু বের হয়। জিসান ভাই বাইকে বসে ছিলেন। এপ্রোন এক হাতে ভাজ করে ধরা। দেখে সহাস্যে তাকালেন। কাছে আসতে হ্যালমেট পরিয়ে দেন। আপু কৌতুকে আবার টিপ্পনি কাটে, “হ্যালমেটও পরিয়ে দেয় বাহ!”

জিসান ভাই বলেন, “কেন তোর মেন্দি তোকে পড়িয়ে দেয় না? ছোট বোনেরটায়” লোভ দিস।”

আপু গাল ফোলায়। জিসান ভাই হাসতে থাকেন। আমি থ হয়ে চেয়ে থাকি। বলি, “মেন্দি!?”

আপু আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে জিসান ভাইকে ব্যাগ দিয়ে বারি মারে। চলে যায় দ্রুতপদে। জিসান ভাইয়ের দিকে তাকাই। তিনি হেসে দুদিকে মাথা নাড়েন। উত্তরটা খোলাশা করেন না।

হলের সামনে এসে বলেন, “আজকেও তুই তেল দিয়ে আছিস। সেই তো সামনে এলি। কাল অমন ঢং করলি কেন?”

উনার চুলগুলোয় দৃষ্টির বিচরণ শুরু হয়। মৃদু হাসিতে বলি, “আপনিও তেল দিবেন বলেছিলেন!”

“আমি জানতাম তুই দরজা খোলা রাখবি না। দুদিকেই লস। তাহলে তেল দিব কেন?”

“মোটেও না আপনি কথার কথা বলেছিলেন শুধু। এমনিতেও আপনি তেল দিতেন না।”

“হলে ঝগড়া করে যাবি নাকি?”

“আলবাত। আপনি ভুল করলে ধরব না? আচ্ছা পরিক্ষা শেষেও কি আপনি নিতে আসবেন?”

তিনি মধুর হাসেন। সম্মতিতে মাথা নাড়েন। বলি, “ভাইয়া বলেছে?” এবারও সম্মতি দেন। বিস্মিত হই। বলি, “ভাইয়ার সত্যিই মিটিং আছে তাহলে? এতক্ষণ?”

জিসান ভাই এবার হাসতে থাকেন। বলেন, “নেহা আপু আটকে রাখবে।”

সুচালো হলো আমার দৃষ্টি, “আপনি জানেন কিভাবে?”

তিনি উত্তর দেন না। মিটিমিটি হেসে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন। গাল ফুলিয়ে বলি, “আসছি।”

তিনি সম্মতি দেন। আমি হলের গেটের কাছে চলে যাই। একবার পেছনে ফিরি। তিনি ইশারায় ভাল মতো পরিক্ষা দিতে বললেন।

নিসার হাত ধরে ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে বেরিয়ে আসছি। গেটের সামনে গার্জিয়ানদের ভিড়ে মাঝে মাঝে ধাক্কাধাক্কিও হচ্ছে। ভিড় ঠেলে বেরিয়ে লম্বা শ্বাস নেই। নিসা তার মা’র কাছে চলে গেছে। দূরে জিসান ভাইকে একা দাঁড়িয়ে। দৌড়ে এলাম।

“কেমন হলো?”

“ফাটাফাটি।”

আমার ফাইল নিয়ে নিজেকে বাতাস করতে করতে বলেন, “আমার কাছে পরলে ট্রিপল ফাটাফাটি হত।”

মৃদু হাসলাম। প্রশ্ন দেখে আমার উত্তর শুনছিলেন। নিসাও পাশে এসে দাঁড়ায়। দাঁতালো হেসে বলে, “ভাইয়া এসেছেন যখন আমাকেও বাসায় রেখে আসেন।”

জিসান ভাই একবার তাকালেন ওর দিকে। বললেন, “তোমার না মা আসছে?”

ঠোঁট টিপে হেসে, “তাতে কি হয়েছে? আমি ঝুমের সাথে গল্প করতে করতে গেলাম। মা রিকশায় চলে গেল।”

ওর দিকে তীর্যক চোখে তাকাই। এই মেয়েকে আদতে বোকাসোকা ভাবলেও এ অতি অসভ্য! জিসান ভাই ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলেন, “ঐটা তোমাদের কলেজের মেয়ে না?”

আমরা জিসান ভাইয়ের ইশারা করা দিকে তাকাই। দুজনেই মাথা নাড়ি হ্যা ঐ মেয়েটা আমাদের কলেজের।

“ওদের পেছনে উঠে চলে যাও বরং। আঙ্কেলের চেহেরায় অনেক জেল্লা। ভুড়িতে সরকারি চাকুরে ভাব। কপাল খুলে যাবে তোমার।”

আমি হাসতে থাকি। নিসা গাল ফুলিয়ে বলে, “ঐটা ওর বাবা!”

একই মুখভঙ্গিতে, “তো? উনি সরকারী চাকুরীজীবি। চেনাজানা কত লোক আছে অফিসে। সেখান থেকে কোন একজনকে তোমার জন্য ঠিক করে দিবেন। নয়ত নিজের ঘাড়েই ঝুলাবেন। সমস্যা কি? তুমি হুমায়ূন পড় না?”

নিসা এবার বোকা বনে যায়। মাথা নেড়ে না করে। জিসান ভাই বলেন, “পড়ো এক সময়। উনার ভাল একটা উক্তি আছে, ‘কম বয়সের বোকা বরের চেয়ে বুদ্ধিমান বয়স্ক বর অনেক ভাল।’ সুযোগ পাচ্ছ কাজে লাগাও। একটা সার্বক্ষণিক বান্ধবী পেয়ে যাবে। উঠতে বসতে যাকে বাবু বাবু ডাকা যাবে।”

“তাহলে ঝুমকেও খুজে দিন। আমরা একসাথে বুড়োর সংসার করব।”

জিসান ভাই ধমকে উঠেন, “আমাকে কি বোকা মনে হয়?”

নিসা ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকায়। হাসি চাপিয়ে আমি ওদের দেখতে থাকি। নিসা হ্যা না দুটো দিকেই মাথা নাড়ে। কাঁদোকাঁদো মুখে বলে, “আমি তো মজা করতে এসেছি শুধু।”

~চলবে❤️

[🤧কি লেখলাম নিজেরই খাপছাড়া লাগে। নেক্সট ভাল করে দেয়ার চেষ্টা করব।]
~চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here