তোমাতে_বিভোর_আমি পর্ব ১

#তোমাতে_বিভোর_আমি
#Sumaiya_Moni.
#Part-1.

-“প্লিজ আম্মু আমাকে একবার যেতে দেও।আমি কথা দিচ্ছি আর কোনোদিন ও যাব না।আমার ফ্রেন্ডরা অনেকদিন ধরে রিকুয়েস্ট করছে আমাকে। প্লিজ আম্মু!”মিহিতা করুন স্বরে ওর আম্মুকে বলল।

-“বেশি কথা বলিস না খেতে চল। তোর বাবা শুনলে রাগ করবে।”জাহানারা বেগম কঁড়া গলায় বললেন কথাটা ।

-“শুনেছি বছরের প্রথম দিন যদি আনন্দে কাটে। তাহলে তারপরের দিন গুলোও নাকি আনন্দেই কেটে যায়(পাম)। আমি কোনো দিনও ক্লাবের পার্টিতে যাই নি। প্লিজ আম্মু যেতে দেও।” মিহিতা আনমনা হয়ে মাথা নিচু করে বলে।

-“না ।” জাহানারা বেগমের সোজা উত্তর।

-“আম্মু প্লিজ।” বেবি ফেস করে করুন স্বরে বলে মিহিতা।

-“মোটেও না! বক বক বন্ধ করে খেতে আয়, আমি গেলাম।”

জাহানারা বেগম উঠতে নিলেই মিহিতা ওর আম্মুর হাত ধরে বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিল। মেয়ের কান্না করা দেখে ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, -“দেখ মা তুই আর মিদুল আমাদেন চোখের মনি। তোদের বাবা একজন সৎ পুলিশ অফিসার সেটা তুই ভালো করে জানিস।তাঁর সততা অনেকের কাছেই বিষ। তাই অনেকেই তার ক্ষতি করার চেষ্টা করে।হয়তো তোদের কেও বাঘে পেলে করবে।তাই তোদের বিনা কারনে বাসা থেকে বেরোনোর পারমিশন দেই না।আমরা চাই না তোদের কোনো ক্ষতি হোক।”

মিহিতা কিছুটা আবেগ নিয়ে বলে উঠে,
-“আম্মু আমি এখন অনেক বড় হয়েগেছি। প্রমিজ করছি সাবধানে থাকবো কোনো কিচ্ছু হবে না।দেখ আম্মু মিম কল দিয়েছে আমি ওদেরকে কথা দিয়েছি।এখন কি বলবো বলো।আর তুমি বলেছিলে আমাকে নতুন বছরে গিফট দিবে। তাই গিফট হিসেবে আমাকে যেতে দেও আম্মুউউউ।” ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার ভান করে বলে ।

জাহানারা বেগম মিহিতার কানটা জোরে টেনে ধরে বলে,
-” ইমোশনাল ব্লাকমেইল কি করে করতে হয়, সেটা ভালো করে বুঝতে শিখেছিস তাই না।”

-“ওহ! আম্মু লাগছে তো,কান ছিড়ে যাবে। পরে আমার বরের দেওয়া কানের দুল পরতে পারব না।”কথাটা বলেই জিব্বায় কামড় দিল মিহিতা।

-“ওরে শয়তান মেয়ে। বরের কানের জীনিস পড়ার চিন্তা ভাবনা করছিস?”কানটা আরেকটু চেপে ধরে বলেন।

-“এবার কান ছিড়েই যাবে। ছাড়ো প্লিজ ।” মোড়াতে মোড়াতে বলে মিহিতা।

জাহানারা বেগম মিহিতার কান ছেড়ে বলে,
-“আচ্ছা, তোকে যেতে দিবো কিন্তু এক শর্তে?”

মিহিতা উত্তেজিত হয়ে বলে,
-“কী শর্ত তারাতারি বলো? ”

-“বোরখা পরে যেতে হবে।”

-“কিহহহহ! বোরখা।” চেঁচিয়ে চোখ বড় বড় করে ওর আন্মুর দিকে তাকায়।

-“হ্যাঁ! বোরখা। এতে চেঁচানোর কি আছে”।

মিহিতা নাক টেনে কান্নার ফেস করে বলে,
-” মা,মম,মামুনি,মাদার,মাম্মি,আম্মু বলছি কি? প্লিজ বোরখা পড়ে না গেলে হয় না। পার্টিতে কেউ কি বোরখা পরে যায় বল? আমাকে দেখলে সবাইতো ক্ষেত বলে হাসাহাসি করবে। সেটা কি ভালো লাগবে বলোতো।”

জাহানারা বেগম একটু ভেবে বললেন,
-“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে হিজাব পরে যেতে হবে।”

-“হিজাব না পরলে হয় না?”

-“তাহলে যাওয়ার দরকার নেই।”

-“এই না না যাব যাব,তুমি যা বলবে তাই হবে। হিজাব পড়েই যাব যাও।”

জাহানারা বেগম চলে যেতে যেতে বললো আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে রেডি হয়ে নিচে আয়,আমি গেলাম। মিহিতা তাড়াতাড়ি মিমকে যাওয়ার কথা বলে রেডি হতে লাগলো।

রেডি হতে হতে ওর পরিচয়টা দেই আপনাদের। মিহিতা জাহান। আদর করে মিহি বলে ডাকে। দেখতে আহামরি সুন্দরি না হলেও। এতটাও খারাপ না। চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে মিহিত। সব সময় হাসি-খুশিতে থাকে আর সবাইকে হাসি খুশিতেই মাতিয়ে রাখে। এবার ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। ওর একটা পিচ্চি ভাই আছে নাম মিদুল। ক্লাস ফাইবে পড়ে। মিহির আব্বু রাজু হোসেন পেশাগত একজন পুলিশ অফিসার। আর ওর আম্মু জাহানারা বেগম একজন হাউস ওয়াইফ,আর পাশাপাশি ওদের দুই ভাই বোন দের গাইড। খুব স্টিক সেটাতো বুঝতেই পারছেন। মিহিতার কলেজের কিছু ক্লোজ ফ্রেন্ড আছে রুহি,মিম,জনি,আবির । ওরা সবাই সেম ইয়ারে পড়ে। ওদের সাথে থার্টি ফাস্ট নাইট উৎযাপন করার জন্য ক্লাবে যাবে মিহি।

মিহি ওরনাটা ঠিক করতে করতে নিচে নামছে। সামনে তাকিয়ে দেখে ওর আম্মু ও’কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।

মিহি চট করে বলে ওঠে,
-“আম্মু আমাকে কেমন লাগছে বলোতো।”

-“মাশ-আল্লাহ আমার মেয়েটাকে একদম পরীর মতো লাগছে।”

-“সত্যি বলছো আম্মু।”

জাহানারা বেগম মিহির কপালে চুমু দিয়ে বলল,
-” হ্যাঁ রে আমার মেয়ে টাকে নুরের মতো লাগছে।আর শোন তাড়াতারি আসিস। তোর বাবা কিন্তু এখনো ঢিউটিতে আছে। দেরি যেন হয় না। আর কোনো প্রকার জামেলা দেখলে সোজা বাসায় চলে আসবি ঠিক আছে।”

“ওকে” বলে ওর আম্মুকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে মিহি।তারপর টেক্সি নিয়ে মিম এর বাসায় চলে আসে। মিমের রুমে গিয়ে দেখে মিম রেডি হয়ে বসে আছে। মিহিকে দেখেই মিম বলে উঠল,
-“কিরে এতক্ষনে তোর আসার সময়ে হলো। আর হিজাব পরলি কেন? পার্টিতে কেউ হিজাব পরে?”

-“আর বলিস না বোরখা পড়ার চেয়ে হিজাব পড়া ভালো।”

মিম ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” মানে।”

-“মানে আম্মু বোরখা পরে আসতে বলছিলো।অনেক বুঝিয়ে শুধু হিজাব বেঁধে আসলাম।”মেকি রাগ দেখিয়ে বলে।

মিম হসতে হাসতে বলল,
-“তাই নাকি তোর আম্মুও পারে।দাড়া ওদেরকে ফোন দিয়ে বলি বাসায় আসতে।আর আমরা চল বাহিরে গিয়ে ওয়েট করি।”

-“ওকে চল।”

বাহিরে এসে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর গাড়ি এসে পড়ে। গাড়ির ভেতরে রুহি,জনি,আবির আগে থেকেই বসা ছিল। আবিরের বাবা গাড়ি সার্ভিসিং এর কাজ করে। তাই গাড়ি ম্যানেজ করতে কোন সমস্যা হয়নি।

রুহি ওদেরকে দেখে বলে,
-“এই তোরা তাড়াতারি আয়। অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

মিহি,মিম দেরি না করে গাড়িতে ওঠে বসে। ভেতরে গিয়ে বসে দেখে জনি,আবির রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিহি আর মিম এর দিকে।ওরা কিছু বলার আগেই মিহি চেঁচিয়ে কান ধরে ‘স্যরি স্যরি’ বলে উঠে। গাড়ি চলতে লাগলো। আবির ড্রাইভ করছে। রাস্তায় কোনো জ্যাম নেই।অন্যসব গাড়ি নিজেদের গতীতে চলাচল করছে। চারিদিকে লাইট এর আলোতে রাস্তাটা দেখতে ভালোই লাগছে। মিহির কাছে ভালো লাগছে । রাতে একা কখনোই বের হয়নি । এই প্রথম বন্ধুদের সাথে বের হলো। মিহি আবির কে জিজ্ঞেস করে,
-” আমরা কোন ক্লাবে যাচ্ছি?”

আবির বলে,
-“ব্লু ক্লাব।”

আবিরে কথা শুনে মিম অবাক হয়ে বলল,
-“বলিস কি সেটাতো অনেক বড় ক্লাব।সেখানে নামিদামি মানুষ আসে তাইনা।”

জনি মুচকি হেসে বড় লোকি ভাব নিয়ে বলে,
-“হ্যাঁ আসে। তাতে কি? আমরা কী তার জন্য যেতে পারবো না?”

মিহি বলে,
-” হুম অবশ্যই যেতে পারবো।”

হঠাৎ আবির গাড়ি থামিয়ে বলে,
-“তোদের কথা হলে এবার নাম আমরা এসে গেছি।”

ওরা দেরি না করে তাড়াতারি নেমে পড়ে।ক্লাবের বাহিরে ছোট ছোট নানা রং এর বাতি লাগানো। সামনে বড় একটি ঝর্না। তাঁর পাশে নানান ধরনের ফুলের গাছ লাগানো। সব মিলিয়ে বেশ চমৎকার ক্লাবটি। আবির গাড়ি পার্কিং করে এসে বলে,
-” কিরে খালি বাহিরের পরিবেশ দেখলে হবে? ভেতরে জাবি না।” বলেই হাঁটা ধরল। ওর পিছু পিছু পা মিলিয়ে মিহি,রুহি,মিম,জনি ও হাঁটছে।

ওরা ভেতরে গিয়ে দেখে লাউড স্পিকার এ‌ গান চলছে।আর কয়েকটা ছেলে মেয়ে ডান্স করছে। মিহির তো গান শুনেই নাচ উঠে গেছে। কিন্তু ভদ্রতা বজায় রাখতে আর নাচল না।আসেপাশে তাকিয়ে দেখে ওরা কেউ নেই! এসেই নাচতে শুরু করে দিছে। শুধু মিহি আর মিম দাঁড়িয়ে আছে। মিম কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিহি বলে,
-” কিরে তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তুইও যা।”

মিম মিহির কথা শুনে মুখে হাসি নিয়ে বলে,
-” দূর, এসেই নাচানাচি ভালো লাগে না। সবেতো আসলাম নাচাবার এখনো অনেক সময় আছে।চল ওই টেবিলে গিয়ে বসি।”

-“ওকে চল।”

ওরা বসার সাথে সাথেই একটা ওয়েটার বয় এসে বলে,
-“কী খাবেন ম্যাম?”

মিহি বলে,
-“দুটো জুস দিন।”

ওয়েটার বয় চলে গেল। কিছুক্ষণ পর জুস এনে টেবিলের উপর রেখে চলে যায়।
মিহি জুস খাচ্ছে আর অবাক হয়ে বলছ,
-“কত বড় একটি ক্লাব! আর কি সুন্দর শুধু দেখতেই মন চায়।”

মিম ও চারিদিকে তাকিয়ে বলল,
-“হ্যাঁ রে তুই ঠিক বলেছিস অনেক সুন্দর।”

জুস খাচ্ছে আর বাকিদের নাচ দেখছে।
এইদিকে জনি,আবির,রুহি নাচতে নাচতে হয়রান হয়ে ওদের টেবিলে এসে বসে।ওদেরকে এভাবে হাপাতে দেখে মিহি মজা করে বলে,
-” কিরে তোদের মোড়া মোড়ি শেষ হলো।”

রুহি মিহির মাথায় টোকা দিয়ে বলল,
-” মিহি কখন তো ভালো মতো কথা বলতে পারিস।”

মিহি মাথা হাত দিয়ে ঢলতে ঢলতে বলল,
-“দূর! এর চেয়ে ভালো ভাবে বলতে পারি না।”

ওদের কথা শুনে জনি বলে উঠল,
-” হইছে তোরা এখন আবার শুরু করে দিস না।”

আবির বলে,
-“কথা বাদ। আসল কথা শোন তোরা কে কি খাবি বল আমি ওয়েটার কে বলে আসি।”

রুহি বলে,
-“এখনিতো মাত্র আসলাম। খেয়ে চলে যাব নাকি? একটু পরে অর্ডার দিলে কী হয়?”

রুহির কথা শুনে মিহি বলে,
-“রুহি ঠিক বলেছে এখনি আসলাম একটু পর না হয় খাবো।”

জনি,আবির অমত করতে লাগলো। শুরু হলো কথা‌ কাটা,কাটি। মিম নিরিহ দর্শকের মতো ওদের কথা শুনছিল। ওদের কথা+গানের মিউজিকের সাথে মিলে বিদঘুটে আওয়াজ সৃষ্টি হয়েছে। মিম সহ্য করতে না পেরে জোরে চিৎকার দিয়ে হাত জাগিয়ে বলে উঠল,
-“ওয়েট!ওয়েট! আমি একটা কথা বলতে চাই?”

ওরা সবাই থেমে যায়। উৎসুক চোখে মিমের দিকে তাকায়।

-“বলে ফেল?মিহি বলে।”

মিম ওর হাতের কায়আঙুল তুলে বলে,
-“আসলে আমি ওয়াশরুমে যাব।”

মিম এর কথা শুনে ওরা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে দেয়।

-“তুইও না আর সময় পেলি না।” হাসতে হাসতে বলল মিহি।”

-“চল আমার সাথে।” রুহি দাড়িয়ে বলল।

ওরা যেতে লাগলো মিহি পিছন থেকে ওদের দু’জনকে ডাক দিলে বলে,
-“এই দাড়া দাড়া আমিও যাব।”

মিহি ভাবে এই সুযোগে ক্লাবটা ঘুরে দেখতে পারবে।
ওরা ওয়াশরুমে যাবার সময় দুটো ছেলে ওদের দিকে বাজে নজরে তাকিয়ে ছিল।সেটা ওরা তিন জনই বুঝতে পারে। ওরা ব্যাপারটা কেয়ার না করে চলে যায়।ভেতরে গিয়ে কাজ শেষ করার পর আবার বাহিরে চলে আসে। তিন জন এক সাথে কথা বলতে বলতে হাঁটছিল । হঠাৎ মিম দাঁড়িয়ে যায়। মিমকে দাড়াতে দেখে মিহি,রুহি দাঁড়িয়ে গিয়ে পিছনে ফিরে তাকায় । ওরা দু’জন দেখে মিম এর ওড়নাটা একটা ছেলে ধরে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলাচ্ছে আর বলছে,
-” কি গো সুন্দরী যাবে যখন আমাদের সাথে দুটো কথা বলে যাও।”

মিম ছোঁ মেরে ওড়নাটা ছাড়িয়ে নিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,
-“তোর এতো কথা বলার সখ হলে ঘরে গিয়ে নিজের আপন মা,বোনের সাথে কথা বল। অসভ্য।”
বলেই চলে আসতে নিলে ছেলেটি খপ করে মিমের হাত ধরে বলে।
-“কি বললি তুই?”চেঁচিয়ে বলে ।

-“কানে শোনেন নাই?” মিম হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে।

-“এই তুই আমাকে অসভ্য বললি কেন?” ছেলেটি বললো”

রুহি সামনে এসে রেগে বলে,
-“অসভ্যের চেয়েও যদি খারাপ কিছু থেকে থাকে তাহলে সেটা আপনি।”

-“কিহ!” ছেলেটি চেঁচিয়ে বলে ।

ছেলেটির চেঁচানো শুনে অন্য এটা ছেলে এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,
-” কি হইছে ফাহিম চেঁচাছিস কেন?”

এর মধ্যে মিম ওর হাত ছাড়িয়ে নেয়।

ফাহিম বলে,
-“আরে দেখ না দোস্ত ,এই মেয়েটার কত সাহস আমাকে অসভ্য বলছে।”

রিপর নামের ছেলেটি বলে,
-” কিছু না করেই যখন অসভ্য হয়েছিস,তাহলে তুই একটু দেখিয়ে দে অসভ্য কাকে বলে।” ফাহিমের উদ্দেশ্যে বলে কথাটা।

ফাহিম নামের ছেলেটি মিমের দিকে এগোতে এগোতে বলে,
-“তাই নাকি সুন্দরী তোমার এত সাহস।”
বলেই আবারও মিমের হাতটা ধরে। মিম ভয়ে পেয়ে যায়। রুহির বিষয়টি ভালো ঠেকছে না তাই মিহিকে তাড়াতারি করে আবির,জনিকে ডেকে নিয়ে আসতে বলে।মিহি দেরি না করে তাড়িঘড়ি করে আবিরদের কছে চলে যায়।

রুহি করুন স্বরে বলে,
-“দেখুন ভাইয়া মিম এর ভুল হয়েছে। ও’কে মাফ করে দিন প্লিজ।”

-“তুই চুপ থাক রুহি। হাত ছাড় বলছি বেশি বরাবারি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ।”চেঁচিয়ে বলল মিম।

-“শুধু হাত ধরেছি বলে বারাবারি হয়েছে ? একটু পরতো আরো কত কিছুই ধরবো তখন কি করবে সুন্দরী?”বলেই পৈচাশিক ভাবে হাসতে লাগলো ওরা তিন জন।

এদিকে মিহি গিয়ে জনি দের সবটা বলে।
মিহির কথা শুনে জনি বসা থেকে দাঁরিয়ে বলল, -“কিহহ।” রাগী কন্ঠে ।

আবির বলে,
-” চল তাড়াতারি।”

জনি,আবির মিহির কথা শুনে দ্রুত মিমদের কাছে আসে। তখনো‌ ফাহিম নামের ছেলেটি মিম এর হাত ধরে বিশ্রী ভাষায় কথা বলছিল ।
আবির ও জনির ওদের বলা কথা শুনে খুব রাগ হয়। তারপরও মাথা ঠান্ডা রাখে। কারণ,ওরা চায় না এখানে কোন জামেলা সৃষ্টি হোক। আবির বলে,
-“দেখুন ভাইয়া ওরাতো বুঝতে পারেনি। ভুল করে বলে ফেলেছে । প্লিজ কিছু মনে করবেন না। ওদের যেতে দিন।” আবিরে কথা শুনে ফাহিম নামের ছেলেটি বলতে লাগলো,
-“অ্যাই তুই কে রে ওর বফ নাকি? যাই হোস না কেন? ও’কে আমাদের কাছে ছেড়ে দিয়ে তোরা চলে যা এখান থেকে। আজ আমরা ও’কে নিয়ে ফুর্তি করব।” বলে আবারও হাসতে লাগলো ছেলেগুলো।

জনি আর রাগ কনট্রোল করতে না পেরে
ফাহিমের নাকে জোরে একটা ঘুষি মেরে দিল। ফাহিম মাটিতে পড়ে যায়। রিপন,রনি এটা দেখে রেগে জনিকে মারতে শুরু করল। আবির গিয়ে ওদের দু’জনকে মারতে লাগলো। শুরু হয় ওদের মধ্যে মারামারি। মিহি,রুহি,মিম ওরা দু’জন ফাহিমের বুকে কিল,ঘুষি,লাথি মেরে যাচ্ছে আর আবির,জনি ওদের দু’জন কে মারছে।ওদের মারামারি দেখে অন্য সব ছেলেমেয়ে রা ভয়ে ক্লাব থেকে চলে যায।ক্লাবের মালিক আর দেরি না করে পুলিশ কে ফোন করে।এদিকে রনি ওদের সাথে না পেরে জনিকে ধাক্কা মেরে দৌঁড়ে ওয়াশরুমের সামনে থেকে ক্লাবের ভেতরে চলে আসে। জোরে জোরে ‘মাহিন,মাহিন’ বলে চিৎকার করে মাহিনের কাছে এসে থামে রনি । মাহিন সোফায় হেলান দিয়ে বসে ওইসকি খাচ্ছিল। রনিকে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় দেখে মাহিন উঠে দাঁড়ায়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোর এই অবস্থা কিভাবে হলো?”

রনির মার খেয়ে অবস্থা খারাপ ছিল বিধায় ফ্লোরে ধুপ করে বসে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলে,
-“দোস্ত আমাকে ও ফাহিম,রিপনকে খুব মেরেছে দুইটা ছেলে। আমি তো পালিয়ে এসেছি। ফাহিম,রিপনকে এখনো মারছে বোধ হয়।”

মাহিন কাঠিন্য স্বরে বলে,
-“হোয়াট? এত বড় সাহস আমার বন্ধুর গায়ে হাত দিয়েছে। চল তোরা আমার সাথে।”বলেই মাহির রনিকে নিয়ে সেখানে যেতে লাগলো।

সেখানে যেয়ে দেখে ফাহিম,রিপনকে মেরে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে দু’জন ছেলে। মাহিন কোন কথা না বলেই জনি ও আবিরকে মারা শুরু করে। এবার আর জনি,আবির মাহিনের সাথে পেরে ওঠে না । কারণ, মাহিন আরো লোক নিয়ে এসেছে। আবির কে মেরে প্রায় রক্তাত করে ফেলেছে।মিম,রুহি ওরা আবির,জনির এমন অবস্থা দেখে কান্না করে দিয়েছে। ভয়তে না পারছে ওদের কাছে যেতে,না পারছে ওদের কিছু বলতে। মিহিরের মাহিনের উপর খুব রাগ হচ্ছে, আর বন্ধুদের জন্য কষ্টও লাগছে। হঠাৎ মাহিনের লাঠির আঘাতে জনি এসে মিহিরের পায়ের সামনে এসে পড়ে। মিহির জনিকে ধরার আগেই মাহিন জনির পিঠে জোরে পারা দেয়। জনি জোরে চিৎকার করে ওঠে। মিহি এটা দেখে রেগে ‘ঠাসসসসসস’ করে মাহিনের গালে সজোরে একটি চড় বসিয়ে দেয়। তারপর মাহিনের বুকে হাত রেখে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। মাহিন দু পা পিছিয়ে যায়। রাগী চোখে মিহিরের দিকে তাকায়। মিহি জনিকে ধরে উঠিয়ে বসিয়ে মাহিনকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ একজন পিছন থেকে বলে,
– “এখানে কী হচ্ছে? ”
পুলিশ এসে পরেছে।

মিহি পিছনে তাকায়। সাথে সাথে হাত-পা কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে যায়। কারণ,ওর বাবা রাজু হোসেন দাঁড়িয়ে আছে পিছনে। রাজু হোসেন সবার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে চোখ বুলাচ্ছে। মিহিকে দেখেই তাঁর রাগ আরো বেশি বেড়ে যায়। মিহির সামনে এসেই গালে ‘ঠাসসস’ করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রাগী কন্ঠে ঝাড়ি দিয়ে বলে,
-“তুমি এখানে কি করছো?”

ওরা মারামারি বন্ধ করে দেয়। মাহিন মিহিরের দিকে ক্রোধ নিয়ে তাকিয়ে ছিল। রাজু হোসেনের চড় দেওয়া দেখে মাহিন কপাল বাজ করে মিহিরের দিকে তাকায়। রাজু হোসেন অন্য এক পুলিশের উদ্দেশ্য করে বলে,
-“জসিম তাড়াতারি এম্বুলেন্সকে খবর দেও। আর ওদেরেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাও।” মাহিনদের উদ্দেশ্য করে বলে।

-“কাজটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না অফিসার।” রাগি দৃষ্টিতে রাজু হোসেনের দিকে তাকিয়ে বলে মাহিন।

রাজু হোসেন মাহিনের কথার উপেক্ষা করে বলে, -“কোনটা ভালো,কোনটা খারাপ সেটা আমি বুঝি। তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে না।”
বলেই মিহির হাত ধরে টানতে টানতে ক্লাবের বাহিরে নিয়ে এসে গাড়িতে বসাল।

মিহি কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,
-“আব্বু আমার কথাটা একটু শোনো ।”
রাজু হোসেন খুব রেগে আছে তাই কিছু বলছে না চুপ করে আছেন।
কিছুক্ষণ পর বাসায় চলে আসে। রাজু হোসেন মিহির হাত ধরে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে জোরে জোরে,’জাহানারা’ বলে ডাকতে লাগলো।

-“জাহানারা কোথায় তুমি?”উচ্চাস্বরে ডাকছে।

জাহানারা বেগম তাঁর রুমে ছিলেন। রাজু হোসেনের ডাক শুনে ড্রইংরুমে আসে । এসে মিহিকে তাঁর সাথে দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারে কিছু একটা হয়েছে। জাহানারা বেগম বলার আগেই রাজু হোসেন বলেন,
-“মিহিকে ক্লাবে যাওয়ার পারমিশন কে দিয়েছে?”

জাহানারা বেগম চুপ করে আছেন। ভয়তে মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। রাজু হোসেন চিৎকার করে বলে, -“কি হলো কথা বলছো না কেন।”

-“না মানে মেয়ে টা অনেক করে বলছিল তাই আমি আর বাঁধা দেইনি।” জাহানারা বেগম নরম স্বরে বলে।

-“তাই বলে তুমি ও’কে ক্লাবে যাওয়ার অনুমতি দিবে ।”ধমক দিয়ে বলেন।
-“জানো সেখানে কি ঘটেছে?”

জাহানারা বেগম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তাঁর স্বামীর দিকে।

-“মনির খানের ছেলে মাহিন খানকে থাপ্পড় মেরেছে মিহি।”

মিহি ছল ছল চোখে রাজু হোসেনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আব্বু আমি শুধু শুধু তাকে থাপ্পড় মারিনি।”

রাজু হোসেন মিহিকে ধমক দিয়ে বলেন,
-“চুপ কর! ক্লাবে যাওয়া টাই তোমার একদমি ঠিক হয় নি। তুমি যানো না মাহিন কে? ওর বাবা একজন এমপি। ওর অনেক পাওয়ার। মাহিনকে আজ লকাপে নিয়ে গিয়েছে। মাহিন নিশ্চয় আমার উপর ক্ষেপে আছে। আমার চাকরি খেতে ১ ঘন্টাও সময় লাগবে না। ” কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো বললেন,
-“তোমার বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ ।”

-“বাবা ।”

-“আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।”
বাবা উপরে চলে গেলেন।

জাহানারা বেগম মিহির হাত ধরে ওর রুমে নিয়ে আসেন। কিছুক্ষণ ওর পাশে বসে সান্তনা দিয়ে তারপর তাঁর রুমে চলে আসে।

বিছানায় শুয়ে আবির,জনির কথা ভাবতে লাগলো। চট করেই ফোনটা নিয়ে আবিরের নাম্বারে ফোন দেয়। কিন্তু ফোন বন্ধ পায় মিহি। জনিকে ফোন দিয়েও ফোন বন্ধ পেলো। মিম,রুহিকে ফোন দিল। এক সাথে তিন জন কনফারেন্সে কথা বলে। আবির,জনির কথা জিজ্ঞেস করলে রুহি বলে ওদের দু’জনকে হাতপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশরা । কিছুটা চিন্তা মুক্ত হয় মিহি। ফোন রেখে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা ভাবতেই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে। ঐ ছেলে গুলো কী নির্মম ভাবেই না মারছিল আবির ও জনিকে। মনে মনে আফসোস করছে,ইশ! কেন যে আজকে ক্লাবে গেলাম। আব্বু কখনো আমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলে নি। কিন্তু আজকে আমাকে থাপ্পড় দিয়েছে ভাবতেই খারাপ লাগছে । কিছুক্ষণের পরেই বাহির থেকে আতশ বাতি ও বোম ফাটানোর আওয়াজ আসতে লাগলো। নতুন একটি বছর শুরু হলো। মিহির মনটা খারাপ হয়ে যায়। নতুন বছরটা এভাবে শুরু হবে সেটা ওর জানা ছিল না। না জানি মিহির জীবনে কোন বিপদ আসতে চলেছে কে জানে?
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here