তোমারই আমি আছি পর্ব ২৫

#তোমারই_আছি_আমি
পর্ব-২৫
Sara Mehjabin

ফারিহার আতঙ্কিত কন্ঠে “আকাশভাইয়া” শব্দটা শুনেই বুকটা ধ্বক করে উঠল। ও এইভাবে আকাশভাইয়ার কথা বলল কেন? ওর কথার ধরনে মনে হলো যেন আকাশভাইয়ার কিছু হয়েছে।

: ফারিহা বল্,, আকাশভাইয়া বলে থেমে গেলি কোন কারনে? বল্ সম্পূর্ণ বল্।

আমি চিৎকার শুরু করলাম।

: ইয়ে মানে সারা অদ্বিতীর ফোন নাম্বার তো নেই আমার। ওর সঙ্গে কথা ছিল একটু। ওরে ফোনটা দিবি? এইজন্য তোরে ফোন দিছি,,বিলিভ মি।

ফারিহার কোন কথাই বিশ্বাস হলো না। ওকে আমি খুব ভালো চিনি। বুঝতে পারছি এমন কিছু ঘটেছে যা ও আমাকে বলতে চায় না। লুকাতে চায়। ওর এই আচরনে আমার সন্দেহ আরো গাঢ় হলো। সত্যি কি আকাশভাইয়ার কিছু হয়েছে? আজকে সকালবেলা তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গিয়েছিল আকাশভাইয়া।

: ফারিহা তুই সত্যি করে বল্ কি হয়েছে। খবরদার লুকাবি না। আমি বুঝতে পারছি কিছু একটা হয়েছে। বল্ প্লিজ বল্। আমার টেনশন হচ্ছে প্রচুর।

আমি আর না পেরে কেঁদে দিলাম।

আমার কান্নাকাটির শব্দে অদ্বিতী আসল। কোনরকমে আমাকে শান্ত করে ফোনটা নিল।

ফারিহা ফোনে অদ্বিতীকে জানাল আকাশভাইয়া হসপিটালে। তাকে গাড়ি থেকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেছে লোকজন; দেখে মনে হয়েছে কেউ খুব জোরে হকিস্টিক দিয়ে মাথার পেছনে মেরেছে। ফারিহা সেই রাস্তাতেই বাজারে যাচ্ছিল বলে দেখেছে। ও-ও এখন আকাশভাইয়াকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানেই আছে।

খভরটা শুনে আমার পায়ের নিচের মাটিটাই যেন সরে গেল। আকাশভাইয়ার দেওয়া শাস্তি মানতে পারি, ও কষ্টে মেরে ফেললেও সহ‍্য করে নেওয়া যায়,,কিন্তু ওর কোন ক্ষতি এটা আমি সহ‍্য করতে পারি না একদম। ইচ্ছা করছে ছুটে এক্ষুনি চলে যাই ওর কাছে। কিন্ত সেই সুযোগ নেই আমার। ওরা কেউ আমাকে নেবে না। শুধু মামনি আর অদ্বিতী বলে গেল, চিন্তা করিস না। আমরা তোকে সব খবর জানাব। আমি যাওয়ার জন্য জোর করলাম না। যাব,,কার জন্য যাব? যার জন্য যেতে চাইছি আমার উপস্থিতি তাকে অসুস্থ করে তুলবে। তার চেয়ে দূরে থাকাই ভালো।

ওরা চলে যাওয়ার একটু বাদেই কলিংবেল বেজে উঠল। আমি তখন নামাজে মোনাজাতে। কাঁদতে কাঁদতে এমন অবস্থা করেছি কলিংবেলের শব্দ শোনার মানসিকতায় ছিলাম না। ছোটবেলা থেকে আকাশভাইয়ার অসুখ আমার সহ‍্য হয় না। ওর একটু জ্বর হলেই ছোটবেলায় পাগল হয়ে যেতাম। মনে হতো আমার দুনিয়াটা ভেঙে কয়েক ভাগ হয়ে গেছে। ও অসুস্থ হলে আমাকে কাছে আসতে দিত না। যদি আমার কিছু হয়! আমি ওর ভয়ে কাছে যাওয়ার সাহস পেতাম না। সারাক্ষণ ওর ঘরের বাইরে থাকতাম। দূরের থেকে দেখতাম ওকে। তারপর ঘুমন্ত অবস্থায় ওর পাশে বসতাম। গুটিসুটি হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতাম। ওর ধীর নিঃশ্বাসের প্রতিটা স্পন্দন অনুভব করতাম। অসুস্থ অবস্থায় ওকে এক মুহূর্তো-ও ছাড়তাম না। কত কষ্ট পাচ্ছে আমার আকাশভাইয়া। ইচ্ছা করছে ওর ব‍্যথা জায়গায় ভালবাসার পরশে সব ব‍্যথা শুষে নিতে। ওর নিস্তেজ হয়ে থাকা হাতটাকে আকড়ে ধরে প্রানের স্পন্দন এনে দেই। আমি তোমার সবচেয়ে বড় ওষুধ। আমি ছাড়া তোমার অসুখ সারতে পারে না।

দরজায় কলিংবেল বেজেই চলেছে। এতক্ষণ ধরে কে নক করছে? আমার নামাজ শেষ। উঠে দরজা খুলে দিলাম। অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে তাকিয়ে রইলাম। তুরাগ এই বাড়ির ঠিকানা কিভাবে পেল? নাকি এই বাড়ির সঙ্গে ওর কোনো সম্পর্ক?

বিস্ময়ভাবটা কাটিয়ে বললাম, আপনি?

তুরাগ: বাইরেই দাঁড়া করিয়ে রাখবে,,,নাকি ভেতরে আসব?

: আসুন।

কথাটা বলামাত্র তুরাগ কিছুমাত্র অপেক্ষা না করে লিভিংরুমে চলে গেল। সোফায় পায়ে পা উঠিয়ে নাচাতে লাগল। মুখে শবি ছাড়া গুনগুন করছে। এমন একটা ভাব যেন এই বাড়িঘর সব তার। ওর আচরনগুলোতে যতটা না বিরক্ত হচৃছি তার চেয়ে বেশি ভয় হচ্ছে। এই লোকটা বরাবরই রহস্যময়। সে আসলে কি চায় কিচ্ছু বুঝি না। আর কেন যেন আমার একটুও সহ‍্য হয় না একে। যদিও ওর ব‍্যবহার অসাধারণ। এতো ভালো ব‍্যবহার আমি কোন মানুষের দেখি নি।

: আরে ভাই আমি ঢুকেছি বলে তুমি তোমার নিজের বাসায় দারোয়ান হয়ে যাবা নাকি? দরজায় দাঁড়িয়ে আছো কেন? আসো,,,ভিতরে আসো।

আমি গিয়ে বসলাম। যদিও ইচ্ছা ছিল না কিছু।

তুরাগ: তারপর বলো আছো কেমন?

আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, আপনি বলুন তো এই বাড়ির ঠিকানা কিভাবে পেলেন? আর আমি এখানে এটাই জানেন কিভাবে?

তুরাগ ফিক করে হেসে ফেলল, আমি সব জানি সারা। তোমার গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটাই। কিন্তু কিভাবে জানি জানতে চেও না। আমি তোমাকে বলব না। শুধু একটা কথা এই মুহূর্তে তোমার যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটা একজনের হেল্প। আমি সেই একজন হতে চাই। আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায়?

আমি: কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

তুরাগ: সারা,,আমি সব জানি। তোমাদের ঘটনা থেকে এটাই মনে হয় এখানে তোমরা কেউ কাউকে ঠকাও নি। সবকিছুই হচ্ছে একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে। আর আমাদের সেই ভুল বোঝাবুঝি-র কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে। রহস‍্যটা জানতে হবে হঠাৎ করে কেন আকাশ দূরে সরিয়ে দিল তোমাকে? আর যদি তোমাকে ছেড়ে চলেই যেতে চাইবে তাহলে তোমাকে বিয়ে করল কেন?

আমি: আপনি,,আপনি এতকিছু জানেন কিভাবে? বলুন কিভাবে জানেন।

তুরাগ: বললাম তো সবটাই জেনেছি। সময় মতো জানতে পারবে। আমি প্রচুর জেদি কিন্তু,, আমি না চাইলে আমার মুখ থেকে একটা অক্ষর ও বের হবে না। হা হা হা।

আমি: আপনি বেরিয়ে যান। এই বাড়ি থেকে এই মুহূর্তে বেরিয়ে যান। আমি কিন্তু সিকিউরিটি ডাকব।

তুরাগ: সারা প্লিজ কুল ডাউন। বোঝার চেষ্টা করো আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই। ক্ষতি চাই না তোমার। তোমার মতো মেয়ে অকারণ সারাজীবন কষ্ট পাক তা চাই না। প্লিজ আমার কথা শোনো আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই।

তুরাগ অনেক বোঝাল। অদ্ভুতভাবে আমি রাজিও হয়ে গেলাম। যদিও লোকটিকে একটুও বিশ্বাস হয় না আমার। তবু কেমন সম্মোহিতর মতো রাজি হলাম দুইজনে মিলে ভুল বোঝাবুঝি-র রহস্য উদঘাটন করব। সত্যি কথা বলতে আমার মনে হাজারো জমানো প্রশ্ন। সেইগুলো র উত্তর পাওয়া জরুরি।

তুরাগ: চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সকাল থেকে না খাওয়া। প্রায় বিকেল এখন। আসো খেয়ে নাও।

বলে তুরাগ একাই কিচেনের দিকে হাঁটা দিল। আশ্চর্য হলি বাড়ির কোথায় কি আছে সব ওর জানা। খুব সুন্দরভাবে প্লেটে খাবার গুছিয়ে আমার পাশে বসল।

নাও খেয়ে নাও,,,

আমার দিকে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিতেই ওর হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে গেলাম,,,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here