#তোমার_নিরব_অভিমানীনি(২১)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
একটা কলের জন্য সকালের মিষ্টি ঘুমটা নষ্ট হয়ে গেল রাদ শাহমাত এর। বিরক্তিতে ভ্রু জোড়া কুঁচকে বসে থেকে কিছুক্ষণ নিজেকে শান্ত করল। তারপর বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে গায়ে যেই পোশাক পরিধান ছিল সেই পোশাকেই রুম থেকে বের হয়ে গেল।
নিচে নেমে কারো সাথে কোন কথা না বলে গটগট পায়ে ঘরের বাইরে বের হয়ে গেল! পিছন থেকে রাহা ভাইয়া বলে ডাকল তবুও তার কোন রেসপন্স পাওয়া যায়নি! আদৌও তার ডাক শুনেছে নাকি শুনেনি কে জানে? তবে নজরাত দৌড়ে পিছন পিছন আসে। যদিও রাদ শাহমাত এর দেখা পায়নি তবে তাকে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যেতে দেখেছে। এই সকাল সকাল তার কি কাজ থাকতে পারে? নজরাত এর অজানা।
নজরাত দাঁড়িয়ে থেকে রাদ শাহমাত এর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। পিছন থেকে রাহা এসে অভিমানী কন্ঠে বলল,
—” ভাইয়া এই সাজ সকালে কোথায় গেল বলো তো? আমি এসেছি দেখেও ভাইয়া আমার সাথে কথা না বলে চলে গেল!
নজরাত রাহার মুখোমুখি হয়ে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে তোলে বলল,
—” তুমি ভুল বুঝো না, উনি হয়ত তোমাকে খেয়াল করেনি। তাছাড়া জরুরি কাজে বেরিয়ে গিয়েছেন সম্ভবত। তুমি ভিতরে এসো, বোরকা খুলে নাস্তা করবে চলো? মণি আপু হয়তো তোমাকে দেখে এতোক্ষণে নাস্তা তৈরি করে নিয়েছেন।
রাহা আর দ্বিরুক্তি না করে বলল, চলো।
তারপর রাহার রুমে আসে তারা। নজরাত খুশি মনে বলল,
—” ভাবীমণি বোরকাতে কিন্তু তোমাকে মা শা আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। আমি কিন্তু তোমাকে বোরকা পরিহিত দেখে পুরাই সারপ্রাইজ হয়েছি এবং ভীষণ খুশি হয়েছি। তোমাকে যেন আল্লাহ তা’আলা এমনি করে সবসময় পর্দা মেনে চলার তৌফিক দান করেন আমীন, সুম্মা আমীন!
রাহা বোরকা খুলে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রেখে নজরাত এর পাশে সোফায় বসে। তারপর খানিকটা লজ্জা রাঙা হয়ে বলে,
—” কি হয়েছে জানো? আমি তো তোমার ভাইয়ার আগে তৈরি হয়ে বসে ছিলাম। পরে তোমার ভাইয়া তৈরি হয়ে নিলে বের হব ঠিক তখন তোমার ভাইয়া গম্ভীর মুখে বলল, এভাবে শাড়ি পরে সেজেগুজে যেতে পারবে না!
আমি তখন কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী করে বললাম, কি বলছো তুমি? দেখ আমার যাওয়াটা ভীষণ জরুরি। প্লিজ এরকম করো না চলো?
তখন তোমার ভাইয়া বলে, কাবার্ডে সাদা রঙের একটা প্যাকেট আছে। প্যাকেট খুলে যেটা দেখবে ঐটা পরে তৈরি হয়ে এসো। আমি নিচে অপেক্ষা করছি।
তারপর, শপিং ব্যাগ খুলে দেখি এই কালো বোরকা!
নজরাত তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলল,
—” দেখলে তোমার প্রতি ভাইয়ার কত্ত কেয়ার?
রাহা লজ্জায় লাল রঙা হয়ে যায়। তারপর কিছু একটা মনে করে বলল,
—” আচ্ছা ভাবীমণি “তি আমো” মানে কি তুমি জানো? এই কথাটা দুই দিন তোমার ভাইয়ার মুখ থেকে শুনেছি। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না।
নজরাত এক্সাইটেড হয়ে বলল,
—” আলহামদুলিল্লাহ। তুমি এটা গুগল সার্চ করে দেখ তাহলে বুঝতে পারবে।
—” আচ্ছা দাঁড়াও এখনি দিচ্ছি।
তারপর পার্স থেকে ফোন বের করে সাথে সাথে গুগল সার্চ করে যা দেখল তাতে রাহার চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। হাঁ করে মুখে হাত চাপা দেয় রাহা। এদিকে নজরাত হেসে চলেছে। ননদিনী ভাবী কে টিপ্পনী কেটে বলে,
—” তোমার বর কত্ত রোমান্টিক হায় আল্লাহ! আর আমার বর আস্ত একটা নিরামিষ মার্কা।
রাহা লজ্জায় মুখ লুকাতে নজরাত কে জরিয়ে ধরে। যেন সে আড়ালে যেতে পারে। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলল,
—” তুমি যে লেখিকা রুপকথা এটা লুকিয়ে রাখলে কেন?
নজরাত খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। থতমত খেয়ে বলল,
—” তুমি কিভাবে জানলে?
—” সে জেনেছি কোন ভাবে। আমি ভাইয়া কে সবটা বলে দিব। না হয় তুমি সবটা বলো, কেন লুকিয়ে রেখেছ? যেখানে তুমি জানতে রুপকথা কে ভাইয়া পাগলের মত ভালবাসে। তবুও কেন ভাইয়াকে কষ্ট দিলে? সাথে নিজেও কষ্ট পেলে?
নজরাত কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—” মনে আছে আমাদের বিয়ের আগে তুমি আমার সাথে দেখা করেছিলে?
রাহা মাথা দুলিয়ে বলল,
—” হ্যাঁ সেদিন ই তো তোমাকে আমি ভাইয়ার ব্যাপারে সবটা জানিয়েছিলাম। জানিয়েছিলাম যে ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে। এবং সে একজন লেখিকা। নাম রুপকথা। তুমি যেন ভাইয়া কে বিয়ে না করো! তারপর ও সবটা জেনে শুনে এভাবে মুখ বুজে সহ্য করলে! কেন?
নজরাত বিষন্ন গলায় বলল,
—” হুম, তোমার থেকেই জানতে পারি প্রথমে। কিন্তু এটা জানার পর আমি শিউর হতে পারিনি যে উনি আমাকেই পছন্দ করেন। আজকাল হাজার হাজার মানুষ ফেবুতে লেখালেখি করে। একই নাম থাকতে পারে অসম্ভবের কিছু নেই। তবে তোমার ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে এ কথা জানার পর
আব্বু কে বলতে গিয়েছিলাম যে আব্বু আমি এই বিয়ে করবো না! কিন্তু আমি ব্যর্থ হই! তার আগেই আব্বু তার প্রবাসে কাটানো জীবন যাপন আমাকে বলে। যেখানে তোমার বাবা নিজে না খেয়েও আমার আব্বু কে খাইয়েছে। আরো কতো কি সাহায্য করেছেন তা বললে শেষ হবে না। আব্বু সেদিন চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছিল। এতো কিছুর পর তোমার মাকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি আব্বু। তাছাড়া তোমার পরিবারের ব্যাকরাউন্ড ও ভালো। তাই আমাকে এখানে বিয়ে দিতে রাজি হয় তিনি।
সেদিন খুব ভেবেছিলাম, কেঁদেছিলাম। সারারাত জেগে নিজেকে মানিয়েছি যে আব্বুর জন্য আমি সবকিছু করতে পারি। এবং কি নিজেকে ও অনিশ্চিত জীবনে ঠেলে দিতে পারি।
রাহা সবটা শুনে ক্ষীণ স্বরে বলল,
—” তারপর? কবে, কখন জানতে পারল? তুমি ই যে সেই রুপকথা!
—” যেদিন আমার প্রথম বই “ছায়া সঙ্গিনী” এর প্রচ্ছদ পাবলিক হয় সেদিন। তোমার মনে আছে? সেদিন তোমার ভাইয়া বাসায় মিষ্টি নিয়ে এসেছিলেন। ভীষণ আনন্দিত ছিলেন তিনি। তারপর আমি বইয়ের নাম জিজ্ঞেস করতে বলেছিলেন “ছায়া সঙ্গিনী”! আমি তো নাম শুনে আকাশ সম বিষ্ময় নিয়ে দৌড়ে যাই আমার প্রকাশনিতে কল করি। জিজ্ঞাসা করি একই নামে অন্য কোন বই বের হয়েছে বা হচ্ছে কিনা? তারপর ফুল কনফিডেন্স এর সাথে বলে না এরকম কোন দ্বিতীয় বই নেই। আমি নিশ্চিন্তের শ্বাস ত্যাগ করি। এরকম ই আমার মাথায় ঢুকে যে তোমার ভাইয়া ফেইক একজন কে ভালোবাসেন।
—” তবুও তুমি চুপ ছিলে?
—” হুম ছিলাম। কারণ আমি ভেবেছিলাম তোমার ভাইয়া লেখালেখির কারণে মেয়েটির সাথে জড়িত হয়েছিল ঠিক কিন্তু এখন নিশ্চয়ই মেয়েটির সুন্দর্যো এবং ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়ে গেছে। কারণ মেয়েটি যে ভীষণ সুন্দর সেটা কিন্তু তুমি অস্বিকার করতে পারবে না।
—” তারপর যখন ভাইয়া বুঝতে পারে ঐ মেয়েটা আসল রুপকথা না। তখন তো তার সাথে বিচ্ছেদ ঘটে। তখনো কেন চুপ করে ছিলে? ইনফেক্ট এখনো অবধি চুপ করেই আছো। কেন ভাবীমণি কেন?
নজরাত উঠে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাহিরে ব্যস্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে, মুখ চোখে সরল ভাব। চাঁপা শ্বাস ফেলে বলল,
—” আমি চাইনি শুধুমাত্র লেখিকা বলে তোমার ভাইয়া আমাকে মেনে নিক, স্ত্রী বলে স্বীকার করুক। আমি চেয়েছি আমার আমিটাকে তিনি বুঝুন, ভালোবাসুন। তাই এরপরেও আমি বলছি না।
রাহা হতাশ গলায় বলল,
—” এভাবে আর কত কষ্ট পাবে? তোমার কি এই কষ্ট গুলো গায়ে লাগে না? ভাইয়া যদি তোমাকে সারাজীবন ও না বুঝে? না ভালোবাসে তাহলে কি এভাবেই চলতে দিবে? আমি আর সহ্য করতে পারছি না তোমার কষ্ট গুলো।
নিচে সাজেদা চৌধুরী রূপক এর সাথে গল্প করছেন। তাঁরা সেই কখন থেকে নজরাত আর রাহা কে খুঁজছেন। তাদের কথার মাঝে
এ কথা মণি এসে জানালো। এবং তাদের নাস্তা খেতে বলে গেল। তাই নজরাত তারা দিয়ে বলল,
—” চলো নাস্তা করবে?
—” আমার কথা এরিয়ে যেতে চাইছ?
নজরাত মুচকি হেসে বলে,
—” তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে ননদিনী ভাবীমণি!
_______
রাদ শাহমাত পুলিশ স্টেশনে এসেছে। গতকাল রাতে পুলিশ রুপকথা নামক মেয়েটিকে গ্রেফ’তার করেছে। যেদিন থেকে মেয়েটা নিখোঁজ হয় তার দুদিন পর থানায় মামলা করে রাদ শাহমাত। আর তাই পুলিশ তাকে গতকাল রাতে গ্রেফ’তার করে। রাদ শাহমাত পুলিশ কে জিজ্ঞাসা করে যে এই মেয়েটার ব্যাপারে তারা কি কি ইনফরমেশন পেয়েছে?…..
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম।
দু’দিন পর গল্প দেয়ার জন্য আমি দুঃখিত। ঢাকা এসে ঘোরাঘুরি করে বাসায় ফিরে মাথা ব্যথা নিয়ে লিখার এনার্জি থাকে না। তাই দিতে পারিনি। লিখা শেষে রি-চেক করা হয় না, ভুল ত্রুটি মার্জিত ভাষায় ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ।)