#তোমার_নিরব_অভিমানীনি(২২)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
রুপকথা নামক মেয়েটির সমস্ত ইনফরমেশন থেকে জানা গেছে, মেয়েটি বিভিন্ন ছেলেদের কে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে টাকা পয়সা
আত্মসাৎ করে। তারপর বিভিন্ন নাইট ক্লাবে পার্টি থ্রু করে যত্তসব উৎশৃংখল ছেলে মেয়েদের সাথে নে’শা করে বেরায়! রুপকথা মেয়েটির বাবা মা এমনকি পুরো পরিবার কোন এক দূর্ঘ’টনায় নি’হত হন! বর্তমানে আপনজন বলতে তার মামা মামী আছেন। যাদের অবহেলায় মেয়েটা এমন উৎচ্ছন্নে গিয়েছে।
পুলিশের থেকে এসব ইনফরমেশন জানতে পেরেছে রাদ। তার সাথে বন্ধু শিহাব ও আছে। সে রাদ এর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
—” তুই কি মেয়েটার সাথে দেখা করতে চাস?
রাদ মুখশ্রী বিকৃতি করে বলল,
—” জীবনেও ওই মেয়ের মুখ দেখতে চাই না আমি। মেয়েটা যতদিন না নিজেকে সুদরাবে ততদিন যেন এই জে’লে থেকে প’চে! তার ব্যবস্থা করে বাসায় ফিরবি। যত টাকা লাগবে আমি দিব।
এই বলে রাদ গটগট পায়ে থানা থেকে বের হয়ে যায়। শিহাব সেই দিকে অসহায় ভঙ্গিতে চেয়ে থাকে।
_______
নাস্তা খাওয়া শেষে সাজেদা চৌধুরী রাহা কে বললেন, রূপক কে তার রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এতোটা পথ এসেছে তার বিশ্রামের প্রয়োজন তাই। রাহা ও বাধ্য মেয়ের মত তাই করল। রূপক কে সাথে নিয়ে উপরে তার রুমে এল। রূপক হাই তুলে অলস ভঙ্গিতে বলল,
—” এই সকাল সকাল কত্ত পরিশ্রম করলাম ভাবা যায়? তাও আবার ঘুমটা পরিপূর্ণ হয়নি। শরীরটা কেমন ব্যথা করছে। একটু টিপে দাও তো!
এই বলে সে ঠুস করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। রাহার বিষ্ময়ের যেন অন্ত নেই। কি বলে এই ছেলে? একটু ড্রাইভিং করেছে, এই নাকি কত্ত পরিশ্রম করে ফেলেছে! এই অলস ছেলে বিদেশে থাকে কিভাবে? আবার বলছে তার শরীর মালিশ করে দিতে! হায় আল্লাহ এই কি আইলসা ছেলের পাল্লায় পড়লাম আমি?
রাহা কে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রূপক ভ্রু কুঁচকে বলল,
—” কি হল দাঁড়িয়ে আছো কেন? দেখ তোমার কারণেই কিন্তু আমার এই অবস্থা বুঝলে? তাই এইটুকু করতে পারবে না তুমি?
রাহা আর কথা বাড়ালো না ঠোঁট উল্টে মালিশ করার জন্য গেল। রূপক হাত বাড়িয়ে দিল। তারপর একে একে পুরো শরীর টিপে দিতে বলে। রাহার অবস্থা এখন এমন, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। আর রূপক পাজি আড়ালে মজা পাওয়ার হাঁসি হেঁসে বলে,
—” আরো জোরে টিপে দাও না? যেভাবে করছো মনে হচ্ছে আরো ব্যথা করে দিচ্ছ।
রাহা মুখ চোখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে ওঠে। ইচ্ছে করছে তার রূপক এর গ’লা টিপে দিতে!
_______
নজরাত না খেয়ে বসে আছে। সবাই বলা সত্ত্বেও সে নাস্তা করেনি। বলেছে রাদ আসলে তার সাথে খাবে। এখন সবাই সবার নিজ ঘরে। শুধু নজরাত বসে আছে ড্রয়িং রুমে। বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে রাদ এলো কিনা এই ভেবে। তারপর আর অপেক্ষা করতে না পেরে রাদ এর ফোনে কল করে। প্রথম বার কেটে গেল। পরের বার আবার কল করতে নিবে তখন রাদ নিজেই কল করে। নজরাত উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
—” আপনি এখনো আসছেন না কেন? আর এই সাজ সকালে কোথায় গিয়েছেন? এখন কিছু খাওয়া ও হয়নি আপনার।
রাদ চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে বলল,
—” আমি এক্ষুনি আসছি।
—” আচ্ছা।
কল রেখে নিশ্চিন্তের শ্বাস ফেলে নজরাত। ঘড়িতে টিক টিক করে সময় বয়ে যাচ্ছে। নজরাত পায়চারি করছে আর ঘড়িতে সময় দেখছে। এর প্রায় পনেরো মিনিট পর কলিং বেল বেজে ওঠে। নজরাত দ্রত গিয়ে দরজা খুলে দিল। নজরাত খেয়াল করে রাদ এর মুখশ্রী কেমন শুকনো লাগছে, চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। নজরাত তারা দিয়ে বলল,
—” আপনি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে আসুন। আমি খালার গুলো গরম করে নিচ্ছি। এতক্ষণে নিশ্চয়ই ঠান্ডা হয়ে গেছে।
রাদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। তারপর সে উপরে উঠে। নজরাত সেদিকে তাকিয়ে থেকে কিচেনে আসে। ডিমের স্যান্ডউইচ আর পাস্তা তৈরি করেছিল মণি। সেগুলো ঠান্ডা হয়ে গেছে। তাই নজরাত ওভেন অন করে গরমের সময় দিল। তারপর খাবার গুলো দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে সময় দেখছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক করতেই রাদ চলে আসে। চেয়ার টেনে বসে বলল,
—” খুব খিদে পেয়েছে।
নজরাত তার প্লেট এগিয়ে দিয়ে পাশের চেয়ারে বসে। যখন তার খাবার নিয়ে খাবে তখন রাদ অবাক চোখে চেয়ে বলে,
—” তুমি এখনো খাওনি? কিন্তু কেন?
—” আপনি খেয়েছেন কিনা এই ভেবে ইচ্ছে করছিল না তাই।
এমন সহজ সিকারক্তি কেউ করে? রাদ এর প্রতিউত্তর করতে পারলো না। চামচে করে পাস্তা নিয়ে নজরাত এর মুখের সামনে ধরল। নজরাত একটু ভরকালো। তবে মুচকি হেসে খেয়ে নিল। রাদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। ভাবে মেয়েটার এমন সরল মনের অধিকারী বলেই হয়তো সে তাকে ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছে।
রাদ এর এমন অনিমেষ চাহনিতে চেয়ে থাকা দেখে নজরাত ভ্রু জোড়া নাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে? রাদ হেসে মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বুঝায় কিছু না। তখন নজরাত খাবারের দিকে ইঙ্গিত করে বুঝায় খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে। রাদ খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিতে নজরাত মৃদুস্বরে বলল,
—” তখন কোথায় গিয়েছিলেন এভাবে? রাহা আপনাকে কতো ডাকল তবুও আপনি রেসপন্স করলেন না। ওর সাথে কথা বলে অন্তত যেতে পারতেন?
রাদ সকৌতুকে প্রশ্ন করলো,
—” বোন এসেছে! কখন?
—” আপনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় ই তো ও আপনাকে কত করে ডাকল। আপনি কথা না বলাতে রাগ করেছে।
রাদ বিষন্ন গলায় বলল,
—” বিশ্বাস করো, সত্যি বলছি একদম শুনতে পাইনি।
—” সেটা আমিও বুঝতে পেরেছিলাম। রাহা কে বলেছিও। আপনি ওকে বুঝিয়ে বলবেন।
—” আচ্ছা ঠিক আছে, কোথায় ও ? ও আসবে বলে নি তো! সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো নাকি?
—” ঠিক আছে আলহামদুলিল্লাহ।
_______
ঘন্টা খানেক পর রূপক বলল,
—” যাও আর মালিশ করতে হবে না। তোমার শরীরে কোন শক্তি ই নেই। মনে হচ্ছে আরো ব্যথা বানিয়ে দিয়েছ!
রাহা এবার খুব রে’গে গেল। উঠে গিয়ে তে’জি গলায় বলল,
—” আর যদি আমাকে টিপে দেওয়ার কথা বলেছ তো দেখবে..
—” কি করবে শুনি?
রাহা দুই হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল,
—” গ’লা টিপে দিব!
—” অমাগো তুমি কি পে’তনি নাকি!
রাহা রা’গে ফুঁসে ওঠে বলে,
—” আর একটা কথা বলবে না তুমি।
রূপক ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বলল,
—” “তি-আমো”।
—” এর মানে কিন্তু জানি আমি।
—” কি বলো দেখি?
—” আই লাভ ইউ!
রাহা মুখে হাত দিয়ে বোকা বনে গেল। সে এখন বুঝতে পারছে রূপক তার মুখ থেকে শোনার জন্য পরিকল্পনা করে এমনটা করেছে। এদিকে রূপক সেই হাসি। রাহা লজ্জায় মুখ লুকাতে রুপ ত্যাগ করে দৌড়ে নীচে নেমে আসে।
খাবার খাওয়া শেষে নজরাত সব কিছু গুছিয়ে রাখছিল আর রাদ তাকে সাহায্য করছে। রাহা কে এমনি করে দৌড়ে আসতে দেখে দু’জনেই কৌতূহল নিয়ে তাকায়। রাহা তাদের দেখতে পেয়ে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর বোকা হেসে বলে,
—” তোমরা এখানে কি করছ?
নজরাত সন্দিহান চোখে চেয়ে বলল,
—” তোমার কি হয়েছে বলো তো?
তোতলাতে তোতলাতে রাহা বলল,
—” আমার আবার কি হবে? কই কিছু না তো। ভাইয়া তুমি কখন এসেছ? তোমার উপর যে আমি চরমভাবে রেগে আছি ভাবীমণি বলেছে?
রাদ তার হাতে থাকা ডিস টা নজরাত এর হাতে দিয়ে এগিয়ে আসে রাহার কাছে। এসে করুন কন্ঠে বলে,
—” আমি অনেক সরি বোন। তখন একদম তোকে খেয়াল করিনি। তোর ভাবীমণি কে জিজ্ঞাসা করে দেখ?
তখন নজরাত এসে বলল,
—” আমিও সেই কথাই বলেছি ওকে।
সবকিছুর মাঝে রাহা খেয়াল করল। তার ভাই আর নজরাত এর সম্পর্ক টা আগের থেকে অনেকটা উন্নত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে তার কাছে। দুজন কি সুন্দর একসাথে আছে। কথা বলার মাঝেও জরতা কাজ করছে না।….
#চলবে…. ইনশা আল্লাহ।
(