তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব ১০

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:10
#Suraiya

আরুকে পিছন থেকে সুইমিংপুলে ধাক্কা মেরে মাথাভর্তি রাগ নিয়ে আরিশ ও জলে নেমে পড়ল ৷

হঠাৎ আচমকা ঘটনাটা হয়ে যাওয়ার কারণে আরু বেশ অবাক হয়ে গেল, এত রাত্রে কে এমন কাজ করলো তা দেখার জন্য সামনে তাকাতেই দেখলো আরিশ জলে নামছে , আর মুখটা লাল হয়ে রয়েছে, চোখ দুটো দিয়ে যেন আগুন ঝরছে…..

আরূ মনে মনে ভাবছে : হঠাৎ কি হলো যে উনি এভাবে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলেন আর এত রেগে আছেন কেন ? তাহলে আমাকে কি এখনই এই সুইমিংপুলে ,,,,,,,,, না না এসব আমি কী ভাবছি ! এ কথা ভাবতেই আরু চমকে উঠলো ৷ আরিসের রাগী ফেস দেখে আরু পিছাতে লাগল….

আরিশ যত এগিয়ে আসছে আরু তত পিছিয়ে যাচ্ছে ৷

আরিসের একেই মাথায় রাগ করে রয়েছে তার উপরে আরুশিকে পিছিয়ে যেতে দেখে রাগটা যেন দ্বিগুন হয়ে গেল ৷

আরিশ : আর একপাও যদি ওখান থেকে সরেছ তো আজই তোমার শেষ দিন এটা মনে রেখো৷

আরু আর পিছিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাল না , যা হওয়ার এমনিতেও হবে তাই আরিশের এর ভয়য়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে ৷

জলে ফেলে দেওয়ার কারণে আরুশির গোটা শরীর ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে ৷ মাথার চুলগুলো ভিজে গিয়ে একত্রিত হয়ে আছে, শাড়িটা একেবারে শরীরের সাথে লেপ্টে রয়েছে , দেখতে অনেক আকর্ষণীয় লাগছে, তবে এই মুহূর্তে আরিশের ঠিক চোখে ধরবে কি সেটা ও জানেনা ‌৷

আরিশ গিয়ে আরূর চুলের মুঠি ধরে ওর কাছে নিয়ে আসলো ৷

চুলের মুঠিটা ধরার কারণে ব্যথায় আরূ আহ করে শব্দ করে উঠল ৷

আরিশ : কি খুব কষ্ট হচ্ছে ? এখন আমার থেকে ছাড়া পেতে ইচ্ছা হচ্ছে তাই না? খুব ইচ্ছা আমাকে ছেড়ে তোমার ওই প্রেমিক অভ্রের কাছে যাওয়ার তাই না?

পানির মধ্যে আরুর হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে আরিশের ধমকানিতে ৷ ওর প্রশ্নটা হল যে অভ্র যে এখানে এসেছিল আরিশ সেটা জানল কি করে?

আরিশ : কি হল চুপ করে আছো কেন উত্তর দাও ৷ খুব ইচ্ছা তাই না আমাকে ছেড়ে ওর কাছে চলে যাওয়ার?

আরুশি কোন কথা বলছে না দেখে আরিশ এবার আরুর মুখ মুখটা জোরে চেপে ধরল ৷

আরিশ: আমার কাছ থেকে ভালোবাসা পাওনা বলে খুব কষ্ট হয় তাই না ? আর ওই অভ্র তোমাকে পৃথিবীর সব ভালোবাসা এনে দেবে তাই তো ? নিজের চোখকে সঠিকটা দেখতে শেখাও, এখনো তো বুঝতে শেখোনি নিজের ভালো-মন্দ , আর কবে শিখবে ? কবে শিখবে ? (জোরে ধমক দিয়ে)

আরিশ মুখটা এতটাই জোরে চেপে ধরেছে যে ব্যাথায় আরুর চোখ দিয়ে ক্রমাগত জল পড়েছে ৷ চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে আর তা মাথা থেকে ঝরে যাওয়া সুইমিং পুলের জলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে, সেই চোখের জল টুকু কতটা আরিশ অব্দি পৌঁছাচ্ছে তা আরুশি জানে না ৷

আরু কোন কথা বলতে পারছেনা ৷

আরিশ এবার ধাক্কা দিয়ে আরুকে দূরে সরিয়ে দিয়ে পাগলের মতো করতে লাগল ৷

আরিশ নিজের মাথার চুলগুলো জোরে টেনে ধরেছে আর জোরে জোরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে : এতই যখন ভালোবাসো ওই অভ্রকে তাহলে কেনই বা আমার জীবনে এলে?কেন? আমাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য? একটা কথা মনে রেখো যতদিন আমি বেঁচে থাকব তুমি আমার সাথেই থাকবে , সে তোমার ইচ্ছা হোক আর না হোক ৷ আমার থেকে তোমা নিসতার নেই,#তুমিই_আমার_আসক্তি ৷

আরিশ এবার আরুর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর মুখে আলতো করে স্পর্শ করে বললো : তুমি তো আবার আমাকে ভালোইবাসোনা , আর চাও না যে আমি তোমার জীবনে থাকি,তাই তোমার মুক্তির পথ একটাই, তুমি আমাকে মেরে ফেলো ৷

আরুশির চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়েছে আরিশ এর পাগলামো দেখে ৷ ও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা কারণ এর আগে ও আরিশকে কখনও এত পাগলামি করতে দেখেনি, ৷আর আরুর মনে একটাই প্রশ্ন জাগছে যে আরিশ অভ্র কে নিয়ে এত বেশি কেন ভাবছে? সে তো আর অভ্রর কাছে ফিরে যাচ্ছে না তাহলে !
এই সমস্ত কথা আরুশি ভাবছে আর তখনই আরিশ আবার ও জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগল : কি বলছি আমি, বললাম না মেরে ফেলো আমাকে ৷এটাইতো তুমি চাও ৷

আরিশের ধমক শোনামাত্রই আরুশির হার্টবিট যেন থেমে যাওয়ার উপক্রম ৷ আরিশের পাগলামিটা ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে তাই ওকে এখন থামানোর প্রয়োজন দেখে আরুশি আরিশের আরো কাছে গিয়ে ওর চুলের মুঠি ধরে ওর ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিল , এ ছাড়া আর কোন উপায় ও দেখল না ৷

আচমকা আরুশির থেকে এমন কিছু হবে তা ভেবে আরিশ বেশ অবাক হল , কিন্তু আরিশ আরুশিকে দূরে ঠেলে দিল না বরং আরো নিজের কাছে নিয়ে এলো, ঠান্ডায় আর আরিশের থেকে নিজেকে আর না ছ্রাড়িয়ে আরুশি আরিশের জামার কলারটা আঁকড়ে ধরল…..

বেশ কয়েক মিনিট পর আরিশ শান্ত হলেই আরিসকে ছেড়ে দিয়ে পাশে দাঁড়াল আরু, ক্রমশ হাপাচ্ছে আরুশি , বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে তার সঙ্গে আরিশ ও ৷

আরিশের আরুর উপর সমস্ত রাগ গলে জল হয়ে গেছে ,পুরনো সমস্ত কথা ভুলে গেছে ও ৷

আরুশির এখন খুব লজ্জা লাগছে , হঠাৎ আচমকা ও নিজেও যে এরকম কিছু করে ফেলবে সেটা হয়তো ভাবতেই পারেনি নিজেও , তবুও যে করেই হোক আরিশকে ও থামাতে সক্ষম হয়েছে…..

আরিশ এবার আরুশিকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের দিকে হাঁটা দিল ৷

রুমে এসে দুজনেই চেঞ্জ করে নিল, এরমধ্যে আরুশি অনেকবারই হাচ্ছি দিয়েছে ৷ বৃষ্টিতে ভিজতে ও বরাবরই খুব ভালোবাসে কিন্তু রাতে ভিজলে ওর সমস্যা হয়…..

আরিশ দেখলে আরোশী বারবার হাচ্ছি দিচ্ছে তাই আর বেশিক্ষণ দেরী না করে কিচেনে গিয়ে দুকাপ কফি করে আনল দুজনের জন্য ৷

আরোশী ব্ল্যাঙ্কেট এর নিচে চুপচাপ গুটিসুটি হয়ে শুয়ে রয়েছে আর আরিশ হঠাৎ এসে ওকে ডাকলো,,,,

আরিশ ধীর কন্ঠে: এই নাও তোমার কফি ৷

আরু কফিটা হাতে নিয়ে এক চুমুক দিল,

আরিশ : কেমন হয়েছে?

আরুশি : ভালো হয়েছে বাট এটা কি আপনি করেছেন?

আরিশ: বাঁকা চোখে তাকিয়ে: তোমার কি মনে হয় এত রাতে আমার অন্য কোন বউ এসে তোমার জন্য কফি করে দিয়ে যাবে!

আরুশি : ঠিক তা না , আসলে আপনি নিজেই এত হট তার ওপরে আবার কফি ৷ আনবিলিভএবল ৷

আরিশ আরুশির মুখের কাছে গিয়ে বলল: রিয়েল আরুপাখি!

আরোশী : এই না না , আমি সে ভাবে বলতে চাইনি যেভাবে আপনি ভাবছেন ৷

আরিস : তুমি যদি বল তো এক্ষুনি আমি শুরু হয়ে যাব ৷ বাকা হসে ৷

আরোশী: একদম না ৷ বলে আর একবার কফি তে চুমুক দিয়ে blanket এর নিচে ঢুকে গেল আর আড় চোখে আরিশের দিকে তাকাতে লাগলো, আর দেখল যে আরিশ মুচকি হেসে ওর খাওয়া কফির কাপটা নিয়ে ব্যালকনির দিকে চলে গেল ৷

আরোশী : লোকটা বড়ই অদ্ভুত , কখন কি চায় বোঝা মুশকিল ৷
|
|
|💖
|
|

সকালবেলা,,,,,,,

আজকে ওদের বৌভাত তাই সকাল থেকে বাড়ি সাজানো শুরু হয়ে গেছে , বাইরে বেশ কোলাহলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ৷
কাল রাতে অনেক বেশি দেরি করে ঘুমানোর কারণে আরোশীর সকাল বেলা উঠতে দেরি হয়ে গেছে ৷ ঘুম থেকে উঠে পাশে দেখল যে আরিশ নেই ৷

তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করার জন্য নিচে যেতে লাগল, এমনিতেও আজকে দেরি হয়ে গেছে ,প্রথম দিন এবাড়িতে আর আজই দেরী, না জানি সকলে কি ভাববে ৷

নিচের যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হতেই দেখল যে সানা ওর রুমের দিকেই আসছে আর হাতে ট্রে, তাতে ব্রেকফাস্ট সাজানো , বুঝতে পারল যে অনেক বেশী দেরী হয়ে যাওয়ার কারণে সকলের ব্রেকফাস্ট হয়ে গেলেও ওর হয়নি ৷ এই মুহূর্তে আরিশের উপর খুব রাগ হচ্ছে ওর , কেন ডাকলো না ওকে, সবাই ওকে এখন কী ভাববে!

সানা আরুশি রুমে ঢুকে বিছানায় খাবারটা রেখে আরুশিকে বলল : তা রোজ রোজ আমার ভাইয়া তোকে এত ভালোবাসা দিলে তুই বেঁচে থাকবি তো জানু ৷(দাঁত বার করে হেসে বলল )

আরুসি ঘাবড়ে গিয়ে : মানে !

সানা : ওরে আমার অবুঝ বালিকা যে ,মেয়ে এখনো মানে বুঝলো নারে !

আরুশি : আরে বলবি তো কি হয়েছে , না হলে আমি বুঝবো কি করে?

সানা : কালকে রাতে সুইমিংপুলে বেশ রোমান্টিক সিন চলছিল তা কিন্তু আমি দেখেছি,( চোখ মেরে)

আরুশি: কি দেখেছিস তুই? (ও ভাবল হয়তো সানা আরিশের করা পাগলামো গুলোর কথাও জেনে গেছে)

সানা : তোরা যা সিনেমা দেখালি তাই দেখলাম,একদম সুপার ডুপার হিট একটা মুভি ৷ বাট দুর্ভাগ্য এটলাস্ট কিছুই দেখতে পারলাম না তার কারণ হিরো হিরোইন কে নিয়ে রোমান্টিক ভাবে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে চলে গেল ৷ তারপরে কি হয় সেটা আমি না জানলেও তুই আশাকরি ভাল করেই জানিস( দাঁত বার করে হেসে)

আরোশী কথা ঘোরানোর জন্য বলল :তোরা সবাই ব্রেকফাস্ট করেছিস? না করলে আমার সঙ্গে করে নে৷

সানা : ব্রেকফাস্ট আমরা সবাই করেছি কিন্তু তুমি কথা ঘুরিয়ো না এখন ৷

আরোশী :যেমননটা তুই ভাবিস ঠিক তেমন টা হয় না সবসময় ৷

সানা : বুঝি বুঝি, তুমি আর আমাকে বোঝাতে এসো না বাবু ৷

|
|
|💖
|
|

সন্ধ্যাবেলা আরুশিকে বসানো হয়েছে, বেশ ভালই ডেকোরেশন করেছে অল্প সময়ের মধ্যে , আর প্রচুর লোকজন এসেছেন ৷ সবাই গিফট দিয়ে যাচ্ছে আর কথা বলে যাচ্ছেন আরুশির সাথে, আরুশি কেবল হ্যাঁ হু করে মাথা নাড়িয়ে তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে ৷ সানা আর তিথি ওর পাশে বসে বেশ হাসি মজা করছে ওকে নিয়ে…..

সকলে উপস্থিত থাকলেও আরিশ উপস্থিত নেই৷

তিথি আরুশির কানে কানে ফিসফিস করে বলল: তা আমাদের জিজু কোথায় ? সে কি লজ্জায় পালিয়েছে নাকি?

সানা: তার আবার লজ্জা ! কালকে রাতে তো,,,,,,

সানা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল তাই কথা ঘোরানোর জন্য জন্য আরু বলে উঠলো :
আমাকেও ঠিক বলে যাননি যে কোথায় যাচ্ছেন , তাই আমি জানিনা ৷

ওদের কথা বলতে বলতেই আরিশ এসে পৌছালো
মুখে সেই মন মাতানো হাসির সঙ্গে , যেটা দেখলে যে কোন মেয়েই ক্রাশ খাবে ৷

আজকে আরিশকে দেখে আরূও একদফা ক্রাশ খেয়েছে, তবে সঙ্গে সঙ্গে তা হজম করে নিয়েছে আরিশের করা কর্মকাণ্ড গুলোর কথা ভেবে ৷ ওগুলো ভাবলেই ও আতঙ্কিত হয়ে যায় ৷ তার সাথে মনে পরল কালকে রাত্রে আরিশের করা পাগলামো গুলো ৷ আরিশ ওদের কাছে গেল ৷

তিথি : কি জিজু কোথায় ছিলেন এতক্ষণ? আপনার বউ যে আপনাকে অনেক মিস করছিল ৷

আরু তিথির দিকে অবাক চোখে তাকালো ৷

আরিশ তারপর আরুশির দিকে তাকিয়ে বলল: বড্ড ভালোবাসে কিনা আমাকে, তাই মিস করছে , তাই দেখো আমিও তাড়াতাড়ি চলে এলাম ৷

তিথি : আরুশি বলছিল আপনি কত রোমান্টিক৷

আরিশ: ওহহ রিয়েলি ! ফাইনালি আমার রোমান্টিসিজম আমার বউয়ের মনে ধরেছে ,ভেবে খুশি হলাম , ক্যারি অন ৷ বলে আরুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে অন্য দিকে চলে গেল ৷

আরোশী : তুই সব বানিয়ে বানিয়ে কেন মিথ্যা কথা বললি?

তিথি: সে সব ছাড় ,আজ দেখিস আরিশ ভাইয়া তোকে কেমন আদর করে ৷

💖

সব আত্মীয়-স্বজন চলে যেতে লাগল, এই মুহূর্তে আহানের কথাটা খুব মনে পড়ছে আরুর ৷ এতক্ষণ ওখানে বসে ছিল একটাই আশা নিয়ে যে আজ হয়তো আহান আসবে বা তার বাড়ি থেকে কেউ আসবে ৷ এতটা হয়তো তাকে দূরে সরিয়ে দেবে না৷ কিন্তু কিছুই হলো না তেমন ৷

এসব ভেবে ওর মনটা খুবই খারাপ লাগছে ৷

রাত সাড়ে এগারোটার সময় আরুশিকে আরিশের ঘরে আরুকে বসিয়ে থেকে সানা বাইরে থেকে দরজা দিয়ে চলে গেল ৷

চারিদিকে লাল রঙের মোমবাতি জ্বলছে , পুরো খাটটা গোলাপ ফুলের পাপড়িতে সাজানো, মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো রয়েছে অনেক, একটা খুব সুন্দর ঘ্রান ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রুমজুড়ে ৷ খুবই রোমান্টিক পরিবেশ ,খাটের মাঝখানে আরিশের অপেক্ষায় আপেক্ষারত হয়ে আরূ বসে আছে ৷

চলবে,,,,,,

সব গল্প তো আর আশিকি2 র মতো হয় না |😕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here