তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব ৬

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#parr:6
#Suraiya_Aayat

আরু আরিশকে ধাক্কা মারলো,,,,,,

আরূ:আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? কেন এসমস্ত পাগলামি করছেন? আর কোন সাধারন মানুষরা এরকম পাগলামি করেনা, আমারতো মনে হয় আপনি মেন্টালি সিক ৷

আরিস হাসতে লাগলো, তারপর বলল : ইয়েস আমি মেন্টালি সিক বাট তোমার সাথে বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে, তোমাকে না বললাম আগের দিন যে একবার বিয়েটা করো তারপর দেখো আমি কি কি করি….

আরুশি আরিশের জামার কলার ধরে বলতে লাগল: আপনি প্লিজ আমার জীবন থেকে চলে যান , আমি আপনাকে ভালোবাসি না ৷ আমাকে সুখে শান্তিতে থাকতে দিন ৷(কাঁদতে কাঁদতে)

আরিশ আরুকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেল, নিয়ে গিয়ে বাথটবের মধ্যে আরুকে ফেলে দিল৷

আরূ: আপনি পাগল ! আমাকে ভিজিয়ে দিলেন কেন?

আরিস আরুর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল: ওয়েট আরুপাখি, আগে গায়ে হলুদ এর সেরেমনি টা কলপ্লিট করি ৷

এই বলে আরিশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমের ভিতরে গিয়ে বাড়ি থেকে আনা হলুদের বাটি আর ওর দেওয়া গায়ে হলুদের শাড়িটা নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকলো…

আরু উঠে দাঁড়ালো তখন আরিস ওয়াশ রুমের দরজা লক করে দিল ভিতর থেকে ৷

আরিশ: পালানোর চেষ্টা করো না আরুপাখি, গায়ে হলুদ আগে হোক তারপরে যা খুশি করো ৷

আরিশ : এদিকে আসো তো দেখি , আমার বউটাকে আগে হলুদ লাগাই ৷

আরু : আপনি একদম আমাকে টাচ করবেন না বলে দিলাম ৷

আরিশ : তোমার শরীরের কোথায় কোথায় টাচ করিনি তুমি সেটা আমাকে শুধু বলো !

আরিসের কথা শুনে আরু ঘাবড়ে গেল , চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে এককোনে ৷ আরিশ ওর দিকে এগিয়ে যেতেই আরু পিছিয়ে গেল ,অবশেষে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেল আরূর ৷

আরিশ :কেন সব সময় চেষ্টা করো আমার থেকে পালানোর?তুমি যেখানে থাকবে আমিও সেখানে থাকবো এটাই যে নীতি ৷

আরিশ এবার বাটি থেকে হলুদ নিয়ে প্রথমে ও নিজের গালে লাগালে তারপরে ওর মুখের হলুদটা আরোশীর মুখে ঘষে দিল ৷

আরিশের মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি থাকার কারণে আরুর মুখটা এখন বেশ জ্বালা করছে ৷

আরিশ: নাও আমাদের হলুদ কমপ্লিট ৷

আরোশী :আমাকে এবার তো যেতে দিন, নিচে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে ৷

আরিশ: সবাই অপেক্ষা করছে আর তুমি যান যে আমি তোমার জন্য কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি? সেটা তো জানো না, চলো এবার গোসলটা সেরে নিই ৷

আরু: গোসল সেরে নেব মানে?(তুতলিয়ে বলল)

আরিশ : মানেটা খুব সিম্পল ,বলে শাওয়ার টা অন করে দিল আর আরুশিকে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করালো তার সঙ্গে নিজেও দাঁড়াল….

না চাইতেও আরুশিকে আরিশের সাথে ভিজতে হল৷

ওদের গোসল শেষ হয়ে গেলে আরিস আরূর রুমে অপেক্ষা করতে লাগলো ততখন আরু চেঞ্জ করছে৷
.
আরু কোন রকমে শাড়ীটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে রুমে আসলো…

তারপর আরিশ সযত্নে আরুর শাড়িটা পরিয়ে দিল আর মাথার ভিজে চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে মুছে দিতে লাগলো ৷ আরূ জানে এইগুলো যতক্ষণ আরিশ না করবে ততক্ষণ আরিশ ওকে ছাড়বে না ৷

আরিশ বলতে শুরু করল : আমার থেকে কখনো পালানোর চেষ্টা করবে না ঠিক আছে! তাহলে ফলাফল টা ভালো হবে না….

আরু: এবার প্লিজ আমাকে যেতে দিন, অনেকক্ষণ হয়ে গেছে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে৷ এর মধ্যে অনেকবার ডেকেও গিয়েছে ৷ প্লিজ এবার যেতে দিন আমাকে , প্লিজ!

আরিশ : এতক্ষণে মনে হয় তোমার প্রেমিকের হলুদ ছোয়ানো হয়ে গেছে ৷ আর আমার সাথে তো তোমার গায়ে হলুদ হয়ে গেল তাই তুমি এখন রেস্ট কর ওকে৷ বলে আরিশ আরুর হাতে ট্যাবলেটটা ধরিয়ে দিল৷

আরু: এটা কি?

আরিশ :ঔষুধ, এখন বেশি কথা না বলে আগে খেয়ে নাও তারপর বলছি ৷

আরূ: আপনি বলেন আগে এটা কিসের ঔষুধ, নাহলে আমি খাব না ৷ আর আমার কি হয়েছে যে আমি এই ওষুধটা খেতে যাব৷

আরিস : তোমার ভয়ানক রোগ হয়েছে আরুপাখি,আর যে রোগে তুমি আমাকেও জডাচ্ছো৷
এটা তাড়াতাড়ি খাও বলে , জোর করে আরিশ একসঙ্গে দুটো ওষুধ খাইয়ে দিল আরূকে ৷

আরিশ:নাও আরুপাখি এবার তুমি ঘুমাও, ওকে৷

আরুশি: এটা আপনি কী করলেন!

আরিশ : যা করেছি বেশ করেছি…এবার এই ঘুমের ঔষুধ খেয়ে তুমি ঘুমাও ৷
বলে আরুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল ৷

আরু: আপনি ছাড়ুন প্লিজ , আমাকে ওখানে যেতে হবে ৷

আরিশ : না তুমি এখন ঘুমাবে , বলে আরুর মাথায় হাত বোলাতে লাগল যাতে তাড়াতাড়ি ওর ঘুম চলে আসে ৷

আর ঠিক সেই অনুযায়ী ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে আরু ঘুমিয়ে পড়ল….

আরিশ : আরুপাখি তুমি একটু ঘুমাও বলে ঠোটে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে আর ওর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে বেরিয়ে গেল রুম থেকে….
|
|
|
|
সকালবেলা পর্দার ফাঁক থেকে সূর্যের আলো আসতেই আরুর ঘুম ভেঙে গেল….

অনেকক্ষণ ধরে ঘুমিয়েছে তাই কি কি এর মধ্যে হয়ে গেছে ওর কিছুই মনে নেই….
কিছু মনে নেই তাই আর মনে করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে না ৷ তারপর উঠে ওয়াশ রুমের দিকে যেতেই চোখ পরল দরজার দিকে ৷ সে দিকে তাকাতেই চমকে গেল আরুশি ৷ কারণ দরজাটা ভাঙ্গা পড়ে রয়েছে , ঝসেটাকে কোনরকম ভাবে ঠিক করেছে কেউ ৷

কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না তাই আর বেশি দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে নিচে চলে গেল জানার জন্য৷

নিচে যেতেই দেখল সবাই যে যার মতো ব্যস্ত কাজে,
আর সকলের মাঝে আহান কেও দেখতে পেল আরোশী ৷ আহান কে দেখতে পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে আহানের কাছে ছুটে গেল ৷

আরশি আহনাকে জড়িয়ে ধরে : ভাইয়া তুই কখন এলি? আর আমাকে কেন বললি না তুই আসছিস৷

আহান আরুশিকে ছেড়ে ওর কপালে হাত দিয়ে দেখল
তারপর বলল :এখন কেমন আছিস?

আরু: কেমন আছিস মানে ! এটা আবার কেমন কথা?

আহান: কাল রাতে তোর জ্বর এসেছিল তোর মনে নেই?

আরূ: আমার জ্বর এসেছিল?

তখনই আরুর বাবা ঝাঁজালো কন্ঠে বলে উঠলেন : তা আর মনে থাকবে কেন! গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটা সমস্ত নষ্ট করে দিয়েও বুঝি আপনার শান্তি হয়নি ৷

আরু কিছুই বুঝতে পারছে না যে কাল রাতে ওর কি হয়েছে ৷

আরু আহানের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল: ভাইয়া তুই বল আমার কি হয়েছিল?

আহান : আমি তো হসপিটালে ছিলাম, আর হঠাৎই মা ফোন করে বলল যে তুই নাকি দরজা খুলছিস না অনেক ডাকাডাকির পরেও , তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসলাম ৷ কিন্তু ততক্ষণে দেখি সকলে দরজা ভেঙ্গে তোর রুমে ঢুকে পড়েছে ৷ কিন্তু এত শব্দের মাঝেও তোর ঘুম ভাঙলো না দেখে অবাক হলাম , তার পরে কপালে হাত দিতে দেখলাম তোর ভালোই জ্বর তাই একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে দিয়েছিলাম ৷

আরূ :আমার অজান্তে এতো কিছু হয়ে গেল?

আহান : হ্যাঁ হয়েছে , তুইতো জ্বরে কাহিল হয়ে গেছিলিস ৷ তার কি করে জানবি !

আরো: ওহহ আচ্ছা….
|
|
|
|
আর কিছুক্ষণ পর পার্লারের লোকজন আসবে আরুকে সাজাতে তাই আরু শান্ত হয়ে বসে আছে আর পাশে বসে আছে সানা ৷

সানা চুপ করে আছো তার সঙ্গে আরূ ও ৷

কিছুক্ষণ আগের কথা,,,,,,

আরু: তুই আসতে এত দেরী করলি কেন? আমি তো আরো তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিলাম ! কালকেও লেট আর আজকেও! তিথির কথা আমি বাদ ই দিলাম, ও চিরকালের দেরি করা পাবলিক ৷

সানা: আর বলিস না , ভাইয়ার জন্য আটকা পড়ে গেছিলাম ৷

আরূ কাঁপা কাঁপা গলায় ;কেন কি হয়েছে তোর ভাইয়ার?জ্বর নাকি?

সানা: আরে ভাইয়ার কেন কিছু হতে যাবে ? আজ ভাইয়া নাকি বাড়ি বউ নিয়ে আসবে, এটা শুনেই আমি হতভম্ব , আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না ৷ কালকেই শুনলাম ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে আর আজকে বউ করে নিয়ে আসবে তাকে ৷ আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছিনা ভাইয়ার কি হয়েছে!মা আর বাবাও বেশ অবাক ৷ কি হবে এখন জানিনা ৷ বাড়ি থেকে এটা বলেই বেরিয়েছে , আর কিছুই তো বলল না ৷

ভয়ে আরুর গলা শুকিয়ে কাঠ ,একটা কথা বলারও সাহস পাচ্ছেনা , কিইবা বলবে কারণ বিপদ যে আসন্ন সেটা ওর আর বুঝতে বাকি নেই ৷
আগের দিন যা কাণ্ড ঘটিয়ে গায়ে ওর হলুদের অনুষ্ঠান নষ্ট করেছে ,ত দেখে আরিশের এর পক্ষে যে বাদবাকি কাজ ও সম্ভব ৷ এটা নতুন কোন কাজ নয় সেটাও এখন বেশ ভালই বুঝতে পারছে আরু ৷

আরু : ও!

সানা : ব্যাপারটা যত নরমাল লাগছে ততটা নয়, আমার তো এবার খুব চিন্তা হচ্ছে যে ভাইয়া কাকে না কাকে বিয়ে করে নিয়ে চলে আসবে তখন আর একটা সমস্যা হবে ৷নাজানি সে কেমন হবে ৷

তারপর থেকে আরু বেশ চুপচাপ কোন কথা ওর মুখ থেকে বের হচ্ছে না…..
|
|
|
|
বিয়েটা বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবেই হবে ৷ সকল সাজ-সরঞ্জাম রেডি ৷ আহান কোন কিছুতেই কোন ত্রুটি রাখেনি ৷ আহানের নয়নের মনি আরূ, কখনো কষ্ট পেতে দেয়নি নিজের বোনকে আর সেখানে ছোট বোনের বিয়েতে কিভাবে কোন ভুলত্রুটি করে৷

পার্লারের লোক অনেকক্ষণ আরুকে সাজিয়ে রেখে চলে গেছে, ঘরের মধ্যে আরু একা বসে রয়েছে ৷একটু আগে বর এসেছে বর এসেছে শব্দ টা শুনে সানা তিথি আর ওর কাজিন সহ সবাই সেখানেই গেছে ৷
বুকের ভিতর ধুকপুকানিটা ক্সমশ বেড়েই চলেছে৷

একরাশ ভয় কাজ করছে আরুর তার কারন আরিশ যদি ওর জেদ বজায় রাখতে বিয়েটা ভেঙে দেয় তখন কি হবে?

হঠাৎ ওর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে আরিশ এর ফোন এল,,,,

আরোশী ভেবেই রেখেছে যে কোনভাবেই কলটা ধরবে না , ধরলেই ওকে আরিশের চক্রান্তের শিকার হতে হবে ৷ কথা বললেই আরিশ ওকে থ্রেড দেবে ওকে বিয়ে করার জন্য , আর এই ভুলটা আরু দ্বিতীয় বার করবে না….

বারবারই আরিশ ফোন করেই চলেছে কিন্তু আরু কোন ভাবেই ফোন ধরছেনা ৷

ফোনে মেসেজ এর টুংটুং আওয়াজ কানে ভেসে আসতেই ফোনটা ধরলো আরু , একটা ভয়েস massage ৷

আরিশ (মেসেজ ): ফোনটা ধরো না হলে আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ঢুকে যাব , এমনিতেও দরজাটা অনেকটাই ভাঙ্গা , তাই ঢুকতে বেশ অসুবিধা হবে না তুমি বুঝতেই পারছ আশা করি ৷ তাই আর দেরি করো না ৷ আরেকবার কল করব কল টা যেন রিসিভ হয়৷

আরূ: ভয়ে ভয়ে কলটা ধরল ৷

ফোন ধরতেই আরিশ নরম কণ্ঠে কথা বলতে লাগল যেন কোনকিছুই হয়নি এতক্ষন ৷

আরিশ: তোমাকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে আরূপাখি৷ আমি তো চোখ ফেরাতেই পারছিনা, শুধু তাড়াতাড়ি তোমাকে বিয়ে করার অপেক্ষা ৷ আসছি আমি অপেক্ষা করো ৷ ভালোবাসি আমি ……….তারপর আর কিছুই বলল না আরিশ কলটা কেটে দিল ৷

ফোনটা কেটে দিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইল আরু, চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল অজান্তেই গড়িয়ে পড়ল…….

এবার কী হবে???

চলবে,,,,,,,
অনেক বড়ো লিখেছি😴😴😴 এর থেকে বেশী বলবেন না😕🙁৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here