তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব -২৪

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২৪

আহিয়ানাকে নিয়ে আজ আদিয়াত এসেছে ইউনিভার্সিটিতে।মূলত তারা এসেছে আহিয়ানা আদ আদিয়াতের রিসিপশন পার্টির ইনভাইটেশন দিতে এসেছে।গাড়ি পার্ক করা হতেই আদিয়াত আহিয়ানার হাত আকড়ে ধরে এগিয়ে গেলো আদ্র,তিয়া,আয়রা আর ফাহিমের দিকে।
ওদের কাছে পৌছাতেই সবাই আহিয়ানাকে জিজ্ঞেস করলো ও কেমন আছে?আহিয়ানাও সবার জবাব দিলো।কিন্তু এতো কিছুর মাঝে আদ্র’র তীক্ষ্ম দৃষ্টি আদিয়াত যে আহিয়ানার হাত আকড়ে ধরে আছে সেদিকে নিবদ্ধ।আদ্র চোয়াল শক্ত করে সেদিকে তাকিয়ে আছে।আদিয়াত সবটাই লক্ষ্য করেছে।তাও কিছু বলছে না।
ও আবারও আহিয়ানার দিকে তাকালো।মেয়েটাকে আজ অনেক খুশি দেখাচ্ছে।লাল গোল জামা, লাল হিজাব পরিহিতা এই রমনীকে আদিয়াতের কাছে একদম সদ্ধ ফুটে ওঠা লাল গোলাপ মনে হচ্ছে।আজ আবারও আহিয়ানা আগের মতো পোষাকে নিজেকে মুরিয়েছে।তা দেখে যে আদিয়াত কিযে খুশি হয়েছিলো তা বলে বুজানো সম্ভব না।এটাই তো চেয়েছিলো।আর এটাই চেয়ে আসবে সারাজীবন ওর প্রাণপ্রিয়া যেন আজীবন হাসিখুশি থাকে।তিয়ার আওয়াজে ধ্যান ভাংগে ওর।

-” আহি?উনি কে?কি হয় তোর?”

তিয়ার প্রশ্ন শুনে সবাই জিজ্ঞাসাসূচক সৃষ্টিতে তাকালো আহিয়ানা আর আদিয়াতের দিকে।আহিয়ানা কিছু বলার আগে আদিয়াত বলে উঠলো,

-” আচ্ছা্! আমি নিজেই আমার পরিচয় দিচ্ছি।সাথে আমি আহিয়ানার কি হই তার পরিচয়টাও দিচ্ছি।”

তারপর আবার সবার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে সবার সামনেই আদিয়াত আহিয়ানার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে উঠে,

-” আমি হলাম আদিয়াত আহমেদ।আর আহিয়ানা আমার স্ত্রী।আহিয়ানা হলো মিসেস আহিয়ানা আদিয়াত আহমেদ। আমি আহিয়ানার হাজবেন্ড।”

কথাটা শুনতেই সবাই বড় বড় চোখে তাকালো।কিন্তু সবচেয়ে বড় আঘাত পেলো আদ্র।ওর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে।এ কি শুনলো ও।এমটা নিশ্চয় মিথ্যে?সামনের এই ছেলেটা নিশ্চয় মজা করছে?আদ্র কাপা কন্ঠে বললো,

-” আহি তুই মজা করছিস তাই না?”

আহিয়ানা মাথা নিচু করে জবাব দেয়,

-” নাহ আদ্র! এটা সত্যি আদিয়াত আমার বর।আর আমি তার স্ত্রী।”

আদ্র হৃদপিন্ডটায় মনে হয় কেউ ধারালো ছুরি দ্বারা আঘাত করে চলেছে ক্রমাগত।মন, মস্তিষ্ক, শরীর সব কিছু তীব্র এক ব্যাথায় জর্জরিত।চারিপাশ কেমন বিষাক্ত ধোয়ায় ছেয়ে গিয়েছে।আদ্র শ্বাস নিতে পারছে না ঠিকভাবে।এইতো মনে হচ্ছে সে মারা যাবে আর একটু পর।এক্ষুনি সে দম আটকে মরে যাবে।ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য একজনের স্ত্রী হিসেবে দেখা যে কতোটা কষ্টের তা আজ আদ্র বুজতে পারছে।এর থেকে যে মৃত্যুও ঢের গুন ভালো ছিলো।আদ্র মনে মনে বললো,

-” আহি!এমনটা কেন করলি?এর থেকে তো ভালো ছিলো তুই নিজে হাতে আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলতি।সত্যি আমার একটুও কষ্ট হতো না।আমি হাসি মুখে তোর হাতে মৃত্যু গ্রহন করে নিতাম।কিন্তু তোকে আজ অন্যকারো বউ হিসেবে দেখা যে আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না।একটুও না।”

আদ্র’র চোখে জল ভরে টইটুম্বুর।পারছে না সে নিজের কষ্ট লুকাতে।আদ্র কাঁদতে চাইছে না।নিজেকে দূর্বল প্রমান করতে চাইছে না।তবুও কেন এই কান্নাগুলো উপছে পরতে চাইছে ওর চোখের বাঁধ ভেঙে।আয়রার চিৎকারে আদ্র তাড়াতাড়ি নিজের চোখের জল সবার আড়ালে মুছে ফেললো।

-” ও মাই গোড! কিভাবে কি?তুই বিয়ে করলি কবে?মানে আমি কিছুই বুজতে পারছি না।”

আদিয়াত বললো,

-” আগে চলো কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি সেখানে খাওয়া দাওয়াও হলো সাথে আমাদের বিয়ে কিভাবে হলো সেটাও বলা যাবে।”

ফাহিম বলে,

-” আচ্ছা চলেন ভাইয়া।ট্রিট দিচ্ছেন নিয়ে নেই।এমনিতেই দুঃখে আমার ফরান ফাডি যায়।আমার বউ এখন অন্য কারো বউ।কষ্টে চোখে পানি চলে এসেছে।বউ রে ও বউ তুই কেন ধোকা দিলি আমায়।এই গেবন রেখে কি লাভ?”

আহিয়ানা ধাম করে একটা কিল দিয়ে দিলো ফাহিমের পিঠে।ফাহিম আর্তনাদ করে বললো,

-” মা গো বিয়ার পর দুলাভাই কি খাওয়াছে তোরে?এতো শক্তি পাইলি কই?”

-” ফাহিম্মার বাচ্চা!”

-” আস্তাগফিরুল্লাহ!! বিয়াই করলাম না আবার বাচ্চা।যাও কইছিলাম তোরে বিয়া করমু তুই তো বেইমানি কইরা ফালাইলি অন্য একজনরে।বেইমান মহিলা!”

-” তোরে আজকে ফাহিম্মা!”

ইয়াসিবা বলেই ফাহিমের সাথে ছোটাছুটি কর‍তে লাগলো।আর আদিয়াত হাসি মুখে দেখছে ওর প্রানপ্রিয়াকে।আজ ওর ভালোবাসাটা কতো খুশি।আদিয়ায় সবসময় আহিয়ানাকে এইরকমই হাসি-খুশি দেখতে চায়।আদিয়াত আজ থেকে আহিয়ানার চোখে আর জল আসতে দিবে। যদি কান্না করেও তাহলে তা হবে সুখের অস্রু।আদিয়াত নিজের সর্বস্ব দিয়ে ওর আহিয়ানাকে নিজের বুকের মাজে আগলে রাখবে।
এইভাবেই আহিয়ানা ফাহিম মারামারি করলো।মারামারি পর্যায় শেষ হতে তিয়া বলে,

-” আরে চল না।আমি সব কিছু জানার জন্যে মরে যাচ্ছি। আর ওরা মারামারি করছে।সবগুলো বেয়াদ্দপ।”

আদিয়াত এদের এক একটার কথা শুনে না হেসে পারছে না।অবশেষে সবাইকে নিয়ে আদিয়াত রেস্টুরেন্টে গেলো।সেখানে খাবার দাবার এর পাশাপাশি আদিয়াত এ টু জেট সব কিছু ওদের খুলে বললো।সবটা শুনে সবাই এতোটাই অবাক হয়েছে যে বলার বাহিরে।আর আদ্র ও কল্পনাও করেনি।আহিয়ানার মনে ছোট থেকেই আদিয়াতের জন্যে ভালোবাসা ছিলো।সাথে এর জন্যেও কষ্ট পাচ্ছে ও বন্ধু হয়েও আতো দিন আহিয়ানার কষ্টের ভাগিদার হতে পারেনি।ভালোবাসা তো দূরে থাক।সবটা শুনে আদ্র মনে মনে দোয়া চাইলো।ওর আহি যেন সারাজীবনে সুখে থাকে।আহি যাকে ভালোবাসে তার জন্যে এতোটা বছর ধুকরে ধুকরে মরে গেছে।কিন্তু এখন থেকে যেন তার থেকেও দ্বিগুন সুখে থাকে।আদ্র দূর থেকেই নাহয় ওর ভালোবাসার মানুষটিকে সুখে থাকতে দেখে নিজের প্রান জুরাবে।ভালোবাসলেই যে তাকে পাওয়া লাগবে এমন কোন তো বাধ্যবাধকতা নেই।আর জোড় করে ভালোবাসা হয়ও না।আদ্র শুধু চায় ওর আহি সুখে থাকুক।
আহিয়ানা আর আদিয়াত সবাইকে রিসিপশনের ইনভাইটেশন দিয়ে দিলো। বললো সেদিন যেন জলদি সবাই চলে আসে।আর কতোক্ষন কথাবার্তা বলে আহিয়ানা আর আদিয়াত ওদের থেকে বিদায় নিলো।রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আদিয়াত আর আহিয়ানা গাড়িতে উঠে বসলো।গাড়ি যখন বাড়ির রাস্তার দিকে না গিয়ে যখন উলটো দিকে গেলো।আহিয়ানা ভ্রু-কুচকে বললো,

-” গাড়ি উলটো গুরাচ্ছেন কেন?”

আদিয়াত হালকা হেসে বলে,

-” তোর ফ্রেন্ড্স দের দাওয়াত দিলি।আমার গুলো কি নদীর জলে ভেসে যাবে?”

আহিয়ানা জিভে কামর দিলো।মুচকি হেসে বললো,

-” অনেক সরি এমনটা বলতে চাইনি।”

আদিয়াত গাড়ি ড্রাইভ করতেই কর‍তেই বললো,

-” আরে কিছু মনে করেনি।আমি জাস্ট মজা করেছি।”

আহিয়ানা ছোট্ট করে ‘হু!’ বলে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো।আকাশে মেঘ করেছে।বৃষ্টি এখনি আসবে বোধহয়। আহিয়ানা চোখ বুজলো ভালোলাগছে ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়াটা।আদিয়াত কতোক্ষন পর পর আহিয়ানার দিকে তাকাচ্ছে।কেন যেন মেয়েটার মুখের উপর থেকে চোখই সরে নাহ।
কিছুক্ষনের মাজেই বৃষ্টি নামলো ঝুম বৃষ্টি যাকে বলে। আদিয়াত দ্রুত বলে,

-” আহিয়ানা মুখ গাড়ির ভীতরে আন।ভিজে যাচ্ছিস।”

আহিয়ানা শুনলে তো।আদিয়াত ভ্রু-কুচকে আহিয়ানার হাত ধরে ভীতরে ডুকিয়ে দিলো।আহিয়ানা বললো,

-” এটা কি হলো?”

-” কি হলো?তোকে না করলাম নাহ?ভিজে গেলে জ্বর আসবে।”

-” একটু ভিজলে কি হবে?”

আদিয়াত গাড়ি থামিয়ে দিলো।আহিয়ানার দিকে কতোক্ষন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।বৃষ্টির ফোটা পরায় মুখটা কি স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।আদিয়াত আহিয়ানার দুগালে হাত দিয়ে আহিয়ানার কপালে চুমু দিলো।আবেশে আহিয়ানার চোখ বুজে আসলো।ভালো লাগায় মনটা ছেয়ে গেলো।আদিয়াত প্রেমসিক্ত কন্ঠে বললো,

-” যে আমার প্রাননাশিনী।সে যদি অসুস্থ হয়ে পরে।তাহলে এই প্রেমিকের শহরে যে আধার নামবে।আমি তো বিনাশ হতে চাই তার হাতে।তাহলে তাকে কিভাবে মুর্জা যেতে দেই।তাহলে যে আমার হৃদয়ে ব্যাথা উঠবে। তীব্র লাল নীল ব্যাথা।যা এই প্রেমিক সইতে পারবে না।”

#চলবে________

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।দোলাও আমার হৃদয় আসতে দেরি হবে।বিকালে দিবো ওটা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here