#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২৫
আজ আদিয়াত আর আহিয়ানার রিসেপশন পার্টি।পুরো বাড়িটা দারুন ভাবে সাজানো হয়েছে।বিভিন্ন ধরনের পর্দা, বিভিন্ন ধরনের লাইটিং আর নানা ধরনের আর্টিফিশিয়াল ফুল।আদিয়াত সুন্দর করে হুয়াইট কমপ্লিট স্যুট পরেছে।শুভ্র রঙে যেন একেবারে শুভ্র মেঘের রাজ্যের রাজকুমার লাগছে ওকে।আদিয়াত ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলছে।এশা অনেক কষ্টে নিজের মনকে শক্ত করে রেখেছে।বুকের ভীতরটা ভালোবাসা হারানোর আগুনে ধাউ ধাউ করে জ্বলছে।এতো কষ্ট কেন?ভীতরটা মনে হয় কেউ গুলি করে ঝাঝরা করে দিচ্ছে।তাও সবার সামনে সে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।তার ভালোবাসার মানুষটির মুখে যেই তৃপ্তির হাসি দেখা যাচ্ছে এতেই এশা খুশি।ভীষন খুশি।জিহান, সোহেব,রোজা ওরা মিলে আদিয়াতকে নানানভাবে জ্বালাতন করছে।আর এশা না চাইতেও সেই আড্ডায় জোড়পূর্বক ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।আদিয়াত বার বার ঘড়ি দেখছে।একসময় বিরক্ত নিয়ে বললো,
-” উফ! এতোক্ষন লাগে আহিয়ানাকে সাজাতে?”
জিহান দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,
-” কেন ব্রো?এতো অস্থির হচ্ছিস কেন?তোরই তো বউ।”
আদিয়াত তীক্ষ্ম চোখে তাকালো তারপর বলে,
-” নিজের বউকে দেখার জন্যেই এতো অস্থির হচ্ছি।পরের বউয়ের জন্যে হবো না-কি?মেরে হাড্ডি গুড্ডি ভেংগে পাউডার করে দিবে।”
সবাই আদিয়াতের কথায় হেসে দিলো।এরই মাজে রোজা বলে উঠে,
-” আদি আহি আসছে।”
আদিয়াত তাকালো সিড়ির দিকে।তাকাতেই ওর চোখজোড়া আটকে গেলো সেখানে।পুরো সাদা গাউন সেখানে হালকা আকাশি কালালের স্টোন বসানো।গাউনের উপরে টিস্যু কাপরের আলগা আস্তরন আছে।আহিয়ানার মুখে হালকা মেক-আপ।গলায়,কানে,হাতে, আঙুলে সাদা ডায়মন্ডের নেকলেস,চুলগুলো মেসি বান করা সেখানে ছোট্ট মুকুট বসানো আবার ছোট ছোট স্টোন বসানো ক্লিপও আছে।শুভ্রতায় ঘেরা স্নিগ্ধ কোন পরি লাগছে আহিয়ানাকে। আদিয়াত হা করে তাকিয়ে আছে।আহিয়ানা আদিয়াতের অবস্থা দেখে লজ্জায় লাল হয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।আদিয়াতকে দেখেও আহিয়ানা বড়সড় একটা ক্রাশ খেয়েছে।কিন্তু এতোগুলো মানুষের সামনে তো আর আদিয়াতের মতো সেও হা করে তো তাকিয়ে থাকতে পারবে না।তার তো লজ্জা করে।
এদিকে নিহান হা করে তাকিয়ে আছে সিয়ার দিকে মেয়েটাকে বেবি পিংক কালার গাউনে একদম কিউট একটা পরি মনে হচ্ছে,হালকা মেক-আপ আর সাথে অর্নামেন্টস।নিহানের চোখ ধাধিয়ে গেছে সিয়ার এতো সৌন্দর্য দেখে।নিহান ভাবলো নাহ আর দেরি করা যাবে না।নিজের মনের কথা বলে দিতে হবে তাকে।নাহলে তার এই কিউট পরিটাকে অন্য কেউ নিয়ে যাবে যা নিহান সহ্য করতে পারবে না।
আদ্র তাকিয়ে আছে আহিয়ানার দিকে।মেয়েটাকে আজ এতো সুন্দর লাগছে যা বলার বাহিরে।কিন্তু আদ্র তো মায়া বাড়াতে চায় না।সে তো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে ও চলে যাবে আমেরিকা।এখানে থাকলে প্রতিনিয়ত আহিয়ানাকে ওর চোখের সামনে দেখবে। ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করবে ওর আহিয়ানার কাছে।নাহ,সে এটা কখনই হতে দিবে না।আহিয়ানা সুখে আছে এটাই তার জন্যে এনাফ।আর কিছু চায় না সে।আহিয়ানার স্মৃতি নিয়েই সে পার করে দিতে পারবে জনমের পর জনম।
সিয়া আহিয়ানাকে নিয়ে আদিয়াতের পাশে এনে দার করালো।আদিয়াতের এখনো হুশ নেই।তিয়া দুষ্টুমি করে বললো,
-” আরে ভাইয়া এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে তো মশা ডুকে যাবে মুখে।মুখ বন্ধ করুন।”
আদিয়াত থতমত খেয়ে মুখ বন্ধ করে মাথা চুলকাতে লাগলো। এদিকে আহিয়ানা লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।আদিয়াত সবার সামনেই আহিয়ানার হাত আকড়ে ধরলো।আহিয়ানা অবাক হয়ে তাকালো।আদিয়াত হালকা হেসে বলে,
-” চল স্টেজে গিয়ে বসি।”
আহিয়ানা মাথা দুলালো।আদিয়াত সাবধানে আহিয়ানাকে নিয়ে স্টেজে সুন্দর করে ডেকোরেট করা সোফায় বসে পরলো।একে একে সবাই এসে ওদের অভিনন্দন জানাচ্ছে।আদিয়াত আর আহিয়ানা হাসিমুখে তাদের সাথে কথা বলছে।এর মাজে একজনের সাথে দেখা করার জন্যে আদিয়াত উঠে চলে যায়।আহিয়ানা বসেই ছিলো সেহরা জাহান একজন মহিলাকে নিয়ে আহিয়ানার সামনে এসে দাঁড়ায়।আহিয়ানার হাতে গিফট দিয়ে কিছু না বলে স্টেজের অন্য পাশে সেহরা জাহানকে টেনে নিয়ে যায়।আহিয়ানার হালকা মন খারাপ হয় এতে।কিন্তু মহিলাটার কিছু কথা কানে আসতেই স্তব্ধ হয়ে যায় সে।
-” কিযে করলেন আপা।মানলাম মেয়েটা সুন্দর দেখতে। তাই বলে এই মেয়েকে বিয়ে করিয়ে আনবেন?এর থেকে কতো সুন্দর মেয়ে ছিলো আদিয়াতকে বিয়ে করার জন্যে পাগল।শুনেছি এই মেয়ের না-কি বিধবা।বিয়ের দিন রাতেই না-কি স্বামি মারা গেছে।কি অলুক্ষনে মেয়ে। বিয়ে হতে না হতেই স্বামি খেয়ে ফেলেছে।আপনার ছেলে কি দেখে যে এই মেয়েকে পছন্দ করলো।”
সেহরা জাহান কিছুই বললেন না।উনি চুপ করে রইলেন।কিন্তু কথাগুলো আহিয়ানার হৃদয়ে যেন ছুড়ির ন্যায় আঘাত করে চলেছে ক্রমাগত।ঠিকই তো আহিয়ানা বড্ড ভুল করেছে আদিয়াতের জীবনে এসে।আদিয়াত কতো ভালো একজন ছেলে।আর আহিয়ানা?সে তো বিধবা। আদিয়াতের সাথে কি আহিয়ানার মিলে?কখনোই না।আহিয়ানার চোখ ভরে আসতে চাইছে।কান্নাগুলো চাইলেও আটকাতে পারছে না সে।এর মাজে সিয়া এসে দাঁড়ায় আহিয়ানার সামনে।শান্ত কন্ঠে বলে,
-” চুপ-চাপ যতো থাকবে ততোই মানুষ আরো কথা শোনানোর সুযোগ পাবে।তুমি তাদের সুযোগ দিবে কেন?”
আহিয়ানা চমকে তাকালো।সিয়া শুনলো কিভাবে?আহিয়ানা হালকা আওয়াজে বলে,
-” তুমি মানে আসলে…..!”
সিয়া আহিয়ানাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
-” আমি সব শুনেছি।আর আমি ভাইয়াকেও সব বলে দিবো এখনি।”
আহিয়ানা আৎকে উঠে দ্রুত সিয়ার হাত ধরে ফেলে।ঘাবড়ে গিয়ে বলে,
-” নাহ নাহ সিয়া তুই কিছু বলবি না প্লিজ।তোর ভাই তাহলে তান্ডব করে ফেলবে।নাহ প্লিজ।”
-” তুমি এরকম কেন আহি আপু?”
আহিয়ানা ছলছল চোখে বলে,
-” ঠিকই তো বলছে তারা সিয়া।আদিয়াত ভাইয়ার সাথে আমার যায় না।”
সিয়া রেগে গিয়ে বলে,
-” আদি ভাইয়ার সাথে তোমার যাবে কি যাবে না সেটা ভাইয়া ভালো জানে।অন্য কেউ তা কেন বলবে?আর তুমিই কেন সেসব সহ্য করবে?”
আহিয়ানা সিয়াকে শান্ত করার জন্যে বলে,
-” সিয়া আমার না মাথা ব্যাথা করছে। আমাকে একটু রুমে দিয়ে আসবে প্লিজ?”
সিয়া বুজলো আহি কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু তাও সে কিছু বললো না।চুপ-চাপ আহিয়ানাকে রুমে দিয়ে আসলো।রুম আসতেই আহিয়ানা নিচে বসে পরে বিছানায় মাথা এলিয়ে দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।ভীতরের কষ্টগুলো আবারও তাজা হয়ে এসেছে।ওর জীবনের চিরন্তন সত্য। যা আহিয়ানা ভুলেই গিয়েছিলো। এমনটা না হলেও তো পারতো।ওর প্রথম ভালোবাসার মানুষটিই কেন শুধু তার প্রথম, শেষ এবং একমাত্র স্বামি হলো না কেন?কেন?আহিয়ানা দু হাতে মুখ ডেকে হু হু করে কান্না করে দিলো।
এদিকে আদিয়াত স্টেজে এসে দেখে আহিয়ানা নেই।অনেক্ষন এদিক সেদিক খুজলো।কিন্তু তাও আহিয়ানাকে পেলো না।সিয়াকে যেতে দেখে আদিয়াত সিয়াকে ডাক দেয়।সিয়া এসে বলে,
-” হ্যা ভাইয়া বলো কি বলবে?”
-” আহিয়ানা কোথায়?”
সিয়া চুপ করে রইলো। কিইবা বলবে সে?তার মন চাচ্ছে আদিয়াতকে সব সত্যি বলে দিতে।বলে দিবে হ্যা বলে দিবে।কেন বলবে না?তার ভাবিকে কেউ খারাপ কথা বলবে আর সে চুপ করে থাকবে?এটা তো অন্যায়।সিয়াকে চুপ করে থাকতে দেখে আদিয়াত আবার জিজ্ঞেস করে,
-” কিরে বলছিস না কেন?”
সিয়া রাগি গলায় বলে,
-” কি বলবো হ্যা?তোমার বউ এক ছিঁছ কাদুনি।খালি পারে কান্না করতে।দেখো গিয়ে রুমে কান্না করছে।”
আদিয়াত অবাক হয়ে গেলো।আহিয়ানা কান্না করছে মানে?কেন কান্না করছে?তার আহিয়ানা ঠিক আছে তো?আদিয়াত অস্থির হয়ে বলে,
-” কান্না করছে মানে?কেন কান্না করছে?কি হয়েছে ওর?”
-” তাহলে শুনো।……..!”
#চলবে____
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।অনেকদিন পর দিলাম।আমার অবহেলার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।এই গল্পটা আর বেশি দেরি নেই আর দুটা পার্ট হবে মনে হয়।ভালোবাসা।