#তোমার_মাঝে_আমি
#পর্ব-৬
#নিহীন_রুবাইয়াত
সৌভিক,আবির উপরে উঠছে।উদ্দেশ্য জুতা খুজা।
–সৌভিক জুতা কই লুকাইছে আবার এরা?
–আমি কেমনে জানবো?আমি কি চোরের পিছু পিছু ঘুরছি যে জানবো।
কথাটা বলেই সৌভিক আগে আগে হাটা শুরু করে।কিন্তু অনেক জোরে শব্দ হয় সে পিছু ঘুরে দেখে মীরা মানে নিহীনের বেস্টু চিল্লাচ্ছে।
–ওরে আল্লাহ আমার কোমরটা গেলো গো।আল্লাহ গো।
–সরি সরি আমি ইচ্ছা করে পড়িনি।(আবির মীরার ওপর থেকে উঠতে উঠতে বলে।তারপর হাতটা বাড়িয়ে দেই কিন্তু মীরা ওঠে না।নিজেই ওঠে)
–এই আপনি অন্ধ?এভাবে আমার গায়ের ওপর এসে পড়লেন।আমার কোমরটা তো মনে হলো ভেঙেই গেলো।মেয়ে দেখলেই লুচ্চামি করতে মন চাই।অসভ্য কোথাকার।(এক দমে কথা গুলো বলে যাই মীরা আর আবির হা করে তাকিয়ে থাকে)
সৌভিক এসে আবিরের কাধে হাত রেখে ভাব নিয়ে দাড়াই,আবির এবার লজ্জাই পড়ে।
–কি হলো তুই এভাবে হাসছিস কেন?
–আমিও তো সেটাই জানতে চাই কি হলো ভাই?(সৌভিক ভ্রু নাচাই)
–দেখ তুই যা ভাবছিস তা না..
–কি ভাবছি আমি??
আবির মুখ শুকনো করে চলে যাই আর সৌভিক হোহোহো হাসতে থাকে।কিন্তু এদিকে আবিরের মনে তো লাড্ডু ফুটছে।মীরাকে আজই সে প্রথমবার দেখলো আর প্রথম দেখাতেই ভালোলেগে গেছে।ওদিকে মীরা তো রাগে ফুসতেছে।
নিহী–মীরু এখানে বসে আছিস কেন??
মীরা–…………….
নিহী–কি হয়েছে এরকম রেগে কেন তুই?এখানে একা বসে আছিস আবার রাগ ও আছে মনে হচ্ছে….ব্যাপারটা কি?
মীরা–ওই হাতিটা আজ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
নিহী–হাতিইইইইইইই!!!মানে?এখানে হাতি আসলো ক্যামনে আর আমি তো কোন হাতি দেখিনি আর হাতি তোরে ধাক্কা দিলো কিন্তু তুই বেচে থাকলি ক্যামনে?(নিহী হোহো করে হাসতে থাকে)
মীরা–এই তুই মজা করছিস?দেখ নিহী একদম মজা করবি না কিন্তু তা না হলে কিন্তু ভালো হবে না তোর জন্য।
নিহী–আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।আর হাসবো না।এবার তো বল কি হয়েছে?
মীরা–নিলু আপার ওই দেবর আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।শুধুই ফেলেইনি আমার গায়ের ওপর পড়েছে।আবার ভ্যাবলার মতো তাকাই ছিলো।অসভ্য,লুচু পোলা কোথাকার……
(মীরার কথা শুনে নিহীনের মুখটা কেমন শুকিয়ে গেলো)
মীরা–বলি সৌভিক ভাই ও তো আছে কই উনি তো ওমন করে না।কিন্তু ওই হাতিটা….
নিহী–ওয়েট ওয়েট সৌভিক ভাই আছে মানে?এখনোই তো ওনাকে লুচু,অসভ্য বললি আবার(কথা শেষ করতে দেয় না মীরা)
মীরা–আরে ওনারে বলবো কেন?আমি তো ওই আবির না ফাবির ওইটার কথা বলছি।
(নিহীন এবার লম্বা একটা নিশ্বাস নেই তারপর মীরার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে)
মীরা–এই তুই আবার হাসছিস??
নিহী–আরে আবির ভাই হয়তো ভুল করে তোর গায়ের ওপর পড়েছে।কিন্তু উনি তো মোটা না তেমন তাহলে হাতি বললি কেন??
মীরা–উনি একটা হাতিই।তোর গায়ের ওপর পড়লে বুঝতি
নিহীন কিছু বলতে যাই তার আগেই মীরা উঠে চলে যাই।নিহীন গালে হাত দিয়ে বলে,,
–হাই আল্লাহ এই পাগলিটারে নিয়ে যে কি করি…
এদিকে সৌভিক আর আবির দোতালার ওনা কোনা খুজতেছে কিন্তু জুতা নাই।নিহীন লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের দেখছে আর হাসছে।নিহীনের সাথে আরো ৩/৪ জন আছে।মীরাও আছে কিন্তু রাগি ফেইস নিয়ে।
ওরা ক্লান্ত হয়ে গেছে কিন্তু জুতার দেখা নেই।না পেরে দুজন দুইটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়ে।
–বেয়াই সাহেব এটা লাগবে?(নিহীনের হাতে জুতা।সে রিতীমতো জুতা জোড়া হাতে নাচাচ্ছে আর দাত বের করে হাসছে)
আবির বলে উঠলো,,
–হ্যা হ্যা।দিয়ে দাও না বোনটি…সেই কখন থেকে খুজতিছি…
–আল্লাহ!! তাই??আচ্ছে..এই নেন..
নিহীন জুতা জোড়া বাড়িয়ে দেই।আবিরো খুশি হয়ে হাত বাড়ায় কিন্তু নিহীন আবার হাত সরিয়ে নেই..
–কি হলো বোনটি?
–জুতা দিবো তবে এমনি এমনি তো দিবো না..
–মানে?
–মানে আগে ৫০০০ টাকা ছাড়েন তারপর দেবো(নিহীন সহ সবাই হেসে দেই।আবির বোকার মতো তাকিয়ে থাকে)
–কিন্তু বোনটি আমরা তো আগেই ২০,০০০ টাকা দিয়েছি।
–তো? আবার দিবেন।এটা আমাদের হক।টাকা দিবেন জুতা নিবেন তা ছাড়া আমরা জুতা দিবো না।
সৌভিক এতক্ষন চুপ ছিলো।কিন্তু এবার সে উঠে দাড়ালো,,
–আবির চল আমাদের জুতা লাগবে না।
চোখ দিয়ে সৌভিক কিছু একটা ইশারা করাই আবির ও হ্যা বলে চলে যাচ্ছিলো।
–মীরা তুই না বলছিলি আবির ভাইর মনটা অনেক বড়।কিন্তু মনে তো হচ্ছে না।সামান্য ৫ হাজার টাকা দিতে পারছে না আবার….
মীরার নাম শুনে আবির দাড়াই যাই।
–আমি??আমি কখন এসব বললাম..আমার কি খেতে দেয়ে কাজ নেই যে…(মীরাকে চিমটি কেটে দেই নিহীন আর চুপ থাকতে বলে।মীরা ও মুখ ভাঙিয়ে চুপ করে যাই)
–মীরা তুমি বলেছো আমার মনটা অনেক বড়।
–হ্যা হ্যা ভাই মীরা বলেছে তো।
–মীরা সত্যি?(আবির যেন আকাশের চাদ পাইছে এমন ভাব নিলো।নিহীন তো হাসছে আর মীরা জোর করে হাসার চেষ্টা করছে কারন এখন যদি সে আবিরের সাথে ঝামেলা করে নিহীন ওরে অনেক মারবে…সৌভিক দাড়িয়ে ওদের কান্ড দেখছে আর মনে মনে নিহীন কে শেয়ানা বলছে)
–কি হলো মীরা বলো?
মীরাকে নিহীনের ভয়ে মাথা নাড়াতে হলো,,আবির সৌভিকের কাছে গিয়ে,,
–এ ভাই টাকা দিয়ে দে…
–মানে টা কি???
–আরে মাত্র ৫ হাজারই তো,দিয়ে দে না….
–তুই ওই মেয়ের বানানো কথাই গলে গিলি?দেখ ভাই মীরা তোরে লাইক করে না…
–মীরা কি করে না করে জানি না তুই টাকা দে…
সৌভিক ভালো মতোই বুঝেছে টাকা না দিলে আবির যাবে না এখান থেকে।সৌভিক নিহীনের দিকে তাকালোলো,নিহীন ডেভিল হাসি দিচ্ছে।সৌভিক ও কম যাই না….
–আমার সাথে চালাকি করে তো পার পাবে না সোনা(মনে মনে বলে সৌভিক)
পকেট থেকে একটা মানি ব্যাগ বের করে সে।ভিতর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে ওর ভেতর ১ টাকার একটা পয়সা দিয়ে বলে,,
–এই নিন এখানে ৫ হাজার টাকাই আছে আর ১ টাকা বোনাস।
নিহীন হাত বাড়িয়ে নিতে যাই,,
–আরে আরে জুতাটো দেন….
–আগে টাকা দেন তারপর টাকা নেন…
–না আগে জুতা….
এভাবেই দুজন তর্ক করছে এবার মীরা এসে বলে,,
–উফফ!বাচ্চাদের মতো কি শুরু করলেন?
–হ্যা হ্যা,মীরা তুমি ঠিক বলেছ,এই সৌভিক কি শুরু করলি টাকা দিয়ে দে তো(আবির মীরার দিকে হেসে হেসে বলে।আবিরের হাসি দেখে মীরার তো গা জলে যাচ্ছে কিন্তু মুখে প্রকাশ করলো না)
–আচ্ছা,আর ঝগড়া করবো না।আপনারা এক হাতে জুতা নেন আর এক হাতে টাকা নেন।
–ওকে
সৌভিক জুতা নিয়ে নিলে নিহীন মানিব্যাগ টা নিয়ে দৌড় দেই..
–আরে আমার মানিব্যাগ নিয়ে কই যান??দাড়ান ব্যাগ টা তো দিয়ে যান।
নিহীনের পিছু পিছু সৌভিকও দৌড় দেই।নিহীন দৌড়ে ছাদে চলে যাই,সৌভিক ও পিছু পিছু ছাদে যাই।অনেক্ষন ধরে সৌভিক নিহীনের পিছুপিছু আছে কিন্তু ধরতে পারছে না।অবশেষে সৌভিক এক হাত দিয়ে নিহীনের কোমর জড়িয়ে ধরে নিহীন জুতা দুইটা নিজেরর পিছনে রাখে হাত দিয়ে।এক হাত নিহীনের কোমরে অন্য হাত দিয়ে জুতা নিয়ার চেষ্টা কিন্তু সে পারছেই না।একটা সময় নিহীন নিচে পড়ে যাই সৌভিক তার গায়েরর ওপর পড়ে কিন্তু তাদের কোন হুশই নেই।বেশখানিকক্ষন পর নিহীন চুপ করে যাই,হাসি থামিয়ে দেয়।সৌভিক ও চুপ করে যাই।নিহীনের দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে সে…
–কি করছেন এটা?উঠুন(নিহীন অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে ফেলে)
সৌভিক এতোক্ষন খেয়ালই করিনি সে নিহীনের গায়ের ওপরে তা…সৌভিক ও লজ্জা পেয়ে যাই উঠে পড়ে।নিহীন ও উঠা দাড়াই।ওঠার পর নিহীন মুখ নিচু করে একটু হাসে তারপর মানিব্যাগ টা চেক করে।মানিব্যাগ দেখে নিহীন তো শকড।মাত্র ১ টাকা পড়ে আছে আর কিচ্ছু নেই।নিহীন চোখ বড় বড় করে সৌভিকের দিকে তাকাই।সৌভিক নিচের দিকে তাকিয়েয়ে মাথা চুলকাচ্ছে।
–ফাজিল…(নিহীন সৌভিকের গায়ে মানিব্যাগটা ছুড়ে মেরে দৌড়ে পালাই আর সৌভিক জোরে জোরে হেসে দেই)
নিলুফার বিদায়ের পালা এসে গেছে।বাড়ির বড় মেয়ের বিয়েতে সবাই কান্নাই ভেঙে পড়ে।নিলুফা ও অনেক কাদছে।নিহীন বোনকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাদে।মীরাও কাদে।আবির মীরার কাছে টিস্যু এগিয়ে দেই একটা মীরা সেটা নিয়ে চোখ মোছে।
নিহীন,নিলুফাকে গাড়িতে উঠেয়ে দরজা বন্ধ করতে গেলে তার শাড়ির আচল আটকে যাই।সে টান সেই কিন্তু বের হয়না,দরজা খোলার জন্য হাত বাড়ানোর আগেই সৌভিক এসে দরজা খুলে দেই।আর সবার আড়ালে নিহীনের হাতে একটা খাম দেই।ইশারা করে যেন কাউকে না দেখাই।নিহীন বুঝতে পেরে আচলে লুকিয়ে ফেলে।নিলুফাদের গাড়ি চলে যাই।
নিহীন ছুটে তার ঘরে এসে দরজা দিয়ে ফেলে..খামটা খুলে দেখে তাতে ৮ হাজার টাকা।নিহীন টাকা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকে।কি যেন ভাবছে সে হটাত তাত ফোনে টুংটাং শব্দ হয়ে এক্টা মেসেজ আসে…
“আমি ওতোটাও খারাপ না।আপনার ডিমান্ডের থেকে ৩ হাজার বেশি দিয়েছি।ওই অতিরিক্ত টাকাটা আপনার জন্য ওটার ভাগ কাউকে দিবেন না কিন্তু।
আল্লাহ হাফেজ পেত্নি”
মেসেজ টা পড়ে নিহীন মুচকি হাসে।তারপর নাম্বারটা সেভ করে রাখে বলদ নাম দিয়ে।
একদিন পর আজ নিলুফা আর সৌরভের বৌভাত..বেশ নাম করা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে।
চলবে…..
(ভূলত্রটি ক্ষমা করবেন আর গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন।ধন্যবাদ)