তোমার মাঝে আমি পর্ব শেষ

তোমার_মাঝে_আমি
#পর্ব-৭(অন্তিম পর্ব)
#নিহীন_রুবাইয়াত

একদিন পর আজ নিলুফা আর সৌরভের বৌভাত..বেশ নাম করা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে।

নিলুফা আর সৌরভ স্টেজে বসে আছে।নিলুফাকে গোল্ডেন কালারের লেহেঙ্গা আর সৌরভ কে নেভি ব্লু স্যুটে বেশ মানিয়েছে।
সৌভিক আর আবির পরেছে ব্লাক স্যুট,হাতে ম্যাচিং ঘড়ি,চুল স্পাইক করা দুজনেরই।একদম হিরো লুক,,দুজন সমবয়সী হওয়ায় অধিকাংশ সময়ই ম্যাচিং ড্রেস পরতো।আজও তাই…..

বৌভাতের অনুষ্ঠান,সবাই অনেক ব্যস্ত এরই মাঝে নিলুফার বাড়ির সবাই চলে সৌরভ তাদের বাড়ির সবাই গেলো বেয়াই বাড়ির সবাইর সাথে কুশল বিনিময় করতে গেলো না শুধু সৌভিক।
আবির তো মীরাকে দেখে আর এক দফা ক্রাশ খেলো।সবার শেষে যখন মীরা আর নিহীন ঢুকছে আবির একটা লাল গোলাপ নিয়ে মীরার সামনে ধরে,,
–এই নাও মীরা এটা তোমার….(মীরা ভ্রু কুচকে তাকাই)
–কি হলো মীরা নাও…

–আমার লাগবে না,আপনি সরেন তো সামনে থেকে ভিতরে যেতে দেন(বিরক্তি নিয়ে কথাটা বলে মীরা)

–এভাবে কেন বলছে?(আবির মুখ গোমড়া করে নিচের দিকে তাকাই)

নিহীন আবিরের হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে,,
–ধন্যবাদ দুলাভাই।

নিহীনের মুখে দুলাভাই শুনে মীরা আর আবির দুজনই বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে….

–দুলাভাই ভিতরে যাবো না?

–এই নিহী তুই ওনাকে দুলাভাই বললি কেন?তোর দুলাভাই তো সৌরভ ভাইয়া।

–দুলাভাই আপনার বউ একটা গাধা(আবিরের দিকে তাকিয়ে)
–শোন মীরু আমার তো আর একটা বোন না যে দুলাভাই ও একটা হবে,,আসলেই তুই একটা গাধা।তাই না দুলাভায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াইইইইইইই???

আবির এতোক্ষন পর ব্যাপারটা বুঝেছে যে নিহীন তাকেই দুলাভাই বললো আর
মীরাকে গাধা।কিন্তু মীরা কিছুই বুঝিনি।আবির আর নিহীন কিছুক্ষন একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর হোহোহোহো করে হেসে দেয়।মীরা ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে।

–নিহী তুই কি কাউকে খুজছিস?
–কই না তো…
–কিন্তু কেন জানি না মনে হলো খুজতিছিস..
–মীরু তুই ভুল ভাবছিস…আমি কাউকে খুজছি না….(নিহীন মীরাকে মিথ্যা বললো কিন্তু মনে মনে তো একজনকে খুজে চলেছে)

অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে।আবির সবসময় মীরার পিছু পিছু ঘুরেছে,সে খেলো কিনা তার কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা এসব জিজ্ঞেস করেছে আর মীরা তো তেলেবেগুনে জলে উঠেছে।আর এদিকে নিহীনের হাসিমুখটা ধীরে ধীরে কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,ফোনটা হাতে নিয়েছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

নিহীন আর নিলুফা বসে গল্প করছিলো সৌরভ এসে তাদের পাশে বসলো।সৌরভ এতোক্ষন অফিসের ক্লাইন্ট,আর বাকি গেস্টদের কাছেই ছিলো।

–কি ব্যাপার আমার শালি সাহেবা এমন মন খারাপ করে আছে কেন নিলু?
–জানি না।আপনার শালির কি হয়েছে কিছু বলছেও না।
–কিছু হয়নি ভাইয়া…(নিহীন শুকনো হাসি দেয়)

ফটোগ্রাফার এসে নিলুফাকে ডাক দেয় তার সিংগেল ছবি উঠানো হবে তাই,সে চলে যাই…

–ভালোবাসো ওকে??(সৌরভের মুখে কথাটা শুনে নিহীন আড়চোখে তাকাই,কয়েক সেকেন্ড পর চোখ নামিয়ে নেই)
–বেশি দেরি করো না,বলে দাও..আমি তো ওরে চিনি ও মুখে অনেক কিছুই বলে কিন্তু ওর সাহস অনেক কম।যদিও আমি জানি ওউ তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।

আবির কথা গুলো শেষ করে চলেই যাচ্ছিলো,
–কোথাই উনি?

নিহীনের কথা শুনে সৌরভ মুচকি হেসে কিছু একটা বলে।নিলুফা আর সৌরভ নিহীনদের সাথে এসেছে।সন্ধ্যা থেকে প্রচুর বৃষ্টি,,থামার নামই নেই এখন বাজে রাত ১০ টা ২৫…
নিহীন আলমারি থেকে শাড়িটা বের করে যেটা সৌভিক নিহীনকে দিয়েছিলো।হ্যা ওই শাড়িটা সৌভিক ই তাকে দিয়েছিলো।সেদিন শপিং করতে যাওয়ার সময় সৌরভ এর সাথে সাথে সৌভিকও একই রকম শার্ট পরেছিলো।বাচ্চা ছেলেটা যখন তাকে শাড়িটা দিচ্ছিলো সৌরভ লুকিয়ে তাকে দেখছিলো সে এটাও খেয়াল করে কিন্তু কিছু বলে না।এ মনকি ঘুমের ভিতরে সৌভিকই যে তাকে স্পর্শ করেছে সে এটাও জানতো।বোকা সৌভিক রুম থেকে বের হওয়ার আগে তার ঘড়িটা ফেলে যাই।সৌরভের কাছে ঘড়িটার কথা বলে নিহীন তখন সৌরভই বলেছিলো ওটা তার ভাইয়ের ঘড়ি।পেয়ারা গাছ থেকে পড়াটাও ছিলো ইচ্ছাকৃত ভাবেই।তারপর হলুদের দিন সৌভিক তাকে হলুদ মাখিয়েছিলো সে এটাও বুঝেছিলো।সৌভিকই বার বার বোকামি করে ধরা খেয়েছে।কারন নিহীনকে হলুদ মাখানোর পর সে হাত ভর্তি হলুদ মুছতে ভুলে গেছিলো আর সেটাই নিহীন খেয়াল করে।এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিহীন হেসে দেই।

প্রথম ঘুমের ভেতর যেদিন সৌভিক তাকে স্পর্শ করে সৌরভের কাছ থেকে সেদিনই নিহীন সৌভিকের কথা জানে আর তার আইডি ও নিয়ে নিয়েছিলো।সেদিন থেকেই সৌভিকের প্রতি তার দুর্বলতা কাজ করে তবে এখন সেটা ভালোবাসা।হ্যা নিহীন সৌভিককে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে এই কয়দিনে।।

নিহীন শাড়িটা বিছানায় রেখে বিছানায় শুয়েছে তখনই অনামিকা আসে তার ঘরে,,
–নিহী একটা কাজ করে দাও তো সোনা।
–একটা টাওয়াল আর তোমার ভাইয়ার এই টি-শার্ট,প্যান্টটা সৌভিককে দিয়ে এসো তো।।
–সৌভিক??
–হ্যা সৌভিক এসেছে তো…

নিহীন আর কোন কথা বলে না ভাবির হাত থেকে ওগুলো নিয়ে দৌড় দেয়।

গেস্টরুমে সৌভিক দাড়িয়ে আছে,তার সমস্ত শরীর ভিজে চপচপ করছে,চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে তার।কিন্তু এই ভেজা অবস্থায় ব্লাক স্যুটে তাকে খুব ড্যাশিং লাগছে।নিহীন দরজাই টোকা দেই।নিহীনকে দেখে সৌভিকের যেন চোখদুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।নিহীন সৌভিকের হাতে টাওয়াল আর জামা কাপড় দেই।সৌভিক কথা বলার আগেই নিহীন বলে,,
–আগে ফ্রেস হয়ে আসুন,কথা পরে শুনবো আমি এখানে অপেক্ষা করছি।

সৌভিক আর কিছু বলে না।ওয়াশরুমে চলে যাই।ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখে নিহীন খাটে বসে আছে হাতে এক কাপ কফি।
–কফি টা খান,ঠান্ডা লেগে যেতে পারে তা না হলে(সৌভিক কফির মগ টা নিয়ে এক চুমুক দেই)
–আমি আসলে….
–জানি,,অফিসের কাজে বাইরে যাওয়া লাগছিলো..আর এটাও জানি আপুর মোবাইল আপনাদের বাসায় রেখে আসছিলো সেটা দিতে এসেছেন..
–হ্যা কিন্তু আপনি…

(সৌভিকের কথা শেষ করার আগেই নিহীন আসি বলে,,
–খাবার খেয়ে নেন আগে।তারপর ঘুমিয়ে পড়েন
নিহীন উঠে চলে যাই।সৌভিক ডাকতে যেয়েও ডাকতে পারে না।

রাত ২টা বাজে,বৃষ্টি থেমে গেছে।সৌভিকের চোখে ঘুম নেই।মনটা বেশ খারাপ,নিহীন আজ তার সাথে ভালো করে কথাও বললো না…সে বার বার এপাশ ওপাশ করছিলো তখনি তার ফোনে একটা মেসেজ আসে,,নিহীনের মেসেজ দেখে সে কোনরকম টি-শার্টটা গায়ে দিয়ে ছাদে চলে যাই।

নিহীন রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে।সৌভিক তার পাশে গিয়ে দাড়াই।১০মিনিট মতো দুজন চুপচাপ দাড়িয়ে থাকার পর নিহীন বলা শুরু করে,,
–আপনি কাউকে ভালোবাসেন?

সৌভিক অবাক হয়,নিহীন আবার বলে..
–আমি একজনকে ভালোবাসি।(সৌভিকের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো)
–ওহ..ভালো তো।।
–না ভালো না..
–কেন?
–সে একটা বলদ।
–মানে?
–ভালোবাসে কিন্তু মুখে বলতে পারে না।ঘুমের ভিতর আমাকে লুকিয়ে দেখতে পারে,ছবি তুলতে পারে,শাড়ি কিনে দিতে পারে,অন্ধকার ঘরে নিয়ে গিয়ে হলুদ মাখাতে পারে কিন্তু ভালোবাসি বলতে পারে না।আপনিই বলেন এবার তাকে বলদ ছাড়া আর কি বলবো??

নিহীনের কথা শুনে সৌভিক তো শকড।নিহীন কি তার কথাই বলছে।কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব নিহীন কিভাবস জানবে এসব।তার মাথা ঘুরছে।

–কি ভাবছেন এতো?
–তু তুমি…মানে তুমি…
–হুম আমি..ভালোবাসি,তোমাকে ভালোবাসি

সৌভিক যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না।
–ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন প্রথম দেখাই তুমি একাই কি প্রেমে পড়তে পারো?আমি পারি না..আমি ভাবতাম তুমিই বলবে ভালোবাসার কথাটা আগে কিন্তু তোমার মতো বলদের সে সাহস নেই।(কথাটা শেষ করেই নিহীন সৌভিককে জড়িয়ে ধরে।সৌভিক ফ্রিজ হয়ে যায়।এটা বাস্তব কিনা বুঝতে পারছে না।সে ভাবতো সে একাই নিহীনকে ভালোবাসে কিন্তু নিহীনো যে তাকে ভালোবাসে এটা সে আশা করেনি)

নিহীন সৌভিককে ছেড়ে দেই,কারন সৌভিক নিহীনকে আপন করে জড়িয়ে ধরেনি।তোমার দারা কিচ্ছু হবে না।নিহীন চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াই।কিন্তু সৌভিক তার হাত ধরে একটান দেই নিহীন গিয়ে পড়ে সৌভিকের বুকে।

এক হাত দিয়ে নিহীনকে জড়িয়ে অন্য হাত দিয়ে। নিহীনের মুখটা উচু করে বলে,,
–এত কিছুই যখন জানো তখন এটা জানো না তোমাকে আমি কতোটা ভালোবাসি?আমি বার বার বলতে চেয়েছি পারিনি।তাই আজ যখন তুমি বললে আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না তাই জড়িয়ে ধরিনি তাই বলে চলে যাবে এভাবে??

নিহীন চুপ করে দাড়িয়ে থাকে।
–তোমাকে অনেক ভালোবাসি নিহীন।তোমার মাঝেই নিজেকে খুজে পেতে চাই বারবার

নিহীনের কপালে পরম আদরে চুমু একে দেই সৌভিক।নিহীন লজ্জা পেয়ে যাই।

!
৩ বছর পর আজ নিহীনের বিয়ে।তার ভালোবাসার মানুষটির সাথেই।নিহীন আর সৌভিক এর কথা তারা পরিবারের থেকে গোপন করিনি।তখন সৌভিকের পড়াশুনা শেষ না হওয়ায় বিয়েটা হয়নি।এখন তার পড়া শেষ,চাকরি করছে একটা।নিহীনেরও পড়া শেষ।

নিহীন আর সৌভিক স্টেজে বসে আছে।সৌভিকের কোলে সৌরভ আর নিলুফার দুই বছরের মেয়েটি এসে বসে।নিহীন আর সৌভিক দুজনই পুচকি টাকে চুমু দেই।বিয়ে পড়ানো শেষ সবাই স্টেজে ছবি তোলে।ওমন সময় সৌরভ বলে
–আবির এবার তোর পালা বিয়েটা করে নে ভাই..
–ভাইয়া মীরা রাজি থাকলে এখনই বিয়ে করে নেবো

আবির হাসি দেই আর মীরা মুখ ভাঙিয়ে দেয়,,
–আপনাকে বিয়ে করতে আমার বয়ে গেছে আপনি সারাজীবন সিংগেল থাকবেন।

মীরা মুখ ভাঙিয়ে চলে যাই আর আবির মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।সবাই এই কান্ড দেখে হোহো করে হেসে দেই।

-সমাপ্ত-

(গল্পটা শেষ করে দিলাম।খুব বেশি বড় করতে চাইনি।ধন্যাবাদ সবাইকে যারা আমার গল্পটা পড়েছেন।যদি কোন ভুল থাকে ক্ষমা করবেন।আবারো ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here