#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_১৫)
তুহা ফারাবিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে চলেছে। ফারাবির চোখেও পানি।
-এই তাহু পাখি আর কত কাঁদবে এইবার তো থামো।
– হুঁ। আগে কেন বলেন নি আপনি আমার প্রেমিক পুরুষ। কেন সামনে আসেননি বলুন।
– আমি সামনে আসলেই কি তুমি বিশ্বাস করতে বলো। আর সবথেকে বড়ো কারন হলো আমি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে অনুভব করো।
– পাগল বানিয়ে ছেড়ে দিচ্ছিলেন তো।
ফারাবি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো…
– আমি নিজেই তো পাগল হয়ে গেছি আর তোমাকে পাগল করতে যাবো কেন।
– কিন্তু বাবা।
– আঙ্কেলকে তুমি মানিয়ে নিতে পারবে না তাহু পাখি বলো।
– আমি চেষ্টা করবো।
– হুম।
ফারাবি তার তাহুপাখির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিলো।
বিকালে..
তুহা বাড়িতে আসতেই দেখলো ওর বাবা ড্রইং রুমে বসে আছে। ওকে দেখা মাত্রই বললো..
– কোথায় গিয়েছিলে।
– মামাই এর কাছে।
– কি বললে তুমি,তোমার সাহস কি করে হয় ওই বাড়িতে যাবার।
– আমি গিয়েছিলাম সত্যি টা জানার জন্য। আর সবকিছু সত্যি জেনেছি। বাবা তুমি বিনাদোষে আমাদের কেন শাস্তি দিচ্ছো। কেন আমাদের আলাদা করতে চাইছো।
– তু… হা।
মিরাজ সাহেব তুহাকে মারার জন্য হাত তোলেন। কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়।
– থামলে কেন মারো। আচ্ছা বাবা আমিও যদি আন্টির মতো ভুল করি সেটা কি ভালো হবে বলো। আন্টির না হয় ভালোবাসার মানুষটা ওনার সাথে ছিলো না কিন্তু আমার তো আছে আমি তো পারবো না বাবা অন্য কাউকে মেনে নিতে। আমিও ম/রে যাবো বাবা।
তুহার বাবা তুহাকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনের চোখেই পানি।
– মারে এই কথা বলিস না তাহাকে হারিয়ে আমি তোকে আগলে বেঁচে ছিলাম আর তোর যদি কিছু হয়ে যায় তো আমি শেষ হয়ে যাবো। তোর সুখেই আমার সুখ। বল কি চাস তুই।
– আমি চাই তুমি ওইবাড়ির সাথে সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে নানুর কথা রাখো।
– আচ্ছা তাই হবে। কালকেই আমি ওই বাড়িতে যাবো।
তুহা ওর মা খুশি হয়ে যায়। মিরাজ সাহেব নিজের ঘরে চলে যায়।
– আমি তাহার মতো আমার তুহাকে হারাতে চাই না তাই সবকিছু মেনে নিচ্ছি কিন্তু কখনোই তোকে ক্ষমা করবো না ফারুক।( মনে মনে)
তুহা ওর ঘরে ছিলো মিহা ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো…
– দিভাই আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুই আমার হ্যান্ডসামের বউ হবি।
– বউ হবো না আমি ওনার বউই।
– ওলে বাবা রে।
দুই বোন গল্পেই মেতে উঠলো।
কথামতো ফারাবির বাড়িতে তুহার পরিবার আসলো। ফারাবির পরিবারের সকলের খুব খুশি এতদিন পর মিরাজকে নিজের বাড়িতে দেখে। ফারুক সাহেব উত্তেজিত হয়ে মিরাজকে জড়িয়ে ধরলেন। মিরাজ সাহেব মুখের কোনো একটা মেকি হাসি দিয়ে ফারুক সাহেবের কানে ফিসফিস করে বললো…
– আমি আমার মেয়ের খুশির জন্য এইসব করছি তবে আমি তোমাকে কখনোই মাফ করবো না।
মিরাজের কথা শুনে ফারুক সাহেবের মুখটা কালোহয়ে গেলো। উনি ভেবেছিলেন হয়তো সমস্ত মান অভিমান ভেঙে নতুন করে সবকিছু শুরু হচ্ছে কিন্তু তা নয় মিরাজ শুধু তুহার জন্য রাজি হয়েছে। তবুও মনে মনে তুহাকে কে কৃতজ্ঞতা জানালেন। তুহার কারনে মিরাজ এইবাড়িতে এসেছে এটাই অনেক।
মিরাজ সাহেব কথার মাঝে বললেন..
– যেহেতু তুহা আর ফারাবি একে অপরকে ভালোবাসে তাই এই বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেয়। তোমরা বিয়ের আয়োজন শুরু করো, আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে তুহাকে ফারাবির হাতে তুলে দিতে চাই।
সকলেই খুব খুশি হয়ে যায়। কথামতো বিয়ের ডেট ফাইনাল করা হয়। বাড়ি ফিরে মিহা মেহতাবকে কল করলো…
– হ্যালো কে?
– আমি মিহা বলছি।
– আরে মিহা বল।
– ধন্যবাদ।
– কিসের জন্য!
– এই যে আমার দিভাই আর দাদাই এর মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি না হয়ে ওদের ভালোবাসাকে সার্পোট করার জন্য।
– ভালোবাসা জোর করে হয়না আর আমি চাই ও না জোর করে কিছু। ভালোবাসার মানুষটি সুখে দেখার মাঝে যে সুখ আছে তা অন্যকিছুর মাঝে নেয়।
– আপনি দিভাই কে ভালোবাসেন।
– হয়তো। আচ্ছা এখন রাখি।
– ওকে।
মেহতাব কলটা কেটে দিলো। মিহার বুকের উপরে কিছু একটা ভারী হয়ে আছে। তুহাকে মেহতাব ভালোবাসে কথাটা কেন জানো সহ্য করতে পারছে না।
পরেরদিন…
তুহা আর মেধা আজকে খুশির বাড়িতে যাবে। তুহার বিয়ের নেমন্তন্ন দিতে। যদিও আগে কখনোই যাওয়া হয়নি আর ওরা যাবে বিষয়টাও কেউ জানে না। কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দিলেন খুশির মা। সামনে দুটো মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা হতভম্ব হলেন, পরক্ষনেই মুখের কোনো হাসি ফুটে উঠল…
– তোমরা মেধা আর তুহা না।
– জ্বি আন্টি।
– আরে ভেতরে এসো।
উনি ওদেরকে ভেতরে বসালেন। আর খুশিকে ডেকে দিলেন খুশি তো খুশি হয়ে ওদেরকে জড়িয়ে ধরলো।
– আরে তোরা আসবি একবার ওহ বললি না কেন।
– বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকতো।
– সেটা ঠিক।
– বলো মা কি খাবে( খুশির মা)
– আন্টি কিছুই খাবো না আমরা একটা দরকারে এসেছি এখুনি চলে যাবো।
– কি দরকার! (খুশি)
তুহা মেধাকে খোঁচা দিলো। মেধা খুশির দিকে তাকিয়ে বলল…
– খুশি একটা গুড নিউজ আছে।
– কি?
– আমাদের তুহা রানির বিয়ে।
কথাটা শুনে খুশি খুশি হলেও ওর মা খুশি হতে পারলেন না। মুখটা কালোহয়ে গেলো ওনার।
– এটা তো খুব ভালো খবর তা জিজুর নাম কি?
– ফারাবি।
– কীইই?
খুশি বেচারা শক খেয়ে গেছে কথাটা শুনে।মেধা মুচকি হেসে বললো…
– এত অবাক হচ্ছিস কেন।
– না ওরা যা ঝগড়া করতো আবার বিয়ে কিছুই তো বোধগম্য হলো না।
– ঝগড়ার মাঝেই প্রেম।
কথাটা বলেই মেধা হাসতো লাগলো। তুহার লজ্জা লাগছে খুব, মেধাকে খোঁচা দিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালেন আন্টি আছে এখানে। মেধা চুপ করে গিয়ে বললেন…
– আন্টি আসলে সরি বাড়ির বড়োরা কেউ আসতে পারেনি হুট করেই বিয়ের ডেট ফাইনাল হওয়াতে সকলেই খুব ব্যস্ত। তাই আমরাই আসলাম, আপনারা কিন্তু সকলেই আসবেন আর খুশি কিন্তু কয়েকদিন আগে থেকেই আমাদের বাড়িতে থাকবে।
– আমরা সবাই যাবো কিন্তু খুশি থাকবে।
খুশির মায়ের কথাটা বুঝতে পেরে তুহা বললো…
– আন্টি আমাদের বাড়িতে খুশির কোনো অসুবিধা হবে না। আর খুশি তো আমাদের বন্ধু নয় বোন তাই আমার বিয়েতে আমার পাশে থাকলে আমার খুব ভালো লাগবে।
– আচ্ছা আমি ওর বাবার সাথে কথা বলে দেখবো।
তখনি ওখানে আশিক এসে বললো…
– কি কথা বলবে বাবার সাথে মা।
আশিক সামনে তাকিয়ে দেখলো,তুহা আর মেধা এসেছে।
– আরে তোমার কখন আসলে।
– এই তো মাত্রই।
– তা কি ব্যাপার আপনাদের পায়ের ধূলা আমাদের বাড়িতে পড়লো।
– আশিক তুই ওদের চিনিস।
– হুম মা।
– ওহ তোরা বস আমি আসছি।
উনি উঠে চলে যেতেই খুশি বললো…
– দাদাভাই জানো তুহার বিয়ে।
– সেই প্রেমিক পুরুষের সাথে নাকি।
কথাটা শুনেই খুশি আর মেধা তুহার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো। মেধা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো…
– কেসটা কি তুহা।
– পরেবলবো সবটা। এখন চুপ কর।
আশিক বিষয়টা বুঝতে পেরে বলল..
– তা পাত্রের নাম কি?
– ফারাবি চৌধুরী (মেধা)
– চৌধুরী কোম্পানির
– হুম।
– তাহলে তো কাব্যের দাদা তাই না।
– হ্যা তবে আপনি কাব্যদাকে চেনেন!
#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_১৬+১৭)
আস্তে আস্তে বিয়ের দিন আগিয়ে আসছে। সকলের চাপ বাড়ছে। আজকে সকলে মিলে শপিং করতে যাবে। সকলেই আছে কিন্তু কথা নেয় কথা আরো কয়েকদিন পর আসবে এটা নিয়ে তুহার সাথে মান অভিমান হলেও তুহা রাজি করাতে পারেনি।
কাব্য ফারাবিকে খোঁচা দিয়ে বললো…
-দাভাই তুই বিয়ের শাড়িটা পছন্দ করে দে না। ওর তো পছন্দ করতেই পারছে না।
মিহা ওর সাথে সহমত হয়ে বললো..
– হ্যা একদম জিজু তুমিই পছন্দ করে দাও।
– ওকে।
ফারাবি কয়েকটি শাড়ি ঘাটাঘাটি করে তিনটে শাড়ি পছন্দ করলো। তারপরে তুহার দিকে তাকিয়ে বললো…
– এই মেরুনটা বিয়ের দিন। ব্লু শাড়িটা বৌভাতের দিন আর এই কালো বেনারসি টা বাসর রাতে।
ফারাবির লাগামহীন কথা শুনে তুহা লজ্জায় মাথা নিচু রে দিলো আর বাকিরা মজা নিতে লাগলো। তুহাকে লজ্জা পেতে দেখে ফারাবি নিজের ঠোট কামড়ে বিরবির করে বললো…
– তাহু পাখি এত লজ্জা পেয়ো না পরে আবার আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না। তখন আবার দোষ দেবে।
সারাদিন কেনাকাটা করে ওরা ফিরে যায়। মাঝে কেটে যায় আরো দুটোদিন আজকে কথা আসবে। বিয়েটা নিজেদের বাড়ি থেকেই হচ্ছে কথা ওইবাড়িতেই থাকবে তবুও একবার তুহার সাথে দেখা করতে আসবে তারপরে ওইবাড়ি যাবে। তুহা তো অভিমান করে আছে।
– কিরে তুহা রানি এখনো রাগ করে থাকবি দ্যাখ আমি তো এসেছি।
– আমি কথা বলবো না।
– তাহলে আমি চলে যায়।
কথা চলে যেতে গেলেই তুহা ওকে শক্ত রে জড়িয়ে ধরলো। কথা আহ করে উঠলো।
-কি হলো দিদিভাই।
-কিছু না।
-দেখি।
তুহা কথার ঘাড় থেকে ওড়না সরিয়ে দেখলো মারের চিহৃ আছে। তুহা আঁতকে উঠলো।
– এসব কি দিদিভাই।
– বোন আস্তে কেউ শুনতে পাবে।
– শুনতে পেলে পাক বলো কি সব এইগুলো তোমার শরীরে মারের আঘাত কেন।
– প্লিজ বোন কিছু জানতে চাস না কিছুই বলতে পারবো না।
– আমাকে বলবে না তো।
– মাফ কর। ভালো থাকিস আমার ভাইটাকে নিয়ে খুব সুখে থাকিস দোয়া করি তোদের জন্য।
কথা কিছুই বলেনি সেদিন কিন্তু তুহার মাথায় প্রশ্নটা ঘুরতেই থাকে। তুহার কালকে হলুদের অনুষ্ঠান। আজকেই খুশি এসেছে এইবাড়িতে মেধাও চলে এসেছে। তাদের প্রান প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে আর তারা না আসলে চলে।
তুহা সবকিছুর মাঝে ভুলে যায় কথার কথা। বিয়ে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠলো।
তুহা ওর মায়ের কাছে গিয়ে বললো…
– মা মেহতাব, আন্টি আসবে না।
– জানি না রে।
– আমি হাজির (মেহতাব)
তুহা আর মিহা দুজনেই খুব খুশি হয়ে যায়। তুহার খুশিটা প্রকাশিত এতকিছুর পরেও মেহতাব এসেছে এটাই ওর কাছে অনেক আর মিহার মাঝে খুশিটা অন্যরকম।
– আমার তুহা রানির বিয়ে আমি কি না এসে পারি।
– তাই নাকি গো।
– হুম গো।
তুহা আর মেহতাব আড্ডায় মেতে উঠলো। মিহা দূর থেকে দাঁড়িয়ে মনে মনে বললো…
– আমি জানি আপনি দিভাই কে এখনো ভালোবাসেন। আপনার চোখে আমি স্পষ্ট দিভাই এর জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু আপনি কি কখনোই আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারবেন।
আজকে তুহার গায়ে হলুদ। ওই বাড়ি থেকে হলুদের তত্ত এসেছে। কাব্য আর কুহু এসেছে তত্ত নিয়ে। মিহা কুহুকে পেয়ে খুশি হয়ে যায়।
– কি তুহা এই বার তো তোর আর আমার সম্পর্ক টা উল্টো হয়ে গেলো। তুই সম্পর্কে আমার বড়ো দাদার বউ। তোকে কি বলে ডাকবো বল।
– তোমার যেটা ভালো লাগবে সেটাই বলো।
– আচ্ছা তাহলে তুহাই বলবো ভাবি বললে কেমন যেন পর পর লাগবে।
– হুম।
তুহাকে হলুদ-লাল পাড় শাড়ি পড়ানো হয়েছে। পুরোই হলুদ পরী লাগছে। কাব্য দূরে দাঁড়িয়ে ফারাবিকে ভিডিও কলে তুহাকে দেখাচ্ছে। ফারাবি তুহার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে। ওর অবস্থা দেখে কাব্য বললো…
– ভাই আর তো কিছুক্ষন তারপরেই তো তুহাকে পাবি এখুনি আমার বোনটার দিয়ে এতটা নজর দিয়ো না।
ফারাবি মুচকি হেসে ফোনটা কেটে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বলল…
– তাহু পাখি আর মাত্র কয়েকটা সময় তারপরেই তুমি আমার হয়ে যাবে।
তুহা আর ফারাবি দুজনের মনেই এক আকাশ স্বপ্ন, ভালোবাসার মানুষটিকে পাবার স্বপ্ন। তুহাকে ওর বাবা হলুদ ছোঁয়ানোর সময় কেঁদে ফেলেন। আদরের মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাবে, ওনাদের ছেড়ে চলে যাবে ভাবতেই কষ্ট লাগছে। তুহাও ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। আমাদের মে এদের জীবনটা কিরকম একটা অদ্ভুত নিয়মের বেড়াজালে বন্দী। বিয়ের পর নিজের পুরানো সবকিছু ছেড়ে নতুন করে আবার সবটা কে সাজিয়ে নিতে হয়। নতুন করে বাঁচতে জানতে হয়।
আজকে তুহার বিয়ে,, এই কয়েকদিনে ফারাবির সাথে ওর কথা হয়নি। তুহাকে ফারাবির পছন্দ করা শাড়িটাই পড়ানো হয়েছে। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে তুহা রানিকে। মিহা আর ওর মা তো তুহাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
– দিভাই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তোকে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে। ওই দিভাই তুই যাস না আমার ভালো লাগছে না তোকে ছেড়ে থাকতে।
মেধা আর খুশি মিলে ওনাদের সামলায় তুহা কাঁদতে কাঁদতে শেষ।
– আরে ভাবুক রানি এত কাঁদিস না। দ্যাখ নাহলে আমার দাদাই আমার ভূত ভেবে পালিয়ে যাবে।
তুহা কান্না থামিয়ে দিয়ে মেধার দিকে রাগী চোখে তাকায়। বর এসেছে বর এসেছে বলে একটা কোলাহল সৃষ্টি হতেই খুশি মেধা আর মিহা বিয়ে বাড়ির গেটের সামনেচলে আসলো। মেয়েদের গেট ধরতে দেখে কাব্য বললো…
– এটা কিন্তু ঠিক নয় আর মেধা তুই তো আমাদের পক্ষে তাইনা।
– আমি কোনো পক্ষের নয়।আমি তুহার পক্ষে আর তাই আমাদের দাবি মানতেহবে।
– হ্যা কাব্য দা দাদাই আমার জিজু তাই আমাদের শালিকাকে তাদের পাওনা দিতেই হবে।
– এটা কিন্তু ঠিক না।( কাব্য)
– কিসের কি ঠিক না একদম ঠিক।
কথাটা বলেই কুহু ফিতা টপকে মেয়েদের দিকে চলে গেলো। এই পাশের ছেলে গুলোর চোখ বেড়িয়ে আসার জোগাড়।
– আরে কুহু তুই ওখানে কেন। এইদিকে আয় বলছি।
– কোনো মতেই না আমি তুহা দির বোন তাই সেই হিসাবে আমি দাদাই এর শালিকা আমারও তো পাওনা আছে তাই না। তাই মেটাও আমাদের পাওনা।
– কাজটা ভালো করলি আন।
– দ্যাখা যাবে টাকা দাও।
ওদের কান্ড দেখে ফারাবির ভীষন হাসি পাচ্ছে। কিন্তু বর বলে হাসতে পারছে না কোনোরকমে হাসি চেপে কাব্যকে ইশারা করলো দিয়ে দেবার জন্য। কাব্য হাত মুখ কুঁচকে টাকাটা দিয়ে দিলো। আর চোখ দিয়ে বুঝিয়ে দিলো তোদের দেখে নেবো। মেয়েরা পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো।
ফারাবি আর তুহার বিয়ে চালু হলো। তুহা কবুল বলার সময় কেঁদে দিলো। একটা মেয়েই জানে কবুল বলার সময় তার কষ্টটা। সমস্ত কিছু অন্য জনের হাতে তুলে দিলো তার সুখ দুখ তার স্বাধীনতা সবকিছুই। তুহা আর একা নয় ওর জীবনের সাথে জড়িয়ে গেলো ফারাবির জীবন। ওহ আর তুহা, মিরাজের মেয়ে এখন তুহা চৌধুরী বাড়ির বড়ো বউ। ফারুক চৌধুরীর পুত্রবধূ ফারাবি চৌধুরীর বউ।
যাবার সময়ে তুহা সহ বাকিরা খুবই কান্নাকাটি করেছে। মেধা ও খুশিও কেঁদে দিয়েছে ওর কান্না দেখে মিহাকে সামলাতে পারা যাচ্ছে না প্রচন্ড কান্নাকাটি করছে।
তুহার বাবা ফারাবির হাতে তুহাকে তুলে দিয়ে বলল…
– ফারাবি বাবা আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি আমি জানি তাই বলে কখনোই আমার প্রানের টুকরো তুহা মাকে কষ্ট দিয়ো না। বড্ড আদরের মেয়ে আমার, তাহা চলে যাবার পর আমি তুহাকে আগলে বেঁচে ছিলাম তাই ওর কিছু হলে আমি ম/রে যাবো আমার মেয়েটাকে আগলে রেখো আজীবন।
– বাবা আপনি আমার হাতে আপনার মেয়েক নয় আমার কলিজাকে, আমার প্রান ভোমড়াকে তুলে দিলেন। আর আমার প্রানভোমড়া ভালো না থাকলে আমি কিভাবে ভালো থাকবো বলুন আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি তুহাকে আমি সমস্ত কিছু থেকে রক্ষা করবো। আগলে রাখবো বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়াবো।কথা দিলাম।
তুহার বাবা কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে চলে গেলেন। তুহা আর ফারাবি রওনা দিলো চৌধুরী ভিলার উদ্দেশ্যে। তুহার সাথে মেধা ও খুশি এসেছে। মিহা আসার কথা থাকলেও বাবা মাকে কে সামলাবে এই জন্য ও যায়নি। তুহার সাথে মেধা আর খুশি এসেছে, খুশি একা হয়ে যাবে তাই ওকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মিহার সাথে তিশা রয়ে গেছে।
মিহা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ কেউ একজন ওর কাঁধে হাত রাখলো…
#চলবে…
#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_১৭)
মিহা মন খারাপ করে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। তুহার সাথে ঝামেলা হলেও কখনোই বলা হয়ে উঠেনি এতটা ভালোবাসে। আজকে তুহা চলে যাবে শুনে কতটা কষ্ট হয়েছিলো সেটা একমাত্র ওই জানে। সম্পর্ক গুলো এইরকমই কাছে থাকলে বোঝা যায় না দূরে গেলে বোঝা যায় কি ছিলো।
মিহার ভাবনার মাঝেই ওর কাঁধে কেউ একজন হাত রাখলো পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো মেহতাব দাঁড়িয়ে আছে।
– মন খারাপ।
– হুম একটু।
– কষ্টগুলো আমার সাথে শেয়ার করতে পারো হালকা লাগবে।
মিহা মেহতাবের দিকে তাকালো। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল…
– আমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবেন।
– কি বলো।
– আপনি দিভাই কে কতদিন ধরে ভালোবাসেন।
– এইসব আবার কেন।
– আপনি কি সত্যি আমার মন ভালো করতে চান।
– হুম
– তাহলে বলুন প্লিজ।
মেহতাব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো…
– আজ থেকে ৩ বছর আগে যখন আমি দেশের বাইরে চলে যাবো বলে তোমাদের বাড়িতে দেখা করার জন্য আসলাম তখন বুঝেছিলাম আমি তুহার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছি। তারপর যখন দেশ ছাড়লাম তখন বুঝলাম শুধু দূর্বল নয় ভালোবাসতে শুরু করেছি তখন আমি তুহার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। নিজের মনের আসল অনুভূতি গুলো জানার জন্য। বুঝলাম তুহাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
– তাহলে দিভাইকে কথাগুলো বলেননি কেন।
– ৩ বছর পর দেশে এসেই তুহার সাথে প্রথম দেখা করতে গিয়েছিলাম তুহা আমাকে যখন জড়িয়ে ধরেছিলো তখন আমার গোটা পৃথিবীটাই থমকে গিয়েছিলো আমি সিদ্ধান্ত নিই আজকেই ওকে নিজের মনের কথা বলবো তাই ওকে নিয়ে সারা শহর ঘোরার প্রস্তাব দিই আর ওহ সহজেই রাজি হয়ে যায়। কিন্তু কোনো কারনে তুহাকে সত্যি টা বলতে পারিনি। বারবার আটকে গেছি। তুহাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে এসে আমি বুঝতে পারি…
– কি বুঝতে পারেন।
– তোমাদের বাড়িতেই এসে দেখি ফারাবি উপস্থিত আছে। আমি সেইদিন ফারাবির চোখে স্পষ্ট ভালোবাসা লক্ষ্য করেছিলাম তুহার জন্য। আমাকে তুহার সাথে দেখে জেলাস হয়ে তোমাকে নিয়ে ভেতরে যাওয়া সবটাই খেয়াল করেছিলাম আমি আর বুঝেছিলাম ফারাবিও তুহাকে ভালোবাসে।
– ওইজন্যই কি বিয়েতে না করে দিলেন।
– না। আমি তুহার চোখেও ভালোবাসা দেখেছিলাম।
– কিভাবে।
– তোমার ভেতরে চলে যাবার পর। তুহা আমার সাথে কথা না বলে বারবার ভেতরের দিকে উঁকি মারছিলো, বারবার ছটফটে করছিলো জানার জন্য তোমার ভেতরে কি বলছো। ফারাবি বেড়িয়ে যেতেই তুহা রাগী লুক নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলো আমার আর বুঝতে অসুবিধা হয়নি তুহা ফারাবিকে নিয়ে জেলাস। তুহা নিজের অজান্তেই ফারাবির প্রতি দূর্বল।
– সম্পর্কটা তো বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়ে গিয়েছিলো। জিজু ঠিক সময়ে না আসলে তো বিয়েটা হয়েই যেত।
মেহতাব কিছু না বলে রহস্যময় একটা হাসি দিলো। যেটার মানে মিহার অজানা।
ওইদিকে….
তুহাকে ফারাবির ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। মেধা আর কুহু মিলে তুহাকে কালো বেনারসী পরিয়ে দিয়েছে আর সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। তুহা বিছানায় বসে আছে ,মনের ভেতরে ধুকধুক করছে ভয় আনন্দ দুটোই হচ্ছে।
ফারাবি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ঢুকতে পারছে না। বিচ্ছু বাহিনী আবারো এট্যাক করেছে টাকার জন্য।
– আবার টাকা আর কত টাকা নিবি তোরা।
– ভাই এইবার আমাকে দাও আগের বার ওদের দিয়েছো।(কাব্য)
– তুই ওহ।
– হুম দাও।
– আচ্ছা কত বল।
– ৩০
– ওহ ৩০ টাকা।
– নো নো জিজু ৩০ হাজার বের করো(খুশি)
– একটু কম করো আমি ভিখারী হয়ে যাবো যে।
– আচ্ছা ২০ দাও।
– ১০ ১০।
– আচ্ছা তাই দাও (মেধা)
ফারাবি একটা টাকার নোট বের করে বললো…
– টাকা হাতে দেবো আর আমাকে ঢুকতে দিতে হবে।
– ওকে ঠিকাছে জিজু।
– ওকে শালিকা।
ফারাবি খুশিরহাতে বান্ডিলটা দিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা দিতে দিতে বললো…
– গাধাদের দল একটা।
ফারাবির কথার মানে কেউ বুঝতে পারলোনা। ফারাবি দরজা বন্ধ করে দিয়ো পাগলের মতো হাসতে লাগলো। তুহা ফারাবির হাসির শব্দ পেয়ে ঘোমটা তুলে দেখলো ফারাবি মনের সুখে হেসেই যাচ্ছে। তুহা মুগ্ধ হয়ে হাসিটা দেখতে লাগলো কিন্তু হাসছে কেন!
অন্যদিকে…
টাকাটা নিয়ে গিয়ে গোনার সময় দেখলো উপরের টা শুধু আসল নোট ভেতরের গুলো সব জাল নোট। সকলের মাথায় হাত ফারাবির গাধা বলার কারনটা হারে হারে টের পাচ্ছে ওরা। কাব্য খুশির সামনে দাঁড়িয়ে বললো…
– যত হলো আপনার জন্য। তখন যদি আপনি টাকাটা দেখে নিতেন তো।
– আমি কিভাবে জানবো এইরকম হবে আর আপনিও তো ছিলেন আপনি দেখে নিতে পারলেন না।
ব্যাস লেগে গেলো যুদ্ধ। দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হতেই থাকলো। বাকিরা হা করে ওদের কান্ড দেখছে,, আরে না যেযার ব্যস্ত। মেধা ফোন টিপছে আর কুহু মিহার সাথে কলে কথা বলছে আর ওরা দুজন ঝগড়া করছে। ঝগড়া করলে নাকি ভালোবাসা জন্মায়/বাড়ে। আবার দুই ঝগড়ুটের মধ্যে মাদকতার আর্বিভাব ঘটবে না তো!
ফারাবি হাসি থামিয়ে দেখলো তুহা ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ফারাবি তুহার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো…
-কি হলো।
-না আপনি এত হাসছেন কেন।
– শুনবে।
– হুম।
ফারাবি সবটা বললো তুহাকে তুহাও হাসছে কথাটা শুনে। ফারাবি মুগ্ধ হয়ে ওর তাহু পাখিকে দেখছে।
– তাহু পাখি।
তুহা ফারাবির নেশালো কন্ঠ শুনে চুপ করে গেলো। ফারাবি তুহার হাতদুটোকে নিজের হাতের ভেতরে বন্দি করে বললো..
– তাহু পাখি তুমি খুশি তো।
– হুম।
ফারাবি কিছু না বলে তুহাকে কোলে তুলে নিলো। তুহা ভয় পেয়ে ফারাবির গলাটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবি তুহাকে কোলে করে বারান্দায় নিয়ে আসলো। আজকে পূর্নিমার রাত রাতের আকাশটা চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। মুগ্ধ হয়ে দেখছে।
– তাহু পাখি।
– বলুন।
– তুমি কাকে চাও, তোমার প্রেমিক পুরুষ না ফারাবিকে।
– এটা কি ধরনের প্রশ্ন।
– হুম এটাই তো প্রশ্ন আমি তোমার সামনে নিজেকে দুইভাবে উপস্থাপন করেছি এখন তুমি কোনটা চাও।
তুহা কিছুটা ভেবে বললো…
– মিষ্টার চৌধুরীর শাসন, কেয়ার আর আমার প্রেমিক পুরুষের মতো ভালোবাসা, আগলে রাখা এইগুলোই চাই।
ফারাবি মুচকি হেসে তুহাকে জড়িয়ে ধরলো।
– আচ্ছা আপনি আমার সামনে সরাসরি না এসে প্রেমিক পুরুষ হিসাবে ধরা দিতেন কেন?
– তোমার বাবাকে তুমি অনেক ভালোবাসতে হয়তো এইসব কথা বিশ্বাস করতে না। তাই বলেও কোনো লাভ হতো না। আমি চেয়েছিলাম একটু একটু রে নিজের প্রতি দূর্বল করে তোমাকে নিজের করে নেবো।
– আচ্ছা বাবা যদি না মানতো তো।
– তাহলে তোমাকে তুলে নিয়ে আসতাম।
– বললেই হলো।
– হুম। জানো তাহু পাখি আমি আমার জীবনে একজনের কাছে ঋণী হয়ে গেলাম। তার কাছে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
– কার কাছে।
– মেহতাব।
– কেন?
– জানতে চাও।
– হুম।
ফারাবি বলতে শুরু করল.. তুহা থম মেরে বসে রইলো।
#