তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব ১৮+১৯

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_১৮)

তুহা ফারাবির কথাগুলো শুনে থম খেয়ে গেলো।

– এসব কি বলছেন।
– হুম এটাই সত্যি, মেহতাব না থাকলে আমি হয়তো তোমাকে হারিয়েই ফেলতাম।
– কিভাবে!
– তোমাকে মেহতাবের সাথে দেখার পর আমি খুবই রেগে গিয়েছিলাম। তোমাকে জেলাস করার জন্য আমি মিহাকে নিয়ে ঘরে নিয়ে যায়। পরেরদিন, মেহতাব হুট করেই আমার সাথে দেখা করার জন্য কলেজে আসে। আমি অবাক হয়…

অতীত…

– আপনি এখানে।
– হুম আমার কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে।
– বলুন।
– এখানে নয় আমার সাথে চলুন।
– ওকে।

মেহতাব ফারাবিকে নিয়ে একটা কফিশপে আসলো।

-এবার বলুন।
– আপনার আর তুহার মধ্যে আসল সম্পর্ক টা কি?

ফারাবি চমকালো। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।
-দেখুন আমি সবটার কিছুটা জানি। আপনার কাছ থেকে আমি সত্যি টা জানতে চাই। আমি আপনার আর তুহার চোখে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখেছি। আর সবথেকে বড়ো বিষয় কি জানেন তুহার বাবা আমার সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছে।

ফারাবির মাথায় বজ্রপাত হলো।
– আঙ্কেল কিভাবে এটা করতে পারলো একজন বিবাহিত মেয়ের বিয়ের কথা ভাবছেন কিভাবে উনি।
– বিবাহিত মানে?

ফারাবি নিজের জানা সবটুকুই বললো। মেহতাব চমকালো।

– চিন্তা করবেন না। আমি আমার সবটা দিয়ে আপনাদের এক করবো। এই অন্যায়টা আমি কিছুতেই হতে দেবো না। কথা দিলাম।

তারপরে মেহতাব সাহায্য করতে থাকে।

বর্তমান…
– তারমানে তো আগেই সবকিছু জেনে গিয়েছিলো তবুও বিয়ে পর্যন্ত আসলো কেন।
– তোমার বাবা হুট করেই ওইরকম করবে এটা ওর ধারনাতেই ছিলো না। ঘুরতে যাবার বিষয়টাতে তোমার বাবা জেনে যায় আমিও ছিলাম ওখানে তাই উনি আরো রেগে যায়।
– ওহ।
– আমার আর মেহতাব প্ল্যান করেই দীঘা ঘুরতে যাবার প্ল্যান করি। যাতে তুমি নিজের মনের কথা বুঝতে পারো। ফিরে আসা থেকেই তুমি আমাকে ইগনোর করতে শুরু করলে তারপরে আবার বিয়ে,,সেদিন মেহতাব ফোন না করলে কি করতাম জানা নেয় আমার।
– সত্যি উনি খুব ভালো।
– তাহু পাখি হয়তো তোমাকে কথাটা কোনোদিন বলতে পারবো না কিন্তু মেহতাব যে তোমাকে ভালোবাসে তাই তোমাকে তোমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে(মনে মনে)

তুহাকে এইসব থেকে বের করার জন্য ফারাবি বললো…
– আপনি কি এইভাবেই সারারাত থাকবেন।
– না ঘুমাবো।
– ঘুমাবে তুমি।
– হ্যা নাহলে কি করবে।
– আজকে ঘুমানো বাদ। আজকে আমি তোমাতেই ডুব দেবো।

ফারাবি তুহাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেলো। দুই কপোত কপোতি ডুব দিলো ভালোবাসার সাগরে।

পরেরদিন…

পরেরদিন সকালটা হলো একটু আলাদাই। তুহা আর মেয়ে নেয় হয়ে গেছে বউমা। চৌধুরী বাড়ির বউমা। ফারাবী আর তুহা এক হয়ে গেছে। আজকে ওদের বৌভাত।সকলেই এসেছে, তুহাকে দেখে মিহা তো কেঁদেই দিলো।
– জানিস দিভাই আগে যদি জানতাম তোকে ছাড়া থাকতে এইভাবে কষ্ট হয়ে তাহলে কখনোই আমি তোর বিয়ে দিতে দিতাম না।
– আরে পাগলি কাঁদছিস কেন কাঁদিস না সোনা। আমার কষ্ট হচ্ছে তো।
– হুম।

মেহতাব তুহার কাছে এসে বললো…
– কি তুহা রানি তুমি খুশি তো।
– হুম খুশি ধন্যবাদ আপনাকে।

মিহা একবার তুহা আর মেহতাবের দিকে তাকালো। মেহতাব মুচকি হেসে বললো…
– বর মশাই তো দেখছি এখন থেকেই বউ পাগলা বিয়ের রাতেই সব বলে দিয়েছে।

তুহা মাথা নীচু করে লজ্জায় হাসলো। মিহা কিছুই বুঝতে পারছে না। মেহতাব বললো…
– যাই হোক তবে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ো না। আমি চাইলেও তোমাকে আর ফারাবিকে আলাদা করতে পারতাম না‌। তোমাদের জুটি অনেক আগেই বাঁধা হয়ে গিয়েছিলো তাই আবারো একবার এক করে দিতে সহায়তা করলাম।

তুহা কৃতজ্ঞ মূলক হাসি দিলো। মেহতাব ওহ হেসে চলে গেলো।
-কি কেস দিভাই।
-মেহতাব দাই আমাকে আর ওকে এক করে দিয়েছে।

মিহা বুঝতে পারলো মেহতাবের রহস্যময় হাসির কারনটা।

সময় বহমান,,, কেটে যায় আরো কয়েকটা দিন। তুহা আর ফারাবি আনন্দেই আছে। পরিবারের প্রতিটা মানুষই খুশি। তুহাকে বাড়ির প্রতিটা মানুষই আগলে রেখেছে। ফারাবি কলেজের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় অংশগ্রহণ করেছে। মেধা আর খুশি দুজনেই তুহাকে মিস করছে। তুহার ও ইচ্ছা করছে কলেজে যাবার জন্য কিন্তু বলতে পারছে না। রাতে খাবার টেবিলে ফারাবির বাবা বললো…
– আমি চাই তুহা মা পড়াশোনাটা শেষ করুক। কালকে থেকেই তুমি কলেজে যাবে।

তুহা খুশি হয়ে যায়। ফারাবির মুখেও তৃপ্তির হাসি। বড়োরা খেয়ে উঠে গেছে আছে শুধু তুহা,ফারাবি,কাব্য আর কুহু। কাব্য মজা করে বললো…
– দাভাই বউকে কলেজে পাঠাচ্ছো। পরে দেখবে বউ অন্য কারোর সাথে ফুস।
– ওই ব্যাটা তুই কি আমার বউকে যার তার মতো পেয়েছিস। এতগুলো বছর কেউ ভাগাতে পারলো না আর এখন পারবে। আমার চরকায় তেল না লাগিয়ে নিজেরটাই লাগা ভাব তোর বউ কি করবে।
– দাভাই ওর জন্য খুশি দিই ঠিক আছে।

কথাটা শুনেই কাব্য ফুঁসে উঠলো।
– এই কুহু ওই ঝগড়ুটের নাম নিবি না। ওকে যদি একবার সামনে পাই না তো কি করবো আমি নিজেই জানি না দেখিস।

কাব্য রাগ করে চলে যায় তুহা আর ফারাবি কিছুই বুঝতে পারলো না।
– কুহু কাব্যদার কি হলো খুশির সাথে।

কুহু ওদের সবটা খুলে বলতেই তুহা আর ফারাবি হাসতে লাগলো। ওদের দুজনকে হাসতে দেখে কুহু বললো…
– তোমাদের একসাথে কি কিউট লাগে।

দুজনেই থমকে গিয়ে একে অপরের দিকে তাকালো। কুহু মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো। পরেরদিন সকালটা একটু অন্যরকম হবার ছিলো সত্যি অন্যরকমই হলো..

চৌধুরী বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসলো। বাড়ির প্রতিটা মানুষই থমকে গেছে। কে কাকে সামলাবে নিজেরাই ভেঙে পড়েছে।

একটা নিউজ সকলেই থমকে দিয়েছে। কারোর ধারাতেই ছিলো না এইরকম কিছু হবে সেটা ভাবনার বাইরে ছিলো। ফারাবির ছোটমাকে সামলানো যাচ্ছে না উনি কেঁদেই চলেছে।

– মা একটু তো থামো আর কত কাঁদবে। দেখবে দিভাই এর কিছুই হয়নি,দিভাই পুরোই সুস্থ হয়ে আছে। (কুহু)

– আমার মায়ের মন আমার মনটা খুব অশান্ত হয়ে আছে। আমার মন বলছে আমার কথার কিছু হয়েছে আর দ্যাখ সত্যি আমার কথা… (বলেই কেঁদে উঠলেন উনি। )

বাড়িটা পুরোই অশান্ত হয়ে আছে। সবাই কাঁদছে। বাড়ির ছেলেরা সবাই হসপিটালে। কথাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে। কথা সু/ই/সা/ই/ড করার চেষ্টা করেছে। তুহা কাকে শান্তনা দেবে বুঝতে পারছে না কিভাবেই বা দেবে নিজেই তো শকে আছে। বারবার কথার বলা কথা গুলো কানে বাজছে,,

– আমি ভালো নেয় তুহা রানি আমি ভালো নেয়।

তুহা চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায়। বাড়ির সকলে তুহাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লো। অনেকক্ষন পরও যখন জ্ঞান ফিরলো না তখন বাধ্য হয়েই ডক্টর ডাকতে হয়। ডক্টর জানায় অতিরিক্ত উত্তেজিত হবার কারনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ফারাবি কোনো উপায় না পেয়ে বাড়িতে চলে আসে।

তুহার জ্ঞান আসতেই কথাকে দেখার জন্য ছটফট করতে থাকে।

– এই আমাকে কেউ দিদিভাই এর কাছে নিয়ে যাও না আমি একবার দেখবো।আমার অনেককিছু জানার আছে নিয়ে চলো না আমাকে।
– তাহু পাখি শান্ত হও। তোমাকে তো কথার কাছে নিয়ে যাবো। যাবে তো।
– হুম।
– তাহলে একদম শান্ত থাকবে তো প্রমিস করো।
– আচ্ছা প্রমিস।

তুহাকে নীচে নিয়ে আসলো ফারাবি। নীচে এসে থমকে যায় তুহা..
#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_১৯)

তুহাকে ফারাবি নীচে নিয়ে আসলো। তুহা নীচে এসেই থমকে গূলো,সকলেই কান্নাকাটি করছে। আর একটা জায়গায় একটা লা/শ রাখা আছে। তুহার মনের ভেতরে ঝড় উঠেছে। লা/শটা ধরে তুহা চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।

– দিদিভাই এটা তুই কি করলি কেন করলি। কেন আমাকে এইভাবে ছেড়ে চলে গেলি।

কথাকে দাফন করা হয়েছে। পুলিশ কেস হবার জন্য কথার লা/শ পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। সবথেকে বেশি ভেঙে পড়েছে কথার মা আর তুহা। কথার খুব আদরের ছিলো তুহা কথার অকাল মৃ/ত্যু তুহাকে এলোমেলো করে দিয়েছে।

কেটে যায় ১ মাস। সকলেই তার নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও তুহার পৃথিবী থমকে গেছে। একটা ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তুহা।

– তাহু পাখি কি হয়েছে তোমার। দ্যাখো কথা তো আর নেয় আর এটা তোমাকে মেনে নিতেই হবে।
– আমিই দিদিভাই এর মৃ/ত্যু/র জন্য দায়ী। আমি দায়ী।

তুহা কাঁদতে শুরু করল। ফারাবি ঘাবড়ে গেল তুহার কথাতে।

– কি সব বলছো তুমি।
– হ্যা হ্যা দিদিভাই আমাকে বলেছিলো ওহ ভালো নেয়। আর আমি ওর গায়ে মারের দাগ দেখেছি
– কি বলছো সবটা বলোনি।

তুহা ফারাবীকে সবটা বললো। ফারাবি সবটা শুনে থমকে গেলো। মাথায় কিছু আসছে না। কথার গায়ে মারের দাগ কেন? কথাকে কি ওর স্বামী মারতো!

– আগে এসব বলো নি কেন?
– আমার মনে ছিলো না বিয়ের ঝামেলাতে। আগে বললে হয়তো এইটা হতো না।

তুহা কাঁদতে লাগলো। ফারাবি তুহাকে জড়িয়ে ধরলো।

– তাহু পাখি প্লিজ মন খারাপ করো না। এখানে তো তোমার কিছু হাত নেয় আর আমরা অন্যায় কারী কে শাস্তি দেবো একসাথে।
– হুম।

পরেরদিন সকালে…

তুহা কাউকে কিছু না বলেই বেড়িয়ে যায়। যদিও বিষয়টা ফারাবির অজানা নয়। তুহাকে দেখে চমকে উঠলো কথার শাশুড়ি মা।

– তুহা তুমি এখানে।
– হ্যা আন্টি আমি এখানে আমার কিছু কথা জানার আছে।
– কি কথা মা।
– বসে কথা বলি।
– হুম ভেতরে এসো।

তুহা ওনার সাথে ভেতরে আসলেন। উনি তুহাকে বসিয়ে দিয়ে বললো..
– কি জানতে চাও বলো।
– জিজু কোথায়।
– ওহ তো কালকেই চলে গেছে।
– কি?
– হুম মা। আমরাও আর আটকাই নি ওকে,কথাকে হারিয়ে ছেলেটা বড্ড ভেঙে পড়েছে।
– সত্যি কি ভেঙ্গে পড়েছে।
– মানে?
– মানে তো আমার জিজ্ঞাসা করার কথা। আমাকে একটা উত্তর দিন। জিজু আর দিদিভাই কি খুশি ছিলো ওদের সম্পর্ক টা নিয়ে।
– হুম।
– তাই যদি হয় তাহলে দিদিভাই সু/ই/সা/ই/ড করলো কেন?
– জানি না আমরা। আমরাও তো একি কথা খুঁজে চলেছি। আমাদের ওহ মানসিক পরিস্থিতি ভালো নেয় মা তাই আমাদের আর বিরক্ত করো না।
– ওকে।

তুহা ওনাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। মনের মাঝে অনেক গুলো প্রশ্ন ঘুরছে কিছুতেই তার সমাধান পাচ্ছে না।

বাড়ি ফিরে আসতেই ফারাবির মা বললো,
– তুহা কোথায় গিয়েছিলি মা।
– মা আমার একটু কাজ ছিলো।
– ওহ।
– আমাকে কিছু কথা বলতে পারবে না
– কি কথা।
– এখানে নয় আমার ঘরে এসো।

তুহা আর ওর শাশুড়ি মা ঘরে যায় তুহা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে ওর শাশুড়ি মায়ের কাছে বসে বললো।
– মা দিদিভাই এর বিষয়ে আমাকে সবটা বলো। কিভাবে বিয়ে হলো। সবকিছুই।
– কিন্তু তুই এসব জেনে কি করবি।
– মা পরে সব বলবো এখন সবটা বলো।
– আচ্ছা। আজ থেকে ৫ বছর আগে কথা সেইমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে, তখন আকাশ ( কথার বর) বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, বাড়ির সকলেই রাজি হয়ে যায় আর কথা আর আকাশের বিয়ে হয়ে যায়। আকাশ তো কথাকে খুব ভালোবাসতো।
– মা বিয়ের এতদিন হয়ে গেছে তবুও ওরা বেবি নেয়নি কেন?
– জানি না সঠিক, কথা এই বিষয়ে কাউকেও কিছু জানায় নি। আমরাও বলেছিলাম বেবি নেবার জন্য কিন্তু ওহ কোনো রিয়াক্ট করেনি।
– ওহ।
– জানিস আমাদের ওইরকম শান্ত শিষ্ট মেয়েটা কেন এই কাজ করলো ভাবতেই কষ্ট হয় । কথা যে নেয় এটা মানতে চাই না মন। মনে হয় এই এখুনি বড়ো মা বলে জড়িয়ে ধরবে। মেয়েটা বড্ড ভালো ছিলো।

তুহা নিজের চোখের পানিটা মুছে নিয়ে বললো…
– মা আমি কথা দিচ্ছি আজকে যার জন্য দিদিভাই এই কাজটা করেছে। তাকে আমি শাস্তি দেবেই।
– হ্যা মা তাই করিস। আমিও চাই কথার এই কাজ করার পেছনে কারনটা কি।
– হুম মা সেটাই তো‌ রহস্য। তবে একটা রিকুয়েস্ট এখনি বাড়ির কাউকে কিছুই জানিয়ো না।

কেটে যায় আরো একটা মাস। তুহা কিছুই জোগাড় করতে পারেনি। আজকে কথার শাশুড়ি মা আর কথার মামি শাশুড়ি ,সাথে আরো দুজন মহিলা এসেছে চৌধুরী বাড়িতে। কথার মা কান্নাকাটি করে দিয়েছেন ওনাদের দেখে।

ওনারা দুঃখ প্রকাশ করছেন সবকিছুর জন্য। এসব দেখে তুহার রীতিমতো রাগ উঠছে,তবুও সবকিছু‌ সহ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আর সহ্য হলো‌না,, কথার মাঝেই হুট করেই কথার মামি শাশুড়ি বলে উঠলেন…
– বেয়াইন আপনার ছোট মেয়েটা তো‌ বেশ বড়ো হয়ে গেছে।
– এই তো।( কথার মা)
– বলছি কি আমাদের আকাশের সাথে আপনার ছোট মেয়েকে খুব ভালো মানাবে। আপনাদের যদি কোনো‌ আপত্তি না থাকে তাহলে …..

ওনাদের এইরকম প্রস্তাবে বাড়ির সকলেই চমকে উঠলো। বিশেষ করে‌ কুহু। কুহু করুন চোখে ওর মায়ের দিকে আর বড়ো মায়ের দিকে তাকাচ্ছে। বাড়িতে ছেলেরা কেউই নেয়। ফারাবির মা কি করবে বুঝতে পারছে না। ঠিক তখনি তুহা মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বললো…
– কেন আন্টি আপনাদের ওই ছেলের জন্য আর কোনো ছেলে পাননি বুঝি তাই আমাদের কুহুর গলাতে ঝোলাতে চাইছেন।
– কে তুমি আর এসব কি বলছো( বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া মহিলাটি)

ফারাবির মা বলল…
– ওহ আমার বউমা তুহা আর তুহা কি হচ্ছেটা কি।
– মা আমাকে বলতে দাও।‌ আর শুনূন আপনারা আমাদের বাড়ির মেয়ের সাথে আপনাদের ওই আকাশের কোনো সম্পর্ক করতে আমি দেবো না।‌আর এটা আপনারা কান খুলে‌ শুনে রাখুন।

কথাটা শেষ করার পরেই তুহার গালে একটা থাপ্পর পড়লো। তুহা,ফারাবির মা,কুহু থমকে যায়। থাপ্পরটা দিয়েছেন কথার মা।‌ তুহা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে, আর ওই মহিলাগুলো‌ হাসছে। তুহা লজ্জায় এক মূহুর্ত আর না দাঁড়িয়ে চলে‌গেলো। কুহুও ওর পেছন পেছন চলে গেলো। আর ফারাবির মা বললো…
— ছোট বোন আমার এটা কি করলি তুই।

উনি ফারাবির মায়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে কথার শশুড়বাড়ির লোকদের উদ্দেশ্য বললেন…
– আপনারা এখন দয়া করে আসুন।‌বিষয়টা আমরা ভেবে জানাবো।

ওনারা চলে যায়। কথার মাও নিজের ঘরে চলে যায়। ফারাবির মা তুহার ঘরে‌ গিয়ে দেখলেন তুহা আর কুহু দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।

– মা আমার তোরা কাঁদিস না। আমি কিছুতেই কুহুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য কোথাও বিয়ে দিতে দেবো না।‌আর আকাশের সাথে তো নয়ই।
– বড়ো মা আমার জন্য আজকে দিভাই মার খেল। আর তুমি তো জানো মা কত জেদি মা যদি ঠিক করে তো‌ কেউই আটকাতে পারবে না।
– কুহু সোনা তোর দিদিভাই নেয় ঠিকই কিন্তু তোর দিভাই আর দাদাই বেঁচে আছে আর তারা থাকতে তোর ক্ষতি হতে দেবে না।‌ দিদিভাইয়ের সাথে অন্যায়ের শাস্তি সকলকেই পেতেই হবে।

রাতে…

সবাই খেতে বসেছে‌ তখন কথার মা বললো…
– আজকে আকাশের মা ওহ বাড়ির কয়েকজন মহিলা এসেছিলেন ওনারা কুহুকে ওনাদের আকাশের বউ করে নিয়ে যেতে যান।

সকলেই চমকে উঠলো। খাওয়া বন্ধ‌করে দিয়ে কথার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে সকলে।

– কি বলছো এসব তুমি ( কথার বাবা)
– হুম আর আমি এই প্রস্তাবে রাজি।‌আমি চাই আকাশ আর কুহুর বিয়ে হোক।( কথার মা)
– না।‌ (তুহা)
– তুহা তুমি আমাদের বিষয়ে কথা বলবে না। নাহলে কিন্তু আবারো একবার(কথার মা)
– মামিমনি আমাকে মারো আর যায় করো আমি বেঁচে থাকতে কুহুর এত বড়ো ক্ষতি হতে দেবো না।
– ক্ষতি কেন হবে।‌ছেলে খুবই ভালো।
– তাই নাকি আচ্ছা মামিমনি ছেলে যদি ভালোই হয়ে থাকে তাহলে তোমার বড়ো মেয়ে আজ পৃথিবীতে নেয় কেন?

উনি থতমত খেয়ে গেলেন। কি বলবেন খুঁজে পেলেন না।

– আপনাদের কারোর মনে প্রশ্ন জাগে নি কি হয়েছিলো যার জন্য দিদিভাই এই রকম একটা কাজ করলো। বলুন জাগেনি।
– হ্যা তুহা আমার মনে প্রশ্ন‌ এসেছিলো তো।(কাব্য)
– আমি সঠিক জানি না ঠিক কি কারনে দিদিভাই এই কাজটা করেছে। তবে কোথাও না কোথাও এই সবকিছুর জন্য দায়ী মিসেস সাবিনা চৌধুরী (কথার মায়ের নাম)।

সকলেই চমকে উঠলো। কথার মা তুহা বলে চিৎকার করে উঠলো।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here