তোর চোখে আমার সর্বনাশ
১০.
জীবনে প্রথম শাড়ি পড়ল ফারাহ্। ছোট থাকতে ও শাড়ি পড়েনি , শখের বশে ও না। একটু আগে পপি শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে গেছে। পার্পল শাড়ি। কেমন জানি লজ্জা লজ্জা ফিলিংস হচ্ছে। হয়তো আজকে প্রথম শাড়ি পড়ায়। গ্রামে রাতের বেলা টা বেশ মনোরোম। চার দিক থেকে ঝিঝি পোকার ডাক আসে। রাতের খাবার সেরে যে যার রুমে চলে গেল। ফারাহ্ সানজিদার রুমে গিয়ে বলল ,
” আপু আমি আজকে তোমার সাথে থাকি। ”
” খাটে হবে না বোন দুই টা বাচ্চা আমার। তুই আমি কি করে হয় বল? তুই নাহিয়ানের সাথে না থেকে এখানে কেনো? ”
ভ্রুদ্বয় কুটি করে চেয়ে আছে সানজিদা। ফারাহ্ ইতস্তত বোধ করে মুখ ফুটে বলে উঠে ,
” উনি তো বললই আজকে যাতে উনার সামনে না যাই। সন্ধ্যা থেকে এক বার ও দেখা হয়নি আমাদের। ”
” আসলেই গাধী তুই স্বামীরা রা’গ অভিমান করে অনেক কিছু বলে সেটা বুঝা উচিত স্ত্রীদের আর তুই বেঁকে বসে আছিস আমি থাকতে তা হতে দিব না যা ওই রুমে যা। ”
ফারাহ্ গুটি গুটি পায়ে নাহিয়ানের রুমের দরজার পাশে দাঁড়ালো। দরজার নবে্ হাত দিতে গিয়ে হাত গুটিয়ে নিয়ে পুনরায় সানজিদার রুমে চলে গেলো। সানজিদা শামীম আর সানার গায়ে কাঁথা টেনে দিতে দিতে বলল ,
” আবার চলে এলি? ”
” আপু আমার ভ’য় করছে। ”
রিনরিনে সাথে বলল ফারাহ্। সানজিদা শ্বাস ফেলে ফারাহ্ হাত ধরে নাহিয়ানের রুমের কাছে এলো। দরজা খুলে বাহির থেকে ফারাহ্ কে ভিতরের দিকে ধাক্কা মেরে বলে উঠল ,
” ভাই তোর বউ এনে দিয়ে গেলাম। ”
নাহিয়ান বেডে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল। তখনই সানজিদার কথা শুনে মাথা তুলে তাকালো দরজার দিকে তাকালো। মুহূর্তে থমকে গেল পার্পল পরি কে দেখে। ফারাহ্ পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিল। পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে সানজিদা ডোর লক করে চলে গেলে। বড়সড় একটা ঢোক গিলে আস্তে আস্তে নাহিয়ানের দিকে ঘুরল। কিন্তু চোখে চোখ মিলালো না। অজানা অনুভূতির তাড়নায়। শাড়ির আঁচল খাঁমচে ধরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নাহিয়ান মনে মনে শুধায় , ‘ সামনে আসতেই না করে ছিলাম! এলি তো এলি আরো মারাত্মক রূপ নিয়ে। ‘
ফারাহ্’রভহার্টবিট দ্রুত গতিতে উঠানামা করছে। আজকে প্রথম বার নিজ স্বামীর সামনে শাড়ি পড়ে এলো। নাহিয়ান ফের ল্যাপটপে তাকিয়ে ভারী গলায় বলল ,
” ঘোড়ার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে খাটে এসে বস। ”
ফারাহ্ চট করে মাথা তুলে তাকালো। নাহিয়ান চরম লেভেলের ‘আ’ ‘ন’ ‘র’ ওকার ‘ম’ আকার ‘ন’ ‘ট’ রিষিকার ‘ক’ = আনরোমান্টিক। পপি শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে বলে ছিল , ‘দেখও আজকে ভাসুর সাহেব তোমার থেকে চোখ সরাবে না।’ হ্যাঁ দেখছে তো একে বারে গি’লে খাচ্ছে ওকে। মনে মনে নাহিয়ানের পিণ্ড উদ্ধার করে গিয়ে খাটে উপর ধপ করে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে ৷ কথা বলবে না এই লোকটার সাথে।
মিষ্টি রোদের আভাস পেয়ে চোখ মেলে তাকালো ফারাহ্। সকাল হয়ে গেছে। পাশে তাকিয়ে দেখে নাহিয়ান নেই৷ উঠে গেছে। মুচকি হেসে খাট থেকে নেমে পা চালিয়ে রুমের বাহিরে এলো। নাহিয়ান ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে ছোট দাদুর সাথে কি বিষয় নিয়ে আলাপ করছে। হয় তো জায়গা জমিন নিয়ে। নাস্তা সেরে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হল সবাই। ফারাহ্’র মন চাইছে নাহিয়ানের মাথা পাটিয়ে দিতে। ইচ্ছে করে ওকে ইগ্নোর করছে। গত কাল বিকালের পর থেকে কথা বলা প্রায় বন্ধ টুকটাক প্রয়োজনের বাহিরে কিছুই বলছে না। আগে যদি জানতো এমন কিছু হবে তাহলে কাঁদা সুফিয়ান কে না মেরে নাহিয়ান কে মারতো আরো বেশি করে। আড়চোখে এক নজর তাকালো নাহিয়ানের দিকে মনের সুখে ফোনে স্ক্রোল করছে৷ স্কাই ব্লু টিশার্ট সাথে হোয়াইট প্যান্ট , কালো জ্যাকেট। জ্যাকেটের হাতা ফোল্ড করা। লেফট হ্যান্ডে ওয়াচ। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে আছে। গাড়িতে উঠারা আগে সেট করে দেখে ছিল। বাতাসের কারণে চুল এলোমেলো হয়ে গেছে। এই কিলার লুক নিয়ে যদি রাস্তায় নামে কত মেয়ে হার্টফেল করবে আল্লাহ্ জানে। চোখ ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকালো। মিরাজ ড্রাইভ করছে পপি তার পাশে বসা। ওদের পিছনে আরো তিনটা ক্রার আসছে একটা তে সানজিদা , শামীম , সানা , সুফিয়ান , রিশাব ড্রাইভ করছে। অন্য টায় ইফতেখার সারাফাত , শামীমা আখতার , সুফিয়া হানজালা , এহসান সারাফাত উনি ড্রাইভ করছেন। আরেক টা আফজাল সারাফাত , মিনা আরাফা , ফাতেহ , ড্রাইভার। চার টা গাড়ি ছুটল ঢাকার উদ্দেশ্যে।
_
গ্রাম থেকে আসার ক্ষণ পরই আফজাল সারাফাত নাহিয়ানদের নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিজে গেলেন। ফ্যাক্টরিতে যত লস হয়েছে তা অধিক শতাংশ পুষালো গ্রামের জমিন বিক্রি করা টাকা দিয়ে। আবার নতুন করে কাজের বিজ্ঞানপন দিল। যারা আগে কাজ ছেড়ে চলে গেছে তাদের মধ্যে কয়েক পুনরায় ফিরে এসেছে। নতুন দের ইন্টারভিউ নিয়ে নিয়োগ দিবেন। আর যারা বি’পদের সময় কম্পানি ছেড়ে যায় নি তাদের বেতন বাড়িয়ে দিল। চলে যাওয়া লোক গুলো ফিরে আসায় নাহিয়ান হালকা ক্ষু’ব্ধ। ইচ্ছে করছে অফিস থেকে বের করে দিতে। ও যদি এমন কাজ করে তাহলে খারাপ আর ভালোর মধ্যে তপাত কি থাকে? তাই মুখে কিছু বলে নি। চুপচাপ হজম করে নিচ্ছে। সবাই আশা করছে আর এক দুই মাসের মধ্যে সারাফাত ইন্ডাস্ট্রিজ আবার আগের মতো গড়ে উঠবে। মোটামুটি কাজ শেষ করে ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে বের হল নাহিয়ান , মিরাজ। মিরাজ গাড়ির কাছে এসে বলল ,
” নাহিয়ান তুই বাড়ি যা আমি হাস্পাতাল থেকে এক পাক ঘুরে আসি। গ্রামে ছিলাম তিন দিন দেখি কি অবস্থা। ”
” ওকে। ”
গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিল দু’জনে। এক জনের গাড়ির বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটল অন্য জনের গাড়ি হাস্পাতালের উদ্দেশ্যে।
____
ফারাহ্ বরবটি শিম কাটছে রাতে ভাজি করার জন্য। দুপুরে দিকে নাহিয়ান বাসায় ফিরে আসলে ও ওর সাথে কথা বলে নি। আনমনে ভাবতে লাগলো , আচ্ছা! নাহিয়ান কি ওকে ভালোবাসে? তারা কে ওত দ্রুত ভুলে ওকে মনে জায়গা দিল! নাকি কি এমনি স্বাভাবিক হওয়ার ভাব দেখাচ্ছে? ওতশত ভাবতে ভাবতে ধারালো সবজি কাটার চুরি টা হাতের দুই আঙুলের উপর চালিয়ে দিল। ব্য’থা খাঁ খাঁ করে উঠল বাম হাতে বৃদ্ধা আঙ্গুল আর তর্জনি আঙ্গুলের মাথা। মধ্যমা আঙ্গুলের মাথা ও একটু চিলে গেছে। ওটা তে ব্য’থা না করলে ও প্রচুর জ্বলছে। দ্রুত গিয়ে পানির নলের নিচে বাঁ হাত খানি ধরল। অত্যধা-আধুনিক নল থেকে আটোমেটিলি পানি প লড়তে শুরু করে। ব্য’থা প্লাস জ্বা’লায় চোখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরল। অনেক ধারালো চুরি নিয়মিত সবজি কাটে। চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। ফাতেহ গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে কিচেনে আসছে।
‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে….
আসি আসি বলে আবার ফাঁকি দিয়েছে….
বেদের মেয়ে জো্ স্…. ন___ ‘
গানের কলি টা দ্বিতীয় বার গাইতে যাচ্ছিল তখনই চোখ যায় ফারাহ্’র দিকে বাঁ হাত নলের নিচে। পানির সাথে সাথে ধুয়ে ধুয়ে র’ক্ত যাচ্ছে। এটা দেখে অটোমেটিক মুখ বন্ধ হয়ে যায়। পরক্ষণে চেঁচিয়ে সবাই কে ডাক দিল ,
” পপি বউ মনি , আপা তোমরা কই এ দিকে আহো দেখে ফারাহ্ মনির হাত কেটে গেছেহ। ”
ফাতেহ চিৎকারের সাথে সবাই কিচেনে হাজির। ফারাহ্ নেত্রী যুগোল মেলে হাত সরিয়ে নিল। তার পরে ও র’ক্ত বন্ধ হয় নি। এই চুরি দিয়ে নিমেষে গরু জবাই করা যাবে। সেখানে তো এটা একটু খানি হাত কিছুই না। সুফিয়া হানজালা হন্তদন্ত হয়ে বলতে শুরু করেন ,
” কি করে কাটলি হাত , এই সন্ধ্যা বেলায় তো কে কিচেন আসতে বলেছে। ”
পপি দৌড়ে গিয়ে কিচেনের কেবিনেট থেকে ফাস্টএইড বক্স বের করে আনলো। নিচে চেচামেচির আওয়াজ শুনে নাহিয়ান , মিরাজ , সুফিয়ান এরা ও নেমে এলো। ফারাহ্ হাত ক্লিন করছে পপি। এটা দেখে নাহিয়ান শক্ত হয়ে ওই দিকে এগিয়ে গেল। পপির থেকে তুল , সেফটি নিয়ে ফারাহ্’র হাত চেপে ধরে ড্রয়িং-এ নিয়ে আসে। ফারাহ্ কে সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল। আস্তে ধীরে ক্লিন করতে থাকে। ফারাহ্ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এমন ভাবে ক্লিন করছে যেনো হাত ফারাহ্ কাটে নি তার নিজের কেটেছে। বেন্ডেজ করে উঠে এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না নাহিয়ান দ্রুত সিড়ি ডিঙিয়ে উপরে চলে গেল। সবাই ফারাহ্ কে এটা ওটা বলে যাচ্ছে , হাত কাটলো কি করে? যখন ফাতেহর কাছে শুনতে ফেল সবজি কাটতে গিয়ে কেটেছে তখন আরেক দফা কথা শুনল , তোকে কে বলেছে সবজি কাটতে যেতে? শামীমা আখতার ফারাহ্ মাথা আলতো হাত বুলিয়ে ম্লান মুখে বললেন ,
” ছেলে টা কালকে থেকে রে’গে আছে এখন আরো টেম্পারেচার বাড়িয়ে দিলি যা রুমে যা। ”
ফারাহ্ মনে মনে ভাবছে ,
‘ শুধু এই জন্য কি উনি আবার দূরত্ব বাড়ি দিল আমার সাথে? না কি তারা আপুকে বেশি মিস করছেন? ‘
করুন চোখে চাইলো সবার পানে। সবাই চায় নাহিয়ানের সাথে ও নিজে থেকে কথা বলুক। নাহিয়ানের একাকীর সঙ্গি হোক। কিন্তু কেউ তো নাহিয়ান কে বলে না মেয়েটার সাথে এমন করিস না। রা’গীস না , বকিস না এমন কিছু। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উপরে চলে আসে। রুমে ডুকে ভেজা ঢোক গিলে নাহিয়ানের দিকে তাকালো। বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে আছে। ফারাহ্ দরজা লক করে আলতো পায়ে গিয়ে নাহিয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে ইতস্ততভাবে বলল ,
” শুনছেন? ”
” শুনছি বল। ”
ফারাহ্ কি বলবে ভাবছে। কিছু তো বলার নেই। হঠাৎ মস্তিষ্ক শূন্যতা ভুগছে সে। ওর এখন কি করা উচিৎ? চলে যাওয়া উচিৎ? হ্যাঁ চলেই যাওয়াই উত্তম হবে। পা বাড়তে যাবে তখনই নাহিয়ানের রু’ড কন্ঠের আওয়াজ এলো ,
” সাহস থাকলে এক পা এগিয়ে দেখা। ”
পা বাড়ালো ফারাহ্ তবে বাহিরের দিকে নয় বেডের দিকে। নাহিয়ানের মাথার পাশে বসে বলল ,
” এমন করছেন কেনো আপনি? ”
” ভালো লাগছে না প্লিজ ফারাহ্ কিছু জিজ্ঞেস করিস না। ”
” কেনো?”
” আবার প্রশ্ন করছিস তুই! ”
” কি করবো আমি ! যেতে ও দিচ্ছেন না কথা ও বলতে দিচ্ছেন না। ”
” আপাতত চুপ থাক। ”
পুরো রুম থমথমে। ফারাহ্ মুখ ফুলিয়ে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। নাহিয়ান আগের ভঙ্গিতেই শুয়ে আছে। এদিকে ফারাহ্’র মন খচখচ করছে কথা বলার জন্য। কথা বলতে পারছে না তার জ’মের জন্য। বেডের সাথে হেলান দেওয়ায় অবস্থায় চোখ বুজে ফেলল। একা একা বসে থেকে কি করবে এর চেয়ে ঘুমানো ভালো। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ফারাহ্’র সাড়া শব্দ না পেয়ে মাথা তুলে তাকালো নাহিয়ান। তার পাকনি বউ টা কে ঘুমাতে দেখে মৃদু হাসল। উঠে ফারাহ্ কে ঠিক মতো শুইয়ে দিল। ব্লাঙ্কেট দিয়ে গলা পর্যন্ত ঢেকে দিয়ে ফারাহ্’র দিকে ঝুঁকে কপালে উষ্ণ ঠোঁট ছুয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে।
_______
টানা ডোর বেলের আওয়াজে বেজায় বিরক্ত হল ফারাহ্। খানিক ক্ষণ আগেই ঘুম ভাঙলো তার। হালকা পাতলা কিছু খেয়ে টিভি দেখতে বসল। ডোর বেল অনবরত বাজচ্ছে কেউ খুলছে না দেখে রা’গে দুঃখে টিভি অফ করে ডোর খুলল। ভ্রু আপনাআপনি কুচকে আসে নাহিয়ানের থেকে চোখ সরিয়ে৷ পাশে আলতা মর্ডান একটা মেয়ে দেখে আরো অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল ,
” মেয়ে টা কে? এই আপনি কোনো আবার বিয়ে করে আসেন নি তো? আম্মুউউউউউ..”
নাহিয়ান বিরক্তমাখা কন্ঠে ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করল। ফারাহ্ তো ফারাহ্ই যা মাথায় এসেছে সেটাই সত্যি ভেবে বসল। ফারাহ্ ডাকে সুফিয়া হানজালা জলদি করে কিচেন থেকে দ্রুত পায়ে বের হয়ে এলেন৷
” কি হয়েছে শুনি বাড়িতে কি ডাকাত পড়েছে এত চিৎকার করছিস কেনো? ”
” ডাকাত পড়ে নি আম্মু তোমার মেয়ের সতিন পড়েছে। ”
সুফিয়া হানজালা ভ্যাবাচেকা খেয়ে ফারাহ্ দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালো। তার মেয়ে তো শুধু ফারাহ্। ফারাহ্’র সতিন! নাহিয়ান আবার বিয়ে করল কবে। ঘন্টা খানিক আগেই তো বাসা থেকে বের হল। সুফিয়া হানজালা রা’গ দেখিয়ে বললেন ,
” তোর ফালতু কথা শুনার টাইম নাই ডিনার তৈরি করতে হচ্ছে আমাদের। ”
” আম্মু তুই ওখানে দাঁড়িয়ে কথা না বলে এখানে এসে দেখ কথা আমার ফালতু নাকি আলতু। ”
” কি যা তা বলছিস তুই আর দরজায় কে….”
কথা বলতে বলতে কিচেনের সামনে থেকে সদর দরজার কাছে এসে থেমে গেলেন। ফারাহ্’র মতো নাহিয়ান কে ভুল না বুঝে বললেন ,
” বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো আয় ভিতরে ডুক। ”
ফারাহ্ ঠোঁট দুইটোর মাঝে কিঞ্চিৎ পাঁকা হয়ে গেল। ওর মা ওর স্বামীর সাথে অন্য মেয়ে কে বাসায় ডুকার অনুমতি দিচ্ছে। নাহিয়ান সাথে থাকা মেয়ে টা কে নিয়ে ভিতরে ডুকতেই ফারাহ্ কাটাক্ষ করে বলে উঠল ,
” আম্মু তুই এদের কেনো ডুকাচ্ছো? তুমি নিজের হাতে নিজের মেয়ের সতিন ঘরে আনছো? ”
এবার নাহিয়ান জোরে এক ধমক দিয়ে বলল ,
” চুপ আর একটা কথা বলবি কানের নিচে দিব একটা। ”
সামন্য কেঁপে উঠে ফারাহ্ তার পরে ও অনুচ্চ স্বরে বলল ,
” আপনি আরেক টা বিয়ে করে কেনো এনেছেন? ”
” শ্বাশু মাদার আপনার মেয়েকে চুপ করতে বলুন কি তখন থেকে বউ , আরেক টা বিয়ে নিয়ে যপেই যাচ্ছে। ”
সুফিয়া হানজালা কিছু বলতে যাবে তখন শামীমা আখতার জিজ্ঞেস করে বসলেন ,
” ফারু কে না বকে আগে বল মেয়েটা কে নাহিয়ান? ”
নিরুত্তর নাহিয়ান। এই মুহূর্তে সে কিছু বলতে চাইছে না৷ কারণ ফারাহ্ নিজেই মেয়েটা কে প্রশ্ন করতে তৈরি হয়ে মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তাই। এখন শুধু বুলেট ছুড়ে মারার বাকি। সোফায় আয়েশ করে বসে ফোনে ডুব দিল। ও জানে ফারাহ্ এখন মেয়েটার বংশ উদ্ধার করতে নামবে। ফারাহ্ ছোট ছোট চোখে কিছু ক্ষণ মেয়ে টা কে দেখে জানা জিজ্ঞেস করল ,
” নাম কি তোমার? ”
” সূর্যমূখীফুলরানী। ”
ফারাহ্ ঘনঘন চোখের পলক ঝাপটিয়ে অবাক মুখ ভঙ্গি করে শুধালো ,
” সূর্যমূখীফুলরানী! কারো নাম হয়? এই নাম টা কে রেখেছে তোমার? ”
” জ্বি আমার দাদাজান। আমার জন্মের সময় নাকি উনাদের ক্ষেতে অনেক সূর্যমূখী ফুল ফুটে ছিল আর কখন ও ফুটে নি তাই দাদা জান এই নাম রাখছে। সূর্যমূখীফুলরানী। ”
” ওহহহ আচ্ছা , আমরা তোমাকে এত বড় নামে তো ডাকতে পারবো না তো কোন নামে ডাকবো? ”
কনফিউজড হয়ে চেয়ে আছে ফারাহ্। উপস্থিত সবাই কম বেশি অবাক হচ্ছেন মেয়েটার কথা শুনে। শুধু নাহিয়ান ছাড়া সে মনে ফোনে স্ক্রোল করছে। সূর্যমূখীফুলরানী হেসে বলল ,
” আপনি ঠিক নাহিয়ান ভাইয়ের মতো কথা কন। বরাবর-ই আমার উত্তর , ফুল বা রানী বলে ডাকিয়েন। ”
” আচ্ছা ফুল বলে ডাকবো , তুমি খুব মিষ্টি সব নাম যায় তোমার সাথে। ”
” ধান্যবাদা৷ ”
ফারাহ্ বুঝল ‘ধান্যবাদা’ মানে ‘ধন্যবাদ’ সে মুচকি হেসে মাথা ধুলালো। সুফিয়া হানজালা নাহিয়ান কে প্রশ্ন করলেন ,
” নাহিয়ান এসবের কি দরকার ছিল? ”
নাহিয়ান ফোনে চোখ রেখে শান্ত স্বরে জবাবে দিল ,
” দরকার ছিল শাশু মাদার আপনারা এত কাজ করতে হিমশীম খাচ্ছেন আগে থেকে অভ্যাস নেই বলে। আর কেউ এক জন তো রান্না ঘরে গেলেই হাত কেটে বা পুড়ে আসে। তাই সূর্যমূখীফুলরানী কে নিয়ে আসা আপনাদের ও হেল্প হবে ফাতেহ মামা ও কাজের হেল্প পাবে। আর ওই কেউ একজন টা কে ভালো করে বলে দিবেন কিচেনের পাশে যেনো না ঘেঁষে এন্ড যাকে তাকে আমার বউ না বানিয়ে দে। ”
ফারাহ্ নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে নাহিয়ানের দিকে। ব্যাটা খচ্চর মোবাইলে ঠুসে বসে থেকে ওকে বারবার কেউ এক জন কেউ এক জন বলে ধুয়ে ফেলছে। আরেহ ভাই ও কি করে বুঝবে মেয়ে টা কে? যেমনে শাড়ি পড়িয়ে নিজের সাথে নিয়ে এসেছে ওর কি দো’ষ? পপি ফারাহ্ কাঁধে ওর বাহু দিয়ে আলতো পিঞ্চ মেরে ফিসফিস করে বলল ,
” বাবা কি প্রেম! কি কেয়ার বউয়ের প্রতি। ”
ফারাহ্ মনেমনে শুধায় ,
‘ প্রেম না ছাই হুহ..কেয়ার না কছু হুহ…’
নাহিয়ান সোফা থেকে উঠে ফারাহ্ কে বলল ,
” আপনার ইন্টারভিউ শেষ হলে রুমে আসবেন প্লিজ..! ”
#চলবে
®️আহমেদ মুনিয়া
•••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×