তোর চোখে আমার সর্বনাশ পর্ব – ৯

তোর চোখে আমার সর্বনাশ

৯.

নাহিয়ানের ঠান্ডা গলার হুমকি শুনে আস্তে ধীরে একটা ঢোক গিলল ফারাহ্। উইন্ডর গ্লাস নামিয়ে দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থেকে খাওয়া শুরু করে। দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘন্টা পর গ্রামের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো নাহিয়ান। ফারাহ্ সিটবেল্ট খুলে দিতে দিতে বলল ,

” এক দম দুষ্টমি করবি না , একা একা কোথাও যাবি না , অচেনা কারো সাথে অহেতুক কথা বলার প্রয়োজন নেই। ”

ফারাহ্ ভ্রু কুচকে বলল ,

” আপনি আমাকে বাচ্চা পেয়েছেন? এমন বাচ্চার মতো ট্রিট করছেন কেনো? ”

” বাচ্চা হলে ও বুঝের হতো যা বলতাম শুনতো তুই তো বড় বাচ্চা ঘাড়ত্যাড়া। ”

” কি বললেন আপনি আমি ঘাড়ত্যাড়া! ”

নাহিয়ান ঠোঁটে ডেভিল স্মাইল ঝুলিয়ে গাড়ির ডোর খুলে বের হল। তার পর ফারাহ্’র দিকে ডোর খুলে দিয়ে ভাবসাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। ফারাহ্ মন চাইছে লোকটা মাথা পাটিয়ে দিতে। অ’গ্নি দৃষ্টিতে নাহিয়ানের দিকে চেয়ে ধুপধাপ করে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে যেতে লাগলো। নাহিয়ান আলতো হেসে নিজের চুলে হাত চালাতে চালাতে ফারাহ্ পিছন পিছন গেল। ফারাহ্ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে নাহিয়ান কে দেখে নিয়ে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো ,
‘ সব ছেলে , পুরুষ কে দেখি ইন করে কোমড়ে বেল্ট লাগিয়ে সুট পড়ে। আর এই লোক কোমড় বেল্ট তো লাগায় ঠিক আছে শার্ট ইন করে না। পুরো ছেড়ে রেখে উপরে স্যুট পড়ে। হলিউড মুভির নায়ক সাজতে এসেছে। ‘

অতঃপর বিরবিরিয়ে বলল ,
‘ দেখতে মন্দ লাগে না সুইট কিউট জামাই টাকে। ‘

দু’জনে এক সাথে ঘরের ভিতর প্রবেশ করতেই ফাতেহ উচ্চ স্বরে বলল ,

” ভাগনে ভাগিনা চলে এসেছে। ”

সবার দৃষ্টি নাহিয়ান আর ফারাহ্ উপর। উপস্থিত সবার সাথে কৌশল বিনিময় করল ওরাহ। সকলে ফারাহ্ , নাহিয়ান কে দেখে খুব খুশি হল। ছোট দাদা অনেক ধরনের কথা বলে মজা করতে থাকেন। মিরাজ নাহিয়ানের বাহুতে চাপড়াই খোশ গলায় বলে উঠল ,

” আসবি না বলে সেই আসলি আগে চলে এলে কি হতো? ”

” আগে এলে এখন আসা হতো না এটাই। ”

” তুই আর পাল্টাবি না। ”

নাহিয়ান নিশ্চুপ। মিরাজ ও আর কথা বাড়ালো না ফোনে স্ক্রল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফারাহ্ কে কাজিন মহলের সবাই ঝেঁকে ধরল। একজন একজন করে বলতে শুরু করল ,

” নাহিয়ানের সাথে কেমন কাটছে দিন? ”

” দেখে তো মনে হচ্ছে ও তোমায় খুব ভালবাসে! ”

” ফুলসজ্জা রাত কেমন কেটেছে? ”

” নাহিয়ান তোমায় কি গিফট করল? ”

” নাহিয়ান কিন্তু খুব হ্যান্ডসাম। ”

” একদম আমেরিকান হিরো। ”

গালে হাত দিয়ে হতাশা ভঙ্গিতে বসে রইলো ফারাহ্। পপি আর সানজিদা মুখ টিপে আসছে যাকে বলে মুচকি হাসি। প্রশ্ন এখন ও থামে নি একেক জন একেক কথা বলছে। শেষমেষ ফারাহ্ দুই হাত অর্ধেক উঁচু করে চেঁচিয়ে বলল ,

” খামোশ , প্লিজ চুপ করো তোমরা এত এত প্রশ্ন করছো আমি কোনটা রেখে কোন উত্তর দিব? ”

” তাই তো আচ্ছা চুপ করলাম আমরা এবার উত্তর দাও। ”

ফারাহ্ বিরক্তমাখা দৃষ্টিতে সবাইকে দেখে সানজিদার দিকে অসহায় চাহনীতে চাইলো , ‘ আপু আমাকে বাঁচিয়ে নাও। ‘ সানজিদা ফারাহ্ চোখের ভাষা বুঝল হয়তো। ফারাহ্ কে চোখের পলক ঝাপটে আশ্বাস দিল। গলা ঝেড়ে কথার মোড় অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল। ফারাহ্ স্বস্তির শ্বাস ফেলে রুম ছেড়ে বের হয়ে আসে। এই মেয়ে গুলো একেক টা কু’ট’নি ওকে আবার যে কোনো সময়ে যে কোন কিছু জিজ্ঞেস করে বসবে। ঘর থেকে বের হয়ে পিছনের দিকে এলো। পুকুর পাড়ে। সুফিয়ান ঘাটের উপর বসে আছে কানে ব্লুটুথের মতো কিছু গুজে রেখেছে। মনে হয় নিউ মডেলের হেডফোন। চুপিসারে পা ফেলে সুফিয়ানের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। আস্তে করে দুই হাত বাড়িয়ে কান থেকে হেডফোন খুলে নিয়ে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল। সুফিয়ান হকচকিয়ে গিয়ে চারদিকে তাকিয়ে কেউকে দেখতে না পেয়ে অবাক হয়ে বিরবির করে বলল ,
‘ কে হতে….’
কিছু একটা মনে আসতেই ফের বলল ,
” ফারাহ্ উঠে আয়। ”

ফারাহ্ না উঠে একই ভঙ্গিতে থেকে কপাল চাপড়িয়ে বলল ,

” তুই আমায় না খুঁজে কি করে বুঝলি আমি এখানে এসেছি?”

” উঠে আয় বলছি এত বড় মেয়ে মাটিতে বসে আছিস। ”

” ও হ্যালো , আমি একে বারে মাটিতে লুটেপুটে বসি নাই ওকে। ”

বলতে বলতে উঠে গিয়ে সুফিয়ানের পাশে গিয়ে বসল। সুফিয়ান ফারাহ্ হাত থেকে হেডফোন নিয়ে বলল ,

” তুই ছাড়া আর কেই আমার সাথে এমন মজা করবে এখানে! ”

” ঘরের ভিতরে কত মেয়ে দেখলাম ওরা কেউ তো হতে পারতো। ”

” উঁটকো ঝামেলা আসার পর থেকেই গায়ের সাথে লেপটে ছিল তাই তো এক প্রকার বাধ্য হয়ে এখানে এসে বসে আছি। তোরা আসলি কবে? ”

” ঘন্টা খানিক হবে। ”

” ভাই কই? ”

” আছে কোথায়ও দেখলাম না। ”

” জানিস? ”

” কি জানবো? ”

” বলছি, গ্রামে যত জায়গা আছে সব বিক্রি করে দিচ্ছে শুধু বাড়ি টা বাদে। ”

ফারাহ্ মলিন হেসে বলল ,

” এটাই তো হওয়ার ছিল আর তো কোন উপায় নেই। ”

” তুই বস আমি খাওয়ার মতো কিছু নিয়ে আসছি দু’জনে খাবো আর নাটক দেখবো। ”

” যা তারাতাড়ি আসিস। ”

সুফিয়ান ঘরে আসতেই সানজিদা কাজ দিয়ে বসল একটা। ওর মোবাইলের এমবি শেষ। এখুনি দোকানে গিয়ে এমবি ভরে দিতে। সুফিয়ান বলল ,

” আপু তুই আম্মির ফোন উইস কর। ”

” দেখ আমি অন্য কারো ফোন উইস করতে পারবো না রিয়ান ক্ষণ পর পর কল দে সানা কে দেখতে। ”

সুফিয়ান যেতে রাজি হয় পরক্ষণে ফারাহ্ কথা মনে আসে। পরে ভাবল দশ থেকে বারো মিনিটের মধ্যেই ও চলে আসছে ফারাহ্ একটু বসুক। যত দ্রুত সম্ভব ও ফিরে আসবে। এদিকে ফারাহ্ একা একা বসে থাকতে বিরক্ত ফিল করছে।

” সুফিয়ানের বাচ্চা আসতে এত ক্ষণ লাগে। হাতি নিয়ে আসছে খাওয়ার জন্য হুহ যত্তসব। ”

বিরবিরিয়ে কথা গুলো বলে ভেংচি কাটল। হুট করে মাথায় বুদ্ধি আসে এভাবে বসে না থেকে পুকুরে পাড়ে গিয়ে ছবি তুলা ভালো। এই দিক টা একদম নির্জন। বারো টা বাজে এখন এই সময়ে থেকে আস্তে আস্তে নিরিবিলি হয়ে যায়। সে দিকে তোয়াক্কা না করে ছবি তুলতে তুলতে পুকুরের পাড় ফেরিয়ে গেল। ছবি তুলা শেষ করে নিজে নিজেকে বলল ,

” ও শিট অনেক দূরে চলে এলাম সুফিয়ান চলে এসেছে হয়তো। ”

তখনই পাশ থেকে একজন বলল ,

” সুফিয়ান কেডা? নগর? ”

রা’গে শরীর কাঁপতে শুরু করে। মনে মনে কয়েক বার ছিহ্ বলে নিল। লোক টা ফারাহ্ দিকে এগিয়ে এসে ফের বলল ,

” এই মাইয়্যা তুমি এহানে ক্যান আইছো এহানে কেউ আয়েহে না এহানে শুধু আমরা তা’স খেলি জু’য়া খাই। তুইমি এহানে কিল্লাই আছো আগে তো দেহি নাই। ”

ফারাহ্ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে লোক টার দিকে। এটুকু কথা বলতে এহানে চারবার উচ্চারণ করে ফেলেছে। একটু ঘাড় কাত করে দেখল তার ঠিক পিছেনে আর কয়ে জন লোক ঘাসের উপর বসে আছে। হাতে কাগজের মতো কিছু। মনে তা’স হবে। হঠাৎ ঘাড়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করল। ওর সামনে থাকা লোক টা পেনডেন্ট টা টেনে নিয়ে নিল হাতে৷ যার ফলে ঘাড় থেকে ঘাড়ে ব্যথা পেয়েছে। ফারাহ্ অস্থির হয়ে বলল ,

” প্লিজ ওটা নিবেন না ফিরিয়ে দেন। ”

” আমার কাছে যা আইয়ে তা ফিরিয়ে দেই না। ”

বলে দৌড় লাগালো লোক টা ফারাহ্ হতবাক! হতবুদ্ধি! এটা ওর বিয়ের প্রথম স্মৃতি। বিয়ের পর নাহিয়ান ওকে প্রথম গিফট করেছে এটা। তারার নাম জুড়ে আছে এই পেনডেন্ট টার সাথে। কিছু না ভেবে গাউম উঁচু করে লোক টার পিছনে দৌড়াতে লাগলো। কিছু দূর যাওয়ার পর হারিয়ে ফেলে লোক টা কে ঘন সবুজ জঙ্গলে কই আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে লোক টা! ভালো করে খুঁজার জন্য আরো সামনে এগিয়ে যায়। ওমা! এখানে তো আরো বড় আড্ড মহল। কত গুলো ছেলে। ফারাহ্ আস্তে ধীরে ফাঁকা ঢোক গিলে দিল পিছন ঘুরে দিল দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে ভাবছে পেনডেন্টের কথা। নাহিয়ান কে কি জাবাব দিবে৷ হুট করে শক্ত পুরুষালি বুকের সাথে বাড়ি খেয়ে দু’কদম পিছিয়ে যায়। সামনে থাকা মানুষ টা কে দেখে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো।

” এখানে কেনো এসেছিস তুই? ”

নাহিয়ানের চোখ মুখ দিয়ে ঝাঁ’জা’লো আগুন ঝরে ঝরে পড়ছে। কন্ঠে রু’ক্ষাতার সাথে খানিক টা কেঁপে উঠে ফারাহ্। বুকের ভিতর ধড়ফড় করছে। ভেকটি দিয়ে আমতা আমতা করে বলল ,

” আমি এখানে ছবি_ হ্যাঁ ছবি তুলে এসেছি। ”

বিদুৎ-এর গতিতে ফারাহ্ বাঁ গালে থা’প্প’ড় বসিয়ে দিল নাহিয়ান। দ্বিতীয় বারের মতো ধাবা মার্কা চ’ড় খেয়ে মাথা ভনভন করছে ফারাহ্’র। কাঁদো কাঁদো মুখে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা চালাচ্ছে কেনো ওকে চ’ড় থেরেপি দিল। নাহিয়ান কুড়ে পাওয়া ফারাহ্ ফোন ওর সামনে ধরে বলল ,

” ফোন এখানে কি দিয়ে ছবি তুলছিলেন আপনি বিশ্লেষণ করবেন একটু দয়া করে। ”

ফারাহ্ গাল থেকে হাত নামিয়ে হতবিহ্বল হয়ে তাকালো নাহিয়ানের দিকে। তখন ঠিক এই জাগায় থেকেই লোকটার পিছনে গিয়ে ছিল ও। ভুলবশত ফোন টা ফেলে রেখে গেছে। আরেক টা ঢোক গিলে মেকি স্বরে বলল ,

” আমি তো ফোনের ভিডিও অন করে এখানে রেখে সামনের দিকে গিয়ে ছিলাম যাতে আমার হাঁটা ভিডিও হয়__ ”

কথার মাঝে নাহিয়ান হাত উঠিয়ে শক্ত গলায় বলল ,

” দেই আরেক টা চ’ড়। ”

ফারাহ্ একটু পিছিয়ে গেল। নাহিয়ান হাত নামিয়ে আগের ন্যায় আবার বলে উঠে ,

” বারবার আমাকে মিথ্যা বলছিস একটু ও কলিজা কাঁপছে না তোর? ”

তারপর গলার দিকে সূক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে ফের প্রশ্ন করল ,

” গলা খালি কেনো তোর? ”

ফারাহ্ চট করে গলায় হাত দিল। পর পর কয়েক টা ঢোক গিলে জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিল। ভাবছে কি বলবে এখন? সত্যি টা বলবে? নাকি অন্য কিছু বলবে? হাঁসফাঁস করতে লাগলো। আকষ্মিক নাহিয়ান প্যাকেট থেকে কিছু একটা বের করে ফারাহ্ দিকে হিং’স্র দৃষ্টি মেলে ধরে বলল ,

” এটা কি? ”

” আপনি পেনডেন্ট পেলেন কোথায়? ”

” ঘরে অনেক ধরে তোর সাড়া শব্দ না পেয়ে খুঁজতে লাগলাম তোকে৷ সুফিয়ান ও নেই। ভাবলাম দুই জন এক সাথে আছিস। কয়েক মিনিট পর সুফিয়ান এলো তোর কথা জিজ্ঞেস করতে বলল , তুই নাকি বাড়ির পিছনের দিকে ও তোকে ওখানে রেখে দোকানে গিয়ে ছিল। আমি পুকুর পাড়ে এসে দেখি তুই নেই। কিছু টা আন্দাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে এসে দেখি তোর ফোন ঘাসের উপর পড়ে আছে। ভ’য় ঝেঁকে বসল তখন। আশে পাশে তাকিয়ে দেখি চার লোক এই পেনডেন্ট টা বারবার দেখছে আর কি জানি বলা বলি করছে। ওদের কথা শুনে এতটুকু বুঝলাম তুই আরো ভিতরের আছিস যেখানে গ্রামের সাংগাফাংঙ্গারা আসন ফেতে রাত দিন বসে থাকে৷ চারটে লোক থেকে পেনডেন্ট নিয়ে ওই দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন আপনি এসে হাজির হলেন। ”

এটুকু বলে থামলো নাহিয়ান। ফারাহ্ দিকে এগিয়ে গিয়ে দুই কাঁধে হাত দিয়ে ঝাঁ’ঝালো গলায় বলল ,

” বলে ছিলাম না কোথাও না যেতে , কি হল এখন চুপ কেনো বল বলে ছিলাম না? ”

” জ্ জ্বী্। ”

” কাঁপছিস কেনো এখন আমার কথা অমান্য করার আগে কই থাকে এ ভ’য়। ”

কাঁধ ঝাকিয়ে কথা গুলো বলে ধা’ক্কা মেরে ছেড়ে দিল ফারাহ্ কে। নাকের নিচে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে রা’গ কামানোর প্রচেষ্টা চালালো নাহিয়ান। ফারাহ্ নিচে দিকে তাকিয়ে হাত কাচলাচ্ছে। হুট নাহিয়ান ফারাহ্’র গলায় পেনডেন্ট পরিয়ে দিল। আকষ্মিক এমন কিছু মোটেও আশা করে নি ফারাহ্। আশ্চর্য মিশ্রিত শান্ত চোখে চেয়ে রইল। নাহিয়ান ফারাহ্ চোখে চোখ রেখে পেনডেন্ট পরিয়ে দিয়ে ওর হাত মুঠো বন্ধী করে নিল। অতঃপর নরজ সরিয়ে হাঁটা ধরল বাড়ির দিকে। ফারাহ্ বিস্ময় নিয়ে হাঁটছে নাহিয়ানের সাথে। পুকুরের দিকে চোখ যেতেই চুক্ষজোড়া গোল মারবেলের ন্যায় হয়ে গেছে। পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে মিরাজ , সুফিয়ান , আরো কয়েক জন কাজিন। আর ওই চারটে লোক পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে৷ মাথা তুললেই উপর থেকে এরা কিছু মেরে হু’মকি ধমকি দিয়ে আবার ডুব দিতে বলে। ওর থেকে পেনডেন্ট কেড়ে নেওয়ায় এই শাস্তি মিলল লোক গুলোর। ইন্টারেস্টিং ভেরি ইন্টারেস্টিং!

______

দুপুর দুইটো নামাজ শেষ করে খেতে বসেছে। সে ঘটনার পর থেকে নাহিয়ান এক মুহূর্তের জন্য ও ফারাহ্ কে একা ছাড়ে নি। ফারাহ্ কাঁদা মাখামাখি ড্রেস চেঞ্জ করে লেমন কালারের কুর্তি , নীল জিন্স প্যান্ট , ব্ল্যাক দোপাট্টা পড়ে নিল। দোপাট্টা গোল করে গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে। ঘাড় চিলে গেছে যেটা নাহিয়ানের থেকে আড়াল করে রেখেছে ও। তখন পুকুর পাড় থেকে আসার পর ওর মায়ের ইচ্ছে মত বকা হজম করেছে। ভাগ্যিস আসার সময় এক্সট্রা একটা ড্রেস নিয়ে ছিল নাহিয়ান।

” ফারাহ্ মাছ দিব তোমায়? শুধু মুরগী দিয়ে খাচ্ছো গরুর গোস্ত নাও। ”

” ফুপ্পি মাছ আমাকে দাও ও কাটা বেচে খেতে পারে না আমি বেচে দিচ্ছি। আর ফারাহ্’র এলার্জি আছে তাই গরুর গোস কম খায়। ”

উনি মুচকি হেসে নাহিয়ানের পাতে বড় খন্ড করা কাতলা মাছ দিলেন। বিনিময়ে নাহিয়ান ও হাসলো। সারাফাত ফ্যামিলির সবাই মুগ্ধ চোখে তাকালো নাহিয়ানের দিকে। ছেলেটা নিজ দায়িত্ব খুব সুন্দর করে পালন করছে। ফারাহ্ অর্ধেক খেয়ে উঠতে নিলে নাহিয়ান জোর করে পুরো টা খাইয়ে দে। আজকের রাত টা থেকে যাওয়ার বাহানা ধরল সবাই। নাহিয়ান নাচক করলে ও ফারাহ্ জে’দে কাছে হার মানলো। ওর দেখে গুনেগুনে দশ বছর ছয় মাস চব্বিশ দিনের ছোট মেয়েটার জেদের কাছে হার মানতে হয় ভেবে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো সে। বিকালের দিকে গ্রাম ঘুরতে বের হল। বর্ষার শেষের দিকে প্রায়। ক্ষেতের পানি অনেকটাই কমে গেছে। রাস্তা ঘাট আধা আধা শুকনো। ফাতেহ সবার আগে আগে হাঁটছে এই গ্রাম টা যেনো ওর অনেক আগে থেকে চেনা। নাহিয়ানের দরকারি কল আসায় ফারাহ্ দের দাঁড়াতে বলে ফারাহ্’র হাত ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে কল রিসিভ করে। রিশাব , ফাতেহ , মিরাজ , পপি এরা নিজেদের মতো কথা বলতে লাগলো। ফারাহ্ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে জমিনে মাছ দেখছে। সুফিয়ান জমিনে ঢিল ছুড়ে মারছে। হুট করে ভুল বশত একটা ঢিল গিয়ে পড়ল ফারাহ্ গায়ে৷ ফারাহ্ ভ্রু কুচকে তাকালো কোমড়ের দিকে ঢিল টা লেগেছে। হাকলা ময়লা ও। দাঁতে কিটমিট করতে করতে কাঁদা নিয়ে ছুড়ল সুফিয়ানের দিকে। হঠাৎ গায়ে কাঁদা পড়ায় সুফিয়ান ফারাহ্’র দিকে বোকা চাহনিতে তাকালো। মুখে বলল ,

” ওই আমায় কাঁদা মারলি কেনো? ”

ফারাহ্ দ্বিগুণ রে’গে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ,

” তুই আমায় ঢিল মারলি কেনো? ”

” আমি তোকে? কখন? কিভাবে? ঢিল মারলাম? ”

” কিভাবে না দাঁড়া। ”

বলেই আবার কাঁদা মেরে দিল সুফিয়ান কে। সুফিয়ান ও কম কিসের। ঢিল ছুড়ে ফেলে কাঁদা নিয়ে ছুড়ল ফারাহ্ দিকে। ফারাহ্ কি ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী। শুরু হয়ে গেল ওদের মধ্যে কাঁদা ছুড়া-ছুড়ি। মিরাজ ‘রা কথা বলার মাঝে ফারাহ্দের দিকে তাকিয়ে হা করে গেল। নাহিয়ান কল কেটে দিয়ে ফোন প্যান্টের পকেটে রেখে পিছনে ঘুরে পা বাড়াতে গিয়ে ও থেমে যায়। ফারাহ্ আর সুফিয়ানের কাঁদা ছুড়া-ছুড়ি দেখে। ফারাহ্ পুরো শরীরে কাঁদা মাখামাখি এবং কি সুফিয়ানের ও। আশেপাশের সবাই ওদের দেখছে। উনাদের নাহিয়ানদের দেখে বেশ অনুমান করতে পেরেছে এরা শহর বাসী। গেটাপ সেটাপ তাই জানিয়ে দিচ্ছে। নাহিয়ান চোখ বন্ধ করে হুংকার ছেড়ে বলল ,

” আরেক বার যদি আমি কাঁদা ছুড়তে দেখেছি দু’জন কে জমি ধাক্কা দিব। ”

ফারাহ্ সবে সুফিয়ানের দিকে কাঁদা মারতে যাচ্ছিল। নাহিয়ানের আওয়াজ পেয়ে হাত থেমে যায়। অবশিষ্ট কাঁদা নিচে ফেলে দিল। নাহিয়ান এখন ও চোখ খুলে নি। গম্ভির স্বরে বলল ,

” মিরাজ এই ময়লা আবর্জনা গুলো কে বল আমার সামনে থেকে যেতে। ”

সবাই ভয় ফেল নাহিয়ানের রা’গ , ধমক , হুমকি। পপি বলল ,

” ফারাহ্ সুফিয়ান চল বাড়িতে ফিরে যাই। ”

দু’জনে মুখ গোমড়া করে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল। ফাতেহ , রিশাব , মিরাজ , পপি কাচুমাচু করে ওদের পিছন পিছন গেল। সুফিয়া হানজালা ফারাহ্ কাঁদা মাখামাখি অবস্থা দেখে আগের চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হলেন।

” আবার কোথায় থেকে এই অবস্থা বানিয়ে আনলি? এখন তো মুখ টা ও বাঁধ দিলি না। সুফিয়ান তুই ও! ”

মিনা আরাফা বললেন ,

” কোথায় থেকে আসছিস দুই জন , তোরা একটা না একটা কান্ড ঘটিয়ে আসিস। ”

” নাহিয়ান ছিল না তোদের সাথে এই অবস্থা ও হতে দিল। ”

শামীমা আখতারের কথা শেষ হতেই নাহিয়ানের আওয়াজ আসল ,

” তিন মিনিটের জন্য ফোনে কথা বলছিলাম ওই তিন মিনিটেই এই অবস্থা করেছে মম তুমি এদের বলে দাও আজকে আমার সামনে যেনো না আসে। বিশেষ করে তোর ছেলের বউ কে উনাকে পাহারা দেওয়ার জন্য আমি বিয়ে করি নি। ”

কঠিন গলায় কথা গুলো বলে ঘরে ডুকে গেল নাহিয়ান। পপি ফারাহ্ ‘র হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসল। ওয়াশরুমের কাছে এনে বলল ,

” তুমি তো আর ড্রেস আনো নি? ”

” না ভাবি। ”

” পরবে কি? এখানে তোমার মাপের ড্রেস কারো কাছে পাবো না আমি ও সব শাড়ি নিয়ে এলাম। শাড়ি পরবে? ”

” আমি কখন ও শাড়ি পড়িনি বা পড়তে ও জানি না। ”

” আমি পরিয়ে দিব। দাঁড়াও। ”

একটু পর এসে বলল ,

” ফ্রেশ হয়ে পেটিকোট আর ব্লাউজ পড়ে এসো আমি শাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছি বের হলে পরিয়ে দিব। ”

#চলবে

®আহমেদ মুনিয়া
•••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×

(রি’চেইক করা হয়নি ভু’লত্রুটি নামিয়ে নিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here