তোর চোখে আমার সর্বনাশ পর্ব – ৮

তোর চোখে আমার সর্বনাশ

৮.

” I said to eat. ”

চমকালো ফারাহ্। নাহিয়ানের কন্ঠের তেজে ওর ছোট্র খানিক হৃদয় দ্রিমদ্রিম করছে ক্রামাগত। না খেয়ে যে এখান থেকে বিন্দু মাত্র ও নড়তে পারবে না। কথায় আছে না অন্যর জন্য কুড়া গর্তে নিজেই পড়ে। চোখ বন্ধ করে কফি মগে সিপ দিল। এমা এই কি মগ এত নরম কেনো? ঝটপট চোখ খুলে যা দেখল চোখ বেরে আসার উপক্রম। নাহিয়ান ওর ঠোঁট ঠোঁট মিলিয়ে রেখেছে জাস্ট। চুক্ষদ্বয় ওর দিকে আবদ্ধ। ফারাহ্ কে তাকাতে দেখে চট করে দূরে সরে আসে নাহিয়ান। মগ সেন্টার টেবিলের উপর শব্দ করে রেখে কড়া গলায় বলল ,

” ফারদা এমন কিছু করলে হিতাহিত বিপরীত হবে। ”

কথা টা বলেই ফারাহ্ কে ঝাটকা মেরে দূরে সরিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো। ফারাহ্ বিস্ময় কাটিয়ে বিরবিরিয়ে বলে উঠে ,

“এটা কি হল? ”

______

মাথায় কারো আলতো স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল ফারাহ্। নেত্রীযুগোল খুলে নাহিয়ানের স্নিগ্ধ মুখখানা দেখতে ফেল৷ তখন টেরেস থেকে এসে বেডে শুয়ে ছিল হুট করে চোখ লেগে আসে। নাহিয়ান ফারাহ্ মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল ,

” অবেলা ঘুমাচ্ছিস কেনো? দুপুর হয়ে গেছে যা গোসল সেরে নামাজ পড়। ”

ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল ফারাহ্ উত্তেজিত কন্ঠে বলল ,

” দুপুর হয়ে গেছে কখন? কিভাবে? আপনি আমাকে আর আগে ডাকলেন না কেনো? ইশশশ কিছু রান্না ও করি নি। রান্না করতে হবে তো। ”

বেড ছেড়ে নামতে নিচ্ছিল তক্ষুনি নাহিয়ান বাঁধা দিয়ে বলল ,

” রান্না করে ফেলেছি মিসেস সারাফাত। ”

” আপনি রান্না করেছেন? ”

” এত অবাক হচ্ছিস কেনো ইউকে থাকতে কত রান্না করেছি তুই যেনো আজকে প্রথম শুনছিস। ”

” আপনি রান্না করতে জানেন আমায় কে জানাবে। আমার সাথে কথা বলতেন আপনি? আপনি তো সারা দিন রাত তারারানী কে নিয়েই পড়ে ছিলেন। ”

নাহিয়ান ভ্রু বাঁকিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ ফারাহ্’র দিকে। এর পর কোমড় ধরে হ্যাঁচকা টেনে কোলে বসালো। এক হাত ফারাহ্ কোমড়ে অন্য কানের নিচে। কানের নিচে চার আঙ্গুল। বৃদ্ধা আঙ্গুল মুখের উপর। বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা মুখে স্লাইড করতে করতে রসালো সুরে বলে উঠল ,

” আয় হারে সোনা খুব দুঃখ না! ”

ঈষৎ কেঁপে উঠল ফারাহ্। ও ভেবে ছিল তারা কথা মুখে আনায় নাহিয়ান রেগে যাবে। কিন্তু না লোকটা আরো ওর মজা উড়াচ্ছে! কোল থেকে নামতে গেলে আরো শক্ত করে ধরল নাহিয়ান। ফারাহ্ থেমে যায় এই লোকটার সাথে শক্তি দিয়ে পারবে না এটা নিশ্চিত। হঠাৎ ফারাহ্ চঞ্চলমূখর স্বরে বলল ,

” নাহিয়ান আমি ওয়াশরুমে যাবো। ”

” হ্যাঁ তো যা না। ”

হঠাৎ ফারাহ্ গলায় মুখ গুজে দিল নাহিয়ান। ফারাহ্ ভড়কে গিয়ে বলল ,

” কি করছেন? ছাড়ুন। ”

” ছাড়ার জন্য ধরেছি না কি! ”

ভ্যাবাচেকা খেল ফারাহ্ নাহিয়ানের উদ্ভট আচরণ দেখে। লোকটা কালকে ও ওকে বলেছে উনার লাইফ থেকে চলে যেতে আর আজকে বলছে , ‘ছাড়ার জন্য ধরেছি না কি!’ আজব তো। এটা তো গিরগিটির ও এগারো কাঠি উপরে। এদিকে নাহিয়ানের ছোঁয়ায় শরীর আড়াষ্ট হয়ে আসছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্চে সে। নাহিয়ান আস্তে করে মুখ উঠিয়ে নিল ফারাহ্ ঘাড় থেকে। ফারাহ্ কপালে আলতো কিস করে মৃদু সুরে বলল ,

” আমি শাওয়ার নিয়ে ফেললাম। এখন তুই যা শুন বেশি ক্ষণ শাওয়ের নিচে থাকবি না ঠান্ডা লেগে যাবে আবার। ”

ফারাহ্ কে স্বযত্নে ফ্লোরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। ফারাহ্ ভ্যালাকান্তার মতো চেয়ে আছে। পরক্ষণে মুচকি হেসে শাওয়ার নিতে গেল। যাক লোক টা মুভঅন করেছে। খুব হালকা লাগছে এখন নিজেকে। বিয়ের পর নাহিয়ান নিজ থেকে কাছে আসছে ওর। স্নিগ্ধ পরশে ভরিয়ে দিচ্ছে। গত কাল রাতের মুহূর্ত টা বিয়ের দিন রাতে হওয়ার কথা ছিল। নিজেকে এখন পরিপূর্ণ স্ত্রী মনে হয়। এখন মনে হচ্ছে ওর সত্যি বিয়ে হয়েছে। শাওয়ার শেষ করে৷ নামাজ আদায় করে নিয়ে। নিচে নেমে আসে। নাহিয়ানকে খাবার সার্ভ করতে দেখে স্নান হেসে বলল ,

” আপনি করছেন কেনো? আমি আসলাম তো। ”

” সব সময় তো তোরা করিস আজকে আমি করি। ”

ফারাহ্ চেয়ার টেনে বসল। নাহিয়ান তার পাশে। দু’জনেই নির্বকারভাবে খাচ্ছে। খাওয়ার টেবিলে ওদের মাঝে বিশেষ কথা হয় নি। যে যার খাওয়া খেয়ে সব গুছিয়ে রেখে ফের রুমে চলে আসে। লাঞ্চ শেষে রেস্ট করা ভালো। ফারাহ্ একটু আগে ঘুম থেকে উঠায় এখন আর শুতে ইচ্ছে করল না। বারান্দায় গিয়ে গোল ডিভান টার উপর আধ শোয়া হয়ে বসল। হাতে উপন্যাসের বই , ‘আমার আছে জল’ – হুমায়ুন আহমেদ। ফারাহ্’র খুব প্রিয় একটা লেখক। প্রিয় একটা বই। কয়েক বার পড়ে ছিল উপন্যাস টা। যতই পড়ে মন ভরে না। নিরবে এখন আবার পড়ছে। ওর সাথে প্রকৃতি ও নিরিবিলি। ওদের বাড়ি টা লোকালয় থেকে খানিক দূরে। গাড়ি ঘোড়ার আওয়াজ। মানুষের কোলাহোল কারোই পছন্দ নয়। ঠান্ডা প্রকৃতির মাঝে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে সারাফাত ফ্যামিলি। আবার ঘুম ভাঙল কারো ডাকে। নিজেই নিজের উপর অবাক আজকে এত ঘুমাচ্ছে কেনো? নাহিয়ান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল ,

” তোর শরীর খারাপ না তো ? আজকে যেখানে যাচ্ছিস ঘুমিয়ে পড়ছিস? ”

ফারাহ্ কপালে হাত দিয়ে ফের বলল ,

” জ্বর ও তো নেই। ”

” আমি ঠিক আছি আসলে সকালে চা , কফি কিছুই খাই নি তো তাই বোধ হয় ঘুম আসছে এতো। ”

লম্বা একটা হাই তুলে কথা গুলো বলল ফারাহ্। নাহিয়ান বলল ,

” তুই মুখ ধুয়ে বস আমি কফি নিয়ে আসি। ”

” আমি যাই আপনি বসুন। ”

” বলা তো যায় না আবার কি মিশিয়ে আনিস কফিতে , তোর জন্য সকালে ও কফি খেতে পারি নি। ”

বলেই আর এক সেকন্ড ও দাঁড়ালো না নাহিয়ান। ফারাহ্ বুকে ভরে গম শ্বাস ছাড়ল। বর্ষার দিন আসছে। এখন থেকেই মাঝে মাঝে বৃষ্টি শুরু হয়। অবাক লাগছে খুব তারা নেই বছর খানিক হয়ে গেছে। সব মেয়ের বৃষ্টি পছন্দ কিন্তু তারার পছন্দ ছিল না। বৃষ্টি হলেই নাক মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতো। ফোনের আওয়াজে ফোনের দিকে তাকালো ফারাহ্। স্কিনে ‘মিরাজ’ নাম টা জ্বলমল করছে। সামন্য হেসে ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করল ,

” আস’সালামু আলাইকুম। ”

” ওয়া আলাইকুমুস’সালাম। কি করছিস? ”

” বারান্দায় বসে আছি , তুমি? ”

” পুকুর পাড়ে। নাহিয়ান কই সে কখন থেকে কল দিয়েই যাচ্ছি ধরছেই না। ”

” কিচেনে কফি বানাতে গেছে। ”

” ও , আসলে কল দিতে বলিস। ”

” আচ্ছা। ”

কয়েক মিনিট পর নাহিয়ান এলো। ফারাহ্ হাতে কফি দিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে বলল ,

” আমি কিন্তু কফি তে কিছুই মিশাই নি। ”

ফারাহ্ হাতাশায় নিমজ্জিত। এই ছেলেটা যত দিন ভুলবে না ততদিন ‘কথা’ টা নিয়ে পড়েই থাকবে৷ নাহিয়ান বিন ব্যাগে বসতেই ফারাহ্ বলে উঠে ,

” ভাইয়া কল দিতে বলেছে আপনাকে? ”

” কেনো? ”

” আমি কি করে জানবো? ”

নাহিয়ান প্যান্টের প্যাকেট থেকে ফোন বের করল। ফোল সাইলেন্ট করা। তাই টের পায় নি। মিরাজ কে কল দিয়ে ফোন লাউড স্পিকার দিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর রাখে। প্রথম বার রিং হতেই অপাশ থেকে কল রিসিভ হয়।

” ওই কই থাকস তুই কল দিলে পাওয়া যায় না? ”

নাহিয়ান কফি মগে সিপ দিয়ে বলল ,

” নিশ্চয়ই এটা বলার জন্য কল ব্যাক করতে বলিস নি ! কি জন্য কল দিয়ে ছিলি সেটা বলল। ”

” কালকে তুই আর ফারাহ্ গ্রামে আসবি। ”

” গেলে আজকেই যেতাম। ”

” আরেহ ভাই আয় না তুই তো জানিস ছোট দাদা আমাদের কত স্নেহ করে উনাদের বাড়িতে দাওয়াত আমাদের সবার তোকে আর ফারাহ্ কে ও আসতে বলল উনি কষ্ট পাবেন আয় না। ”

” ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল সবাই করতে জানিস , এই বৃষ্টির মধ্যে আমার গ্রামে যেতে ইচ্ছে করে না তার পরে ও যেতে বলচ্ছিস! দাদাকে কিছু বলে বুঝা। ”

” যা বুঝানোর বুঝাতে চেয়েছি তুই ভুলে যাস না উনি আমাদের দাদার ভাই এক রোখা। ”

” ফলাফল কি? ”

” তোদের আসতে হচ্ছে। ”

মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়ল নাহিয়ান কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল ,

” ওকে , বুড়া কে খুশিতে নাচতে বল। ”

ফট করে কল কেটে দিল। ডিভানে ফারাহ্ কে না দেখে ভ্রু কুটি করে আশেপাশে তাকালো। রেলিঙের ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি শূন্য দূর আকাশে। অবাক হল নাহিয়ান। উঠে গিয়ে ফারাহ্ পাশে দাঁড়ালো রেলিঙে দু’হাতের ভর দিয়ে। ফারাহ্ দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্ন করল ,

” মন খারাপ? ”

” না। ”

” এখানে এসে দাঁড়ালি যে? ”

” তারাপ্পি কে খুব মিস করেন না? ”

নাহিয়ান বুঝল ওর বলা কথায় ফারাহ্’র মন খারাপ করে আছে। ‘এই বৃষ্টির মধ্যে আমার গ্রামে যেতে ইচ্ছে করে না ‘ তারার ও যে বৃষ্টি পছন্দ না। ফারাহ্ ‘র মলিন মুখশ্রীটা নাহিয়ানের ভিতরের টা ক্ষ’তবিক্ষ’ত কতে দিচ্ছে ক্রমশ।মেয়েটার পুরো মুখমন্ডল জুড়ে যেন মায়া ভরপুর। ও কি করে এমন মায়াবী মুখশ্রীর অধিকারি মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে ছিল। মেয়েটা একটু প্রতিবাদ করতো না। মৌন থাকতো।বিয়ের আগে ফারাহ্ ‘র দিকে ভালো করে তাকাতো ও না স্পর্শ তো দূরে থাক ওটা ছিল আরেক ব্যাপার। কিন্তু এখন! এখন তো ওরাহ স্বামী-স্ত্রী ৷ আর যাই হোক নাহিয়ান আর কখনও ফারাহ্ কে কষ্ট পেতে দিবে নাহ। ও তারা কে যত ভালোবাসে। তার থেকেও দ্বিগুন ভালোবাসা দিবে ফারাহ্ কে। কোনদিন ভালোবাসার কমতি অনুভব করতে দিবে না আর। নাহিয়ান ফারাহ্ কাছে এসে দু’গালে হাত রাখল। অতঃপর গলার স্বর শান্ত , কোমল করে বলল ,

” তারা আমার পাস্ট ছিল , আর ফারাহ্ আমার প্রেজেন্ট , ফিউচার। হ্যাঁ আমি মানছি আমি তারা কে ভালোবাসতাম এখন ও বাসি তবে ,…. তোর থেকে বেশি নয়। প্রথম ভালো সবাই বাসতে পারে দ্বিতীয় ভালো কয় জনে বাসতে পারে? ”

ফারাহ্’র চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। বিচালিত হয়ে জিজ্ঞেস করল ,

” কাঁদছিস কেনো? এই আমার কথায় কষ্ট পেয়েছিস তুই? ”

ফারাহ্ মাথা ধুলিয়ে অস্ফুটে স্বরে জবাব দিল ,

” না। ”

এর পর নাহিয়ানের চোখে চোখ রেখে বলল ,

” কখন ও ছেড়ে যাবেন না তো?”

” নারে পাগলি। ”

মা’তা’ল কন্ঠে বলেই ফারাহ্’র বাঁ গাল টেনে দিয়ে। আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। ফারাহ্ নাহিয়ানের বুকে কান পেতে হার্টবিট শুনছে। কেটে গেল কয়েক মুহূর্ত। দু’জনে এখন এই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। ফারাহ্ নাক টেনে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নাহিয়ান কে। হাসলো নাহিয়ান হাতের বাঁধন মজবুত করে মনে মনে আওড়ালো ,
‘ আ’ম সরি তারা আমি পারি নি আমার কথা রাখতে , ভালোবেসে ফেলেছি আমি তোমার বুড়ি কে , সরি। ’

দূর থেকে তারা মনে হয় বলল ,
‘ আমি কি পেরেছি আমার কথা রাখতে! তোমায় একা করে চলে এলাম। তুমি ভুল করো নি নাহিয়ান একদম ঠিক কাজ করেছো। আমি তোমার পাশে আমার বুড়ি ছাড়া অন্য মেয়ে কে সহ্য করতে পারবো না। আমার বুড়িকে আর কষ্ট দিও না। এই মেয়েটাই তোমার একাকত্বি দূর করে। আমার শূন্যতা ভুলিয়ে দেয়। খুব ভালোবাস পরি’টা কে খুব। ’

______

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হল। নাহিয়ান নতজানু হয়ে ডিভানে বসে আছে। ফারাহ্ ওর মায়ের সাথে কথা বলে নাহিয়ানের পাশে বসল। সাথে সাথে নাহিয়ান ফারাহ্ কোলে মাথা রেখে ডিভানে পা মেলে শুয়ে পড়ে। ফারাহ্ নাহিয়ানের ঘন কালো চুলে হাত ডুবিয়ে দিয়ে জানতে চাইলো ,

” কি হয়েছে? ”

” মাথা কিছু ধরছেনা ফারাহ্ কি করা উচিৎ! ফ্যাক্টরিতে আ’গুন লাগার পর অনেক লস হয়েছে। বড় পাপ্পার শরীর খারাপের দিকে। এই অবস্থা কি করা উচিৎ আমাদের? ”

” চিন্তা করছেন কেনো? সবাই গ্রামে গেছে এই জন্যই তো কিছু জায়গা জমিন বিক্রি করার জন্য। ”

” যত লস হয়েছে সব জায়গা বিক্রি করলে ও হবে কি না সন্দেহ। ”

কথা টা শেষ করেই ফারাহ্ পেটে মুখ ডুবিয়ে দিল নাহিয়ান। ফারাহ্ কিছুই বলল না। আসলে ফ্যাক্টরিতে অনেক কিছু ছিল। অনেক দামী দামী জিনিস। সব পু’ড়ে চাই। লোকশান তো হয়েছেই অনেক! হুট হাট একটা দমকা হওয়া এসে সব লন্ড বন্ড করে দিয়ে যায়।

গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল নাহিয়ান , ফারাহ্। দু’জনেই সেম ড্রেস। নাহিয়ানের পড়নে ব্ল্যাক সুট আর ফারাহ্ পড়নে ব্ল্যাক পার্টি গাউন। জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে ফারাহ্। নাহিয়ান ড্রাইভ করতে করতে বলল ,

” কিছু খাবি? এর পর আর ভালো মানের শপ বা দোকান পাওয়া যাবে না। ”

” আইসক্রিম খাবো। ”

নাহিয়ান গাড়ি থামো একটা শপের পাশে ফারাহ্ কে বলল ,

” তুই বস আমি নিয়ে আসছি , গাড়ি থেকে নামবি না অচেনা জায়গা। ”

কিছু সময় পর আইসক্রিম , পানি , বার্গার , স্যান্ডউইচ নিয়ে ফিরে এলো নাহিয়ান। গাড়িতে বসে আগে স্যান্ডউইচ দিল ফারাহ্ কে। দিয়ে বলল ,

” স্যান্ডউইচ খা আগে তারপর আইসক্রিম। ”

” আগে আইসক্রিম খেলে কি হয়? ”

” আরেহ পাগলি সকালে হালকা কিছু খেয়ে বের হলি ধরতে গেলে খালি পেট খালি পেটে ঠান্ডা জাতীয় ও কিছু খেলে পেটে ব্যথা করবে , আমি নিশ্চিত। ”

ফারাহ্ নাহিয়ানের কেয়ার দেখে অবাকের চরম পর্যায়। দুই এক দিনে এই ছেলে টা এত পরিবর্তন হচ্ছে কি করে? ঠিক আগের নাহিয়ান ভাইয়ের মতো। আকষ্মিক ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে তোলে ফারাহ্। আগে নাহিয়ান ভাই থাকলে ও এখন ওই লোক টা ওর বর শুধু নাহিয়ান। এক পিস স্যান্ডউইচ নাহিয়ানের মুখের সামনে ধরল। নাহিয়ান নিজ মনে ড্রাইভ করছিল স্যান্ডউইচ দেখে বলল ,

” আমার খিদে নেই। ”

” এক কামড় নিলে পেট ফেটে বাস্ট হয়ে যাবে না। ”

তর্ক করার একদম মোডে নেই নাহিয়ান। নিঃশব্দে খেয়ে নিল। ফারাহ্ আবার বলল ,

” জোড়া না খেলে পানিতে পড়ে যাবেন। ”

” আমি সাতার জানি। ”

” হায় আল্লাহ! আপনি সাতার জানেন? ইউকে তে পুকুর আছে। ”

” গা’ধী কি তোকে সাদে বলি! পুকুর না থাকলে সুমিংপুল তো আছে না। ”

” খেয়ে নিন না। ”

” পিচ্চি মেয়ের এত জেদ। ”

নাহিয়ানের কথা শুনে টে’ডি স্মাইল দিল ফারাহ্। আর নাহিয়ান স্যান্ডউইচে আরেক কামড় বসিয়ে চিবুতে চিবুতে তটস্থ সুরে বলল ,

” আরেক বার যদি ডিস্টার্ব করিস মাঝ রাস্তা রেখে যাবো। ”

#চলবে

®️আহমেদ মুনিয়া
•••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here