তোর চোখে আমার সর্বনাশ পর্ব – ৭

তোর চোখে আমার সর্বনাশ

৭.

রুমে এসে ফারাহ্’র হাত ছেড়ে দিল নাহিয়ান। স্বজোরে দরজা লক করে। রা’গ গজগজ করতে লাগলো। হুট করে টেবিলের উপর থেকে কাচের শোপিস গুলো ফেলে দিল। সাথে সাথে ছিটকে পড়লো ফ্লোরে। এতে ও ক্ষ্যান্ত হয়নি সে৷ বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে ল্যাম্প লাইট ফেলে দিয়ে মাথা চেপে বেডে বসে পড়ে। হাটুর উপর হাতের কনুই ঠেকিয়ে নিচে দিকে ঝুকে রইলো। রুমের ভিতরে ভাং’চুরের আওয়াজ পেয়ে সকলে হাজির৷ দরজা নক করছে এলোপাতাড়ি। ফারাহ্ হতভম্ব তোখে তাকিয়ে আছে। আবার কি হল ছেলেটার? শান্ত শিষ্ট ছেলে টা এমন অশান্ত হল কেনো? কি করে? কেমন আজগুবি ব্যবহার করছে। নিজেকে সামলে নিয়ে চেঁচিয়ে বলল ,

” কিছু হয়নি তোমরা চলে যাও , ভু’লে একটা শোপিস ভে’ঙ্গে গেছে এই আর কি। ”

কিছুক্ষণ পর বাহিরের দিক নিরিবিলি হয়ে যায়। বোধ হয় ফারাহ্’র কথা বিশ্বাস করে নিয়েছেন ওরাহ। ফারাহ্ কাঁচ টপকে নাহিয়ানের পাশে গিয়ে বসল। গলা ঝেড়ে বলে উঠে ,

” এমন করছেন কেনো আপনি? কার রাগ কার উপর ঝা’ড়ছেন? বেচারা শোপিস , ল্যাম্প কি করেছে? এগুলো অপচয়। জানেন না আপনি? ”

জবাব দিল না নাহিয়ান। মাথা তুলে এক পলক ফারাহ্’র দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। ফের আগের ভঙ্গিতে। ফারাহ্ গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়ল। এই লোকটার জন্য ওর জীবন ডা তেজ পাতা। বিকেলে কত গুলো জামাকাপড় গুছালো। এখন কাচ ভেঙে রেখেছে। পরিষ্কার করবের আশায় উঠতে নিচ্ছিল ঠিক তখনই ওর উপর এক প্রকার ঝাপিয়ে পড়ে নাহিয়ান। আকষ্মিক নাহিয়ানের উদ্ভট আচরণের জন্য প্রস্তুত ছিল না ফারাহ্। পিছনের দিকে হালকা হেলে গেলো। ঝাপটে ধরে আছে নাহিয়ান। হৃদপিণ্ড অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। ফারাহ্ অবুঝের মতো লেপটে রইলো মানুষটার সাথে। অতিবাহিত হল কিছু সময়। এবার অস্বস্তি হচ্ছে ফারাহ্’র। এত টাইট করে কেউ জড়িয়ে ধরে? হাড্ডি গুড়ি যাবে কিছুক্ষণের মাঝে। নড়চড়ে করতে যাবে তৎক্ষনাৎ নাহিয়ানের আওয়াজ এলো কানে ,

” নড়বিনা যেভাবে আছিস থাক। ”

ফারাহ্ কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে দৃঢ়ভাবে বলল ,

” আমি কোথাও যাবো না , প্লিজ ছাড়ুন কাচ গুলো পরিষ্কার করতে হবে না হলে পা কে/টে যাবে। ”

” না তুই পরিষ্কার করবি না আমি ভেঙেছি আমি করবো। ”

বলেই উঠে দাঁড়ালো। আস্তে ধীরে সব কাঁচ তুলে নিয়ে বারান্দায় থাকা ডাস্টবিনে ফেলে আসে। ল্যাম্প লাইট কাউচের উপর পড়ায় এই যাত্রা বেঁচে গেছে। টাইলসের উপর পড়লে নির্ঘাত ভেঙে যেতো। ল্যাম্প ঠিকঠাক জাগায় রেখে স্বস্তির শ্বাস নিল নাহিয়ান। দুই হাত ঝেড়ে ফারাহ্ দিকে চেয়ে হালকা হাসল। দেখে মনে হচ্ছে পঞ্চম বিশ্বযুদ্ধ জয় করে এসেছে। বিনিময়ে ফারাহ্ ও হাসল। নাহিয়ানের দিকে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল ,

” ভাংচুর কেনো করলেন? ”

মুহূর্তেই মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো নাহিয়ানের। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফারাহ্ গা ঘেঁষে বসে পড়ল। চোয়ালে শক্ত করে বলল ,

” তুই আজকে থেকে রিশাবে আশেপাশে থাকবি না। তুই ওর ছায়া ও মাড়াবি না। ”

” ওকে বাবা মেনে নিলাম আর আমি এখন শামীমের সাথে বসে টিভি দেখছিলাম। রিশাব কোথায় থেকে এলো জানি না। আচ্ছা রিশাব কি এমন করল আপনি ওকে দেখতে পারেন না কেনো? ”

” ও আমার কলিজায় হাত দিয়েছে। ”

” ও মাই চলকেট! কি বলে ওর হাত এত বড় হল কবে যে আপনার কলিজা স্পর্শ করে ফেলল। ”

কথা শেষ করেই হাসিতে ফেটে উঠল ফারাহ্। হাসতে হাসতে নাহিয়ানের দিকে তাকালো। ওর দিকে নিষ্পলকে চেয়ে আছে। স্নিগ্ধতা মিশ্রিত শান্ত চোখে। হাসি থামিয়ে নজর সরিয়ে নিল ফারাহ্। নাহিয়ান কপালে ভাজ ফেলে বলল ,

” হাসি থামালি কেনো? হাস। ”

” কি? ”

” কি? কি? করছিস হ্যাঁ যেটা বলেছি সেটা কর। ”

” আমি কি পা’গল অযথা হাসবো কেনো ? ”

” এতক্ষণ তো হাসছিলি! ”

” আমার হাসি শেষ। নিচে যাচ্ছি ডিনার করতে হবে। ”

” দাড়া। ”

” আবার কি? ”

” আমার সাথে যাবি , হাত ধুয়ে আসছি আমি। ”

হাবার মতো চেয়ে আছে ফারাহ্। নাহিয়ানের আচরণের পরিবর্তন ওকে খুব ভাবাচ্ছে আচমকা লোকটার হল কি? মিনিটের মধ্যে হাত ধুয়ে চলে এলো নাহিয়ান। ফারাহ্ হাত ধরে বসা থেকে টেনে তুলে বলল ,

” চলেন মহারানী। ”

ফারাহ্ নাহিয়ান কে এক সাথে সিড়ি বেয়ে নামতে দেখে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালেন শামীমা আখতার। তার ছেলে মোডঅন করুক উনি এটাই চান। মনে মনে বললেন ,
‘ কি সুন্দর মানিয়েছে দুই জন কে , জুটি বাঁধা ছিল ওদের আলাদা করবে কে। তাই হয়তো তারা….. ‘

ড্রাইনিং রুমের কাছাকাছি আসতেই ফারাহ্ হাত ছেড়ে দিল। প্রথমে চেয়ার টেনে ফারাহ্ কে বসতে ইশারা করে। তার পর নিজে বসল অন্য চেয়ারে। সবাই আপাতত নাহিয়ানের কার্যকর্মে অবাক হচ্ছে। খাওয়ার মাঝে শামীমা আখতার শুধালেন ,

” নাহিয়ান আমরা সবাই গ্রামে যেতে চাইছি , তুমি তো যাবে না ফারাহ্ কে দিও আমাদের সাথে। ”

কিছু সময় মৌন থেকে গম্ভীর গলায় বলল নাহিয়ান ,

” ফারাহ্ কোথাও যাবে না মম। ”

ফারাহ্ বিস্মিত সুরে বলে উঠল ,

” কেনো? আমি গেলে কি হবে? ”

” আমি বলছি তাই যাবি না এখন কেউ খাওয়ার মধ্যে ডিস্টার্ব করলে উঠে চলে যাবো। ”

দমে গেল ফারাহ্ অসহায় মুখ করে শামীমা আখতারের দিকে চাইলো। ও জনতো সবাই মিলে গ্রামে যাবে। কত আশা বুনে রেখে ছিল। কি করবে না করবে। এখন সব কেল্লাফতে যাচ্ছে নাহিয়ানের জন্য। সেটা তো হতে দেওয়া যায় না। ওকে কিছু একটা করতে হবে। কেউ কিছু বলতে গিয়ে ও বলল। যাবে আগামী কাল সকালে। সকালে যাওয়ার আগে কথা বলে নিবে। এখন নাহিয়ান কে না রাগানোই ভালো। এই ছেলেটার রাগ মানে আ’গু’ন।

” আমি তোকে কোথাও যেতে দিচ্ছি না। ”

ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল ফারাহ্। নাহিয়ানের কথা শুনে পিছনে মুড়ে তাকালো। ডিনারের পরপর ও রুমে চলে আসে। তার ঠিক আধ ঘন্টা পর নাহিয়ান এলো। শেষ বার চেষ্টার সহিত বলল ,

” প্লিজ সবাই যাচ্ছে আমরা গেলে কি হবে দুই কি তিন দিনেরই তো ব্যাপার না। ”

” দুই কি তিন তো কাছে কিছুই মনে হয় না। এই দুই কি তিন ‘চার দিনের জন্য আমি তারাকে হারিয়েছি। ”

‘আমি তারাকে হারিয়েছি’ শব্দ গুলো বুকে গিয়ে লাগলো। ব্লাঙ্কেট বেডের উপর রেখে নিজেও বেডে শরীর এলিয়ে দিল। প্রায় ছয় মিনিটের মাথায় লাইট অপ করে বেডে বসল নাহিয়ান। তারপর গা ছেড়ে শুয়ে পড়ে। ফারাহ্ নাহিয়ানের দিকে কাত হয়ে ঘুরল। খুব অভিমান হচ্ছে তার। ওরা এখন বিবাহিত কোথায় বউ কে জড়িয়ে ধরবে কথা বলবে তা না। শোয়ার সাথে সাথে ঘুম। বাজে লোক! হঠাৎ ঘাড়ের নিচে শক্ত হাতের স্পর্শ ফেলো। হাত ঘাড়ের নিচ বিচরণ করে পিঠের উপর গিয়ে থামলো। অন্য হাত কোমড়ের উপর। দুই হাতের দশ আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে কাছে টানলো ফারাহ্ কে। মিশে গেলো দু’জনে দু’জনাতে। অপ্রকাশিত ভালোবাসার দোটানায় কোমল আদুরে পরশে ভরিয়ে দিল ফারাহ্ কে। নাহিয়ানের স্নিগ্ধ পরশে অভিমানের পাহাড় গলে জলে পরিনিত হল।

____

সকালে নাহিয়ানের আগে ঘুম ভাঙে ফারাহ্। ফ্রেশ হয়ে ঝটপট নিচে নেমে আসে। সাড়ে ছয় টা বাজে একটু পরই সবাই নাস্তা করতে চলে আসবে। পেস কালারে প্লাজু , ডার্কব্লু গোল জামা , গোলাপি ওনড়া পড়নে। জামার মধ্যে ফ্রেবরিক্সের পেস কালার গোলাপি , গোলন্ডে সমৃদ্দে কাজ করা। পপি ফারাহ্ কে খুঁচিয়ে বলল ,

” ওহে ননদি প্লাস ভাবিজ্বি আজকে আপনার বর জগিং-এ গেল না। ”

অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল ফারাহ্। মুখে জোরালো হাসি টেনে বলল ,

” নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো ঘুম বেশি পেয়ে ছিল তাই। ”

” আমি এই বাড়িতে এসেছি পর্যন্ত ভাইকে কখন ও জগিং মিস দিতে দেখি নি আজকে দেখলাম। ”

প্রতুত্তরে ফারাহ্ কিছু বলল না। চুপচাপ কফি বানাতে লাগলো। সানজিদা বলল ,

” ফারাহ্ তুই গ্রামে যাচ্ছিস না। ”

” সবাই এমন করছো কেনো গেলে কি এমন হবে? ”

” আমাদের কিছুই হবে না যা হবে তোর বরে। তুই তো ডিনার করে উপরে চলে গেলি। আর নাহিয়ান সবার সামনে ইয়া বড় বড় লেকচার দিয়ে গেছে। তোকে না নিতে। ”

” ধ্যাত ছাতা জামাই টা কে নিয়ে ও আর পারি না। ”

সুফিয়া হানজালা কিচেনে এসে ফারাহ্ কে উদ্দেশ্য করে বললেন ,

” ফারাহ্ শুন আমরা সবাই যাচ্ছি ফাতেহ ও যাচ্ছে শুধু তুই আর নাহিয়ান বাদে। সব কিছু গুছিয়ে রেখেছি পারলে রান্না করিস না পারলে বাহির থেকে নিয়ে আসবে নাহিয়ান। ”

” বাহ সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো। ”

” ছেলে টা তারা কে হারিয়ে গুড়িয়ে গিয়ে ছিল তোকে হারালে আর বাঁচবে না। ওর কথা মতে চলিস মা। ”

মায়ের মুখে তারা কথা শুনে কিচেন ত্যাগ করল ফারাহ্। সবাজ ওকে নাহিয়ানের ভালোর জন্য ইউস করছে। কিছু বললেই তারা বলে চুপ করিয়ে দে। ঠিক সাত টা বাজে। শার্টে হাতা গুটাতে গুটাতে নিচে নেমে এলো নাহিয়ান। দু’চোখ শুধু ফারাহ্ কে খুজচ্ছে। মেয়েটা পালি বেড়াচ্ছে কেনো? বুঝছে না। প্রতিদিন ওকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। আজকে ডাকে ও নি নিজে নিজে উঠল। ফজরে নামাজ পড়তে। ও যখন মসজিদে গেছে তখন ফারাহ্ উঠে নামাজ পড়ে আবার ও আসার আগে শুয়ে পড়ে। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে হালকা ব্লু শার্ট টা টেনেটুনে ঠিক করে ড্রাইনিং টেবিলের গিয়ে বসে পড়ল। সকলকে পরিপাটি রূপে দেখে বলল ,

” একে বারে তৈরি হয়ে নামলে সবাই। ”

মিনা আরাফা বললেন ,

” হ্যাঁ বাবা একটু পর রওয়ানা দিব। ”

” বেশ। ”

কিচেনে দাঁড়িয়ে স্যান্ডউইচ খাচ্ছে ফারাহ্। সুফিয়ান পিছন থেকে মাথায় টোকা দিয়ে বলল ,

” দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছিস কেনো? ”

” আমি ও যাবো তোদের সাথে। ”

” সে জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছিস! ”

” ভাই ছাড় না মজা তোদের নাহিয়ান ভাই কে বল না আমাকে দিতে তোদের সাথে। ”

” সরি বোন টা রাতে যা বলেছে নাহিয়ান ভাই এখন তোকে নেওয়ার কথা বলা মানে…. ”

গলার মাঝে হাত দিয়ে বুঝালো , জবান কে’টে দিবে।ফারহ্ নিরাশ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। যথাযথ সময়ে বাড়ির সবাই বের হয়ে পড়ল গ্রামের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে শামীম আখতার সবাই ফারাহ্ কে সান্তনা দিয়ে গেছে। আর বলেছে সাবধানে থাকতে। গ্যাসের চলু সাবধানে ধরেতে। আরো কি ব্ল্যা ব্ল্যা….। সদর দরজা লাগিয়ে পিছনে ঘুরতে নাহিয়ান কে দেখতে পায়। বুকে হাত গুজে শক্ত চোখে ওর দিকে চেয়ে আছে। ও আবার কি করল ?

” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? ”

নিরুত্তর নাহিয়ান। সনাট হয়ে দাঁড়িয়ে ফারাহ্ দিকে এগুতে লাগলো। ফারাহ্ পিছালো না। নাহিয়ান ওর থেকে এক ইঞ্চি দূরত্বে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে বসল ,

” ঘুম থেকে উঠার পর দেখছি অ্যাভয়েড করছিস আমাকে? ”

” আপনাকে অ্যাভয়েড করবো? কয় টা মাথা আছে আমার ঘাড়ে। ”

এক দমে বলে থামলো ফারাহ্। নাহিয়ান ফারাহ্’র কপালের চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে সরু চোখে তাকিয়ে বলল ,

” পালাচ্ছিস কেনো? ”

” কোথায় পালালাম? আপনি আমাকে যেতে দিচ্ছেন না তাই তো একটু রা’গ হল। ”

” শুধু একটু রা’গ? ”

” হ্যাঁ।”

হাত উঁচু করে বুড় আঙ্গুল আর তর্জনী আঙ্গুলের ফাঁকে কিছু জায়গায় রেখে মিনমিনিয়ে ফের শুধায় ,

” একটু। ”

শব্দ করে হেসে ফেলল নাহিয়ান। ফারাহ্ বাচ্চা ফেস করে তাকিয়ে আছে। ওর দুঃখ দেখে নাহিয়ান হাসছে? কত খারাপ লোক টা? নাহিয়ান প্যান্টের পকেটে হাত গুজে আদেশ সুরে বলল ,

” আমি কফি খাই নি কফি নিয়ে আয় যায়। ”

” কফি ড্রাইনিং -এ আছে কষ্ট করে নিয়ে খান। ”

” বউ থাকতে কষ্ট করতে পারবো না। ”

বলেই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে গেল ফারাহ্ সামনে থেকে। দাঁতে দাঁত চেপে কফি আনতে গেল ফারাহ্। হুট করে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো৷ ড্রাইনিং থেকে ব্ল্যাক কফি নিয়ে কিচেনে আসল। কফিতে ইচ্ছে মত মরিচের গুড়া মিশিয়ে নিল ভালোভাবে৷ ব্ল্যাক হওয়া বুঝা যাচ্ছে না। নাহিয়ান এখন মিনি টেরেস। সিড়ি ডিঙিয়ে উপরে উঠে টেরেসে গেলো। ডিভানে বসে কি যেনো ঘাটছে।

” উঁউহু উঁহু। ”

” গলায় ব্যাঙ ডুকেছে? এমন করছিস কেনো? ”

ফারাহ্ নাক ছিটকে বলল ,

” ছিহ্ কি সব কথা বার্তা! আমি এসেছি তা জানাচ্ছি আপনাকে। বারো মিনিট দাঁড়িয়ে রইলাম। ”

নাহিয়ান ল্যাপটপ থেকে নজর সরিয়ে ফারাহ্ দিকে তাকিয়ে তর্জনীর সহয়তায় চিবুক স্লাইড করে বলে উঠল ,

” তোর মতো মাথা মোটা নয় আমি বুঝেছিস , তুই এসেছিস কখন আমি ভালো করে বুঝতে পেরেছি। এক মিনিট হয় নি বারো মিনিট বলতে এসেছিস। ”

ফারাহ্ ভেংচি কেটে কফি এগিয়ে দিল। নাহিয়ান কিছু ক্ষণ কফির দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে বলল ,

” হলুদের গুড়া টা একটু কম হয়ে গেলো না আরো বেশি দিতি। ”

ভড়কে গেল ফারাহ্ আমতা আমতা করে বলে উঠে ,

” হলুদের গুড়া কফিতে কেন আসবে? কফিতে কেউ হ্্লুদ দেয় নাকি? ”

” দেয় না ওহ আমি তো ভেবেছিলাম দেয়। ”

একটু থেমে ফের বলল ,

” তাহলে কি দেয় মসল্লা? ”

” না। ”

” আমি এখানে স্পষ্ট মসল্লা দেখতে পারছি। ”

” কোথায় মসল্লা? মসল্লা দিলে তো দেখা যাবে। আমি তো মরিচ.. ”

” থেমে গেলি কেনো বল ‘আমি তো মরিচ..’ এর পরে কি? ”

বলেই উঠে দাঁড়ালো নাহিয়ান ফারাহ্’র দিকে ঝুকে স্লো ভয়েজে বলল ,

” তুই কি ভেবে ছিলি আমি বুঝতে পারবো না তুই কফি তে মরিচ মিশিয়ে এনেছিস। ”

মাথা হেলিয়ে চোখ দিয়ে ল্যাপটপের দিকে ইশারা করে ফের বলল ,

” ওই দিকে দেখ। ”

ফারাহ্ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে চুক্ষ জোড়া বড়াবড়া করে ফেলে। সিসিটিভি ফুটেজ। তার মানে কি রান্না ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে? ফাঁকা ঢোক গিলে ভেটকি হেসে বলল ,

” আসলে চিনি দিতে গিয়ে ভুলে মরিচ _”

নাহিয়ান আলগোছে হাসল। ফারাহ্ হাত থেকে কফি মগ নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরে লহু কন্ঠে বলল ,

” ফিনিশ ইট। ”

কেঁপে উঠল ফারাহ্। ঘনঘন চোখে পলক ঝাপটে পিছাতে গেলেই নাহিয়ান ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে আটকিয়ে দিল। তড়িৎ গতিতে নাহিয়ানের দিকে তাকালো। ভ’য়ে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে। নাহিয়ানের নেত্রী যুগোল ভ’য়া’নাক। লাল হয়ে আছে। ফারাহ্ জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আশেপাশে দৃষ্টিপাত করছে। আর মনে মনে আড়ছে কি করে পালানো যায়? কি এক মসিবতে পড়ল! ওদের পুরো বাড়ি সিসি ক্যামেরা আবদ্ধ আগে যদি জানতো এমন কাজ করার কথা মাথা ও আনতো না। কি করবে? কি করে বাঁচাবে বাড়িতে যে আর কেউ নেই। না হলে এতক্ষণে চেঁচিয়ে হানা করে ফেলতো।

#চলবে

®আহমেদ মুনিয়া
•••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here