তোর চোখে আমার সর্বনাশ পর্ব -১১

তোর চোখে আমার সর্বনাশ

১১.

কথা টা বলেই টগবগিয়ে ঘোড়ার মতো লাফিয়ে উপরে চলে গেলো। ফারাহ্ আড় চোখে নাহিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফের সূর্যমূখীফুলরানী দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। উদ্দেশ্য আরো কিছু জানা।

” বয়স কত তোমার? ”

” ২৬ বছর। ”

মিনা আরাফা ফোড়ন কেটে জিজ্ঞেস করলেন ,

” এই বয়সে কাজ করতে বের হয়েছিস? ”

সূর্যমূখীফুলরানীর মুখ কালো হয়ে গেলো। ফিচেল সুরে বলতে শুরু করে ,

” দাদাজান ছুড়ু বেলায় মা’রা যায়। বাবা – মা ছাড়া আর কেউ ছিল না আমার। দাদাজান গত হওয়ার পর চাচা জেঠারা ও দুই নাম্বারি করে আমাদের সাথে। আমার বাজান (বাবা) ছিলে সরল , সৎ ভাইয়েদের স্বার্থপরতা দেখে আস্তে আস্তে অসুস্থ হতে থাকেন। আমার বয়স যখন ১৭ ঘরে ছিল তখন বাজান ও আমারে আর আমার মা’রে ছাড়ি চলে গেছেন। বাজান মা’রা যাওয়ার এক বছর পর মা আমারে বিয়া দিয়া দেন। প্রথম প্রথম ভালোই ছিলাম কয়েক বছর যাওয়ার পর আমার বাচ্চা কাচ্চা হইতেছে না দেখে যৌতুকের চাপ দিতে থাকে। আমাদের ভাগে যত টুকু ছিল মা সব উনাদের দিয়া দিছল। খালি ঘরের জায়গা টা বাদে। কিছু দিন চুপ থেকে পরে আবার যৌতুকের কথা কইতে থাকে। আমাদের কাছে আর কিছু না থাকায় আমায় তা’লা’ক দিয়া দে…. ”

চোখের পানি মুছে কান্না মাখা কন্ঠে ফের শুধায় ,

” ২২ বছর বয়সে তা’লা’কের শিকার হইলাম। আমার মা , রা’গে দুঃখে স্টক করেন। উনার পুরো অঙ্গ অবশ হইয়া গেছিল। তার ঠিক দুই বছর পর মা ও আমারে একা করে চলে যান। মা মারা যাওয়ার পর এক দিন রাস্তায় অনেক লোক আমারে নানান কথা কইয়া চ’ড় থা’প্প’ড় দিতাছিল। কারণ আমি মেনষের বাড়িতে কাজ করে যা টাকা পাইতাম হেটা দি মায়ের চিকিৎসা চলতো। সংসার চলাতাম দোকান থেকে বাকি করে। টাকা দিতে না পারা উনারা আমার মারতে শুরু করনে। ২৪ বছরের ছিলাম তখন। হঠাৎ একটা বড় দামী গাড়ি এসে থামে আমার সামনে। গাড়ি টা আর কারো নয় নাহিয়ান ভাইর ছিল। উনি সে দিন আমাকে ওদের হাত থেকে বাঁচিয়ে সব টাকা শোধ করে দিয়ে এসেছিলেন। তার পর থেকে আর কোনো ঝামেলা পটি নাই কারণ আমি এক জন। ঘরে থাকতাম কাজ করে দিন যাইতো। আজকে রাতে নাহিয়ান ভাই ওই দোকান দার থেকে নাকি আমার খোঁজ নিয়া আমাদের বাড়ির তলক গেল। আবার বছর দুয়েক পর উনারে দেখে অবাক হইছিলাম। উনি আমারে বলেন আর ওখানে থাকা লাগবে না। সারাফাত ম্যানসনে নাকি এক জন…..কি জানি কয় ইংরাজিতে কাজের লোকরে..? ”

ফাতেহ চট করে বলে উঠে ,

” স্টাপ! স্টাপ বলে। ”

” হ্যাঁ ওই স..তপ। ”

ফাতেহ আবার বলল ,
” আরেহ সতপ না স্টাপ। ”

” ওই যেটাই কয় হইল তো , তাই আমারে নিয়া আইলো। ”

সবাই অসহায় মুখে চেয়ে আছে। কিশোরী বয়স থেকে মেয়েটা কষ্টে ভুগে আসছে। যে বয়সে মেয়েরা স্কুল – কলেজ , খেলাধুলা , আড্ডা মজ মাস্তি নিয়ে থাকে এই বয়সে এরা সংগ্রাম করে। জীবন একেক জনের জন্য একেক ধরনের! মিনা আরাফা সূর্যমূখীফুলরানী মাথায় আলতো হাত ছুয়ে আদুরে সুরে বললেন ,

” আর কাঁদবি না আমরা সবাই মিলে এক পরিবার। আজকে থেকে আমাদের সাথে তোর সব দুঃখ ভাগ করবি। আর আমাদের সব সুখের ভাগী তুই। ক্লান্ত লাগছে তোকে ফ্রেশ হয়ে নে। আর শুন দুই তিন দিন কাজ করিস না। বাড়ি ঘুরে দেখ আমাদের ঘরে একটা তোতাপাখি আছে তার সাথে তিরিং বিরিং কর কিছু দিন। ”

সূর্যমূখীফুলরানী সামান্য হেসে স্বাভাবিক হয়ে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল ,

” তোতাপাখি কোথায়? ”

মিনা আরাফা ফারাহ্ হাত ধরে টেনে উনার দিকে এনে বললেন ,

” এটা আমাদের তোতাপাখি , যে আমাদের ঘর মাতিয়ে রাখে সর্বক্ষণ। ”

শামীমা আখতার বললেন ,

” পপি যাও ফুল কে একটা রুম দেখিয়ে দাও। ”

” জ্বি , যাচ্ছি। ”

বলেই সূর্যমূখীফুলরানী কে নিয়ে পপি স্টাপ কক্ষের দিকে গেল। সুফিয়া হানজালা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে উঠেন ,

” ফারাহ্ রুমে যা নাহিয়ান তোকে ডেকেছে না। আমি ও যাচ্ছি সূর্যমূখীফুলরানী কে কিছু নাস্তা দিয়ে আসি মেয়েটা কখন কি খেয়েছে কে জানে। ”

সুফিয়া হানজালার সাথে সবাই কিচেনে চলে গেল। ফারাহ্ একবার উপরের দিকে তাকালো আরেক বার সূর্যমূখীফুলরানী কক্ষের দিকে। কি মনে করে কক্ষের দিকে পা বাড়ালো। সূর্যমূখীফুলরানী পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখছে এমন আলশিয়ান রুমে সে কখন ও থাকে নি। আজকেই প্রথম। রুম জুড়ে রয়েছে এক কর্ণারে দেওয়ালে সাথে লাগালো বেড। তার এক পাশে বেড সাইড টেবিল। এর পর দুই দরজার একটা কাবার্ড। চিপায় একটা মিনি সাইজের আনলা। তার পরে বাম দিকে ডেসিং টেবিল , একটু দূরে আরেক টা পড়ার টেবিলের মতো। পুরো রুম জুড়ে সব আছে আছে। জানালা , ওয়াশরুম , মিনি বারান্দায় ও আছে। অশ্রু শিক্ত নয়নে তাকালো পপি আর ফারাহ্’র দিকে।

” এত বড় রুমের প্রয়োজন ছিল না তো। ”

” এটা তোমার রুম তুমি থাকবে এত কথা বলো কেনো যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। ”

ফারাহ্ কথার পৃষ্ঠে পপি বলল ,

” তারাতাড়ি আসো যাও। ”

______

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া কলমা পড়ে নব্ ঘুরালো ফারাহ্। সে কখন আসতে বলেছি নাহিয়ান আর ও একেবারে ডিনার শেষে আসল। আর সবচেয়ে বড় কথা তখন কার পর নাহিয়ানের সামনে ও যাই নি। সূর্যমূখীফুলরানী , পপি , সানজিদা , সুফিয়ান , ফাতেহর সাথে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল এতক্ষণ। আচমকায় হাতে টান পড়ায় টাল সামলাতে না পেরে কারো বুকের উপর গিয়ে পড়ল। পিছন থেকে দরজা লাগানোর আওয়াজ পায় সে। বুঝতে আর বাকি নেই নাহিয়ান ই ওকে টেনে রুমে আনলো। ডান হাত দিয়ে ওকে ধরে রেখে বাম হাত দিয়ে দরজা লকড করেছে। ফারাহ্ সরে আসতে নিলে নাহিয়ান কোমড় চেপে ধরল শক্ত করে। ফারাহ্ নিজেকে ছাড়ানোর যত চেষ্টা করছে ততই শক্ত হচ্ছে নাহিয়ানের হাতের বাঁধন। কোমড়ে ব্যথা অনুভব করতেই নড়চড় বন্ধ করে দিল। ভোঁতা মুখ করে চাইলো নাহিয়ানের দিকে৷ তৎক্ষণাত নাহিয়ানের রা’গী ঝাঁঝালো আওয়াজ এলো ওর কানে ,

” আমার কথা না শুনার রো’গ হয়ে গেছে তোর না? ”

ধা’রালো স্থির কথা গুলো বক্ষদ্বয়ে তী’রে মতো গিয়ে লাগলো ফারাহ্। চোখে মুখে ভ’য়ের চাপ। কেনো জানি নাহিয়ানের থেকে দূরত্ব চাইছে ও৷ এরিয়ে চলতে চাইছে। তীব্র ব্যথা আর নিতে না পেরে ভাঙা স্বরে বলল ,

” নাহিয়ান লাগছে আমার। ”

হাতের বাঁধন ডিলে করল নাহিয়ান। রা’গে শরীর তুখোড়। অতিরিক্ত জিদ্দে ফারাহ্ কে নিজের থেকে দূরে ঠেলে দিল৷ মুখ গম্ভীর্য আকার ধারণ করে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল ,

” তখন আসতে বলেছি আসিস নি কেনো? ”

” এখন আসবো বলে। ”

সোজাসাপটা উত্তর। পেয়ে কপালে আঙ্গুল ঘেঁষলো নাহিয়ান। ভ’য়ং’ক’র ভাবে ফুসতে ফুসতে শ্বাস ছাড়ল সে। ফারাহ্ ভ’য় পেলে ও প্রকাশ করছে না। নাহিয়ান ওকে কেনো মেনে নিয়েছে? ভালোবেসে! নাকি দায়িত্ব বোধ ভেবে? নাকি অন্য কোনো কারণে বের করে ছাড়বেই ও। নাহিয়ান সনাট হয়ে দাঁড়িয়ে চোখ ঘুরালো অবিলম্বে। ফারাহ্ বেঁকে দাঁড়িয়ে আছে। নাহিয়ান ফের শক্তপোক্ত গলায় বলল ,

” সব তো ঠিকিই ছিল , এখন কি এমন হল যার জন্য লুকোচুরি খেল চালাচ্ছিস ? ”

” আমি লুকোচুরি কই খেলছি। আপনার সাথেই তো ভালো মতেই কথা বলছি। যখন যা প্রয়োজন হবে শুধু এক বলিয়েন কাজ হয়ে যাবে। ”

অবাক না হয়ে পারলো না নাহিয়ান। কি বলে কি মেয়েটা? ও শুধু প্রয়োজনেই তাকে কাছে টানে? হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। কপালের ভাজে কয়েক টা রগ ফুলে উঠেছে ইতি মধ্যে। মন চাইছে চ’ড় থেরাপি টা চালাতে এখন। চোখ বন্ধ করে নিজেকে যথেষ্ট ঠান্ডা করে শীথল ভাবে বলে উঠল ,

” চুপচাপ ঘুমা , সাইড টেবিলের উপর পেইন কিলার আছে খেয়ে নিস আগে হাতের ব্যথা কমে যাবে। ”

ফারাহ্ মাথা উঠিয়ে হতভম্ব চোখে তাকালো। ও ভেবে রেখে ছিল এখন নিশ্চয়ই দু চারটে থা’প্প’ড় খাবে। না হয় নাহিয়ানের রা’গে বর্ষ হবে। সেরকম কিছুই হল না। কথা গুলো যে চোখ বন্ধ অবস্থায় বলেছে সেটা ও ভালো করে বুঝেছে। ভ’য় দৃঢ়তা কাটিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টি মেলে ধরল নাহিয়ানের মুখশ্রীতে। অবদানময় লাগছে তার সামনে রা’গী মানুষ টাকে৷ রা’গার ফলে ফর্সা নাক খানা হালকা লালছে হয়ে এসেছে। দুর্বোধ্য হাসলো ফারাহ্ ও নিজের ইচ্ছেতেই নাহিয়ানের সাথে এমন করছে। শুধু এক বার ‘ভালোবাসি’ শব্দ টা শুনতে। পরক্ষণে তারার কথা মনে আসে৷ যে ছেলেটা ওকে বিয়ের দিন লাল শাড়ি পড়তে নিষেধ করে সে ভালোবাসি বলবে কি করে? এতো টা ভাবা ঠিক হচ্ছে না ফারাহ্। মোটে ও না।

গলার স্বর নামিয়ে বলল ,

” আপনি ও শুয়ে পড়ুন রাত অনেক হল তো। ”

নাহিয়ান চোখ মেলে তাকালো। র’ক্তিম লাল চোখ দেখে কয়েক টা ঢোক গিলল ফারাহ্। হিংস্র বাঘ কে জাগিয়ে তুলছে সে। অথচ তার ধারণা নেই সে যে বাঘের গুহায়। নিজেকে মনে মনে ইচ্ছে মতো গা’লি দিতে দিতে বেডে গিয়ে বসে নাহিয়ানের বলা ঔষধ খেয়ে ব্লাঙ্কেট মুড়িয়ে শুয়ে পড়ে। মাথা ও ডেকে নিয়েছে সকালের আগে নাহিয়ানের মুখ দর্শন করবে না সে। রাত প্রায় এক টা তেইশ সকলে ঘুমে বিভোর। শুধু নাহিয়ান বাদে। বারান্দায় ফ্লোরে বসে তারার ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদছে। এক তারা ওকে কখন ও কষ্ট দিত না আর ভুলে ও যদি দিয়ে দিত হাজার বার ক্ষমা চাইতো। যত ক্ষণ পর্যন্ত নাহিয়ান বলতো , যাও মাফ করে দিলাম। আর এখন সে মেয়েটাই ওকে একা করে চলে গেছে। তার তারা এখন আকাশের তারা হয়ে গেছে। বুক ফেটে কান্না আসছে। ছেলে মানুষ তো কাঁদে না। ও কেনো কাঁদছে। প্রিয়তমার হারানোর বেদনায়।

ভোরে ঘুম ভাঙতেই পাশে খালি দেখে ফারাহ্। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। চার দিকে ফজরের আজান দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে মাত্র ৷ বিভিন্ন দোয়া পড়ছেন উনারা। নাহিয়ান কি উঠে গেছে? এত তারাতাড়ি তো উঠার কথা নয়। রুমে লাইট ও বন্ধ। উঠে বেড থেকে নেমে প্রথমে রুমের লাইট দিল। পুরো রুম ফাঁকা।বেডের অপর পাশ দেখে বুঝা যাচ্ছে নাহিয়ান রাতে ঘুমায় নি বেডে৷ কোথায় গেল? বারান্দার থাই ঠেলে বারান্দায় গিয়ে ফ্লোরে নাহিয়ান কে শুয়ে থাকতে দেখে টাস্কি খেল। ছেলেটা সারা রাত মেঝেতে ছিল। পাশে বসে কপালে হাত ছুয়ে দেখল জ্বর টর এসেছে কিনা। না আসে নি সব নরমাল। বুকে জড়িয়ে রাখা এলবাম টা আস্তে করে নিল। সমস্ত এলবাম জুড়ে তারার ছবি। খানিক টা খারাপ লাগলে ও আবার ভালো ও লাগছে নাহিয়ান তারাকে কত টা ভালোবাসে সেটা তো সবাই আগে থেকেই জানতো। ফজরের আজান পড়ে গেছে। নাহিয়ান কে ডাকা উচিৎ। রাতে গভীরে ঘুমিয়েছে বোধ হয় তাই সজাগ হচ্ছে না। কয়েক বার ডাকার পর স্থির হয়ে উঠে বসে। মুখে কয়েক বার দুই হাত দ্বারা মালিশ করে ফারাহ্’র দিকে তাকিয়ে ম্লান মুখে বলল ,

” রাতে এখানে বসার পর চোখ লেগে এসেছে আমি বুঝতে ও পারি নি তুই __”

” আমি কিছু মনে করিনি। আজান দিয়ে দিল মসজিদে যাবেন তো উঠুন। ”

” ও হ্যাঁ। ”

টলতে টলতে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ফারাহ্ বারান্দায় থেকে গ্লাসের ওপার থেকে সব দেখছে। ভিতর থেকে ভারী শ্বাস বের হয়ে এলো। ওর কি করা উচিত নিজে ও বুঝতে অক্ষম হচ্ছে না। এলবাম সেন্টার টেবিলের উপর রেখে রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। বিয়ের পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার ওর রুমে পা রেখেছে। এই রুমে পা রাখলে বাপের বাড়ি ফিলিংস আসে। তাই সরাচর এখানে আসে না। বাপের বাড়ি শ্বশুর বাড়ি এক জাগায়। অন্য রকম ফিলিংসের জন্য নিজের রুমে আসা হয় না। আজকে মনে হচ্ছে বাপের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে।

_

জগিং থেকে ফিরে এসে ফারাহ্ কে হাঁক ছেড়ে ডাকল নাহিয়ান। ফারাহ্ ড্রাইনিং -এ ছিল। নাহিয়ানের ডাক শুনে এক গ্লাস আপেল জুস নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসে। নাহিয়ান সোফায় হেলান দিয়ে বসে ছিল ফারাহ্ কে দেখে সোজা হয়ে বসল। ফারাহ্ গ্লাস এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করে ,

” ডাকলেন কেনো? ”

” বউকে দেখার ইচ্ছে হয়েছে তাই ডাকলাম , বস৷ ”

” বসার সময় নয় এখন জুস খেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন ব্রেক ফাস্ট তৈরি করছি। ”

নাহিয়ান জুস খেয়ে সোফায় ছেড়ে দাঁড়ালো টাউজারের পকেটে দুই হাত ডুকিয়ে ফারাহ্’র দিকে একটু ঝুকে এসে ধীর কন্ঠে বলল ,

” বউ আমার অফিসে যাবো ড্রেস চুজ করে দাও। ”

ফারাহ্ কাঁপা কাঁপা চাহনীতে চেয়ে মনে মনে ভাবছে ,
‘এটার আবার কি হলরে?’
জিভ দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে লহু স্বরে বলল ,
” আপনি করুন আমি পারবো না। ”

” ওকে ফাইন আজকে আমি অফিসে যাচ্ছি না। ”

” যাচ্ছি না মানে আপনি জানে না আজকে মিটিং আছে! ”

” জানি তো কিন্তু কি করবো বউ আমার ড্রেস চুজ করে দিচ্ছে না। ”

আশেপাশে দৃষ্টি পাত করতে করতে বলল ফারাহ্ ,

” সোজা হয়ে দাড়ান , কেউ দেখলে কি ভাব্বে? ”

নাহিয়ান খানিক টা ঝঁকে এসে কোমল চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল ,

” কি ভাব্বে? ”

” আব্ কি করতে হবে বলুন। ”

” ড্রেস চুজ করে দাও এখুনি। ”

” ওকে দিচ্ছি আপনি গিয়ে ফ্রেশ হন। ”

ফারাহ্’র নাকের ডগায় আলতো ঠোঁট ছুয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সিড়ির দিকে পা বাড়ালো। ফারাহ্ স্তব্ধ হয়ে গেছে পলকহীন চোখে তাকালো নাহিয়ানের যাওয়ার দিকে। শব্দ করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিরবিরিয়ে আওড়াল ,
‘ উফফফ লোক টা কে বুঝা মুশকিল গিরগিটি কোথা কার। ‘
.
ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হতে গেল নাহিয়ান। ফারাহ্ কাবার্ডের বাম সাইডের গ্লাস ডান সাইডে ঠেলে গ্রে ব্লেজার , ব্ল্যাক প্যান্ট – শার্ট – বেল্ট – সুজ – সানগ্লাস – ওয়াচ বের করে। ডেসিং কক্ষে থাকা ডিভান টার উপর রাখলো। সুজ গুলো মুজা সহ ডিভানের পাশে রাখল। সুন্দর ঘ্রাণের পারফিউম ও আলাদা করে সামনে রেখে রুম ত্যাগ করে। নাহিয়ান তোয়েলা দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ডিভানের উপর নজর গেল৷ সব কিছু দেখে হাসল সে। বিড়বিড়িয়ে শুধায় ,
‘ তুই যত দূরে যেতে চাইবি তত কাছে টানবো আমি। কখন ও না কখন এটা তোর অনুভবে আসবে আমি তোকে প্রয়োজন ছাড়াই চাই৷ কয __ তোর চোখে আমার সর্বনাশ.. দেখেছি যে। ‘

ব্রেকফাস্ট সেরে যে যার কাজে চলে গেলো। ফারাহ্ আজকে ভার্সিটিতে যাবে না সূর্যমুখীফুলরানী সাথে বেশ ভালো ভাব জমেছে তার। হঠাৎ করে আগমন হল জারার সাথে ওর মা রিত্তিকা আখতারের। আচমকায় আসায় সবাই শকড খেল। রিত্তিকা আর জারা ডুবাইতে ছিল। দেশে আসলো কবে? শামীমা আখতার বোনের সাথে কৌশল বিনিময়ে করে জিজ্ঞেস করলেন ,

” দেশে আসলি কখন? ”

” আজই আসলাম আপা , দুলাভাই’রা কোথায়? ”

” এই সময়ে তো অফিসেই থাকে। ”

” আপা সব ঠিক হয়েছে তো? ”

” আলহামদুলিল্লাহ। ”

” নাহিয়ান বাবা কে দেখছি না ও কোথায়? ”

” নাহিয়ান আবার অফিসে জয়েন করেছে। ”

” ভালো হল। তারা ভূত মাথা থেকে নেমেছে। ”

শেষের কথা গুলো বিরবির করে বলল। ফারাহ্’র সাথে অচেনা মেয়ে টা কে দেখে ফের বলল ,

” মেয়েটা কে আপা চিনলাম না তো? ”

” ও ফুল আমাদের এখানে নতুন এসেছে , কাজে হেল্প করে। ”

” বাড়িতে যুবক ছেলে থাকতে যুবতী মেয়ে আনা ঠিক আপা? ”

” সেটা আমাদের উপর ছেড়ে দে আমরা বুঝবো। তুই আর জারা গিয়ে রেস্ট কর দূর থেকে এলি। আর হ্যাঁ তোর জামাই কই এলো না? ”

” তাকে কি দেশে আনা যায় আপা। ”

শামীমা আখতার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন জুনায়েদ আর রিত্তিকার বিয়ের কয়েক বছর পরই ডুভাইতে চলে যায়। আর দেশে আসে নি জুনায়েদ। রিত্তিকা , জারা এরা আসে মাঝে মধ্যে। মিরাজের বিয়ের সময় শুধু জারা এসেছিল। বিকালের দিকে ফারাহ্ , ফুল মিলে হল রুমে শোপিস গুলো পরিষ্কার করছিল। এত এত শোপিস প্রতিদিন মুছা দায়। জারা সোফায় বসে ফোনে ব্যস্ত। কার সাথে কথা বলছে ভিডিও কলে। এরই মধ্যে সুফিয়ান হেলতে দুলতে সদর দরজা দিয়ে বাসার ভিতরে ডুকল। বাসার ভিতরে ডুকে কয়েক পা হেঁটে তিন সিড়ি ডিঙিয়ে হল রুমে পা দিতেই চোখ যায় সোফার উপর।

#চলবে

®️আহমেদ মুনিয়া
•••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here