তোর চোখে আমার সর্বনাশ পর্ব – ১২

তোর চোখে আমার সর্বনাশ

১২.

জারাকে দেখে ভূ/ত দেখার মতো চমকালো সুফিয়ান৷ ভ্রম মনে করে দুই হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে ফের তাকালো। এদিকে জারা কথা বলতে বলতে উঠে গেস্ট রুমে চলে গেল। সুফিয়ান ভালো করে চোখ ঢ’লে তাকিয়ে দেখে সোফায় কেউ নেই৷ তার মানে ভ্রম-ই ছিল৷ ঠোঁট সরু করে শব্দ করে বড় একটা শ্বাস নিল। ফারাহ্’র কাছে গিয়ে মাথায় চাটি মে’রে বলল ,

” সাফ-সাফি কি এখন করে? ”

” যখনই করি তোর কি? কার বাপের কি? ”

তে’জ দেখিয়ে বলে আবার কাজে মন দিল। হুট করে সুফিয়ান লাফিয়ে উঠে ফারাহ্ সাথে ধাক্কা খেল। কারণ ওর সামনে দাঁড়ানো জারা৷ আগের মতো বার কয়েক বার চোখ ঝাপটানোর পর ও জারা কে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লাফিয়ে উঠল। ফারাহ্ হাতের আইফেল টাওয়ার কাচের ঝকঝকে শোপিস পড়ে তিন টুকরো হয়ে গেল। ফুল ও হতভম্ব। সুফিয়ান কে ঘাবড়ানো অবস্থায় দেখে জারা ছোট ছোট চোখ করে চেয়ে আছে। ফারাহ্ তিন টু’করো আইফেল টাওয়ার শোপিসের দিকে আশাহ’ত চোখে তাকিয়ে সুফিয়ান কে ঝা’ড়ি মেরে বলল ,

” ওই তোরে কোন পে’ত্নী দৌড়াইছেরে বান্দরের মতো এমন লাফালি কেনো? ”

” পেত্নী নারে ডাইনি। ”

ফুল বিস্মিত হয়ে বলল ,

” এখানে ডাইনি কোথায় থেকে আইলো ছুড়ু সাহেব। ”

” ওই তোমারে কত বার না করছি আমারে ছুড়ু সাহেব কইবা না আমার একটা নাম আছে বুঝছো , সুফিয়ান বলে ডাকবে। ”

” আইচ্ছা হেটা ডাকুম নি এখন বলেন ডাইনি টা কে? ”

সুফিয়ান জারা দিকে তাকিয়ে দেখে জারা ওর দিক অবাক হয়ে চেয়ে আছে। মুখে ভাব ভঙ্গি দেখেই বুঝা যাচ্ছে সুফিয়ানের এমন আচারণ তার পায়ের নিচ দিয়ে যাচ্ছে। ফারাহ্ সুফিয়ানের কাঁধে থা’প্প’ড় মেরে থমথমে গলায় বলল ,

” এই তোর হল টা কি এমন করছিস কেনো? ”

সুফিয়ান ফারাহ্ কানে ফিসফিসিয়ে বলল ,

” জারা কি সত্যি এখানে? ”

” হ্যাঁ সকালেই তো এলো। কে__”

কথা শেষ হওয়ার আগে সুফিয়ান ফারাহ্ বাঁ হাতের কনুই ধরে অন্য দিকে নিয়ে এলো। ফারাহ্ বোকা বোকা চাহনীতে তাকিয়ে ফের বলল ,

” সুফিয়ান কি হচ্ছে এসব তুই আমাকে এখানে নিয়ে এলি কেনো , ওরা কি মনে করবে? আর জারাপুই কে দেখে তুই এমন লাফালাফি করছিসই বা কেনো? ”

” আরেহ্ আর বলিস না দুঃখের কথা গত রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে ছিলাম জারা আমাদের বাড়িতে এসেছে। ”

” তো এতে অবাক হওয়ার কি আছে? মাঝে মাঝে কিছু কিছু স্বপ্ন সত্যি হতেই পারে। ”

” এর পরের টা ও যদি মিলে যায় আমি কিতা করুম? ”

” এর পরে কি ছিল। ”

” জারা মুখে ফেসিয়াল মাক্স লাগিয়ে বাসার মধ্যে ঘুর ঘুর করছে। আর ফাতেহ মামা ঘর সাফাই করছিল। একটা হাঁটায় ব্যস্ত অন্য টা ঘর সাফাই ব্যস্ত। হুট করে দুই জনে বাড়ি খেয়ে মেঝেতে পড়ে যায়। জারা চেঁচিয়ে উঠে ‘ও মা গো আমার কোমড়’। তখনই আমার ঘুম ভেঙে যায়। ”

ফারাহ্ হো হো করে হেসে দিল। সুফিয়ান ও মাথা চুলকিয়ে হাসছে। ফারাহ্ কোন রকম হাসি থামিয়ে বলল ,

” চল ওখানে যাই। ”

আগের জায়গা এসে দেখে জারা নেই। ফুল ভাঙা শোপিস টা তুলে নিয়ে গেছে৷ ফারাহ্ হাসি একে বারে গায়েব শোপিস টা নাহিয়ান এনে ছিল ইউকে থেকে। তারার ও খুব পছন্দ ছিল। দু’জনে মিলেই বাসা সাজিয়েছে। আজকে যদি নাহিয়ান আসে তাহলে যদি জানতে পারে শোপিস টা ও ভেঙে ছিল তাহলে ওকে কি আবার থা’প্প’ড় খেতে হবে। তৃতীয় বারের মতো। আমনাআমনি গালে হাত চলে গেলো। না বাবা আজকে যত সম্ভব দূরে দূরে থাকবে। একটার পর একটা কান্ড ঘটায় ও। এত দুষ্টুমি , ভা’ঙচু’র , কা’টাকা’টি বোধ হয় কোন বাচ্চা ও করে না।

_

” সবাই সবার বাবার বাড়িতে গিয়ে বেড়াতে পারে শুধু আমি ছাড়া তাই আমি চাইছি আমি ও আমার বাবার বাড়িতে যাবো। ”

ফারাহ্ এহম কথা শুনে সকলে খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে ওর দিকে তাকালো। হা করে তাকিয়ে আছে সবার। মিরাজ বিস্ময় কাটিয়ে বলল ,

” তোর শ্বশুর বাড়ি আর বাপের বাড়ি আলাদা হল কবে? ”

” আমার রুম হচ্ছে আমার বাবার বাড়ি আর নাহিয়ানের রুম হচ্ছে আমার শ্বশুর বাড়ি। ”

ভাব নিয়ে বলল ফারাহ্। শিহাব খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল ,

” এখন হঠাৎ বাপের বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে এলো কোথায় থেকে বেয়াইন সাহেবা? ”

” আসতেই পারে আব্বু আম্মু তো আমায় উনাদের বাড়িতে নিতেই চাইছে না তাই আমিই যাচ্ছি। ”

এহসান সারাফাত গলা ঝাড়লেন। সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে সেবায় নাহিয়ান ছাড়া। ভ্রু কুচকে চেয়ে আছে ফারাহ্’র দিকে সারাদিন অফিসে কাটিয়ে এসে রাতের ডিনার করতে বসে ও সে শান্তি পেল না। এই মেয়েটার মাথায় উদ্ভট ভাবনা , চিন্তা গুলো কোথায় থেকে আসে? এহসান সারাফাত কিছু সময় মৌন থেকে বললেন ,

” আমার মা এখন আমাদের বাড়িতে যাবে? ”

” জ্বি আব্বি। ”

” কিন্তু মা তুমি জানো বাপের বাড়িতে মেয়েদের যেতে হলে স্বামীর থেকে অনুমতি নিতে হয়। ”

” জানি তো তাই তো সবার সামনে বললাম। ”

” আর একটা কথা রাতে বেলায় কি কেউ বাপের বাড়ি যায় তা ও এত রাতে সকালে যেও। ”

” না আমি এক্ষুনি যাবো। ”

” মা আজকে রাত টা দেখো। ”

” না না আমি আজকেই এক্ষুনি যাবো মানে যাবো। ”

ফারাহ্ ও নাছোড়বান্দা যাবে মানে যাবে আজকেই ওর রুমে। সুফিয়া হানজালা ফারাহ্ কে থামিয়ে বললেন ,

” ফারাহ্ কি করছ এসব চুপচাপ খেয়ে নাহিয়ানের রুমে গিয়ে ঘুমাও , এত কথা বলো কেনো খাওয়ার সময়। ”

মুখ ফুলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ইফতাখার সারাফাত মৃদু হাসলেন। মেয়েটা পুরোই বাচ্চা। অতঃপর শুধালেন ,

” আমার বউমা যখন এই প্রথম নিজ রুমে _ মানে বাপের বাড়িতে যেতে চাইছে কেউ না করবে না এখনি যাবে। ”

” ধন্যবাদ বাবাই। ”

খুশিতে দগদগ করে উঠল ফারাহ্। নাহিয়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখল ওর দিকে সূক্ষ্ম নজরে চেয়ে আছে৷ সে দিকে পাত্তা না দিয়ে নির্বিঘ্নে খেতে শুরু করে। রাতের খাওয়া শেষে কথা মত ফারাহ্ নিজ রুমে চলে এলো। রুমে ডুকেই বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে মনে মনে বলল ,
‘ আহহ! শান্তি নিজের রুমে থাকার চেয়ে শান্তি আর কোথায় ও নেই। ‘

কিছু ক্ষণ পর উঠে ওয়াশরুমে গেল। পড়নের জামা কাপড় চেঞ্জ করে শ্যাফরণ রঙের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট , এ্যাশ কালারের হাফ কুর্তি পড়ে নিল। যা হাঁটুর একটু উপরে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মিররে সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো উঁচু করে খোঁপা করে নিয়ে পিছনে ঘুরেই জোরসে ঝাটক্কা খেলো। নাহিয়ান ঠিক ওর বেডের মাঝ বরাবর বসে আছে বেডের সাথে হেলান দিয়ে। এক পা আরেক পার উপরে। প্রথমে চোখের ভুল ভাবলে ও পরক্ষণে জিজ্ঞেস করল ,

” আপনি সত্যি এখানে? ”

” ইয়াহ্ বেইবি বিয়ের পর প্রথম শ্বশুর বাড়িতে এলাম চা নাস্তা কিছু দিবি না? ”

” আপনি এত রাতে আমার সাথে মস্করা করতে এসেছেন? ”

” কোথায় মস্করা করলাম? তুই নিজেই তো বললি এটা তোর বাপের বাড়ি৷ মানে আমার শ্বশুর বাড়ি। শ্বশুর বাড়িতে কেউ প্রথম এলে তাকে সমদোর করতে হয় জানিস না বুঝি। তুই না করলে সমস্যা নেই আমি শ্বাশু মাদার কে ডেকে বলছি চা দিতে। ”

নাহিয়ান বেড ছেড়ে নামতে যাবে তখনই ফারাহ্ হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠল ,

” এই এই কি করছেন আপনি? আম্মু ঘুমিয়ে গেছে এত ক্ষণে। ”

” তাহলে আর কি তুই নিয়ে আয় যা। ”

” এত রাতে আমি আপনার জন্য কিচেন থেকে চা বানিয়ে আনবো আপনি ভাবলেন কি করে? ”

বিনিময়ে টে’ডি স্মাইল দিল নাহিয়ান। বেড থেকে নেমে ফারাহ্ দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল ,

” তুই যাবি না কি আমি শ্বাশুরি কে ডাকবো। ”

” না ডাকবেন না। ”

” ওকে ডাকছি না , তুই যা। ”

” আমি ও যাবো না। ”

” ওকে ডাকছি তাহলে শ্বা__”

নাহিয়ান যেই চেঁচাতে যাচ্ছিল সে মুহূর্তেই ফারাহ্ রুম থেকে বের হয়ে যায়। আর চেঁচালো না নাহিয়ান। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হেসে বেডে গিয়ে বসল ফের। ফারাহ্ চা বনাতে বানাতে ভাবছে লোক টার বিশ্বাস নাই। যে ভাবে চেঁচাতে গিয়ে ছিল বাড়ির সবাই উঠে ওর রুমে হাজির হয়ে যাবে। কিছু সময়ের মধ্যে চা বানিয়ে নিয়ে এলো। নাহিয়ান দুই এক চুমুক দিয়ে নাক মুখ ছিটকে বলল ,

” চা খেতে ইচ্ছে করছে না , কফি করে আন। ”

” আপনার মনে হচ্ছে না আপনি একটু বেশি করছেন? ”

” না। ”

সরল জবাব। ফারাহ্ দাঁতে দাঁত চেপে ফের রুম থেকে বের হলো। এখন কফি বানাতে হবে। উফফ অসহ্য। নাহিয়ান ইচ্ছে করেই এমন করছে সে ভালো ভাবে বুঝল। আজকে কফিতে কিছু একটা মিশাতে গিয়ে ও মিশালো না। ওই দিনের মতো যদি কিছু করে। কফি হাতে নিয়ে রুমে এসে দেখল চায়ের কাপ খালি। তব্দা মেরে গেল সে। ক্ষো’ভ নিয়ে বলল ,

” চা-ই যখন খেলেন আমাকে দিয়ে কফি আনালে কেনো? ”

নাহিয়ান ফোন থেকে নজর সরিয়ে চঞ্চলমূখর স্বরে শুধালো ,

” তুই আসতে দেরি করছিলি তাই একটু চা খেলাম। ”

” আর একটু কোথায় গেল? এখানে তো পুরো কাপ খালি! ”

” নিচে। ”

” নিচে মানে? ”

” ফ্লোরে তাকিয়ে দেখ। ”

বিস্ময় চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। নাহিয়ান বাকি চা টুকু টাইলসের উপরের ফেলে দিল। মেজাজ বিগ’ড়ে গেল মুহূর্তেই। ত্যক্তবিরক্ত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল ,

” এসব কি? ”

” তুই আসতে দেরি করছিলি তাই। ”

” আমি আসতে কোথায় দেরি করলাম? কফি বানাতে যত সময় লাগে তত সময়ে আমি এসেছি। ”

নাহিয়ান খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো ফাঁকে স্লাইড করতে করতে সন্দিহান চোখে চেয়ে বলল ,

” আজকে ও কি আবার কিছু মিশিয়ে এনেছিস? ”

ফারাহ্ হতাশ চোখে চাইলো। এখন কি আবার কফি বানিয়ে আনতে বলবে। আর পারছে না ও খুব ঘুম পাচ্ছে। আকষ্মিক নাহিয়ান অদ্ভুত কন্ঠে বলল ,

” তুই এক সিপ খেয়ে আমাকে দেখা তখন আমি খাবো। ”

চটজলদি করে এক সিপ খেল ফারাহ্। দাঁড়িয়ে থাকার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই তার। কিছু ক্ষণ পর চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ,

” দেখেছেন কিছুই নেই এবার আমাকে ঘুমাতে দিবেন খুব ঘুম পেয়েছে। ”

নাহিয়ান ফারাহ্ হাত থেকে কফি নিয়ে স্নিগ্ধ হেসে বলল ,

” ফ্লোর পরিষ্কার করে কাপ , মগ গুলো কিচেনে রেখে দরজা লকড করে ঘুমা। ”

” কাল পরিষ্কার করলে হয় না? ”

” না। ”

অগ্যত আজকেই পরিষ্কার করল ফারাহ্। সব ঠিক ঠাক করে রেখে দরজা লকড করে বেডের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ঘুম জড়ালো সুরে বলল ,

” এবার আপনি আপনার রুমে যান। ”

সাথে সাথেই ফারাহ্ হাত ধরে হ্যাচা টান দিল নাহিয়ান। ফারাহ্ নেত্রী যুগোল বড় বড় করে তাকালো। নাহিয়ানের এক হাত ফারাহ্’র কোমড়ে। অন্য হাত দিয়ে কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো ঠিক করে দিতে দিতে নে’শা’লো গলায় বলল ,

” ফাস্ট এলাম শ্বশুর বাড়ি। ”

” তো? ”

” তো … একটা স্মৃতি রেখে যাই এই কক্ষে। ”

” কি স্মৃতি রাখবেন? ”

নাহিয়ান ফারাহ্ ঘাড়ে মুখ গুজে দিয়ে বার কয়েক বার ঠোঁট ছুয়ে দিল উ’ন্মু’ক্ত গলায় , ঘাড়ে। ঘো’র ময় সুরে বলে উঠে ,

” আমি তোর মাঝে বিলীন হতে চাই। ”

নাহিয়ানের মা’দ’ক’তা মিশ্রিত শান্ত , নরম কন্ঠে কথা গুলো কর্ণধারে পৌঁছাতেই পিলে চমকে উঠলো ফারাহ্ । নাহিয়ানের বাহু খামছে ধরে গ্রথণ করল নেত্রযুগোল। হার্ট ফুল স্পিডে দৌড়াচ্ছে। নাহিয়ান ফারাহ্’কে বেডে শুয়ে দিয়ে নিজে ও আধ শোয়া হল ফারাহ্’র উপর ছোট ছোট আদরে ভরিয়ে দিতে লাগলো প্রিয়তমাকে।

_______

ফাতেহ ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে কানে ইয়ারফোন। ‘ লেডি কিলার রোমিও ’ গান টা শুনছে আর বিরবিরিয়ে গাইছে।

‘ কারো চোখ ভালো , কারো মুখ ভালো
কারো ফিগারের ইশারা….
এজওয়ানি চায় , ফুল মাস্তি যে
ভালোলাগলো তাই ইশারা….
বলে বলে পটাতে , আমার ছিপে ওঠাতে
গার্লফ্রেন্ড জোটাতে , ক্লাইম্যাক্স পারি ঘটাতে
আমি হলাম রোমিও , লেডি কিলার রোমিও
পাক্কা প্লেবয় রোমিও… ’

নাহিয়ান ড্রাইনিং টেবিলের উপর দুই হাত রেখে তবলা বাজানোর মতো হাত দিয়ে টেবিলে আওয়াজ করছে। আকষ্মিক খোশ গলায় বলল ,

” শ্বাশু মাদার মেয়ের জামাই প্র‍থম এলো শ্বশুর বাড়িতে ভালো কিছু খেতে দাও। ”

সুফিয়া হানজালা হতবিহ্বল হয়ে তাকালো নাহিয়ানের দিকে। ছেলেটা ও তার মেয়েটার মতো গেছে। ক্ষী’ণ স্বরে বললেন ,

” তুই ও মেয়েটার মতো হয়ে যাচ্ছিস দিন দিন। ”

” কি করবো বলো তো শ্বাশু মাদার বউ ছাড়া রাতে ঘুমই আসে না। বউ যখন বাপের বাড়ি আমি গেলাম শ্বশুর বাড়ি। ”

ফারাহ্ গ’র’ম চোখে তাকালো। লোকটার কি লজ্জা শরম সব বিলেতে গেছে। ঠোঁট কাটা বদ লোক সবার সামনে কি বলছে এসব? আফজাল সারাফাত হালকা কেশে বললেন ,

” তা জামাই বাবা জ্বি আপনি আসার সময় কি কি আনলে আমাদের জন্য? ”

অপ্রত্যাশিত হাসল নাহিয়ান। সে ভুলেই গেছে এখানে যে তার বড় বাবা প্লাস বড় শ্বশুর মশাই ও উপস্থিত। সাবলীল চোখে সবার দিকে এক নজর চেয়ে জবাবে বলল ,

” কি আর আনি বড় শ্বশুর মশাই আপনাদের মেয়ে মাঝ রাতে বাপের বাড়ি আসবে বলে বাহানা ধরেছে তখন তো দোকান পাট সব বন্ধ থাকে। চুরি করার অভ্যাস নেই। ”

মিনা আরাফা হাসতে হাসতে বললেন ,

” সব কয়টা ফা’জি। ”

টেবিলে বসা সবাই হেসে দিল। বড়দের হাসি দেখে ছোট সানা ও খিলখিল করে হেসে উঠে। খাওয়া প্রায় মোটামুটি শেষ হঠাৎ হল রুম থেকে জারা চিক শুনা গেলো। সুফিয়ান ডিম খাচ্ছিল জারা আওয়াজ শুনে বিষ্মম খায়। জারা আওয়াজ টা এমনই ছিল ঠিক ওর স্বপ্নের মতো , ‘ও মা গো আমার কোমড়’ ফারাহ্ চমকে উঠে দাঁড়ালো। ইতি মধ্যে সবাই হল রুমে চলে গেছে। ফারাহ্ সুফিয়ানের হাত টেনে ধরে অস্থির হয়ে বলল ,

” ওই তোর স্বপ্ন সত্যি হয়ে যাই নি তো? ”

দুই জনেই হল রুমে এসে হতবাক ফারাহ্ মেঝেতে পড়ে আছে। আর ফাতেহ সিড়িতে। সুফিয়ানের স্বপ্ন সাথে পুরো মিলল না। জারা মুখে ফেসিয়াল মাক্স নেই আর ফাতেহ বাজার থেকে আসছিল। সব সবজি ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ফারাহ্ সুফিয়ানের পেটে কনুই দিয়ে গুতা মেরে আস্তে করে বলল ,

” তোর স্বপ্ন আধুরা। ”

” হ্যাঁ দেখছিই তো , ফেসিয়াল মাক্স থাকলে আরো সুন্দর লাগতো। ”

” কাকে? ”

” জারা কে। ”

ফারাহ্ হা করে তাকিয়ে থেকে বলল ,

” জুনিয়র হয়ে সিনিয়রের সুন্দর লাগা দেখছিস , তোর সবে ২২ বছর আর জারা আপ্পি ২৫ বছর। ”

” সমস্যা কি সিনিয়র জুনিয়রের প্রেম অসাধারণ। ”

” চুপ__”

” চুপ আমি করবো না তুই করবি। ”

” কেনো? ”

” সামনে তাকা। ”

” কি আছে সাম__।”

কথা কথা বলতে বলতে ঘুরল ফারাহ্। ঘুরে যা দেখলে মুখ অটোমেটিকলি বন্ধ হয়ে গেছে৷ নাহিয়ান জারাকে উঠতে সাহায্য করেছে এখন সোফায় বসিয়ে দিল। রা’গে শরীর কাঁপছে তার। হাতে হাত মুচড়াচ্ছে। ‘সাহস কি করে হয় বউয়ের সামনে অন্য মেয়েকে টাস্ করার? খচ্চর , হবু হাতি , টিকটিকির দাদা , হনুমানের বন্ধু…’। সুফিয়ান অনেক কষ্টে হাসি দমিয়ে রেখে ছিল। ফারাহ্’র অসহায় মুখ দেখে আর পারলো কই ফিক করে হেসে দিল। ফারাহ্ কর্কশ গলায় বলল ,

” তুই হাসছিস? ”

সুফিয়ান ঠোঁট আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে দুই দিকে মাথা ধুলালো , যার মানে ও হাসছে না। এদিকে জারা যত টুকু ব্যথা পেয়েছে তার থেকে ও বেশি অভিনয় করছে৷ কত সাধনার পর ক্রাশের ছোয়া পেল। নাহিয়ান অস্বস্তিতে পড়ে গেল হাত ছাড়াতে চেয়ে ও পারছে না। জারা দুই হাত দিয়ে ওর হাত চেপে ধরে আছে। ফারাহ্ রা’গে টগবগ করতে করতে জারা থেকে নাহিয়ান কে এক ঝাটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে হাওয়া চিবিয়ে বলল ,

” বেশি ব্যথা লাগলে ডাক্তার ডাকি ইঞ্জেকশন দিয়ে যাবে। ”

ইঞ্জেকশনের কথা শুনেই হকচকিয়ে উঠে জারা। কোন রকম দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বলল ,

” লাগবে না আমি ঠিক আছি , সানজিদা আপু প্লিজ আমাকে একটু রুমে দিয়ে আসবে? ”

সানজিদা মিষ্টি মুখে বলল ,

” কেনো নয় চলো। ”

” সত্যি ডাক্তার লাগবে না। ”

” না আন্টি। ”

জারা কে ধরে রুমের দিকে নিয়ে গেল সানজিদা। ওদের যেতে দেখে যে যার কাজে চলে যায়। শামীমা আখতার ভাবছে , ভাগ্যিস রিত্তিকা আখতার এখন ও ঘুম থেকে উঠে নি। যদি দেখত মেয়ে এমন চিৎপটাং হয়ে পড়ে ছিল তাহলে পুরো বাড়ি কাঁপিয়ে তুলতো। নাহিয়ান শান্ত চাহনীতে চেয়ে আছে ফারাহ্’র রা’গে লাল হওয়া মুখশ্রীর দিকে। রাগলে ও বুঝি কাউকে এত সুন্দর লাগে ফারাহ্ কে না দেখলে জানতোই না। ফারাহ্ নাহিয়ানের হাত ছেড়ে দিয়ে অভিমানি চোখে এক পলক দেখে চলে গেলো। নাহিয়ান ঠোঁট প্রসারিত করে হাসল প্রিয়াসীর অভিমানে ভরা দু’চোখ দেখে। এই মায়াবী চোখ খানা নিজে নিজের সর্বনাশ দেখেছে৷

#চলবে

®️আহমেদ মুনিয়া
•••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here