তোর মায়ায় আসক্ত পর্ব -০২

#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#পর্ব_২
#নীহারিকা_নুর

বাবা নিশিকে তোর কেমন লাগে?

-খারাপ না।

-তার মানে ভালো লাগে।

-ভালো না লাগার তো কোন কারন নেই মা।

-তাহলে আমি কি তোর ফুপির সাথে কথা আগাব।

-তুৃমি যা ভালো মনে কর তাই হবে।

-বাবা আদিয়া মেয়েটার কথা আর একবার ভেবে দেখ। মেয়েটা এতগুলো বছর তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

-মা সংসার তো তুমি করবে না আমি করব।ওকে এখন আর আমার ভালো লাগে না। আমি সুখী হব না ওর সাথে।

-এসব তুই কি বলছিস। শোন অতীত কখনো ভুলে যাওয়া উচিত না। মেয়েটা কি না করছে তোর জন্য।

-ওফফ মা ঘ্যান ঘ্যান করো না। বলছি না আমি ওর সাথে সংসার করতে চাই না।

রাশিদা পারভীন আর ছেলের সাথে কথা বাড়ায় না। তার ছেলে যে পরিবর্তন হয়ে গেছে সেটা সে বেশ বুজতে পারছে। তাই রুম ছেরে বেরিয়ে যায়।

রুম থেকে বের হতেই সামনে আফিয়া বেগম আর নিশিকে দেখতে পায়। তারা যেন অপেক্ষায় ছিল রাশিদা পারভীনের।

রাশিদা পারভীন হতাশার নিশ্বাস ছারে।তার অতীতের কথা এখন খুব করে মনে পরে। এই আফিয়া বেগম কি বাজে ব্যাবহার টাই না করত তাদের টাকা ছিল না বলে। আর আজ তার ছেলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এরাই কেমন পিছু ছারছে না যেন।ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য একদম ম’রিয়া। আর যে মানুষটা সব সময় পাশে থেকে সাপোর্ট করেছে আজ তাকেই ভুলতে বসেছে তার ছেলে। তার মনটা ভালো ঠেকছে এসবে। তাও ছেলের উপর সে জোর খাটাতে পারবে না। কারন ছেলে বলেই দিয়েছে সংসার সে করবে।

আফিয়া বেগম এর ডাকে ঘোর কা’টে রাশিদা পারভীনের।

-কি ব্যাপার ভাবী ছেলে কি বলল। রাজি তাই না।

-হ্যা রাজি।

-আমি জানতাম তুমি রাজি হবে। রাজি না হয়ে পারবেই না। আমার হিরের টুকরা মেয়ে। কত ছেলে যে বিয়ের প্রোপোজাল দিল। কিন্তু ওর এক কথা আনাফ দেশে আসলে ওকেই বিয়ে করবে। মেয়ের মতকে তো প্রাধান্য দেয়া উচিত তাই না।

-হ্যা আফিয়া আমি বুজতে পারছি। আমার কাজ আছে রান্নাঘরে। আফিয়া তুমি বস। আমি কাজ সেরে এসে তোমার সাথে কথা বলব।

আনাফ গোসল সেরে বেরিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য।





এক ঘুমে একবারে রাত কাভার করে দেয় আদিয়া। খুব ভোরে ঘুম ভাঙে। ঘুম ভাঙতেই ঘরির দিকে তাকায়।এখনো নামাজের সময় আছে। তাই উঠে তরিঘরি করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়। ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই অবাক হয়। চোখ মুখ কেমন ফোলা ফোলা। আদিয়া বুজতে পারে অতিরিক্ত ঘুম আর কান্নার কারনে এমন হয়েছে। তার মনে পরে সে তো না খেয়েই কাল রুমে ঢুকেছিল। রাতেও খায়নি। মা নিশ্চয়ই অনেক ডেকেছে। হয়ত অনেক রেগেও আছে। মাকে কি জবাব দিবে এবার।
ধ্যাত আগে নামাজটা আদায় করে নেই।

এরপর অজু করে বের হয়ে নামাজ আদায় করে। নামাজ আদায় করে মোনাজাতে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায়। আল্লাহ যেন তাকে ধৈর্য ধরার সামর্থ্য দেয় সে জন্য প্রার্থনা করে।

একটু ভোরের আলো ফুটতে শুরু করলে হাটার জন্য বের হয় আদিয়া।বের হতে সামনেই মায়ের দেখা পায়। জায়েদা বেগম মেয়েকে দেখে তড়িঘরি করে এগিয়ে আসে মেয়ের দিকে।এসে আগে মেয়ের কপালে হাত রাখে,গালে হাত রাখে। মেয়ের শরীরে জ্বর আছে কিনা চেক করে।

-আরে মা কি হয়েছে। এমন করছ কেন। আমার কিছু হয়নি।

– হুম সেতো দেখতে পাচ্ছি। কাল যে শরীর ভালো লাগছে না বলে রুমে ঢুকলি আর বেরুলি না। রাতে আমি এত ডাকলাম বের হলি না। তোর বাবাও ডাকল বের হলি না। তোর বাবা বলল হয়ত শরীর বেশি খারাপ তাই ঘুমাচ্ছিস। তাই আর ডাকতে দিল না। রাতে তোর চিন্তায় আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আর তুই সকালে উঠে দিব্যি বলছিস তোর কিছু হয় নি।

-মা ক্লান্ত ছিলাম অনেক।

-হুহ বুজছি। আয় আমার সাথে নাস্তা বানতে সাহায্য কর৷

-আগে একটু হেটে আসি।

-আচ্ছা যা।

এরপর ছাদের উদ্দেশ্য পা বাড়ায় আদিয়া। গাছে অনেক গুলো নতুন ফুল ফুটেছে। আদিয়া এগিয়ে যায় সেদিকে। ফুলগুলোকে হাত দিয়ে ছুয়ে দেয়।
এই গাছ গুলোর সাথেই একাকি সময় কা’টে আদিয়ার। আনাফ চলে যাওয়ার পরেই কেমন যেত কথা বলতে চাইত না। এমন করছে কেন জিজ্ঞেস করলেই বলত ব্যাস্ত আছে। বিদেশের মাটিতে টিকে থাকা এত সহজ না। পরাশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করতে হয়।তাই সময় দিতে পারে না। আদিয়াও বোকার মতো বিশ্বাস করত। ভালোবাসা অন্ধ করে রেখেছিল যে। তখন থেকেই যখন মন খারাপ থাকত বা আনাফের কথা মনে পরত তখনই ছাদে চলে আসত। এরপর থেকেই শুরু এই বাগান করার। এখনও প্রতি দিন নিয়ম করে গাছ গুলোর যত্ন নেয় আদিয়া।

গাছগুলোতে পানি দিচ্ছিল আদিয়া আর ভাবতে ছিল আনাফতো এমন ছিল না। তাহলে কাল এমন করল কেন। ব্যাস্ততার জন্য কথা কম বললেও সব সময় তো বলত আর কয়টা দিন অপেক্ষা কর। এসেই তোমাকে একদম লাল টুকটুকে বউ করে নিয়ে যাব। এতদিন এত এত সপ্ন দেখিয়ে তবে কাল এমন কেন করল। আবার কথা বলে দেখতে হবে। আনাফকি আসলেই মন থেকে চায় না এই সম্পর্কটা। ভাবতে ভাবতেই ছাদ থেকে নেমে আসে আদিয়া। এসে দেখেন জায়েদা বেগম কিচেনে পরোটা ভাজছেন। আদিয়াকে দেখেই ডাক দিলেন। বললেন এগুলা নিয়ে গিয়ে টেবিলে রাখ। তারপর তোর বাবাকে ডেকে তোল।গিয়ে দেখ আলভি ঘুম থেকে উঠল কিনা৷ ওর হোমওয়ার্ক টাও চেক করিস। আদিয়াও মায়ের কথা মতো সব কাজ করল।

সব গোছানো শেষে একসাথে খেতে বসে সবাই। আলভিও ইউনিফর্ম পরে এসে বসেছে।

-আলভি বাবাই আমার জরুরি কাজ পরে গেছে আমি তোমাকে নামিয়ে দিতে পারব না। তুমি আজ একটু মায়ের সাথে চলে যাও।

জামিল সাহেবের কথা শুনে তেতে ওঠেন জায়েদা বেগম। বলেন এখন বললেই হলো নাকি। আমার অনেক কাজ৷

-কাজ পরে। আগে ওকে নিয়ে যাও।

-বাবা মা দুইজনই থামো। কারো যেতে হবে না। আমি নিয়ে যাব।

এবার দুইজনই চুপ হয়ে যায়।আদিয়া নাস্তা পুরো না খেয়েই উঠে তারাতারি রুমে চলে যায়। পাচ মিনিটে কোন মতে রেডি হয়ে বেরিয়ে আসে।

আলভিকে নিয়ে বাসার সামনে বের হতে দেখে একটা রিক্সাও নেই। কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পরও রিক্সা পায় না। তাই ভাইয়ের হাত ধরে ধীরে ধীরে সামনের দিকে পা বাড়ায় আদিয়া। সামনের মোড় থেকে রিক্সা নিবে তাই। মোরের কাছে যেতেই একটা রিক্সা সামনে থেকে যায়। রিক্সায় আনাফ ছিল। আনাফের পাশে একটি মেয়ে বসা। মেয়েটি হেসে হেসে আনাফের সাথে কথা বলছে। আনাফও হেসে জবাব দিচ্ছে।

চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে চোখ ছল ছল করে ওঠে আদিয়ার। তাইলে বিচ্ছেদের কারন কি এই মেয়ে। এই চিন্তাই মাথাচারা দিয়ে ওঠে। এমন সময় আলভি হাত ধরে নারা দেয়।

-আপু চল। দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।

-হুম চল।

অন্য দিকে তাকিয়ে চোখে আসা জলটুক মুছে নেয় আদিয়া আলভির চোখের আরালেই।এরপর একটা খালি রিক্সা ডেকে উঠে পরে দুজন। তারপর স্কুলে নামিয়ে দেয় আলভিকে। আলভিকে নামিয়ে দিয়ে সেই রিকশা নিয়েই রাশিদা পারভীনের কাছে যাওয়ার জন্য ঘোরে। আনাফের অনুপস্থিতিতে তার সাথে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আদিয়ার। মাঝে মাঝেই এসে গল্প করত তার সাথে।

রিকশার বিল মিটিয়ে বাসার ভিতর প্রবেশ করতে গেট অবধি যায়। দাড়োয়ান আদিয়াকে চেনে। ফলে জিজ্ঞেস করে

-কেমন আছ মামনি?

-এইত মামা। আপনি?

– আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ যা রাখছে শুকরিয়া।
মামনি তুমি তিনতলার ফ্লাটে আসছ?

-জ্বি মামা।

-মা সেই আপা তো এক সপ্তাহ আগেই এখান থেকে চলে গেছে। তোমাকে কিছু বলে নি।

– না তো মামা। কেন চলে গেছে বলতে পারবেন?

– তার ছেলে আসছে তো দেশে। সে এই পুরনো বাসায় উঠতে চায় নি তাইতো আপা নতুন বাসা নিছে।

– ওহ। আচ্ছা নতুন ঠিকানাটা কি জানেন আপনি।

– না মামনি নতুন ঠিকানা কাউকে৷ দিয়ে যায়নি।

-আচ্ছা মামা আমি আসি। ভালো থাকবেন।

-তুমিও ভালো থেকো মা।



রাস্তা দিয়ে আনমনা হয়ে হাটছে আদিয়া।আর ভাবছে আন্টি এভাবে হুট করে বাসা চেন্জ করল ।আমাকে কিছু বললও না। তাহলে কি তিনিও তার ছেলের সাথে একমত। তিনিও চাননা আমি তার ছেলেকে বিয়ে করি। তাহলে এতদিন তো কিছু বললেন না। এমন করলেন কেন এখন এর উত্তর আমি কোথায় পাব।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here