#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#পর্ব_৩
#নীহারিকা_নুর
আদিয়া আলভিকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। আসার পথে আলভি ওকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করেই যায় কিন্তু ও একটা কথারও জবাব দেয় না।
বাসায় আসার পর আলভি ওর মাকে বলে আপুকে মনে হয় ভুত ধরেছে।
– ধূর কি সব উল্টা পাল্টা বলছিস। ভুত আসবে কোথা দিয়ে।
– মা আমি শুনেছি ভুত ধরলে মানুষ এমন গোমড়া মুখো হয়ে থাকে। কাউকে দেখতে পারে না।
-তুমি ভুল যানো বাবা। ভুত বলে কিছু নেই। তোমার আপু হয়ত রা’গ করেছে তোমার উপর।
তারপর তিনি আদিয়াকে ডাক দেন। আদিয়া শুনে যা তো।
– হ্যা বলো।
– কাল থেকে হয়েছে কি বলতো। কেমন কেমন করছিস। আমি তো কিছুই বুজতে পারছি না।
– মা আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। তাই।
– কি হয়েছে। ঠান্ডা লাগছে। জ্বর হয়েছে নাকি?
– না আম্মু সেরকম কিছু নয়।
– কই দেখি।
– আরে বাবা বললামতো তেমন কিছু নয়।
– সত্যি করে বলতো কি হয়েছে।
– কিছু না আম্মু এমনি। আমার টায়ার্ড লাগছে। আমি রুমে যাচ্ছি।
– আদিয়া আমি তোর মা। দশ মাস তোকে নিজের পেটে রেখেছি আর এখন তোকে বুজব না এটা তোর কেন মনে হলো। তা সেই ছেলের কি খবর আসছে। নাকি এখনো না।
– আম্মু আমার সেজন্য মন খারাপ না। খাবার দাওতো।
– আদিয়া আমি তোর মা। আর মা বাবা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না। আমি বলছি কি তুমি এবার এসব ছাড়। একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নাও। সংসারী হও এবার। আর কত অপেক্ষা করবে।
– আম্মু তুমিতো সব জানো। প্লিজ আর কিছু দিন।
– আমি তোর বাবাকে কি বলব?
– আচ্ছা আম্মু আর কয়েকটা দিন ম্যানেজ করো।
– আমার মনে হচ্ছে তুই বোকামি করছিস। যাক আমি তোর বাবার সাথে কথা বলব।
– এই তো আমার বেস্ট আম্মু।
– হইছে আর তেল দিতে হবে না যা এখান থেকে।
– ওকে।
আদিয়া রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। দিন দিন কি হয়েছে বুঝতে পারছ না শুধু ঘুম আসে। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে কোনোমতে আবার ঘুম।
।
।
।
।
।
।
এদিকে আনাফ আর নিশি শপিং এসেছে। আনাফ নিজে চয়েজ করে কিনে দিয়েছে। এরপর দুইজন রেস্টুরেন্ট এসেছে । তখন নিশি আনাফকে বলে
– ভাইয়া তোমার চয়েস তো অনেক সুন্দর। এর আগেও কারো জন্য কিনেছো নাকি।
– তা জেনে তোর কি কাজ। আনাফের চয়েজ সর্বদা ভালই হয় বুঝলি। আর দুদিন পর তুই আমার বউ হবি ভাইয়া ডাকা বন্ধ কর।
– ভাইয়া ডাক অভ্যাস হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে পরিবর্তনের চেষ্টা করব।
– হুম ।
– আচ্ছা শোনো কিছু কথা ছিল।
– বলে ফেল ।
– আচ্ছা ছোটবেলা তুমি কখনো আমাদের বাসায় যাওনি কেন ? মাকে কত বলতাম মাও কেন তোমাদের বাসায় আসেনি?
– তোর ছোট মাথায় সব ঢুকবে না।
– আরে বলো। শুনতে মন চাচ্ছে তো বলবা না ।
– তখন পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল তাই। তখন আমাদের সামর্থ্য ছিলনা তোমাদের সাথে সমানে সমানে চলার। তাই তোমার মা আমাদের দেখতে পারত না। আসলে একটা কথা আছে না চাচা ফুফুদের ভালোবাসা নির্ভর করে বাবার টাকার উপর – অনেক ক্ষেত্রে কথাটা সত্যিই হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল।
– তাহলে এখন বিয়ে করতে রাজি হয়েছ কেন। সমানে সমান হয়েছ বলে।
– বলতে পারিস। আসলে তুই অনেক সুন্দরী, স্মার্ট, বাবার একমাত্র মেয়ে তো তোকে বিয়ে করলে একটা সুন্দরী বউও পাব সাথে সাথে শ্বশুরের সম্পত্তিও পাব। ব্যাপারটা দারুণ হবে।
– আনাফ ভাইয়া তুমি জানো তুমি একটা স্বার্থপর?
– সে বিচার আমি তোকে করতে বলিনি। তোর যদি ভালো না লাগে তাহলে বিয়ে করিস না। বাসায় গিয়ে বলবি তুই আমাকে বিয়ে করতে পারবি না।
– আমি বলতে পারব না। মায়ের অনেক ইচ্ছা আমি তোমাকে বিয়ে করব তাই তার মুখের উপর নিষেধ করা আমার দ্বারা সম্ভব না।
– আমিও বলতে পারব না। ওকে তাহলে বিয়েটা করেই নে।
– আমি তোমাকে বিয়ে করে কি করব যেখানে তুমি আমাকে ভালোই বাসো না। এতদিন আম্মু আমাকে এটাই বলেছে যে তোমার সাথেই আমাকে বিয়ে দিবে আর তুমি আমাকে অনেক ভালোবাস। তাই তো আমি রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া কি একটা সংসার টিকানো যায়।
– নিশি তোর ফালতু বকবকানি আমার শুনতে মন চাচ্ছে না। শোন আমার মনে হয় ভালোবাসা বলে কিছু হয় না। নিজের ভালো থাকাটাই মেইন। আমি যার সাথে থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করব তার সাথেই থাকব আমি৷
– এটা এব্রোডনা এটা বিডি। এখানে তেমার এসব ইচ্ছে চলে না৷
– ঘ্যান ঘ্যান করিস না। বিয়ের পর অনেক ভালেবাসব তোকে।
– যদি না বাস।
– বিশ্বাস না হলে বিয়ে করিস না।
– এমন খাপছাড়া কেন তুমি।
– এমন থাকতেই আমার ভালোলাগে। শোন এখনো অনেক মেয়ে আমাকে বিয়ে করতে চায়। তুই বিয়ে না করলে তাদের কাউকে একটা বিয়ে করে নিব। এখন তুই কি করবি তা তুই ঠিক৷ কর।
– *******
– আচ্ছা খা এখন। পরে কথা হবে এসব নিয়ে।
।
।
।
।
।
ওরা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হবে সেই সময় রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে আকাশ।আকাশ হচ্ছে আনাফের কলেজ ফ্রেন্ড।
এতদিন পর বন্ধুকে দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এগিয়ে এসে বন্ধুকে বুকে জরিয়ে ধরে। কিন্তু আনাফ অনড় থাকে। সে হাত জাগিয়ে একবার আকাশের পিঠেও রাখে না। আকাশ সরে আসে সেখান থেকে। এরপর তাকায় পাশে থাকা মেয়েটির দিকে।
– আনাফ এই মেয়েটা কে?
– এটা তোর ভাবি৷
– ভাবি মানে। দেশে ফিরে বিয়েও করে ফেলেছিস আর আমাদের একটু জানালিও না।
– আরে না বিয়ে করি নি। ও আমার ফিয়ন্সে।
– কি বলছিস। তাহলে আদিয়া?
– আদিয়া কে?
আকাশ বুজতে পারে ফিয়ন্সের সামনে এখন আদিয়ার কথা তুলতে চাচ্ছে না তাই এড়িয়ে যাচ্ছে। তাই আকাশও কথাটা এড়িয়ে যায়। তারপর টুকটাক কথা বলে যায়। কিন্তু যাওয়ার আগে আনাফের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে কাজটা তুই ঠিক করলি না। তুই এমন একটা হিরেকে পায়ে ঠেলে দিয়েছিস না এর জন্য তুই পস্তাবি। তারপর আনাফ নিশিকে নিয়ে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।
সেই দুপুরে ঘুমিয়েছে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো এখনো আদিয়ার ওঠার নাম নেই। তাই আদিয়ার মা রুমে গেলেন আদিয়া কে ডাকতে। গিয়ে দেখেন এখনো কম্বল মুড়ি দেয়া। তাই আস্তে ডাক দেন
– আদিয়া, এই আদিয়া ওঠ আর কত ঘুমাবি।
কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি কম্বলটা টেনে তুলতে যান। কম্বল টেনে তোলার সময়ে মেয়ের শরীরে হাত লাগে তার। তিনি আচমকা হাতটা টান দিয়ে সরিয়ে ফেলে। মনে হচ্ছে তার হাতে কেউ কেউ গরম সে’কা দিয়েছে। কি হয়েছে বুজতে তিনি আবার মেয়ের কপালে হাত রাখে। শরীর মনে হচ্ছে জ্ব’রে পু’রে যাচ্ছে।
হঠাৎ জ্ব’র আসার কারণটা বুজতে পারছেন না তিনি। তিনি কয়েকবার মেয়ের কপালে হাত রেখে চেক করেন। সাথে আদিয়া আদিয়া বলে বেশ কয়েকবার ডাক দেন। কিন্তু আদিয়া কোনো রেসপন্স করে না। তিনি সময়ক্ষেপণ না করে তাড়াতাড়ি রুমে চলে যান। সেখানে গিয়ে আজমাইন সাহেবকে ফোন দেন। ফোন রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে তিনি কান্না করে দেন।
– কি হয়েছে এভাবে কান্না কেন করছ।
– একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসুন প্লিজ।
– কি হয়েছে তাতো বলবা। আমি একটা অফিসে জব করি বললেই কি আসা যায়।
– আদিয়াকে হসপিটালে নিয়ে যাব। আপনি যদি পারেন তাহলে আসুন নয়ত আমি একাই যাব।
– কি হয়েছে আদিয়ার?
– আসলেই দেখতে পাবেন। আর যদি মন না চায় তাহলে আসতে হবে না।
– এভাবে বলছ কেন। আসছি আমি।
– হুম।
তারপর আজমাইন সাহেব এসে দুজন ধরে আদিয়াকে গাড়িতে তোলে। আলভিকে পাশের বাসার আন্টির সাথে থাকতে বলেছিল। কিন্তু সে একা কোনভাবেই থাকবে না। তাই ওকেও নিয়ে যেতে হল। হসপিটালে নিয়ে আসলে কন্ডিশন ভালো না দেখে ডক্টররা ভর্তি করতে বলল। ভর্তি করা হলো। ডক্টর চেক করে গেল। অতিরিক্ত দুর্বল থাকায় স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে গেল।
এদিকে আকাশ হিসেবে গড়মিল করে ফেলছে। আনাফের হাব ভাব দেখে যা মনে হলো খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চলেছে। কিন্তু তাহলে আদিয়ার কি হবে। আানাফই বা এমন অকৃতজ্ঞ কীভাবে হলো। যেই মেয়ে না থাকলে ও এত দূর আসতেই পারত না সেই মেয়েকেই কিনা ও ভুলতে বসেছে। না এটা তো হতে দেয়া যায় না। তাই ও ঠিক করে আদিয়ার সাথে দেখা করবে কাল সকালেই। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সকালে উঠেই রওনা হয় আদিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখতে পায় আদিয়াদের ফ্লাটের দরজা তালাবদ্ধ। বেশ অবাক হয় আকাশ। আদিয়াদের বাসায় ও মাঝে মধ্যে আসত। সেম ক্লাস হওয়ায় ক্লাসমেট হিসেবে আদিয়ার সাথে সম্পর্ক মোটামুটি ভালোই ছিল। সেই সুবাদে আসা যাওয়া হতো। কিন্তু এভাবে কখনো তালাবদ্ধ পায়নি। তাহলে তারা সবাই গেল কোথায়। এখান থেকে চলে গেলেও আদিয়া অন্তত বলত। এসব ভাবতে ভাবতেই বাসা থেকে বের হচ্ছিল তখনই সামনে দাড়ায় আজমাইন সাহেব।
#চলবে