তোর মায়ায় আসক্ত পর্ব -১৬+১৭

#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১৬

বাহিরে কাউকে না দেখে সবাই একটু অবাক হয়। তবে ভয় ঢুকে যায় জায়েদা বেগমের মনে। আয়ান ব্যাপারটা স্বাভাবিক করতে বলে আন্টি কেউ হয়ত তাড়াতাড়ি রুমে যাচ্ছিল তাই পড়ে গেছে। হবে হয়ত উপরের ফ্লাটের কেউ। আমরা তো উপরের দিকে খুজি নি তাই দেখতে পাইনি।

– হ্যা বাবা হবে হয়ত।

এরপর তারা ভেতরের দিকে যায়। কিন্তু জায়েদা বেগমের মনের খচখচানি কমেনা। এরপর আয়ান বেশ কিছুক্ষন সেখানে বসে। টুকটাক কথা বলে। এরপর অফিসের ছুতো দিয়ে বেরিয়ে যায়। আদিয়া আজ আর যেতে চায়না। আয়ানও আর জোর প্রয়োগ করেনা।




আয়ান অফিসে বসে ভাবছিল ও যা করছে তা ঠিক করছে কিনা। এমন সময় হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে। ফোনটা উঠিয়ে দেখে সায়ন ফোন করেছে।

– কিরে কিছু বলবি ( আয়ান)

– গোপনে গোপনে এত কিছু।

– মানে কি বলতে চাইছিস তুই।

– আরে না কি বলব। শুনলাম আমার ফ্লাটে আসলা। তো দেখা করে গেলেনা যে।

– তুই কীভাবে জানলি আমি তোর ফ্লাটে গেছিলাম।

– একটু আধটু খবর রাখতে হয়।

-মানে কি বলছিস তুই।

– দেখো ভাইয়া তুমি কেন এসেছিলে আমি জানি। কিন্তু আমি তোমাকে আগেই সাবধান করে দিচ্ছি ওই মেয়ের দিকে ভুলেও হাত বাড়িও না। তাহলে সেটা ভালো হবেনা।

– সায়ন তোর মাথা ঠিক আছে। একটা মেয়ের জন্য তুই আমার সাথে কথা বলছিস।

– হ্যা বলছি আমার মাথা একদম ঠিক আছে।। ভাইয়া তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি ঢ়ে জিনিসটা চাই তা যেকোন মুল্যে আদায় করে নেই। তার জন্য যা করা দরকার আমি তাই করি।

– সায়ন এই সামান্য একটা মেয়ের জন্য তুই আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলছিস।

– ভাইয়াাাা ( রেগে)।

– এভাবে চেচাচ্ছিস কেন

– সি ইজ সো মাচ স্পেশাল ফর মি।

– তো তাতে আমার কি।

– তাকে সামান্য মেয়ে বলবে না তুমি। তাকে ভালোবাসি আমি। সো তার সম্পর্কে কোন ফালতু কথা বললে তোমাকে ছেড়ে কথা বলব না।

– সায়ন তোর তেরামি আর গেলনা। সেই ছোট থেকে সব সময় আমার জিনিসে ভাগ বসিয়ে এসেছিস। এখন একটা মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাচ্ছি সেখানেও তুই ভাগ বসাতে এসেছিস।

– কি বললে ভাই ভালোবাসা। তুমি কি আসলে ভালোবাসার মানে বোঝো। তুমি যদি ভালোবাসার মানে বুজতে তাহলে সিরাতকে ভুলে ওর বোনের দিকে তাকাতে পারতেনা।

– তুই কি বলতে চাইছিস আমি সিরাতকে ভালোবাসি না।

– না।

– আর কত অপেক্ষা করব বল।

– ভালোবাসলে তার জন্য সারাজীবন ও অপেক্ষা করা যায়। যাই হোক বাদ দাও তোমাকে ভালোভাবে বলে দিলাম আদিয়ার থেকে দূরে থেকো।

– আদিয়া কি তোকে ভালোবাসে?

– সেটা তোমার না জানলেও চলবে।

– আমার মনে হচ্ছে আদিয়া তোকে ভালোবাসে না। তাই ব্যাপারটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করিস না। আদিয়া যদি সবার সামনে স্বীকার করে ও তোকে পছন্দ করে তাহলে আমি আর কিছু বলব না।

– ভাই তুমি শুধু শুধু চ্যালেঞ্জ দিও নাতো। আজ অবধি কোনো চ্যালেঞ্জ তুমি জিততে পারছ আমার সাথে বলো। আজ সেখানে তুমি আমার ভালোবাসার দিকে হাত বাড়িয়েছ। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে ভেঙে হাত গুড়িয়ে দিতাম। যাক চ্যালেঞ্জ যখন করেছ তো জিতার চেষ্টা করতে থাক।

এরপর সায়ন খট করে ফোন কে’টে দেয়।






আয়ান অফিসে যায়না সোজা বাসায় চলে যায়। বাসার কলিংবেল চাপতেই এসে দরজা খুলে দেন আয়ানের মা আরজু চৌধুরি। দরজা খুলে অসময়ে ছেলেকে দেখে অবাক হন তিনি। ব্যাস্ত কন্ঠে সুধান

– কিরে বাবা অসময়ে বাসায় আসলি যে। শরীর খারাপ লাগছে?

– *****

জবাব না পেয়ে অস্থির হয়ে যান আরজু বেগম। তিনি ছেলের কপালে হাত রাখতে যান। ছিটে মে’রে হাত সরিয়ে দেয় আয়ান। তার ছেলে তার মুখের উপর কখনো কথা বলত না। ছোট ছেলে একটু বাকা পথে চললেও বড় ছেলে কখনো চোখ তুলে কথা বলত না। সেই ছেলে মায়ের হাত ছিটে মে’রে সরিয়ে দিয়েছে এটা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তার। তিনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন ছেলের দিকে। তাকে আরো অবাক করে দিয়ে ছেলে তার সামনে থেকে হনহন করে গেল। নিজের রুমে ঢুকে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আরজু বেগম অবাক নয়নে তাকিয়ে আছেন সেদিকে।

পরপরই সেখান থেকে ভাঙার আওয়াজ পাওয়া যায়। আরজু বেগম দৌড়ে উপরে আসেন। দরজা ধাক্কাতে শুরু করেন। কিন্তু তার আওয়াজ ভেতর অবধি পৌছাচ্ছে কিনা কে জানে। একটার পর একটা জিনিস ছুড়ে মা’রছে যা ফ্লোরে পড়ে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হচ্ছে তার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

আরজু বেগমের ডাকে সারা না দেয়ায় তিনি ছুটে চলে যান নিচে। ব্যাস্ত হাতে ফোন করেন আয়ানের বাবাকে। সোহরাব সাহেব অসময়ে স্ত্রীর ফোন পেয়ে অবাক হন।সচরাচর অফিস টাইমে তার ওয়াইফ তাকে ফোন করেনা। তাই কাল বিলম্ব না করে ফোন তুললেন।

– হ্যা আরজু কিছু বলবে।

– আয়ান কোথায় সে খেয়াল আছে তোমার।

– কেন কি হয়েছে। ওর পিএ নাজিয়া তো বলল নতুন এমপ্লইর সাথে বেরিয়েছে নাকি তেমার ছেলে।

– নতুন এমপ্লয়ির সাথে বেরিয়েছে আর তুমি সেটা খেয়াল রাখবে না। কোথায় গেল কি হল সেটা দেখবে না৷ কেমন বাবা তুমি।

– আরে হয়েছেটা কি তাতো বলবে।

– কি হয়েছে তা জানিনা। তবে আয়ান বাসায় আসছে। প্রচুর রেগে আছে। আসছে পর থেকে একটি কথাও বলেনি। রুম আটকে বসে আছে। রুমের একটি জিনিস ও বোধ হয় আস্ত নেই।

– কি বলো কি হয়েছে।

– জানিনা আমি। তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আস।

– তোমার এই দুই ছেলেকে নিয়ে আমার আর শান্তি নেই। একজনের পিছনে লাগাই যেন এক জনের কাজ ছিল। ছোট থেকে তা সামলাতে সামলাতে এতদূর আনছি। এখন আবার কোন ভুত চেপেছে মাথায় কে জানে।

– ও এখন আমার ছেলে হয়ে গেছে। তোমার কিছুনা না।

– এই থামো। আসছি আমি। এই হচ্ছে আরেক আজব জাতি। সিরিয়াস মোমেন্টেও স্বামীর ভুল ধরে কথা শোনাবে।

– কি বলছ।

– না কিছুনা। বলছি আমি আসতেছি এখনি।



হাফ এন আওয়ার হয়ে গেছে সোহরাব সাহেব রওনা দিয়েছেন। এখনো পৌছাননি। আয়ানের ঘর থেকে ভাাঙার আওয়াজ আসছে না এখন আর। পরিবেশ আপাতত শান্ত আছে। এর মধ্যে সোহরাব সাহেব বাসায় এসে পৌছান। ব্যাগটা সোফায় ফেলে দৌড়ে ছেলের রুমের সামনে আসেন। আরজু বেগম সেখানেই দাড়িয়ে আছেন এখনো। সোহরাব সাহেব কয়েকবার দরজায় কড়াঘাত করেন। ছেলের নাম ধরে ডাকেন। কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়া পাননা। একটু ভয় পেয়ে যান দুজনেই। অজানা ভয় আকড়ে ধরে দুজনকে। এরপর বাচ্চাদের যেমন খেলনা বা চকলেট দেয়ার কথা বলে সেরকম সুরে সোহরাব সাহেব ছেলেকে শুধালেন কি হয়েছে বাবা বল আমাকে। তোর কি চাই সেটা বল শুধু। তুই যা চাবি সেটা এনে দিব।

– প্রমিজ কর সেটা দিবে।

– হ্যা দিব।

– তোমার ছোট ছেলে চাইলেও দিবে না।

এ কথা শুনে সোহরাব সাহেব আর আরজু বেগম দুজন দুজনের মুখ চাওয়াাচাওয়ি করেন। দুজনের চেহারায়ই এবার ফুটে ওঠে বিরক্তের ছাপ। সেই এক ঝামেলা। আবার দু ভাইয়ের দন্দ্ব। তারা ভেবেছে কি না কি হয়েছে। সেই ছোট থেকে এদের দুজনের দন্দ্ব মেটাচ্ছেন। বিয়ে দিলে এতদিনে দুই ছেলের বাপ হয়ে যেত তারা এখনো নিজেদের মধ্যে লড়াই করে।তারপর সোহরাব সাহেব নিজেকে শান্ত করে শুধালেন কি চাই।

– দিবে তো?

– হ্যা দিব। বেড়িয়ে আস।

আয়ান দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। বেড়িয়ে আসার সাথে সাথে আয়ানের কান টেনে ধরে আরজু বেগম।

– আহ মা লাগছেতো ছাড়।

– হতচ্ছাড়া ছেলে। আমার সায়নটা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এখনো তুই ওর সাথে লড়াই করিস। এগুলো ভাংছিস কেন?

– ওফফ মা লড়াই করিনিতো। আমিই কিনব আবার।

গম্ভীর কন্ঠে সোহরাব সাহেব বলেন মা ছেলের কীর্তি শেষ হলে বলো কথা শেষ করে যাব আমি। অফিস টাইমে কি একটা অবস্থা। এত ঢং এর কোনো মানে আছে।

– বাবা আমি মোটেও ঢং করছি না। আম সিরিয়াস। আমি বিয়ে করতে চাই।

ছেলের কথায় অবাকের চরম পর্যায়ে সোহরাব-আরজু জুটি। ভুতের মুখে রাম নাম শুনছেন যেন এমন রিয়াকশন তাদের।

– এভাবে হা করে আছ কেন ( আয়ান)

– তুই বিয়ে করবি মানে। তাহলে কি সিরাতকে পেয়েছিস।

– না।

– তাহলে বিয়ে কীভাবে করবি।

– অন্য মেয়েকে করব।

– এটা কেমন কথা। এতদিন সিরাত এর জন্য বিয়ে করলি না। যত মেয়ের ছবি দেখালাম সব রিজেক্ট করলি তাহলে এখন কীভাবে এই মেয়েকে বিয়ে করবি।

– এত কিছু জানিনা।৷ তবে এই মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই এটাই ফাইনাল।

– সে বুজলাম। মেয়ের বাবা মায়ের সাথে আমরা কথা বলব। তার জন্য এমন ভাঙচোড় এর কি দরকার ছিল।

– এগুলো কি ওই মেয়ের জন্য ভেঙেছি নাকি।

– তাহলে?

– তোমার ছোট ছেলের জন্য।

– কি বলছিস এসব।

– ঠিকই বলছি। তোমার ছোট ছেলেও সেই একই মেয়েকে বিয়ে করতে চায়।

এ কথা শুনে চুপ হয়ে যান সোহরাব সাহেব। এটাও শোনার বাকি ছিল। দু ভাই এখন এক মেয়ে নিয়ে লড়াই করবে। সোহরাব সাহেব আরজু বেগমের দিকে তাকায়। চোখাচোখি হয় তার সাথে। আরজু বেগম ও ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

– আরজু আমি যা ভাবছি তুমিও কি তাই ভাবছ?

– হুম।
#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১৭

আরজু তোমার ছোট ছেলেকে ফোন দেও। ফোন দিয়ে বলো বাসায় আসতে।

– আমি পারব না তুমি দেও।

– ওফফ আমি বললে কি তোমার গুনধর ছেলে বাসায় আসবে তুমিই দেও।

– হুম দিচ্ছি।

এরপর আরজু বেগম উঠে গিয়ে সায়নকে ফোন দেয়। মায়ের ফোন পেয়ে অবাক হয়না সায়ন। ও যেন জানত এমনটাই হবে।

– হ্যা আম্মু কি বলবে বলো।

– কি অঘটন ঘটিয়েছিস শুনি।

– আমি আবার কি অঘটন ঘটাবো। যা করার তা তোমার বড় পুত্র করেছে।

– ভালোভাবে কথা বল। তুই কি দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস। এজন্য তোকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করেছি।

– আম্মু এমনভাবে বলছ যেন আমি বড় কোন পাপ করে ফেলেছি।

– করছিসই তো। বড় ভাই একটা মেয়েকে পছন্দ করেছে সেই মেয়ের দিকে তুই তাকাস কীভাবে। দিনদিন বেয়াদব নয় নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছিস।

– আম্মু তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি কারো দিকে নজর দেইনি। আমার গুনধর বড় ভাই আমার ভালোবাসার মানুষের উপর দিয়েছে।

– তোর ভালোবাসার মানুষ মানে।

– জ্বি আম্মাজান। আপনি তো জানতেন একজনকে আমার ভালোলাগে। আপনাকে বলেছিলাম সময় হলে দেখাব। সেই মেয়ের উপর আমার ভাই নজর দিয়েছে।

– আয়ান এসব করেছে। আমি বিশ্বাস করিনা।

– হ্যা তোমার বড় ছেলে একদম সাধু পুরুষ। সব দোষ আমার। সে যাই হোক শোনো আদিয়া ইজ অনলি মাইন। তো তোমার বড় ছেলেকে পা’গ’লা’মি ছেড়ে দিতে বল। আর আমি বেশি কথা বলতে পছন্দ করিনা তাতো জানোই। ভালোভাবে বলে দিচ্ছি আদিয়াকে আমি বিয়ে করতে চাই এন্ড সেটা খুব শীঘ্রই।

– এটা সম্ভব নয় সায়ন। বড় ছেলের আগে ছোট ছেলে বিয়ে করবে তা আমি মেনে নিব না। তুই বাসায় আয়। আমরা আলোচনা করি। তোর দাদুকেও নাহয় আসতে বলি। একটা ডেট ফিক্সড করে আমরা নাহয় মেয়েটাকে দেখে আসি। মেয়েটাকেও তো দেখতে হবে

– এরকম কিছু করো না আম্মু।

– তুই বাসায় আসবি কি না?

– না আমি বাসায় আসব না।

– আচ্ছা লাগবে না। তুই থাক তোর মতো। আমাদের যা ভালো মনে হবে আমরা সেটাই করব। আর শোনো তুমি কোন উল্টা পাল্টা করবে না। বড় ছেলের আগে ছোট ছেলের বউকে আমি কিন্তু কখনোই মেনে নিবনা।

ওপাশ থেকে কোন জবাব আসে না। খট করে ফোনটা কে’টে যায়।





বেশ কিছুক্ষণ যাবত মাহবুব সাহেবকে ফোন করে যাচ্ছেন তার ছেলে সোহরাব সাহেব। কিন্তু কোন ভাবেই তাকে ফোনে পাচ্ছেন না। শুধু ওয়েটিং দেখাচ্ছে। রেগে ফোনটা শব্দ করে রেখে দিলেন সোহরাব সাহেব।

– কি হয়েছে ( আরজু)

– বাবার ফোন শুধু ওয়েটিং পাচ্ছি। কার সাথে এত কথা বলছে কে জানে।

– দেখো দাদুর আবার বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরল কিনা।

– চুপ করো বেয়াদব ছেলে। তুমিও দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছ। এতদিন বলে বলে একটা ছেলেকেও রাজি করাতে পারলাম না এখন একবারে দুইজন রাজি তাও একই মেয়েকে। আয়ান তুই এটা ঠিক করছিস না। মেয়েটাকে সায়ন পছন্দ করে তোর এটা করা ঠিক হচ্ছে না।

– আম্মু তুমি আমার কথা শুনবে নাকি আমিও চলে যাব বাড়ি ছেড়ে।

সোহরাব সাহেব তার স্ত্রীকে বলেন আপাতত এ বিষয় নিয়ে কথা না বলতে।

এদিকে মাহাবুব সাহেব ফোনে এতক্ষণ যাবত সায়নের সাথেই কথা বলতে ছিলেন। আরজু বেগম ফোন রাখার পরেই সায়ন ওর দাদুকে ফোন করে। ফোন করে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে মাহাবুব সাহেব বলেন।

– তা এখন তুমি কি করতে চাচ্ছ দাদুভাই ( মাহাবুব)

– আমি চাচ্ছি তুমি কালকের মধ্যে ঢাকায় ব্যাক করো।

– তারপর?

– আমার একটা প্লান আছে।

– কি প্লান

– ★★★★★★

– সায়ন আমি তোমার সাথে থাকব তবে তার জন্য আমার একটা শর্ত আছে।

– কি শর্ত বলো। যে শর্ত বলবে আমি মানতে রাজি।

– প্রমিজ।

– ওকে প্রমিজ।

– আমি যদি তোমার কথা রাখি তাহলে তোমাকে বাড়িতে ফিরে আসতে হবে।

– এএ এটা কি বললে দাদুভাই। আমার ফ্লাটে কে থাকবে।

– সে আমি জানি না। তবে তুমি আমার শর্তে রাজি হলে আমিও তোমার কথা রাখব।

– আমার কথা রাখলে আমি বাসায় যাব। শিওর।

– ওকে।

সায়নের সাথে কথা শেষ করে নিজের ছেলেকে ফোন ব্যাক করেন মাহবুব আলম।

– হ্যা কি বলবে বলো। এতবার ফোন দেয়ার কি আছে।

– বাবা জরুরি কথা ছিল।

– কোন ব্যাপারে।

– বাবা একটু ঝামেলা হয়েছে। আপনাকে একটু বাসায় আসতে হতো।

– আমি ব্যাস্ত আছি।

– বাবা আর্জেন্ট। আয়ান এর জন্য একটা মেয়েকে দেখতে যাব ভাবছিলাম।

– দেখো আমার বয়স হয়েছে। এখন আমাকে এত ঝামেলা দিও নাতো। তোমরা গিয়ে দেখে আস।
আমি ব্যাস্ত আছি। পরে কথা হবে।

বাবার এমন গা ছাড়া ভাব দেখে একটু অবাক হলেন সোহরাব সাহেব। তারপর ভাবলেন যে এখন তো শুধু দেখবই বিয়ে তো করাচ্ছি না। বাবা বিয়ের সময়ে থাকলেই চলবে।






আদিয়ার মা কোথায় তুমি। শুনে যাও। গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

– এই কি হয়েছে এত চেচামেচি করছ কেন?

– আরে ঝামেলা তো একটা হয়ে গেছে।

– কি হয়েছে।

-সোহরাব চৌধুরী ফোন করেছিল।

– কোন সোহরাব চৌধুরী?

– মাহবুব আঙ্কেল এর ছেলে।

– ওহ। তা কি বলল সে।

– সেটা বলার জন্যই তো তোমাকে ডেকেছি।

– ভনিতা না করে তাড়াতাড়ি বলো কাজ আছে আমার।

– তিনি তার বড় ছেলের জন্য আমার মেয়েকে পছন্দ করেছে। তিনি কাল একটু আসতে চাচ্ছিল।

– তুমি কি বললে।

– আমি তো হ্যা বলে দিয়েছি।

– একবার আদিয়াকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল।

– আরে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না তাই আসতে বললাম। তুমি একটু আদিয়ার সাথে কথা বলো।

– আচ্ছা।

রাতে জায়েদা বেগম আদিয়াকে আয়ানের কথা বলে। কিন্তু আদিয়া ওর মাকে না করে দেয়।

– আম্মু এমন একটা ছেলের সাথে তুমি কীভাবে বিয়ে নিয়ে ভাবতে পার। ও এত বছর আমার জমজ বোনকে পছন্দ করল। সেখানে ও কীভাবে এখন আমাকে বিয়ে করতে চায়। ও কী আধৌ ভালোবাসত। এই আয়ানও তো স্বার্থপর মা। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই না।

– আদিয়া তোর বাবা তাদের আসতে বলেছে। এখন না করলে ব্যাপারটা ভালো দেখাবে না। তার থেকে বরং আসুক। এরপর না হয় দেখা যাবেনে।

– যা ভালো মনে কর।





সোহরাব সাহেব সায়নকে ফোন দেন।

– হ্যা বাবা আবার কি বলবে বলো।

– আমি তোমার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছি। তুমি কোথায়।

– আমার সামনে কেন এই অসময়ে।

– আমার ছেলের হবু পুত্রবধু যে তোমার বাসায়ই আছে তাতো জানতাম না। যাই হোক ফ্রি থাকলে দেখা করো।

– না ব্যাস্ত আছি। রাখছি আমি।

এই ছেলের তেড়ামি আর গেলনা।

– বাবা দাদার রক্ত তো শরীরে বইছে ( আরজু)

– আবার শুরু হয়েছে। দেখো একটা ভালো কাজে এসেছি। এখানে এসে মোটেও ঝগড়া করবে না।

– ভালো কাজ না ছাই। এটা পুরোপুরি রং। এই মেয়ের সাথে সায়নেরই বিয়ে হবে দেখো।

– তোমার রেডিওটা একটু অফ রাখো দয়া করে। আমরা ভিতরে যাই এবার।

– হুম।

সোহরাব সাহেব, আরজু বেগম ও আায়ন তিনজন ভিতরে যায়। আজমাইন সাহেব তাদের সাথে কথা বলছিল। আকাশ ও আছে। ও চুপচাপ পাশের একটা সোফায় বসে আছে। জায়েদা বেগম কিচেনে। মাহি আদিয়াকে তৈরি করছিল।

সোহরাব সাহেব কেবল বলতে নিচ্ছিল যে ভাই আমরা একটু আপনার মেয়েকে দেখতে চাই। ঠিক সেসময়ই কলিং বেল বেজে ওঠে।

– আকাশ বাবা দেখ তো কে আসল।

আকাশ উঠে দরজা খুলে দেয়। দরজার সামনে সায়নকে দাঠিয়ে থাকতে দেখে চমকে যায়। আবার খুশিও হয়। আয়ান আসায় এতক্ষণ বিরক্ত লাগছিল আকাশের। কিন্তু সায়নকে দেখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

– ভাই আপনি আসছেন।

সায়ন জবাব দেয়না। শুধু একটা মুচকি হাসি দেয়।
আকাশ তাদের নিয়ে ভেতরে আসে।

এসময় আকাশ আর মাহাবুব সাহেবকে একসাথে দেখে দাড়িয়ে যায় আায়ান আর সোহরাব সাহেব।
কিছুক্ষন সবাই নিরব থাকে। এরপর সোহরাব সাহেব বলেন।

– বাবা তুমি এখানে। তুমি না বললে তুৃমি ব্যাস্ত।

– এই কে তোমার বাবা। আমি তোমাকে চিনিনা।
আজমাইন বাবা আমি একটু তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। এখন কি বসব নাকি না।

– আরে আঙ্কেল আপনি এখনো দাড়িয়ে কেন। বসেন। সায়ন বাবা বসো( আজমাইন)

বাবার এমন আচরনে আহম্মক হয়ে বসে আছে সোহরাব। মুখে কুলুপ এটে বসেছে বাবা কি করে তা দেখার জন্য। মাহাবুব সাহেব বললেন।

– আজমাইন আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চাইতে এসেছি তোমার কাছে।

– আঙ্কেল আমার কাছে আপনাকে দেয়ার মতো কি আছে।

– তোমার মেয়ে আদিয়াকে আমার নাতির জন্য পছন্দ করেছি।

মেয়ের জন্য একই পরিবার থেকে, একই সময় দুই ছেলের জন্য সম্বন্ধ। এমন সিচুয়েশনেও কখনো পড়তে এটা যেন ভাবেনওনি আজমাইন সাহেব। তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন। কি জবাব দেয়া উচিত তার এখন।

#চলবে
#চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here