#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১৩
নতুন চাকরি পেয়েছে সেই খুশিতে মাকে জরিয়ে ধরে আদিয়া।
– চাকরি পেয়েছিস ভালো কথা টিকলে হয়।
– এটা কেমন কথা মা। শুরুতেই যদি বদদোয়া করে দাও তাহলে কীভাবে হবে বলো।
– বদদোয়া করলাম কই শুধু বললাম।
– ওই একই। জানোনা মায়ের দোয়া সব সময় কাজে লাগে। তাই এখন দোয়া করে দাও আবার।
– আল্লাহ ওর যেন এই চাকরিটা হয়ে যায় আর একটা ভালো বরও যেন পেয়ে যায়।
– এটা আবার কেমন দোয়া করলে।
– ভালো জিনিসই তো চাইলাম। এখন তো একটা বিয়ে করতেই হবে তাই একটা ভালো ছেলে চাইলাম।
-ধ্যাত ভালো লাগে না। গেলাম আমি। কাল ডেকে দিও কিন্তু।
– আচ্ছা বাবা দিব নে।
।
।
।
।
।
সকাল বেলা জায়েদা বেগম আদিয়াকে ঘুম থেকে তুলে দেয়। একটু আগেই ঘুম থেকে তুলে। আদিয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়। আজ ব্রেকফাস্ট করার জন্যও যথেষ্ট টাইম পেয়েছে। এরপর হাতে টাইম রেখেই বাসা থেকে বের হয় আদিয়া। হাতে টাইম নিয়ে বের হলে কি হবে রাস্তায় দাড়িয়ে রিক্সার জন্য সেই দেরীই হচ্ছিল। কোন রিক্সা পাচ্ছিল না। একটা রিক্সা পেয়েছে তাও লোকটা বিশ টাকা বেশি চেয়ে বসেছে। সেটা নিয়ে বেজে গেছে আদিয়ার সাথে। কথা কা’টা’কা’টি হতে দেখে লোকজনও জড়ো হয়েছে সেখানে। সেসময় সায়নও অফিসের জন্য গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছিল। গেটের সামনে লোকজনের জটলা দেখে গাড়ি দাড় করায় সেখানে। জানালার কাচ নামিয়ে দেখার চেষ্টা করে কি হয়েছে। ভীরের মধ্যে আদিয়াকে দেখে চমকে যায় সায়ন। মেয়েটা সমানে রিক্সাওয়ালার সাথে ঝগড়া করে যাচ্ছে। গাড়ি থেকে নামে সায়ন। ভীড় ঠেলে এগিয়ে যায় সামনে।
– কি হয়েছে এখানে?
– দেখেন মামা সত্তর টাকা ভাড়া চেয়েছি বলে আপা কেমন চিল্লাচিল্লি করতেছে।
– এই মিয়া চিল্লাব না কি করব। পঞ্চাশ টাকা আপনি সত্তর টাকা কেন চাবেন।৷ যেই দেখছেন রিকশা পাচ্ছি না ওমনি ডিমান্ড বেড়ে গেছে।
সায়ন রিকশাওয়ালাকে বলে মামা কিছু মনে কইরেন না। এরপর আদিয়ার হাত টেনে নিয়ে আসে সেখান থেকে। টেনে আনার সময় আদিয়া কয়েকবার হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়াতে থাকে কিন্তু সায়নের শক্তির সাথে পেরে ওঠেনা। জোড় করে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে লক করে দেয় সায়ন।
নিজেও ঘুরে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে।
– এই আপনি আমাকে নিয়ে আসলেন কেন?
– তাহলে কি ওখানে বসে আরো ঝগড়া করতে।
– আমি ঝগড়া করতাম না কি করতাম তাতে আপনার কি।
– আমারই তো। আমার তুমি। আমার বাসার গেট এ বসে ঝগড়া করতেছ তো সেটা দেখা কি আমার দায়িত্ব না।
– এই এই কি বললেন আপনি। আমার তুমি মানে।
– কই কখন। সেসব কিছু বলিনি।
– আমি নিজে শুনেছি হুহ।
– শুনলে কি। তুমি তো আমারই। আজ হোক বা কাল তোমাকে আমার করে নিবই।
– হুহ।
– ভালো কথা মনে করেছ।
– কি
– তুৃমি আমাকে এভাবে ঠকালে কেন?
– আমি আপনাকে কখন ঠকালাম।
– সেদিন তুমি বলেছিলে আমাকে নিজের যোগ্যতায় কিছু করতে। তারপরও তুমি কেন আনাফকে ভালোবাসলে।
– ********
– চুপ করে থেক না আ্যান্সার মি।
– আসলে আপনার মতো গোমড়ামুখো, গুন্ডা মানুষ আমার পছন্দ ছিলনা।
– আমি তোমার জন্য নিজেকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেই আর তুমি বলো আমাকে পছন্দ নয়। ওহ আমাকে পছন্দ হবে কেন তোমার তো পছন্দ আনাফের মতো মেয়েবাজ লোক।
আনাফের কথা তোলায় মুখ চুপসে যায় আদিয়ার। সে কি জানত নাকি আনাফ মেয়েবাজ। আর এই সায়ন বেটাও আছে। খবিশ একটা। সুযোগ বুঝে ঠিকই একটা খোচা মে’রে দিল। কথাই বলব না আর হুহ।
– এইযে মিস চুপ করে থাকলে হবে। কোথায় যাবেন সেটা তো বলুন। আমারও তো অফিস আছে নাকি।
এরপর আদিয়া ঠিকানা বললে সায়ন সেখানে যায়। গাড়িতে দুজন আর কোনো কথা বলেনি। আদিয়া জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিল। আদিয়ার বলা জায়গায় গাড়ি দাড় করায় সায়ন।আদিয়া গাড়ি থেকে নেমে চলে যেতে শুরু করে। সায়ন পেছন থেকে বলে
– একটা থ্যাংকস তো বলতে পার।
– বয়েই গেছে আমার। আমি কি উঠতে চাচ্ছিলাম নাকি আপনার গাড়িতে।
– আচ্ছা ধন্যবাদ লাগবে না আপনি যেতে পারেন।
কথার তালে তালে সায়নের এতক্ষণ খেয়ালই ছিলনা ও কোন জায়গায় এসেছে। আদিয়া চলে যাওয়ার পর পাশে নজর যেতেই দেখে চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির সামনে দাড়িয়ে আছে ও। এটা ওর বাবার কোম্পানি হলেও ও ব্যাবসার কাজে হাত না লাগিয়ে নিজের মতো ক্যারিয়ার গড়েছে। এ অফিস মূলত আয়ানই সামলায়। সেসব বড় কথা নয়। সায়নের মাথায় ঢুকেছে অন্য ভয়। সেদিন ও দেখেছিল আয়ান আদিয়াকে সিরাত ভেবেছে। এখন আবার আদিয়া এই অফিসেই জব নিয়েছে। তবে তো ব্যাপারটা ঘেটে ঘ হয়ে যাবে। রেগে গাড়ির স্টিয়ারিং এ বাড়ি মা’রে সায়ন।
যা করার শীঘ্রই করতে হবে। মাহবুব আলমের সাথে কথা বলবে সায়ন। কিন্তু তিনি কিছু কাজের জন্য ঢাকার বাহিরে আছে। আপাতত এসব বিষয়ে তার সাথে কথা বলা যাবে না। একমাত্র এই দাদুর কাছেই সায়ন ফ্রি ভাবে সব কথা বলতে পারে। তাই দাদুর ফ্রি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এরপর তাকে দিয়ে একবারে আদিয়াদের বাসায় বিয়ের প্রপোজাল পাঠাবে। এছাড়া আদিয়াকে রাজি করানো যাবে না।
সায়ন ভাবনায় মগ্ন এমন সময় দেখতে পায় আকাশ অফিসের দিকে ঢুকছে। আকাশকে দেখে মুখে বাকা হাসি ফুটে ওঠে সায়নের। এবার একে একটা কাজে তো লাগানোই যায় এই ভেবেই বাকা হাসি দিয়েছে সায়ন।
।
।
।
।
।
।
আদিয়া অফিসে আসলে সেখানে ওকে জয়েনিং লেটার দেয়া হয়। খুশি হয়ে যায় আদিয়া। কিন্তু তার আগে ওকে একটা চুক্তি পত্রে সাক্ষর করতে হয়েছে। যেখানে লেখা ছিল দু বছর পূর্ণ হওয়ার আগে আদিয়া কোন ভাবেই এই অফিস ছেড়ে যেতে পারবে না। চুক্তি পত্র দেখে তো আদিয়া খুশিই হয়েছিল। কেননা এমনি ওর চাকরি চলে যায় ওকে ছাড়তে হয়না। তাই খুশিতে সিগনেচার করে দেয় সেখানে। ওকে জানানো হয় এ সপ্তাহ থেকেই জয়েন করতে পারবে।চাইলে কাল থেকেও জয়েন করতে পারবে। এই গাধী মেয়ের মাথায়ই ঢুকল না যে এর পেছনেও কারো হাত আছে। সে তো খুশিতে নাচতে নাচতে বাসায় আসছে। আসার সময় আকাশকে একটা চকলেট দিয়ে আসছে। মিষ্টিমুখ করাতে।
লান্চ টাইমে আকাশ ক্যান্টিনে যাওয়ার জন্য বের হয় তখন আকাশের ফোনটা বেজে ওঠে। ফোন বের করে দেখো সায়নের ফোন। রিসিভ করে সালাম দেয়।
– হ্যা ভাই বলেন।
– আকাশ আমার সাথে দেখা করতে পারবে।
– কখন কোথায়।
– এখনি।
– এখনি কীভাবে।
– আমি তোমাদের অফিসের সামনে রেস্টুরেন্টে বসে আছি সেখানে চলে আসো।
– আচ্ছা ভাই আপনি বসেন আমি আসছি।
এরপর আকাশ সায়নের সাথে দেখা করে। সেখানে সায়ন আকাশকে বিশাল একটা কাজ দেয়। আকাশ পড়ছে যাতাকলে।এখন নাও করতে পারতেছে না। তাই রাজি হয়ে যায় সায়নের কথায়।
এদিকে আদিয়া বাসায় থাকতে বোর ফিল করছিল। বাসায় থাকলেই যখন একা একা থাকে তখন আনাফের কথা মনে পড়ে। ওর সাথে কা’টানো মুহূর্তগুলো মনে পড়ে। যা আর ভাবতে চায়না আদিয়া। তাই ও ঠিক করে কাল থেকেই অফিস জয়েন করবে।
।
।
।
।
আদিয়া অফিসে আসলে একটা মেয়ে ওর কেবিন দেখিয়ে দিয়ে যায়। মেয়েটা বলে যায় ওকে ওর কাজ বুজিয়ে দেয়া হবে। আদিয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
কিছুক্ষণ পর একজন লোক এসে আদিয়াকে বলে এমডি স্যার আদিয়াকে তার রুমে যেতে বলেছেন। আদিয়া উঠে বসের রুমের দিকে যায়। দরজায় নক করলে ওপাশ থেকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি আসে। ভেতরে প্রবেশ করে আদিয়া দেখতে পায় এমডি স্যার উল্টো দিকে ঘুরে বসে আছে। সালাম দেয় আদিয়া। ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে সালামের জবাব দিয়ে বসতে বলে আদিয়াকে। আদিয়া চেয়ার টেনে বসে। তখন চেয়ার ঘুরায় আয়ান। থমকে যায় আদিয়া। মনে মনে আওড়ায় এই ব্যাক্তি এখানে কেন?
-আপনি এখানে কেন।
– আমাদেরই তো অফিস। আমার থাকার কথা নয়কি।
– কি বলছেন এগুলা। এতদিন তো একবারও দেখলাম না আপনাকে।
– আমি সামনে আসিনি তাই দেখনি।
– এসবের মানে কি
– সিরাত তোমার কও সত্যি কিছু মনে পড়ছে না। আমাকে কি তোমার একটুও মনে নেই।
– সত্যি বলছি আমার কিছু মনে নেই। আপনি কেন শুধু শুধু আমাকে ভুল ভাবতেছেন।
এরপর আয়ান ফোন করে সিরাত এর পিকটা আদিয়ার সামনে ধরে। পিকটা দেখে আদিয়া নিজেও চমকে যায়। এতো হুবহু ওরই চেহারা। এটা কীভাবে সম্ভব।
আয়ান বলতে শুরু করে –
তখন আমি অনার্সের স্টুডেন্ট ছিলাম। একটা পাবলিক ভার্সিটিতে পড়তাম আমি। তো এক ভ্যাকেশনে আমি বাসায় না গিয়ে একটা ফ্রেন্ড এর সাথে ওর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে কয়েকদিন ছিলাম ওর সাথে। তো একদিন কোন একটা কাজে ও বাহিরে বের হয়েছিল। আমি বাসায় বসে বসে বোর হচ্ছিলাম। ভাবলাম একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ রেডি হয়ে বের হয়ে পড়লাম। গ্রামের রাস্তা ধরে হাটছিলাম। রাস্তাটা দেখতে দারূন ছিল। দুই পাশে সবুজ ধানের গাছ লাগানো। মাঝখানে রাস্তা। বেশ লাগছিল হাটতে। হাটতে হাটতে প্রায় অনেক দূর চলে গিয়েছিলাম। হঠাৎ কারো ফুপিয়ে কান্নার শব্দে ঘুরে পেছনে তাকালাম। কাউকে দেখতে পেলাম। একটু ভয় পেলাম আমি। তারপর সেই কান্নার শব্দ আবার আমার কানে এল। এবার একটু খুজে দেখার চেষ্টা করলাম। রাস্তার পাশে একটা মেয়ে পা চেপে ধরে বসে আছে। কান্না করছে কেন জানার জন্য এগিয়ে গেলাম তার সামনে। তার সামনে গিয়ে দেখি সে যে পা টা হাত দিয়ে ধরে রেখেছে সে পা দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। হাত পুরো লাল হয়ে গেছে।
জিজ্ঞেস করলাম এই মেয়ে কি হয়েছে। কিন্তু সে কোনো জবাব দিলনা।
#চলবে