তোর মায়ায় আসক্ত পর্ব -১২

#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১২

সায়ন আনাফকে ওর ফার্ম হাউসে নিয়ে এসেছে। আনাফকে সেখানে একটা রুমে বদ্ধ করে রেখেছে সায়নের গার্ডসরা। বেশ খানিকক্ষণ পরে সায়ন সেখানে আসে। মুখটা বেশ গম্ভীর। ললাটের নীল রঙের রগ গুলো দেখা যাচ্ছে। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। পারে তো চোখ দিয়েই অগ্নি বর্ষন করে আনাফকে ভষ্ম করে দেয়।

– সায়ন ভাই আপনি কেন এসব ঝামেলায় ঢুকতে গেলেন। এটা শুধু আমার আর আদিয়ার ব্যাপার। আপনি শুধু শুধু ঝামেলায় জরাইয়েন না ভাই।

– এটা কি আসলেই শুধু তোর আর আদিয়ার ব্যাপার।

– হ্যা ভাই এটা আমাদের পার্সোনাল ব্যাপার।

– তাই বলে তুই য ইচ্ছা করবি আর সেগুলা আমাদের দেখতে হবে।

– ভাই।

এরপর সায়ন একটা চেয়ার টেনে তাতে পায়ের উপর পা তুলে বেশ আয়েসি ভঙ্গিতে বসে।

– তারপর এখন বল সেদিন যখন আমি আদিয়াকে ভালোবাসার কথা বলেছিলাম তখন আড়ালে থাকা ব্যাক্তিটা কে ছিল?

– ক কবে ভাই। আমি তো কিছু জানিনা।

– অভিনয় করার কিছু নেই। তোর কি মনে হয় আমি খবর রাখিনা। তুই ওইদিন ওখানে কেন গিয়েছিলি।

– আসলে আমি ওই পথ দিয়েই কলেজে যাচ্ছিলাম।

– হুম তা নাহয় বুজলাম। কিন্তু আমি ওকে মনের কথা বলায় তুই কেন ওর সাথে রাগ দেখালি। আমি ওকে ভালোবাসার কথা বলার পরও কেন তুই ওকে প্রপোজ করলি। তোর কি দিলে ডর নেই। তুই কি জানতি না যে আমার জিনিস আমি অন্য কারো হতে দিব না।

– কি বলছেন ভাই এসব। তাহলে এতদিন আপনি কেন কিছু বলেননি।

– তোকে তো আমি এমনি সরিয়ে দিতাম। আগে শুধু নিজের যোগ্যতায় সব অর্জন করার প্রয়াসে ছিলাম। আদিয়া আমাকে নিজের যোগ্যতায় কিছু করতে বলেছিল তাই। মাঝখানে তুই এসে ঝামেলা বাধালি। ভাবতেছিলাম কীভাবে তোকে সরানো যায়। তাই তোর পিছনে লোকও লাগাই। সেখান থেকে তোর সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য পেতে থাকি। তোর সম্পর্কে যা জানি সেগুলা যদি আদিয়া জানে এমনি তোকে ছেড়ে চলে যেত। কিন্তু আমি অপেক্ষায় ছিলাম আদিয়া নিজে থেকে সব জানুক। ওই পাগলি মেয়ে তো তোর ভালোবাসায় এতই অন্ধ হয়ে গিয়েছিল তোর অন্য কোন ব্যাপারেই ওর মাথা ব্যাথা ছিলনা। সে যাই হোক পুরনো কথা বাদ দে। আমি ওর জন্য নিজেকে পরিবর্তন করতেছি জেনেও কেন ওর দিকে হাত বাড়ালি সেটা বল।

– ভাই ওকে ভালোবাসতাম আমি।

– হাহ ভালোবাসা। তাহলে সেই ভালোবাসা এখন কোথায় গেল। আসলে তুই কখনো ওকে ভালোইবাসিসনি। শুধু নিজের স্বার্থের জন্য ওকে ব্যাবহার করেছ। তুই এই ভালোবাসার অভিনয় না করলেও আদিয়া তোকে সাহায্য করত এজ এ ফ্রেন্ড। তুই শুধু শুধু মাঝখানে এসে গল্পটার কাহিনি এত বড় বানালি।

– সায়ন ভাই আপনার কথার আগা মাথা আমি কিছুই বুজতেছি না।

– আমার কথা বোঝার বয়স হয়নাই এখনো। তোর এই এত বেশী নারীপ্রীতি আমার কাজ সহজ করে দিয়েছে। আদিয়াকে পাওয়ার জন্য তোর সাথে লড়তে হবে না। কিন্তু তুই যদি আর কোনোভাবে আদিয়ার দিকে চোখ তুলেও তাকাস তাহলে ওই চোখ আমি উপড়ে দিব। মাইন্ড ইট।
আর আমি চাইলে তোকে এখনই শাস্তি দিতে পারতাম কিন্তু আমি দিবনা। তোকে শাস্তি দিতে মার্টিনা খুব শীঘ্রই বিডিতে আসছে।

মার্টিনা বিডিতে আসবে শুনে আনাফের পিলে চমকে গেল। তারপর আবারও নাটক করে বলল

– মার্টিনা কে সায়ন ভাই।

এবার আনাফের কথা শুনে রাগ উঠল সায়নের। তারপরও নিজেকে কন্ট্রোল করে দাতে দাত চেপে বলল এত এত মেয়ের জীবন নষ্ট করার খেলায় মেতেছিস যে এখন নাম চিনতে পারছিস না। যাক আমি একটু চিনিয়ে দিচ্ছি তোর ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ড মার্টিনা। যার কাছে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে বিডিতে এসে তুই নতুন করে সংসার বাধার সপ্ন দেখছিলি। শোন তুই যাই করিস না কেন আমার মাথা ব্যাথা নেই শুধু আদিয়ার থেকে গুনে গুনে ৫০০ হাত দূরে থাকবি। এরপর থেকে ওর ৫০০ হাতের মধ্যে তোকে দেখলে তুই শেষ।

আনাফ বুজল সায়ন ওর ব্যাপারে সব খোজ খবর জানে। সায়নকে কিছু বলতে যাবে আনাফ। কিন্তু সায়ন সে সুযোগ না দিয়ে গটগট পায়ে বেড়িয়ে যায়। গার্ডসদের বলে ওকে ওর বাসার সামনে ফেলে রেখে আসতে। আর দুজন গার্ডকে বলে আনাফের উপর সব সময় নজর রাখার জন্য। তারা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় সায়ন।





মাহি আদিয়াকে নিয়ে বাসায় আসে। আদিয়া স্বাভাবিক ভাবেই বাসায় আসে যেন জায়েদা বেগম বুজতে না পারে যে খারাপ কিছু হয়েছে। মাহিকে দেখে জায়েদা বেগম খুশি হন। জিজ্ঞেস করে

– কিরে আমরা কি এখন পর হয়ে গেছি নাকি যে আসতেই চাচ্ছিলি না।

– না আন্টি আপনি কি যে বলেন। আপনারা পর হবেন কেন।

এরপর আরো কিছুক্ষন জায়েদা বেগমের সাথে কথা বলে আদিয়ার রুমে আসে মাহি।

– এই আদু কি হয়েছে রে। খুলে বলতো।

এরপর আদিয়া মাহিকে সব খুলে বলে। মাহি শুনে আদিয়াকে বলে।

– আদিয়া একটা কথা জানিস।

– কি।

– সায়ন ভাই এখনো তোকে ভালোবাসে।

– কি বলিস এসব। উনি এখনো বিয়ে শাদী করেনি।

– আরে না। তুই সেদিন তাকে বলেছিলি নিজের যোগ্যতায় কিছু করতে। তোর কথাটা সিরিয়াসলি নিয়েছিল সে। তারপর সে ক্যারিয়ারে ফোকাস করে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস দেয় তিনি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের একটি উচ্চপদস্থ কর্মচারী। এই যে বাসাটায় এখন তোরা আছিস এটাও তার। তিনি তার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। কিন্তু যার কথায় সে এ পথে এসেছে সেই একটা ঠকবাজের পাল্লায় পড়ে বসে আছে। এতে তোরা কতজন কষ্ট পাচ্ছিস ভেবে দেখেছিস।

মাহির কথা শুনে আদিয়ার মুখটা কালো হয়ে যায়। আসলেই ওর এতদিন সায়নের কথা মাথায়ই ছিলনা। সে যে ওর কথা রাখতে এত কিছু করবে এটা ও ভাবতেই পারেনি।

– আদিয়া লোকটা ওতটা খারাপ না। দেখ এখনো কেমন দূর থেকে অলটাইম তোকে প্রোটেক্ট করে যায়। তুই একবার হলেও ভেবে দেখিস তার কথা। কোনো বেইমানের জন্য কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে নেই।

আদিয়া এই টপিক পাল্টাতে বলে ওঠে

– মাহি তোর বাসার সবাই কেমন আছেরে?

– ভালো।

– জিজুর কি খবর রে

– সেও ভালো আছে।

– তা আমাদের পুচকু কবে আসবে রে।

– আদুভাই তুই এমন পাশের বাসার আন্টিটাইপ কথা বার্তা বলবি নাতো। পুচকু যখন আসার তখনই আসবে।

মাহি বুজতে পারে আদিয়া টপিক পাল্টানোর জন্যই এসব কথা তুলছে। কিন্তু আদিয়া যখন এ ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছেনা তাই ও আর কথা বাড়ায় না।

এরপর বেশ অনেকক্ষণ দুজন গল্পগুজব করে। জায়েদা বেগম দুপুরের খাবারের আয়োজন করে একসাথে সবাই খাওয়া দাওয়া করে। এরপর মাহি বাসায় চলে যায়।





রাতে আদিয়া কি মনে করে যেন আকাশকে ফোন দেয়।

– কিরে আদুভাই তোর এখন আবার কি লাগবে।

– আমি কি শুধু কাজের জন্যই তোকে ফোন দেই।

– তোর লাগলেই তো ফোন দিস। এছাড়া তো ভুলেও ফোন দিবি না। কিপ্টা একটা।

– আচ্ছা এরপর থেকে এমনি ফোন দিব। এখন একটা কাজ করে দে।

– কি কাজ হুকুম করুন মহারানী।

– সায়ন ভাইয়ের নাম্বারটা দেতো।

– কোন সায়ন।

– সায়ন নামে কজনকে চিনিস।

– চিনি তো অনেককেই। ওই যে কলেজের সিনিয়র।

– তার নাম্বার আমি কোথায় পাব।

– নাটক করিস না। তোর কাছে আছে আমি জানি।

– তার নাম্বার দিয়ে তুই কি করবি।

– প্রেম করব দে।

– হা হা। প্রেম করবি তার সাথে তুই। মজা পাইলাম।

– দে ভাই লাগবে।

– পাশের ফ্ল্যাটে গিয়ে নক কর যা।

– এই ছি কি বলিস। নাম্বার দে।

– ওকে টেক্সট করে দিচ্ছি রাখ।



– হ্যালো কে বলছেন।

– কন্ঠ শুনে চিনেন কিনা দেখেন তো।

– আ আ আদিয়া তুমি।

– আপনি নাকি অনেক সাহসী। তাহলে তোতলাচ্ছেন কেন

– এই মেয়ে আমি ভয় পাইনি।

– হা হা তাতো বুজছিই।

– সকালের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলে আমি অ্যন্সার দিতে পারব না। অন্য কিছু বললে বল।

– না সেসব কিছু না। ছাদে আসবেন একটু।

– এখন। কি বলছ তুমি মাথা ঠিক আছে।

– হ্যা ঠিক আছে। আসলে আসেন নয়ত নাই। রাখলাম।

– না আসছি আমি।

আদিয়া ফোনটা কে’টে দেয়।

বেশ অনেকক্ষণ পর আদিয়া ছাদে আসে। এসে দেখে ছাদের এক কর্নারে দাঁড়িয়ে আছে সায়ন। রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে চাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আদিয়া পা টিপে টিপে সেদিকে যায়। সায়ন সেদিকে মা তাকিয়েই বলে আসলা তাহলে। আমি তো ভাবলাম ডপ মা’র’ছ বুঝি।

– ডপ মা’রছি বুজেও দাড়িয়ে আছেন কেন।

– তোমার জন্য অপেক্ষা করতে আমার অনেক ভালো লাগে।

– এটা কোন কথা। তাহলে বিয়ে শাদী যে করছেন না এটা কার জন্য অপেক্ষা।

– তাও তোমার জন্য।

– মানে? আপনি তো নিশ্চয়ই জানতেন যে আমার আর আনাফের

– ওসব বাদ দাও। তোমার মুখে আনাফের নামে শুনতে ভালো লাগবে না আমার।

– সকালে এমন কেন করলেন?

– তোমার সাথে খারাপ আচরণ করছে তা সহ্য হয়নি তাই।

– কেন সহ্য হয়না। ভালোবাসেন আমাকে?

– না।

সায়ন না বলায় চোখ গোল গোল করে তাকায় আদিয়া। এই বেটা বলে কি। আমাকে ভালোবাসেনা ওদিকে আমার জন্য অপেক্ষা করছে হাহ। আবার আমাকে নজরে রাখে আমার জন্য আবার ফাইটও করে। বেটা চায়টা কি ( মনে মনে)

– আপনি যখন ভালোইবাসেন না তাহলে এসবের মানে কি। শোনেন আমি এখানে আপনার সাথে এসেছি কথা বলেছি ভুলে যান এসব। আপনি যাকে ভালোবাসেন তার সাথে সুন্দর একটা জীবন গড়েন। ভালো থাকবেন। আসি।

– চলে যাচ্ছো?

– হ্যা।

– আমি ভালোবাসিনা তবে আমি যে কারো মায়ায় আটকে গেছি গভীর ভাবে এটা কীভাবে কা’টা’বো তাতো বলে যাও।

– মানে

– আমি যে অনেক আগেই #তোর_মায়ায়_আসক্ত হয়ে গেছি গভীর ভাবে সেই মায়া কীভাবে কা’টা’বো। আনাফও তোমাকে ভালোবাসি বলেছিল কিন্তু সেটা কর্পূরের মতো উড়ে গেছে তাই এভাবে ভালোবাসি বলতে চাইনা তোমাকে। আমি তোমার মায়ায় সারাজীবনের জন্য আটকা পড়তে চাই। সেই মায়ায় আবদ্ধ করতে চাই তোমাকেও।

– এসবে এখন আর আমার বিশ্বাস নেই। আমি চাইনা নতুন করে কারো লাইফে জড়িয়ে তার লাইফটা নষ্ট করতে। আমি শুধু আপনাকে এটাই বলতে এসেছি আপনি আমার জন্য অপেক্ষা না করে আপনার লাইফটা গুছিয়ে নিন এটাই বেস্ট হবে।

– আদিয়া আমি কীভাবে নতুন করে শুরু করব। আমি এতগুলো বছর শুধু তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি৷

– আমি আনাফকে ভালোবাসি জেনেও কেন অপেক্ষা করেছেন আপনি?

– আমার বিশ্বাস ছিল যে আমি তোমাকে পাব। আমি চাইলে অনেক আগেই আনাফের থেকে কেড়ে আনতে পারতাম তোমাকে কিন্তু সেক্ষেত্রে তুমি আমাকে ভুল বুঝতে। তুমি ভাবতে আমি তোমার ভালোবাসার পথে বাধা হয়ে তোমাকে জোর করছি আমার মায়ায় আটকাতে। তাই এতগুলো বছর শুধু অপেক্ষা করেছি। দেখো আজ আমার বিশ্বাস জিতে গেছে।

আদিয়া কিছু বলতে যাবে তখনই ফোনটা বেজে ওঠে। আদিয়া মনে মনে বলে এই ফোনই নষ্টের গোড়া। কাজের সময় এর বাজতেই হবে। তারপর তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে সালাম দেয়।
ওপাশ থেকে জানায় মিস আদিয়া চৌধুরী কোম্পানি আপনাকে জবের জন্য সিলেক্ট করেছে। আপনি কালকে একটু অফিসে এসে যোগাযোগ করবেন।

চৌধুরী কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে সেই খুশিতে এদিকে আর হুশ নেই আদিয়ার। ওর আগে ওর আম্মুকে নিউজটা দিতে হবে তাই দৌড় লাগায় বাসার উদ্দেশ্যে। এদিকে ভেবাচেকা খেয়ে দাড়িয়ে থাকে সায়ন। এটা কি হলো 🙄

#চলবে

( কাল সায়ন আর আনাফ নামটা গড়মিল হওয়ার জন্য আমি দুঃখিত। আসলে রিচেক না দিয়েই পোস্ট করেছি তাই এটা হয়েছে। সত্যি বলতে আমার সব থেকে বিরক্ত লাগে নিজে লিখে আবার নিজেই পড়তে। এ যাবত আমার কোন গল্পই আমি পড়ে দেখিনি। আগে ফ্রেন্ডকে দিয়ে রিচেক দেওয়াতাম এই গল্পে সেটাও হচ্ছে না। যাই হোক ভুলের জন্য স্যরি এরপর থেকে দেখে দেওয়ার চেষ্টা করব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here