তোর মায়ায় আসক্ত পর্ব -০৪

#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#পর্ব_৪
#নীহারিকা_নুর

আকাশ ফিরে যাওয়ার সময় আজমাইন সাহেবের সাথে দেখা হয়। তখন সালাম দেয় তাকে

– আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল

– ওয়ালাইকুম আসসালাম। তা কি খবর বাবা।

– তেমন কিছু না আঙ্কেল এই আদিয়ার কাছে এসেছিলাম একটু। কিন্তু বাসা তালা দেওয়া দেখলাম। ও কোথায় গেছে আঙ্কেল?

– ও তো হসপিটালে। হসপিটালে ভর্তি আছে।

– কি বলেন আঙ্কেল। কি হয়েছে ওর? হসপিটালে কখন নিয়েছেন?

– কাল থেকে অনেক জ্বর। জ্বরে বেহুশ ছিল। কোনো রেসপন্স করছিল না। তাই হসপিটালে নিয়ে গেলে ডক্টররা ভর্তি করতে বলল।

– কোন হসপিটাল আঙ্কেল। আমিও যাব।

– সিটি হসপিটাল। আমিও যাব এখন আবার।

– আচ্ছা চলেন তাহলে আপনার সাথেই যাই।

– আচ্ছা তুমি তাহলে বসো একটু।

এরপর দুজন একসাথে হসপিটালে যায়। ডক্টর বেশি কথা বলতে নিষেধ করে গেছে পাশে বসে। কেবিনে আদিয়ার পাশেই ওর মা আর আলভি বসা ছিল। আকাশ আর আজমাইন সাহেব প্রবেশ করে। আকাশ গিয়ে আদিয়ার পাশে একটা টুল টেনে বসে। আদিয়া চোখ মেলে তাকায়।

– কিরে আদু ভাই জ্বর বাদালি কেমন করে ।

আদিয়া চুপ করে থাকে উত্তর দেয় না। চোখ বেয়ে দু ফোটা নোনাপানি গড়িয়ে পড়ে।

– কিরে আদু ভাই কথা বলবি না।

– আমি আদু ভাই না আদিয়া ( অস্ফুট স্বরে)

– হুম তাতো বুজলাম জ্বর বাদালি কিভাবে বলবি না।

আদিয়া আর কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

আকাশ বুজতে পারে এই জ্বর বাদানোর পিছনেও
আনাফই আছে৷ নিশ্চয়ই ঠান্ডা লাগিয়েছে এই মেয়ে। আর আনাফের জন্যই হয়ত এমন চুপ চাপ হয়ে গেছে৷ নয়ত আদু ভাই বলার জন্য এতক্ষণে দু চার ঘা পরত। কিন্তু এখন কিছুই বলল না। এখন আদিয়ার মা বাবা পাশে থাকায় এখন কিছু বলতেও পারছে না। তাই আদিয়াকে বলে

– আচ্ছা বলতে হবে না। আমি চলে যাচ্ছি। এরপর উঠে যায় আকাশ। আদিয়া শুধু একবার তাকায় কিছু বলেনা।

আকাশ বের হয়ে আনাফকে ফোন দেয়। আনাফ ওর মা আর ফুফুর সাথে কথা বলছিল বিয়ের আ্যারেন্জমেন্ট নিয়ে। এমন সময় ফোন আসায় কিছুটা বিরক্ত হয় আনাফ। ফোন তুলে দেখে আকাশের নাম্বার। এতে আরো খানিকটা বিরক্ত হয়। আকাশ যে আদিয়ার ব্যাপারেই কিছু বলবে এটা বুজতে পারে। তাও বিরক্তি নিয়েই ফোনটা রিসিভ করে।

– হ্যা বল কি বলবি( আনাফ)

– তুই কি ব্যাস্ত।

-হ্যা একটু। কেন কি হইছে?

– আদিয়া অনেক অসুস্থ। হসপিটালে ভর্তি তুই ওকে দেখতে আসবি না।

– ও ম’রে গেল না কি হল তা নিয়ে তোর এত মাথা ব্যাথা কিসের। শোন আমি ব্যাস্ত আছি। তিন দিন পরে বিয়ে। পরশু হলুদ। জবের জয়েনিং লেটার চলে এসেছে তাই বিয়েটা শেষ করেই চলে যাব। তোর দাওয়াত আসিস কিন্তু। এমনি বেশি মানুষকে বলতে চাচ্ছি না।

– কি বললি যেন আমার মাথা ব্যাথা কিসের। তুই যেমন আমার ফ্রেন্ড তেমনি আদিয়াও আমার ফ্রেন্ড। তাই ওর অসুস্থতায় ওর পাশে দাড়ানো আমার দায়িত্ব। তবে তোর মতো স্বার্থপর বন্ধুর বিয়েতে আমি আসব না। ভালো থাকিস।

এরপর আকাশই ফোন কে’টে দেয়। তারপর বেড়িিয়ে যায় সেখান থেকে। দোকানে গিয়ে কিছু ফল কিনে, অনেক গুলা চিপস, চকলেট কিনে আবার হসপিটালে ফিরে আসে।

আদিয়ার মায়ের কাছে খাবারগুলো দিলে বলে বাবা এগুলা কেন এনেছ?

– আন্টি আদু ভাইকে চকলেটগুলা দেন ও খুশি হবে।

আদিয়ার মা এই অবস্থায়ও হেসে দিল। তার মেয়ে হচ্ছে এক পা’গ’লী। বাচ্চাদের মতো চকলেট, চিপস খায় আর এই ছেলে আরেক পা’গল সেও এসব নিয়ে চলে আসছে।

– বসো তুমি।

– না আন্টি এখন একটু আমাকে যেতে হবে। আবার আসব।

– আচ্ছা।

তারপর আদিয়াকেও বলে আকাশ চলে যায় সেখান থেকে।






পরের দিন আদিয়াকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়। বাসায় আসে। তাও কিছুটা উইকনেস ছিল। দুইদিন রেস্টএ থাকে। এরপর নিয়মিত মেডিসিন নেয়ায় সুস্থ হয় আদিয়া। এই কদিন অনলাইনেও যাওয়া হয়নি। কোনোভাবেই আনাফের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। আনাফ এগুলা বলছে ওর মস্তিষ্ক এখনো বিশ্বাস করতে পারতেছে না।

তার পরের দিন আকাশ আবার বাসায় আসে আদিয়াকে দেখার জন্য। আদিয়ার এখন একটু সুস্থ হওয়ায় নিজেই হেটে ড্রইং রুমে আসে। সেখানে বসে মাকে বলে একটু নাস্তা দেয়ার জন্য।
ওর মা নাস্তা তৈরি করতে গেলে সাথে সাথে ও আকাশকে জিজ্ঞেস করে –

– আকাশ আনাফের সাথে দেখা হয়েছিল তোর।

– কেন আদু ভাই। তোর পা’গ’ল প্রেমিক তোর সাথে কথা বলেনি বুজি।

– ধুর মজা করিস না৷ যা জিজ্ঞেস করছি বল।

– মজা কেন করব। তুই এত অসুস্থ তারপরও যে তোর খবর নিল না তার কথা যেনে তুই কি করবি।

– ও হয়ত জানেনা আমি অসুস্থ। নাহলে ও আসত।

– তুই আজীবন গাধীই রয়ে যাবি। শোন ও জানে যে তুই অসুস্থ। আমি নিজে ওকে বলেছিলাম। কিন্তু ও জানিয়েছে ও ভীষণ ব্যাস্ত ও আসতে পারবে না। কাল ওর হলুদ ছিল। আজ বিয়ে।

– তুই মজা করছিস তাই না। ও এমনটা করতে পারে না৷ আর এত তাড়াতাড়ি কীভাবে বিয়ে সম্ভব।

– চাইলে সব কিছুই সম্ভব। মেয়ে ওদের ফ্যামিলিরই। ওর ফুফাতো বোন হয় সম্পর্কে। এতদিন তো জানতামই না ওর কোনো ফুফু বা ফুফাতো বোন আছে। এখন বের হয়েছে।

– তোর বানিয়ে বানিয়ে মজা করা আর গেল না।

– আদিয়া তাকা আমার দিকে।

– কেন।

– শোন রাখাল বাঘ বাঘ বলে যখন চিল্লিয়েছিল তখন কিন্তু লোক ছুটে এসেছিল। বাট কোনো বাঘ পায়নি। কিন্তু যেদিন সত্যি বাঘ আসল সেদিন চিল্লালেও কেউ আর আসেনি।

– কি বোঝাতে চাইলি?

– আমি তোদের সাথে ফান করি। তাই তোদের আমার সব কথাই এমন মনে হচ্ছে। আমার সিরিয়াস কথাও তুই সিরিয়াস ভাবছিস না। মজা করে আমিও রাখালের মতো ভুল করেছি।

– এভাবে বলছিস কেন

– আচ্ছা তুই এখন আমার সাথে যাবি। যদি তোর কথা সত্যি হয় তাহলে ওদের বাসায় গিয়ে দুকাপ চা খেয়ে চলে আসব। আর যদি আমার কথা সত্যি হয় তাহলে বাসায় নিশ্চয়ই অনেক মানুষ থাকবে। সব মানুষের সামনে ওর সম্পর্কে সব বলে আসবি।

– আমার কথাই সত্যি হবে আমার বিশ্বাস।

– মানুষকে এতটা অন্ধ বিশ্বাস করা উচিত না।

এর মধ্যে আদিয়ার মা চলে আসে। তাই কথা অফ হয়ে যায়। আদিয়া ওর মায়ের কাছে বলে যে ও একটু বাইরে যেতে যায়।

– বাহিরে কেন যাবি?

– ঘরে বসে বোর হচ্ছি তাই।

আদিয়ার মা চোখ লাল করে তাকায় মেয়ের দিকে। আদিয়া ঢোক গিলে আর ভাবে কি এমন করল যে মা এমন রা’গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

– কি হয়েছে আম্মু?

– তুই মিথ্যা বললি কেন? তোকে কি মিথ্যা বলা শিক্ষা দিয়েছি। শোন তুই আমার সন্তান। আর মায়ের কাছে কিছু লুকানো উচিত না। সন্তানের ভালো খারাপ একমাত্র মা ই বোঝে। যাই হোক আমি তোদের কথা শুনেছি। তাতে যা বুজলাম আকাশের ভাষ্য মতে আজ তোর ভালোবাসার মানুষের বিয়ে। যদি এমনটাই হয় তাহলে তুই এখন সেখানে যাবি। আকাশের কথা সত্যি হলে তুই সবার সামনে ওর ব্যাপারে কিছু বলবি না। দুই গালে দুটো লাগিয়ে দিবি। তারপর মানুষের এমনি আগ্রহ বাড়বে। তখন ওর কৃতকর্ম গুলা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে আসবি।

আকাশ বেশ অবাক হয়ে যায় জায়েদা বেগমের কথা শুনে। কোন মেয়েকে তার মা এসব বলে। এটা ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। তাই জিজ্ঞেস করেই বসে

– আন্টি এগুলা আপনি কি বলছেন?

– অবাক হও কেন। শোন সন্তানের সাথে সব সময় রাগী ভাবে কথা বলব, সব সময় শাসন করব এমন মানুষ আমি না। সন্তানের সাথে মেশা উচিত বন্ধুর মতো। তাহলে কোন সমস্যায় পড়লেও তারা মায়ের সাথে শেয়ার করে। আর যদি শুধু শাসনই করি তাহলে শুধু ভয়ই পাবে।

– হুম আন্টি এটা আপনি ঠিক বলেছেন

– আচ্ছা যাও এখন। তবে তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।


এরপর দুজন বেরিয়ে যায় আনাফদের বাসার উদ্দেশ্যে।

এদিকে এই তিনদিন যাবত আনাফ বেশ ব্যাস্ত সময় কা’টা’চ্ছে। বিয়ে শাদীর ব্যাপার। একটু ব্যাস্ত তো থাকবেই। আজ আবার নারায়নগঞ্জ যেতে হবে। নিশিদের বাসা সেখানে। আর নিশির বাবার ইচ্ছে নিজের বাড়ি থেকেই মেয়েকে তুলে দিবে। তাই নিশিরা সেখানে চলে গেছে। এখন নিশিদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হবে। বিয়ের শেরওয়ানি, পাগড়ি পড়ে আনাফ রেডি। নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিল। না খারাপ লাগছে না। বেশ মানিয়েছে। এরপর বের হয়।

আদিয়াও ঠিক সেই সময়ই আনাফদের বাসায় এসে পৌছায়। আনাফ রেডি হয়ে কেবল নিচে নামছে। তখনি চোখ যায় আদিয়ার দিকে। হকচকায় আনাফ। আদিয়া ওর ঠিকানা কোথায় পেল ভেবে অবাক হয়। পরে পাশে আকাশকে দেখে নিশ্চিত হয় আনাফ। আদিয়া এগিয়ে যায় আনাফের দিকে। সামনে গিয়ে বলে একটা মেয়ের পুরো লাইফ এভাবে নষ্ট করার মানে কি?

কথাটা একটু জ্বোরে বলায় আশপাশের সবার নজর ওদের উপরেই পড়ে৷

– আস্তে কথা বলো আদিয়া।

– কিসের আস্তে বলব( আরেকটু জ্বোরে)। বিয়েটা তাহলে তুমি সত্যি করছ?

– তোমার কি মনে হয় আমি মিছিমিছি বিয়ে করছি। আমি সত্যি বিয়ে করছি। আর যাকে বিয়ে করছি সে তেমার মতো না৷ অনেক সুন্দরী, স্মার্ট। মূল কথা সে তোমার মতো এত বয়স্ক না। তোামকে বিয়ে করলে আমি সবার সামনে তোমাকে নিয়ে যেতে পারতাম না৷ তাহলে সবাই হাসত যে আমি একটা উনত্রিশ বছরের বুড়িকে বিয়ে করেছি।

আনাফের কথা শেষ করতে দেরী হয় কিন্তু গালের উপর দুটো পড়তে দেরী হয় না।

আনাফ গালে হাত রেখে আদিয়ার দিকে তাকায়।আদিয়া যে এমন কাজ করবে এটা ও ধারণা করতে পারে নি।

#চলবে

( গল্প পড়ে চলে যাবেন না। গল্প কেমন লাগল তাও একটু জানিয়ে যাবেন৷ কোন ভুল থাকলে তাও বলবেন শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here