তোর মায়ায় আসক্ত পর্ব -০৮

#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৮

আনাফের ছোট চাচা আরমান সিদ্দিকী তিনি আবার এলাকায় একটু প্রভাবশালী ব্যাক্তি৷ এতদিন ভাইয়য়ের বউ আর ছেলের সাথে এতটা ভালো সম্পর্ক না রাখলেও এখন যখন ভাইয়ের ছেলেকে একটা মেয়ে এসে অপমান করে গেল তা তিনি মেনে নিলেন না। তিনি ঠিক করলেন মেয়েটাকে একটা শিক্ষা দিবেন। তাই তিনি আদিয়ার বাবাকে ফোন করে বাসায় ডাকেন। আদিয়ার বাবা এসব বিষয়ে কিছুই জানত না।
তাকে বলা হয়েছিল আদিয়া কিছু একটা ঝামেলা করেছে। তাই তিনি তড়িঘড়ি করে সেখানে যান। সেখানে যাওয়ার পর তাকে বেশ অপমান করা হয়। বলা হয় কেমন মেয়ে জন্ম দিয়েছেন যে একটু শিক্ষা দিতে পারেন নি। মানুষের বাড়িতে এসে তাদের বিয়ে ভেঙে দিয়ে চলে যায়৷

আজমাইন সাহেব বলেছিলেন যে তার মেয়ে শুধু শুধু এমনটা করতে পারেন না। কিন্তু তার কথা কেউ পরোয়া করেনা। আনাফের পরিবার এমনভাবে আজমাইন সাহেবের সামনে উপস্থাপন করেন যেন সব দোষ আদিয়ারই ছিল।

আজমাইন সাহেবের নিজের মেয়ের উপর বিশ্বাস আছে। শুধু শুধু তার মেয়ে এমন বেপরোয়া আচরন করবে না। তাই তিনি বলেন যে তিনি আগে আদিয়ার সাথে কথা বলে দেখতে চান।

কিন্তু তার কথার বিপরীতে ক্ষেপে উঠে আরমান সিদ্দিকী। তিনি বলেন কোন দেখা দেখির প্রয়োজন নেই। দুই দিনের ভিতর এলাকা ছেড়ে যাবেন। নয়ত আপনার মেয়ের এমন হাল করব না যে বাইরে মুখ দেখাতে পারবেন না। আপনার মেয়ে আমাদের সম্মান নষ্ট করেছে তাই তার হাল ভয়াবহ হবে।

বাসায় ডেকে এনে এভাবে হুমকি দেওয়ায় বেশ অপমানিত বোধ করেন আজমাইন সাহেব। কিন্তু তার সামনে যেভাবে উপস্থাপন করেছে তাতে তার মেয়ের দোষই বেশি। তাই তিনি এ যাত্রায় চুপ করে গেলেন। জানালেন তারা যা চায় তাই হবে।

আজ আদিয়ার জন্য অন্যের কাছে অপমানিত হয়ে আদিয়ার উপর রাগ তড়তড় করে বেড়ে যায় আজমাইন সাহেবের। তাই রাগের বসে বাসায় এসেই মে’রে বসেন আদরের মেয়েকে। যেখানে কখনো মেয়েকে বকা অবধি দেননি সেখানে আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগায় সেই মেয়েকেই মে’রে বসেন তিনি। পরে মেয়ের এমন কাদো কাদো চেহারা দেখে বেশ খারাপ লাগে তার। তার মনে হয় আগে আদিয়ার থেকে মূল ঘটনা জানা উচিত ছিল। তা না করে তিনি এমন কাজ করে বসেছেন।
তারপরও নিজেকে সংযত করে নিয়ে আজমাইন সাহেব বাসা চেঞ্জ করার কথা জানান। তাও আবার দুই দিনের ভিতরেই।

– বাবা তুমি তাদের ভয়ে বাসা চেঞ্জ করবে।

– সে বিষয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। যা করতে বলেছি করো। সব গোছগাছ শুরু করো।

– বাবা এমন কাপুরুষের মতো পালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না।

– আদিয়া আমি তোমার বাবা হই। কোনো বাবা মা কখনোই তার সন্তানের খারাপ চায়না৷ যেই মানুষটা আজ হুম’কি দিয়েছে তাকে আমি চিনি। তিনি মোটেই ভালো মানুষ নয়৷ তিনি যখন বলেছেন তাতে তোমার ক্ষতি তিনি করবেনই। সামনে নিশ্চিত বিপদ জেনেও তোমার ক্ষতি করতে আমি এখানে থাকতে পারব না।

– কিন্তু দুই দিনের ভিতর আমরা বাসা কোথায় পাব ( জায়েদা বেগম)

– অনেক কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। এই শহরে একটা বাসা পাওয়া এতটা সহজ নয়। ঢাকার শহরটা এমনই। মানুষ আপনাকে দু বেলা দু মুঠো ভাত খাওয়াতে না করবে না কিন্তু রাত্রি যাপনের জন্য একটু জায়গা চাইলে তা দিতে হিমশিম খেয়ে যাবে। সে যাই হোক বাদ দাও আমি দেখি কী করা যায়।

– হুম। যাও। কিন্তু ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে গেলে পারতে।

– এসে খাব।

আদিয়া আর কিছু বলেনা। চুপ করে যায়। বাবা মা দুজনের কথায় এটা স্পষ্ট যে তারা বাসা ছাড়বেই ছাড়বে। তাই ও আস্তে করে নিজের রুমে চলে যায়। বাবা সারাদিন অফিস করে এসে এখন আবার কিছু না খেয়েই বেড়িয়ে গেছে এতে বেশ খারাপ লাগে আদিয়ার। আজ ওর জন্যই এত কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে বাবাকে। তাই ও বাবার কষ্ট কিছুটা কমাতে তাকে হেল্প করার কথা ভাবে। আদিয়া আকাশকে ফোন দেয়।

– হ্যা আদুভাই বল।

– বিপদে পড়েছিরে দোস্ত।

– বিপদ তোর পিছু ছেড়েছিল কবে বল তো।

– মজা করিস না।

– মজা করছি না। কি বলবি বল।

– দুই দিনের মধ্যে বাসা চেঞ্জ করতে হবে। কীভাবে কি করব কিছু বুজতেছি না। পারলে হেল্প কর।

– কেন এই বাসায় কি হইছে।

– আনাফের ফ্যামিলি ঝামেলা করেছে।

– মানে।

এরপর আদিয়া সব বলে আকাশকে।

– আচ্ছা আমি দেখতেছি। টেনশন নিস না।

– আচ্ছা।







আকাশ একজনকে ফোন করে। সাথে সাথে ফোন রিসিভ হয়। ব্যাক্তিটি যেন ওর অপেক্ষাতেই ছিল।

– হ্যা আকাশ বলো৷

– ভাই বলছিলাম কি যদি একটা–

– হ্যা আমি বুজতে পেরেছি। তুমি কেন ফোন দিয়েছ তাও জানি আমি। তুমি চিন্তা করো না আমার এখানে সেকেন্ড ফ্লোর খালি আছে একদম। শুধু একটা ফ্লাটে আমি থাকি। বাকি সব ফাকা পড়ে আছে। তাদের আপত্তি না থাকলে এখানে উঠতে পারবে।

– ভাই কীভাবে কী?

– কী?

– এইযে আপনি সব জানেন কীভাবে?

– তুমি কী ভেবেছ আমি সবকিছু ভুলে গেছি। সব মনে আছে আমার। আমি সব সময়ই তার খেয়াল রাখতাম আর আনাফের সব খোজও আমার কাছে আছে।

– কী বলছেন এসব। আপনি যদি খেয়ালই রাখেন তাহলে সামনে আসলেন না কেন কখনো।

– তখন সঠিক সময় ছিলনা তাই।

– এখন কি সঠিক সময় এসেছে ভাই।

– আরে না কি যে বলো। সঠিক সময় আসলে পাখি নিজেই এসে ধরা দিবে।

– ভাই আনাফকে আপনি কিছু বললেন না যে?

– আমার পাখি যে তাকে ভালোবাসত। তার ভালোবাসা অসম্মান করি কীভাবে বলো।

– আদিয়া আনাফকে পছন্দ করে জেনেও আপনি ওদের আলাদা করেননি।আপনি এতগুলো বছর নতুন কোন সম্পর্কেও জড়ালেন না। অন্য একজনকে ভালোবাসে জেনেও আপনি কেন এত খেয়াল রাখতেন?

– আকাশ তুমি এত কিছু বুজবে না। ভালোবাসলে তাকে যে নিজের করে পেতে হবে এমন কোন কথা নেই। দূরে থেকেও ভালোবাসা যায়। ভালোবাসার মানুষটা যদি ভালো থাকে এতেই শান্তি। তবে যার জন্য সেই ভালোবাসার মানুষের চোখের জল ঝরছে তাকে আমি ছাড়ব না।

– ভাই

– এখন এসব কথা ছাড়ো। শোনো তুমি আদিয়ার বাবা মায়ের সাথে কথা বলো। তাদেরকে কাল এসে বাসা দেখতে বলো। আর আমার পরিচয় তুমি তাদেরকে দিবে না। মানে এই বাসাটা যে আমার তা তুমি তাদেরকে জানাবে না।

– তাহলে তারা কথা বলবে কার সাথে।

– আমি আমার দাদুর সাথে কথা বলে রাখব। তিনিই কথা বলবেন তাদের সাথে। দাদু কাল এই বাসায়ই থাকবে। আমি থাকবনা কিন্তু। তুমি এদিকটা ম্যানেজ করো কেমন।

– জ্বি ভাই।




আকাশ আজমাইন সাহেবের সাথে কথা বলে। তাকে বাসার কথা জানায়। একে তো দুই দিনের মধ্যে বাসা খুজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছিল এমন সময় এই বাসার খোজ পেয়ে বেশ খুশিই হন আজমাইন সাহেব। তাই তিনি ঠিক করেন কালকেই দেখতে যাবেন।

রাতে বাসায় ফিরলে জায়েদা বেগম জিজ্ঞেস করে কিছু করতে পারল কিনা। আজমাইন সাহেব বলে বাসার খোজ পেয়েছে কাল দেখে এসে জানাবে যে থাকবে কিনা। জায়েদা বেগম বলে আপাতত উঠি। পরে নাহয় চেঞ্জ করে নিবনে। আজমাইন সাহেবও সায় জানায় জায়েদা বেগমের কথায়।

রাতে খেতে বসলে আদিয়া আসেনা সেখানে। জায়েদা বেগম এসে ডেকে যায়। আদিয়া বলে খাবে না। বেশ কয়েক বার ডাকার পরও যখন আসেনা তখন তিনি বিরক্ত হয়ে চলে যান। আজমাইন সাহেব ঠিকই বুজতে পারেন মেয়ে কেন খেতে আসেনি। তাই তিনি না খেয়ে একটা প্লেটে ভাত আর তরকারি নিয়ে মেয়ের রুমের সামনে যায়। তিনি ডাক দিলে আদিয়া বেশি কিছু না বলে দরজা খুলে দেয়। তার হাতে খাবার দেখে অবাক হয় আদিয়া। ওর বাবা ওর জন্য খাবার নিয়ে আসছে এটা যেন আমাবস্যার চাদ। তিনি এতদিন কেমন যেন একটি টাইপের ছিলেন। মেয়ের সাথে বেশি আহ্লাদও করতেন না আবার কখনো বকাঝকাও করতেন না। কিন্তু আজ শাসনও করেছে। আবার খাবারও নিয়ে আসছে। বাবার খাবার নিয়ে আসায় আদিয়া খুশিও হয়।

বাবা খাবার মেখে মুখের সামনে ধরলে আদিয়া কোনো ভনিতা না করে ভদ্র মেয়ের মতো খেয়ে নেয়। আর মনে মনে উপরওয়ালাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দেয় এমন দুজন বাবা মা দেয়ার জন্য। এমন দুজন বাবা মা থাকলে লাইফে আর কি চাই।





যেই কথা সেই কাজ। পরদিন আজমাইন সাহেব আকাশের সাথে বাসা দেখতে যান। গিয়ে বাসায় কলিং বেল দিতেই সাথে সাথে একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দিয়ে ভিতরে আসতে বলে চলে যায়। আজমাইন সাহেব ভিতরে গিয়ে দেখতে পান একজন লোক সোফায় বসে আছেন। পড়নে তার একটা সাদা রঙের পাঞ্জাবি। চুল গুলো বেশ খানিকটা পেকে গিয়েছে। তাও সুন্দর ভাবে গোছানো চুলগুলো। স্টেট হয়ে বসে আছেন সেখানে। তাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে তিনি আগেও অনেক গোছানে স্বভাবের ছিলেন। সামনে এগিয়ে গিয়ে লোকটাকে সামনা সামনি দেখে অবাক হয়ে যায় আজমাইন সাহেব। মুখ থেকে বেরিয়ে যায়

– এসিপি মাহাবুব স্যার আপনি এখানে।

– আরে আজমাইন যে। তুমি এখানে কেন সেটা বলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here