#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৯
এসিপি মাহাবুব আলমের সামনে বসে আছে আজমাইন সাহেব।
-আঙ্কেল এতদিন পরে আপনাকে এভাবে দেখব ভাবিনি।
– আমিও ভাবিনি। অনেক দিন দেখিনা তোমাদের। সেই তোমার বাবা মা’রা যাওয়ার পরেতো আমাদের ভুলেই গেলে।
– না আঙ্কেল সেরকম কিছু নয়। আসলে বাবা মা’রা যাওয়ার পরে সংসারের চাপ তো আমার মাথায়ই পরেছে। তাই কাজের চাপে আর কোথাও বের হওয়া হয়নি।
– সে কথা বললে হবে। কাজের ফাকে ফাকে মাঝে মাঝে একটু ব্রেক নেয়া উচিত। নিজেকে সময় দেয়া উচিত। ফ্যামিলিকে সময় দেয়া উচিত।
– জ্বি আঙ্কেল তা ঠিক বলেছেন।
– তোমার মায়ের কি খবর? কোথায় তিনি?
– তিনি আছেন মোটামুটি। কিছুদিন যাবত শরীরটা একটু খারাপ যাচ্ছে। তিনি আছেন গ্রামে।
– তোমাদের সাথে থাকেন না কেন?
– তিনি এমন ছোট বাসায় থাকতে পছন্দ করেন না। তার দম বন্ধ হয়ে আসে। ভাবছি এখন একটা বড় বাসা নিয়ে তাকে নিয়ে আসব আমাদের কাছে।
– তবে নিয়ে নাও নতুন বাসা। আমাদের এখানে এই ফ্লোরটা কিন্তু ফাকা পড়ে আছে। তেমরা যদি চাও তাহলে
– জ্বি আঙ্কেল সে বিষয় কথা বলতেই এসেছিলাম এখানে। কিন্তু এটা আপনার বাসা সেটা জানতাম না। আসলে আঙ্কেল আগের বাসাটা আমাদের চেন্জ করতে হবে।
– এটা তো আমার বাসা নয়।
মাহাবুব আলমের কথা শুনে একটু অবাক হয় আজমাইন সাহেব।
আজমাইন সাহেবের হকচকানো চেহারা দেখে হেসে দেন মাহাবুব সাহেব। তারপর বলেন যে এ বাসা তার ছোট নাতিন এর। এরপর আজমাইন সাহেব কিছুটা সস্তি পায়।
– তোমাদের যখন মন চায় তখনই বাসায় শিফট করতে পার।
– জ্বি আঙ্কেল। আসলে আমরা চাচ্ছিলাম কালকেই আসতে।
– আরে বাবা এত আসলে নকলে করার কি আছে। আমাকে তোমার পর মনে হয়।
-সেরকম কিছু না আঙ্কেল। আচ্ছা আমরা তাহলে কালই আসি।
এরপর আরো খানিক্ষন কথা বলে দুজন। এরপর বাসায় আসে আজমাইন সাহেব। তিনি পরিকল্পনা করছেন আজই তিনি মালপত্র এ বাসায় শিফট করবেন।
।
।
।
।
।
পরের দিনই নতুন বাসায় চলে আসে আদিয়ারা। অনেক দিনের পুরনো বাসা ছেড়ে আসায় আদিয়া আর আলভির কিছুটা মন খারাপ ছিল কিন্তু এখানে আসার পর সেটা আর নেই। বাসাটা বেশ পছন্দ হয়েছে আদিয়াদের। বাসার সামনে মন কেড়ে নেয়ার মতো একটা ফুলের বাগান আছে। এ বাসায় আর কি আছে না আছে সেসব দিকে মনযোগ নেই আদিয়ার। ও দেখতে গেছে ওর বেলকনিতে গাছ লাগানোর মতো যথেষ্ট জায়গা আছে কিনা। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে বেলকনিতে তেমন একটা জায়গা নেই। তাই সেই রুম টায় ও থাকতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে অন্য রুমের বেলকনিতে গিয়ে দেখে সেখানে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। তাই খুশি হয়ে যায় আদিয়া। ওর সাথে করে নিয়ে আসা গাছ গুলো নিয়ে বেলকনিতে রাখতে থাকে। সবগুলো গাছ বসানো শেষ হলে রুমে যাওয়ার সময় খেয়াল করে হাতের বাম দিকে এমনি বড় একটি বেলকনি দেখা যাচ্ছে। সেখানে এক পাশে একটি দোলনা বসানো। আর পুরো বেলকনি জুড়ে গোলাপ, ডালিয়া, ক্যাকটাস, সাইকাস ইত্যাদি গাছে পরিপূর্ণ। যাক ওপাশের মানুষটাও তাহলে ফুল পছন্দ করে। এটা ভেবে আবারও খুশি হয়ে যায় আদিয়া।
এরপর রুমে চলে যায় আদিয়া। গিয়ে জায়েদা বেগমের সাথে কাজে হাত লাগায়। বাসা চেঞ্জ করা একটা মহা ঝামেলা। সব কিছু আবার ঠিক ঠাক করতে বেশ সময় লাগে।
।
।
।
।
।
সায়ন পুরোটা দিন অফিসে ছিল। তাই আর বাসায় আসা হয়নি। আর বাসায় নতুন ভাড়াটিয়াদের সাথেও পরিচয়টা হয়নি। তাই বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আদিয়াদের বাসায় বাসায় আসে। বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দেয় আলভি।
– এই কে তুমি? ( আলভি)
সায়ন একটু মজা করার জন্য নিজের পরিচয় না দিয়ে উল্টো জিজ্ঞেস করে
– এই ছেলে কে তুমি?
– আমি কে মানে। আমি এই বাসার ছেলে তুমি কে?
– আমিও তো এই বাসার ছেলে তুমি কে? ( সায়ন)
– তুমি এই বাসার ছেলে মানে। তুমি কি বাড়িওয়ালা।
– হা একটু ওরকমই।
– ধূর আমি বিশ্বাস করি না। তোমার মতো ছেলে বাড়িওয়ালা বিশ্বাস করলাম না।
আলভির কথায় ভেবাচেকা খেয়ে যায় সায়ন। এাই ছেলে বলে কি। তারপর আবার জিজ্ঞেস করে
– আমাকে দেখে তোমার বিশ্বাস হলো না কেন?
– তুমি যদি বাড়িওয়ালা হও তাহলে তুমি এত স্লিম কীভাবে। তোমার মাথায় চুল আছে কেন। তোমারতো ভুড়িওয়ালা, টাকলু হওয়ার কথা ছিল।
আলভির কথায় হো হো করে হেসে দেয় সায়ন। তারপর আলভিকে জিজ্ঞেস করে তুমি বাড়িওয়ালাদের সম্পর্কে তোমার এসব ধারণা কেন?
– আদিয়া আপু বলেছে বাড়িওয়ালারা টাকলু, ভুড়িওয়ালা হয়। আমাদের আগের বাড়িওয়ালাও তো তেমনই ছিল।
– তা তোমার বোন আর কি কি বলেছে।
– অনেক কিছু। সেগুলো বলব কেন তোমাকে।
– আচ্ছা বাহিরেই দাড় করিয়ে রাখবে নাকি।
– দাড়াও একটু আমি আম্মুকে ডাক দিয়ে আসি।
এরপর জায়েদা বেগম আসলে সায়ন সালাম দেয় তাকে।
– আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
– তুমি কে বাবা
– হ্যা আন্টি আমি সায়ন।
– ও আচ্ছা। তাহলে তুমিই সায়ন। তোমার কথা মাহবুব আঙ্কেল বলেছিল।
জ্বি আন্টি সারাদিন অফিসে ছিলাম তাই আপনাদের সাথে পরিচয় হলো না। তাই এখন চলে আসলাম।
– হ্যা বাবা বসো। আমি একটু আসতেছি।
– আন্টি আপনার এখন একদম কোনো ঝামেলা করার প্রয়োজন নেই। আমি আবার আসব৷ এখানেই তো আছি।
– না বাবা কোনো ঝামেলা না। তুমি বসো।
জায়েদা বেগম চলে গেলে সায়ন আলভিকে ডাক দেয়।
– ওই মটু।
আলভি রেগে কটমট করে তাকায় সায়নের দিকে।
– মটু বলো কেন। ভালোভাবে কথা বল।
– আচ্ছা সম্মানিত মাংশবিশিষ্ট প্রানী একটা কথা ছিল।
এবার বেশ রেগে যায় আলভি।
– এই তুমি নাম ধরে ডাকতে পারনা। এসব কি ভাষা। ভালোভাবে কথা বলতে শিখনি।
– আরে তোমার নাম জানিনা বলেই তো এসব বলে ডেকেছি।
– আমার নাম আলভি।
– আচ্ছা আলভি একটা কথা ছিল।
– না তোমার সাথে আর কোনো কথা নেই।
এরপর সায়ন চকলেট বের করে দেয় আলভিকে। আলভি সবগুলো চকলেট নিয়ে নিতে যায়।
– এগুলো নিতে হলে তোমার আমার সাথে কথা বলতে হবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– আচ্ছা আদিয়া কোথায়।
– আপি তো রুমে। কিন্তু তুমি আমার নাম জানোনা আপির নাম জানলে কীভাবে।
সায়ন জিহ্বায় কামড় দেয়। তারপর একটু ভেবে উত্তর দেয়
– তোমার বোন আমার কলেজেই পড়ত। তাই তোমার বোনকে চিনি।
– আম্মুকে বলি।
– এই না না আম্মুকে বলো না।
– তাহলে আরো চকলেট দাও। চকলেট দিলে বলব না।
সায়ন চকলেট বের করে দেয় আরো।
– আচ্ছা তুমি যদি আমার ফ্রেন্ড হও তাহলে তোমাকে আমি প্রতিদিন চকলেট দিব।
– তুমি তো অনেক বড়।
– সিনিয়র জুনিয়র ফ্রেন্ডশিপ।
– ওকে ডান।
– আচ্ছা ফ্রেন্ড বলোতো তোমার আপু কোথায়?
– আপু রুমে। পড়ছে।
– কি পড়ছে এখন?
– ও তো অলস। ঘুম থেকে লেইট করে ওঠে আর অফিসে লেইট করে যায়। তাই একটা চাকরিও ওর টিকে না। এখন আবার নতুন চাকরির জন্য পড়াশোনা করছে।
– ও আচ্ছা।
– হ্যা। আচ্ছা তুমি তো আমার ফ্রেন্ড তাইনা। একটা কথা বলি।
– একটা কেন যত ইচ্ছা বলো।
– তুৃমি যদি ভাবো ওকে পটাবা সেটা ভুলে যাও। ও কিন্তু ধানী লংকা।
আলভির কথায় হেসে দেয় সায়ন। নিজের বোনের নামে নিজেই কি সুন্দর দোষ বলছে। এরমধ্যে জায়েদা বেগম চলে আসেন তাই দুজনই চুপ করে যায়।
– কি নিয়ে কথা হচ্ছে?
– তেমন কিছু না আম্মু। ভাইয়া আমাকে চকলেট দিচ্ছে তাই।
– ওহ আচ্ছা।
এরপর সায়ন বেশ খানিকটা সময় বসেন সেখানে জায়েদা বেগমের সাথে কথা বলেন। কিন্তু এর মধ্যে আদিয়া একবারও রুম থেকে বের হয় না। এরপর সায়ন চলে যায় সেখান থেকে।
।
।
।
।
।
রাতে রুমে বসে আদিয়া বই দেখতেছিল তখনই গিটারের টুংটাং শব্দ কানে ভেসে আসে। গিটারের শব্দটা বেশ মিষ্টি লাগছিল। আদিয়ার কেন যেন মন চাচ্ছিল আর একটু স্পষ্টভাবে এই সুরটা শুনতে। তাই আস্তে আস্তে গিয়ে বেলকনির দরজা খুলে দেয়। এবার সুরটা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। সুরটা পাশের বেলকনি থেকেই আসছে এটা বেশ বুজতে পারে আদিয়া। তাই ভালোভাবে তাকায় পাশের বেলকনিতে। কিন্তু পুরো বেলকনি অন্ধকারাচ্ছন্ন।
চাদের আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে দোলনাটা দুলছে ধীরে ধীরে। সেখানে বসেই কেউ গিটারে টুংটাং সুর তুলছে। আদিয়ার বেশ ভালো লাগে সুরটা তাই বেলকনিতে দাড়িয়েই শুনতেছিল। এমন সময় রুম থেকে ফোন বেজে ওঠার শব্দ হয়। আদিয়ার ধ্যান ভাঙে। ফোনের শব্দে বেশ বিরক্ত হয় আদিয়া। ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিকে মনে মনে দু চার কথা শুনিয়েও দেয়। ততক্ষণে ফোন একবার বাজতে বাজতে কে’টে যায়। আবার বেজে ওঠে। আদিয়া এবার রুমে যায়। কার আবার এত প্রয়োজন পড়ল।
#চলবে