তোর মায়ায় আসক্ত পর্ব -১১

#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১১

আদিয়ার মনে হল রুমে কেউ ছিল। বেলকনিতে গিয়ে দেখল কেউ নেই। পুরো রুম খুজল না কোথাও কেউ নেই। ভয় পেয়ে যায় আদিয়া। বেলকনির দরজা ভালোভাবে লাগিয়ে দেয়। দোয়া দুরুদ পরে বুকে ফুক দিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম আর চোখে ধরা দেয়না। এ পাশ ওপাশ করতে করতেই বাকী রাত টুকু পার করে দেয় আদিয়া।





সকালে জায়েদা বেগম, আজমাইন সাহেব ও আলভির সাথে একসাথে খাবার খেতে বসে আদিয়া।

– আদিয়া বলছিলাম কি তোমার আর চাকরি করার প্রয়োজন নেই( আজমাইন সাহেব)

– কেন বাবা? চাকরি কেন করব না?

– এমন তো নয় যে তুমি চাকরি না করলে আমাদের চলবে না।

আজমাইন সাহেবের কথার প্রতিবাদ করেন জায়েদা বেগম। বলেন এসব কি কথা বলছ তুমি। আর চাকরি কেন করবে না। লেখা পড়া শেষ করেছে এখন বসে বসে কি করবে। তাও বাহিরে থাকলে মনটা ভালো থাকবে।

– ওকে বসে থাকতে তো বলিনি। এখন একটা ভালো পাত্র থেকে তাকে পাত্রস্থ করে আমি নিশ্চিত হতে চাচ্ছি। আশা করছি এবার আর তোমাদের আপত্তি থাকবে না।

এত বড় একটা ঝামেলার পরে এ বিষয় আর কথা বাড়াল না জায়েদা বেগম। আনাফের এমন কর্মকাণ্ডের পর ওই ছেলের নাম শুনতেও আর তার ইচ্ছে করেনা। তাই এবার আজমাইন সাহেবের কথায় তিনিও সম্মতি জানালেন। আদিয়া কিছু না বলে উঠে গেল সেখান থেকে।





আদিয়া রুমে বসে ছিল তখন মাহি ফোন দেয়।

– কিরে আদু ভাই কেমন আছিস?

– এইত দোস্ত। তোর কি অবস্থা?

– ভালো। শোন কথা ছিল তোর সাথে।

– হ্যা বল।

– আমি বাবার এখানে আসছি। তুই দেখা কর আমার সাথে।

– আমাদের বাসায় চলে আয়।

– না রে এখন তোর বাসায় যাব না। আন্টিকে বলে কফিশপে চলে আয়।

– আচ্ছা আমি আম্মুকে বলে দেখি।

– বলে দেখি না বলে রাজি করিয়ে ফোন দে আমাকে।

– হুম।

এরপর আদিয়া ফোন রেখে জায়েদা বেগমের কাছে যায়। তিনি কিচেনে কাজ করছিলেন। আদিয়া গিয়ে তার পাশে দাড়ায়।

– কি করছ আম্মু?

– দেখতেই পাচ্ছিস রান্না করছি আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন।

– আচ্ছা তোমাকে কি সবজি কে’টে দিতে হবে।

– না তুই যা এখান থেকে। আমিই করতে পারব।

– দেই না মা।

– না লাগবে না।

– আচ্ছা কোনো ময়লা বাসন আছে যেগুলো পরিস্কার করতে হবে?

– না নেই। তুই কিসের বাহানায় এসেছিস সেটা বল।

– আমি আবার কিসের বাহানায় আসব। কোনো বাহানা না।

– টাকা লাগবে?

– না আম্মু কি যে বল। টাকা দিয়ে কি করব।

– তাহলে।

– একটু বাহিরে যাব।

– কি কাজ।

– মাহির সাথে দেখা করতে যাব। ও আসছে এখানে।

– ওকে আমাদের বাসায় আসতে বল।

– আসতে চাচ্ছে না। কফিশপে দেখা করতে চাইছে।

– আচ্ছা যা।কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস। আর একটু সাবধানে থাকিস বুজলি। সময়টা এমনি ভালে যাচ্ছে না। তার উপর আনাফের ফ্যামিলির হুমকি। ভয় লাগছে আমার।

– ওফফ মা এত ভয় পেও না। কিছু হবে না।

– হুম। তাও সাবধানে থাকিস।

– আচ্ছা মাদার। এখন আমি যেতে পারি কি?

– হ্যা যা।

আদিয়া খুশি হয়ে রুমে এসে মাহিকে ফোন করে। বলে আম্মু পারমিশন দিয়ে দিয়েছে। তুই চলে আয়।




আদিয়া আগে থেকেই এসে বসে আছে। ওদিকে সব সময়ের জন্য লেট করে আসা লেট লতিফ এখনো আসেনি। আদিয়া একা একা বসে বসে কফি খাচ্ছে আর ফোন দিতেছে মাহিকে। মাহি ফোন তুলতেছে না। তাই বিরক্তিতে চ শব্দ করে আদিয়া। এমন সময় কোথেকে কেউ একজন হুরমুর করে এসে আদিয়ার সামনে বসে পড়ে। এভাবে হঠাৎ সামনে কেউ বসে পড়ায় চমকে ওঠে আদিয়া। ভাবে মাহি এসেছে। কিন্তু তার আশায় পানি ঢেলে দেয় আনাফ। কেননা সামনে মাহি নয় আনাফ ছিল।

– তুই এখানে কি করছিস?

– আদিয়া তুমি এভাবে তুই তোকারি করতেছ আমাকে?

– এর থেকে ভালো ব্যাবহার কি তুই ডিসার্ভ করিস।

– কেন ডিসার্ভ করি না। আমি কি এমন করেছি।

– হাহ তুই কিছু করিস নি। কি করিস নি সেটা বল। তোর জন্য কি না করেছি। কি কম ছিল আমার বল। তাও তো আমার লাইফটা বরবাদ করে দিলি। সেসব কথা৷ বাদ চলে যা এখান থেকে।

– কি বললে আমি তোমার লাইফ বরবাদ করে দিয়েছি। না তুমি আমার লাইফ বরবাদ করে দিয়েছ। সেদিন বাড়িতে গিয়ে এতগুলো মানুষের সামনে অপমান করে এসেছ। তোমার জন্য আমার ফুপিরা আমাদের সাথে কথা বলে না। তাদের সাথে আবার সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে।

– তোদের সাথে তোর ফুপিদের সম্পর্ক ভালো ছিল কবে। শুরুতে তো তোকে দেখতেই পারত না। মধ্যে কোন একটা কারনে হয়ত একটু মিশেছিল এখন আবার তোর ক্যারেক্টার লুস দেখে আবার সরে গেছে। তোর মতো স্বার্থপরদের এমন একা থাকাই ঠিক আছে।

– আদিয়া ডোন্ট ক্রোস ইওর লিমিট।

– আমি আমার লিমিট ক্রস করিনি। তুই সেধে সেধে নাচতে নাচতে আমার সামনে চলে এসেছিস।

ওদের মধ্যে কথা কা’টা’কা’টি এক পর্যায়ে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। আনাফ রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আদিয়া চুল মুঠো করে ধরে। এতক্ষন এক জোড়া চোখ সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছিল। আদিয়ার চুলে হাত দেয়ায় রাগে ধপ করে জ্বলে ওঠে চোখ জ্বোড়া। লাল হয়ে যায় চোখের মনি। তিনিও রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে হাতের কাছে থাকা একটা গ্লাস ছুড়ে মা’রে আনাফের হাত বরাবর। গ্লাসটা গিয়ে ঠিক আনাফের হাতেই লাগে। দূর থেকে ছুড়ে দেয়ায় একটু জোড়েই লাগে গ্লাসটা। আনাফ ব্যাথায় আহ শব্দ করে আদিয়ার চুল ছেড়ে দেয়। গ্লাসটা নিচে পড়ে নিমিষেই ভেঙে কয়েকটি কাচের টুকরায় পরিনত হয়। শপে থাকা সবাই ওদের দিকে তাকায়। আনাফ আদিয়া দুজনেই ওদের ঠিক পেছনের টেবিলটার দিকে তাকায়। সেখানে শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে আনাফ। যেন কিছুই হয়নি সেরকম একটা ভাব নিয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে।

সায়নকে এখানে দেখে রেগে যায় আনাফ। রেগে বিচ্ছিরি ভাষায় একটা গালি দেয় আদিয়াকে। তারপর বলে এখানেও নাগরকে সাথে নিয়ে এসেছিস। বেয়াদব।

আনাফের মুখে এমন বিচ্ছিরি কথাগুলো শুনে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায় সায়ন। এগিয়ে আসে আদিয়াদের টেবিলের দিকে। আদিয়া ওর ওমন রক্তচক্ষু দেখে ভয়ে ঢোক গিলে। আনাফ ওদের সামনে এসে কিছুই বলে না। আস্তে নিচের দিকে ঝুকে যায়। সবাই বোঝার চেষ্টা করছে কি করতে চাইছে এই ছেলে। সায়ন নিচ থেকে একটা কাচের টুকরো তুলে হাতে নেয়। আনাফের হাত টেবিলের উপরেই রাখা ছিল। যেই হাত দিয়ে আদিয়ার চুলের মুঠি ধরেছিল সেই হাত বরাবর কাচের টুকরাটা চেপে ধরে সায়ন। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় সেখান থেকে। আদিয়া ভয়ে চোখ ঢেকে নেয়।

– আদিয়া তুমি চলে যাও এখান থেকে।

– আপনি এখানে কেন এসেছেন। আপনার অফিস যাননি কেন। আপনি এমন আচরনই বা করছেন কেন?

– আদিয়া আমি তোমার এত কথার জবাব দিতে বাধ্য নই। কাউকে তার কাজের যাথযথ শিক্ষা দিতে হয় সেটাই দিচ্ছি। তুমি চলে যাও এখান থেকে।

– না আমি যাব না।

– তুমি যাবে নাকি তোমাকেও এমন কিছু করতে হবে ( চিল্লিয়ে)

আদিয়া এমন চিল্লানিতে একটু ভয় পায়। এর আগে কলেজে অনেকবার আনাফকে ফেস করছে আদিয়া। আনাফের হাত থেকে অনেককে ছাড়িয়েও এনেছে। এই আনাফকেও তো একবার এনেছিল। কিন্তু তখন আনাফের এমন রাগী চোখ দেখেনি আদিয়া। আর তখন আদিয়া ছাড়াতে গেলেও আদিয়াকে এমন ধমক কখনো দেয়নি সায়ন। আজ একটু বেশিই ভয়ঙ্কর লাগছে সায়নকে। আদিয়া আর কথা বাড়ায় না। পার্সটা নিয়ে আস্তে বেড়িয়ে যায়। আর মনে মনে মাহির চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করতেছে।

আদিয়া বেড়িয়ে যেতেই আনাফও চেতে ওঠে। ওর হাতে এখনো কাচের টুকরো ঢুকানো। বাজে ভাষায় গালি দিতে থাকে। তখনই আনাফের ইশারায় পাশের টেবিলগুলো থেকে কয়েকজন লোক রোবটের মতো এগিয়ে এসে আনাফকে ধরে। আনাফ বুজতে পারে সায়ন একা আসে নি। সাথে গার্ডস নিয়ে এসেছে। তাই থেমে যায় আনাফ।
সায়নের চোখের ইশারায় গার্ডসগুলো আনাফকে টেনে হিচড়ে বাহিরে নিয়ে যায়। সায়ন এগিয়ে গিয়ে সব কিছুর বিল পে করে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।

আদিয়া বাইরে বেরিয়ে দেখতে পায় মাহি মাত্র রিকশা থেকে নামছে। দৌড়ে যায় সেখানে আদিয়া। রাস্তার মধ্যেই জড়িয়ে ধরে মাহিকে। জড়িয়ে ধরে হুহু করে কান্না করে দেয়। মাহি ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। জানতে চায় কি হয়েছে।
আদিয়া কোনো জবাব দেয় না। হিচকি টেনে কান্না করছে। শুধু বলে বাসায় যাব বাসায় নিয়ে চল।
মাহি বুঝে যে খারাপ কিছু হয়েছে তাই আদিয়া কান্না করছে। মাহিও কথা বাড়ায় না। রিকশা ডেকে উঠে পড়ে দুজন তাতে।






আয়ান সব ফাইল গুলো খুজে খুজে তার মধ্যে থেকে আদিয়ার ফাইলটা খুজে বের করে। সেখানে এক কর্নারে আদিয়ার একটা পিক লাগানো আছে। তাতে হাত বুলায় আয়ান। মনে মনে বলে আমার সিরাত। এরপর হঠাৎ কি মনে করে পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে। সেখানে গেটে সিরাতের একটা পিক খুজে বের করে। দুটো পিক পাশাপাশি ধরে আয়ান। তেমন কেনো পার্থক্য খুজে পাচ্ছে না। একই চেহারা। তাহলে এটাই সিরাত কনফার্ম। হুট করে আয়ানের চোখ যায় দুটো পিক এর কপালের দিকে। আদিয়ার পিকটায় দেখে কপালের বাম দিকে ব্রুর ঠিক উপরে বাদামী রঙের একটা তিল রয়েছে। এ তিলটা কেমন বেমানান দেখাচ্ছে আয়ানের কাছে। ওর যতদূর মনে পড়ে সিরাতের কপালে এমন কোনো তিল ও দেখেনি। ফোনে সিরাতের পিকের দিকে তাকায়। না সেখানেও তিলটা নেই। অবাক হয় আয়ান।

#চলবে

( একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম কেউ কিছু মনে করবেন না। আসলে আমার এক্সাম খুব নিকটেই। তারপরও আপনাদের জন্য গল্পটা লিখি আমি। এখন ইনবক্সে এসে কেউ কেউ বলেন এমন এক পার্ট করে পড়তে ভালো লাগেনা দুই তিন পার্ট করে দেন। একটা স্টুডেন্ট এর কি প্রতিদিন দুই তিন পার্ট করে লেখা পসিবল আপনারাই বলেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here