#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
২+৩
পর্ব-২
তন্ময় আর তার বন্ধুরা মিলে কর্ণারের একটা টেলিবে বসেছে। তন্ময় মোবাইলে কিছু দেখছে। বাকিরা নিজেদের মধ্যে গল্প করতে ব্যস্ত।
সর্বপ্রথম মাহির চোখে পরলো তন্ময়কে, মাহি অনুকে বললো,দেখ জম আমাদের পিছু ছাড়বে না।
-জম মানে,
– তন্ময়ের দিকে ইশরা করে বলে জম মানে জম
– এবার কি হবে? এই চাকরিটা তো আমাদের একমাত্র ভরসা।
– কিছুই হবেনা তুই শুধু স্বাভাবিক থাক। ওদের কাছে আমি যাই।
মাহি ওদের সামনে যে ভদ্র ভাবে বললো,হাই, স্যার আপনাদের কিভাবে সাহায্য করতে পারি।
জেনী বললো, চিকেন শাশলিক,চিকেন কাবাব,চিকেন মাসালা আর ফ্রাইড রাইস। কথা শেষ করে সামনে তাকিয়ে বলে তুমি?
জেনীর কথা শুনে সবাই সামনে তাকায়।
মাহি নিজেকে সামলে নিয়ে কোনমতে বলে জ্বি ম্যাম আমি এখানে জব করি।
জেনী হেসে বলে এই লেভেলে থেকে আবার আমাদের সাথে লাগতে আসো।
আবির বললো,জেনী এসব কি হচ্ছে আমরা এখানে খেতে এসেছি। কারো সাথে ব্যক্তিগত শত্রুতা করতে না।
ইয়ামিন তন্ময়কে বললো তুইকি সিরিয়াসলি ওই মেয়েকে বিয়ে করবি!
-তোর এটা নিয়ে এতো ভাবতে হবে না। আমারটা আমি বুঝবো।
মাহি আর অনু খাবার নিয়ে আসছে মাহির একার পক্ষে এতো খাবার নিয়ে আসা সম্ভব না।
বর্ষা বললো, ভাবিজি আপনিও কি এখানে জব করেন?
মাহি খাবার সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললো,জ্বি ম্যাম আমারা অতি সাধারণ ফ্যামিলির তাই নিজেদের খরচ নিজেদের বহন করতে হয়।
তন্ময় মোবাইলটা টেবেলি রেখে অনুর হাত ধরে টেনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে দিলো। রেস্টুরেন্টে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
তন্ময় ম্যানেজারকে ডাকতে লাগলো, ম্যানেজার এসে বলে জ্বি স্যার।
– এদেরকে জব কেনো দিয়েছো?
– অনু বললো, জবটা আমাদের প্রয়োজন ছিলো।
তন্ময় জোড়ে বললো,মন্টু মিয়া প্রশ্নটা আপনাকে করেছি!
– স্যার এনাদের জবটা ভিষণ প্রয়োজন ছিলো তাই
– তাই বলে যাকে তাকে জব দিয়ে দেবে। জানো ইনি কে?
মন্টুমিয়া মাথা নারিয়ে না বোঝালো।
-ভবিষ্যতে এই রেস্টুরেন্টে মালকিন।
অনু তন্ময়ের কোল থেকে উঠার জন্য চেষ্টা করছে।। তন্ময় বললো,সুইটহার্ট একটু ধৈর্য ধরো এতো উতলা হচ্ছ কেনো? আমি না চাইলে তুমি নড়তেও পারবেনা।
কেনো করছেন এরকম। আমি পুরো ভার্সিটির সবার সামনে আপনার পায়ে হাত রেখে ক্ষমা চাইবো তবুও ছেড়েদিন আমাকে।
– সো সেম অন ইউ বেবি। এখন পা কেনো কোন কিছুতেই কাজ হবে না। আমার এই গালে থাপ্পড় দিয়েছিলে, আর মুখে থুথু নিক্ষেপ করছো সেই অন্যায়ের শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।
তন্ময় অনুকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, অনু তন্ময়ের পায়ের কাছে পরেল। তন্ময় কিছুটা ঝুকে বলে,স্বামী পায়ের নীচ মহিলাদের জন্য উত্তম জায়গা। তাই এখন থেকে অভ্যাস করো বেবি।
তন্ময় বললো, মন্টু মিয়া মালকিন যেনো আর কাজ না করে খেয়াল রাখবেন।
মাহি সাহস করে তন্ময়ের সামনে এসে বললো ভাইয়া, প্লিজ এমন করবেন না জবটা আমাদের প্রয়োজন!
অনু উঠে দাঁড়িয়ে মাহিকে বললো, এদের কাছে ভিক্ষে না চেয়ে চল রাস্তায় ভিক্ষে করবো।কারণ রাস্তায় মানুষ থাকে এনাদের মতো অমানুষ নয়।
তন্ময় বললো,আই লাইক ইউর এটিটিউড বেবি। এতোই যখন ভিক্ষে করার শখ তাহলে ভার্সিটিতে ভর্তি না হয়ে। ভিক্ষুক সমিতির সভাপতি হতে পারতে।
সবাই হো হো কে হেসে উঠলো।তন্ময় বললো,তোরা এভাবে হাসছিস কেনো! মত হোক তোদের দুই মাসের ভাবি বলে কথা।
আবির এগিয়ে এসে তন্ময়ের কানে মুখে বললো, এটা কিন্তু ঠিক করছিস না। পার্সোনাল প্রবলেম পার্সোনাল রাখ। এভাবে কাউকে অপমান করা ঠিক না। চল এখান থেকে।
তন্ময় বলে, জান চলে যাচ্ছি, তবে আর যাই করো ভিক্ষে না শতহোক শেখ বাড়ির ৬০দিনের বউ হবে ভবিষ্যতে সো বি কেয়ার ফুল বেবি। বলেই ফ্লাইং কিস দিয়ে বের হয়ে গেলো।
অনু মাহিকে বললো এখন কি করবো!
– চল আজকের টাকা নিয়ে চলে যাই টুকটাক বাজার করে দু’তিন চলে যাবে আর অন্যকোন ব্যবস্তাও হয়ে যাবে ।
ম্যানেজার মন্টু মিয়ার থেকে আটশ টাকা নিয়ে বেরিয়ে আসলো। টুকটাক বাজার করে বাসে করে বাসায় ফিরলো।
নীলাভ্র বললো, মেয়েটা কিন্তু ন্যাচরাল বিউটি।কি সুন্দর গোলাপি ঠোঁট, কাজল বিহীন টানা টানা চোখ, হলদে ফর্সা গায়ের রঙ। তন্ময় নীলাভ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ওর দিকে নজর দিবি না। যতদিন আমি ওকে ছেড়ে না দিচ্ছি। বর্ষা বললো, তোর ওকে বিয়ে করার দরকার কি?বিয়ে ছাড়াই তো ওকে বাদঁর নাচ নাচানো যাবে।
তোদেরকে কতবার বলবো, ওর বিষয়টা সম্পূর্ণ আমার উপর ছেড়ে দে! তোদের ভাবতে হবে না ওর সাথে যা করার আমি করবো।
তোরা বাসায় যা আমি সারাকে নিয়ে ফিরছি।
ক্লাস শেষ করে সারা লাইব্রেরিতে কিছু সময় নোট করলো বসে বসে। লাইব্রেরি থেকে বের হতেই তন্ময় কে দেখে মুচকি হেসে বলে, চলে এসেছিস!
– হু তোকা না নিয়ে বাসায় ফিরলে চাচ্চাু,আর বাবা বাসায় ঢুকতে দেবে না।
-এবার কথা না বাড়িয়ে চল তাড়াতাড়ি। আর হ্যাঁ ওই অনাহিতা মেয়েটা তোকে খুঁজছিলো! মেয়েটা কিন্তু ইনোসেন্ট আর সুইট।
– তোর ওই বিচ্ছু মেয়েকে সুইট,আর ইনোসেন্ট মনে হচ্ছে। ভুলে গেছিস কি কান্ড ঘটিয়ে ছিলো?
– দোষ কিন্তু মেয়েটার একার না। নিজের সম্মানে আঘাত লাগলে প্রতিবাদ তো বোবাও করবে।
– সো হোয়াট, আমি বলেছিলাম তো সমাধান আমি করবো।সে কি করেছিলো?
– তুই ভুলে যাস না বর্ষা আর জেনী তোর সামনে মেয়েটার সাথে কি করেছিলো, ওই মেয়ের জায়গায় যদি সেম কাজটা কেউ আমার সাথে করতো তখন কি করতি?
– তোর জ্ঞান তোর কাছে রাখ! চল বাসায় চল।
-মেয়েটা আমার পছন্দ হয়েছে,তানিম ভাইয়ার জন্য।
– তোর মাথা ঠিক আছে তো?
– একটা রাস্তার মেয়ে পছন্দ করেছিস ইয়াং বিজনেস ম্যান তানিম হাসানের জন্য?আর ইউ ক্রেজি!
-কয়লার খনিতে কিন্তু হিরে পাওয়া যায়।
– চুপ কর আগমী সাত দিন পর সে হবে মিসেস তন্ময়। তারপর গুনে গুনে ষাট দিন আমার ওয়াইফ। দুই মাস পর তোর ওই কয়ালার হিরেকে যার ইচ্ছে তার বউ বানাস।
অনু বাসায় এসে রান্না করলো,আলু সেদ্ধ আর ভাত
মাহি বললো,দু’দিন পর তো এটুকুও জুটবে না।
– চিন্তা করিস না। বাড়িওয়ালা ভাবি বলেছে আমাকে টিউশন ঠিক করে দেবে আর অগ্রিম বেতন পাইয়ে দেবে।
– সত্যি বলছিস!
– হুম সত্যি তুই যখন ওয়াশরুমে ছিলি তখন ভাবি এসেছিলো।
সাজু মিয়া তার স্ত্রীকে বলছেন, তোমার মেয়ের জেদ আমার মান সম্মান না ধুলোয় মিশিয়ে দেয়ে!এই সাজু বেপারির একটা নাম আছে সমাজে।
সুফিয়া বেগম বললেন,তুমি বেশি চিন্তা করছো,আমাদের মেয়ের উপর আমার বিশ্বাস আছে। ও এমন কিছু করবেনা। যাদে আমাদের সম্মান নষ্ট হয়।
শেখ বাড়িতে ঢুকতেই তন্ময় দেখতে পেলো সবাই সোফায় বসে আসে। তন্ময় নিচের দিকে তাকিয়ে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আদিল সাহেব বললেন,ভার্সিটিতে তুমি পড়তে যাও নাকি গু*ন্ডা*মি করতে!
নিজের বাবাকে যথেষ্ট সম্মান করে তন্ময় সাথে ভয়ও পায়।
তন্ময় কিছু বলবে তার আগেই আদিল সাহেব তন্ময়ের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন।
বাসার সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো, কেউ বুঝতে পারেনি আদিল হাসেব এমন একটা কাজ করবে। তানিম এগিয়ে এসে বলে চাচ্চু কি হয়েছে? শান্ত হও। আমি দেখছি বিষয়টা।
– কি দেখবে তুমি! কিভাবে একটা মেয়ের সাথে তোমার আদরের ভাই অসভ্যতা করেছে? নিজের মোবাইলে একটা ভিডিও বের করে বলে, তাহলে দেখো। ভিডিও দেখে সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তন্ময়ের দিকে।
সারা বলল চাচ্চু আমি বলছি ঘটনাটা।
– তোমারা কেউ কিছু বলবেনা আজকে কথা হবে ওর আর আমার মধ্যে। তোমাদের জন্য এতো সাহস পেয়েছে। বেশি আদর দিয়ে বাঁদর তৈরি করেছো।
তন্ময় সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলে,মেয়েটার নাম অনাহিতা আমি মেয়েটাকে ভালোবাসি, আর ওকে বিয়ে করতে চাই!
এমন সিরিয়াস মূহুর্তে গেটের সামনে কারো আওয়াজ শোনা গেলো,কেউ বলছে, আসতে পারি?
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৩
এই মূহুর্তে অনুর আগমন আগুনে ঘি ঢালার মতো। সবাই আশ্চর্য দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে, অনু বোকার মত সবার দিকে তাকিয়ে আছে। আদিল সাহেব বলেন বাহ বাহ বাহ ভালোই তো বিয়ে করার আগেই শশুড় বাড়ি হাজির। অনু তখন দরজার বাহিরে।তাই আদিল সাহেবের কথা শুনতে পেলো না। আদিল সাহেব বললেন তা এসেই যখন পরেছো বাহিরে কেনো ভেতরে আসো!
অনু এখনো তন্ময় কে দেখেনি। অনু ভিতরে এসে সারা কে দেখলো। সারার দিকে তাকিয়ে আছে।
সায়লা হাসান এসে বললো, তুমি কেনো এসেছে?
আসসালামু আলাইকুম আন্টি আমি অনহিতা, মিফতা ভাবি আমাকে পাঠিয়েছে আপনার বাসায়।
তন্ময়ের চাচি ইরা বেগম বললো,তোমাকে মিফতা পাঠিয়েছে?
-জ্বী আন্টি
– তুমি প্রাইভেট টিউটর?
– জ্বি আন্টি
– আচ্ছা তুমি ওর সাথে উপরে যেয়ে বসো। সারা ওকে আনহা আর আয়ানের রুমে নিয়ে যাও।
সারা অনুকে নিয়ে আসললো,রুমে ঢুকতেই সারা বলল,তোমার কি পৃথিবীতে কাজ করার আর কোন জায়গা নেই খুঁজে খুঁজে আমাদের বাসায় কেনো?
– প্লিজ আপু তন্ময় ভাইয়ার মতো আপনি আমাকে তাড়িয়ে দিয়েন না।এই টিউশনি আমার খুব প্রয়োজন এটাও যদি চলে যায় তবে হয়তো না খেয়ে থাকতে হবে।
– কেনো তোমার বাবা, মা নেই?
– থাকবেনা কেনো আ়ছেন। তবে আমাদের এমাসের খরচ ছিনতাই হয়ে গেছে। আমার বাবা আর টাকা পাঠাতে পারবে না। শুধু এই মাসটা তারপর এখানে আর পড়াতে আসবো না।
সারা বললো তুমি বসো আমি আসছি। সারা নিজের রুমে যেয়ে হাজার দশেক টাকা নিয়ে আসলো। টাকাগুলো অনুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, আশা করি এতে হয়ে যাবে! না হলে বল বাড়িয়ে দেবো।
অনু টাকাগুলো না নিয়ে বলে, আমি সাহায্য চাইনি! কোন বিনিময় ছাড়া কারো থেকে টাকা নিতে পারবো না আপু! দরিদ্র হতে পারি তবে ভিক্ষুক নই! আমার পরিবার আমাকে কারো থেকে এভাবে হাত পেতে নিতে শেখায়নি।
– দেখো তোমাকে আমি লেকচার শোনাতে বলিনি! এমনিতেই এই বাসায় তুমি পড়াতে পারবে না।
– আপনার বাসা আপনি না বললে হয়তো চলে যেতে হবে। তবে কোথাও না কোথাও ঠিক একটা কাজ পেয়ে যাবো। কষ্ট হবে একটু আর কিছু না।
– এতো যে কথা বলছো, এই বাসাটা কার জানো তুমি?
– না আপু আমি কি ভাবে জানবো!
– এটা তন্ময় হাসানের বাসা। এবার মনের সুখে পড়াও।
– চলে যেতে বললে তো চলেই যাবো তাই বলে মিথ্যে বলবেন?
– তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি! ওয়েট আনহা,আয়ান এদিকে আসো।
দরজার পেছন থেকে দুটো দশ, বারো বছরের ছেলে মেয়ে বের হয়ে আসলো। ইনি হচ্ছে তোমাদের নতুন টিচার!
দু’জনে একসাথে বলে উঠলো টিচার৷
অনু বোকার মতো তাকিয়ে আছে।
সারা বলরো হুম টিচার। তবে জানো ইনি হলেন তোমার তন্ময় ভাইয়ার ফ্রেন্ড।
– আনহা এসে অনুর হাত ধরে বললো এই সত্যি তুমি ভাইয়ার ফ্রেন্ড?
আয়ান এসে বললো, তুই সরতো জানিস না মেয়েরা হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে উত্তর তাড়াতাড়ি দেয়। এই এবার বলো তুমি সত্যি তন্ময় ভাইয়ার ফ্রেন্ড?
অনু আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে, যাদেরকে বাচ্চা ভেবেছিলো,এরা যে এক একটা বিচ্ছু সেটা বুঝতে বাকি নেই। কোন উত্তর না দিয়ে সারার দিকে তাকালো।
সারা বললো শোন ওরা তোর তন্ময় ভাইয়ার সেই ফ্রেন্ড যে তোদের তন্ময় ভাইয়াকে থাপ্পড় মেরেছিলো।
– আয়ান ওহহহহ আগে বলবে তো? তাহলে তুমি সেই মেয়ে যে কিনা শেখ বাড়ির ছেলের গায়ে হাত তোলার দুঃসাহস করেছো!
অনু মাথা নিচু করে কিছু ভেবে নিয়ে বললো,তাহলে আমি আসি। ভালো থেকো।
আনহা অনুর হাত ধরে বলে আসি মানে কি?এসেই তো পরেছো এখন আর যেতে পারবে না।
আমরা তোমার কাছেই পড়বো।
-কিন্তু তোমার ভাই আমাকে বাসা থেকে বের করে দেবে।আর আমিও তোমাদের পড়াবো না। যেতে দাও।
আয়ান অনুর সামনে এসে বলে, ইহাপে আনা বহত আসান হে, লেকিন নিকালনা মুশিকল হ্যাঁ।
অনুর বুঝতে বাকি নেই এরা হলো প্রচন্ড চালাক,এদের সাথে এতো সহজে পারা যাবেনা।
সারা বললো ওকে তোরা টিচারের সাথে ডিল কর আমি আসছি।
আদিল সাহেব বললেন,এই মেয়েকে বাসার ঠিকানা তুমি দিয়েছো?
– তন্ময় নিচের দিকে তাকিয়ে বলে, বললে বিশ্বাস করবে?
– বিশ্বাস করার মতো কথা হলে বিশ্বাস করবো না কেনো। আর এই মেয়েকে দেখে তো মনে হচ্ছে সাধারণ ঘরের মেয়ে। তোমার এতো মেয়ে থাকতে এই মেয়েকে কেনো পছন্দ হলো?
তানিম বললো, বড় আব্বু তুমি শুধু শুধু রাগ করছো, ও ছোট মানুষ কি বলতে কি বলে ফেলেছে। ছাড়ো তো ওর কথা।
– তোমার কি মনে হয় তানিম। ও ছয়, সাত বছরের বাচ্চা। যা খুশি বলে ফেলেছে! একজন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক যার বয়স ছাব্বিশের কোঠায়। এতো দিনে বিয়ে করলে এক বাচ্চার বাপ হয়ে যেতো। সে ছোট মানুষ!
-তন্ময় সামনে এসে বললো, তাহলে বিয়েটা করিয়ে দাও।
কথা শেষ হওয়ার আগে আরো একটা থাপ্পড় পরলো তন্ময়ের গালে।
আদিল সাহেব বললো,,মায়ের হোটেলে খাও আর বাপের টাকায় ফুটানি করো। নিজেতো বাপের ঘাড়ে বসে খাচ্ছে আবার আরেকজন কেও নিয়ে আসতে চায়! যাও পারলে নিজে ইনকাম করো তারপর কথা বলতে এসো। আসছে বিয়ে করিয়ে দাও।
ইরা বেগম এসে বলল,ভাইয়া আমার মনে হয় মেয়েটা সত্যি জানেনা এটা তন্ময়ের বাসা। কারণ আমি নিজেই মিফতাকে বলেছিলাম একজন প্রাইভেট টিউটর ঠিক করে দিতে। তখন ও বলেছিলো একজন আছে ও আমাকে কথা বলে জানাবে। দু’ঘন্টা আগেই এই মেয়ের কথা বলল।সাথে এটাও বললো এমাসের টাকাটা যেনো এডভান্স দিয়ে দেই।
– শেখো কিছু একটা মেয়ে হয়ে নিজের খরচ নিজে বহন করে। এবার বুঝতে পেরেছি এজন্যই এই মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে! ভাবছেএখন বাপের টাকায় চলছি, পরে বউয়ের টাকায় চলবো।
সবাই মুখ চেপে হাসি আটকে রাখছে।
আদিল সাহেব আবার বললেন তোমার মতো কেয়ারলেস ছেলেকে এই মেয়ে বিয়ে করবে বলে তো আমার মনে হয়না!
তানিম বললো বড় আব্বু হতেই পারে ওরা একে অপরকে পছন্দ করে।
– তুই আমাকে বোঝাতে আসিস না। আমার চুল বাতাসে পাকেনি। আচ্ছা যদি ও এই মূহুর্তে প্রমাণ করতে পারে মেয়েটাও ওকে ভালোবাসে তবে এই মেয়ের সাথেই আমি ওর বিয়ে দেবো।
তন্ময় চুপ করে আছে, দেখে আদিল সাহেব হেসে বলে, আমি জানতাম এটা পারবেনা।শোন জোড় করে ভালোবাসা হয়না ভালোবাসা ভালোবেসে অর্জন করে নিতে হয়।তানিম ওকে বলে দাও মেয়েটার আশেপাশেও যেনো ওকে না দেখা যায়। বলে লম্বা লম্বা পা ফেলে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
সায়লা বেগম এসে বলে, হ্যাঁরে তুই তো বলেছিলে তোর নিজের কোন পছন্দ নেই তাহলে এই মেয়ে কে?
তন্ময় মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে তোমার ছেলের বউ।
তানিম এসে বলে যতই যা বলিস না কেনো আমার মনে হচ্ছে কোথাও কোণ গন্ডগোল আছে। না হলে তোর মতো ঢেঁড়সকে দিয়ে মা*রা*মা*রি সম্ভব প্রেম না।
– তুমি নিজেও তো ঢেঁড়স। এখন পর্যন্ত বিয়ে করতে পারলে না। আবার ছোট ভাইকে ঢেঁড়স বলছো।
– কি বললি আমি ঢেঁড়স তবে-রে। বলেই দু’জনে ছোটাছুটি করতে লাগলো।
ইরা বেগম সায়লা বেগমকে বললো, বুঝলে ভাবি এরা যে বড় হয়েছে নিজেরাও ভুলে যায়। আর আমাদেরকেও ভুলিয়ে দেয়। কে বলবে কিছু সময় পূর্বেই দুই দু’টো থাপ্পড় পরেছে এই ছেলের গালে।মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি।
– এদেরকে নিয়ে আর পারিনা। যেমন বাবা তেমন ছেলে। না জানি দুই বাপ ছেলে মেয়েটার সাথে কি করে?
– এটা ঠিক বলেছো ভাবি, এখন ভাইয়া চাইবে এই মেয়ে এই বাড়ির বউ না হোক! আর তন্ময় চাইবে বউ করতে মাঝখানে বেচারি মেয়েটা ফেঁসে যাবে।
এরমধ্যেই সারা নিচে এসে বলে খেতে দাও আমাকে।
ইরা বেগম সারাকে বললো, হ্যাঁরে মেয়েটা কি সত্যি তন্ময় কে ভালোবাসে?
– এসব আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছো আম্মু! যার যার পার্সোনাল বিষয় আমি কি জানি!
সায়লা বেগম এসে বলেন তুই তো জানিস ছোট, এরা একজন আরকেজনের কথা কখনোই বলবে না। তার চেয়ে আমরা নিজেরাই জেনে নেবো।
সারা উঠে এসে বলে,বড় আম্মু তুমিও কি বড় আব্বুুর মতো হয়েছো। যা হওয়ার তাতো দেখতেই পাবে। এখন আমাকে খাবার দাও তো।
তন্ময় এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে তাড়াতাড়ি খাবার দাও খুব খিদে পেয়েছে।
তানিম নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে, অনু আনহাদের রুম থেকে বের হচ্ছে…..
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰