তোর শহরে প্রেম পর্ব -১৪

#তোর_শহরে_প্রেম

#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব -১৪

অনু ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে বের হয়েছে, ঠিক তখনি একজন ছেলে এসে অনুর হাতে একটা চিঠি আর কিছু ফুল দিয়ে বলে, তন্ময় ভাইয়া বলেছে তোর ভাবির ক্লাস শেষ হলে এগুলো তাকে দিবি!

কিছু বলতে চেয়েও কিছু বললো না অনু,জিনিস গুলো নিয়ে সামনে একটা ফাঁকা জায়গায় বসলো। মাহিও দৌড়ে এসে অনুর পাশে বসলো।

অনু কাগজটা খুলে পড়া শুরু করলো, ডিয়ার হবু ওয়াইফ, আমি শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি। চিন্তা করো না, তোমাকে নিজের করে নেয়ার অনুমতি নিয়েই আসবো।

বাকিটুকু না পরে কাগজটা ফেলে দিলো।

মাহি বললো পুরোটা পরে দেখতি কি লিখেছে?

– বাদদে তো এসব আমার একদম অসহ্য লাগছে। এই ছেলের সাথে আমাকে সারা জীবন থাকতে হবে!এটা ভাবতেই পারছিনা। সারে শরীরে শুধু এটিটিউড, আর একশ মেয়ে এর পিছনে ঘুরঘুর করে। আর সাবিহা ম্যামের কথা মনে আছে!, তিনি বলেছিলেন সুন্দর ছেলেদের ক্যারেক্টার ভালো থাকে না।আর এই তন্ময় তো সার্টিফিকেট প্রাপ্ত অসভ্য।

– তোর এসব ভুল ধারণা। আমি খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি, তন্ময় ভাইয়া সব সময় মেয়েদের এরিয়া চলতো। তবে তার আগে একটা রিলেশন ছিলো! কোন কারনে সেটা ব্রেকআপ হয়ে যায়। তারপর থেকে উনি মেয়েদের থেকে আরো দূরত্ব রেখে চলে।আর ওনার কোন বেড রেকর্ড নেই ভার্সিটিতে।

– তুই এতো কিছু কিভাবে জানতে পারলি?

– ওনাদের ক্লাসের সিমন্তিনী দিদি বলেছে।

– সে আবার কে?

– ওইতো দেখ সিমন্তিনী দিদি। উনি খুব ভালো জানিস।
দিদি তো এটাও বলছে, তন্ময় ভাইয়া মানুষ হিসেবে অমায়িক।

– আমি চিন্তা করছি অন্য কথা।

– কি

– এই ছেলে হাত ধুয়ে আমার পিছে কেনো পরলো?
– হয়তো প্রথম দেখায় তোর প্রেমে পরেছে।

– সে আমার প্রেমে পরেনি।

– তুইো তো প্রথম দেখায় এক আগন্তুকের প্রেমে পরেছিলি।

– সে তো আমার কম্পমান।

– যদি বাস্তবে আসে?

– সম্ভব না আমি তার চোখ দেখেছি, দেখেছিলাম তার চলে যাওয়ার দৃশ্য। তার চেহারা দেখার সৌভাগ্য আমার কোনদিন হবেনা।

– তুই তো খুঁজিসনি

_ কি ভাবে খুঁজবো!না জানি নাম আর না জানি ঠিকানা। এভাবে কাউকে খোঁজা যায়। সে আমার কল্পনাতেই থাক। তার দেয়া সেই শার্টটা আঝো রেখে দিয়েছি যত্নে।

– ভাইরে তোর প্রেম দেখে আমি শেষ। যে সারাদিন পিছু পিছু ঘুরঘুর করে তার প্রেম চেখে পরে না।

– ভালোবাসা হলো একটা অব্যক্ত অনূভুতি কখন কি ভাবে কার জন্য তা- জন্ম নেয় বলা যায় না। আবার জোড় করে অনূভুতি তৈরীও করা যায় না।

– মনে হচ্ছে তুই প্রেমের উপর পিএইচডি করে রেখেছিস!

– জীবনে প্রেম না করেই পিএইচডি করে ফেলেছি সো ফানি।

– আচ্ছা বাসায় চল। দুজনেই উঠে হাঁটা হাঁটা শুরু করলো। কাগজের টুকরোটা উড়ে আবারো অনুর পায়ের কাছে এসে পরলো।

– তোকে হয়তো ছাড়তে চাইছে না।হয়তো সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট কথা তুই মিস করেছিস। তাই তোর কাছে এসে আবার পরলো।

অনু কাগজটা তুলে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো। আমার মনে হয়না কোন ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।

______________________________________________
অফিসের একজন স্টাফ তানিমের হাতে একটা কাগজ দিয়ে চলে গেলো।

মেঘা বললো, কিরে তোকে এখনো মেয়েরা লাভ লেটার দেয়?

– তুই চুপ থাক আমি দোখছি এটা কে? কাগজটা খুলতেই তন্ময়ের হাতের লেখা চোখে পরলো। দাভাই বাসায় একটু মেনেজ করিস। আমি শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি। বিয়ের আগে যাচ্ছি তাই একা একা আসলাম। কথা দিচ্ছি বিয়ের পর তোদেরকেও নিয়ে আসবো,।বাসায় সামলে নিস। তানিম টেবিলে কাগজটা রেখে দিয়ে বলে, এই ছেলে কখন যে কি করে।

– যাই করুক ভালোই করে।
– তুই কি বুঝলি যে বললি ভালোই।

– না মানে আমিও উঁকি দিয়ে পড়েছি তাই বললাম।

– এবার তুই চলে যা।

– বললেই হলো চলে যা। আমি তোর বাসায় যাবো মানে আজ যাবোই। এবার তাড়াতাড়ি চল।

ঘন্টা খানিক পর মেঘা আর তানিম বাসায় ফিরলো। প্রথম বার তানিম কোন মেয়েকে নিয়ে বাসায় এসেছে।

সবাই অবাক হয়ে বলে, যাক অবশেষে বউ-মাকে নিয়ে এসেছিস। বলেই মিসেস সায়লা বেগম মেঘার হাত ধরে নিয়ে সোফায় বসালেন। ভিষণ এক্সাইটেড হয়ে জিজ্ঞেস করল ন তোমার নাম কি মা? বাসা কোথায়? বাবা,মা তারা কেমন আছেন?

মেঘা পুরোই বোকা বনে গেলো, ভাবতেই পারেনি এমন গম্ভীর মানুষের পরিবারে মানুষগুলো এতো সুইট হবে।

– আমার নাম মেঘলা। বাসা উত্তরা, বাবা,মা ভালো আছেন। আপনি কেমন আছেন আন্টি?

– আমি ভালো আছি। তুমি বসো প্রথম বার আসলো আমি নাস্তার ব্যবস্থা করি।

সায়লা বেগম চলে যেতেই। ইরাবেগম আসলেন, আমার ছেলের পছন্দ আছে, কি সুন্দর একটা মেয়েকে আমার বউ করে এনেছে। বলেই নিজের হাত থেকে চুরি খুলে মেঘার হাতে পরিয়ে দিলো।

তানিম এসে বলে কি শুরু করছো আম্মু।এটা আমার। বলার আগেই মেঘ বলে, থাক জান তোমাকে এতো লজ্জা পেতে হবেনা। শ্বাশুড়ি আম্মুকে আমার পছন্দ হয়েছে।

তানিম বলে মেঘা বেশি হয়ে যাচ্ছে না।

– আরে তুমি যাও রেস্ট নাও। আজকে একটু শ্বাশুড়ি আম্মুদের সাথে আড্ডা দেই।

তানিম মুখ ফুলিয়ে চলে গেলো, মনে মেনে নিজেকে গালি দিচ্ছে আর বলছে, তোর আর কাজ ছিলো না।এই মেয়েকে বাসায় নিয়ে আসতে হবে!এবার বোঝ মজা। এসব ভাবতে ভাবতেই শান্ত তানিমের মাথায় এক দুষ্ট বুদ্ধি আসলো। তানিম সোজা চলে আসলো আনহা আর আয়ানের রুমে।

আয়ান তখন গেমস খেলছিলো আর আনহা লিখছিলো।

তানিম কে দেখে আনহা বলে দাভাই তুমি!
– আমার সুইট,কিউট ভাই,বোনরা কি করো।

– আয়ান বলে দেখছোই তো গেমস খেলছি।

– আমার একটা ছোট কাজ করে দিতে হবে।

– কি কাজ দাভাই।

তানিম আনহা,আর আয়ানকে কানে মুখে কিছু বলে দিলো।

দু’জনেই নাচতে নাচতে নিচে চলে আসলো।

তানিম মিটি মিটি হাসছে। রুম থেকে বের হতেই হঠাৎ সে দিনের কথা মনে পরে গেলো। নিজের অজান্তেই বারবার সেই অনুর কথাই মনে আসে। নিজেকে নিজে ধিক্কার জানিয়ে রুমে চলে যাবে এমন সময় খেয়াল করলো সারা কারো ছবি জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।

তানিম একবার ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলো। কিন্তু কিছু একটা ভেবে আর গেলো না। সোজা চলে আসলো রুমে।

আনহা এসেই মেঘার কোলে চড়ে বসলো তারপর মিষ্টি করে বললো, আন্টি আমার চকলেট কোথায়?

মেঘা তো জানেই না তানিমের ছোট ভাই বোন আছে।
মেঘাকে চুপ করে থাকতে দেখে আয়ান বলে, এটা হলো পঁচা আন্টি তাই চকলেট আনেনি। আয় উঠে আয়।

ইরা বেগম ধমক দিয়ে বলে, কি হচ্ছে, আনহা, আয়ান উনি তোমাদের ভাবিমনি হয়।আন্টি কেনো বলছো।

আনহা বললো, আন্টিকে ভাবি মনি মানি না। আযানো বললো আন্টি তো আন্টি।

সায়লা বেগম বললো, তোমরা নিচে কেনো এসেছো? যাও উপরে যাও।

আনহা আর আয়ান মুখে ভেঙচি কেটে চলে গেলো।

সায়লা বেগম বললেন, কিছু মনে করো না মা, এই দু’টো একটু ডানপিটে স্বভাবের।

– না আন্টি কিছুেমনে করিনি।
ইরা বেগম বললেন কিছুি তো নিচ্ছনা কিছু মুখে দাও মা।

মেঘা মনে মনে বলছে, এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। এবার আর আমাকে তোমার বউ হতে কেউ ঠেকাতে পারবেনা। মিস্টার তানিম হাসান শেখ।

______________________________________________
তন্ময় এসে পৌঁছেছে মধুপুর গ্রামে।গ্রামের কিছু মানুষের থেকে খোঁজ নিয়ে সাজু বেপারির সম্পর্কে সব খবর সংগ্রহ করেছে।সময়টা এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল গ্রামের অপরুপ দৃশ্য উপভোগ করছে তন্ময়। এমন সময় দেখা হলো আব্দুল্লাহর সাথে। তন্ময় এগিয়ে এসে বলল, তোমার নাম আব্দুল্লাহ তাইতো?

– আপনি জানলেন কি ভাবে?

– আমি আরো অনেক কিছু জানি শালাবাবু।
– আপনারে তো ঠিক চিনতেওই পারলাম না।
– এখন চেনোনি কিছুক্ষণ পর চিনে যাবে। নিজের ব্যাগ থেকে কিছু চকলেট বের করে আব্দুল্লাহকে দিলো।

– আব্দুল্লাহ মনে মনে বলছে এ হয়তো ছেলে ধরা চকলেট দিয়ে আমাকে বেহুশ করে নিয়ে যাবে।

তন্ময় বুঝতে পারলো আব্দুল্লাহর মনের কথা তাই বললো, শালাবাবু আমি তোমার একমাত্র বোন অনাহিতার একমাত্র জামাই।

কথাটা শেষ করার আগেই পেছন থেকে একজন বললো কি বললে তুমি!

#চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here