#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ১১
সিয়া ঘামটি মেরে বসে ছিলো। সে তো অর্নীলের কথা দোলা কে বলে দিয়েছে। না জানি কি হয়। সিয়া তার মাথা তুলে সামনে তাকায়। দোলা তার চোখের চশমা টা ঠিক করে এক গম্ভীর মুখ করে বসে আছে।
সিয়া;; আব…মা
দোলা;; কবে থেকে তোরা দুজন একসাথে আছিস?
সিয়া;; বেশ কিছুদিন হলো।
দোলা;; আমাকে জানাস নি কেনো তুই?
সিয়া;; না মানে আমি ভেবেছি পরে জানানো যাবে তাই।
দোলা;; কাল রাতে অর্নীলের কাছে গিয়েছিলি তুই।
সিয়া অবাকই হয় দোলার কথায়।
দোলা;; বাইরের ক্যামেরাতে দেখা গিয়েছে সব।
সিয়া;; হুম।
দোলা;; দেখ আমি তোকে আগেও বলেছি আর এখনও বলছি আমি তেমন না যে নিজের মেয়ের পছন্দের বিরুদ্ধে যাবো। তোর নিজেরও পছন্দ-অপছন্দ আছে। আর আমি অর্নীল কে চিনি, ও ছেলে হিসেবে অনেক বেশিই ভালো।
সিয়া;; মা তু……
দোলা;; আমি বলবো না যে অর্নীল কে তুই ছেড়ে দে। বা দূরে থাক। তুই তোর ভালোবাসার মানুষের সাথেই থাক। আমি সবসময় তোর খুশিটা দেখেছি, তুই যাতে হ্যাপি থাকবি তা দেখেছি। আর তুই যদি অর্নীলের সাথে ভালো থাকিস বিশ্বাস কর সিয়া তোদের দুজনের থেকেও সবথেকে বেশি খুশি আমি হবো।
সিয়া;; আম্মু সরি।
দোলা;; ওমা কেনো রে? আমি কি তোকে বকেছি নাকি মেরেছি। কড়া কথাও তো বলি নি। আরে মেয়ে আমি আছি সবসময় তোর পাশে, তুই কি ভেবেছিলি আমি কশাই এর মতো বলবো যে “আমি বেঁচে থাকতে তোরা দুজন এক হতে পারবি না”
দোলার কথায় সিয়া আর দোলা বেশ জোরেই হেসে দেয়।
দোলা;; আচ্ছা অর্নীল কে একদিন বাসায় নিয়ে আয় না।
সিয়া;; এমনি ই কি কম আসে নাকি!
দোলা;; কি?
সিয়া;; না না কিছু না।
দোলা;; হুমমম, আচ্ছা থাক তুই আমার কাজ আছে।
সিয়া;; কি কাজ?
দোলা;; বিরিয়ানি রান্না করি!
সিয়া;; আরে আগে বলবা তো,, আচ্ছা।
দোলা রান্নাঘরে চলে যায় আর সিয়া তার রুমে। সিয়া রুমে এসেই আগে জোরে জোরে কয়েক দফা দম নেয়। দোলা যখন বলেছিলো কাউকে ভালোবাসিস কিনা। সিয়ার যেনো অন্তরাত্মা কেপে উঠেছিলো। কিন্তু এখন গিয়ে মনে শান্তি এসেছে। সিয়া অর্নীল কে ফোন করে। আর অর্নীল তখন রাগে লাল হয়ে অফিসে তার কেবিনে বসে ছিলো। কারণ হাত থেকে একটা ডিল ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে।
অর্নীল;; হ্যালো!
সিয়া;; অর্নীল, জানেন আজকে কি হয়েছে?
অর্নীল;; কি?
সিয়া;; আম্মু সব জেনে গিয়েছে!
অর্নীল;; আরো ভালো।
সিয়া;; ভালো মানে! মানে আমার মা জেনে গিয়েছে আপনার আর আমার ব্যাপার টা আপনার চিন্তা হচ্ছে না?
অর্নীল;; আরে আজব, চিন্তা হওয়ার কি আছে। হবু শাশুড়ি আমার আজ হোক কাল হোক জানবেই। যেটা পরে জানতো সেটা দুদিন আগে জেনে গিয়েছে। তাতে ক্ষতি কি?
সিয়া;; বাহহহহ,, এতো চিল মুড।
অর্নীল;; এটাই বলার জন্য ফোন করেছিলে?
সিয়া;; হ্যাঁ, আর কি।
অর্নীল;; হুমমম।
সিয়া;; আচ্ছা কিছু কি হয়েছে?
অর্নীল;; একটা ডিল ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে!
সিয়া;; আরে তো কি হয়েছে। আবার আসবে।
অর্নীল;; হুমম।
সিয়া;; এখন রাখি।
অর্নীল;; আমি বিয়ে করবো।
সিয়া;; কি?
অর্নীল;; হ্যাঁ, আর এখন তো কোন কথাই রইলো না। তোমার মা জেনে গেছে, সে রাজি, আমি & তুমি রাজি। ব্যাস আর কি লাগে।
সিয়া;; অর্নীল এ কেমন কথা, আপনারও ফ্যামিলি আছে। আপনার বাবা আ…….
অর্নীল;; উনি থাকা না থাকা সমান।
সিয়া;; অর্নীল প্লিজ, বাবা হয় উনি আপনার। এবার তো সবকিছু ঠিক করুন।
অর্নীল;; ঠিক? কি ঠিক করবো আমি। যেখানে কোন কিছুই আর আগের মতো হবেই না। সিয়া ওই লোকটার জন্য আমার মা মরে গেছে। মা সবসময় বলতো এইসব পলিটিক্স বাদ দাও, বাদ দাও। উনি দেন নি। আমার বাবার টাকার কখনোই কোন কমতি ছিলো না। উনি চাইলেই নিজের একটা বিজন্যাস স্টার্ট করতে পারতেন বাট উনি পাবলিসিটি, পাওয়ার এইসবের নিচে দমে গিয়েছিলেন। মারামারি, জেল-জরিমানা, এগুলো তার নিত্যদিনের অভ্যাস ছিলো। এমনকি ঠিক কতো শত বার মা আর আমার ওপর যে জানে মেরে ফেলার হুমকি এসেছে তার হিসেব নেই। কিন্তু হিসেব টা একদিন পাক্কা হয়ে গেলো। বাবা বাসায় ছিলো না, আমি ছিলাম স্কুলে, বাবার সাথে যাদের রেশারেশি ছিলো তারা এসে বিনাবাক্যে চাকু দিয়ে মা কে মেরে ফেলে। আমাদের বাসায় যে কাজ করে রামু কাকা। তুমি জানো ওই লোকটা আমার বাবার থেকেও বেশি আমার ক্লোজ। উনার হাতেই বেড়ে ওঠা আমার। রামু কাকা নিজের চোখে আমার মায়ের মরণ দেখেছে। সবকিছুর মূল আবার বাবা। উনি যদি এই সব ঝামেলা জড়িত কাজ ছেড়ে দিতেন তাহলে আমার মা আজ বেঁচে থাকতো। আমার সাথে থাকতো। বাবা আমাকে সময় দেয় নি, একা একা বেড়ে ওঠা আমার। বাড়ির কাজের লোকের হাতে মানুষ হয়েছি আমি। এখন এর জন্য আমার বাবার থেকে বেশি প্রিয় আমার সেই বাড়িতে কাজ করা লোকেরা। And you know what i don”t want to call him my Father….
সিয়া অর্নীলের সব কথাই শুনলো। বেশ খারাপ লাগছে তার এখন। সিয়া বুঝে নি যে অর্নীলের সাথে এমনটা হয়েছে। আর অর্নীল তাকে এর আগে কখনো এগুলো বলেই নি।
অর্নীল;; কিন্তু এখন আমি ঠিক আছি, কারণ এখন আমার কাছে তুমি আছো!
সিয়া;; আর,, আর আমি যদি কখনো চলে যাই তাহলে?
অর্নীল;; চলে যাওয়ার কথাই আসে না কারণ চলে যেতে আমি দিবোই না। এটাকে তুমি আমার জেদ বলো বা পাগলামি যা ইচ্ছে।
সিয়া;; হুমম।
অর্নীল;; হুমমম।
সিয়া;; আচ্ছা অর্নীল, আপনার অফিস টা যেনো কোথায়?
অর্নীল;; Macron Road, 22
সিয়া;; আচ্ছা।
অর্নীল;; কেনো?
সিয়া;; কিছু না রাখলাম।
অর্নীল;; আচ্ছা।
সিয়া ফোন কেটে দিয়ে আবার নিচে রান্নাঘরে চলে যায়। আর রান্নাঘরে যেতেই বিরিয়ানির গন্ধে যেনো সব জায়গা মৌ মৌ করতে লাগলো।
সিয়া;; আহাহাহাহা,, কি গন্ধ। আম্মু
দোলা;; হ্যাঁ
সিয়া;; বিরিয়ানি হলে আমাকে সুন্দর করে একটা বক্সে ভরে দাও।
দোলা;; কেনো?
সিয়া;; না মানে বাইরে যাবো।
দোলা;; সোজা কথা বলো না যে অর্নীলের কাছে যাবা।
সিয়া;; দুনিয়াতে এমন প্রথম মা হবে যে কিনা এমন একটা বিষয়ে এতো নরমাল থাকছে।
দোলা;; আমি তো তোর কাছে ট্রিট চাইতাম।
সিয়া;; কিহহহ, হায়রে।
দোলা;; আচ্ছা তুই বোস আমি প্যাক করে দিচ্ছি।
সিয়া;; আচ্ছা।
সিয়া গিয়ে সোফাতে বসে পরে। তখনই তার নানি নিচে আসে হাতে এক বক্স মেডিসিন নিয়ে।
শিউলি;; সিয়া!
সিয়া;; বুড়ি।
শিউলি;; এই দেখ তো আমার ঔষধ কোন গুলো। বের করে দে দেখি।
সিয়া;; দাও।
সিয়া মেডিসিন গুলো এক এক করে বের করে তার নানি কে খাইয়ে দেয়। তার বেশ সময় পর দোলা হাতে একটা বড়ো সড়ো বক্স আনে তাতে বিরিয়ানি ভরা ছিলো। সিয়া দেখে দাঁড়িয়ে পরে। সিয়ার হাতে বিরিয়ানি দিয়ে দিতে দোলা বলে ওঠে…..
দোলা;; সিয়া শোন না!
সিয়া;; বলো।
দোলা;; অর্নীল কে বলিস একদিন তার ফ্যামিলি কে নিয়ে আমাদের বাসায় আসতে। বা যাই হোক একদিন সবাই মিলে একটা ফ্যামিলি গেট-টুগেদার রাখলে কেমন হয়। অর্নীলের সাথে তুই কথা বলে দেখিস৷
সিয়া;; আচ্ছা।
এই বলেই সিয়া বের হয়ে পরলো। ওহহ সাথে স্কুটিও নিয়ে গিয়েছে। অর্নীল যেই রোড বললো সেখানে যেতে যেতেই প্রায় ৪০ মিনিট লেগে গিয়েছে। তার ওপর এই কড়া রোদ। সিয়ার কেনো যেনো এখন নিজেকে একটা ডেলিভারি বয় ওহ সরি ডেলিভারি গার্ল মনে হচ্ছে। নিজের হুলিয়া টাও তেমনই। ব্যাগ, মাথায় হ্যালমেট, হাতে খাবার। পুরো ডেলিভারি ওয়ালি। মেইন রোডে গিয়ে থেমেই সিয়ার নজর কারে একটা বড়ো সড়ো লিখা ACA (আবরার চৌধুরী অর্নীল) গ্রুপ। সিয়া বুঝে গেলো যে এটাই৷ সে স্কুটি টা পার্ক করে ভেতরে চলে গেলো। সিয়াকে কেউ আটকায় নি বা কেউ কিছু বলে নি কারণ সবাই তাকে চেনে। ইন ফ্যাক্ট একটা গার্ড এগিয়ে এসে সিয়াকে নিয়ে আসে। সিয়াকে নিয়ে অর্নীলের কেবিনে চলে যায়। অর্নীল তার কেবিনে কিছু লোকের সাথে কথা বলছিলো। অর্নীল কেবিনের বাইরে গার্ড কে দেখে ভেতরের লোকজন কে বাইরে যেতে বললো। তারা উঠে চলে আসে। তাদের যেতেই অর্নীল কড়া গলায় বলে……
গার্ড;; স্যার….
অর্নীল;; কি হয়েছে? সবকিছু ঠিক আছে তো? আর কে এসেছে?
তারপর গার্ড চলে যায়, আর সিয়া ভেতরে আসে। সিয়াকে দেখেই অর্নীল অবাক। উঠে যায়। সিয়া গিয়ে টেবিলের ওপর হাত থেকে বক্স টা রেখেই হাপাতে লাগে। অর্নীল কিছুই বুঝে না। টিস্যু নিয়ে গিয়ে সিয়ার গাল, কপাল মুছে দেয়।
অর্নীল;; তুমি এখানে?
সিয়া;; মা বাসায় বিরিয়ানি রান্না করেছে তো ভাবলাম যে আপনার জন্য নিয়ে যাই। তাই নিয়ে আসলাম।
সিয়ার কথায় অর্নীল তাকিয়ে থাকে।
সিয়া;; আরে কি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
অর্নীল;; ডেল….
সিয়া;; আমাকে দেখতে ডেলিভারি গার্লের মতো লাগছে আমি জানি।
অর্নীল;; হাহাহাহা।
সিয়া;; এই একদম ভেটকাবেন না।
অর্নীল বসে পরে আর সিয়ার হাত ধরে নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।
সিয়া;; কি করছেন এইসব!
অর্নীল;; শাশুড়ীর হাতের বিরিয়ানি এনেছো ভালো কথা কিন্তু খাইয়ে কে দিবে। আমি পারবো না। খাইয়ে দাও।
সিয়া;; আচ্ছা দিচ্ছি।
সিয়া অর্নীল কে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। আর অর্নীল খাচ্ছে।
অর্নীল;; আচ্ছা তুমি কি দিয়ে এখানে এসেছো?
সিয়া;; স্কুটি দিয়ে।
অর্নীল কিছুটা হেসে দেয়।
অর্নীল;; ওই যে তোমার খাটারা স্কুটি দিয়ে। একদিন যে আমার গাড়ির সামনে এসে পরলো ওইটা !
অর্নীলের কথায় সিয়া সরু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। আর অর্নীলেরও মনে হলো যে সে সবেমাত্রই কি বলেছে। অর্নীল কিছুটা গলা খাকাড়ি দেয়। তারপর আবার স্বাভাবিক হওয়ার ট্রাই করে। সিয়া এবার ইচ্ছে করেই বিরিয়ানির লোকমা তে একটা আস্তো মোটা কাচা মরিচ ঢুকিয়ে দেয়। যা অর্নীল দেখেই নি। সিয়া মিটিমিটি হেসে সেই লোকমা টা অর্নীলের মুখে পুড়ে দেয়। কয়েক কামড় দিয়েই অর্নীল ফট করে সিয়ার দিকে তাকায়। অর্নীলের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও খুব কষ্টে লোকমা টা গিলে ফেলে। সিয়া এবার জোরে হেসে দিয়েই অর্নীলের কাছ থেকে সরে আসে। মুখে হাত দিয়ে হাসছে। আর অর্নীল উঠে তার জেকেটের হাতা টা ফোল্ড করে ঢকঢক করে পানি খেয়ে দেয়। চোক আর নাকের ডগা টা লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে। একদম ঝালে নাজেহাল অবস্থা। সিয়া জানে যে অর্নীল ঝাল তেমন একটা খায় না তাই ইচ্ছে করেই মরিচ দিয়েছে। অর্নীল তো ঝালে মরে মরে দশা আর এদিকে সিয়া মুখ টিপে হাসছে।
সিয়া;; ভালো হইছে, আমার স্কুটি নাকি খাটারা। নিজে ভালো ভাবে গাড়ি চালাতে পারে না আর বলে আমার স্কুটি খাটারা। ভালো হইছে।
সিয়া গিয়ে তার হাত টা ধুয়ে ফেলে। অর্নীলের কাছে আসতেই দেখে অর্নীলের ঝাল কমে নি আরো মনে হয় বেড়েছে। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে।
অর্নীল বুঝে যে সিয়া ইচ্ছে করেই তাকে ঝাল খাইয়ে দিয়েছে। এবার অর্নীল আর না পেরে সিয়াকে এক টান দিয়ে নিজের সাথে লাগিয়ে নেয়। এক হাত সিয়ার কোমড়ে জরিয়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে সিয়ার দুই হাত আবদ্ধ করে ফেলে। সিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্নীল সিয়ার দুই ঠোঁট আকড়ে ধরে। সিয়ার চোখ গুলো বড়ো বড়ো হয়ে যায়। সিয়া খিচে চোখ বন্ধ করে অর্নীল কে কিছুটা ধাক্কা দিতে থাকে। কিন্তু সেগুড়ে বালি। অর্নীল চোখ বন্ধ করে সিয়াতে মগ্ন।যেনো নিজের সবটা দিয়ে আকড়ে ধরে আছে। ঝাল কমানোর এটাই একমাত্র উপায় তার কাছে। তবে সিয়া বেশ ছুটোছুটি করছে। ছুটোছুটির এক পর্যায়ে এসে সিয়ার পেছনের চুল গুলো খুলে যায়, চুল গুলো সামনে এসে পরে। আর অর্নীল এবার সিয়ার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে সিয়ার মাথার চুলের ভাজে হাত ঢুকিয়ে দেয়। এতে যেনো সিয়াকে আরো নিজের সাথে বেশি চেপে ধরলো। কয়েক মূহুর্ত পর অর্নীল নিজেই সিয়াকে ছেড়ে দেয়। অর্নীল এক ক্ষীন দম ছাড়ে। ঝাল গায়েব। তবে সিয়া কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে বেশ হাপাতে লাগে। মাথা তুলে অর্নীলের দিকে তাকায়। অর্নীল সিয়ার দিকে আবার কয়েক কদম এগিয়ে গেলে সিয়া ভরকে গিয়ে পিছিয়ে আসে, অর্নীল হেসে দেয়। সিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের মাথার সাথে সিয়ার মাথা ঠেকিয়ে দেয়।
অর্নীল;; সত্যি এখন আমার মন চাইছে আরেকটা মরিচ খেয়ে ফেলি।
সিয়া;; কি কেনো?
অর্নীল;; কেনো! তুমি জানো না। মরিচ খাই তারপর তোমাকে।
সিয়া;; ধুরু, আজাইরা কথা। আমি মরিচ খাওয়াতাম না যদি আগে জানতাম যে এমন কিছু হবে।
অর্নীল;; অতি চালাকের গলায় দড়ি।
সিয়াকে টেবিলের ডেস্কের ওপর বসিয়ে দিয়ে অর্নীল সিয়ার সামনে চেয়ারে বসে পরে। সিয়া বসে বসে নিজের পা দুলাচ্ছে। আর অর্নীল ল্যাপটপে কাজ করছিলো।
সিয়া;; আচ্ছা শুনুন।
অর্নীল;; বলো জান।
সিয়া;; আম্মু বলেছে যে একদিন আপনার ফ্যামিলি নিয়ে যেনো আপনি আমাদের বাসায় আসেন। মানে একটা ছোট্ট ফ্যামিলি ওকেশন।
অর্নীল;; আমি একা গেলে হবে!!
সিয়া;; আরে আংকেল কেও নিয়ে আসবেন। দরকার হলে রামু কাকা কেও। একা কেনো আসবেন।
অর্নীল;; আচ্ছা।
সিয়া;; সত্যি? মানে এতো জলদি রাজি হয়ে গেলেন?
অর্নীল;; আচ্ছা তাহলে রাজি না হই। যাবো না যাও।
সিয়া;; এই না না থাক। ঠিক আছে।
অর্নীল;; হুমম।
সিয়া;; আচ্ছা অনেক সময় তো হলো এসেছি এখন আমি যাই।
অর্নীল;; ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি সে দিয়ে আসবে।
সিয়া;; না থাক, উনার আর কষ্ট করতে হবে না। আমি একাই যাচ্ছি।
অর্নীল;; পাকনামি কম করে যা বলছি তাই শুনো।
সিয়া;; তাহলে আমার স্কুটি!
অর্নীল;; সেটাও বাড়ি পৌছে যাবে। এখন চলো।
অর্নীল সিয়াকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে পরে। সিয়া গাড়িতে উঠে পরে। অর্নীল কে বায় জানিয়ে এসে পরে। তবে সিয়া বাড়িতে যেতেই দেখে ভেতরে বেশ হৈচৈ। সিয়া কপাল কুচকে দ্রুত বাড়ির ভেতরে যায়। আর দেখে দোলা কান্না করছে, সিয়ার নানি অজ্ঞান। সিয়া দৌড়ে চলে যায়। নানির অতিরিক্ত প্রেসার বেড়ে গিয়েছে। আর এছাড়াও উনি অসুস্থ তাই অজ্ঞান হয়ে পরেছেন। সিয়া দ্রুত হস্পিটালে ফোন দেয়। এম্বুল্যান্স ছাড়া শিউলি বেগম কে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তার বেশ সময় পর এম্বুল্যান্স আসে। দ্রুত সিয়া আর তার মা শিউলি বেগম কে হস্পিটালে নিয়ে যায়। সেখানে যেতেই একজন ডক্টর আসে ড. সায়ন মাহমুদ নামে। উনি সাধারণত সিনিয়র ডক্টর, তবে হস্পিটালে আর কোন ডক্টর না থাকায় তাকেই দেখতে হয়। শিউলি বেগম ভেতরে সিয়া আর তার মা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সিয়া দোলা অনেক বুঝিয়ে বসিয়ে রাখে। আর সিয়া পায়চারি করছে। কিছু সময় পর ড.সায়ন কেবিনের ভেতর থেকে বাইরে আসেন।
সায়ন;; উনার ফ্যামিলি মেম্বার কে?
সিয়া;; জ্বি আমি
দোলা;; মা ঠিক আছে তো?
সায়ন;; দেখুন উনি একদম ঠিক আছে। তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে বয়সের চাপে এমন ছোট খাটো রোগ হবেই। আগের যে মেডিসিন গুলো ছিলো তা বাদ দিয়ে নতুন মেডিসিন দিচ্ছি আমি। উনাকে চিন্তা করতে মানা করবেন। কারণ চিন্তা করলে নার্ভের ওপর চাপ বাড়ে যার ফলে প্রেসারও বাড়ে। কফি, কোমলপানীয়, মাংস একটু কমিয়ে খেতে বলবেন।
দোলা;; জ্বি।
সায়ন এক নজর সিয়ার দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। আর সিয়া এদিকে অর্নীল কে ফোন করে সবকিছু বলে।
।
।
।
।
চলবে~~