তোলপাড়💓 পর্ব ৪

#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ০৪
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোন ক্রমেই কপি করবেন না কেউ)

‘ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাইকে দেখছি কিন্তু আহসানকে দেখছি না কেন অপা?’

খুব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন রঞ্জিত। অপা বলবে কি তার আগে স্রুতি বলে ওঠে,

‘আহসান একটু বাহিরে বের হয়েছে মামু। ওর নাকি বাড়িতে বসে বসে ভালো লাগছে না।’

‘ওহ, ভালো করেছে। কিন্তু তোমরা সব ভাইবোন কেন গেলে না আহসানের সাথে?’

‘ভাইয়া কি আমাকে নিয়ে কোথাও গিয়েছি বাপি?’ জান্নাত বলল।

‘নিয়ে যায়নি ঠিক আছে কিন্তু তুমি ছাড়াও এখানে স্রুতি আর জিসান আছে। আহসানের উচিত ছিল সবাইকে সাথে নিয়ে যাওয়ার।’

‘আহ রঞ্জিত! খাবার সময় এতো কথা বলবি না বলে দিলাম। এসব আমার মোটেও পছন্দ না। আর আহসান বড় হয়েছে। নিজের ভালো মন্দ বোঝে। ওর একা যেতে ইচ্ছে হয়েছে, তাই একাই গিয়েছে। এ নিয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি।’ বেশ ধমকের সুরে বললেন মুনতাহা তালুকদার। রঞ্জিত তার মায়ের কথায় উঠে বসে। মুনতাহার যেটা অপছন্দ সেটা রঞ্জিতের কাছেও অপছন্দ। কখনো মায়ের মুখের উপর কথা বলেনা রঞ্জিত। সবসময় মায়ের খুশির জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করে।

‘ঠিক আছে মা। ও হ্যাঁ তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম মা। এখন বলবো নাকি পরে?

‘কি কথা? এখনই বল পরে ভুলে যেতে পারিস। তোর অভ্যাস ভালো না। সবসময় সময়ের কথা সময়ে না বললে ভুলে যাস তুই। হা করে তাকিয়ে না থেকে বল কি বলবি।’

‘আগামীকাল বাবার নামে হসপিটাল টার inauguration ceremony হবে। আমি চাই তুমি ফিতে কেটে সবার আগে হসপিটালে প্রবেশ করো। তোমার পায়ের ধুলো দিয়ে আমি কাজ শুরু করতে চাই।’

‘এতো তাড়াতাড়ি সব হয়ে গেল! অবিশ্বাস্য। তুই যে কি? মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই।’

‘তোমার হুকুম বলে কথা। এভাবেই আমাকে শুধু হুকুম করে যাবে তুমি।’

‘হয়েছে এবার খাবার শেষ কর। নইলে আমাকে জানিস তো।’

————–_——————————————

একটা চিপা গলির সামনে গাড়ি থামাতে বলল তিয়াসা। আহসান গাড়ি থামিয়ে বলল, ‘তুমি exactly বলবে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?’

‘সামনেই আমাদের বাড়ি। চলুন জানতে পারবেন।’

‘তোমাদের বাড়িতে আমি অচেনা একজন মানুষ হয়ে কিভাবে যাব? আজব মেয়ে তো তুমি!’

‘চলুন না ভাইয়া প্লিজ। এতোদূর যখন এসেছেন, বাসায় না গিয়ে চলে যাবেন কেন? আমি মানছি না সেটা।’

‘তোমার বাসায় কে কে আছে বলোতো? তারা সবাই কি ভাববে না ভাববে!’

‘আমরা চারজন। বাবা মা আর আমরা দুই বোন। বাবার নাম নাজমুল শিকদার,আম্মুর নাম আম্বিয়া, আপু রিমি,আমি তিয়াসা।’

‘এই মেয়ে, আমি কি সবার নাম জানতে চেয়েছি নাকি? বয়সের মতোই কাজ তোমার।’

‘দেখুন ভাইয়া, আপনি অন্যদের মতো আমাকে বয়স নিয়ে ছোট বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না বলে দিলাম। আর এতো হেজিটেড করছেন কেন হুম? আপনি চলুন গিয়ে দেখতে পাবেন কিছু একটা।’

‘কি দেখবো? তুমি অবিলম্বে একই কথা বলে যাচ্ছো। তুমি চাইছো টাকি? কাকে দেখবো আমি?’

‘ভাইয়া প্লিজ চলুন না। এসেই তো পড়েছি। আর পাঁচ মিনিট ধৈর্য রেখে আমার কথা মতো চলুন। নইলে ভাইয়া আমি কিন্তু খুব কষ্ট পাবো।’

‘কি আর করার! আচ্ছা চলো।’

মনে মনে আহসান খুব বিরক্ত হচ্ছে। ভাবছে মেয়েটার সাথে আসাই ওর ভুল হয়ে গেছে। এখন এসে ফেঁসে গেছে। চলে যেতেও পারছে না। তিয়াসা যেভাবে আকুতি মিনতি করছে তাতে আর জোর দেখিয়ে কিছু বলতেও পারছে না যে ও বিরক্ত তিয়াসার কাজে। তিয়াসা আহসানকে নিয়ে বাসায় ঢোকা মাত্র একটা টমেটো ওদের কাছে ছুটে আসলো। কেউ ছুড়ে মেরেছে। আহসান টমেটো টা ক্যাচ ধরে নিল সাথে সাথে। তারপর সামনে তাকাতেই বড়সড় আকারে অবাক হলো। আহসান ভাবতেও পারেনি আচমকা রিমি এসে প্রকট হবে ওর সামনে। রিমি কাউকে না দেখে বেশ রেগেই টমেটো ছুড়ে মেরেছিল। ভেবেছিল তিয়াসাই হবে। কিন্তু তিয়াসার সাথে আহসানকে দেখবে তা ভাবেনি। যদিও রিমি এখনো জানে না যে ছেলেটি আহসান। ওর কাছে আহসান অচেনা এক ছেলে এবং পাওনাদার। এটাই জানে শুধু। রিমির চোখ ছোট হয়ে আসলো আহসানকে দেখে। আর আহসানের চোখ বড় হয়ে আসলো রিমিকে অকস্মাৎ দেখে। তিয়াসা গিয়ে বলল, ‘আপু দেখ আমি কাকে নিয়ে আসছি। তুই কিন্তু আমাকে ট্রিট দিবি বলে রাখলাম।’ তিয়াসা কথাটা শেষ করতেই রিমি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত হানার মতো রূপ ধারণ করলো। হাতের খুন্তিটা তিয়াসার সামনে তাক করে বলল, ‘এতো দেড়ি লাগে হুম? সামান্য একটা কাজ দিয়েছি তাতেও তোর ঢিলামি।আর এই মক্কেলকে কোথা থেকে ধরে এনেছিস তুই? কিসের ট্রিট হুম? তোকে আজ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেব দেড়ি করার অপরাধে।’

‘আপু কি যাতা বলছিস তুই? উনি কে জানিস? জানলে তোর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে। তওবা কর।’

‘আমাকে মানুষ চেনাস না বুঝলি। আমি ওনাকে চিনি আগে থেকেই।’

‘তুই চিনিস! ওএমজি, তাহলে তোর এক্সপ্রেশন এমন শুকনো কেন? ডাহা মিছা কথা বলছিস তুই।’

‘চুপ কর তুই। বলে রিমি আহসানের সামনে গিয়ে বলল, এই তুমি তো আস্ত একটা ছ্যাছড়া লোক দেখছি! আমি তো বলেছি সময় হলে বা আমার কাছে টাকা হলে আমি তোমাকে ফোন দিয়ে জানাবো,তুমি তোমার টাকা এসে নিয়ে যাবে। বিশ্বাস হলো না তাইনা? ভাবলে কোথাকার কোন মেয়ে তোমাকে বোকা বানিয়ে টাকা মেরে দিয়ে গেল। তাই আমার ছোট বোনকে খুঁজে বের করে বাড়ি অবধি চলে এলে!’

‘আপনি ভুল ভাবছেন। আমি তা মনে করিনি। প্লিজ ভুল বুঝবেন না।’

‘ঠিকই বুঝেছি। ভীতু লোক। তোমার টাকা আমি এক সপ্তাহের মধ্যে দিয়ে দেব। আমি যা বলি তাই করি। এটা রিমির যোবান। কখনো কথার হেরফের করি না।’

‘আপনার নাম তাহলে রিমি। খুব সুন্দর নাম।’

‘শুধু আমার নাম কেন? আমার বাপ দাদা চৌদ্দ গুষ্টির নাম ঠিকানা বলছি। লিখে নিয়ে যেতে পারো। আমি ভয় পাইনা ওকে?’

‘আপনি শান্ত হয়ে আমার কথাটা শুনুন প্লিজ। আমি জানতাম না এটা আপনার বাড়ি। আর তিয়াসা যে আপনার ছোট বোন সেটাও জানতাম না। বিশ্বাস করুন।’

‘আপু তুই কি বলছিস এসব? টাকা দিয়ে দিবি বলছিস। কিসের টাকা দিবি ভাইয়াকে?’

‘তুই কোনো কথা বলবি না তিয়াসা। এখানে বড়দের কথা হচ্ছে।’

‘আপনি শুধু শুধু আপনার ছোট বোনকে বকবেন না। বেচারি জানে না বলে জিজ্ঞেস করছে।’

‘সেটা আমার সমস্যা। আমার বোনকে আমি মারবো,কাটবো তাতে আপনার কি? আপনি এখন আমার সামনে থেকে যান। এক সপ্তাহ পর দেখা কইরেন। বাসা যখন চিনে ফেলেছেন, বাসায় এসেই টাকাটা নিয়ে যেয়েন। এখন যান এখান থেকে।’

‘আপু তুই আহসান ভাইয়ার সাথে এমন ব্যবহার করছিস কেন?’

‘কি বললি? এর নাম আহসান? এর নামতো,,,,,,! এই তোমার নাম কি হুম?'(ভ্রু উপর নিচ করে বলল রিমি)

‘আহসান।’

‘ওমনি হুম? ওমনি আহসান হয়ে গেল! আজব!’

‘আজব নয় আপু। ভাইয়ার নাম আহসানই। ভাইয়া আমাকে বলেছে সে তালুকদার বাড়ির আহসান। তোর সেই প্রিন্স,ক্রাশ, ড্রিম। বুঝলি?’

‘কঁচু! গতকাল আমি একে আহসানের কথা বলেছিলাম। তাই আজ প্লান বানিয়ে এসেছে আহসান সেজে। কি মতলব তোমার হুম? ওরে বাব্বাহ! আজ দেখি সুট বুট পড়ে আসছে। বেশভূষাও পালটে ফেলেছো? ভালোই তো মতলব পুষে আসছো। ভেবেছো কি হুম? ভেবেছো আমি বিশ্বাস করে তোমার গলায় ঝুলে পড়বো? সাংঘাতিক মিনমিনে লোক তো? নিশ্চয়ই মস্ত বড় একটা গাড়িও ভাড়া করে এনেছো?’

‘আপু ওটা ওনারই গাড়ি।’

‘গাড়িও এনেছে! বাহ মিলে গেছে আমার ইম্যাজিনেশন। রিমির সেয়ানা মাথা বলে কথা। যা ভাবি তাই হয়ে যায়।’

‘দেখুন আপনি কিন্তু না জেনে বলছেন সবটা। আমি সব কিছু ক্লেয়ার করে বলছি। প্লিজ ঠান্ডা মাথায় শুনুন।’

‘আমি কোনো কথা শুনবো না। তুমি বের হও আমার বাড়ি থেকে। এখনি বের হও নইলে আমি লোক ডাকতে বাধ্য হবো। ছদ্মবেশী লোক কোথাকার। বাঁচতে চাইলে বের হয়ে যাও এখনি। আর পাওনা টাকাটা ঠিক এক সপ্তাহ পর নিয়ে যেও।’

‘আপনি বিশ্বাস করুন আমিই আহসান। আমি ছদ্মবেশী নই।’ রিমি আহসানের কোনো কথাই আর শুনলো না। আহসানকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে বের করে দরজা লাগিয়ে তবেই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।

#চলবে,,
#বিঃদ্রঃ ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর গল্পের ঘটনা অনুযায়ী মন্তব্য করবেন। ভাল লাগবে তাহলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here