তোলপাড়💓 পর্ব ৩

#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ০৩
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোন ক্রমেই কপি করবেন না কেউ)

আহসান রিমির সাথেই কাটিয়ে দিল দিনটা। ফরম জমা দিতে গিয়েই যত সময় গেল। কিন্তু তবুও যেন আহসান সামান্য পরিমাণও বিরক্ত হয়নি। রিমি অবশ্য সারাদিন বকবক করে আহসানের মাথা খেয়ে ফেলেছিল। তারপরও আহসান হাসিমুখে সবটা শুনে গেল। বরং আহসান খুব এঞ্জয় করেছে রিমির প্যাচালগুলো। ডেয়ার অনুযায়ী বিকেলে আহসানের ফেরার কথা। আহসান ঠিক বিকেলেই ফিরেছে। ফেরার আগে জিসানকে ছোট করে একটা ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে রেখেছে। ফলে নিজ রুম অবধি খুব সচেতনতার সাথে আসতে পারলো আহসান। রাতে আবার বসলো ভাই বোনেদের হাট। এবার সবাই ছাদে গিয়ে গল্পে বসেছে। চারটে চেয়ার গোল করে বসানো। মানুষও চারজন। সর্বপ্রথম জিসান বলল,

‘কিরে ভাইয়া! এখনো কিছু বলছিস না কেন? সেই থেকে আনমনে হেসেই চলেছিস দেখছি। আমাদেরও একটু হাসার সুযোগ দে।’

‘ঠিক। বলনা ভাইয়া কি হয়েছে আজ তোর সাথে।’ জান্নাত বলল।

‘তেমন কিছু না তবে আজকের দিনটা আমার জন্য খুব স্পেশাল। টুডে ইজ মাই ডে।’

স্রুতি তেমন কিছু বলছে না। কিন্তু আহসানের কথা শুনে আর কথা না বলে থাকতে পারলো না।
‘কি এমন হলো রে? তোর এক্সপ্রেশন দেখে জান্নাত আর জিসানের সাথে আমারও খুব জানতে ইচ্ছে এখন।’

‘বললাম তো তেমন কিছুই হয়নি। জাস্ট বলবো আমি খুব এঞ্জয় করলাম আজকের দিনটা। লোকাল বাস, ফুটপাতের ফুচকা, জনসমাগম, একজনকে ধাক্কা দিয়ে অন্যজন আগে যাওয়া। জাস্ট ওয়াও ফ্যাক্ট। লাইফে ফার্স্ট এমন এক্সপেরিয়েন্স হলো। অল ক্রেডিট গোস টু মাই লিটিল ব্রাদার জিসান।’

‘ইয়াক! এসব আবার কেমন এক্সপেরিয়েন্স! আমার তো ভেবেই কেমন বিচ্ছিরি লাগছে। নোংরা পরিবেশের, নোংরা মানুষগুলোর সাথে তোর কিভাবে দিন ভালো গেল রে ভাইয়া?’ জান্নাত ওর কথাটা শেষ করার সাথে সাথে জিসান আস্তে করে একটা চাটা মারলো জান্নাতের মাথায়। মেরেই বলল,

‘তুই যেভাবে বললি যেন তুই অন্য গ্রহের মানুষ! ভাবছি ভাইয়ার মতো আমি একদিন এমন কোনো এক ভ্রমণে বের হবো। বেশ হবে। তারপর আমিও ভাইয়ার মতো এভাবে মিটিমিটি হাসবো। কি বলো গাইস?’

‘আহারে, মিটিমিটি হাসতে আসছে! ভাইয়াকে তো মানিয়েছে। কিন্তু তোমাকে? বাতাস লজ্জা পেয়ে অক্সিজেন দেওয়া বন্ধ করে দিবে তোমার হাসি দেখলে।’

জান্নাতের কথায় আহসান আর জিসান বাদে স্রুতি হো হো করে হেসে দিয়ে বলল, ‘একদম ঠিক বলেছিস জান্নাত।’

‘জান্নাত কি ঠিক বলেছে আপু? তুই এই পিচ্চি গাঁধী মার্কা মেয়েকে বল আমাদের অক্সিজেন গাছ দেয়। বাতাস নয়। এতোটুকু সেন্স নেই মাথায় আবার আসছে আমার হাসির কমপ্লিমেন্ট দিতে।’

‘আপু তোমার বেয়াদব ভাইয়ে আদব শেখাও প্লিজ। আমার কিন্তু আর একটুও ভালো লাগছে না।’

‘তোদের মাঝে থেকে আমার মুড খারাপ না থাকলেও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমার ঘুম পাচ্ছে সো গুড নাইট গাইস।’ বলে চলে গেল আহসান।

‘ঠিক বলেছে আহসান। আমারও সেম ঘুম আসছে আমিও যাই গুড নাইট এভরিবডি।’ এবার স্রুতিও চলে গেল।

‘আমি আর কি করবো? এই পেত্নীর সাথে গল্প করার কোনো ইচ্ছে নেই আমিও যাই। যাই গিয়ে একটা তামিল সিনেমা দেখি।’ জিসানও চলে গেল। জান্নাত একে একে সবাইকে চলে যেতে দেখলো বসে বসে। তারপর বলল,

‘যাহ সবাই চলে গেল! তো আমি কি করছি? একা একা এই ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত দেখার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আমার। নিজের রুমে যাই আমি।’

আহসান নিজের রুমে এসে লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালালো। মুহুর্তেই রুমের চারিদিকের মহল বদলে গেল। রুমের চারিদিকে নীল আভা। আহসান বিছানায় আধশোয়া হয়ে ভাবতে লাগলো রিমির কথা। চারপাশের হিমশীতল পরিবেশটা একটা আলাদা অনুভূতির জাগরণ করলো আহসানের মনে। কিছু কথা মনে পড়তেই ফিক করে হেসে দিল আহসান। তারপর বলল, ‘কি অদ্ভুত ব্যাপার! আহসানের সামনেই আহসানকে প্রপোজ করার কথা বলল মেয়েটি। শিট আমি তো মেয়েটির নামই জিজ্ঞেস করলাম না! মেয়েটির থেকেও আমি বেশি অদ্ভুত দেখছি। আজ তো এই ভেবে ঘুমও আসবে না। কি করি? কাল আবার সেই জায়গাটায় যাই বরং। হ্যাঁ তাই করি। লাক ভালো হলে দেখা হয়েও যেতে পারে মেয়েটির সাথে। তারপর নাহয় আমার আসল পরিচয় আর তার নাম জানা যাবে। এখন তার কথাই ভেবে রাত কভার করি।’

গতকালের সেই জায়গাটাতে একই সময়ে আহসান রিমির জন্য ওয়েট করতে লাগলো। ওয়েট করেই যাচ্ছে কিন্তু রিমির দেখা মিলছে না। এবার গাড়ি থেকে নেমে আশে পাশে চোখ বুলাতে লাগলো।

‘আচ্ছা উনি কি এই পথ দিয়ে রোজ যাতায়াত করেন, নাকি গতকাল দরকারি কাজের জন্য এসেছিলেন? ওনার বাড়ি কি আশেপাশে?’ এমন নানানরকম প্রশ্ন একা একাই নিজেকে করতে লাগলো আহসান। কিছুক্ষণ পর হাতের ডান সাইডের গলিটায় পা বাড়ালো কি যেন ভেবে। কিছুদূর যেতেই একটা কম বয়সী মেয়ে আর দুটো বখাটে টাইপ ছেলেকে দেখতে পেল। ছেলে দুটো মেয়েকে বাজে কথা বলে উত্ত্যক্ত করছিল। আহসানের কাছে বিষয় টা একদমই পছন্দ হয়নি বলে দ্রুত গতিতে সেখানে গিয়ে পৌঁছালো।

‘এভাবে একটা বাচ্চা মেয়েকে harass করতে লজ্জা লাগছে না?’

মেয়েটি ভয়ে কাঁপছে। চোখ টলমল করছে। এতোক্ষণ কেউ মেয়েটির হয়ে কথা বলছিল না বলে মেয়েটির ভয় ধিরে ধিরে বাড়ছিল। তবে এখন কিছুটা স্বস্তি পেল আহসান এগিয়ে আসায়। মেয়েটি বলল, ‘ভাইয়া আমাকে এই বাজে লোকগুলো অশ্লীল কথা বলছে। বাসায় যেতে দিচ্ছে না।’

আহসান মেয়েটির মাথায় হাত রেখে বলল, ‘কিছুই হবে না এদের পুলিশে দিয়ে দিলেই শিক্ষা হবে।’ বলে ফোন বের করল। তাই দেখে ছেলে দুটোর মধ্যে একজন বলে ওঠে, ‘হিরোগিরি দেখাতে আসছোস নাকি? যা ভাগ এখান থেকে। এটা আমাদের এলাকা। এখানকার মেয়েরা আমাদের সম্পদ তোকে আগ বাড়িয়ে আসতে হবে না।’ আহসান পুলিশের সাথে কথা বলতে পারলো না। তার আগেই ছেলেটিকে সপাটে একটা চড় দিল। ছেলেটি কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ে।

‘ভালো শিক্ষার অভাবে তোমরা দিনকে দিন হিংস্র হয়ে যাচ্ছো। মেয়েদের মানুষ মনে হয়না তাইনা? ওয়েট করো দু মিনিটের মধ্যে পুলিশ চলে আসছে।’ ছেলে দুটো আর ঝামেলা পাকালো না। চারিদিকে লোকজনের ভীড় জমেছে। তাই পরিস্থিতি খারাপ দেখে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেল।

মেয়েটি মনের ভয় কাটিয়ে হেসে দিয়ে বলল,’থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া।’

‘থ্যাঙ্কিউ জানাতে হবে না। তুমি এভাবে একা বাজারে কেন এসেছো?’

‘আমার তো ভাই নেই তাই আসতে হয় মাঝে মাঝে। ছেলেগুলো এমনই রোজ কাউকে না কাউকে বিরক্ত করে। আজ আমাকে যেভাবে করলো।’

‘হুম, এদের জন্য সবাইকে একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানাতে হবে। এক দুজনে কাজ হবে না। তুমি চিন্তা করো না এদের ব্যবস্থা আমি করবো।’

‘আপনি খুব ভালো ভাইয়া। নাম কি আপনার?’

‘আহসান তালুকদার। আর তোমার?’

‘তিয়াসা, কিন্তু ভাইয়া আপনি কোন আহসান?(গলায় বিস্মিত ভাব টেনে বলল)

‘কোন আহসান বলতে?’

‘মানে কাছেই যে একটা মস্ত বড় তালুকদার বাড়ি আছে সেই বাড়ির আহসান নাকি?’

‘হ্যাঁ, আমাকে চেনো নাকি?’

‘আপনাদের কে না চেনে? আপনাদের ফ্যামিলি নিয়ে আমাদের মতো পরিবারের লোকেরা কতই না আলোচনা করে। কিন্তু একজন তো একটু বেশিই। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি সেই আহসান!’

‘একজন একটু বেশি মানে? কে সে?’

‘আমার সাথে চলুন দেখতে পাবেন।’

‘কোথায় যাব?’

‘গেলেই জানতে পারবেন। প্লিজ ভাইয়া চলুন না।’

‘কতদূর যাবে? আমার হাতে সময় নেই একদম। একজনের জন্য ওয়েট করছিলাম।’

‘এইতো কিছুদূর হাঁটতে হবে। বেশিক্ষণ লাগবে না।’

‘ওকে তাহলে চলো আমার গাড়িতে করে যাই। প্রবলেম হবে কি? আসলে আমার খুব তাড়া।’

‘না চলুন কোন প্রবলেম নেই।’

আহসান তিয়াসার ভাব ভঙ্গি দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু যেভাবে রিকুয়েষ্ট করলো, আহসান আর মানা করতে পারলো না।

‘এই তিয়াসা এখনো আসছে না কেন? সেই কখন পাঠালাম বিরিয়ানির মসলা আনতে, এখনো আসছে না। রিমি রাগে গিজগিজ করছে আর খুন্তি নাড়ছে। আজ বাড়ি আসুক পুরো ধুয়ে দেব। আব্বু আম্ম বাসায় নেই ভালোই হয়েছে। এই সুযোগে তোকে যদি একটু সঠিক পথে আনতে পারি। আব্বু আম্মুর জন্য কিছুই বলা যায়না তোকে। তুই আজ শুধু আয় বাড়ি!’

#চলবে,,
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেউ কেউ বলছেন এটা কোনো কাহিনির সাথে মিলে যাচ্ছে তাই ভাবছি গল্পটা ডিলিট দেব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here