তোলপাড়💓 পর্ব ২

#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ০২
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোন ক্রমেই কপি করবেন না কেউ)

গোলুমোলু লাল টমেটোর মতো শুনে আহসান ওর মুখে চোখে হাত দিয়ে দেখতে লাগলো। তা দেখে রিমি বলল, ‘কি হয়েছে? তুমি এরকম করছো কেন?’

‘কিছু না। আপনি একটা কথা বলুন, ছোট বেলায় কি দেখেছেন না দেখেছেন সেই জের ধরে এখনো আপনার প্রিন্সের ফেসের বর্ণনা পোষণ করে রাখবেন নাকি? প্রেজেন্ট সে দেখতে কেমন সেটা বলুন।’

‘আরে মশাই আমি কি তাকে প্রেজেন্ট দেখেছি নাকি যে বলবো? তবে আই হোপ ভালোই হবে দেখতে। আমার প্রিন্স বলে কথা। আর তুমি রাগ করো না আমি তুমি করে বলছি বলে। আসলে আমি এমনই। টিন এজারের ছেলে মেয়েকে আমি তুমি করেই বলি। সো ডোন্ট মাইন্ড।’

‘ইট’স ওকে। তবে আমাকে দেখে বোঝা না গেলেও আমার বয়স ২৬ বছর।

‘ওহ! বোঝাই যাচ্ছে না দেখছি। আচ্ছা তুমি তোমার নাম্বারটা আমাকে দিয়ে রাখো। আমি যেদিন পারবো ফোন দিয়ে বলবো টাকা নিয়ে যেয়ো।’

‘ওকে, তবে আপনি কি খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে আছেন?’

‘হ্যাঁ, আমাকে কলেজে যেতে হবে বলে চলে যেতে নেয় রিমি। কিন্তু কি যেন ভেবে আবারও আগের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর বলল, তুমি এতোগুলা টাকা কোথায় পেলে বলোতো? গেটাপ দেখে তো মনে হয়না ভালো ফ্যামিলির ছেলে।’

‘হোয়াট ডু ইউ মিন মিস?’

‘থুক্কু, ভালো ফ্যামিলি বলতে আমি স্বচ্ছল পরিবারের কথা বললাম। তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না। ব্যাপার কি হুম? চুরি টুরি করো নাকি?’

‘ছি ছি, আমি আসলে ওই একরকম কাজ করি আরকি।’

‘ওই একরকম আবার কেমন কাজ? কাজের নাম নেই কি?’

‘আছে তো। ওয়েট করুন ভেবে নেই।’

‘মানে! ভেবে বলবে মানে?’

‘মানে ওই কাজকে কি বলে আমি তো তা জানি না তাই বললাম ভেবে বলি।’

‘কি এমন করো তুমি?’

‘আমি হচ্ছি গিয়ে, ওইতো সেলসম্যান! আমি একজন সেলসম্যান।’

‘তো এটা বলতে এতো সময় লাগলো কেন?’

‘আপনি কি আমার শিক্ষিকা যে পরাপর প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন! আমি আমার টিচারের প্রশ্নেও এতটা নার্ভাস হইনি যতটা এখন হচ্ছি।’

‘সরি, আচ্ছা তুমি সেলসম্যান হয়ে এতোগুলু টাকা কিভাবে একজনকে দিয়ে দিলে? কষ্ট লাগলো না?’

‘আজ মাইনে পেয়েছিলাম। আর কষ্ট পাইনি কারণ টাকার জন্য ‘আমার জীবন তো আর চলে যাচ্ছে না।’

‘অন্য একদিন কথা হবে। আজ আমার হাতে একটুও সময় নেই। আমি তাহলে গেলাম।’

‘আপনি তাহলে কলেজ ছাত্রী?’

‘না, আমি এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।’

‘তাহলে কলেজে কি কারণে যাচ্ছেন?’

‘আমার বোনের জন্য এপ্লাই করতে যাচ্ছি। ফরম জমা দেব।’

‘ও বুঝলাম।’

‘ওকে বায়, ও হ্যাঁ তাড়াতাড়ি নাম্বারটা দাও।’

‘আপনি কিছু মনে না করলে আমি কি আপনার সাথে যেতে পারি?’

কথাটা শুনে রিমি যেন আকাশ থেকে পড়লো। অচেনা একজন লোক ওর সাথে যেতে চাইছে। ব্যাপার টা তো আজবই।

‘লোকটা নিশ্চয়ই আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তাইতো আমার সাথে যেতে চাইছে। আমার কি হুম? আমি তো বলেছি টাকা দিয়ে দেব। তাহলে ভয় কিসের?’ -মনে মনে।

‘আপনি কি কিছু ভাবছেন? আচ্ছা আমাকে বিশ্বাস না করলে থাক। আমি চলে যাচ্ছি।’

‘আরে না, কথাটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের নয়। কথাটা হচ্ছে তুমি আমার সাথে কেন যাবে? কাজ নেই?’

‘না আজ ছুটি। আর আমার ইচ্ছে হচ্ছে আপনার সাথে যেতে তাই আরকি।’

‘ইচ্ছে হচ্ছে নাকি আমি পালিয়ে যাব টাকা না দিয়ে সেই ভয়? মনে মনে। আচ্ছা চলুন তাহলে। আমি কিন্তু বাস দিয়ে যাব।’

‘তো?’

‘তো আর কি চলো।’

আহসান বড় করে হাসি দিয়ে বলল, ‘থ্যাঙ্কিউ।’

বাসে উঠেছে দুজন। লোকাল বাস সিট পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। তারপরও দুজন পাশাপাশি দুটো সিট পেয়ে গেল। এদিক দিয়ে বাসও ছেড়ে দিল। আহসান রিমির দিকে চেয়ে বলল, ‘আপনি বসুন আমি দাঁড়িয়ে থাকি।’

‘আজব পাবলিক তো! দেখছো দুটো সিট তাও দাঁড়িয়ে কেন যাবে? বসো এখানে।’ বলে রিমি জানালা সাইডে গিয়ে বসল। আহসান ভেবেছিল রিমি দ্বিধাবোধ করবে তাই দাঁড়িয়ে যাওয়ার কথাটা বলেছিল। যখন শুনলো রিমি কিছু মনে করছে না তখন আর সংশয় না করে বসে পড়ে রিমির পাশের সিটে। আহসান অনেকক্ষণ ধরে কিছু বলবে বলবে ভেবেও বলে উঠতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর রিমিই বলল, ‘তুমি এই মাসে চলবে কিভাবে? টাকা তো সবই দিয়ে দিলে।’

‘সমস্যা নেই, গ্রামে আমার বাবা মা থাকে তাদের থেকেই নেওয়া যাবে।’

‘বাবা মার বয়স হয়েছে। যোয়ান মদ্দ ছেলে হয়ে তাদের থেকে টাকা চাইতে লজ্জা করবে না?’ রিমি বেশ রেগে বলল কথাটা।

‘না মানে, আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ম্যানেজ করে নেব কোনো এক ভাবে। আর এ নিয়ে কথা না বাড়ানোই ভালো। কারণ যা হয়ে গেছে তা আর ফিরে আসবে না।’

‘হুম তাও ঠিক। আচ্ছা বলো তোমার ফ্যামিলিতে কয়জন মেম্বার্স?’

‘পাঁচজন। আমি বাপি-মম, দাদিয়া আর ছোট বোন।’

‘তুমি বাবা মাকে বাপি-মম বলো নাকি?’

‘না আমি কি তাই বলেছি নাকি? আমি বলেছি বাবা মা।’

‘আমি স্পষ্ট শুনলাম।’

‘ভুল শুনতে পারেন।’

‘ওহ, কি জানি? সকালের শুরুটাই খারাপ ঘটনা দিয়ে হলো। চিল্লাচিল্লি করতে গিয়ে মনে হচ্ছ আমার কানটাই গেছে।’

‘আপনি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?’

‘জ্বি।’

‘আপনি আপনার প্রিন্স মানে আহসানকে কিভাবে চিনলেন? মানে ছোটবেলায় কিভাবে চিনলেন বা দেখলেন?’

‘এটা খুব লম্বা ঘটনা। আমি শর্ট করে বলছি। স্কুল থেকে আসা যাওয়ার পথে আমার চোখ আটকে যায় এক বিশাল বাড়ির দিকে। খুব পছন্দ হয়েছিল বাড়িটা আমার। ভেতরে ঢোকার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু দারোয়ান থাকতো বলে কখনোই সেই সাহস দেখাইনি।’

আহসান খুব কৌতুহল দেখিয়ে বলল, ‘তারপর?’

‘তারপর আমি রোজ দাঁড়িয়ে থাকতাম আহসানদের বাড়ির রাস্তায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা গাড়ি বের হতো সেই গাড়িতেই আমি আহসানকে দেখেছিলাম।’

‘ওহ ভেরি ইন্টারেস্টিং। তো তার সম্পর্কে সব জানেন তাহলে?’

‘ মানুষের মুখে যা শুনেছি সেটুকুই জানি। বেশি জানতে হলে আমার প্রিন্সকে আমার সামনে আসতে হবে।’

আহসান আনমনে বলল,’সামনেই তো আছি।’

‘কি বললে?’

‘না মানে সামনে আসলে কি করবেন?’

‘ডিরেক্ট প্রপোজ করবো। বলবো আমি তার জন্য অনেকগুলো বছর ওয়েট করে ছিলাম। এবার আমাকে বিয়ে করে তাকে অপেক্ষার অবসান ঘটাতে হবে। আমি আর কিছুই জানি না।’

‘মানে সে কেমন দেখতে শুনতে সেটা বিচার বিবেচনা না করেই ডিরেক্ট প্রপোজ!’

‘হুম, দেখতে শুনতে ভালোই হবে। এখন নিশ্চয়ই আর মোটু নেই। ধরো তোমার মতো তারখাম্বা, উজ্জ্বল শ্যামলা আর গুড লুকিং হলেই হলো। এতটা তো হবেই।’

‘তারখাম্বা মানে?’

‘মানে তারখাম্বার মতো লম্বা।’

‘এই মেয়ে কি রে ভাই? পুরোই পাগলী তার প্রিন্স আহসানের জন্য। পাগলী মেয়ে এখনো জানে না তার সাথেই আহসান বসে আছে।’ বিরবির করে।

‘ওই তুমি কি বলছো? আস্তে আস্তে কেন বলছো? জোড়ে বলো।’

‘কিছু না ভাবছি আপনার ইচ্ছেটা খুব জটিল আর ইউনিক। দোয়া করি আপনার ইচ্ছেটা যেন খুব শীঘ্রই পূরণ হোক।’

‘এই কথাটায় তোমাকে একটা স্পেশাল ফুচকা খাওয়াবো। আগে কাজটা হয়ে যাক তারপর।’

#চলবে,,

বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কেউ কপি করবেন না। আমার প্রবলেম হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here