তোলপাড়
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-১২
_______________
অরূণীর কথা মত রুদ্র পরের দিন সকালে কলেজের সামনে যায়।সাড়ে আট’টায় আসতে বলেছে অরূণী। রুদ্র একদম সাড়ে আট’টায় যায় সেখানে। আট’টা পঁয়তাল্লিশ বেজে গেলেও অরূণীর দেখা মিলল না।এভাবে গার্লস কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে রুদ্রের খানিক বিরক্ত লাগলো।বার বার কব্জিতে দেওয়া ঘড়ি’টার দিকে তাকাচ্ছে।তাহলে আজও কি মেয়ে’টা রুদ্র’কে মিথ্যে বলল? এই চিন্তা’টা রুদ্রের মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে।অন্যদিকে রুদ্র অরূণীর নামও জানে না যে কারো কাজে জিজ্ঞেস করবে। কলেজের পাশে চায়ের দোকানে বসলো রুদ্র। রুদ্রের মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে। সাড়ে নয়’টা বেজে গেল। রুদ্র অরূণীর ফোন নম্বরে কল করে দেখলো ফোন সুইচ অফ। কালকে রাতে অরূণীর কথা শুনে রুদ্রের কোন কারণে মনে হয় নি যে অরূণী ও’কে আবার বোকা বানাতে কলেজের সামনে আসার কথা বলেছে। রুদ্রের শরীরের শিরায় উপশিরায় রাগ উপচে ওঠেছে। কিছুক্ষণ পর রুদ্র বুঝতে পারলো আবার মিথ্যা বলা হয়েছে ও’কে। রাগে রুদ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে।শরীর গিরগির করছে। রুদ্র ভেবেছিল মেয়ে’টার অবশেষে চৈতন্য হয়েছে। কিন্তু না! এভাবে একটা মানুষ মিথ্যা বলতে পারে? রুদ্রের বুঝে আসছে না। অরূণীর কথা বিশ্বাস করে এখানে আসার অপরাধে রুদ্রের নিজের কান ধরে ওঠ-বস করতে ইচ্ছে হচ্ছে। রুদ্র শুধু ভাবছে জীবনে যদি কখনো ওই মেয়ের সাথে দেখা হয় কানের পর্দা ফাটিয়ে দিবে।
এক মাস কেটে গেল। রুদ্র ওই টাকার কথা ভুলতে বসেছে। সাথে অরূণীর কথাও। এই এক মাসে অরূণীর ফোন থেকে একবারও কল আসে নি,না এসেছে ম্যাসেজ। টাকা পায় নি এ নিয়ে আফসোস নেই কিন্তু একটা মহা বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে রুদ্র হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। কিন্তু এতসব মিথ্যে বলেছে অরূণী সেই ক্ষোভ রুদ্রের মন থেকে একদম মুছে যায় নি। জীবনে যেখানে বসেই অরূণীর সাথে দেখা হোক কানের পর্দা ফাটিয়ে দিতে ভুল করবে না।অন্যদিকে রুদ্র ভেবেছিল অরূণী আবার ফোন দিবে কিংবা ম্যাসেজ করবে। এভাবে একদম উবে যাবে রুদ্র সেটা ধারনা করে নি।
হঠাৎ একদিন রুদ্রের মনে হলো মেয়েটার বিষয় দারোয়ানের কাছে আবার জিজ্ঞেস করবে। দারোয়ান কেন এই বিল্ডিং-এ একটা মেয়ে মানুষ ঢুকতে দিয়েছে?এত সব কিছুর পরেও রুদ্রের মনের কোনো এক কোণে ক্ষীণ একটা আফসোস থেকে গেল,অরূণীর সাথে দেখা না হওয়ার আফসোস।
দারোয়ানের কাছে রুদ্র জিজ্ঞেস করল, “যে মেয়ে একদিন আপনার কাছে আমার জন্য চিঠির খাম দিয়ে গেছে সে মেয়ে যে দুইদিন বাসায় ঢুকেছে সেটা কি আপনি দেখেন নি?”
কার্তিক কর্মকারের আত্মীয় সেখানে দারোয়ান ঢুকতে না দেওয়ার কে?এই কথা’টা তো রুদ্রের কাছে বলতে না করেছে অরূণী।এর থেকে বড় ব্যাপার হলো অরূণীর থেকে টাকা খেয়েছে দারোয়ান। সেখানে রুদ্রের কাছে এসব কিছু বলা প্রশ্নই আসে না।
দারোয়ান বলল, “কও কি?কেমনে ঢুকছে বাসায়? ওইদিন তো গেট পর্যন্ত আইছিলো।”
– “কিভাবে ঢুকেছে সেটা আমি জানবো কিভাবে?সেটা তো জানবেন আপনি। দারোয়ান কাকা আমার কিন্তু আপনাকে সন্দেহ হচ্ছে।”
দারোয়ান অবাক হওয়ার ভান করে বলল, “এইডা আবার কেমন কথা কইলা বাজান?আমি তো মাঝে মাঝেই এদিক-ওদিক যাই। কোন ফাঁকে ঢুকে পড়ছে আমি কমু কেমনে?”
দারোয়ানের কাছ থেকে কিছুই জানা গেল না। আমজাদ হোসেনের বাসায় গিয়ে তাড়া খাওয়ার রাগ’টা রুদ্রের চলে গিয়েছিল। কিন্তু ফের আবার কলেজের সামনে গিয়ে বোকা হয়ে এসে সেই রাগ’টা দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
রেস্টুরেন্টে বসে খেতে খেতে রুদ্র কিরণ’কে বলল, “এই সেই ঐতিহাসিক রেস্টুরেন্ট যেখানে দুই হাজার টাকা ধার নামক এক যুদ্ধের ঘোষণা হয়েছিল।”
কিরণ হেসে বলল, “মেয়েটার তো এখন কোনো খোঁজই নেই।আমি তো ভেবেছি প্রেম ট্রেম হয়ে যাবে।”
রুদ্র উপেক্ষা পূর্ণ গলায় বলল, “বলেছিলাম না ওসব ভালোবাসা টালোবাসা সব ফাজলামি?মেয়ে মানুষ চেনা আছে।তোর কথা মত লাই দিলে এতদিন আমি আরেক’টা ছ্যাকা খেতাম।”
– “শেষ পর্যন্ত আর টাকা’টা পেলি না। কিন্তু মেয়েটা হঠাৎ করে এভাবে উধাও হয়ে গেল! ব্যাপার’টা আমায় একটু-আধটু ভাবায়।”
রুদ্র মাংসে কামড় দিতে দিতে বলল, “আবার নতুন কোনো ছেলের পিছনে লেগেছে।”
কিন্তু রুদ্র আর কিরণের এতসব ভাবনা-চিন্তা,ধারণা, কল্পনা ঝল্পনা মিথ্যে করে দিয়ে হঠাৎ দারোয়ান রুদ্র’কে মোটামুটি বড়সড় একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে যায়। রুদ্র তো অবাক। শপিং করে পাঠিয়েছে কে? কিন্তু রুদ্রের ধারণা মিথ্যে হলো। ব্যাগ খুলে যা দেখলো তাতে রুদ্রের চোখ চড়াকগাছ। একটা এক্স-রের কাগজ, হাসপাতালের আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ। রুদ্র ঠিক বুঝতে পারলো না এসবের মানে কি?না-কি দারোয়ানের কোথায়ও ভুল হচ্ছে?প্রচণ্ড বিস্ময় নিয়ে রুদ্র দারোয়ানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “চাচা এসব কে পাঠিয়েছে? আপনি শিওর তো এগুলো আমার জন্য পাঠিয়েছে?”
– “ওই মাইয়ায় পাঠাইছে।”
ওই মেয়ে’টা কে সেটা রুদ্রের বুঝতে অসুবিধা হলো না। রুদ্র চমকে গেল আবার। কিন্তু এগুলো কেন পাঠিয়েছে সেটা ঠিক বুঝতে পারলো না। রুদ্র বলল, “আপনায় আমি বলেছিলাম না ওই মেয়ে আসলে আমায় ফোন করতে?”
দারোয়ান বলল, “তুমি তো বাসায় আছিলা না।”
কেন পাঠিয়েছে এসব এই উত্তর রুদ্র খুঁজে পেলো এক চিঠিতে। চিঠিতে লেখা-
“আমার মনে হচ্ছে আপনার আর আমার সাথে দেখা হওয়া সম্ভব নয়।দুই দিন আপনার বাসায় গিয়ে আপনায় পেলাম না। আপনি হয়ত ভেবে নিয়েছেন ওইদিন কলেজের সামনে আসার ব্যাপার’টা আমি মিথ্যে বলেছি। কিন্তু মিথ্যে না।ওইদিন কলেজে আসার পথে গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পা ভেঙে যায়। গালে সু বিশাল একটা দাগ পড়ে গেছে। কপাল কেটে গেছে,সেখানেও ক্ষত।আমার মনে হচ্ছে আপনার সাথে অতসব মিথ্যা বলার জন্য আল্লাহ শাস্তি দিয়েছে। চেহেরার বীভৎস অবস্থা আমার।
সেদিন আপনি ফোনে ওসব বলার পর আপনার ওপর অভিমান করে ভেবেছি টাকা ফেরত দিয়ে দিবো আর আপনার সামনে যাবো। কিন্তু টানা এতদিন হসপিটালে থাকার পর আপনার ওপর সেই রাগ-অভিমান এখন নেই। আপনি হয়ত আমার কথা বিশ্বাস করবেন না তাই ওসব পাঠিয়েছি প্রমান হিসেবে।আর আমার মোবাইল’টাও ভেঙে গেছে।আপনার পুরানো সিমের নম্বর’টা মুখস্থ ছিলো কিন্তু সেটা বন্ধ।নতুন সিমের নম্বর’টা ফোনে সেইভ করা ছিলো।তাই ফোন দিয়ে জানাতেও পারি নি। এতসব প্রমানের পরও আমি জানি আপনার মনে একটা সন্দেহ সন্দেহ ভাব থাকবে। সেজন্য আমি আমার একটা ছবি স্টুডিও থেকে বের করে পাঠিয়ে দিয়েছি।ব্যাগের ভিতর আছে ছবি’টা দেখে নিতে পারেন।”
এই টুকু লিখে কিছু’টা জায়গা খালি রেখে নোটে লেখা-
“আপনি কোনো কারণে ভেবেন না যে আমি আপনার টাকা ফেরত দিবো না।আপনার টাকা ফেরত দিবো কোনো এক বসন্তে। গ্রীষ্ম,বর্ষা,শরৎ,হেমন্ত,শীত,বসন্ত,এই বসন্ত কিন্তু সেই বসন্ত নয়।এই বসন্ত প্রেমের বসন্ত। আপনি আমার সাথে প্রেম করলেই টাকা ফেরত। আমি আপনার ওপর অভিমানে ভেবেছি টাকা ফেরত দিয়ে দিবো কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এখন আবার বদলে ফেলেছি।প্রেম বসন্ত ছাড়া আমি আপনার টাকা ফেরত দিবো না।
আর আপনার যদি আমার সাথে কথা বলার ইচ্ছে থাকে তাহলে দারোয়ান চাচার কাছে আপনার ফোন নম্বর দিয়ে দিয়েন। নয়ত আপনার বাসায় আবার যেতে হবে ফোন নম্বরের জন্য। জানি এবার গেলেও আপনায় পাবো না।”
চিঠি’টা পড়া শেষে রুদ্র সর্বপ্রথম ব্যাগের ভিতর অরূণীর ছবি খুঁজলো।রুদ্র দেখলো সত্যি সত্যি অরূণীর একটা ছবি ব্যাগে।গালে আঘাতের দাগ,কপালেও ক্ষত। রুদ্র এখন বিস্ময়ের সর্বোচ্চ চূড়ায়। এসব বুদ্ধি পায় কোথায় মেয়ে’টা?নিজের ছবি, হসপিটালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ-পত্র সব ব্যাগ ভরে পাঠিয়ে দিলো!
কিরণ হাসতে হাসতে শেষ এসব দেখে। ডাক দিয়ে দিয়ে চিঠি’টা পড়তে লাগলো। রুদ্র ওঁর হাত থেকে টান মেরে চিঠি’টা নিয়ে যায়। কিরণ বলে, “এই ধরণের বুদ্ধি কোথায় পায় মেয়ে’টা? এক্সরের কাগজ পর্যন্ত পাঠিয়ে দিয়েছে।সাথে ছবিও।”
কিরণ আবার হাসতে লাগলো। রুদ্র চিন্তিত মুখে বলল, “কিরণ আমার মনে হয় ছবি’টা এডিট করা।ওই মেয়েকে বিশ্বাস করতে বুকে লাগে।এসব কাগজপত্র সব ফেইক।”
– “এডিট করা ছবি আর মিথ্যে এক্সরের কাগজ পত্র দিয়ে মেয়েটার লাভ কী?”
– “আমার সাথে এত সব কাণ্ড ঘটিয়েছে তাতে কি মেয়েটার কোনো লাভ হয়েছে? জগতে অনেক রকমের অদ্ভুত মানুষ আছে।কোনো কারণ ছাড়াই অনেক কিছু করে।”
কিরণ হালকা গলায় বলল, “আরে ধুর! এসব মিথ্যে না।”
একটু থেমে কিরণ ব্যথিত গলায় বলল, “ইস! মেয়েটার চেহেরার অবস্থা কি হয়েছে।”
রুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল, “তুই এত সহজে মানুষ কে বিশ্বাস করিস! তাও এমন একটা বিষক্ত মেয়ে’কে। তোর এমন বিশ্বাসী মনোভাবের প্রশংসা না করে পারি না।”
– “এসব অবিশ্বাস করার কি হলো?”
হঠাৎ কিরণ কি যেন ভেবে চমকে ওঠে বলল, “রুদ্র হসপিটালের কাগজ গুলো দেখ তো। মেয়েটার নাম লিখা আছে কি-না?”
রুদ্র কিরণের কথা মত তড়িঘড়ি করে নাম খুঁজলো। নামের জায়গায় কালো কালি দিয়ে ঘুটঘুটে করা কাটা। রুদ্র কিরণ’কে দেখিয়ে বলল, “দেখ। এত কাঁচা কাজ ওই মেয়ে করবে না।ওই মেয়ের শরীরের প্রতিটা পশমের গোড়ায় গোড়ায় বুদ্ধি।”
কিরণ হতাশ হয়ে বলল, “তুই তাহলে তোর নম্বর’টা দারোয়ান কাকার কাছে দিয়ে আয়।”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, “কেন?”
– “কেন আবার?মেয়ে’টা বলল তো।”
রুদ্র কিছু বলল না। এর মানে ফোন নম্বর দিবে না।কিরণ ফের বলল, “দেখিস আবার ফোন নম্বরের জন্য বাসায় আসবে।”
– “আমি বাসায় থাকা অবস্থায় যদি আসে তাহলে হাত-পা বেঁধে টয়লেটে দুই-দিন আটকে রাখবো।”
_________________
অরূণীর পড়ালেখা নিয়ে সাহেদ আহমেদ বেশ চিন্তিত।পা ভেঙে কয়দিন হসপিটালে ছিলো অরূণী। কলেজ-প্রাইভেট, পড়াশোনা সব বন্ধ ছিলো। দিন দুয়েক হলো আবার কলেজে যাওয়া শুরু করেছে।
অরূণীর গালে,কপালের দাগ দুই’টা বেমানান ভাবে ফুটে ওঠেছে। সেলিনা আহমেদের সেই নিয়ে আফসোসের শেষ নেই।
রুদ্র’কে ওসব পাঠিয়ে অরূণী বেশ অধীরতা নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। দারোয়ানের কাছে কি রুদ্র ফোন নম্বর দিয়েছে? অরূণী গিয়ে জানতে পারলো রুদ্র ফোন নম্বর দেয় নি। বাসায় ঢোকার জন্য উদ্যত হলে কার্তিক কর্মকার আর সঞ্জিতা কর্মকার’কে বাসার সামনে দেখলে প্রাণ কেঁপে ওঠে। দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়ে। রুদ্রের ফোন নম্বর কিভাবে জোগাড় করবে সেটা এখন অরূণীর সারাক্ষণ চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠেছে।
এর ভিতরেই একদিন অরূণী বাসায় ঢুকে দেখলো ড্রয়িং রুমে বসে সূর্য,সেলিনা আহমেদ আর সাহেদ আহমেদ কি যেন নিয়ে সিরিয়ার মেজাজ কথা বলছে।অরূণী’কে বাসায় ঢুকতে দেখে ডাকে সূর্য। অরূণী সেখানে যেতেই সূর্য বেশ আদুরে গলায় বলল, “আমার পাশে বস।”
অরূণী ঠিক বুঝতে পারলো না ব্যাপার’টা। সূর্য অরূণীর দিকে তাকিয়ে বলল, “দাগ গুলো এখনো ভালো হয় নি।”
সেলিনা আহমেদ বলল, “দাগ ভালো না হওয়াই ভালো।যেমন কাজ তেমন ফল।”
সাহেদ আহমেদ রেগে বলল, “এখানে কাজ ফলের কি আছে?মেয়ে’টা এক্সিডেন্ট করেছে।”
সেলিনা আহমেদ বলল, “ও যদি আপনার সাথে বা সূর্যের সাথে কলেজে যেত তাহলে কি এমন হতো?”
সূর্য বিরক্ত ভাব নিয়ে বলল, “এসব বাদ দেন তো আম্মা।”
তারপর একটু থেমে অরূণী’কে উদ্দেশ্য করে সূর্য আবার বলল, “শোন,নিম্মির বিয়ে।এক প্রকার হঠাৎ করেই বিয়ে’টা। নানু তো অসুস্থ,মরার আগে নিম্মির বিয়ে দেখে যেতে চায়।”
অরূণী খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।অরূণীর এই আনন্দ ভাটা লাগিয়ে সেলিনা আহমেদ বলল, “চেহারার এই অবস্থা নিয়ে এখন বিয়ে বাড়ি যাবি।”
সূর্য বলল, “আম্মা আপনি এত কথা বলেন! কি হয়েছে অরূণীর চেহারার? মানুষ কী চিনবে না আমার বোন কে? আর আপনার মা বুড়ো হয়েছে মারা যাবে। সেখানে নিম্মির বিয়ে দেখে মারা যেতে হবে কেন?”
সাহেদ আহমেদ বলল, “আরে বুড়ো হলে মানুষের আবেগ একটু বেড়ে যায়। তাছাড়া তোর মামাও আমায় বলেছে নিম্মির জন্য ছেলে দেখতে। তোর মামাও মেয়ে বিয়ে দিতে চেয়েছে। তিন দিন পর গায়ে হলুদ।আমরা কাল যাচ্ছি।”
অরূণী ভীষণ চমকে বলল, “তাড়াতাড়ি বলে এত তাড়াতাড়ি?আমরা কালই যাবো?”
অরূণী রুদ্রের ফোন নম্বর’টা জোগাড় করতে পারলো না। এদিকে চেহারায় বিশ্রী দাগ।অন্য দিকে রুদ্রের সাথে কথা বলবে কিভাবে? সে নিয়ে চিন্তা।এতসব চিন্তা অরূণীর আনন্দ পানসে করে দিচ্ছে। কাল যেহেতু চলে যাচ্ছে রুদ্রের ফোন নম্বর ম্যানেজ করা সম্ভব হচ্ছে না।অরূণীর মন বিষণ্ন হয়ে গেল। কিন্তু করার কিছু নেই।
অরূণী জিদ ধরে বসলো প্রাইভেট কার-এ যাবে না।ট্রেনে যাবে। কখনো ট্রেনে কোথায়ও যাওয়া হয় নি।অরূণীর হঠাৎ ট্রেনে চড়ার ইচ্ছে হলো। শেষে সিদ্ধান্ত হলো অরূণী,সেলিনা আহমেদ আর সাহেদ আহমেদ ট্রেনে যাবে।আর সূর্য যাবে ওঁর গাড়িতে। সূর্য ট্রেনে যাবে না। অরূণীর মামা বাড়ি পাবনা’তে।বিকালের ট্রেনে যাবে। এদিকে রুদ্রের জন্য অরূণীর মন ছটফট করছে। বিকালে বাসা থেকে ট্রেন স্টেশনের উদ্দেশ্যে বের হয়। ট্রেন ছাড়তে আরো মিনিট পাঁচেক দেরি।অরূণী বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।ট্রেন ছাড়বে ছাড়বে অবস্থা এমন সময় হঠাৎ কেউ একজন সাহেদ আহমেদ কে দেখে চমকানো গলায় বলল, “স্যার আপনি?”
এইটুকু বলে সাহেদ আহমেদের পাশে বসে।অরূণী তাকায় সেই লোক’টার দিকে। অরূণীর চোখে তখন পৃথিবীর সমস্ত বিস্ময়।হাত-পা যেন অরূণীর ঠাণ্ডা হয়ে জমে যাচ্ছে।অরূণী টের পেলো ওঁর বুকের ভিতর অস্বাভাবিক ভাবে তোলপাড় শুরু হলো। অস্ফুট স্বরে শুধু বলল, “রুদ্র।”
(চলবে)