তোলপাড় পর্ব ৪১+৪২

#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৪০
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

ভোরের দিক দিয়ে আহসান ওটি থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসলো।এক রাতেই আহসানের উপর দিয়ে বিশাল এক ঝড় বয়ে গেল।একজন মানুষের চেহারায় পরিবর্তন আনতে একটা নির্ঘুম রাতই যথেষ্ট।আহসানের চোখ মুখ রক্তশুন্য প্রায়।ওটির বাহিরে সারিবদ্ধ চেয়ার।অপা সারারাত চেয়ারে বসেই কাটিয়ে দেন।ওনাকে ঘুমানোর জন্য আলাদা একটা ক্যাবিন দেওয়া হয়।কিন্তু উনি সেখানে যাননি।আহসানের থেকে অপার অবস্থা কম নাজেহাল না।চোখের পাতা বেশ মোটা হয়ে আছে তার।বোঝাই যায় রাতটা তার কান্নার সাগরে নিমজ্জিত ছিল।আহসানকে দেখে অপার মনের ভেতর টা যেন বারি মেরে ওঠে।এক মুহুর্ত বসে না থেকে আহসানের কাছে গেল।

-কি হয়েছে তোর বাপির?উনি ঠিক আছে তো?

-অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়ায় বাপির হার্টঅ্যাটাক হয় গতকাল।তবে চিন্তা করো না।আলহামদুলিল্লাহ বাপি এখন ভালো আছে।

-হার্টঅ্যাটাক! আমি ওনাকে একটু দেখে আসি নইলে আমার বুকের ভেতর টা শান্ত হবে না।

-এখন না।বাপি রেস্ট নিচ্ছে।তুমি চলো কিছু খেয়ে নেবে।

-আগে তোর বাপি জেগে উঠুক তারপর।

-না আগে তুমি খাবে।আমি একজন নার্সকে বলছি তোমার খাবার দিয়ে যাবে।ততক্ষণ তুমি ক্যাবিনে গিয়ে বসো।

-আমাকে খেতে বলছিস,অথচ তুই নিজে খেয়েছিস তো?

-আমি খেয়েছি।তুমি যাও আমার একটা কাজ আছে।

-দাঁড়া!আমি তোর মা বুঝলি?পেটে ধরেছি তোকে।আমার চোখে ধূলো ছোড়া এতো সহজ নয়।কখন খেয়েছিস তুই?ঘুমের মধ্যে?ঘুমের মধ্যে খেতে হলে ঘুমটাও তো আসা লাগবে!তোর চোখ মুখ বলছে রাতে মনের ভুলেও এক মুহুর্তের জন্য হলেও চোখ লাগাসনি। আমি ক্যাবিনে গিয়ে বসছি তুই আসলে তারপরই খাব আমি।

-জেদ করো না মম।আমি ফ্রি বসে নেই।সময় বের করে খেয়ে নেব।

-সময় নেই নাকি মন নেই?আমি সব বুঝি।রিমির জন্য খারাপ লাগছে তাইনা?

আহসান চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে নিল।তারপর বলল,রিমিকে আমি ফিরিয়ে আনবো মম।যতক্ষণ না ও আবার আমার কাছে ফিরে আসছে,ততক্ষণ এক ফোঁটা পানিও স্পর্শ করবো না আমি।খুব হার্ট হয়েছে রিমি।আমি কেমন হাসবেন্ড?নিজের স্ত্রীকে ধরে রাখতে পারলাম না।আমি নিজেকে কষ্ট দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই মম।

-খুব ইন্টেলিজেন্ট আমার ছেলে!তুই কি ভাবছিস নিজেকে কষ্ট দিয়ে রিমির কষ্ট দূর করবি?না এতে রিমির কষ্ট কমবে না বরং বেড়ে যাবে।এসব ফালতু চিন্তা ঝেড়ে ফেল মাথা থেকে।আমি গেলাম।তোর যদি আমাকে নিয়ে সামান্য পরিমাণ দুশ্চিন্তা থেকে থাকে,তাহলে ক্যাবিনে এসে খেয়ে যাবি আর আমাকে খাইয়ে দিবি।কথাটা বলে এক চলে গেলেন অপা।

কথামতো রিমি ঠিক ৯টার সময় রিকশাওয়ালা টাকা দেওয়ার জন্য ওয়েট করতে থাকে রাতের সেই জায়গাটায়।কিছুক্ষণ পর রিকশাওয়ালা চলে আসল।রিমি ঋণ সোধ করে ওই রিকশা করেই কলেজে আসল।রিমি আসার পর থেকে কলেজ টা আগের তুলনায় অনেক বেশি সুশৃঙ্খল হয়ে গেছে।আগে ছেলেমেয়েরা টিচার্সদের সাথে বেয়াদবি করতো।এখন আর করে না।ছাত্রী ছাত্রীরা ফোন এনে টিকটক লাইকি নামক অ্যাপে ভিডিও বানাতো তাও আবার শিক্ষকের সামনে ক্লাস চলাকালীন।রিমির কানে কথাটা যাওয়া মাত্র ও সেসব স্টুডেন্টসদের সারিবদ্ধ করে দাড় করায় মাঠে।ছেলেদের ও মেয়েদের লাইন আলাদা রাখে।তারপর সকলকে বাদরের মতো লাফাতে বলে।থেমে গেলেই লাঠির বারি।টানা তিন ঘন্টা বাদর লাফানি খেয়ে স্টুডেন্টসরা টিকটক লাইকিতে লাফালাফি করা দূরে থাক বৃষ্টি দিনে রাস্তায় ছোট খাটো গর্ত দেখলেও লাফ দেয়না।এক কথায় কলেজের সকল ছাত্র/ছাত্রী রিমিকে বাঘিনীর মতো ভয় পায়।যদি কোনো টিচার কোন স্টুডেন্ট দ্বারা বিরক্ত হয় তবে তারা প্রিন্সিপালের কাছে না গিয়ে রিমির কাছে যায়।কারণ তারা জানে রিমিই পারবে বাঁকা লেজ সোজা করতে।সামির এখন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে।শুধু কলেজে নয়,বাড়িতেও সে সবসময় বই নিয়ে পড়ে থাকে এখন। প্রিন্সিপাল কলেজের ডাকপিয়নকে দিয়ে রিমির কাছে খবর পাঠালো প্রিন্সিপালের রুমে যাওয়ার জন্য।রিমি ক্লাস শেষ করে প্রিন্সিপালের রুমে পৌঁছালো।

-মিসেস রিমি তালুকদার!আপনি তো কলেজে পা রাখার পর থেকে কলেজের নকশাই বদলে গেছে।আই এম ইম্প্রেসড।

রিমি হালকা হাসলো।
-দোয়া করবেন স্যার আমার জন্য।

-অবশ্যই।আমার তো এটা ভেবে আশ্চর্য লাগছে আপনি আমার বিগড়ে যাওয়া ছেলেটাকে এতো কম সময়ে কিভাবে সঠিক পথে নিয়ে আসলেন?আপনি আপনি কি ম্যাজিক জানেন?

-কি যে বলেন স্যার!আমি জানি না আমি ম্যাজিক জানি কিনা।তবে যাই করি বা ভাবিনা কেন নিজের লক্ষ্য সামনে রেখে করি।আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখি।তিনিই আমাকে সঠিক পথ দেখান।

-চমৎকার কথা।আপনি এভাবেই নিজের দায়িত্ব পালন করে যান।আর একটা কথা,আমার সামিরকে কিন্তু এবারের এক্সামে পাশ করাতেই হবে আপনাকে।

-চ্যালেঞ্জ যখন একসেপ্ট করেছি আমি নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করবো।

-আই লাইক ইওর স্পিরিট।আপনি যদি এই ইম্পসিবল কাজটা পসিবল করতে পারেন, তাহলে আমিও নিজের কথা রাখবো।এই কলেজের অর্ধেক শেয়ার আপনি পাবেন।আর আপনি হবেন এই কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল।

-দোয়া করবেন আমার জন্য।
#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৪১
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

চলে গেল দুটো দিন। রঞ্জিত এখন অনেকটাই সুস্থ। হাসপাতাল থেকে আজ বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে তাকে। অপা স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে রঞ্জিতকে। রঞ্জিত নির্বাকের মতো খেয়ে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে টু শব্দও করছে না। আহসান এসে বিছানার এক কোণে বসতেই রঞ্জিত হাত দিয়ে ইশারা করে তার কাছে যেতে বলে। অপা রঞ্জিতের পাশ থেকে উঠে বসলে আহসান রঞ্জিতের পাশে গিয়ে বসলো।

রঞ্জিত খুব আস্তে করে বলল,আমাকে হসপিটালে কেন নিয়ে গিয়েছিলে? আমি তো আদর্শ বাবা নই। তাহলে আমাকে কেন বাঁচালে?

-আমার কথায় তুমি হার্ট হয়েছো। তার জন্য আমি সরি। তুমি এখনো সিক। বেড রেস্ট নাও। কয়েকদিন আমি হসপিটাল সামলে নিতে পারবো।

-আমি জানি তুমি পারবে। তোমার সেই এবিলিটি আছে। কিন্তু নিজের শরীর ভালো না থাকলে কিভাবে পারবে? যতই যোগ্যতা থাকুক না কেন, অসুস্থ শরীরের কাছে হার মেনে যাবে। তোমার চোখ দেখে বুঝতে পারছি তুমি রাতে ঘুমাও না।

-আমি ঠিক আছি বাপি। তুমি চিন্তা করো না। আমি পারবো।

-তুমি যতদিন না ওই মেয়েটাকে ভুলে থাকবে ততদিন কিছুই পারবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে ভুলে যাও। পারলে ডিভোর্স দিয়ে দাও কয়েক দিনের মধ্যে।

-বাপি আমি,,,,,,আহসান ওর কথাটা সমাপ্ত করার আগে অপা ওকে থামিয়ে দেয়।

-আহসান তুই এ নিয়ে কোন কথা বাড়াস না। যা হবে পরে দেখা যাবে। চেষ্টা করবি তোর বাপি যা বলে শুনে চলতে। এখন আর একটা কথাও না বলে নিজের রুমে যা বলে দিলাম। অপা বেশ কড়া গলায় কথাটা বললেন। আহসান অপার কথা মতো চলে যায় নিজের রুমে।কিছুক্ষণ পর অপা আহসানের রুমে আসলো। আহসান মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল। অপা গিয়ে আহসানের পিঠে হাত রাখতেই আহসান নড়েচড়ে ওঠে।

-আমার কথায় কি তুই রাগ করেছিস বাবা?

-না মম। আমি বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা। বাবাকে এই মুহুর্তে উত্তেজিত করা চলবে না। আমি ভেবেছি বাপি যাই বলুক না কেন,আমি সহ্য করে চলবো। কিন্তু বাপি এমন এক একটা কথা বলে যে আমি জবাব না দিয়ে থাকতে পারি না। তুমি ভালো করছো আমাকে থামিয়ে দিয়ে। কিন্তু মম,আমি রিমিকে ডিভোর্স দিতে চাইনা।

– আমিও চাইনা তুই রিমিকে ডিভোর্স দে। কিন্তু কি করবো বল? এখন তোর বাপি যা বলে আমাদের শুনে চলতে হবে। আমি চাইনা ওনার কোন ক্ষতি হোক।

-আমি এখন কি করবো মম?

-রিমিকে বোঝা। আর একটু অপেক্ষা কর। তুই তোর বাপির কথাও শুনবি আর রিমিকেও ধরে রাখবি।

-তুমি কি বলছো?রিমি কি বুঝবে?

-হুম বুঝবে। সামান্য অভিমান করেছে মেয়েটা। মানিয়ে দেখ ঠিক বুঝবে। কল দে রিমিকে।

-আসলে মম,আমার কাছে রিমির নাম্বার নেই। কখনো ফোনে কথা হয়নি আমাদের।

অপা আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল, এটা কেমন কথা বললি তুই? তোরা কেমন দম্পতি? যাই হোক,আমার কাছে আছে তুই কথা বল।

গভীর ভাবনায় মগ্ন রিমি। মুখে উদাসীনতার ছায়া। এলোমেলো চুল। আগের মতো নিজের যত্ন নেয়না সে। সেই মন মানসিকতা আর নেই। মন ভালো না থাকলে ভালো কথাও খারাপ মনে হয়। পাওয়ারের চশমাটা চোখ থেকে খুলে টেবিলে রাখল। অকস্মাৎ রিমির ফোনে রিং বেজে ওঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বার টা পর্যবেক্ষণ করছে রিমি।

-এটা আবার কার নাম্বার? এ সময়ে কে কল দিল আমাকে? রিসিভ করবো কি? এসব ভাবনার মাঝে কল কেটে গেল। যাক কেটে গেছে। Wrong নাম্বার হবে হয়তো। রিমি ওর ফোনটা রাখতে যাবে কি আবার সেই নাম্বার থেকে কল আসলো। এবার রিমি রিসিভ করলো।

-হ্যালো কে বলছেন? রিমি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করছে কিন্তু ওপাশ থেকে কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছে না। সাড়া শব্দ না পেয়ে বেশ রাগ হলো ওর। কে আপনি? দেখুন কথা বললে বলুন নইলে এভাবে কাউকে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করবেন না। আমার আজাইরা সময় নেই। কল কেটে দিলাম। রিমি কল কাটবে কি ওপাশ থেকে শুনতে পেল, কেমন আছো রিমি? রিমির ভেতর টা বারি দিয়ে ওঠে কন্ঠস্বর শুনে। বুঝতে পারে কে কল দিয়েছে। কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করার পর রিমি বলে ওঠে,কল দিয়েছেন কেন?

-কথা বলবো বলে। তোমার মন পাষাণ বলে কি আমার টাও পাষাণ?

-আপনার সাথে আমি কোন কথাই বলতে চাইনা। কল না দিলে খুশি হবো এই বলে কেটে দেয় রিমি। আহসান বেশ কয়েকবার কল দেয় কিন্তু রিমি রিসিভ করে না।না পেরে ফোন অফ করে রাখল রিমি। চোখ ভরে আসলো তার। কান্নাজড়িত গলায় বলল,আপনি কি বোঝেন না আমি কতটা কষ্টে আছি আপনাকে ছাড়া? প্রতি মুহুর্তের জমানো কথাগুলো বার্তা হয়ে কি পৌঁছায় না আপনার কাছে? কথাটা বলেই বালিশে মুখ চেপে কান্না করে মনের ব্যাথা হালকা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

#চলবে,,,?
(সরি ফর লেট। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।নেক্সট পার্ট বড় করে দেব ইন শা আল্লাহ।)
#চলবে,,?
(বই লিখছি তাই গল্পটা দিতে দেড়ি হচ্ছে।কেউ কেউ বলছেন শেষ করে দিতে।আমি চাইলে শেষ করতে পারবো।কিন্তু এতে গল্পটার তার আসল রূপ পাবে না।হুট করে সুযোগ আসলো বই প্রকাশের।তাই কিছু করার নেই আমার।আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।আর একটু সাপোর্ট আর ধৈর্য ধরবেন যদি আমাকে সামান্য পরিমাণ ভালবেসে থাকেন।আর ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here