দখিনের জানলা পর্ব -১০

#দখিনের_জানলা (পর্ব-১০)
লেখনীতে— ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

২০.
পুরো কলোনী জুড়ে একরকম মাতামাতি চলছে। সব ঘরে ঘরে একটা হৈ চৈ ভাব। কলোনীর বুড়ো, জোয়ানসহ সবাই এক যোগে চৌরাস্তার বড় মাঠে রওনা হচ্ছে। একটু পরেই ফুটবল ম্যাচ শুরু হবে। জোয়ান ছেলেরা বেশি উত্তেজিত। নিবিড় কলোনীর ছেলেপুলেদের সাথে বালুচর কলোনীর ছেলেপুলেদের একটা নিরব দা’ঙ্গা চলছে। আসল হাতা’হা’তি, মা’রা’মা’রি হয়তো ম্যাচ শেষে শুরু হবে। যে দলই জিতবে সে দল বিপক্ষ দলকে কূ’টু’ক্তি করবে আর তাতেই শুরু হয়ে যাবে একটা বড় ধরনের ঝ’গ’ড়া। চমচম এই ব্যাপরটা বেশ ভালো করেই জানে। সত্যি বলতে এই ব্যাপারটা সে খুব উপভোগ করে। ভালোই লাগে তার মানুষের ঝ’গ’ড়া দেখতে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো কলোনী দুটো আলাদা হলেও দুই কলোনীর মানুষ তাকে ভালোবাসে। তার সবার সাথেই ভাব। হ্যাঁ! কিছু মানুষ আছে যাদের সাথে ভাব নেই। কিন্তু ওই কিছু মানুষ ক্ষুদ্র পরিসরের। আর সমাজের ওই কিছু মানুষকে পাত্তা না দিলেও চলে। আমাদের যারা ভালোবাসে আমরা তাদের ভালোবাসাকেই গুরুত্ব দিব। একজন এসে আমাদের খা’রা’প কিছু বলে গেল বা সে আমাদের পছন্দ করল না এটা ভেবে মন খা’রা’প করে বসে থাকার মানে হয় কোনো? চমচম এমন ভাবনাই করে সবসময়। সবকিছু পজিটিভলি নিতে পারে বলেই বোধহয় সে সুখী মানুষ। চমচমের দুঃখ নেই এটা বললে ভুল হবে। বাকিদের মতোন চমচমেরও দুঃখ আছে। তবে চমচমের সেই দুঃখ আড়াল করার শ’ক্তি আছে। যা বাকি সবার নেই। তাই চমচমকে কেউ পড়তে পারে না। এমনকি বাবা-মাও পারে না। তবে চমচমের মনে হয় চিনি তাকে সম্পূর্ণ জানে। চিনির কাছে চমচমের মন পড়ার সুপার পাওয়ার আছে।

এখন তিনটা বেজে বিশ মিনিট। তিনটা ত্রিশে খেলা শুরু হবে। চমচম, চিনি, অনামিকা, সাবা সবাই একসাথে মাঠে পৌঁছায়। চিনি আসতে চায়নি চমচম আর অনামিকা জো’র করে এনেছে তাকে। সাবাও বারবার করে বলছিল। চিনি যে ঘরকুণো ব্যাঙ তা কিন্তু নয়। সেও ঘোরাফেরা করে, খেলা দেখতে যায় মাঝে মাঝে। তবে আজকে একটা অন্য ব্যাপার আছে। একটা অন্য কারণ আছে। কারণটা সে কখনো কাউকে বলবে না। কখনোই না!

চমচমদের দেখেই আয়মান ছুটে এলো। বলল,
-‘কীরে! দেরি করলি কেন তোরা? বসার জায়গা রাখছিলাম কিন্তু তোরা দেরি করাতে সব ভর্তি হয়ে গেছে। এখন দাঁড়ায় থাক।’

আয়মান বি’র’ক্ত হয়ে চলে গেল। একটু পরেই বাম্পা এসে বলল,

-‘চমচম আপু! সায়ন ভাইয়া বলছে পশ্চিম পাশে দাঁড়াতে। এখানে দাঁড়াতে বারণ করেছে।’

চিনি আর অনামিকা সায় দিল। জায়গাটাতে প্রচুর ভীড়। তাদের দুই কলোনীর মানুষ ছাড়াও অনেক বাড়তি মানুষ এসেছে। কোনো ম্যাচ থাকলেই দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসবেই। এটা নতুন না! সবাই পশ্চিমে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখল এলাকার চাচা, মামা, খালুরা সব সেখানে। তাদেরকে দেখে তারা নিজ দায়িত্বে জায়গা ফাঁকা করে দিয়েছে। যদিও বসার জায়গা নেই। তাই দাঁড়িয়েই থাকতে হলো। তবে এই জায়গা নিরাপদ।

খেলা শুরু হলো যথাসময়ে। নিবিড় কলোনীর ছেলেগুলো বেশ ভালো খেলছে। তাদের এত ভালো খেলতে দেখে চমচমের ভীষণ চিন্তা হচ্ছিল। যতই এর সাথে ওর সাথে সখ্যতা থাকুক না কেন সে চায় নিজের কলোনীটাই যেন জেতে। হঠাৎ করে খেলা শুরু হওয়ার চার মিনিটের মাথায় একটা গোল হলো। নিবিড় কলোনীর একটা ছেলে গোল দিয়েছে। ছেলেটার নাম অঙ্কন। চমচম তাকে ভালো করেই চেনে। চিনবে না কেন? তাদের ক্লাসেই তো পড়ে। তাও আবার ফার্স্ট বয়। ছেলেটাকে চমচম একটুও পছন্দ করে না। ফার্স্ট বয় হলেও এর মধ্যে কোনো ব্যক্তিত্বই নেই। পুরোই ফাতরা একটা ছেলে। চমচম পড়ালেখায় ওত বেশি ভালো না হলেও তার হাব ভাব আর কর্মকান্ডে সে বেশ কিছু স্যার ম্যামের প্রিয় ছাত্রী। সে একটা পেছনের সারির শিক্ষার্থী হয়েও যে আদর ভালোবাসা পায় অঙ্কন সামনের সারির প্রথম ছেলেটা হয়েও তা পায়না। সে কারণেই বোধ হয়! ছেলেটা চমচমকে দু চোখে দেখতে পারে না। এভাবে ওভাবে সবসময় অ’প’দ’স্ত করার চেষ্টায় বিভোর থাকে। আজ এখন একটা গোল দিতে পেরে সে যেন খুশির সাগরে ভাসছে। মনে হচ্ছে পাড়ায় যেতার ছোট খাটো কাপ নয় একেবারে বিশ্বকাপ পেয়ে গেছে! চমচম ভেঙালো অঙ্কনকে। অঙ্কনও আঙুল তুলে ভিক্টোরি সাইন দেখিয়ে দিলো। এবার তো চমচমের রা’গ উঠে গেল চরমে। ছেলেটার খুব ভাব! এই ভাবটা একবার ভাঙতে পারলে ভালো হতো। চোখের পলকে আবারও একটা গোল দিয়ে দিল নিবিড় কলোনীর আরেকটা ছেলে। এবার চমচমের মাথার চান্দি জ্ব’লে গেল। খাটাইশ অঙ্কন তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। সে আর পারল না! সবাইকে ছেড়ে আরেকটু সামনে এগিয়ে গেল সে। সায়ন আর চয়ন সেদিকেই দাঁড়িয়ে ছিল। চমচম গিয়ে বলল,

-‘হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? দেখছ না ওরা দুইটা গোল দিয়ে দিয়েছে! তোমাদের যেখানে চারটা দেওয়ার কথা সেখানে ঘোড়ার ডিম পেড়ে বসে আছো! ভক্কর সবকয়টা!’

সায়ন কিছু বলার আগেই আয়মান বলল,

-‘চুপ! তুই বুঝিস কিছু! যা চুপচাপ গিয়ে বাকিদের সাথে দাঁড়া। এখানে কী তোর?’

-‘আমার কি মানে! আমারই তো সবকিছু। আর আমি খেলা বুঝি না?’

কথাটা বলেই চমচম চয়নের দিকে রা’গান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-‘ ওই চয়ন বিটলা! আমি খেলা বুঝি না রে? বল! চুপ করে দাঁড়াই আছস ক্যান!’

চয়ন সাথে সাথেই মাথা নড়ল বলল,
-‘হ্যাঁ হ্যাঁ! চমচম আপু খুব ভালো খেলে। ভাই সত্যি! মজা করি না। আপু যদি খেলত এতক্ষণে গোল দিয়ে দিতো!’

হুইসেলের শব্দে সবাই আবার খেলা শুরু করে দিল। চমচম উত্তেজিত হয়ে সেদিকেই তাকিয়ে রইল। হঠাৎ মেহেদী বলটা নিয়ে বিপক্ষ দলের গোল পোস্টের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল পুরো ব্যাপারটা খেয়াল করে চমচম চেঁচাতে চেঁচাতে বলল,

-‘ওরে বিটলা ওটা অফসাইড! গোল হবে না!’

কিন্তু মেহেদীর সেদিকে খেয়াল আছে! সে তো বল জালে ফেলার দেওয়ার সাথে সাথেই দৌঁড়ে গোল উৎযাপন করতে লাগল। চমচম চোখ মুখ কুঁচকে তার সে না হওয়া গোলের উৎযাপন দেখতে লাগল। এই বিটলা তার বোনকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছে! সিরিয়াসলি!

রেফারি অফসাইড বলে গোলটা বাতিল করে দিতেই মেহেদীর সব হাসি খুশি ঠুস হয়ে গেল। ভেবেছে চিনি সহ এলাকার সব মেয়েদের সামনে একটা ভাব নিবে। সেটাও আর হলো না! আশেপাশে তাকিয়ে দেখতেই তার চোখে পড়ল চমচম তাকে বি’দ্রু’প করে হাসছে। ব্যাপারটা মেহেদীর হজম হলো না। এমনিতেও মেয়েটার করা ওইদিনের বে’য়া’দ’বি সে এখনও ভুলতে পারছে না। আজ আবার এমন করছে! সে পুনরায় খেলাতে মনোযোগ দিল। আয়মান আর সাদ বেশ কয়েকবার গোল দেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। আসলে টিম ওয়ার্কটাই ভালো হচ্ছিল না। তাদের অধিনায়ক পল্লবের খামখেয়ালির কারণেই পজিশন থেকে শুরু করে সবটা ভুল হচ্ছে। সায়ন, আয়মান, সাদ সহ সবাই বেশ রে’গে গেছে। তারা বারবার বলছিল চার চার দুই না দিয়ে পাঁচ তিন দুই দিতে। কিন্তু পল্লব শোনেনি। অন্যসময় আব্রাহাম অধিনায়কত্ব পালন করে এবার সে না থাকায় পল্লব একপ্রকার জো’র করেই অধিনায়ক হয়েছে। আয়মানের ইচ্ছা করছিল পল্লবকে ধরে দুইটা লাগিয়ে দিতে। তাদের সাথে ব’দ’মা’শ’টা চিল্লাফাল্লা করছে!

২১.
সায়ন বল নিয়ে গোল যাও দিতে গেল বলটা এত বেশিই জো’রে মা’রে যে সেটা আকাশে উড়াল দিয়ে সোজা মাঠের বাহিরেই চলে গেল। চমচম কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে সেটা দেখল। তামাশা হচ্ছে! তামাশা! এরা এত ভাব নিয়েছে অথচ গোলই দিতে পারছে না। সে জোরে জোরে বলতে লাগল,

-‘এই তোমরা করছ কী! এতজন মিলে একটা গোলও দিতে পারছ না! হাম ভাইয়া থাকলে তো এতক্ষণে হ্যাট্রিক করে ফেলতো। আর হাম ভাইয়া তো দূরের কথা আমিই যদি খেলতাম জোড়া গোল দিতাম!’

সবাই তার কথা শুনে কিছু বলবে তার আগেই পাশ থেকে কেউ একজন বলল,

-‘বাহ্! আমাকে এত ভরসা করিস তুই!’

চমচম চমকে উঠে পাশে তাকায়। প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুজে ভদ্র বাবু সেজে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। একেবারের চমচমের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে সে। এতক্ষণ চমচম খেয়ালই করেনি তাকে। সে বলল,

-‘ওমা! তুমি কখন এলে?’

আব্রাহাম শান্ত দৃষ্টিতে চমচমের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

-‘বাসায় এসেছি আধঘন্টা আগে। এখানে এলাম দুই তিন মিনিট হলো।’

-‘দুই দিন পর পরই চলে আসো! তো যাও কেন?’

-‘তুই কি বলতে চাস? আর না যাই এটা?’

-‘ধুত। বা’জে বকো না। বলছি মানুষ কত মাস পর পর আসে আর তুমি মাসও ঘুরে না চলে আসো। কয়েক মাস বা বছর পর আসবে। দেখবে সবাই তোমাকে আগের থেকেও অনেক বেশি কদর করবে।’

-‘তাই নাকি! তুইও করবি?’

-‘হ্যাঁ। সবার মধ্যে আমিও পড়ি।’

আব্রাহাম হাসল। আব্রাহামের হাসি যে এত সুন্দর চমচম আগে খেয়াল করেনি। সে চোখ সরালো। মাঠের দিকে তাকিয়ে রইল। এখনও তাদের কলোনীর কেউ গোল দিতে পারেনি। তার মনটা বেজার হয়ে গেল। আব্রাহাম বলল,

-‘একেবারে চলে এসেছি যে! আর যাচ্ছি না।’

চমচম আবারও আব্রাহামের দিকে তাকালো। বলল,

-‘মানে!’

-‘মানে ফাইনাল এক্সাম শেষ। আর থেকে কি করব?’

-‘ওহ আচ্ছা।’

চমচমকে এসব কথা শুনতে ওত আগ্রহী দেখা গেল না। বরং তার মনোযোগ ফুটবল ম্যাচেই। আব্রাহাম ভ্রু কুঁচকে মাঠে তাকালো। আয়মান ভাইকে দেখে দৌঁড়ে এলো। বলল,

-‘বললে না আসতে রাত হবে!’

-‘সবাই বেরিয়ে পড়েছে। আমিও চলে এলাম। এক ঘন্টার পথই তো! শুধু শুধু রাত করার মানে হয়!’

-‘ভালো করেছ। আরেকটু আগে এলে আরো ভালো হতো। এখন তুমি খেলতে নামবে? তাহলে আমি উঠছি তুমি নামো। এই পল্লব ভাই সব কিছুতে গোলমাল বাঁধিয়ে ফেলছে।’

আব্রাহাম অবাক হয়ে বলল,

-‘আশ্চর্য! তুই, সাবের, সায়ন ভাই থাকতে ওটাকে কেন অধিনায়ক দিলি!’

-‘আরে বে’য়া’দ’বটারে তো চিনো! একপ্রকার ফাতরামি করে নিয়ে নিসে।’

-‘ও করতে পারলে তোরা পারবি না? তোদের কি বল নাই? বেক্কল!’

আব্রাহামের গলাতে স্পষ্ট রা’গ। আয়মান হেসে ফেলল। সায়ন ডাক দিতেই পুনরায় মাঠে দৌঁড়াতে লাগল সে। মিনিট খানিকের ব্যবধানেই মেহেদী উল্টে পড়ল বল নিয়ে। আর পায়ে ব্যথা পেয়ে গেল। বিরতির সময়ও হয়ে এসেছিল তখন। মেহেদীকে আর না খেলিয়ে উঠিয়ে দেওয়া হলো। আয়মান বেশ খুশি হয়ে গেল। এবার ভাইকে রাজি করানো যাবে। এদিকে চমচমও মনে মনে খুশিই হয়েছে। কিন্তু প্রকাশ করল না। দুই মিনিট পরে বিরতি দিয়ে দিতেই আয়মান, চয়ন, সাবের সহ সবাই এগিয়ে এলো। আব্রাহামকে খুব রিকোয়েস্ট করতে লাগল। আব্রাহাম রাজি হচ্ছিল না। পল্লব আব্রাহামকে দেখে বেশ বি’র’ক্ত হলো। কিন্তু কিছু বলার সা’হ’স পেল না। দলের সবাই এমনিতেও প্রচন্ড রে’গে আছে তার উপর। আর রা’গিয়ে লাভ নেই। তাই সে চুপই থাকল। আব্রাহামকে এমন ভাব ধরতে দেখে চমচমের মেজাজ গরম হয়ে গেল। এত করে সবাই বলছে যখন তখন তার উচিত নয় কি একটু সবার মান রাখতে খেলা! সে বলল,

-‘সেই যুগ আর নাই। তোমাদের আব্রাহাম এখন বুইড়া হইছে। দৌঁড়াইতে ক’ষ্ট হইব। খেলতেও পারব না। বল পায়ে লাগলেই ওই মেহেদীর মতো কাইত হয়ে পড়ে যাবে। তাই সেই ভ’য়েই এখন খেলছে না। বুঝি বুঝি! সবই বুঝি!’

আব্রাহাম গরম চোখে তাকালো চমচমের দিকে। তারপর আয়মান বলল,

-‘ভাই জার্সি তো তোমার আছেই। পরে নেমে যাও না খেলতে!’

এরপর আব্রাহাম চুপ ছিল। আর বারণ করল না। অতঃপর বাইকে উঠে দুই ভাই গেল আর এলো। বড় জোর পাঁচ মিনিট লেগেছ। আব্রাহামকে জার্সি পরিহিত অবস্থায় দেখে আপনা আপনি চমচমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল। সে অঙ্কনের দিকে তাকালো। তার মন বলছে ব্যাটার হাতের আঙুলের ভিক্টোরি সাইনটা খেলা শেষে আর দেখা যাবে না।

পুনরায় খেলা শুরু হতেই টিমটা অন্যরকম ভাবে জেগে উঠল। আব্রাহামই সবাইকে ডিরেক্ট দিতে লাগল। পল্লব নামমাত্র অধিনায়কত্ব করল। টিম ওয়ার্ক টা চরম সুন্দর ছিল। প্রথম গোলটা সাদ দিয়ে দিল। আর তারপরই সবাই মনোবল ফিরে পেল। এরপর আব্রাহাম গোল দিল এরপর আয়মান দিল। হঠাৎ করেই পল্লব কি করল একটা আত্মঘা’তি গোল দিয়ে দিল। চমচম স্পষ্ট খেয়াল করেছে সেটা ইচ্ছাকৃত ছিল। সে তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে রইল। আব্রাহামকে হিং’সা করেই যে ছেলেটা এমন কান্ড ঘটিয়েছে সে স্পষ্ট বুঝতে পারল। কিন্ত চুপ করে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু বলা গেল না। এখন দুপক্ষের সমান সমান পয়েন্ট। অতিরিক্ত সময়ের আর আছে চার মিনিট। নিবিড় কলোনীর সবাই এবার ম’রি’য়া হয়ে উঠেছে জিত ছি’নি’য়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু শেষমেষ পারল না। ত্রিশ সেকেন্ড সময় হাতে রেখে আব্রাহাম আরেকটা গোল দিয়ে দিল। এরপর আর কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই বালুচর কলোনীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো। চারিদিকে হৈ হুল্লোড় শুরু হয়ে যায়। অঙ্কনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুখে একটা পৈ’শা’চি’ক হাসি ফুঁটিয়ে চমচম হাত তুলে আঙুল দিয়ে তাকে ভিক্টোরি সাইন দেখালো যেমন করে সে চমচমকে দেখিয়েছিল। ট্রফি দেওয়া শেষ হতেই ভীড় কমে গেল, অন্যবারের মতো এবার কোনো হ’ট্ট’গোল হলো না কেন যেন। সবাই বাড়ি ফেরা শুরু করে দিয়েছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চিনি চমচমকে ডাক দিতেই সে বলল,

-‘আমি একটু পর আসছি। তুমি যাও।’

চিনি যেতে চায়নি। চমচমকে জো’র করে নিয়ে যাবে তার আগেই আব্রাহাম এসে বলল,

-‘তোমরা যাও। আমি ওকে দিয়ে আসব।’

আব্রাহাম যেহেতু বলেছে আর তো মানা করা যায় না। চিনি অনামিকার সাথে চলে গেল। সাবা সায়ন আর সাদের সাথে ফিরে গেল। আয়মান এসে বলল,

-‘দুজনে এখানে কি করো? চলো!’

-‘তুই যা আয়মান। আমরা আসছি।’

আয়মান ভাইয়ের কথা শুনে দু’ষ্টু হেসে চলে গেল। আব্রাহাম ছোট ভাইয়ের ইঙ্গিত ধরতে পারল। কিন্তু কিছু বলল না। আয়মান চলে যেতেই আব্রাহাম চমচমকে বলল,

-‘দেখলি তো! বুড়ো হইনি আর বল নিয়েও উল্টো হয়ে পড়ে যাইনি।’

চমচম হেসে বলল,

-‘হ্যাঁ! দেখলামই তো। কত ক’ষ্ট করে জিততে হয়েছে। ভালো প্লেয়ার হলে, শক্তি সামর্থ থাকলে আরো আগেই অনেক ব্যবধানে জয় নিশ্চিত হতো।’

আব্রাহাম গলায় কিছুটা কৌতুক মিশিয়ে একপাশ ফিরে চমচমের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল,

-‘ওহ তাই! জানতামই না। আসলেই আমরা সব বুড়ো। না না বুইড়া।’

আব্রাহামের এমন মাথা কাত করতে দেখে চমচমের হাসি পেয়ে গেল। সে হাসি চেপে ধরে বলল,

-‘পল্লব শ’য়’তা’নটা ইচ্ছে করে ওই গোলটা দিয়েছে। এ’ক্সি’ডে’ন্ট ছিল না।’

এই কথা শুনে আব্রাহামের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। সে ভরাট গলায় বলল,

-‘জানি।’

-‘জানলে তো ভালোই। আমার মনে হয় ছেলেটা তোমাকে দেখতে পারে না।’

আব্রাহাম মৃদু হেসে বলল,

-‘সে তো তুইও পারিস না।’

চমচম শোনার সাথে সাথেই একপ্রকার নেঁচে উঠে বলল,

-‘কি! আমি পারি না? নাকি তুমি পারো না!’

-‘আমি পারি কি না পারি সেটা তুই জানিস কি করে?’

-‘আমি বুঝি।’

-‘কি বুঝিস!’

-‘এই যে তুমি আমাকে দেখতে পারো না।’

-‘একেবারে ভুল বুঝিস!’

-‘তাই?’

-‘হু।’

-‘ওহ! হ্যাঁ। দেখতে পারবে না কেন! তুমি আমার প্রিয় হাম ভাই। আমি তোমার আদরের ছোট বোন চমচম। ভাইয়া! জেতার খুশিতে ছোট বোনকে কিছু খাওয়াবে না?’

আব্রাহামের এতক্ষণের খুশি খুশি মুখটা হঠাৎ করেই শক্ত হয়ে উঠল। সে নিজেও বুঝতে পারছে না এতটা কেন রে’গে যাচ্ছে সে। সে ছোট বাচ্চা নয় যে অনুভূতি বুঝবে না। সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে তার কি হয়েছে। এবং কেন হলো এই নিয়েই তার যত বিতৃষ্ণা। কিন্তু বোকা মনটাকে এত কিছু বোঝানো যায়? সে আশেপাশে তাকালো। চমচম তাকে চুপ থাকতে দেখে আবদার আরো জোরালো করল,

-‘দিবে না হাম ভাইয়া! আমি না তোমার প্রিয় বোন। আমাকে কিছু ট্রিট দাও।’

-‘আচ্ছা দিব। এতবার এক কথা বলতে হবে না। আর তুই আমার প্রিয় বোন না।’

-‘না আমি তোমার প্রিয় বোন। কালকে আমাকে ট্রিট দিলে তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় ভাই হয়ে যাবে।’

-‘মাফ চাই। দরকার নেই তোর প্রিয় ভাই হওয়ার। সায়ন ভাই তো আছেই। ওটা তো তোর প্রিয়।’

-‘সবাই প্রিয়। সাথে তুমিও।’

আব্রাহাম অসহায় চোখে তাকালো চমচমের দিকে। প্রিয় তো সেও হতে চাইছে। কথা হচ্ছে প্রিয় ভাই নয় প্রিয়তম হওয়ার সাধ জাগছে তার।

চমচম প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলল। অঙ্কনের না’স্তা’না’বু’দ চেহারা নিয়ে গবেষণা করতে লাগল। আব্রাহাম তাকিয়ে থেকে চমচমের খুশিমাখা মুখটা দেখতে লাগল। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। বাতাসে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। চমচম হঠাৎ হঠাৎই খুশিতে লাফিয়ে উঠছে। ব্যাপারটা আব্রাহামের খুব ভালো লাগছে। খুব! তারা দুজন ল্যাম্পপোস্টের আলো ধরে সরু রাস্তার উপরে হেঁটে চলেছে। দুজনের ঠোঁটেই হাসি। ল্যাম্পপোস্টের সেই আলোর কারণে রাস্তায় তাদের লম্বা লম্বা ছায়া পড়ছে। ছায়া দুটো একটা আরেকটার সাথে মিশে আছে। আর সেই দৃশ্যটা চমৎকার লাগছে।

#চলবে।

(রি-চেইক দেওয়া হয়নি। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, পারলে দয়া করে ধরিয়ে দিবেন। আর মন চাইলে মন্তব্য করবেন। বারবার চেয়ে নিতে নিজেরই ভালো লাগে না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here