#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#সূচনা + ২য় পর্ব
-“হু আর ইউ? নাথিং মোর দ্যান এ ফাদারস্পয়েল্ড চাইল্ড অফ আ ট্রিমেনডাস রিচ ফেলো । উইথআউট ইউর ফাদার ইউ আর অনলি দ্য লিডার অফ আ ব্যান্ড অফ আনকালচারড,হরিবল ডেন্জারাস ভ্যাগাব্যান্ড । এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় সোহা।
. পিছনে এর দিকে একবার ঘুরে তাকালে হয়তো দেখতে পেতো কত গুলো জ্বলন্ত আগুনের মতো চোখ তার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। পুরো ইউনিভার্সিটির সবার সামনে মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে এই কথা গুলো সোহা বলেছে। এতক্ষণ সবাই অবাক চোখে সোহা কে দেখে যাচ্ছিলো। যে মেয়েটা এই একমাস ধরে শান্ত সৃষ্ট আর চুপ চাপ শান্ত প্রকৃতির ছিল তার আজ হঠাৎ করে আগ্নেয়াস্ত্র এর মত জ্বলে ওটা টা সবাই মন ভোরে দেখ ছিল। গোটা একমাস এদের যন্ত্রণা সহ্য করছিলো সোহা। এই ইউনিভার্সিটি আসার প্রথমে দিন থেকেই তাকে বিভিন্ন রকম ভাবে এদের এই পাঁচ জনের কাছে হেনস্থা হতে হচ্ছে। বিভিন্ন রকম ভাবে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়। ইউনিভার্সিটি রাস্তায় যেখানে মোট কথা দেখতে পেতো সেখানেই তাকে টর্চার করতে চলে আসতো এই গুন্ডা ছেলে মেয়ে গুলো। সব গুলোই বড় লোক বাপের বকে যাওয়া ছেলে মেয়ে। আহ্লাদী অকালকুষ্মান্ড। আল্ট্রামর্ডান পোষাক জড়ানো চোস্ত ইংরেজি কপচানো দেমাকিগুলো ধরাকে সরা জ্ঞান করে না। এদের কে দেখলে মনে হয় যে ইংরেজ এর চলে গেছে আর তাদের নাতি পুতি গুলো কে এখানে রেখে গেছে। পুরোই ইংরেজ এর দোকান সব গুলো।
. সোহা বেরিয়ে যেতেই তার সাথে আরো দুজন ছুটে বেরিয়ে এলো এই অবস্থায় সোহা কে একা ছেড়ে দিলে দেখা যাবে আবারো রাস্তার মাঝে তাকে হয়তো আটকে নিয়েছে এই গুন্ডারদল গুলো।
-“এটা তুই কি করলি সোহা। জেনে বুঝে তুই কেনো ওদের কে এত গুলো কথা বলতে গেলি। এবার তো ওরা তোকে ছিড়ে খাবে। ছেলেটা যে তোকে কোন দিকে থেকে মারবে টের ও পাবি না। শয়তান ও ওদের লিডার আমন চৌধুরী রোদ কে ভয় পায়। এই ইউনিভার্সিটি টা আমন চৌধুরীর দাদুর বাবার নামে আর এখন এই ইউনিভার্সিটির প্রধান খুঁটি হল আমন এর দাদু। আর তুই সেই পরিবারের ছেলে কে সবার সামনে এত গুলো কথা শোনালি। বুক কাপলো না। তোকে এখানে টিকতে দেবে ভেবেছিস। অ্যাস বলে ওঠে।
-“আরে আগের দিন আমি নিজে দেখেছি আমন এর গুন্ডামী। রেস এর মাঠে অপজিট দলের তাহির এর সাথে কেমন ঝগড়াটা করলো। ওকে নাকি পরের দিন গাড়ির বনাটের সাথে বেঁধে নিয়ে কার রেস করেছিলে রোডে । তাহির অজ্ঞান হলে নিজে ডক্টর দেখিয়ে ছিল। কি যে জাদু জানে। তাহির এখন ওদেরই গ্যাংয়ে। কিন্তু তুই ভাব দৃশ্য টা কত ভয়ঙ্কর যদি কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হতো। । নীর বলে ওঠে।
-“আর তাছাড়া আমন হল এই ইউনিভার্সিটি টপ ইয়ং ড্যাশিং হ্যান্ডসাম হাঙ্ক বয় সবার ক্রাশ। এই শহরের মোস্ট এই শহরে মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর হিসাবে পরিচিত সাথে বাইরে ও। প্রতিটা মেয়েই শুধু তাকিয়ে থাকে তার দিকে তাকে এক ঝলক দেখার জন্য। অফিসের স্টাফ থেকে শুরু করে তার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট মডেল এমনকি তার সমস্ত ক্লায়েন্ট ও ইউনিভার্সিটি ও সব মেয়েরাই তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। শুধু ওর উপস্থিতি যথেষ্ঠ মেয়েদের মনে ঝড় তোলার জন্য। এক কথায় হার্টথ্রব। যেমন পড়াশোনার দিকে ও দক্ষ তেমনই এই অল্প বয়সে ও পড়াশোনা আর বিজনেস এক সাথে সামলাতে পারে। তাই তোর এই কথা গুলো জন্য ইউনিভার্সিটি সব মেয়ে গুলো তোর দিকে কেমন আগুন চোখে তাকিয়ে ছিল দেখিস নি। নীর বলে ওঠে।
-” তো কি করব আর কতদিন এদের এই অন্যায় অত্যাচার গুন্ডামী জ্বালাতন মুখ বুঝে সহ্য করব তুই বলতে পারিস। পয়সা আছে বলে কি যা খুশি করবে না কি? পুরো দুনিয়া টা কি ওরা কিনে নিয়েছে? এই একটা মাস আমাকে এক মিনিট ও স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে দেয়নি। তবুও মুখ বন্ধ রেখে কোনো প্রতিবাদ করা ছাড়াই ওরা আমাকে জ্বালিয়ে খেয়েছে আর এবার তো প্রতিবাদ করেছি এবার তো মনে হচ্ছে আমাকে একে বারে ওপরে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে কিন্তু কোনো ব্যাপার না এবার লড়াই টা হবে সমানে সমানে। আমি ও দেখি ওই আমন চৌধুরী রোদ আর কি কি করতে পারে।। সোহা দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
-“ঠিক আছে এখন চল পরে দেখা যাবে যা হবে। নীর অ্যাস দুজনেই সোহা কে দুই দিকে থেকে ধরে রাস্তা থেকে হেঁটে যেতে থাকে।
————-
সোহা বাড়িতে ঢুকতে দেখতে পায় তার বাপি আর তার সো কল্ড মা সোনিয়া সোফায় বসে আছে। সোহা বাড়িতে ঢুকে ওদের পাস কেটে ওপরে যেতে নিলেই সোহার পথ আটকে দাঁড়ায় সোনিয়া। সোহা মুখ তুলে তাকাতে সাথে সাথে মুখের ওপর একটা জোরে থাপ্পড় পরে। থাপ্পড় টা এত জোরে ছিল যে সোহা ছিটকে কিছুটা দূরে টেবিলের ওপর পড়ে। সোনিয়া আবারো সোহার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে চুলের মুঠো ধরে টেনে তোলে।
-“বাড়ির কাজ গুলো কে করবে। বাড়িতে যে এত কাজ পড়ে আছে আর তুই বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিস।
তোর মরা মা কি এসে কাজ গুলো করে দিয়ে যাবে নাকি? সোনিয়া সোহা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বলে ওঠে।
. সোহা মাটিতে পড়ে মাথা উঁচু করে তার বাপির দিকে তাকায় ব্যাথাতুর চোখে। যে এখনও সোফায় পায়ের ওপরে পা তুলে বসে আছে আর তার দিকে তাকিয়ে আছে রুক্ষ ভাবে। সোহার তাকানো দেখে সোনিয়া মুখ ভঙ্গি পাল্টে সোহার বাপির কাছে গিয়ে আহ্লাদী ভাবে নরম আওয়াজে বলে ওঠে।
-“হাবি আজ সকালে আমি ব্রেকফাস্ট পাইনি। আমাকে হাত পুড়িয়ে নিজে বানিয়ে নিতে হয়েছে দেখো। আমার হাত কতটা পুড়ে গেছে।
.সোহার বাপি সোনিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে নিয়ে নিচে মাটিতে পড়ে থাকা সোহার দিকে এগিয়ে যায়। সোহা জানে এখন তার সাথে কি হতে চলেছে। সোহার বাপি এগিয়ে এসে সোহার সরাসরি দাঁড়িয়ে সোহার কোমর বরাবর লাথি মারে। চুলের মুঠো ধরে মাটিতে থেকে টেনে তুলে দাঁড় করিয়ে সোহা কে মারতে থাকে। জেনে বুঝে ও সোহা কে এমন জায়গায় মারতে থাকে যেখানে মারা উচিত নয়। কোনো বাপ তার মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করতে পারে সেটা সোহা আগে না জানলেও এখন জানে। সে জানে সে কিছু করলেও তাকে মার খেতে হবে আর কিছু না করলেও মার খেতে হবে এটাই তার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হয় খাবারের থেকে সোহা মারটাই বেশি খায়। সোহা জানে তার বাপির এই বউ আর তার সোকল্ড মা সব সময়ে তার বাপির মাথায় তাকে নিয়ে কান ভর্তি করতে থাকে। সোহার পাঁচ বছর বয়স থেকে তাকে এই দিন দেখে যেতে হচ্ছে। তাকে প্রত্যেকটা মুহূর্তে এইরকম ভাবে বেঁচে মরতে হচ্ছে।
-“তোমার সাহস কি করে হলো তোমার মায়ের জন্য খাবার না বানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। কিছুই তো করোনা কাজ। এটুকু ও করতে পারো না তুমি। তোমাকে তো সব কিছু দেয়া হয়েছে। নাম টাকা পরিচয় তার ওপর তুমি কথা শোনো না। সোহার বাপি সোহা কে মারতে মারতে বলে ওঠে।
. সোহা কোনো কথা না বলে মার খেতে থাকে। তার কোনো কথাই যে এ বাড়িতে চলে না। সোহার মুখে কোনো রকম এক্সপ্রেশন নেই না কষ্টের না রাগের।
-“তুমি কি আমাকে একটু শান্তি দেবে না সব সময়ে তোমাকে নিয়ে শুনতে হবে কেনো। বাড়ি ফিরে তোমার কথা শুনতে হয়। তুমি কি একটু ভালো করে তোমার মায়ের সাথে থাকতে পারো না। সোহার বাপি বলে ওঠে।
-” আপনি আমাকে মারা ছাড়া আর কি করতে পারেন। আপনি ওই মহিলার কথা ছাড়া আর কি কারোর কথা শোনেন। কখনো কি শুনেছেন আমার কথা বুঝতে চেয়েছেন আমাকে কখনো। আমি কিছু করলেও কি আর না করলেও কি সেই আমাকে প্রতিদিন ডায়েট চ্যাট এর মত করে আমাকে মার খেয়ে যেতে হয়। মাটিতে পড়ে অনেক কষ্টে বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে বলে ওঠে সোহা।
-“তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার মুখে মুখে কথা বলো। আমার মান সম্মান ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিতে চাইছ। আমি তোমাকে বুঝিনি। তোমাকে এই বাড়িতে থাকতে দিচ্ছি খেতে দিচ্ছি আমার নাম পরিচয় নিয়ে বেঁচে আছো আর কি চাই তোমার হ্যাঁ। বলেই খুব জোরে পাশে থাকা পিলার এর সাথে সোহার মাথা ঠুকে দেয় সোহার বাপি।
. সোহার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে চাপা আর্তনাদ। মাথা ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। কিন্তু ততক্ষণে বাড়ির লিভিং রুম ফাঁকা হয়ে গেছে তার বাপি আর সোনিয়া চলে গেছে তাদের রুমে। সোহা চোখে ফুটে ওঠে ব্যাথা অসহায়ত্ব। বাড়ির কাজের লোক ছুটে এসে সোহা কে মাটিতে উঠিয়ে তুলে বসায়।তারা ও এই সবে অভস্ত্য হয়ে গেছে। সোহা দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে আসতে আসতে নিজের শরীরে সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে নিজের এই ভাঙাচোরা শরীর কে এগিয়ে নিয়ে।
-“এইরকম জল্লাদ বাপ যেনো কোনো সন্তান এর না হয়। ওপরআলা যেনো এমন শয়তান লোকের ঘরে যেনো কখনো কোনো বাচ্চা না দেয়। কোনো বাপ তার সন্তান কে এই ভাবে মারতে পারে ছিঃ। আর ওই শয়তান মহিলার জন্য এই ফুলের মত মেয়েটার জীবন পুরো নরকে পরিনত হয়ে গেলো। আহারে বাচ্চা মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে ও কি মায়া লাগে না নিজের রক্ত কে কি ভাবে এই রকম হিংস্র জানোয়ার এর মত মারতে পারে। মেয়েটার মুখের দিকে চেয়ে এখানে পড়ে থাকতে হচ্ছে আর নৃশংস দৃশ্য দেখতে হচ্ছে প্রতিদিন। বৌমনির কথা রাখতে এখানে থেকে তো গেলাম কিন্তু বৌমনি তোমার লাডো কে এই শয়তানদের হাত থেকে বাঁচাতে পারলাম না। বাড়ির বহু পুরোনো কাজের লোক সোহার ফুল কাকু বলে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যান।
—————
অন্ধকার রাস্তার মাঝে ছুটে চলেছে গাড়ি। একের পর এক ট্রাফিক রুলস ভেঙে যাচ্ছে। তার কাছে এইসব কিছু এসে যায়না। এখন যেনো মাথায় খুন সবার হয়েছে। চোখ গুলো লাল রক্তিম আকারে পরিনত হয়েছে চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে।গাড়ি নিয়ে বাড়ি ঢোকে। বাড়ি বললে ভুল হবে কোনো বাড়ি নয় চৌধুরী প্যালেস পুরোই রাজবাড়ি। চারিদিকে তেমনই সাজানো। গাড়ি জোর ব্রেক কষে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। এমন ভাবে হেঁটে যাচ্ছে মনে হচ্ছে যেনো সামনে থেকে কোনও তুফান এর গতিতে যাচ্ছে।রুমে ঢুকে নিজের শার্ট খুলে ফ্লোরে ফেলে উদাম শরীরে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। নিজের শরীর ভিজিয়ে দেয় বাথটাবের স্নিগ্ধ ফুলে ভরা পানিতে। পানির মাঝে নিজের শরীর ডুবিয়ে দিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করতে ব্যস্ত। এতক্ষণে যেনো তার রাগ একটু একটু করে কমে যেতে থাকে। টানা এক ঘন্টা যাবৎ চোখ বন্ধ করে পানিতে ডুবে বসে থাকার পর চোখ খুলে তাকায়। কোমরে টাওয়েল জড়িয়ে বাথটাব এর পানি থেকে বেরিয়ে আসে। উদাম শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। মাথার থেকে পানি চুইয়ে পড়ছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরের দিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। নিখুঁত হাতে তৈরী এক গ্রীক ভাস্কর্য যেনো । অথচ পরিত্যক্ত এক দেবগৃহ। মায়াবিনীর কৃপা পায়নি। কেনো এমন হল তার সাথে। কি কমতি আছে তার মাঝে। আয়নায় নিজকে দেখতে দেখতে ভাবতে থাকে।
-“আজকে আমাকে সবার সামনে এই ভাবে অপমান করার সাহস দেখিয়ে তুমি খুব ভুল করেছো জানেমান। এই আমন কে অপমান করা এবার তুমি বুঝবে। আমি কতটা ভয়ানক হতে পারি। এবার তুমি দেখতে থাকো বেবস আর কি কি হতে থাকে তোমার সাথে। আমন চোখ মুখ শক্ত করে মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে ওঠে আমন।
.
.
.
. 💚💚💚
. চলবে….
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊
(আবারো সোহা ও আমন এর ভালোবাসাময় নতুন গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে। আপনাদের উৎসাহ সাপোর্ট আর ভালোবাসা একান্ত কাম্য। আপনাদের সবাই এর মতামত এর অপেক্ষায় আমি)
#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২
-“বাবাহ ভিখারিনী এখন আবার নিজে ভিক্ষুকদের খাবার খাওয়ায় এত উন্নতি ।
সোহা সবে সবে ইউনিভার্সিটি ঢুকে ছিল আর তখনই কানে আসে কথাটা। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় সব গুলো দাঁড়িয়ে আছে। সোহার আজকে মুড টা এমনিতেই খারাপ ছিল তার ওপরে আবারো এই শয়তান গুলো তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তাকে জ্বালিয়ে খাওয়ার জন্য। আজ তার মায়ের জন্মদিন অথচ সকাল থেকে তার জন্মদিন টা ঠিক ভাবে পালন করতে পারিনি।
সোহা পাশ কেটে যেতে নিলে আচমকা পাস থেকে হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে গায়ের জোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
-ঠাসসসসস
চারিদিকে সবাই সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায় এই থাপ্পড় এর আওয়াজে। সবাই অবাক চোখে দেখতে থাকে সোহা আর সামনে থাকা মণিকা কে।
-“তোর সাহস কি করে হয় কালকে সবার সামনে আমন কে ওই ভাবে অপমান করার। মণিকা রাগে চিৎকার করে বলে ওঠে। আসলে মণিকা সব সময়ে নিজেকে আমন এর ফিঁয়াসে বলে দাবি করে।
সোহা অবাক চোখে দেখছে মণিকা কে। কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে সোহার। বুঝেছে তার গালে পাঁচ আঙুল এর ছাপ বসে গেছে। তার পুরো শরীর কাঁপছে। ওখানে থাকা বাকি সবাই ও এখন অবাক হয়ে দেখছে ওদের দুজন কে।কেউ বুঝতে পারিনি হঠাৎ করেই মণিকা সোহা কে মেরে বসবে। দূর থেকে ওদের দিকে তাকিয়ে আগুন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমন। মাথার রগ গুলো ফুলে উঠেছে চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে আছে। হাত মুঠো করে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
-“তোর এই গন্ধ মুখ দিয়ে যদি আর কোনো কথা তুই আমন কে বলিস তাহলে তোকে কুকুর দিয়ে খাওয়াতে বলব ছোটো লোকের বাচ্চা। মণিকা বলে ওঠে।
-” ঠাসসসসস ।
মণিকার কথা শেষ হতে না হতে সোহা মণিকার গালে জোরদার একটা থাপ্পড় মেরে বসে সোহা। এবার যেনো সবার মাথার ওপর যেনো আকাশ ভেঙে পড়েছে। এর আগে যখন মণিকা সোহা কে মেরে ছিল যতোটা না অবাক হয়েছিলো এখন সবাই তার চার গুণ বেশি অবাক হয়ে গেছে সোহা ঘুরিয়ে মণিকা কে থাপ্পড় মারতে।
-“এত দিন আমি সব কিছু মুখ বুঝে সব কিছু মেনে নিয়েছি মানে এই না তুমি যা খুশি তাই বলতে পারো। আমি চাইলে তোমাকে এক ঝটকাতে সাইজ করতে পারি। কিন্তু আমি তোমার মত অমানুষ নই। আর হ্যাঁ একটা কথা যার জন্য এত গুলো কথা আমাকে বললে যদি তার সামনে বলতে তাহলে কাজের হতো যদি কৃপা করে একটু তোমার দিকে দেখত। কিন্তু তোমার সব মেহনত বেকার গেলো তাই না। বলে ওঠে সোহা।
-“বাবাহ আজকে শাড়ি পরে কি ব্যাপার হ্যাঁ? কোথায় থেকে আসা হচ্ছে শুনি? সোহার সামনে এসে দাঁড়ায় আমন পকেটে হাত গুঁজে ফুল অন অ্যাটিটিউড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে।
-” আরে ভাই আজকে এই ঢ্যাড়সমার্কা বাঁদরি তো হেব্বি দান ধ্যান করছিলো মাইরি। রাস্তার পথ শিশু আর ভিখারিদের খাওয়াচ্ছিল। নিজে ভিখারি হয়ে ভিখারিদের খাওয়ানো কি ইউনিক ব্যাপার না। পাশে দাঁড়ানো রাজ বলে ওঠে বিশ্রী হেসে।
-” মানে কি বলছিস? আমন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-“হ্যাঁ রে ঠিক বলছি। এই দেখ আমি ভিডিও বানিয়ে এনেছি ইউনিভার্সিটি আসার সময়ে রাস্তায় দেখে ভিডিও করে নিয়েছি। রাজ হাসতে হাসতে বলে হাতে থাকা মোবাইল ফোনে ভিডিও অন করে দেয়।
আজকে সকালে সোহা পথ শিশুদের আর ভিক্ষুকদের খাইয়ে ছিল। প্রতি বছর এই দিনটা সোহা অসহায় মানুষদের খাওয়ায়। তাদের সাহায্য করে। আজ তার মায়ের মৃত্যু দিবস। তাই এই দিনে সোহা তার মায়ের জন্য এগুলো করে। আর তারই ভিডিও দেখাচ্ছে।
-“বাহ একটা ভালো কাজ করেছ দেখছি। তা শুধু কি ওদের খাওয়ার দিলে হবে আমাদের জন্য ও কিছু হবে না কি। আমন তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ কেনো হবে না। নিশ্চয়ই হবে। সোহা বলে ওঠে। সোহার মুখে এখন কোনো ভাব নেই না রাগ না দুঃখ কষ্ট। সবাই কে দেয়ার পর ও তার কাছে কিছু এক্সট্রা প্যাক বেঁচে ছিল। সোহা ব্যাগ থেকে পায়েস এর প্যাক গুলো তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়।
-” এতে আবার বিষ টিস মিশিয়ে আনোনি তো। আমন সোহার হাত থেকে নিয়ে মুখে দিয়ে বলে ওঠে।
আমন এর কথাই সোহার চোখ ছল ছল করে ওঠে। কোনো কথা বলতে পারে না। চুপচাপ তাকিয়ে থাকে আমন এর মুখের দিকে। আমন সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে সোহার ছলছল চোখে একরাশ দুঃখ কষ্ট অভিমান লুকিয়ে আছে। সোহা কোনো কথা না বলে পাশ কেটে যেতে নিলেই। পিছন থেকে চেনা জানা ডাক শুনে থেমে যায়। আর সাথে ওখানে থাকা বাকিরা ও থেমে যায় সামনে দেখতে সবাই অবাক চোখে দেখতে থাকে।
-“সোনাই ।
সোহা পিছনে ফিরে দেখতে তার মুখে হালকা হাসির রেখা ফুটে ওঠে
-” সিম সিম তুমি এখানে? বলেই সোহা গিয়ে জড়িয়ে নেয় তার সামনে থাকা ব্যাক্তি কে।
-“ড্যাড । বিড়বিড় করে বলে ওঠে আমন। আর অবাক চোখে দেখতে থাকে ওর সামনের দৃশ্য।
সোহা কে জড়িয়ে আছে স্বয়ং সম্রাট চৌধুরী আমন এর বাবা। আর বাকিরা এটা দেখেই চোখ বড় বড় করে ফেলেছে।
-“তুমি এখানে কি করছো সিম সিম? সোহা হাসি মুখে বলে ওঠে।
-“আজকে দিনে কি আমি আমার সোনাই মায়ের কাছে না এসেছি এমন কোনো দিন হয়েছে? হাসি মুখে সোহার দুই গাল ধরে বলে ওঠে। সোহা হাসি মুখে মাথা নাড়ে।
-“শুভ জন্মদিন সোনাই মা। আর এটা তোর জন্য ।বলেই সোহার দিকে এগিয়ে দেয় একটা ডার্ক চকলেট বক্স।
জন্মদিন কথাটা শুনতেই সোহার মুখে থাকা এতক্ষণ এর হাসিটা মুছে যায় চোখ মুখ কালো হয়ে পড়ে চোখের কোণে পানি ছলছল করে ওঠে। কোনো কথা বলে না সোহা। সম্রাট চৌধুরী কারণ বুঝতে পেরে সোহার মুখ তুলে ধরে বলে ওঠে।
-“আচ্ছা সরি ভুল হয়ে গেছে। এবার তো এটা নে। বলে হাতে থাকা বক্স টা এগিয়ে দে সোহার দিকে।
সোহা ও মুখে মলিন হাসি টেনে বক্স নিতে হাত বাড়ায়। আর এদিকে সবার যেনো সামনে হতে থাকা দৃশ্য গুলো মাথার ওপর দিয়ে যেতে থাকে।
-” একি এটা কি করে হলো। এতটা বিশ্রী ভাবে তোর হাত পুড়ে গেলো কি করে সোনাই। সোহার পোড়া হাত ধরে বলে ওঠে সম্রাট চৌধুরী চিন্তা নিয়ে।
সম্রাট চৌধুরীর কথায় আমন ও সচকিতে তাকায় সোহার হাতের দিকে। সোহার হাতের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে যায়। চোখ গুলো রাগে ফুলে ওঠে। সোহা কোনো কথা না বলে সম্রাট চৌধুরীর হাত থেকে নিজের হাত টেনে নেয়।
-“এটা কিছু না সিম সিম। আমি এখন আসছি হ্যাঁ। আমার ক্লাস আছে। কোনো রকমে বলেই সোহা ওখানে ছুটে বেরিয়ে যায়।
-” সোনাই মা। শুনে যা. পিছন থেকে ডাকতে থাকে।
আর ওখানে থাকা বাকি সবাই এর মাথা যেনো বাজ পড়ে গেছে এতক্ষণ কি হল তাদের সব কিছু মাথার ওপর দিয়ে গেছে।
————–
সোহা ওখান থেকে ছুটে নিজেকে লাইব্রেরি এক কোণে আড়াল করে নেয় পাশের এক বেঞ্চ এর ওপরে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ে এতক্ষণে কান্না গুলো দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসে। আজ তার জন্মদিন অথচ ও এটা ভুলে যেতে চায়। তার এই জন্মদিন টা কে সোহা কোনো দিন মনে রাখতে চায় না। কখনই সেই অভিসপ্ত দিন টা কে মনে রাখতে চায় না। সোহা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে ভেসে ওঠে সকালের দৃশ্য চোখের সামনে।
“” “” ”
-“উফ মাগো। সোহা গগন বিধারি চিৎকার করে বসে পড়ে ফ্লোরে নিজের হাত আর পা ধরে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মুখে স্পষ্ট যন্ত্রণার ছাপ ফুটে উঠেছে।
-“তোর সাহস হলো কি করে এগুলো বানানোর এত জিনিস নষ্ট করে খাবার বানাতে কে বলেছে টাকা কি তোর মরা মা এসে দিয়ে যাবে নাকি। সোনিয়া সোহার ওপরে চিৎকার করে বলে ওঠে।
সোনিয়া কিচেনে এসে সামনে থাকা সবে নামানো পায়েস এর ডিশ টা উল্টে ফেলে দেয় সোহার ওপর আর তার সাথেই সোহার এই চিল চিৎকার ছিল। হাতে গরম পায়েস পড়তে সঙ্গে জায়গা টা পুড়ে গেছে। পায়ে ও একই অবস্থা। সোহার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে আর চোখ দিয়ে অবিরত পানি পড়ে যাচ্ছে।
-“টাকা আমার মরা মা কেনো আমার বাপি দেবে। আর দেখতে গেলে আমার মা ও দিচ্ছে বেঁচে না থেকেও। কারণ এই প্রোপার্টিতে আমার মায়ের ও শেয়ার আছে। যেটা তোমার এক কানাকড়ি ও নেই। কারণ তুমি শুধু মাত্র আমার বাপির রক্ষিতা তাই সোকল্ড মিসেস সোনিয়া মল্লিক । আমার বাপি কে তুমি তোমার এই নাটক আর এই ভোলা ভালা চেহারা দিয়ে বস করে রেখেছ তাই আমার বাপি তোমাকে চিনতে পারছে না। সব সময়ে ভালো মানুষের মুখোশ আড়ালে তোমার শয়তান রূপ টা সে দেখতে পায় না তাই জানে তুমি কতটা কুৎসিত আর জঘন্য মহিলা। সোহা রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
-“তোর এত বড় সাহস তুই আমার উপরে কথা বলিস। তোর মা তো মরে গেছে সাথে তোকে কেনো নিয়ে যায়নি। সোনিয়া সোহার দিকে তেড়ে এসে বলে ওঠে।
-” আমার মা জীবনে একটাই ভুল করেছিলো তোমার মত ঘাটিয়া একজন রাস্তার মেয়ে কে নিজের বোন এর জায়গা বসানো যে তার পিঠ পিছে এখন ছুরি মারছে। তুমি চিন্তা করো না।এই সব কিছু একদিন তোমার হাত থেকে চলে যাবে। তখন আমিও দেখব মিস্টার মল্লিক কিভাবে তোমাকে বাঁচাতে পারে। সোহা সোনিয়ার হাত মুছড়ে ধরে বলে ওঠে।
-“তোর এত বড় সাহস তুই আমার গায়ে হাত তুলেছিস। আজকে তো তোর কি অবস্থা করবে তোর বাপি আমি নিজেও জানি না। বাঁকা হেসে বলে ওঠে সোনিয়া।
-” কি আর করবে আবার ও আমাকে মারবে জানোয়ার এর মত।এটাতে আমি অভস্ত্য। আজকের দিনে আমি তোমার মত খারাপ মহিলার সাথে কোনো কথাই বলতে চাইছি না। তুমি যে এখন আমার থেকে আমার বাপি কে কেড়ে নিয়ে এই বিশাল সাম্রাজ্য এর মালিকানা নিয়ে বসে আছো না। একদিন আমি সোহা জৈন মল্লিক তোমার থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়ে তোমাকে যদি ভিক্ষা করাতে না পেরেছি তো আমার নাম ও সোহা নয়। আর তুমি যে এই খাবার টা নষ্ট করেছো এর হিসাব তো তোমাকে করতে হবে। তোমার জীবন এই এক দানা খাবারের জন্য আমার কাছে তোমাকে হাত পাততে হবে এটা আমার প্রমিস আমার মায়ের নামের । বলে সোহা ডিশে বাকি থাকা পায়েস সোনিয়ার পায়ের ওপর ফেলে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে যায়।
.
.
.
. 💚💚💚
. চলবে….
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন ।প্লিজ সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊