#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -২৫
গোধূলি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে দীপ্ত ওর বিছানাটার ঠিক মাঝখানে কপালে বাম হাতের পিঠ রেখে চোখ বন্ধ করে পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে আছে।গোধূলি ওর বিছানায় অন্য মানুষের এত গড়াগড়ি করা পছন্দ করে না।নিজের ভাই বোনদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ঠিক উল্টোই বটে।তবে বাহিরের মানুষের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য যে তার অনুমতি ব্যাতিত কেউ এই ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ করা তো অনেক পরের কথা ওর ঘরের চৌকাঠও মাড়াতে পারে না।তবে দীপ্ত কি বাহিরের লোক?হে একটু আশ্চর্যজনক হলেও এটাই সত্যি যে গোধূলি দীপ্তকে বাহিরের লোকই মানে!আসলে ছোট বেলা থেকেই ওদের দুজনের ঠিক বনতো না দীপ্ত গোধূলিকে আর গোধূলি দীপ্তকে পদে পদে হেনস্তা করতো।অবশ্য তার জন্য যতেষ্ট কারণও থাকতো!অকারণে গোধূলি কোনো কিছুই করতো না। দীপ্তই গোধূলিকে রাগাতো আবার দীপ্তই বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করতো গোধূলিকে বাঘে আনার।যার ফলে প্রায়ই দুজনের মধ্যে তুমুলযুদ্ধ বেধে যেত।ঝগড়াঝাটিও হতো খুব করে!দীপ্ত ওর থেকে বয়সে অনেকটা বড় হলেও দীপ্তের সাথে ওর কোনো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করানো সম্ভব হয় নি!ছোট বেলায় গোধূলি একটু বেশিই চঞ্চল ছিল।সময়ের ব্যবধানে এখন তা অনেক কমে গেছে!তবে মাঝে মাঝে গোধূলি ওর স্বরুপে ফিরে আসে!যেটা আদিবার বিয়ে ঠিক হওয়া থেকে সবাই বেশ ভালোই লক্ষ্য করছে।তাদের নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে কথা হলেও গোধূলিকে তারা তা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে দেয় নি।গোধূলি কোনো কালেই দীপ্তকে অন্য চোখে দেখে নি।ছোট বেলায় সারাদিন মুখ ভরে ভাইয়া ভাইয়া আর তুমিতামা করলেও কালক্রমে তা আপনি আজ্ঞেতে উপনীত হয়েছে।যাকগে সেইসব কথা!
দীপ্তকে গোধূলি ওর বিছানায় দেখে রাগ পাওয়ার চেয়ে অবাকেই বেশি হয়েছে।আজকে এই লোকের মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছি না।এই বড়দা ভাইয়ের ঘর তো এই বুবুর ঘর এখন আবার আমার ঘর।এখন আমি যদি কিছু বলিও এই লোক তা শুনার নয়!এই লোক যা ধুরন্ধর!আমি যদি এইখানে থাকি তাহলে ঠিক খুটিয়ে খুটিয়ে বার করার চেষ্টা করবে তখন আমি কি বলতে গিয়েও বলি নি!নাহ বাবা আমি এইসব রিস্কের মধ্যে নাই!তারচেয়ে বরং ভালো হয় যদি আমিই এই রুম থেকে চলে যাই!
– দাঁড়া!
পা টিপেটিপে দরজার কাছ পর্যন্ত যেতেই দীপ্তের ডাকে থমকে যায় গোধূলি।প্রচন্ডরকম বিরক্ত হয়ে চোখ বুজে নেয়!বিড়বিড় করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
– যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।
গোধূলি আস্তে আস্তে মাথাটা ঘুরিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে বলে,
– আরে ভাইয়া!আপনি কখন এলেন?আমি তো আপনাকে খেয়ালই করি নি!
দীপ্ত এক লাফে বিছানা থেকে নেমে একদম গোধূলির সামনে এসে দাঁড়ায়।তারপর গোধূলির চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে গলা টেনে বললো,
– তাই বুঝি?
গোধূলি কাচুমাচু মুখ করে ফোকলা হেসে বললো,
– হে তা্ তাই তো।
গোধূলির মুখের দিকে দীপ্ত সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থেকে বলে,
– এমন তোতলাচ্ছিস কেন তুই?
– কো্ কোথায় তো তোতলাচ্ছি আমি?এই তো আ্ আমি স্বাভাবিক ভাবেই ক্ কথা বলছি!
দীপ্ত দাঁত কড়মড় করে বলে,
– হুম তা তো আমি দেখতেই পাচ্ছি।আচ্ছা বাদ দে।
এখন বল তো,আমাকে দেখেও এমন চোরের মতো পা টিপেটিপে চলে যাচ্ছিলি কেন?
এই লোক কি চোখ বন্ধ থাকলেও দেখতে পায় নাকি?স্ট্রেঞ্জ ঠিক বুঝতে পেরে গেছে।গোধূলি কথাটা মনে মনে আওড়াচ্ছে।
– কি হলো বলছিস না কেন?
দীপ্তের ধমকে আঁতকে উঠল গোধূলি।বুকে ফুঁ দিয়ে বলে,
– এইভাবে কেউ চিল্লায়!আরেকটুর জন্য আমার প্রানটা চলে যায় নি!
– কেন তুই কি চুরি করেছিস যে চিল্লালে কেউ শুনে ফেলবে?আর চিল্লালে কারো প্রান চলে যায়?এই গোধূলি একদম আমার মাথা গরম করাবি না!যা জিজ্ঞাস করেছি তার উত্তর দে।
গোধূলি বেশ বুঝতে পারছে দীপ্ত এবার রেগে যাচ্ছে।কিন্তু গোধূলি তো গোধূলিই।বরাবরের মতোই চ্যাটাং চ্যাটাং উত্তর দিবেই।তবে এখন কন্ঠে একটু নরম ভাব এনে বললো,
– আমার বাড়ি আমার ঘর!আমি কেন চোরের মতো যাব?আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো ঘুমিয়ে আছেন।যদি শব্দ হয় তাহলে হয়তো আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে তাই আস্তে আস্তে যাচ্ছিলাম!দ্যাটস ইট।
– ইজ ইট!
– হুম।
– আচ্ছা যা তোর এই উত্তরটা নিলাম।এখন আমার আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দে তো!
এই রে এখন আবার কি জিজ্ঞাস করবে উনি।এমনিতেই আমার এখানে ভালো লাগছে না।তারউপর উনি যদি এই ভাবে আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে তাহলে তো এইখানেই আমি শহীদ হয়ে যাবো।মনে মনে কথা গুলো ভেবে মলিন মুখে দীপ্তের দিকে তাকায় গোধূলি।
– তখন আদিবাপুর ঘরে কি যেন বলতে গিয়েও থেমে গিয়েছিলি!সবাই চলে আসায় আমি তখন কিছু বলি নি।তবে,ডালমে কুচ কালা হে!এ মুঝে মালুম থা!এখন বল তখন কি বলতে চেয়েছিলি?
– দেখেছিস গোধূলি, যে ভয়টা এতক্ষণ পাচ্ছিলাম সেটাই সত্যি হলো।এখন আমি কি জবাব দিবো?পালা!তুই এখান থেকে পালা গোধূলি।যত তাড়াতাড়ি পালাতে পারবি তোর ততই মঙ্গল!
– কি হলো কি বিড়বিড় করছিস?জোরে বল শুনতে পাচ্ছি না।
কিছুটা ঝাঝালো কন্ঠে বলল দীপ্ত।গোধূলির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।ও এখন কি বলবে।কিন্তু এখান থেকে যেতে হলে এটলিষ্ট কিছু একটা তো বলতে হবে।গোধূলি মুখে গম্ভীরতার ভাব এনে বললো,
– এখন আমি আপনার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আমার অনেক কাজ আছে আমি গেলাম।
– আমার কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে আদিবাপুর ঘরে আমি কাউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছিলাম!
দরজার চৌকাঠের কাছে গিয়েই থেমে যায় গোধূলি। দীপ্তের কথায় কান গরম হয়ে আসে।হঠাৎ করেই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়।ঘন ঘন শ্বাস পরছে গোধূলির।
– তুই ছিলি?
দীপ্ত এগিয়ে গিয়ে গোধূলির একদম কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে কথাটা।কথাটা কানে যেতেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে জামাটা খামছে ধরে গোধূলি।গোধূলির হৃদস্পন্দন এতটাই বেড়ে গেছে যে তার আওয়াজ দীপ্তের কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে!গোধূলি এখনও চোখ বন্ধ করেই রেখেছে।
– নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ!
গোধূলি অবস্থা দেখে একটা শব্দহীন মুচকি হাসি দিয়ে কানে কানে কথাটা বলেই চলে যায় দীপ্ত।কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে চোখ মেলে তাকায় গোধূলি।ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে দীপ্ত চলে গেছে।গোধূলি সোজা ওর রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়।ওর আজ আর ছাদে যাওয়া হবে না!ব্যালকনিতে গিয়ে বসেছে গোধূলি।পড়ন্ত বিকালে লালা ভাব আকাশের পানে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থেকে বললো,
– গোধূলি লগ্নে আজ গোধূলির ছন্দ পতন ঘটে গেলো!পড়ন্ত বিকেলের রাঙানো গোধূলির দীপ্ত আকাশ আজ না হয় এই ব্যালকনি থেকেই দেখলাম।
এতটুকু বলেই থামে গোধূলি।তারপর ব্যালকনিতে চোখ বুলিয়ে এক মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
ব্যালকনি তুই শুন
আজ তুই সঙ্গি হবি মোর!
বলবি কথা সেদিন,
থাকবি যেদিন আমিহীন!
আজ না হয় আমিই বলি
অনেক কথার ফুলঝুরি!
শুনতে যদি নাই বা চাস
তুই না হয় সঙ্গি হয়েই থাক!
#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-২৬
সন্ধ্যা নেমেছে অনেক্ষণ আগেই।আদিবার সব ফ্রেন্ডরাও চলে এসেছে।সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছে।
– আদিবা তোর একটা কিউট বোন আছে না?সেই কখন এলাম তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না!
ইফতির কথায় আদিবার টনক নড়ে!এতক্ষণ গোধূলি কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল।
– তোদের বলতে ভুলে গেছি রে ও একটু অসুস্থ!
– কি হয়েছে?
– সাজির একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল।
আদিবা সবাইকে সব ঘটনা খুলে বলে।তোরা বরং এখানেই বস আমি একটু সাজিকে দেখে আসি।
আদিবা চলে যেতেই ইফতি,রোহান,সিফাত,সোনিয়া, মুক্তি,রুহি,নিজেদের মতো করে আলোচনা করতে থাকে।
★
– হ্যালো জ্যোতি!মাওইমা কেমন আছেন?
……
-ওহ!তুই কখন আসবি?
…….
– নাহ থাক রাতের বেলা আসতে হবে না।কালকে একটু সকাল সকাল চলে আসিস কেমন।
…….
ঠিক আছে।
– কার সাথে কথা বললে বুবু?
– জ্যোতির সাথে।
– ওহ কখন আসবে বলল।
– রাতেই চলে আসার জন্য বলছিল আমি বারণ করে দিয়েছি।দুইটা বাচ্চা নিয়ে এত দূরের রাস্তা রাতে আসার দরকার নেই বলেছি সকালে আসতে।
– ভালো করেছ।এই নাও ভাইজান চা চেয়েছিলো।এটা নিয়ে তুমি উপরে যাও।আমি বরং এই গুলো আদিবার বন্ধুদের দিয়ে আসি।
জাকিয়া বেগম আহসান সাহেবের জন্য চা নিয়ে চলে যান।আর শিখা বেগম ছাদের উদ্দেশ্যে।
•
আদিবার গলার আওয়াজ শুনে গোধূলি দরজা খুলে দিয়ে আবার গিয়ে শুয়ে পড়ে।গোধূলির পিছন পিছন আদিবা হুড়মুড়িয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে।গোধূলির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞাস করে,
– সাজি এই ভর সন্ধ্যা বেলায় এইভাবে শুয়ে আছিস কেন?শরীরটা কি খারাপ লাগছে?আজকে ছাদেও যাস নি?
– ভালো লাগছে না বুবু!
– খুব খারাপ লাগছে কি?
– নাহ!
– তাহলে?
– এমনিতেই ভালো লাগছিল না তাই শুয়ে আছি।বুবু বড়দা ভাইকে একটু ডেকে দেবে?
খুব করুন সুরে কথাটা বলে গোধূলি।আদিবা গোধূলির মাথার পাশ থেকে উঠে সামনে এসে বসে।গোধূলির চোখ দুটো ছলছল করছে।গোধূলি চোখে পানি দেখে আদিবা আঁতকে উঠে।আদিবা অনেকটাই ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞাস করে,
– বোন তোর কি হয়েছে?তুই কাঁদছিস কেন?আমাকে বল কি করতে হবে।
– বুবু আমার খুব খারাপ লাগছে।আমার এই বাড়িতে একদম ভালো লাগছে না! তুমি একটু বড়দা ভাইকে ডেকে দাও না।
নিজের কাঁন্নাকে আর দমিয়ে রাখতে পারলো না গোধূলি!আদিবাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদেই উঠলো।ঘটনাটা আদিবার কাছে একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত।কি করবে বুঝতে পারছে না।এই দিকে বোনের কাঁন্নাও সহ্য হচ্ছে না।গোধূলি কিছু বলছেও না।শেষে উপায় না পেয়ে আহানকে কল করে আসতে বলে আদিবা।সন্ধ্যা বেলায় সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকায় গোধূলির কাঁন্নার আওয়াজ তাঁদের কান অব্দি এসে পৌছায় নি।আহান আদিবার কল পেয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসে।
সাজি!
আহানের আওয়াজ পেয়েই দৌড়ে গিয়ে আহানকে জড়িয়ে ধরলো গোধূলি।কাঁন্নার পরিমানটা যেন ক্রমশ বেড়েই চলেছে।গোধূলিকে এইভাবে কাঁদতে দেখে আহানও বোনকে জড়িয়ে ধরে।বোনের মাথায় চুমো একে দেয় বারকয়েক।বোনকে শান্ত করার জন্য আহান গোধূলির হাতগুলো ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়।থুতনিতে ধরে মুখটা উপরে তুলে দুগাল ধরে বৃদ্ধা আঙ্গুলের সাহায্যে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে,
– কি হয়েছে আমার লক্ষ্মী বোনটার।
গোধূলি আবার আহানকে জড়িয়ে ধরে
– তাকে কি কেউ বকেছে?
আহানকে জড়িয়ে ধরেই মাথা ডায়ে বায়ে নাড়িয়ে না বুঝালো গোধূলি।অতিরিক্ত কাঁন্নার করার ফলে গোধূলির হেঁচকি উঠে গেছে। আহানের কথার উত্তর দিতে পারছে না।তাও অনেক কষ্টে টেনে টেনে কথাটা বলল,
– দা দাভাই আমার এ এই বাড়িতে দম বন্ধ লাগছে আমাকে বাহিরে নিয়ে চলো!
– চল।
ছোট বেলা থেকেই হঠাৎ হঠাৎ গোধূলির কি যেন হয়ে যেতো!নিজেকে ঘরবন্দী করে নিতো।বাড়ির সবাই কত্তো চেষ্টা করতো গোধূলিকে স্বাভাবিক করার!কিন্তু কেউই পারতো না।একমাত্র আহানেই গোধূলিকে সামলাতে পারতো।ধীরে ধীরে আহান গোধূলির কাছে আস্তার ঠিকানা হয়ে গেছে।একটু আশ্চর্যজনক হলেও এটাই সত্যি অন্য সবার থেকে গোধূলি আহানকেই বেশি ভরসা আর ভালোবাসে।আহানও ঠিক তেমনি!একবার তো এক্সাম হল থেকেই চলে এসেছিল!ভাগ্য ভালো ছিল সেটা সেমিস্টারে আগের প্রি সেমিস্টার এক্সাম ছিল।বহুবার আহান এমন করেছে।বোন অন্ত প্রান এক্কেবারে যাকে বলে আহানের ক্ষেত্রেও তাই।গোধূলির এমন করার কারণ অজানা।অনেকবার ডাক্তারও দেখানো হয়েছে।ডাক্তার বলেছে,অনেক সময় এমন হয়ে থাকে!একাকী থাকার ফলে আকাশ কুসুম চিন্তা করে ফ্রাস্ট্রেশনে এমন করে থাকে।কিন্তু গোধূলিকে তো কখনো একা রাখা হয় নি তাহলে কেন এমন করে।তার উওর কোনোদিন গোধূলিও দেয় নি। ও মাঝে মাঝেই এমন করতো।ওকে জিজ্ঞাস করলে প্রতি বারই চুপ থাকতো।অনেক বছর হয়ে গেছে গোধূলির এই সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটে না!তবে আজ আবার কেন?সারা রাস্তা পুরানো কথা ভাবতে ভাবতে আসছিল আহান।কল আসায় গাড়ির ব্রেক কষে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে দীপ্ত কল করেছে!
– হে দীপ্ত বল।
এতক্ষণ গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে ছিল গোধূলি।সারারাস্তা ও এইভাবেই ছিল।ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে আহান অনেকবার বোনের মাথায় হাতও বুলিয়ে দিয়েছে!দীপ্তের নাম শুনা মাত্রই মাথা তুলে আহানের দিকে তাকায় গোধূলি।অপর পাশের মানুষটির কথা শুনা যাচ্ছে না।পরমুহূর্তেই আহান কল কেটে দিয়ে ফোনে কিছু একটা করে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দেয়।কাঙ্ক্ষিত জায়গায় এসে গাড়ি ধামায় আহান।গাড়ি থামতেই গোধূলি চারপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে তারা কোথায় আছে।আহানের দিকে তাকাতেই আহান ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি টেনে বলে,
– আগে গাড়ি থেকে নাম।তাহলেই বুঝতে পারবি!
আহান গাড়ি থেকে নেমে গোধূলিকে সাবধানে নামায়।
– আরে আহান দাদুভাই যে অনেকদিন পর এলে যে বড়।এতদিনে বুঝি আমাদের কথা মনে পড়লো?ওমা সাজি বুড়িকেও বুঝি আজকে নিয়ে এলে?
পরিচিত কন্ঠ শুনে সামনে তাকাতেই আব্দুল্লাহ মিয়াকে দেখে আহানের দিকে ছলছল চোখে তাকায় গোধূলি।
অন্ধকারে বুঝতে পারে নি আহান ওকে কোথায় নিয়ে এসেছে।কিন্তু এখন আব্দুল্লাহ মিয়াকে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না আহান ওকে ঠিকানায় নিয়ে এসেছে।
#.